#যেদিন তুমি এসেছিলে পর্ব ৩১
#মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
___________________
আহনাফ যখন রুমে ফেরে তখন ঘুটঘুটে অন্ধকারে রুমের কিছুই ঠাওর করতে পারছিল না। কিছুক্ষণ সে থম মেরে দাঁড়িয়ে থাকে। বুকের ভেতর ঢিপঢিপ আওয়াজ হচ্ছে। অর্ষা কি এখনো জেগে আছে? তাহলে তো সাড়ে সর্বনাশ হয়ে যাবে। অন্ধকারে চোখ সয়ে আসার পর সে একটু একটু করে বিছানার দিকে এগিয়ে যায়। অর্ষার কোনো সাড়াশব্দ নেই।
কয়েক সেকেন্ড দাঁড়িয়ে থেকে নিঃশব্দে খাটের ওপর বসে। তবুও অর্ষার কোনো সাড়া পাওয়া গেল না। এবার সে কিছুটা ঝুঁকে অর্ষার মুখের দিকে তাকায়। বুঝতে পারে অর্ষা ঘুমিয়ে পড়েছে। বুকের ওপর থেকে যেন ভয় ও লজ্জার ভারী পাথরটা নেমে গেল। লম্বা করে শ্বাস নেয় সে। কোলবালিশটা মাঝখানে রেখে আবারও শুয়ে পড়ে।
ঘুমে চোখ যখন লেগে আসছিল, তখন ধপ করে আহনাফের গায়ের ওপর অর্ষা হাত রাখে। ভয় পেলেও নিজেকে ধাতস্থ করে নেয় আহনাফ। খুব সন্তর্পণে অর্ষার হাতটি সরিয়ে বিড়বিড় করে বলে,
‘হুশ! দূরে থাকো, দূরে, দূরে।’
______________
আজ আর সূর্য উদয় হওয়ার সাথে পাল্লা দিয়ে ঘুম থেকে উঠতে হয়নি আহিলকে। আফরিন বেড়াতে আসবে বলে, কিছুদিন সে অফিসে যাবে না।
সকাল আটটা নাগাদ ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে ড্রয়িংরুমে আসে। রেণু এসে চা দিয়ে যায়। আমেনা বেগম রান্নাঘর থেকে ফিরে এসে বলেন,
‘যাবি কখন আফরিনের বাসায়?’
‘এইতো বের হব এখন।’
‘দুপুরের আগে আগেই পৌঁছে যাবি। তোর জন্য রান্নাবান্না করতেছে আফরিন।’
‘ও’কে আবার এসব কে করতে বলল?’
‘বলা লাগবে নাকি? ও তো এমনই।’
আহিল কিছু বলল না। তিনি পাশে বসে বললেন,’যাওয়ার সময় মনে করে কিছু নিয়ে যাস কিন্তু।’
‘হ্যাঁ, নেব।’
চা শেষ করে আহিল বেরিয়ে পড়ে। বাজারে গিয়ে বাইক থামিয়ে ফলমূল কেনে।
পেছন থেকে মেয়েলী কণ্ঠস্বরে ভেসে আসে,’আমায় একটা আপেল দেন তো।’
আহিল ভ্রুঁ কুঁচকে পেছনে তাকায়। বিরক্ত হয়ে বলে,’আবার তুমি!’
সকাল চুলের বিনুনি নাচিয়ে নাচিয়ে বলল,’হ্যাঁ, আমি। আপনি কি অন্য কাউকে আশা করেছিলেন নাকি?’
