Medusa
“সর্পকেশি মেডুসা” Greek mythology এই চরিত্রকে চেনে না এমন মানুষ কমই আছে। অনিন্দ্য সুন্দরী medusa সাথে কি এমন হয়েছিল যে সে দানবীতে রুপান্তরীত হয়েছিল। যার চোখের দিকে তাকালে মানুষ নিমিষেই পাথর হয়ে যেত! ভয়ঙ্কর সে দানবিকে আমরা দেখেছি অনেক সিনেমাতেও।
ক্লাশ অফ দ্য টাইটানস,পার্সি জ্যাকশন সিনেমাগুলোতে মেডুসার ভয়াবহাতা কিছুটা হলেও টের পাওয়া যায়। প্রিয় শ্রোতা, আজ চলুন জানা যাক গ্রিক মিথের এই দানবীর গা শিউরে ওঠা গল্প।আশা করছি আজকের গল্প আপনাদের টানটান উত্তেজনায় রাখবে।
গ্রিক মিথে প্রায়ই দেবতারা রুষ্ঠ হয়ে অভিশাপ দিতো আর জন্ম লাভ করতো নতুন কোন মিথের। তাদের অভিশাপে কতো দেবতা দানবে পরিণত হয়েছে আর কতো দানব হয়েছে ধ্বংস।মেডুসার গল্পও এরকমই অভিশাপ নিয়ে।চলুন প্রথমে জেনে আসা যাক মেডুসার জন্ম কথা।
medusa জন্ম নিয়ে বিভিন্ন ধরণের মত আছে, মডুসার জন্ম নাকি হয়েছিল অন্যান্য দানবের মতোই দানব টাইফুন আর দানবী একিতনার ঘরে। মেডুসার আগেও দুইটি মেয়ে ছিল তাদের।এই তিন বোনকে একসাথে বলা হতো গর্গোন। এই গর্গোনদের মাঝে মেডুসায় ছিল মরণশীল, আর বাকি দুই বোন ছিল অমর।
অন্য একটি মতে, মেডুসার জন্ম নাকি দেবতাদের ঘরেই।সাগরের দেবতা ফোর্সিস ও সিটোর ঘর আলো করেই নাকি জন্ম নিয়েছিল অনিন্দ্য সুন্দরী মেডুসা। ছোট বেলাতেই যে কিনা নিজেকে দেবি এথিনার সেবাই নিয়জিত করেছিল। পৃথিবীর একদম উত্তরে যেখানে সূর্য দেখা যায়না সেখানেই নাকি ছিল দেবী এথেনার মন্দির। একবার মেডুসার ইচ্ছা হলো সূর্য দেখার কিন্তু দেবী এথেনা তাকে সে অনুমতি দিলনা। মেডুসা রেগে গিয়ে তাকে বলে ফেললো, ঈর্ষা করে এথেনা তাকে সূর্য দেখতে দিতে চাইছেনা।কেননা সে এথেনার চেয়ে অনেক সুন্দরি আর তাই সে চাইছেনা মেডুসার সৌন্দর্য্য অন্য কেউ দেখুক।
এই কথা শুনে এথেনা রেগে গিয়ে মেডুসাকে অভিশাপ দেয়, যে সৌন্দয্য নিয়ে এতো গর্ভ মেডুসার সেই সৌন্দর্য্য কদর্যে রুপ নিবে, আর তার চোখে যে তাকাবে সে নিষ্প্রাণ পাথরে পরিণত হবে। সাথে সাথে মেডুসার শরীর থেকে রুপ খসে পরে,তার গায়ের রং হয় সবুজ যার গন্ধ আঁশটে। তার অনিন্দ্য কেশরাজি পরিণত হয় হাজারো বিষাক্ত সাপে। এভাবেই নবরূপে জন্ম হয় দানবি মেডুসার।
আবার অনেকের মতে এভাবে নয়,বরং দেবতা পসাইডনের জন্য দানবীতে পরিণত হয় medusa। এথাইনার মন্দিরে মেডুসাকে দেখেই পছন্দ হয়ে যায় দেবতা পসাইডনের। মেডুসাকে তিনি প্রেম প্রস্তাব দেন, পরে প্রেমে মক্ত হয়ে সব কিছু ভূলে কামনার ফাঁদে পরে দেবী এথেনার মন্দিরেই তারা সঙ্গমে লিপ্ত হন। মন্দিরের ভিতর এমন কাজ করায় ক্ষিপ্ত হয়ে পড়েন দেবী এথেনা। পসাইডনকে কিছু করতে পারবেন বলে তার সব রাগ গিয়ে পড়ে মেডুসার উপর। মেডুসাকে আভিশাপ দেন তিনি, আর medusa তার সকল রুপ হারিয়ে পরিণত হন দানবী সর্পকেশি মেডুসাতে।
