- মজার প্রেমের গল্প
- রোমান্টিক হাসির ছোট গল্প
- ভালবাসার হাসির গল্প
- দমফাটা+হাসির+গল্প
- শিক্ষনীয় হাসির ছোট গল্প
- পুরানো মজার গল্প।
১.মজার প্রেমের গল্প
কলেজ থেকে বের হয়ে বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে ছিলাম। হঠাৎ একটা ছেলেকে দেখে খুব ভালো লেগে গেল। বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলাম।
তারপর ভাবলাম,
” সাহস করে মোবাইল নাম্বার চেয়ে দেখি, আজকের পর আর যদি কোনদিন দেখা না হয়। “
যেই ভাবনা সেই কাজ।
আমি তার কাছে গিয়ে বললাম,
” আপনার নামটা জানতে পারি? ”
” কেন? “
” কারণ আপনাকে আমার ভালো লেগেছে, আমি তো প্রথম দেখেই মুগ্ধ হয়ে গেছি। ”
ছেলেটা খানিকটা অপ্রস্তুত হয়ে গেল। আশেপাশে ভালো করে তাকিয়ে আবার আমার দিকে তাকালো।
বললো,
” তুমি কিসে পড়ো? ”
” ইন্টার সেকেন্ড ইয়ার। ”
” নিউটনের সূত্র তিনটা জানো? ”
” জানতাম ভুলে গেছি। ”
” সামান্য তিনটি সূত্র মনে রাখতে পারো না, আবার রাস্তায় ছেলেদের পছন্দ করো। ”
আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলাম। আমাদের কাছে এক আঙ্কেল গভীর মনোযোগ দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইল। আমি আরো লজ্জা পেলাম।
এরপর ছেলেটা তার কলম বের করলো। তারপর একটা কাগজে কি যেন লিখলো। লেখা শেষ করে সেই কাগজটা আমাকে দিয়ে বললো,
” বাসায় যাবার সময় সূত্র তিনটা মুখস্থ করতে করতে বাসায় যাবে। এখন হচ্ছে পড়াশোনা করার বয়স, এসব প্রেম ভালো লাগা অনুভব করার বয়স নয়। ”
আমি কাগজটা নিয়ে অপমানিত হয়ে চলে এলাম। বেশ খারাপ লাগছে, একটু পরে বাস আসে আর আমি তখন বাসে উঠে বসি।
বাসে বসে বসে কাগজটা বের করলাম। কি ঘোড়ার আন্ডা সূত্র লিখেছে দেখতে ইচ্ছে হলো। কাগজটা বের করে আমি বোকা হয়ে বসে রইলাম।
সেখানে লেখা ছিল,
” আমার পাশে আমার বাবা দাঁড়িয়ে আছে। চাইলেও তোমার সঙ্গে ভালো করে কথা বলতে পারবো না। তুমি কিছু মনে করো না, আমার মোবাইল নাম্বার দিলাম। বাসায় গিয়ে কল দিও। তোমাকেও আমার খুব পছন্দ হয়েছে। “
©️
২.রোমান্টিক হাসির ছোট গল্প
প্রেমে যদি পড়তেই হয়, তবে গরু-ভেড়া-ছাগলের প্রেমে পড়ুন। একমাত্র ঢিশ খাওয়া ছাড়া অন্য কোনো রিস্ক নাই, ছ্যাঁকা খাওয়ার সম্ভাবনা জিরো। এরা কখনো আপনাকে হতাশ করবে না। ওদিকে মানুষ প্রেম নিয়ে খুব লুকোচুরি খেলে। প্রেম থার্মোমিটার থাকলে মেপে মেপে মানুষের বিয়ে দেওয়া যেত। লাইলি বলে মজনুকে ভালবাসে, কিন্তু মন থাকে ফরহাদের দিকে। আরও খারাপ দিক হলো সন্দেহ করতে করতে জীবন শেষ, ভালবাসবেটা কখন? বাংলা সিনেমার মতো শেষে মরার আগে বউ তার সত্তর বছরের জামাইয়ের হাত ধরে বলে- ওগো আরেকটা বিয়ে করে সুখী হও; অনুমুতি দিলাম। [আ..আ.. ঢ্যাং..! না..]
ভালবাসা মানে পাঁচ পার্সেন্ট সোহাগ, পাঁচ পার্সেন্ট ঝগড়াঝাটি, দশ পার্সেন্ট বাজার করা আর আশি পার্সেন্ট সন্দেহ।
.
রাত সাড়ে বারোটার দিকে নিচে নেমে এসে ছাগলের দুধের ডিব্বার সিল খুলে আধা গ্লাস মাইক্রোতে গরমে দিলাম। আজকে ছাগলের দুধ কিনছি ফিফটি পার্সেন্ট ছাড়ে। জিনিসটা চাখা দরকার। খুব নাকি পুষ্টি। কালকের বানানো গিন্নির চিজ পাস্তা বাটিতে নিয়ে গরম করে বাইরের ঘরে হাঁটা ধরি।
.
ফ্রিজটার ভেতরটা দেখতে খুব ভালো লাগছে।
গত সপ্তাহে তিন দিন কারেন্ট না থাকার পর বেশ কিছু জিনিস পচে গিয়েছিল। ওসব ফেলে নতুন করে গুছিয়েছে গিন্নি। অর্ধেক জিনিসই কাজের ছিল না। আসলে উপলক্ষ ছাড়া গুছানো হয় না। কেউ বেড়াতে আসার কথা থাকলে তবেই মানুষ ঘর গোছানো শুরু করে। এমনিতে ভাগাড়ের চাইতেও খারাপ অবস্থায় রাখে। ওদিকে মেহমান এসে দেখে চকচকে ফাইভ ষ্টার হোটেল। বলে- ভাবি, আপনার ঘর কি সুন্দর গুছানো, আর আমার বাসা.. ছিঃ ছিঃ।
তখন আমার এমন হাসি লাগে..
.
.