‘ফাউল কথা বলবে না।’
‘আচ্ছা বলব না। এখন কি আপেল দেবেন? আচ্ছা থাক! লাগবে না।’
আহিল ওর কথায় পাত্তা না দিয়ে কী কী নেবে সেগুলো দোকানদারকে বলছিল। সকাল উচ্ছ্বসিত হয়ে বলে,
‘জানেন আজ না আমি ভীষণ খুশি। আমি ভাবতেও পারিনি, এত তাড়াতাড়ি আবার আমাদের দেখা হবে। নিঃসন্দেহে আজকের দিনটা আমার জন্য শুভ। আজকে কার মুখ দেখে ঘুম থেকে উঠেছিলাম?’ বলে চিন্তিত হয়ে ভাবতে লাগল সকাল।
আহিল গম্ভীর হয়ে বলল,’কিন্তু আমার দিনটা খুবই খারাপ আজ।’
‘ইশ! কেন? এই দোকানের ফল ভালো নয়?’
‘দোকানের ফল ঠিকই আছে। আমার সমস্যাটা তোমায় নিয়ে। এভাবে হুটহাট কেন দেখা হয় বুঝতে পারছি না।’
‘আহা! না বোঝার কী আছে? এটা হচ্ছে মনের কানেকশন। টান বুঝছেন গভীর টান।’
‘বড্ড বাচাল তো তুমি। আচ্ছা তোমার সমস্যাটা কি আমায় বলো তো। কী চাও তুমি?’
‘আপাতত আপনার নামটা বলেন। আর ফোন নাম্বার দিলেই হবে।’
‘থাপ্রিয়ে যখন দাঁত ফেলে দেবো তখন বুঝবে মজা।’
‘সবসময় এমন কাঠখোট্টা মেজাজে কথা বলেন কেন? আমি কি প্রেম করতে চেয়েছি নাকি?’
‘তুমি চাইলেই আমি রাজি হব?’
‘আমি কী জানি? আচ্ছা আমরা ফ্রেন্ড তো হতেই পারি?’
‘না, পারি না। আমার অলরেডি অনেকগুলা ফ্রেন্ড আছে। নতুন করে আর প্রয়োজন নেই।’
‘কেন, গার্লফ্রেন্ড বুঝি বারণ করেছে?’
আহিল ভ্রুকুটি করে প্রশ্ন করে,’কে গার্লফ্রেন্ড?’
‘ঐযে রেস্টুরেন্টে যার সাথে গেছিলেন।’
আহিল কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে। কী যেন ভেবে বলে,’হ্যাঁ, ঠিক ধরেছ।’
সকাল মুখটা কাঁদোকাঁদো করে বলে,’তার মানে সত্যিই আপনার গার্লফ্রেন্ড আছে?’
‘হ্যাঁ।’
এতক্ষণ নিতু আর বিথী চুপ করে ছিল। এবার নিতু মুখ খুলে সাংঘাতিক একটা কথা বলে ফেলে।
সে আহিলের উদ্দেশ্যে বলল,’সে যে আপনার গার্লফ্রেন্ড হয় তার প্রমাণ কী?’
নিতুর প্রশ্নে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় আহিল। এদিকে টনক নড়ে সকালেরও। অসাধারণ কোনো ক্লু খুঁজে পেয়েছে এমনভাবে বলল,
‘হ্যাঁ, তাই তো!’
‘তোমাদেরকে আমি প্রমাণ কেন দিতে যাব? তোমরা কে?’ বলল আহিল।
সকালও ওর জায়গায় অটুট থেকে বলল,’না, বললে আমিও বিশ্বাস করি না। আর আপনাকে আমি জ্বালাবই।’
আহিল ভেবে-চিন্তে বলল,’ওর সাথে কথা বলিয়ে দেবো তোমায়। তাহলে তো বিশ্বাস করবে?’
‘হু।’
‘ওকে। বাট একটা শর্ত আছে।’
‘কী?’
‘এরপর আর কখনোই তুমি আমাকে জ্বালাবে না। আমার সামনেও আসবে না। মনে থাকবে?’
‘ওকে।’
‘ঠিক আছে। তিনদিন পর আমার রেজাল্ট দেবে। চারদিনের দিন অর্থাৎ সোমবার সেই রেস্টুরেন্টে এসো। আমি ও’কে নিয়ে আসব।’
‘আচ্ছা।’
আহিল দোকানদারের বিল মিটিয়ে এক প্যাকেট আপেল সকালের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,’এগুলো তোমার।’
আহিল চলে যাওয়ার পর বিথী হেসে বলে,’লোকটা রাগী হলেও মন ভালো!’
