সম্পূর্ণ সত্য ঘটনা অবলম্বনে পর্ব ১
গল্প : কুল-বড়ই (পর্ব-১)
লালমনির হাট জেলার সদরের এক পল্লীতে স্ত্রী এবং ছোট ভাই লিয়াকতকে নিয়ে বাস করে লোকমান। লোকমান জেলা পরিষদে পিয়নের চাকরি করে। সে বিয়ে করেছে সাত আট বছর আগে। তার ছোট ভাই পাশ্ববর্তী কলেজে পড়ে। লোকমান সারাদিন অফিসে থাকে আর ছোট ভাই সকাল থেকে বিকেল অব্দী কলেজেই সময় কাটায়। তাই তার স্ত্রী দিনের বেশির ভাগ সময় বাড়িতে একাই থাকে।
একদিন দুপুর বেলা এক পাগল তাদের বাড়ি এসে তার স্ত্রীকে বলছে, মা রে আমার খুব খুদা লাগছে আমাকে কিছু খেতে দিবি? তার স্ত্রী তখন রান্না করছিল।
লোকমানের স্ত্রী এসে বলল, বাবা আপনি একটু অপেক্ষা করেন আমার ভাত আর করলা ভাজি রান্না হয়ে গেছে, মাছ রান্না করতেছি মাছ রান্না হলেই আপনাকে খেতে দিব। পাগলটি বলল, মা রে আমি মাছ খাইনা, তুই আমাকে ভাত আর করলা ভাজি দে তাতেই আমি খেয়ে নিব। লোকমানের স্ত্রী ঘরের সামনে পাগলকে বসতে দিয়ে একটা বড় বাটি করে ভাত, ছোট বাটিতে করলা ভাজি এনে সামনে দিল, সাথে ভাত খাওয়ার প্লেট এবং হাত ধোয়ার পানি দিল। কিন্তু পাগলটি হাত না ধোয়েই প্লেটে ভাত আর করলা ভাজি নিয়ে খেতে আরম্ভ করল। লোকমানের স্ত্রী পাশেই দাঁড়িয়ে দেখছে, পাগলটি এমন ভাবে খেতে লাগলো যেন সে কতদিন থেকে অভুক্ত। বড় বড় লোকমা দিয়ে দ্রুত খেয়ে চলেছে।পাগলটি লোকমানের স্ত্রীকে বলল, আরও একটু ভাত দিবি মা? পেটে বেশ খুদা।
লোকমানের স্ত্রী বলল, আচ্ছা দিচ্ছি, এ বলে রান্না ঘর থেকে আরও কিছু ভাত ও করলা ভাজি নিয়ে এলো। পাগল ময়লা দাঁতে একটি হাসি দিয়ে বলল, দে মা দে, বলেই সে তৃপ্তি নিয়ে আবার খেতে লাগলো। লোকমানের স্ত্রী পাশে দাড়িয়ে দেখছে, সে নোংরা হাতে ভাতকে গোলগোল করে লোকমা বানিয়ে বড় বড় হা করে চবরচবর করে চিবিয়ে গিলছে। তার আধপাকা গোঁফ দাঁড়িতেও কয়েকটি হলুদ রঙের ভাত আটকে আছে। মাথার আধপাকা চুলগুলোও উস্ক খুস্ক ময়লা জটবাধা। গায়ে কয়েকটি জামার উপর অনেকটা চটের কাপড়ের মত গাঢ় কফি রঙের একটা কোট পরে আছে। পরনে কালো রঙের খুব পুরনো একটা পেন্ট। দেখেই মনে হচ্ছে পোশাকগুলো বানানোর পর থেকে মনে হয় আর ধোয়া হয়নি। সে নিজেও কবে যে গোসল করেছে সেটা মনে হয় তারও হিসেব নেই।
মা আর কয়টা ভাত হবে? পাগলের এমন বাক্যে লোকমানের স্ত্রী সম্মোহনী ফিরে পেলো। সে কাচুমাচু করে বলল, আচ্ছা দিচ্ছি বাবা। এ বলে রান্নাঘরে দ্রুত গিয়ে পাতিলের সব ভাত আর করলা ভাজি এনে পাগলকে দিল। সেও মাথা নিচু করে গপগপ করে খেয়ে চলল।
এদিকে লোকমানের স্ত্রী ভাবনায় পড়ে গেল, ভাত আর করলা ভাজি যা রান্না ছিল সবই তো দিয়ে দিল এখন যদি আবার চায় তখন কি করবে বা বলবে? এই ভাবতে ভাবতেই দেখল পাগল খাওয়া শেষ করে তৃপ্তির ঢেকুর তুলে প্লেটে পানি ঢেলে হাত ধুলো, শেষে হাত ধোয়া পানিটাও প্লেট কাত করে ঢকঢক করে খেয়ে ফেলল।
লোকমানের স্ত্রীও মনে মনে খুশি হল যাক বাবা বাঁচা গেল, খাওয়া শেষ আর ভাত চাইবে না।
পাগলটি এবার একটা তৃপ্তির হাসি দিয়ে বলল, সব ভাত তো আমাকেই দিয়ে দিলি তোরা খাবি কি মা?