ছাগল জাতিকে শুধু যে ভালোবাসি; তা নয়। গর্বও করি।
এর প্রধান কারণ তারা খাবার-দাবার নিয়ে বেশি বাছ-বিচার করে না। আর তাদের সিনার সাথে সাদা ধবধবে কচকচে বেলি ফুলের সুবাসে ভরপুর চর্বির যে স্বাদ ভাই রে ভাই.. ভাতের সাথে পাতলা মসুরের ডাল দিয়ে চর্বি চিবানোর মতো মধুর কিছু এ জগতে শুধু একটাই দেখছিলাম; সেটা হলো মহিলা গরুর ওলনের চর্বি। উফফ! এ চর্বি খাওয়ার পারফেক্ট সময় হলো মাংস ভালমতো কষিয়ে পানি ঢালার ঠিক আগ মুহূর্তে হাঁড়ি থেকে তুলে নেওয়া। এর মধ্যে দেখবেন সুতার আঁশের মতো মিহি চর্বি থাকে। জামদানি শাড়ি বুননের মতো নিখুঁতভাবে স্তরে স্তরে সাজানো। কি ফ্লেভার মাইরি! মাসকালাইয়ের ডালের ঝাল খিঁচুড়ির সাথে ওলনের চর্বি ছিঁড়ে খেতে খেতে নাকের পানি চোখের পানি এক করার মতো আনন্দের কিছু এখন পর্যন্ত আবিষ্কার হয়নি। একেই বলে আনন্দের কান্না। ওদিকে এক মানুষ আরেক মানুষের কাছে বাঁশ খেয়ে শোকে-দুঃখে চোখের পানি ফেলে।
মানুষ এতো বোকা!
.
আগুন ধরা ঝাল খিঁচুড়ির সাথে আরেকটা জিনিস জমে ভালো; তা হলো গরুর পাছার সলিড খসখসে কষানো মাংস। প্রচুর বাটা আদা-রসুনে কষানো ঝোলে চুবিয়ে নিয়ে খাওয়া; যেমন সিঙ্গারা সসে চুবিয়ে খাওয়া হয়। কাটাকুটি করবার সময় ভুলে কসাইরা একদম পাতলা সাত চারা খেলার গুটির মতো সাইজ করে ফেলে। এই চাকতি গোশ যদি আপনি পুকুরের পানিতে ভূমির সমান্তরালে জোরে ছুঁড়ে মারেন, দেখবেন পানির সারফেসে পনেরো বিশটা ড্রপ খেয়ে অন্য পাড়ে উঠে গেছে! এই গোশ আরও জমে চালের আটার রুটির সাথে গরম ঝোল দিয়ে। আগেও অনেকবার বলছি, মাংস কষানোর পর রান্না স্টপ করে দেবেন। তখন পাবেন চূড়ান্ত ফ্লেভার। মশলা থেকে বের হওয়া তেল যে কেমন মুক্তোর মতো জ্বল জ্বল করে গো!
.
খিঁচুড়িও অবশ্য ফ্রিজে ছিল, কাবাবও। থাক, বেশি বেশি হয়ে যাবে। কম খাওয়ার অভ্যাস করা উচিত। কয়েকদিন কারেন্ট না থাকায় দুই প্যাকেট; অর্থাৎ আড়াই লিটার দুধ জ্বাল দিয়ে দিয়ে রাখতাম যাতে নষ্ট না হয়। ফলে রং হয়ে গেছে হালকা গোলাপি। মালাই চা বানানোর জন্য পারফেক্ট। তবে আমার ভাগ্য আজ খুব ভালো, প্রায় দুই মিলিমিটার পুরুত্বের সর জমে আছে। আমি তর্জনী আর বুড়া আঙ্গুল দিয়ে চিমটি কেটে উপরে টেনে তুলতেই পুরো সর উঠে আসলো মাছধরা জালের মতো। ওটা পিরিচের উপর রেখে আধা চামচ চিনি ছিটিয়ে আয়েশ করে টিভির সামনে বসি। এটা হলো দুনিয়ার বেস্ট ডেজার্ট।
.
গরুর প্রেমে পড়ার আরেকটা কারণ হলো এদের মায়াকাড়া, ঘুমে ঢুলু ঢুলু চোখ। বিশেষ করে পোয়াতি গাভীর চোখ। রবীন্দ্রনাথ মনে হয় গাভীর চোখ দেখেই লিখেছিলেন-
“বিধি ডাগর আঁখি যদি দিয়েছিল
সে কি আমারি পানে ভুলে পড়িবে না॥”…
.
ছাগদুগ্ধ মগে চুমুক লাগিয়ে কিছুক্ষন মুখের মধ্যে রেখে স্বাদ অনুভব করার চেষ্টা করি। যেভাবে চা ফ্যাক্টরিতে লিকার টেস্ট করা হয়। ভালো; যদিও একটু পাঠা পাঠা ফ্লেভার আছে। আসলে পশু পাখির গায়ের গন্ধ তার মাংসতে বা দুধে থাকবেই। যেমন গরুর বা মুরগির গায়ের গন্ধ মাংসতে পাওয়া যায়। সেরকম কবুতর, ভেড়া, হাঁস; এদের মাংসেও গায়ের গন্ধ তীব্রভাবে থাকে। ভেড়ার মাংসের বুনো বুনো গন্ধটা ইউনিক। এজন্যই টার্কিশরা এতো ভেড়া খায়।
.
টেবিলের ওপর রাখা আরেকটা মগ চেক করে দেখি বিত্ত রাতে ছাগলের দুধ চেয়ে আর খায়নি; হয়তো এক চুমুক দিয়ে রেখেছে। এটা আর না তুলি। রান্নাঘরের দিকে যেতে যেতে ফিনিশ করে ফেলি। খুব পুষ্টিকর। গান্ধী জি খেতেন।
.
.
বেশ কিছু বাসন জমে গেছে, ওগুলো ধুয়ে রাখাই ভালো। ধুতে গিয়ে দেখি ঠিক চুলার পাশে বাটিতে ঢাকনা দেওয়া রামেন নুডুলস। ভেতরে একটা সেদ্ধ ডিমও ভাসছে। এগুলো এখন ফ্রিজে ঢুকানো মানে আরেকটা বাক্স খুঁজে বের করো, যেটার ঢাকনা পাওয়া যাবে না। তখন আবার আরেকটা বক্সে ট্রান্সফার করে ফ্রিজ গুছিয়ে জায়গা করে ঠেলে ঢুকাও..!
ওসব ঝামেলা কে করতে যাবে? তাই জায়গামত চালান করে দিয়ে সময় বাঁচালাম।
.
এখন রাত প্রায় দেড়টা।
আজকের মতো ফিনিশিং দিতে ফ্রিজ খুলে চ্যাপমানের আইসক্রিমের ডিব্বা বের করি। এক আইসক্রিমের মধ্যে তিনটা স্বাদ দেওয়া স্তরে স্তরে; মধ্যেখানে ভ্যানিলা আর দুইপাশে চকলেট আর স্ট্রবেরী।
.