.
.
অর্ষা ঘুম থেকে ওঠার আগেই আহনাফ উঠে পড়েছে। ফ্রেশ হয়ে ড্রয়িংরুমে এসে বসে। ফুপি এসে কফি দিয়ে বললেন,
‘অর্ষা কোথায়? নাস্তা করবি না তোরা?’
‘ও এখনো ঘুমাচ্ছে।’
‘তো ডাকিসনি কেন? ডেকে আন যা।’
আহনাফ গম্ভীর হওয়ার ভান ধরে বলল,’আমি পারব না। নেহাকে পাঠাও।’
নেহা তখন ড্রয়িংরুমেই আসছিল। আহনাফের শেষ কথাটি শুনতে পেয়ে বলল,’কোথায় পাঠাতে বলছ ভাইয়া?’
ফুপি বললেন,’যা তো, অর্ষাকে ডেকে আন।’
‘ওকে।’ বলে নেহা আবার ওপরে চলে যায় অর্ষাকে ডাকতে।
ফুপি এবার আহনাফের পাশে বসেন। অনেকক্ষণ চুপ করে থেকে রয়েসয়ে বললেন,’তুই কি এখনো অর্ষাকে মেনে নিতে পারিসনি?’
‘এই প্রশ্ন কেন করছ?’ কফিতে চুমুক দিয়ে বলল আহনাফ।
‘জানতে চাচ্ছি। তুই উত্তর দে।’
‘সম্পর্ক স্বাভাবিকই আছে।’
‘কেমন স্বাভাবিক? মেনে নিয়েছিস তো?’
আহনাফ চুপ করে থাকে। ফুপি দীর্ঘনিশ্বাস নিয়ে বলেন,’যা হওয়ার তা তো হয়ে গেছে আহনাফ। এবার তো সম্পর্কটাকে একটা সুযোগ দে। আমি তোকে ফোর্স করছি না। জোর করে কিছু চাপিয়েও দিচ্ছি না। শুধু বলছি, একটু ভেবে দেখ।’
প্রত্যুত্তরে আহনাফ শুধু স্মিত হাসি প্রদান করল।
ফুপি ব্রেকফাস্ট সাজাতে চলে যাওয়ার পর নেহা আসে। সোফায় বসে আহনাফের দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসে।
আহনাফ লক্ষ্য করে জিজ্ঞেস করে,’হাসছিস কেন?’
নেহা মাথা দুলিয়ে দুলিয়ে বলে,’কাল যা করেছ না!’
আহনাফ থতমত খেয়ে যায়। তুতলিয়ে বলে,’কী করেছি?’
‘এত ড্রিঙ্কস করেছ কেন? জানো মামনী কত বকেছে আমাকে আর ভাইয়াকে?’
আহনাফ হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। গম্ভীর হওয়ার ভান ধরে বলে,’ঠিকই তো আছে। মিথ্যা বলেছিলি কেন?’
নেহা এ কথার উত্তর না দিয়ে মুচকি হেসে বলল,’যাই হোক, সীনটা কিন্তু দারুণ ছিল।’
‘কীসের সীন?’
‘দেখবে?’
আহনাফ প্রশ্নবিদ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। নেহা পকেট থেকে ফোন বের করে তুলে রাখা ছবিটি দেখায়। বিস্ময়ে হা হয়ে যায় আহনাফের মুখ।
সে অবিশ্বাস্যকণ্ঠে বলে,’এরা কারা?’
‘এহ, ঢং! এরা কারা না? তুমি আর ভাবি।’ ভেংচি কেটে বলল নেহা।
‘অসম্ভব! এটা কী করে সম্ভব? হায় আল্লাহ্! তুই ইডিট করেছিস?’
