সম্পূর্ণ সত্য ঘটনা অবলম্বনে পর্ব ৬
গল্পঃ কুল-বড়ই ( পর্ব : ৬ )
লামিয়া ওপাশ থেকে দরজা ধাক্কাচ্ছে, কান্না করে কথা বলছে, আব্বু আম্মু দু’জনকেই ডাকছে, লোকমান ও তার স্ত্রী তারা দু’জনেই শুনতে পায়! দু’জন দু’জনের দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষন নির্বাক হয়ে যায়! লোকমান তার স্ত্রীর দিকে বিস্ময়ের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলছে, আমাদের লামিয়া আসছে! হন্তদন্ত হয়ে লোকমান খাট থেকে যেইনা নামতে উদ্যত হল তার স্ত্রী ডান হাতটি চেপে ধরল। স্ত্রী বলল, কই যান?! লোকমান অবাক্ হয়ে জিজ্ঞেস করলো, কেন তুমি শুনছোনা লামিয়া যে আমাকে ডাকছে?! হ্যাঁ শুনেছি! একটু অপেক্ষা করেন। কে ডাকছে?! কাকে ডাকছে?! কেন ডাকছে?! আগে ব্যাপারটা বুঝে নেই। শুনেছি মুরুব্বিরা বলতো, মরা বাড়িতে নিশি ডাকে ঐ বাড়ির মানুষের নাম ধরে। এক ডাকে যেতে নেই। বিপদ হয়। আমাদের এখন এমনিতেই অনেক বিপদ। লোকমান তার স্ত্রীর কথায় কর্ণপাত না করে মৃদু ধমকের সুরে বলল, আরে রাখো তোমার বিপদ! দেখছোনা আমাদের মেয়ে আমাদের কাছে ফিরে আসছে?! তাদের স্বামী স্ত্রীর কথোপকথনের মাঝেই আবারও দরজা ধাক্কানোর শব্দ হয়! লোকমান এবার সাহস করে দরজা খুলতেই তারা স্বামী স্ত্রী দু’জনেই স্পষ্ট দেখতে পায় একটা বাচ্চা ছায়ামূর্তিকে বাগানের দিকে চলে যেতে।
সেদিন রাতে তাদের আর ঘুম হয় না। ফজরের নামাজ শেষে লোকমান মসজিদের ইমাম হুজুরকে সবকিছু খুলে বলে। হুজুর বিকেল বেলায় এসে পানি পড়া বাড়ির চারিপাশে ছিটিয়ে দিয়ে যায়। তারপর কয়েক মাস আর কিছু হয় না। সবাই সব কিছু ভুলে যায়। লোকমানের ছোট ভাইটা শুধু মাঝে মধ্যে স্বপ্নে দেখতে পায়, লামিয়া চাচ্চু চাচ্চু বলে দৌড়ে সামনে এসে থমকে যায় আর হাত দুটু বাড়িয়ে ইশারা করে কোলে তুলে নিতে। যেইনা কোলে তুলতে যাবে আর ঠিক তখনি তার ঘুম ভেঙ্গে যায়। এরকম স্বপ্ন লোকমানের ছোট ভাই একাধিক বার দেখে। সকালে নাস্তা করার সময় তার স্ত্রীকেও বলেছে স্বপ্নের কথা। তার স্ত্রী বলেছে, ফকির মেস্কিন দেখলে কিছু দান সদগা করে দিতে। তার ছোট ভাইটা লামিয়ার কবরের কাছে যায়। কবরে পানি ছিটায় রোজ। ফুল গাছ লাগায়। চারিপাশে বেড়া দেয়। যত্ন নেয়। সন্ধ্যা হলে মোমবাতি জ্বালিয়ে দেয়।
তারও বেশ কিছুদিন পর লোকমানের স্ত্রী দেখতে পায় পুকুরের যেখানটিতে লামিয়ার মৃতদেহ ভেসে উঠে সেখানে বিশাল বড় একটি নীলপদ্ম ফুল ফোটেছে। নীল রঙের প্রতিটি পাপড়ি বেশ বড় বড়। স্বাভাবিক পদ্মফুলের কয়েকগুন বড় ফুলটি। তারউপর গোলাপি ডোরাকাটা দাগের খুব সুশ্রী একটি সাপ এসে বসে থাকে। বিষয়টি প্রথম নজরে আসে লোকমানের স্ত্রীর।সে তার স্বামীকে বললে লোকমানের পরিবার ও আয়নাল চাচার পরিবার সকলে বিষয়টি গুরুত্বের সহিত লক্ষ্য করে।
লোকমানের স্ত্রী বিকেল বেলায় যখন রান্নাবান্নার কাজে ব্যবহৃত হাড়িপাতিল পুকুরে মাজতে আসে তখনই দেখতে পায় সাপটি একপলকে তার দিকে তাকিয়ে থাকে। যেন কি যেন বলতে চায়। লোকমানের স্ত্রীর বড্ড মায়া হয়। সে বাটিতে করে একবাটি দুধ এনে দেয় পুকুর ঘাটে। প্রথম প্রথম দু’দিন বাটি খালি দেখলেও পরক্ষনে খেয়াল করে দেখে যে তাদের বাড়ির পোষা বিড়াল ছানাটি এসে বাটির দুধ খেয়ে নেয়! আয়নাল চাচা চাচি তার স্ত্রীকে বলে, সাপ দুধ খায়না! পোকামাকড়, ব্যঙ খায়! দুধ আর দিওনা! সাপটিকে তাড়ানোর চেষ্টা করনা কখনো! কে জানে হয়তো আমাদের লামিয়ার আত্মাই সাপ হয়ে তার মাকে দেখতে আসে! অনেকদিন সাপটিকে একটি নির্দিষ্ট সময়ে নীলপদ্ম ফুলটির উপর বসে থাকতে দেখা যায়! আস্তে আস্তে ফুলটি যখন শুকিয়ে যায় সাপটিকে আর দেখা যায়নি!
ইতিমধ্যে লামিয়ার কবরের উপর ফুলের গাছগুলো প্রত্যেকটি ফুলে ফুলে ছেয়ে যায়! গোটা কবরকে যেন এক কুন্জ ফুলে আবৃত করে ফেলেছে! এখন রাতে পুরো বাড়িতে লামিয়ার কবরের ফুলের সুবাসে মৌ মৌ করে! লোকমান এবং তার স্ত্রীও শান্তনা পায় এই ভেবে যে, আমাদের মেয়ে জান্নাতি ফুলের বাগানে শুয়ে আছে!
এদিকে লোকমানের স্ত্রী সন্তান প্রসব করার সময় হয়ে এসেছে। তার শাশুড়ি তাদের বাড়ি আসে। তার স্ত্রীকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। রাত আনুমানিক দেড়টায় লোকমানের স্ত্রী আবারও একটি কন্যা সন্তান প্রসব করে। দেখতে হুবহু লামিয়ার মতোই!
চলবে….
#Imran_Khan_Ratan
#কুল_বড়ই