মেডুসার গল্প শেষ করতে গেলে পার্সিয়াস এর কথা আনতেই হবে। পার্সিয়াস মূলত গ্রিক দেবতা জিউস ও এক মানবীর সন্তান। তাই তাকে ডেমি গড বলা হয়, অর্থাৎ অর্ধেক মানব অর্ধেক দেবতা। সেরিফস দ্বিপের রাজা পলিটেকটাস এর এক ভোজন সভায় আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন একবার পার্সিয়াস। সেখানে রাজা পলিটেকটাস বলেছিলেন গর্গোন বোন দের কথা, সাথে এও বলেছিলেন কেউ যদি তাকে মেডুসার কাঁটা মাথা এনে দিতে পারতো তবে তিনি সবচেয়ে বেশি খুশি হতো। সে সভায় সবাই অনেক দামি উপহার আনলেও পার্সিয়াস কিছুই আনতে পারেন নি।রাজা এতে খুব অপমান বোধ করেন, পার্সিয়াস তখন দাঁড়িয়ে বলেন যে তিনি মেডুসার কাঁটা মাথা নিয়ে আসবেন।
এদিকে আরেকটি গল্পে জানা যায় যে, পার্সিয়াস আরগুস রাজ্যের জন্য মেডুসাকে বধ করতে গিয়েছিলেন। গ্রিক দেশের আরগুজ রাজ্যের রাজা দেবতাদের অস্তিত্ব অস্বিকার করেছিলেন। তাই দেবতারা ক্রদ্ধ হয়ে পাতালের কারাগার টারটারাস থেকে ভয়ানয়ক এক জল দানব ক্রাকেন কে অবমুক্ত করে দেন আরগুজ রাজ্য ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য।পুরো রাজ্যর মানুষকে বাঁচানোর জন্য দুটি পথই কেবল খোলা ছিল।এক, রাজার মেয়ে এন্ড্রমিডাকে ক্রাকেনের কাছে বলি দিতে হবে।অথবা দুই, ভয়ঙ্কর দানবী মেডুসার কাঁটা মাথা নিয়ে আসতে হবে ক্রাকেনের সামনে। রাজ্যের সবই যখন রাজার মেয়ে এন্ড্রমিডাকে বলি দেওয়ার প্রস্ততি নিচ্ছিল, তখনই পার্সিয়াস মেডুসাকে বধ করার জন্য রওনা দেয়।কিন্তু মেডুসার মতো দানবীকে বধ করা তো মুখের কথা নয়। তাই ডেমিগড পার্সিয়াসের সাহায্যের প্রয়োজন ছিল,আর তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে এলেন স্বয়ং জ্ঞানের দেবী এথেনা ও দেবতাদের বার্তাবাহক হারমিস। দেবী এথেনা পার্সিয়াসকে কিছু কৌশল শিখিয়ে দিলেন আর সঙ্গে দিলেন নিজের বর্ম থেকে তৈরি ব্রোঞ্জের ঢাল।আর হারমিস তাকে দিলেন একটি তরবারি,জাদুর টুপি ও একটি থলে। যে টুপি পড়লে অদৃশ্য হওয়া যায়,আর এই থলেতে যে কোন কিছু রাখা যায়। এসব নিয়ে পার্সিয়াস চললেন মেডুসাকে বধ করতে।
medusa থাকতো দূর দ্বিপে তার গর্গোন বোনদের সাথে,যেখানে তাদের হত্যা করতে গিয়ে কেউ আআর ফিরে আসতে পারেনি। পার্সিয়াস জানতো সরাসরি মেডুসার চোখের দিকে তাকানো যাবেনা,তাকালেই সে পাথর হয়ে যাবে।তাই সে ব্রঞ্জের ঢালে মেডুসার প্রতিচ্ছবি দেখে তার পিছু নেওয়া শুরু করলো এবং সুযোগ বুঝে অদৃশ্য হয়ে তরবারির এক আঘাতে মেডুসার মাথা কেটে চোখ না ফিরিয়েই তা ভরে ফেললো ওই থলিতে।
গর্গোন বোনরা টের পাবার অগেই সে পালিয়ে রওনা দিল আর্গুসের দিকে। অন্যদিকে আরগুসে ঢুকে পড়েছে ক্রাকেন,আর ক্রাকেনের উদ্দেশ্য রাজার মেয়েকে বলি দেওয়ার জন্য রাজার মেয়েক বেঁধে রেখেছে রাজ্যের লোকজন। দেবতারা দেখছিলেন সব কিছু আর অপেক্ষা করছিলেন আরগুজের ধ্বংসের জন্য। ক্রাকেনের ধ্বংস যোগ্যের মাঝেই চলে আসেন পার্সিয়াস। রাজার মেয়ে এন্ড্রমিডাকে মুক্ত করে ক্রাকেনের বিশাল আকার চোখের সামনে তুলে ধরেন মেডুসার মাথা।মেডুসার চোখের শীতল দৃষ্টি শেষ বারের মতো চোখে পড়ে দানব ক্রাকেনের।আর তাতেই জল দানব ক্রাকেনের সমস্ত শরীর পাথরে পরিণত হয়। আর এভাবেই শেষ হয় মেডুসার গল্প কথা।
হতে পারে Medusa দানবী,হতে পারে সে হত্যা করেছিল অনেক মানুষকে কিন্তু তার সাথেও তো ভালো কিছু হয়নি। Medusa গল্প পৌরণিক হলেও শিক্ষা দিয়ে যায় বাস্তবতার।