লোকমানের স্ত্রী বলল, অসুবিধা নেই বাবা ঘরে চাল আছে আমি আবার কয়টা চাল রান্না করে নিব।
পর্বঃ ১
#কুল_বড়ই
সম্পূর্ণ সত্য ঘটনা অবলম্বনে পর্ব ২
গল্পঃ কুল-বড়ই (পর্ব : ২)
লোকমানের স্ত্রী বলল, আপনার ঠিকমতো হয়েছে তো বাবা ভাত তরকারি?
হ্যাঁ, অনেকদিন পর বেশ আরাম করে খেলাম। পেট ভরে গেছে। শুকরিয়া। পাগল বসা থেকে উঠতে উঠতে বলল, তোর তো কোনো সন্তান নেই, তাই না?
লোকমানের বউ অবাক হয়ে বলল, না নেই। কিন্তু আপনি জানলেন কি করে?
পাগল কোন প্রত্যুত্তর না দিয়ে বলল, শোন ফজর নামাজ শেষে তোর যে কুলবড়ই গাছটি আছে উঠোনে, সেটি তুই আর তোর স্বামী মিলে ঝাঁকুনি দিবি। দেখবি একটা কুলবড়ই গাছ থেকে মাটিতে পড়বে। সেটা তুই আর তোর স্বামী বিসমিল্লাহ বলে সমান ভাগে খেয়ে নিবি। তাহলে তোর গর্ভে সন্তান আসবে। এ কথা তুই তোর স্বামী ছাড়া আর কাউকে বলবি না।
কিন্তু এখনতো বর্ষাকাল বাবা কুলের সিজন না, তাহলে কুলবড়ই আসবে কোত্থেকে?
তোকে যা করতে বলছি তাই করবি, ধমকের সুরে পাগলটি বলল। আর হ্যাঁ, তোর ছেলে হোক মেয়ে হোক তাকে বার বছর খুব চোখে চোখে রাখবি।
এ বলে পাগলটি বাড়ির চৌকাঠ পেরিয়ে সামনের আঙ্গিনা দিয়ে বের হয়ে যেতে লাগলো।
লোকমানের স্ত্রী ভাত রান্না করার জন্য পাতিলে চাল নিতে পাতিল ধরতেই দেখে যে পূর্বের ন্যায় ভাতে পরিপূর্ণ। কড়াইতেও করলা ভাজি ঠিক যেমনটি ছিল রান্নার পর তেমনটিই আছে। এতটুকুও কমেনি।
সে একটু বিস্মিত হল। সন্ধ্যা লোকমান বাড়ি ফিরলে তার স্ত্রী তাকে সব খুলে বলে। লোকমান শুনে হেসে উড়িয়ে দেয় ব্যাপারটা। বলল, তুমি হয়তো স্বপ্ন দেখেছো। তার স্ত্রী বলল, স্বপ্ন না, সত্যি পাগল এসেছিল এবং তা বলে চলে গেল। তখন লোকমান বলল, পাগলে কিনা বলে। পাগলরা এমন কত কথাই বলে। ভাত আর করলা ভাজির বিষয়টা তোমার চোখের ভুল।হয়তো তুমি বেশি রান্না করেছো তাই পাগলটি খাওয়ার পরও অনেকটা অবশিষ্ট রয়ে গেছে। লোকমানের স্ত্রী আর কথা বাড়ালো না।
তারা দুজনেই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজি। ফজরের নামাজ শেষে তার স্ত্রীর অনেক অনুরোধ আর আকুতি মিনতীর ফলে লোকমান অবশেষে রাজি হয় উঠোনে এসে কুলবড়ই গাছটি ঝাঁকুনি দেয়|।কয়েকটি ঝাঁকুনি দিতেই হঠাৎ দেখল সত্যি সত্যি একটা বড় পাকা কুলবড়ই ঝরে পড়লো। তারা দুজনেই আশ্চর্য হয়ে যায় কারন এখন বর্ষাকাল, কুলের সিজন না। তারপর তারা দুজনে এটিকে সমান ভাগে ভাগ করে বিসমিল্লাহ বলে খেয়ে নিল। বড়ইটির স্বাদ ছিল সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। খুবেই মিষ্টি সুস্বাদু এবং সুগন্ধীযুক্ত। যা কোনো সাধারণ গাছের কুলের মত না। এমন ফল তারা আগে কখনো খায়নি।
দুই মাস যেতে না যেতেই লোকমানের স্ত্রী টের পেল সে সন্তান সম্ভাবা। এ কথা লোকমানকে বলতেই লোকমান আনন্দে তার স্ত্রীকে সরকারি হাসপাতালের ডাক্তার দেখাতে নিয়ে যায় নিশ্চিত হওয়ার জন্য। ডাক্তার পরীক্ষা নিরীক্ষা করে বলল, মিষ্টি খাওয়ান আপনারা বাবা মা হতে চলেছেন।
দিন যায় মাস যায়, একদিন তার স্ত্রী একটি ফুটফুটে কন্যা সন্তানের জন্ম দেয়। তারা আদর করে সন্তানের নাম রাখে ‘লামিয়া’ । পরম আদর মমতায় বেড়ে উঠতে লাগলো মেয়েটি। কিন্তু মেয়েটি খুবই চঞ্চল প্রকৃতির। এক জায়গা স্থির থাকতে চাইতো না। হামাগুড়ি দিয়ে মুহূর্তে বাড়ির আঙ্গিনায় এপাশ থেকে ওপাশে চলে যেত।
চলবে..
#কুল_বড়ই
সম্পূর্ণ গল্পের লিংক