জামাইকে বশে আনার জন্য জনৈক বান্ধবী আমাকে বুদ্ধি দিলো জামাইকে তাবিজকবচ করার। আমি এসবের ঘোর বিরোধী। প্রথমেই ওর বদবুদ্ধি শুনে রাগী গলায় বললাম,আমি এসব পারবো না!
ও আমার কাঁধে হাত রেখে বললো, আরে.. পুরুষমানুষের স্বভাব তো তুই জানিস! তারপর তোর জামাই হ্যান্ডসাম,সুন্দর। একে বশ না রাখলে চলে? তোর হুমায়ূন আহমেদেরই তো একটা কথা আছে, পুরুষ মানুষ আর ছাগল এই দুই জিনিসকে সবসময় বেঁধে বেঁধে রাখতে হয়!
হুমায়ূন আহমেদের নাম শুনে আমি একটু নরম হলাম। হুমায়ূন আহমেদ আমার দূর্বলতা। হুমায়ূন আহমেদের নাম নিয়ে কেউ কিছু বললে আমি না করতে পারি না। সুতরাং রাজি হলাম। বান্ধবী নিজেও তার স্বামীকে তাবিজ করবে।
এক শুক্রবারে বান্ধবীর সাথে চলে গেলাম হুজুরের কাছে। আমি ভেবেছিলাম হুজুর মানেই তার একটা খাস কামরা থাকবে,আশেপাশে কর্মরত খাদেম আর বাইরে মুরিদের লাইন…
কিন্তু বাস্তব কখনো উপন্যাসের মতো সুন্দর হয় না। গিয়ে একেবারেই অন্য জিনিস দেখলাম। গ্রামের এক চালাঘরে হুজুরের বসবাস। আমরা যখন পৌঁছলাম সে গাছের তলায় বসে এক হাত দিয়ে অন্য হাতের বগল চুলকাতে চুলকাতে বউয়ের সাথে ঝগড়া করছে। বউ বলছে, আরেকদিন যদি তুমি আমার বাপ মা তুলে কথা কউ আমি বাপের বাড়ি চলে যামু…
হুজুর জবাব দিতে গিয়েও আমাদের দেখে থেমে গেলেন। আমার মাথায় প্রথমেই এই কথাটা এলো যে, যার নিজের সংসারেই আগুন লেগে রয়েছে সে আমাদের সমস্যার কি সমাধান করবে?
হুজুর গম্ভীর মুখে একটা পাঞ্জাবী গায়ে দিয়ে এসে বসেছেন। আমাদের সমস্যা শুনে আরো গম্ভীর হয়ে গেলেন। বললেন,
বুঝতেছি তোমাদের মন অত্যাধিক চিন্তাযুক্ত! সমাধান হবে, চিন্তা নাই। আমার কাছে আসছো, সমাধান হবে!আমার কাছে আজ পর্যন্ত যারা আসছে তাদের বর ছাগলের মতো এখনো পর্যন্ত তাদের পেছন পেছন ঘোরে!
আমি বিরক্ত হয়ে ভাবলাম, কোথায় আসলাম এইটা? বরকে ছাগলের মতো ঘোরানোর দরকারটা কি? পুরুষ মানুষ সবসময় পেছন পেছন ঘুরলেও তো বিরক্ত লাগবে!
কিন্তু একবার এসে যখন পড়েছি পিছু হটার কোনো সুযোগ নেই।
সুতরাং, হুজুর আমাদের দুইজনকে দুইটা তাবিজ দিলেন। শোবার ঘরের বিছানায় রাখতে হবে। আর একটুকরো জাফরান মেশানো ছোট্ট একটা কাগজ যেটা বরের ব্যবহৃত যেকোনো বস্তুর মধ্যে রেখে দিতে হবে।
নিয়মানুযায়ী তাবিজটা বরের বালিশের ওয়ারের ভেতর রাখলাম আর কাগজটা বরের ব্যবহৃত পারফিউম খুলে তার ভেতর ডুবিয়ে রেখে দিলাম।
কয়দিন কেটে গেল। এখনো কোনো ফল পাওয়া যায়নি। তবে একটা অদ্ভুত জিনিস লক্ষ্য করছি, আমাদের বিড়ালটা আমার পিছু ছাড়ে না। আগে শুধু ক্ষুধা লাগলে আমার পেছনে পেছনে ঘুরত। বাচ্চা হওয়ার সময় ওর বেশী ক্ষুধা লাগে। কয়দিন আগেই তার বাচ্চা হয়ে গেছে। এখন আর তেমন বাড়িতেও থাকে না, সারাদিন বাইরে বাইরে ঘুরে সন্ধ্যার দিকে ওর জন্য বাটিতে রেখে দেয়া ভাত খেয়ে গিয়ে শুয়ে পড়ে। কিন্তু গত একসপ্তাহ ধরে ও আমার পেছন পেছনই ঘুরছে। মনে মনে আমি হাসি আর ভাবি, যেখানে আমার বরের আমার পেছনে পেছনে ঘোরার কথা সেখানে ঘুরছে ও!
অফিস থেকে বাড়ি ফিরেছে বর। আমি আড়চোখে দেখলাম সে আমাকে লক্ষ্য করছে কি না,আমার জন্য ফুলটুল কিছু এনেছে কি না। কিন্তু কই? কোনো কিছুই তো উন্নতি হয়নি। ভন্ড হুজুরের পেছনে দুই হাজার টাকা খামাখাই দিলাম।
আমি বরের পাশে গিয়ে বসে তার হাত ধরে বললাম,আমার কথা মনে পড়েনি সারাদিন অফিসে?
সে বিরক্ত হয়ে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললো, আগে পানি গরম করো! পা কাদায় পড়েছিল,বিচ্ছিরি অবস্থা!
বর উঠে চলে গেছে এদিকে বিড়ালটা আমার কোল থেকে নামছে না!
রাতে ঘুমাতে এসেছি,বিড়ালটা কিছুতেই আমার পিছু ছাড়ছিলো না বাধ্য হয়ে ঝাঁটা পেটা করে তাড়িয়ে দরজা দিয়ে দিয়েছি।
কি মনে করে বরের পারফিউমের শিশি দেখতে গেলাম,শিশি খালি।
বালিশের ওয়ার দেখতে গেলাম। তার ভেতরে তাবিজ নেই!
কৌতূহল দমন করতে না পেরে আমি সরাসরি ওকেই প্রশ্ন করতে গেলাম,
শোনো! তোমার পারফিউম শেষ? আমাকে বলোনাই কেন? আরেকটা কিনতাম!
বর পত্রিকার পাতা উল্টাতে উল্টাতে জবাব দিলো, শেষ হতো না! আমাদের বিড়ালটা ইঁদুর নিয়ে এসে ওর ঘরে বিচ্ছিরি গন্ধ করে ফেলছিলো।ঐখানে স্প্রে করে দিয়েছি,রুম স্প্রে পাইছিলাম না।
-আর বালিশ কি করছো? বালিশ তো তোমার ঐটা না!
:হুম বিড়ালের সদ্য বাচ্চা হয়েছে না! ছোট বাচ্চা, মেঝেতে ঘুমাতে পারে না। দেখলাম বালিশের ওপর উঠে বসে থাকে, তাই ওদের দিয়েছি ওটা!!!!
Jannatul Firdous