আইসক্রিম বাটিতে নিয়ে ছোট্ট চামুচে করে মুখে পুড়তে পুড়তে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে থাকি। গরুর দুধের ফ্রেশ ক্রিমের কি যে মিষ্টি একটা গন্ধ! সত্যি, মানুষ কোন দুঃখে যে মানুষের প্রেমে পড়ে আজাইরা সময় নষ্ট করে..
.
বিছানায় শুতেই দেখি গিন্নি হেডফোনে ‘গোলুস রেসিপি’ দেখে কেঁপে কেঁপে হাসছে। তারপর নিঃশব্দে নেমে রান্নাঘরের দিকে যাচ্ছে! সর্বনাশ, রামেন নুডুলসের সন্ধানে না তো!
আমি কাঁথা মুড়ি দিয়ে মরার মতো পড়ে থাকি।
জাগা মানুষকে হাজার ঠেলেও জাগানো যাবে না..
.
.
.
জাভেদ ইকবাল
৩.ভালবাসার হাসির গল্প
ফাতেমা। আমার স্ত্রী।
আমার মনে হয় পৃথিবীর সবচেয়ে বোকা, সহজ সরল আর অপদার্থ মেয়েটাকে আমি বিয়ে করেছি। এতটা বোকা মেয়ে দিয়ে কি আর এই ঢাকা শহরে সংসার হয়। এই, সব দোষ আমার বড়ো মামার। আমাকে ফোন দিয়ে বলে কী, মোজাম্মেল বাজান, তোমার জন্য তো দুধেআলতা একখান মাইয়্যা ঠিককরা হয়েছে। মাইয়্যার চতুর্মুখী গুণ। বেশি সময় নেওয়া যাবে না। তুমি চটজলদি গাড়িত উইট্যা পড়ো।
লোকটাকে আমি বিশ্বাস করে ভীষণ ঠকেছি। এতটা অন্যায় আমার সাথে তিনি করতে পারলেন! তিনি আমার গুরুজন। তাকে আমি খুব মান্য করি। তাকে মানার এই প্রতিদান দিলেন আমাকে। এই রকম অপদার্থ একটা মেয়ে আমার ঘাড়ে ঝুলিয়ে দিলেন।
শুক্রবার বিয়ে হলো। আমার হাতে ছুটি কম। ছাপাখানার সুপারভাইজারের চাকরি। ছুটিছাটাও কম। মালিককে বলে কয়ে মাত্র তিনদিন ছুটি নিলাম। বিয়ের পরদিন ফাতেমাকে নিয়ে রওনা দিলাম। ঢাকায় আসার পথে সারাটা পথ কেঁদেছে মেয়েটা। এতটা কাঁদতে পারে মানুষ। আমার খুব বিরক্ত লাগছে।
আমি বললাম, এত কাঁদছো কেন?
ফাতেমা চোখ মুছতে মুছতে বলল, আমাদের লাল বাছুরটার কথা খুব মনে পড়ছে। গত পরশু রাত থেকে তার খাওয়া দাওয়া বন্ধ। বাছুরটার শরীর খুব খারাপ।
ফাতেমার কথা শুনে আমার রাগ আরও বেড়ে গেল। আমি কিছু বললাম না। বড়ো মামা ফাতেমাকে নিয়ে এত ভালো ভালো কথা বলল রাজি না হয়ে উপায় ছিল না। মামার কথা শুনে আম্মা বললেন, লাখে একখান মাইয়্যা। এই মাইয়্যা হাতছাড়া করা যাইব না। তুমি বাজান আর না কইরো না।
ফাতেমার পড়ালেখা ক্লাস টেন। ফাইনাল পরীক্ষার সময় টাইফয়েড জ্বর হলে আর পরীক্ষা দিতে পারেনি। পড়ালেখা এখানেই শেষ। দেখতে মোটামুটি সুন্দরী। কপালের দিকে একটা কাটা দাগ আছে। বড়ো মামা বললেন, ও কিছু না। ছোটোবেলায় চালতা গাছ থেকে পড়ে গিয়ে কাটছে। মাইয়্যা মানুষের শরীরের একটু দাগ থাকা ভালা। নিখুঁত হইলে অহংকারী হয়।
গাবতলী নামলাম গাড়ি থেকে। গাবতলী নেমে ফাতেমার কান্না মোটামুটি থেমে গেল। এত এত মানুষ আর গাড়ি দেখে সে মনে হয় খুব ভয় পাচ্ছে। আমার শার্টের পেছনের একটা অংশ আঁকড়ে ধরে আছে। আমার খুব বিরক্ত লাগছে। এখন যেতে হবে সেই যাত্রাবাড়ি। যাত্রাবাড়ি শহিদ মুনসির টিনশেড লাইনে আমার বাসা।
বাসায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে অনেক রাত হয়ে গেল। ছোট্ট দুই রুমের একটা বাসা। ছাপাখানার অল্প বেতনের চাকরি। এই বেতনে এর চেয়ে ভালো বাসা নেওয়া ভীষণ কঠিন। আমি নিশ্চিত ছিলাম এই বাসা ফাতেমার পছন্দ হবে না। কিন্তু এই বাসা দেখে ফাতেমা ভীষণ খুশি। আমি মনে মনে ভাবি, বোকা বলেই হয়তো মেয়েটা এত খুশি হয়েছে। এই বাসা দেখে খুশি হওয়ার কিছু নেই।
ভোরের দিকে হঠাৎ করে ফাতেমার খুব জ্বর হলো। ভীষণ জ্বর। জ্বরের ঘোরে ফাতেমা কী সব আবোল-তাবোল বকছে। এসব দেখে আমার ভয় ধরে গেল। বিরক্তিও বাড়ছে। আমি ফাতেমার মাথায় জলপট্টি দিলাম। জ্বর একটু কমতেই ফাতেমা উঠে বসল। ফাতেমা কাঁদছে। ফুঁপিয়ে কাঁদছে। হঠাৎ এভাবে কাঁদতে দেখে আমার বিরক্তি আরও বেড়ে গেল। আমি জানতে চাইলাম কী হয়েছে। ফাতেমা কিছু বলছে না। আমি আর কথা বাড়ালাম না। যা ইচ্ছে করুক মেয়েটা।
ফাতেমাকে নিয়ে আমার সংসার মাসখানেক পেরিয়েছে। এই মাসখানেকের মধ্যে আমি বুঝে গেলাম এমন বোকা মেয়েকে নিয়ে আমার সংসার করা ভীষণ কঠিন হবে। মাঝে মাঝে বড়ো মামাকে ফোন দিয়ে বকাঝকা করি। বড়ো মামা চুপ থাকেন। আমার কোনো কথার উত্তর দেন না। তার শুধু একটাই কথা আল্লাহ তোমার জন্য এই মাইয়্যা হুকুম করছে, তুমি কেমনে তারে অবহেলা করবা।
মামার কথা শুনে আমার রাগ আরও বেড়ে যায়। আমি রাগ করে মামার ফোন কেটে দিই।