‘তুমি কি পাগল হয়ে গেছ ভাইয়া? তোমাদের ছবি আমি ইডিট করতে যাব কেন? দেখো ড্রেস দেখো। মুখ দেখো। ছবি দেখলেই তো বুঝা যায় ইডিট নাকি রিয়েল। কাল তো ড্রিঙ্কস করে নেশার ঘোরে ছিলে তাই ভুলে গেছ।’
আহনাফ আশেপাশে একবার তাকিয়ে বলল,’এক্ষুণী ছবি ডিলিট কর তুই।’
নেহা অবাক হয়ে বলল,’কী! কেন? এত সুন্দর রোমান্টিক ছবিটা ডিলিট করব কেন?’
‘তোর রোমান্টিকের খ্যাতা পুড়ি! তুই এক্ষুণী ছবিটা ডিলিট কর।’
‘না।’
আহনাফ কড়া করে একটা ধমক দিতে গিয়েও থেমে গেল। কণ্ঠস্বর যথাসম্ভব ঠাণ্ডা রেখে বলল,’সোনা বোন আমার, কলিজা আমার। কী খাবি তুই? আইসক্রিম নাকি চকোলেট? তোর একাউন্টে টাকা লাগবে? কত পাঠাব? আচ্ছা তোর বার্থডে কবে? কী গিফ্ট নিবি এবার?’
নেহা ফিক করে হেসে ফেলে। হাসতে হাসতে বলে,’তুমি একটা ড্রামা কিং।’
আহনাফ মুখটা কাঁদোকাঁদো করার ভাব ধরে বলল,’কর না ডিলিট! এমন করিস কেন? ভাইয়ের কষ্ট বুঝবি না তুই?’
ফুপির গলা পাওয়া যায় তখন। খেতে ডাকছেন তিনি। নেহা উঠে দাঁড়িয়ে বলল,’তোমাকে ছবিটা হোয়াএসপে পাঠিয়েছি। ডিলিট করতে মন চাইলে তোমার ফোন থেকে ডিলিট করো। আমার ফোন থেকে এত সুন্দর ছবি আমি ডিলিট করব না।’
‘তোরে এতগুলা অপশন দিলাম তাও করবি না? কী লাগবে তোর বল শুধু একবার।’
‘কিচ্ছু লাগবে না। আমি ঘুষ খাই না।’
আহনাফ চিবিয়ে চিবিয়ে বলে,’আস্ত ঘাড়ত্যাড়া একটা! অ’সভ্য, বদমাই’শ।’
নেহাও দাঁত কেলিয়ে হেসে বলে,’তোমারই তো বোন।’
‘আচ্ছা শোন না, ছবিটা অর্ষাকে দেখাসনি তো?’
‘এখনো না। তবে দেখাব।’
‘মাফ চাই। এই কাজ করিস না বনু। ছবি ডিলিট করতে হবে না। শুধু কাউকে দেখাইস না। এই রিকোয়েস্টটা রাখ প্লিজ!’
নেহা একটু ভেবে হেসে বলল,’আচ্ছা।’
খাওয়ার টেবিলে আহনাফ অর্ষার দিকে ঠিকমতো তাকাতেও পারছিল না। বারবার মনে শুধু একটা প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছিল। অর্ষা কি জানে এসব? নাকি নেশা বা ঘুমের ঘোরে ছিল? এই প্রশ্নগুলো তো অর্ষাকে করাও যাবে না। কী যে এক অশান্তির ভেতর সে আছে!
