: আপু আপনার সাইজ কত?
: কিসের!?
: জি, জুতার।
: আটত্রিশ, কেন?
: না মানে আমার ওয়াইফেরও 38। আপনি কি একটু এই জুতাটা পরে দেখবেন, ঠিক হয় কি না।
চিন্তা করতে সেকেন্ড দুয়েক সময় নিলাম। খুব সম্ভবত আমাকে বাংলায় কথা বলতে শুনে লোকটা আমার কাছে এসেছে। হাতে এক জোড়া জুতা। তাতে লেখা, সাইজ আটত্রিশ।
ফেব্রুয়ারি মাসে এই দেশের জাতীয় দিবস। সেই উপলক্ষে সবকিছুতে এখানে বিশাল বিশাল ছাড় চলে। তাই সব মানুষই যেন মোটামুটি হুমড়ি খেয়ে কেনাকাটা করতে নেমে গেছে। দেশি-বিদেশি কোন জাতির লোকই আর বাদ নেই।
: আপনি যদি জানেনই আপনার ওয়াইফের জুতার সাইজ ৩৮, তাহলে আবার পরে দেখতে হবে কেন?
: না মানে ও বলল ৩৮ হলেও বাংলাদেশের সাইজের সাথে নাও মিলতে পারে, একটু কম বেশি থাকতে পারে এজন্য।
কথাটা খুব একটা মিথ্যে নয়। সাইজ আসলেই একটু কম বেশি হয়। আমি নিজেও অনেকক্ষণ ধরে জুতা দেখছিলাম। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের জুতার কোন কোনটার 38, আবার কোন কোনটার ৩৭ নাম্বারটা আমার পায়ে হচ্ছিল। কাজেই কথা না বাড়িয়ে তার দেওয়া জুতাটা পরে ফেললাম।
: ঠিকঠাকই হয়েছে কিন্তু এই জুতা কি আপনার স্ত্রী পছন্দ করবে?
: কি জানি, দেখি ছবি পাঠাই, করে কিনা।
জুতো জোড়া ফেরত দিয়ে আমি আমার পছন্দের স্নিকার্সের লাইনে এসে দাঁড়ালাম। নামি দামি সব ব্যান্ডের জুতোতেও ফিফটি পার্সেন্ট ছাড় চলছে। adidas, ক্যাঙ্গারু এরকম আরো অনেক ভালো ভালো ব্র্যান্ড। দেখতে দেখতে অ্যাডিডাসের একটা জুতো বেশ পছন্দ হয়ে গেল। দাম ২৮ কেডি, মানে বাংলাদেশের টাকায় প্রায় দশ হাজার টাকা।
: এই যে, আপনার স্ত্রী কি ওই জুতা পছন্দ করেছে?
: জি না।
: আচ্ছা, উনি কি স্নিকার্স পরেন?
: হ্যা পরে তো, কেন?
: ওইদিকে অ্যাডিডাসের জুতায় দেখলাম এক জোড়া কিনলে এক জোড়া ফ্রি অফার চলছে। চলেন এক কাজ করি, আমরা ২৮ কেডি দিয়ে জুতো কিনি, একটা কিনলে যেহেতু আর একটা ফ্রি পাব, তাই আপনার আর আমার চোদ্দ কেডি করে খরচ পড়বে, কিনবেন?
ভদ্রলোক আমার কথায় প্রভাবিত হলেন মনে হলো। খুব আগ্রহ নিয়ে উনি আমার বাছাই করা জুতা দেখলেন। তারও পছন্দ হল।
: দেখি ওকে ছবি পাঠাই, কি বলে।
আমি খুব অস্বস্তি আর অস্হিরতা নিয়ে উনার ফোনের দিকে তাকিয়ে আছি। মাত্র একটা মেসেজের অপেক্ষা। তার স্ত্রীর পছন্দ হলেই এই অ্যাডিডাসের জুতো খানা আমার হবে, ভাবতেই কেমন শিহরণ জেগে গেল মনে।
: ও পছন্দ করে নাই।
: ওহ! ইটস্ ওকে।
মন খারাপ করে জুতা রেখে টি-শার্টের জোনে চলে আসলাম। মন খারাপের কারণ আপাতত ২৮ কেডি দিয়ে জুতা কেনা আমার পক্ষে সম্ভব না। তাই মনকে সান্ত্বনা দিতে হরেক রঙের টিশার্ট দেখতে এলাম। আর কিছু না হোক, দু চারটা টি শার্ট কিনে মনকে সান্ত্বনা তো দিতে পারব! আর এদের টি-শার্টগুলোর এক একটার যা রং আর শেপ, একদম মাশআল্লাহ।
ক্যাশ কাউন্টারে গিয়ে ভদ্রলোকের সাথে আবার দেখা।
: জুতো কিনেছেন?
: জি না, টি-শার্ট কিনেছি, অনেক ছাড় দিয়েছে টি-শার্টে।
: দেখি কেমন?
ভদ্রলোক আগ্রহ নিয়ে আমার টি শার্ট দেখলেন।
: ও, এই মুরগির বাচ্চার কালার।
: ভাই, এইটা মুরগির বাচ্চার কালার না। এটারে বলে ইয়োক ইয়োলো মানে কুসুমের মত হলুদ।
: ও, তাইলে পাশে ওইটা কি, ওইটা তো নরমাল হলুদ, নাকি?
: জি হলুদ তবে ওইটা হল মাস্টার্ড ইয়োলো মানে সরিষার মতো হলুদ।
: অ্যা! আর এটা!?
: এটাকে বলে কাঁচা হলুদ।
ভদ্রলোক মাথা চুলকে এবার স্তুপ করে রাখা আরেকটা টি-শার্টের দিকে আঙ্গুল তুললেন।
: ঐ টা? ঐটা হলুদ না?
: জি, ওটা লেমন ইয়েলো মানে কচি কলা পাতার মত হলুদ।
ভদ্রলোককে এবার বিভ্রান্ত দেখালো। খুব ভয়ে ভয়ে আরেকটা টি-শার্টের দিকে আঙ্গুল তুলে বললেন,
: এটলিস্ট ঐটা তো নরমাল হলুদ, নাকি?
: না ভাই ওইটা কমলা, অরেঞ্জ।
ভদ্রলোক বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে আছে। এক হলুদের মধ্যে এত প্যাচ সে যেন বুঝে উঠতে পারতেছে না।
আর আমিও খুব বিস্ফোরিত চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছি। কুসুম হলুদ রং কে যে লোক বলে মুরগির বাচ্চার কালার, এর সাথে এর বউ সংসার করে কেমনে!
ইস মেয়েদের জীবনে আসলে কত কষ্ট, ভাবা যায়!
#মরুর_দেশে