মুগডাল দিয়ে ছাগলের মাথা রান্না আমার খুব পছন্দের। ছাপাখানা থেকে ফেরার পথে যাত্রাবাড়ির মোড় থেকে একটা ছাগলের মাথা নিয়ে এলাম। আসার সময় মোল্লার দোকান থেকে মুগডাল নিলাম। বাসায় ফিরতে ফিরতে সন্দেহ হচ্ছিল ফাতেমা কী পারবে ছাগলের মাথা রান্না করতে। নাকি সবটা আবার নষ্ট করে ফেলবে। তারপরও ফাতেমারে বললাম মুগডাল দিয়ে ছাগলের মাথা রাঁধতে।
শরীর ভীষণ ক্লান্ত। প্রায় ঘুমিয়ে পড়েছি। এমন সময় ফাতেমা ঘুম ভাঙালো। ছাগলের মাথা রান্না হয়েছে। আমি খাওয়ার লোভে তড়িঘড়ি করে বসলাম খেতে। মুখে দিতেই আমার খাওয়ার স্বাদ শেষ হয়ে গেল। এত বিশ্রী। ভাত রেখেই উঠে গেলাম খাওয়া থেকে।
আমি বুঝতে পারছি আমার এভাবে ভাত রেখে উঠে যাওয়া দেখে ফাতেমা কষ্ট পেয়েছে। সারারাত কেঁদেছে মেয়েটা। আমার খুব মায়া হলো। এত বোকা হলে কেমন করে হয়। এই সংসার তার। এই সংসারের ভালো মন্দ তাকেই বুঝতে হবে।
ফাতেমার সাথে আমার সংসার আরও তিন মাস পেরুল। রোজ এই মেয়ে এমন সব কান্ড কারখানা করছে মাঝে মাঝে মনে হয় গ্রামে রেখে আসি। আমি একা মানুষ। কী করে আমি তার এসব বোকামি কাÐ কারখানা সামলাব বুঝতে পারি না।
সেদিন ছিল মঙ্গলবার। অফিসের বড়ো সাহেবের একটা কাজে গেলাম গাজীপুর। আসার পথে টঙ্গীতে মারাত্মক একটা অ্যাক্সিডেন্ট হলো আমার। বাম পা ভেঙে গেল। শরীরের আরও জখম। অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকলাম রাস্তায়। লোকজন নিয়ে ভর্তি করালো পিজি হাসপাতালে। রাতে জ্ঞান ফিরলে ফাতেমাকে জানালাম। আমি জানি ফাতেমার করার কিছু নেই। ফাতেমা বসে বসে কাঁদবে। এই হাসপাতাল পর্যন্ত আসার সাহসটুকু তার নেই। তা ছাড়া এই ঢাকা শহরের রাস্তাঘাট ফাতেমা চিনে না। কখনো কোথাও যায়নিও। তারপরও কেন জানি ফাতেমাকে জানাতে ইচ্ছে করল।
ঠিক মাঝরাতে ফাতেমা হাসপাতালে এসে হাজির। ফাতেমা কাঁদছে। হাউমাউ করে কাঁদছে। ফাতেমার কান্না দেখে আমার খুব মায়া হচ্ছে। এই প্রথম ফাতেমাকে দেখে আমার মনে হলো মেয়েটা একটুও বোকা না। এই মাঝরাতে যে মেয়ে একা একা যাত্রাবাড়ি থেকে পিজি হাসপাতালে আসতে পারে সে কখনো বোকা হতে পারে না।
প্রায় মাসখানেক ছিলাম হাসপাতালে। ফাতেমা রোজ সেই ভোরে যাত্রাবাড়ি থেকে খাবার দাবার রান্নাবান্না করে নিয়ে আসত হাসপাতালে। সারা দিন হাসপাতালে থেকে রাতে ফিরে যেত যাত্রাবাড়ি। এভাবেই চলল। প্রায় মাসখানেক পর বাসায় ফিরলাম। আরও বেশ কিছুদিন আমাকে বিছানায় থাকতে হবে। জমানো সব টাকা শেষ হতে চলল। ফাতেমা কেমন করে জানি সবকিছু চালিয়ে নিচ্ছে। ফাতেমা তার বাবাকে বলে দিয়েছে। তিনি মাঝে মাঝে বস্তায় করে ঢাকার বাসে চাল ডাল নানা জিনিস পাঠায়। ফাতেমা গাবতলী গিয়ে সেই চাল ডালের বস্তা নিয়ে আবার বাসে করে যাত্রাবাড়ি আসে।
একদিন দেখি ফাতেমা বাসায় কাঁথা সেলাইয়ের কাজ শুরু করেছে। নানা রংবেরঙের কাঁথা সেলাইয়ের কাজ। আমি বিছানায় শুয়ে শুয়ে ফাতেমার কাঁথা সেলাই দেখি। নকশিকাঁথা। এত সুন্দর করে কেউ কাঁথা সেলাই করতে পারে আমার জানা ছিল না। ফুল, পাখি, নদী কত কী এঁকে ফেলে মেয়েটা বুঝতেই পারি না। চোখের সামনে সাধারণ একটা কাপড় ফাতেমার হাতের ছোঁয়ায় এত সুন্দর হয়ে উঠে। দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়।
আমার আশপাশের প্রায় সব ঘরের লোকজন দেখি ফাতেমাকে ভীষণ ভালোবাসে। মাত্র কয়েক মাস আগে আসা গ্রামের খুব সাধারণ একটা মেয়ে কেমন করে জানি সবার প্রিয় হয়ে গেল। প্রায় দিনই কেউ না কেউ তাদের বাসায় ভালো কিছু রান্না করলে একটু করে ফাতেমার জন্য নিয়ে আসে। ফাতেমা খুব না করে তারপরও তারা এটা-ওটা আনে। শুক্রবার পাশের বাড়ির সুফিয়া খালা বিশাল এক কাতল মাছের মাথা নিয়ে হাজির। তার খুব শখ হয়েছে এই মাথা ফাতেমাকে খাওয়াবেন। খালার এমন আদর পেয়ে ফাতেমা কেঁদে ফেলল। ফাতেমার কান্না দেখে খালাও কাঁদছে। আমি শুধু অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি। কয়েকদিনের পরিচয়ে একটা মানুষ আরেকটা মানুষের জন্য কাঁদতে পারে।
ফাতেমা অনেক পালটে গেছে। প্রথম দিন ঢাকায় নেমে যে মেয়ে আমার শার্ট আঁকড়ে ধরে ছিল সে মেয়ে শুধু প্রয়োজনে কতটা পালটে গেল। সময়ের প্রয়োজনে মেয়েটার পালটে যাওয়া আমি দেখেছি। গ্রামের সহজ সরল শান্ত মেয়েটি আমাকে জীবনের সর্বশক্তি দিয়ে আগলে রেখেছে। আমি ফাতেমার সেলাই করা রঙিন ফুলে ভরা কাঁথাটার দিকে তাকিয়ে থাকি। আমার ভীষণ কান্না পায়। কেন জানি ফাতেমাকে দেখে আমার ভীষণ মায়া হচ্ছে। আমি ভীষণ অন্যায় করেছি। আমার ঠিক মনে পড়ে গেল সেদিনের ভাত না খেয়ে উঠে যাওয়ার কথা। কথাটা মনে পড়তেই আমি ফাতেমাকে বললাম, আমার উপর তোমার অনেক রাগ তাই না?