সেদিন দুপুরেই ওরা ফুপির বাড়ি থেকে নিজেদের বাড়ি জুরিখ শহরে ফিরে আসে। ফুপা-ফুপি, নিহিত আর নেহা অনেক রিকোয়েস্ট করেছিল আজকের দিনটা যেন অন্তত থেকে যায়। কিন্তু আহনাফ রাজি হয়নি। সকালেই ফিরে আসতো, ঘুম থেকে উঠতে লেট হওয়ায় দুপুরে রওনা দিয়েছে।
বাড়িতে ফিরে অর্ষা এক নতুন আহনাফকে আবিষ্কার করল। মানুষটা মনে হয় আর আগের মতো গম্ভীর নেই। রাগ করে না, ধমক দেয় না। কেমন যেন চুপচাপ থাকে। মুখের দিকে তাকিয়ে কথা বলে না। এড়িয়ে চলে। প্রথম প্রথম বিষয়টা অর্ষা পাত্তা না দিলেও এখন দিচ্ছে। তার হঠাৎ পরিবর্তন মানতেও কষ্ট হচ্ছে।
লিলিয়া আর স্মিথ ফিরে আসার পর অর্ষা আবারও আহনাফের রুমে ফিরে এসেছে। ভেবেছিল এবার হয়তো আহনাফ স্বাভাবিক আচরণ করবে। কিন্তু ভাবনা ভুল ছিল। আরো যেন নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছিল আহনাফ। এদিকে ওর পরিবর্তনে দুঃখে, কষ্টে কান্না পায় অর্ষার।
.
আজকে পরীক্ষার রেজাল্ট দেবে বলে সকাল থেকেই চিন্তায় ছিল গ্যাঞ্জাম পার্টি। সকাল হতে না হতেই সবাই মিলে ভিডিয়ো কলে এসেছে। চুপচাপ নিরবতা চলছে শুধু।
আশিক কটনবার দিয়ে কান চুলকিয়ে বলে,’কাহিনি কী মামা? সবাই এমন চুপ করে আছিস কেন? জামাই-বউ মর’ছে নাকি তগো?’
জুঁই চোখ পাকিয়ে বলল,’আজেবাজে কথা বলবি না একদম।’
‘তাইলে কী করমু? আমিও এহন চুপ করে থাকমু?’
‘হ, থাক। চুপ থাক।’
‘কিন্তু কারণ কী?’
লামিয়া মুখটা গোবেচারা করে বলল,’রেজাল্ট দিবে যে জানিস না? টেনশন হচ্ছে বাল!’
‘জানি তো। কিন্তু টেনশন কইরা লাভ কী? বিশেষ কইরা তুই, অর্ষা আর জুঁই তো একদম নিশ্চিন্তে আছিস। তোদের তো বিয়ে হয়েই গেছে। তোরা এখন আর ফেইল করলেই কি, আর পাশ করলেই কি!’
দিদার ওর সাথে সহমত পোষণ করে বলল,’এটা কিন্তু ঠিক কথা।’
লামিয়া ধমক দিয়ে বলল,’তগো মুখে পোকা পড়ব। ফেইল করব কেন বেদ্দপ?’
‘না মানে, কইলাম আরকি।’
আহিল বলল,’তোরা এবার চুপ তো থাক। আমার একটা কথা শোন। রেশমির হেল্প লাগবে।’
রেশমি নখ কামড়াচ্ছিল দাঁত দিয়ে। আহিলের কথা শুনে সেভাবেই বলল,’কী?’
‘কালকে আমার সাথে রেস্টুরেন্টে যেতে হবে আর…’
পুরো কথা শেষ হওয়ার আগে দিদার লাফিয়ে উঠে বলল,’শুধু রেশমি একা কেন? আমি কী দোষ করলাম? না মানে, আমরা কী দোষ করলাম?’
‘আগে কথা তো শেষ করতে দে।’
‘আরে রাখ! আমাদেরও ইনভাইট কর। তুই আর অর্ষা যে এ+ পাবি ঐডা আমরা জানি। আমাদেরও ট্রিট দিতে হবে। রেশমি একা কেন পাবে?’
