কচুর লতি দিয়ে কেউ কোয়েলের ডিম রান্না করে?
করেনা, কিন্তু আমার নির্বোধ বউ করেছে। শুধু তাই না এই উদ্ভট তরকারিতে সে করলাও দিয়েছে। এমন জঘন্য স্বাদের খাদ্য জীবনেও খাইনি।
বাজার থেকে কচুর লতি, চিংড়িমাছ, করলা আর দুই ডজন কোয়েলের ডিম আনছিলাম। রিহানের আম্মু লতির তরকারিতে চিংড়িমাছ না দিয়ে কোয়েলের ডিম দিয়েছে। এই অনাচারের মানে কী? সে আমাকে কি বুঝাতে চায়?
রিহানের আম্মুর এই স্বেচ্ছাচারিতার একটা শক্ত প্রতিবাদ হওয়া দরকার। কিন্তু প্রতিবাদটা করবে কে? একটু আগে প্রতিবাদ করে রিহান একটা বড়সড় থাপ্পড় খেয়েছে। রিহানের দোষ সে এই অখাদ্য খেতে অস্বীকার করেছিল। ফলশ্রুতিতে কপালে জুটেছে গাল লাল করা থাপ্পড়।
খাবার টেবিলে থাপ্পড় খাওয়া রিহানের জন্য নতুন কিছু না। তাকে প্রায়শই এমন থাপ্পড় হজম করতে হয়। রিহান মুখ ভোতা করে ডাইনিংয়ে বসে আছে। পিতা হয়েও পুত্রের মৌল মানবিক চাহিদা নিশ্চিত করতে পারছিনা, এ আমার চরম ব্যর্থতা।
রিহানের আম্মুর ভাবভঙ্গি খুব একটা ভালনা। ডাইনিং টেবিলের পাশে কোমড় বেঁধে দাঁড়িয়ে আছে। তার হাতের কাছেই বেসিনের উপর মাছকাটার বটিটা । হাতের কাছে বটি সমূহ বিপদের পূর্বাভাষ।
আমি খাবো কি না বুঝতে পারছি না। খেতে না চাইলে মনে হয় ঝামেলা হবে। আমার নির্লিপ্ততা দেখে রিহানের আম্মু চোখ বড় বড় করে বললো,
– খাচ্ছো না কেন?
আমি তাড়াতাড়ি এক লুকমা মুখে নিয়ে রিহানকে বললাম,
– খা বাপ, বিসমিল্লা বলে মুখে দে, বরকতের মালিক আল্লা।
রিহান বিরস বদনে খাদ্যরস আস্বাদন করার চেষ্টা করছে। প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে আমাকেও খেতে হচ্ছে। এমন বিস্বাদ বস্তু আমার পাকস্থলী সইবে না।
খাওয়ায় অরুচি দেখে রিহানের আম্মু বললো,
– রান্না কেমন হয়েছে?
রান্না খারাপ হয়েছে বলার কোনো উপায় নাই। সুতরাং একটা শুকনো হাসি দিয়ে বললাম,
– দুর্দান্ত হয়েছে।
– তাহলে খাচ্ছো না কেন?
– খাচ্ছি তো।
– রাতের বেলা আর কখনো কচুর লতি, ছোটমাছ এসব আনবা ?
আমি অসহায়ের মতো তার মুখের দিকে তাকালাম। কিছুই বললাম না, তবুও রিহানের আম্মু হুমকি দিয়ে বললো,
– তাড়াতাড়ি খেয়ে চিংড়িগুলো কেটেকুটে ফ্রিজে তুলে রাখবা, ঠিক আছে?
– জি আচ্ছা।
– কথা কি ক্লিয়ার না বেজাল আছে?
– না কোনো বেজাল নাই!
হায়রে,
ভেবেছিলাম রিহানের আম্মু মাছ কুটতে বসলে ফাঁকমতো তিফাদের বাসায় গিয়ে এক কাপ মালাই চা খেয়ে আসবো। কিন্তু অদৃষ্টির কি নির্মম পরিহাস এই হিমেল হাওয়ার রাতে আমাকে মাছ কুটতে হচ্ছে। পৃথিবী বড়ই নিষ্ঠুর
নিষ্ঠুর নিয়তি