ফাতেমা আমার দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিয়ে বলল, রাগ করব কেন?
আমি বললাম, তোমাকে কত অবহেলা করলাম।
ফাতেমা সুঁইটা কাঁথায় গুঁজে রেখে আমার পাশে এসে বসল। তারপর কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, আমি খুব ভীতু মেয়ে। আমার খুব ইচ্ছে ছিল ম্যাট্রিক পরীক্ষা দিব। ম্যাট্রিক দিয়ে মকসুদপুর কলেজে ভর্তি হব। কী সুন্দর কলেজ! কলেজের উত্তর পাড়ে একটা পুকুর আছে। কলেজ ছুটির পর আমি সেই পুকুরঘাটে বসে থাকব। আমি রোজ সেই ঘাটে বসে আব্বার জন্য অপেক্ষা করব। আব্বা গিয়ে আমাকে কলেজ থেকে নিয়ে আসবেন। আমাদের গ্রামের মোতালেব কাকার মেয়ে রোকসানা আপাকে তার বাবা রোজ কলেজ থেকে নিয়ে আসেন। স্কুলে যাওয়ার সময় আমি তাদের দিকে তাকিয়ে থাকি। আমার ভীষণ ভালো লাগে।
কথাগুলো বলে ফাতেমা কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে। তারপর আবার বলে, ম্যাট্রিক পরীক্ষার আগে আগে আমার জ্বর হলো। ভীষণ জ্বর। টাইফয়েড ধরা পড়ল। আমার আর পরীক্ষা দেওয়া হলো না। তারপর সব শেষ। আব্বা বললেন, পরীক্ষা দিয়ে আর কী হবে। তা ছাড়া তোমার অসুখে অনেক টাকা পয়সা খরচ হলো। এখন আবার পরীক্ষা দিতে অত টাকা পয়সা খরচ করার সামর্থ্য আমার নাই। আব্বার কথা শুনে আমি অনেক কাঁদলাম। কোন কাজ হলো না। কেন জানি সেদিন থেকে আমার ভয় শুরু। সবকিছুতে আমার মনে হয় এই বুঝি সব শেষ। বিশ্বাস করেন আমার আর কোনো স্বপ্ন ছিল না ওই কলেজে ভর্তি হওয়া ছাড়া। এটা শেষ হয়ে যাওয়ার পর আমার কী হলো জানি না। আমার সবকিছুতেই ভয়। কোনো কিছু আমি আর সাহস নিয়ে করতে পারি না। তবে আপনার অ্যাক্সিডেন্টের পর ওইরাতে আপনার একটা ফোন আমার সবকিছু পালটে দিয়েছে। একটা মানুষ কিঞ্চিৎ হলেও আমাকে ভরসা করে ফোন দিয়েছে। তা ছাড়া এই মানুষটা আমার স্বামী। শুধু এই ভয়, শঙ্কার কারণে আমার স্বামী হাসপাতালে একা-একা বিপদে থাকুক তা আমি চাই না। যে করেই হোক আমার স্বামীর পাশে আমি দাঁড়াব।
শেষের কথাগুলো বলতে বলতে ফাতেমা কাঁদছে। তার চোখ বেয়ে অঝোরধারায় পানি ঝরছে। কেন জানি ফাতেমার সাথে আমিও কাঁদছি। বুকের ভেতরটা চিনচিন করছে। আমি ফাতেমার হাত দুটো মুঠো করে ধরে আছি। আমার ভীষণ ইচ্ছে করছে ফাতেমাকে নিয়ে মকসুদপুর কলেজের সেই পুকুরটার ঘাটে গিয়ে তার হাত ধরে বসে থাকি।
ফাতেমাকে আমার অনেককিছু বলতে ইচ্ছে করছে। অনেককিছু। আমি কিছুই বলতে পারি না। আমি বুঝতে পারি, কিছু কিছু জিনিস কখনো মুখে বলতে হয় না। পালন করে বুঝিয়ে দিতে হয়। যেটা ফাতেমা দেখিয়েছে। আমি ফাতেমার হাতটা আরও শক্ত করে ধরলাম।
সেদিন রাতে ঘুমের মধ্যে একটা স্বপ্ন দেখলাম। আমি ফাতেমার হাত ধরে বসে আছি মকসুদপুর কলেজের পুকুর ঘাটে। বিশাল পুকুর। এত বড়ো পুকুর আমি আগে কখনো দেখিনি। আমার নানিবাড়িতে একটা বড়ো পুকুর আছে। তবে ওই পুকুরটা এত বড়ো না। ফাতেমা কাঁদছে। ফাতেমার কান্না দেখে আমার একটুও বিরক্ত লাগছে না। আমারও কান্না পাচ্ছে। আমি কান্না লুকিয়ে রাখতে চেষ্টা করছি। আমার কান্না দেখে ফাতেমা হাসছে। হাসলেও ফাতেমার দুচোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে অশ্রু। আমি জানি ফাতেমার এই অশ্রু নির্ভরতার, আস্থার এবং ভালোবাসার।
—ফাতেমা
——রুহুল আমিন
৪. দমফাটা+হাসির+গল্প
কোনো এক বিচিত্র কারণে আমার বউএর ধারণা কোনো ছেলে এবং মেয়ের মধ্যে পারস্পারিক হাত ধরা, চুমু খাওয়া এবং সেক্স করা খুবই বাজে ও জঘন্য ব্যাপার। এককথায় পাপ, কঠিন পাপ। শুধুমাত্র খারাপ মেয়েরাই এসব করে, ভালো মেয়েরা কোনোদিন করেনা। আর এই থিওরি যে শুধুমাত্র বিয়ের আগে প্রযোজ্য তা না, বিয়ের পরেও প্রযোজ্য।
.