‘এত বেশি বুঝিস কেন? বলতে আমায়।
রেশমি তোকে আমার গার্লফ্রেন্ড সেজে একটু অভিনয় করতে হবে কাল। ঐ পিচ্চি মেয়েটাকে জাস্ট বিশ্বাস করাতে হবে আমার গার্লফ্রেন্ড আছে।’
‘কেন রে ভাই? আমি কি অভিনেত্রী নাকি? আমি পারব না এসব। অন্য কাউকে বল।’
‘প্লিজ! ও তোকেই দেখেছিল আমার সাথে। এজন্য তুই গার্লফ্রেন্ড সেজে কথা বললে বিশ্বাস করবে। আর আমিও বলেছি তুই আমার জিএফ।’
‘সবসময় তোরা বলির পাঠা কেন আমাকেই বানাস বল তো? এমনেই তো কোনো বর নাই, বয়ফ্রেন্ড নাই; তার ওপর এই মিথ্যা নাটক করলে কি এই জীবনে আর বফ, বর কিছু পামু?’
‘আরে সেন্টি খাওয়া অফ কর তো।’
অর্ষা মনমরা হয়ে বলল,’আচ্ছা আমায় জানাইস তোরা রেজাল্ট। আমার ক্ষুধা লাগছে। খাব এখন।’
‘আচ্ছা খেয়ে নে আগে।’ বলল জুঁই।
আহনাফ আজ অফিসে যায়নি। কোন উপলক্ষে বা কেন যায়নি সেটা অর্ষাও জানে না। আহনাফ বলেনি। আজকাল তো সে ঠিকমতো কথাই বলে না। খেতে বসতে গিয়ে জানালা দিয়ে দেখল গ্লোরিয়া আর হেলেন আজ আবার এসেছে। আর আহনাফও সেখানেই রয়েছে।
আবার গ্লোরিয়ার সাথে এমন হেসে কথা বলা সহ্য হচ্ছিল না। সে আপেলে কামড় বসিয়ে মুখ গম্ভীর করে তাকিয়ে থাকে। স্মিথকে নিয়ে বাইরে যায়। বাড়ির সামনে ঘাসের ওপর বসে মিছে গল্প করে স্মিথের সাথে। তার দৃষ্টি ও মন তো সামনের দিকেই ছিল। অর্ষাকে দেখে হেলেনও এগিয়ে আসে।
অর্ষার পাশে বসে জিজ্ঞেস করে,’কেমন আছো অশা?’
নিজের নামের করুণ দশা দেখে মনে মনে দীর্ঘশ্বাস নেয় অর্ষা। এরপর হেসে বলে,’ভালো। আপনি?’
‘আমিও ভালো। সাদা জামায় তোমায় সুন্দর লাগছে। পরীর মতো।’
অর্ষা মৃদু হেসে বলল,’থ্যাঙ্কস।’
এরপর হেলেন গল্প জুড়ে দেয়। এই গল্প, সেই গল্প; শেষ নেই যেন। প্রথমে অর্ষার বিরক্ত লাগলেও এখন ভালো লাগছে। কারণ এই দেশ সম্পর্কে সে অনেক কিছুই জানতে পারছে।
আহনাফ আর গ্লোরিয়াও ওদেরকে গল্প করতে দেখছিল। কথা বলতে বলতে হেলেন থেমে যায়। হাত বাড়ায় অর্ষার দিকে। সহসা এমন হওয়ায় ঘাড় একটু পিছিয়ে নেয় অর্ষা।
হেলেন অর্ষার চুল থেকে ছোটো একটা পোকা এনে হেসে বলে,’এই পোকাটা তোমার চুলে ছিল।’
হঠাৎ করে তখন গ্লোরিয়া আর আহনাফের আগমন ঘটে সেখানে। অভাবনীয় একটা কাজ করে বসে আহনাফ। অর্ষার হাত ধরে উঠিয়ে দাঁড় করায়। গ্লোরিয়া, হেলেন আর স্মিথের দিকে তাকিয়ে বলল,’সবাই ভেতরে আসো।’
এরপর অর্ষার হাত বগলদাবা করে ভেতরে নিয়ে যেতে যেতে বিড়বিড় করে বলল,’এত হিহিহি, হাহাহা ভালো নয় বুঝছ!’
চলবে…
[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ। রি-চেক দেওয়া হয়নি। ভুলত্রুটি মার্জনীয়।]