- একাকীত্ব দূর করার উপায়
- একা থাকার কবিতা
1. একাকীত্ব দূর করার উপায়
আমি একা মাঝেমাঝেই বাচ্চাকে বাসায় রেখে ঘুরে বেড়াই, আড্ডা দিই। অনেকে আমাকে এই বিষয়ে অপরাধবোধ উপহার দেওয়ার চেষ্টা করেন কিন্তু আমার একটুও অনুশোচনা হয় না। ওই সময়টুকু নিজেকে দিই বলেই আমার তেমন কোনো ক্লান্তি নেই জীবন নিয়ে।
আমার সাড়ে তিন বছরের ছেলের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানুষ তার বাবা। ওরা একা একা ঘুরে, সাঁতার কাটতে যায়, ওদের আবার সিক্রেটও আছে! এটা নিয়ে আমার কোনো দুঃখবোধ নেই। মায়ের সাথে নাড়ির টান থাকেই বাচ্চার, আপনি ছিঁড়েও ছিঁড়তে পারবেন না। কিন্তু বাবার সাথে টান তৈরি হওয়া সহজ ব্যাপার না। আশেপাশে তাকান, বাবার সাথে এক সমুদ্র দূরত্ব নিয়ে বড় হওয়া সন্তানের সংখ্যা অগণিত। আমি আমার সন্তানের জন্যে এমনটা চাই না।
আমার সন্তানের জীবনে মা বাবার সাথে নানা নানু, দাদু ফুপি, মামা খালামণি, তার কাছের দূরের কাজিন- সবাই কমবেশি ভূমিকা রাখে। আমার পেট থেকে বের হয়েছে বলে ওর সব ব্যাপার যে আমার পেটেন্ট করা, এমন তো না!
আমি ওকে নিয়ে একান্ত বিপদে না পড়ে গেলে একা ঘুরি না, অবশ্যই সাথে ওর বাবা থাকে। ওর বাবা আবার একা একা ওকে নিয়ে পুরো ঢাকা শহর চষে বেড়ায়। ওর বাবা ওকে কালেভদ্রে গল্প শোনায়, আমি প্রতি রাতে ওকে ননস্টপ গল্প বলতে থাকি। ও বাবার সাথে গোসল করতে পছন্দ করে কিন্তু টয়লেটে আমার সাথে যেতে চায়। ছেলেকে প্রায়ই নিজে নিজে পছন্দ করে কাপড় পরতে দিই – পাঞ্জাবির সাথে হাফ প্যান্ট, রাতের বেলা সানগ্লাস আর ক্যাপ – যেটাই হোক। দুইরকম পেস্ট মিক্স করে নিজে নিজে ব্রাশ করতে দিই- কারণ এটা ওর পছন্দ। ওর বাছাই করে আনা বই থেকে গল্প পড়ে শোনাই। প্রোগ্রাম করা রোবট না তো, বাচ্চা হলেও ব্যক্তিস্বাধীনতা থাকা ভালো।
আমরা দুইজন দুইপাশ থেকে ছদ্ম টানাটানি করি, এটা আমার ছেলে – না আমার ছেলে – আমার ছেলে। ছেলে আমার হাসিমুখে কোমরে হাত দিয়ে বলে,” স্টপ, আমি দুইজনের ছেলে।” আবার অভিমান হলে বাবুটা ঠোঁট উল্টিয়ে বলে,” আমি তোমার হবো না, আমি শুধু বাবার হবো!”
আমরা স্বামী স্ত্রী অনেকসময় এক ঘন্টা দুজন মিলে রিকশায় ঘুরে এসে এরপরে ঘণ্টার পর ঘন্টা ছেলেকে নিয়ে ঘুরতে যাই। বাবু আর ফোনে ভিডিও দেখবে না, বাবুর জন্যে অকারণে দামী জামা খেলনা কিনবো না বা কোন স্কুলে পড়বে, ওর আদব কায়দা কিরকম হবে এইসব আমরা একসাথে ঠিক করি। কিন্তু বাচ্চাটা রাতে আরেকটু জেগে থাকুক না বা জুতা দেখলেই কিনে ফেলতে হবে কেন জাতীয় ব্যাপারে আবার বাচ্চার বাবার সাথে আমার দ্বিমত হয়। কিন্তু সন্তানের ব্যাপারে শেষ পর্যন্ত মায়ের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত, এটুকু আমার সঙ্গী বুঝে বলে দিনশেষে আমরা এক টিম, মিলে যাই ই।
বাচ্চার ঘাড়ের উপরে চেপে বসে থাকা আমার কাজ না। আমি আমার জীবনের কোনো অতৃপ্তির জন্যে কখনো আমার সন্তানকে দায়ী করতে চাই না।আমার আমিত্ব আর মাতৃত্বের এই সমান্তরাল যাত্রায় বাচ্চার বাবা আর আমার দুই পরিবারের সম্পূর্ন সমর্থন আছে। বাকি আর কেউ যদি নিজের মত জীবন কাটানো মা হওয়ায় আমাকে “মমশেমিং” করে, তাহলে আমার বয়েই গেল!
মা ভালো থাকলেই মা ভালো রাখবে, এটুকু বুঝতে পারলেই তো হয়ে গেল।
২. একা থাকার কবিতা
মন খারাপ হতে হতে সে একদিন শিখেই গেলো..
কী করে একা থাকতে হয়।
কী করে তাকে ভোলার জন্য নিজেকে ব্যস্ত রাখতে হয়।
তার কথা না ভেবে কেমন করে, ভালো সময় কাটাতে হয়।
মন খারাপ হতে হতে সে একদিন শিখে গেলো..
কী করে ইচ্ছে লুকোতে হয়।
কী করে হাজার মন চাইলেও, তার কাছে না চাইতে হয়।
তার জন্য কেমন করে আর, অপেক্ষা না করতে হয়।
মন খারাপ হতে হতে সে একদিন শিখে গেলো..
কী করে কঠিন হতে হয়।
কী করে মনের গভীর অনুভূতিগুলোকে, সংযত রাখতে হয়।
তার আবেগগুলো লুকিয়ে, কেমন করে যুক্তিবাদী হতে হয়।
মন খারাপ হতে হতে সে একদিন শিখেই গেলো..
কী করে একা বাঁচতে হয়।
মেহেরুন_নাহার_মেঘলা
মেঘকাব্য