বাসর রাতে আমি হাত ধরতে গেলে বউ ঝটকা দিয়ে সরে গেলো। বললো, ‘সোহাইল, এসব না প্লিজ।’
আমি ভাবলাম, মাত্র বিয়ে হলো। এখনি এসব করা ঠিকও না। তাকে টাইম দেয়া উচিত।
সুতরাং সেদিনের মত আমি হাত ধরা থেকে বিরত থাকলাম। সারারাত গল্প করলাম, একজন আরেকজনের সম্পর্কে জানলাম, আমি ওকে পয়সা গায়েব করে দেয়ার ম্যাজিকটা দেখালাম, ও আমাকে, ‘ভালোবেসে সখী নিভৃত যতনে, আমার নামটি লিখো তোমার মনের মন্দিরে’ গানটা গেয়ে শোনালো। অপূর্ব কণ্ঠ।
রিয়েলাইজ করলাম, আমি আসলেই ভীষণ লাকি!
.
আরো কয়েকদিন আমি ওকে স্পর্শ করার চেষ্টা করলাম না। বেচারি আরেকটু ইজি হোক। একজন আরেকজনকে আগে ভালোভাবে চিনি, বুঝি, পরিচিত হই। বউ হওয়ার আগে সূচি আমার বন্ধু হোক।
উল্লেখ্য, ওর নাম সূচি।
.
তো ফাইনালি বিয়ের এক সপ্তাহ পর আমি ওকে খুব আস্তে আস্তে জড়িয়ে ধরে ক্লোজ হওয়ার চেষ্টা করলাম। শুরুতে গালে চুমু খেতে গেলাম। সূচি ছোটখাটো একটা চিৎকার দিয়ে আমাকে প্রচন্ড ধাক্কা দিলো। আমি আরেকটু হলেই খাট থেকে পড়ে যাচ্ছিলাম। ও আমার দিকে তীব্র ঘৃণার দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো, ‘ছিঃ সোহাইল, ছি! আমি তোমাকে ভালো ভাবছিলাম, তুমি এতো খারাপ?’
‘কি এমন করলাম আমি, আশ্চর্য! তুমি আমার বউ, বলে ওর দিকে আবার আগাতে গেলে ও পেছনে সরে গেলো। বললো, ‘দেখ, আর একটু আগালে আমি চিৎকার করে লোক ডাকতে বাধ্য হবো।’
ভয় পেয়ে পেছনে সরে গেলাম। বললাম, ‘আচ্ছা তুমি আগে শান্ত হও। আমি কিছু করতেছিনা।’
ও তাও মোটামুটি খাটের একবারে কর্ণারে গিয়ে দেয়ালের সাথে সেটে আছে। চোখের দৃষ্টিতে প্রচন্ড ভয় আর ঘৃণা।
আরো কিছুক্ষণ পর অনেক কষ্টে ওকে একটু শান্ত করলাম। সহজ হয়ে কথাবার্তা বলার পর ও যা জানালো তা শুনে এই ছাব্বিশ বছরের জীবনে সবচাইতে বেশি অবাক হলাম আমি।
.
সূচি, আমার বিয়ে করা বউ। সে মনে করে ছেলে মেয়েদের এইসব হাত ধরা, চুমু খাওয়া, গায়ে হাত দেয়া, সেক্স করা সবই পাপ কাজ। খুব খারাপ মেয়েরা এইসব করে। যারা এসব করে, সমাজের চোখে তারা ঘৃণিত, তারা পাপি।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘তুমি কিভাবে জানলে?’
ও বললো, ‘আমি ছোট না সোহাইল। সব জানি। আমাদের বাড়িওয়ালার বাসার কাজের মেয়ে আর ড্রাইভার একবার এইসব করতে গিয়ে ধরা খাইছিলো। এলাকার সবাই তাদেরকে মাইর দিয়ে বাসা থেকে বের করে দিছে। মহল্লার আরেক বড় আপু, তমা আপু তার প্রেমিকের সাথে এগুলা করে বলে লোকজন কিভাবে যেন জেনে গেছিলো৷ সবাই ছি ছি করতো। বলতো তমা বাজে মেয়ে। আমার আম্মু উনার সাথে মিশতে বারণ করেছিলো। আমি জানি এগুলা খারাপ ছেলে মেয়ের কাজ। ভালোরা এগুলা করেনা। আর আমি সারাজীবন ভালো থাকতে চাই।’
‘আই হ্যাভ বিন ইটেন, স্বগোতক্তি করলাম। বউ জিজ্ঞেস করলো, মানে কি এর। আমি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললাম, ‘খাইছে আমারে।’
.
আমি বোঝানোর চেষ্টা করলাম, ‘আরে গাধা মেয়ে, তোমার কথা ঠিক আছে। আমাদের দেশে সেক্স করা কঠিন পাপ ঠিক, এমনকি যারা এটা করে সমাজের চোখে তারা খারাপ মেয়ে, এটাও ঠিক। কিন্তু সবই বিয়ের আগে সেক্স করলে, বিয়ের পরে না।’
সূচি চোখমুখ শক্ত করে বললো, ‘গাধা আমি না সোহাইল, গাধা তুমি। বিয়ের আগে যেটা পাপ, বিয়ের পরও সেটা পাপই হয়৷ তোমার কথা ঠিক ধরলে তো তাইলে বিয়ের আগে চুরি করলে পুলিশ ধরবে, বিয়ের পর করলে ধরবে না। বিয়ের আগে খুন করলে ফাসি হবে, বিয়ের পর খুন করলে মাফ, তাইনা? এরকম যুক্তি হাজারটা দেয়া যাবে। পাপ কাজ সবসময়ই পাপ। সেটা বিয়ের আগে হোক বা পরে, ছোটবেলায় হোক বা বুড়ো বয়সে, দেশে হোক বা বিদেশে, পাপ পাপই! বুঝছো?’
.
অকাট্য যুক্তি, এর পরে আর বলার কিছু থাকে না। তারপরও আমি বললাম, ‘দেখ সূচি বিয়ের পর সবাই এটা করে। তোমার আব্বু আম্মুও করে।’
– হোয়াট! সোহাইল তুমি এটা কিভাবে বললা? সূচি প্রচন্ড রেগে গেল। আমার আব্বু আম্মুকে নিয়ে বাজে কথা বলতে তোমার একটুও বাধলো না? ছি! আমি জাস্ট ভাবতে পারছি না তুমি আমার ফ্যামিলি নিয়ে এইভাবে ভাবো। আমার আর এক মুহুর্ত তোমার সাথে থাকা সম্ভব না।’
স্যরি টরি বলে অনেক কষ্টে বোঝানো লাগলো যে আমি ঐভাবে মিন করে বলিনি। সূচি কাদো কাদো গলায় বললো, ‘আর কোনোদিন আমার আব্বু আম্মু নিয়ে বাজে কথা বললে আমি আর জীবনেও তোমার সাথে কথা বলবো না।’
আমি শেষ চেষ্টা করলাম, ‘আচ্ছা সেক্স না করলে বাচ্চা কিভাবে হবে? তুমি চাওনা আমাদের ছোট্ট কিউট গুলুগুলু একটা বেবি হোক? তার জন্যও এগুলা করা লাগে।’
সূচি অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো, ‘আমাকে উল্টাপাল্টা বুঝানোর চেষ্টা কইরো না প্লিজ। বিয়ে করলে কয়েক বছর পর এমনিতেই বাচ্চা হয়। আমার আব্বু আম্মু তোমার আব্বু আম্মু তো এগুলা করেনাই তো তাদের বাচ্চা হয়নি? আমরা হইনি? এমনকি আমার দাদু বিশাল হুজুর। তিনবার হজ্ব করছে। উনারও বাচ্চা হইছে। উনি তো কোনো পাপ কাজ করবে না। করবে বলো?’
.
আমি দীর্ঘশ্বাস ছাড়লাম। কি আর বলবো!
.
এভাবেই আরো বেশ কিছুদিন চলে গেলো। খাই, ঘুমাই আর দুজনে গল্প করি। বউ শুধু বলে, ‘ডেইলি রাতে ইদানিং বাথরুমে গিয়ে তোমার এতো টাইম লাগে কেন?’
এই আরকি, আমি আমতা আমতা করি।
.
মাঝে কিছুদিন বউকে বোল্ড সিন আছে এরকম সিনেমা দেখানোর ট্রাই করেছিলাম। দুজনে একসাথে দেখতাম। কিন্তু প্রথমদিন ঐসব সিন আসলেই বউ নাউজুবিল্লাহ বলে ল্যাপটপ অফ করে দিছে। বলেছে, ‘এইসব করা যেমন পাপ, দেখাও তেমন পাপ। কঠিন গুনাহ।’
তারপর থেকে আর আমার সাথে সিনেমাও দেখে না। আমাকেও দেখতে দেয় না। হুমকি দিছে, ‘আর কোনোদিন এমন সিনেমা দেখলে আমি আব্বু আম্মুরে বলে দিব তুমি কত খারাপ। আমার সাথে এইসব করার চেষ্টা করেছিলে তাও বলব। আমার এক আঙ্কেল পুলিশের এসপি। আমাকে ভীষণ ভালোবাসেন। কলেজে থাকতে এক ছেলে আমাকে লাভ লেটার দিছিলো জানার পর তাকে তিন মাসের জেল খাটাইছেন। তোমার ব্যাপারে উনি জানলে তোমাকে কি করবে আমি তার কোনো গ্যারান্টি দিতে পারতেছিনা।’
.
আমি বুঝে উঠিনা, আমার কি ভয় পাওয়া উচিত? নিজের বউএর গায়ে হাত দিতে যাওয়ার অপরাধে প্রথম জেল খাটা মানুষ বুঝি আমিই হবো। সবই কপাল।
.
শেষমেশ আমি আমার সাধ্যের মধ্যে সব চেষ্টাই করেছি। এমনিতেই আমি খুব লাজুক। অনার্স পড়াকালীনও ভাবতাম ফার্মেসিতে গিয়ে কনডম চাইলে দোকানদার আমাকে আটকায় রেখে পুলিশে ফোন দিবে। তবে আমার বউ যে আরো অন্য লেভেলের হবে তা কে জানতো! শুনেছি ভাবী সম্প্রদায় নাকি বউদের এইসব বিষয়ে শিক্ষা দিতে পারে। কনভিন্স করাতে পারে। কিন্তু ভাবীদেরকে এইটুকু বলার সাহসও আমার নাই। আমি বলতে না পারলে কি হবে, ঠিকই কানাঘুষা শুনি, ‘সোহাইল নাকি বৌমাকে আজেবাজে ইঙ্গিত করে।’
নিজের বউকে বাজে ইঙ্গিত, এই কষ্ট আমি কোথায় রাখবো। বিয়ের বছরখানেক পার হয়ে গেছে। মুরব্বীরা জিজ্ঞেস করে, ‘কি ব্যাপার? নাতি নাতনির মুখ দেখবো কবে?’
আমি কিছু বলিনা। বউ লাজুক হেসে বলে, ‘আল্লাহ দিলে হবে।’
আমি মনে মনে বলি, ‘হ, বালডা হবে।’
.
আরো বেশ কিছুদিন পর একটা আশার আলো দেখতে পাই। বউএর এক বেস্ট ফ্রেন্ড আছে রুপা নাম৷ সে বিবাহিত। দুজনে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলে ফোনে। খুব খাতির। আমি রিয়েলাইজ করি সূচিকে যদি কেউ এই ব্যাপারে বুঝায়ে রাজি করতে পারে তো সে একমাত্র রুপাই। সূচির ফোন থেকে গোপনে নাম্বার নিয়ে একদিন কল দেই।
পরিচয় শুনে রুপা খুব খুশি হয়। বলে, ‘আরে ভাইয়া কি খবর আপনার? সূচির মুখে আপনার কথা অনেক শুনেছি। ভালো আছেন?’
– জ্বী আলহামদুলিল্লাহ।
– তারপর কি মনে করে?
আমি আমতা আমতা করে বলি, ‘আসলে ব্যাপারটা আপনার বেস্টফ্রেন্ডকে নিয়ে। বিয়ের এতোদিন হয়ে গেল কিন্তু এখনো সূচি আমাকে ওর গায়ে স্পর্শ করতেও দেয় না। অনেক চেষ্টা করেছি, কিন্তু আমি ব্যর্থ!’
আমার কথা শুনে মুহুর্তেই রুপার গলার স্বর চেঞ্জ হয়ে যায়। সে শীতল কণ্ঠে বলে, ‘ছি ভাইয়া, আপনিও এরকম? আপনাকে অন্তত ভালো ভাবছিলাম। ভাবছিলাম আপনি সবুজের মত না। পাপ কাজ থেকে দূরে থাকেন। সবুজ আমার বর। ও প্রতিরাতেই আমার সাথে এইসব খারাপ জিনিস করার ট্রাই করে। বহু কষ্টে নিজেকে সেফ করি আমি। ফ্যামিলির মুখের দিকে তাকায়ে কাউকে কিছু বলিনা যে তাদের আদরের জামাই আসলে কত অশ্লীল একটা মানুষ। আমি ভাবছিলাম সূচি হয়তো সুখে আছে। কিন্তু বুঝলাম এই জেনারেশনের সব ছেলেরাই এক। আপনি আর আমাকে ফোন দিবেন না কোনোদিন। বাই।’
.
হোয়াট দ্যা ফুচকা, এইটা আমি কি শুনলাম। হাইরে কপাল! যেমন বউ তেমন বান্ধবী। এরা ছোটবেলা থেকে কি খেয়ে মানুষ হইছে। আল্লাহ! সবুজ নামের ছেলেটার প্রতিও আমার খুব আফসোস হয়। তার কষ্ট তো বুঝি আমি৷ ভাবলাম তার সাথে দেখা করবো। অন্তত একজন আরেকজনের সমব্যাথী তো হতে পারবো।
.
কাজের চাপে ভুলে যাই। একদিন শুনি অফিসে কে যেন দেখা করতে আসছে। লম্বা সুন্দরমত একটা ছেলে এসে বলে, ‘ভাই আমাকে চিনবেন না। আমি সবুজ। আপনার বউএর বন্ধবী রুপার বর।’
আমি তারে হোটেলে নিয়ে গিয়ে কাচ্চি খাওয়াই। বলি, ‘ভাইরে বুকে আসেন। আমার অবস্থাও আপনার মতই।’
সে আমারে জড়ায় ধরে বলে, ‘বিশ্বাস করেন ভাই। বিয়ের তিনবছরে এই প্রথম কাউরে হাগ করলাম।’
দেখি তার চোখে জল টলমল করতেছে। আহারে বেচারা!
.
আমার আর সবুজ ভাইয়ের খুব ভালো বন্ধুত্ব হয়ে যায়৷ আমরা অফিস শেষে একসাথে আড্ডা দেই। সুখ দুঃখের গল্প করি। চা সিগারেট খাই। তারপর দুজনে ফার্মেসির সামনে গিয়ে অনেক্ষন দাঁড়ায় থাকি। মানুষ লাজুক মুখে কনডম কিনে নিয়ে যায়। আমরা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে পাশের কসমেটিকসের দোকানে গিয়ে ঢুকি। লোশন আর টিস্যুপেপার কিনে বাসায় ফিরি।
.
একদিন সবুজ বলে, ‘ভাই, এর চাইতে বোধহয় গে হলেই ভালো ছিলো।’
আমি রাগ করি, ‘ছি, এইসব কি বলেন?’
অনেক্ষণ পর আবার নিজেই বলি, ‘হ ভাই, আসলেই। আপনার কথা ঠিক। কিন্তু কি আর করা। দূর্ভাগ্যবশত আমরা তো আর গে হয়ে জন্মাইনাই।’
.
আমাদের বিয়ের চার বছর হয়ে গেছে। বাচ্চা হয়না বলে সবাই টেনশন করতেছে। একদিন দেখি সূচি কি একটা ভেজষ ঔষধ খাচ্ছে। আমি জিজ্ঞেস করায় বললো, ‘আম্মা দিছে। বলেছে শোয়ার আগে খাইতে। তাহলে নাকি দ্রুত বাচ্চা হবে।’
আরেকদিন দেখি, খুব ভোরে উঠে অদ্ভুত এক ব্যায়াম করতেছে। এটাও নাকি বাচ্চা হওয়ার জন্য।’
আমি হাসবো নাকি কাঁদবো বুঝে উঠিনা।
.
আরো কিছুদিন পর সূচি বলে, ‘গাইনি বিশেষজ্ঞের সিরিয়াল দিছি। বিকালে নিয়ে যাবা৷ অনেকের সমস্যা থাকে বলে বাচ্চা হয়না। তাদের ডাক্তার দেখাতে হয়।’
.
জীবনে অকাজে টাকা খরচ কম করিনাই। কিন্তু এই গাইনি ডাক্তারের ফির মত হুদাই যে কোনোদিন টাকা নষ্ট হয়নাই এটা আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি।
.
গাইনি ডাক্তার দুজনের অনেক পরীক্ষা করায়ে রিপোর্ট দেখে বলে, ‘আশ্চর্য! কোনো সমস্যাই তো নেই। দুজনই খুব সুস্থ। তাহলে বাচ্চা কেন হবেনা? আমি তো কিছুই বুঝতেছিনা।’
আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলি, ‘ম্যাডাম, চিকিৎসা বিজ্ঞান খুব সীমাবদ্ধ একটা জিনিস। আপনাদের জানার বাইরেও দুনিয়ায় যে আরো কতকিছু আছে আপনি ভাবতেও পারবেন না।’
.
চেম্বার থেকে বের হয়ে রিক্সায় উঠে সূচি কাদো কাদো গলায় বলে, ‘আমি স্যরি সোহাইল। আমি তোমাকে বাচ্চা দিতে পারিনি। তুমি চাইলে আরেকটা বিয়ে করতে পারো।’
আমি হতাশ গলায় বলি, ‘বাচ্চা লাগবে না। পাঁচ বছর যখন পেরেছি, বাকি পঞ্চাশ বছরও কাটায় দিতে পারবো।’
সূচী জীবনে প্রথমবারের মত আমার হাত ধরে বলে, ‘থ্যাংক ইউ সোহাইল। আই লাভ ইউ।’
আমি সুযোগ বুঝে রিক্সার মধ্যেই চুমু দিতে যাই। সূচি রাগ করে বলে, ‘আমি আছি বাচ্চার দুঃখে তার মধ্যেও তোমার মাথায় বাজে চিন্তা ঘুরে? তুমি কোনোদিন ভালো হবা না। তুমি এতো খারাপ বলেই আমাদের বাচ্চা হচ্ছেনা। সব তোমার পাপের শাস্তি।’
.
আমি হতাশ হয়ে এপাশ ওপাশ মাথা নাড়াই। বলি, ‘আচ্ছা স্যরি, আর কোনোদিন এসব করার চেষ্টা করবো না। তুমি বলো, আমি যদি ভালো হয়ে যাই তাহলে কি বাচ্চা হবে?’
সূচি খুশি খুশি গলায় বলে, ‘তাহলে নিশ্চয় হবে।’
.
আমি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ি; ‘হ, বালডা হবে!’