- বাস্তব জীবনের ভালবাসার গল্প
- বাস্তব জীবনের শিক্ষণীয় গল্প।
- বাস্তব জীবনের ফেসবুক স্ট্যাটাস।
- মেয়েদের সম্পর্কে কিছু বাস্তব কথা।
১.বাস্তব জীবনের ভালবাসার গল্প
বিয়ের প্রথম প্রথম দুজনেই বেকার ছিলাম বাসা থেকে টাকা দিলে তারপর বাজার হতো + রান্না হতো!
এমনও দিন গেসে, ২০ টাকা আছে! বাজারে ডিম কিনতে গিয়ে, গরমে কোকাকোলা নিয়ে দুজনে রাস্তার সাইড দিয়ে নিজেদের পরিস্থিতির কথা ভেবে হাসতে হাসতে চলে এসেছি! বাসায় এসে আলুভাজি ভাত খেয়েছি
হেটে হেটা অর্ধেক উত্তরা গল্প করতে করতে কাটিয়েছি খাটের অভাবে মেঝেতে ঘুমিয়েছি, কতো সাধের রান্না ফ্রীজ না থাকার কারনে নষ্ট হয়ে গেছিলো, সেটা নিয়ে কেদেছি পরে কি খাবো এটা ভেবে! আহ দিনগুলা মনে পরে এখন দুজনেই ব্যস্ত! বাসায় কতোসতো আসবাবপত্র, এক্সট্রা খাবারদাবার! শুধুমাত্র বেকারত্বের কারনে ভালোবাসার মানুষের হাত ছাড়াটা উচিৎ না, বিয়েতে আল্লাহ অনেক রহমত বরকত দেন! একটু ধৈর্য ধরা লাগে ব্যাস, সারাজীবন একসাথে সুখে শান্তিতে থাকা যায়!
আমাদের সকল ছোটগল্পের লিংক
https://kobitor.com/category/sotogolp/
…………………
……………………….
অনুপ্রেরণার গল্প
শিক্ষণীয় গল্প: হাত ঘড়ি
এক ব্যক্তি তার বাড়ির পেছনের প্রশস্ত গোলাঘরে হাতঘড়ি হারিয়ে ফেললো। ওটা কোনো সাধারণ ঘড়ি নয়, মৃতা স্ত্রীর রেখে যাওয়া স্মৃতি। অনেক বছর আগে কোনো এক বিবাহ বার্ষিকীতে স্ত্রী উপহার দিয়েছিল।
সারাদিন ভর অনেক খোজাখুজির পর ক্লান্ত হয়ে লোকটি হাল ছেড়ে দিল। গোলাঘরের পাশেই কিছু ছোট বাচ্চা খেলা করছিল, লোকটি ওদের ডেকে ঘড়িটি খুজে দিতে সাহায্য করতে বলল। যে পাবে তাকে পুরষ্কার দেবার ঘোষণাও দিল।
পুরষ্কারের কথা শুনে ছোট বাচ্চা গুলো দল বেধে গোলাঘরের মধ্যে ঢুকে খোজাখুজি আরম্ভ করে দিল, কিন্তু অনেকক্ষণ খোজাখুজির পরও বাচ্চাগুলো ব্যর্থ হল। লোকটি হাল ছেড়ে দিতে যাবে এমন সময় ছোট একটি ছেলে এসে আরেকবার খোজার অনুমতি চাইলো।
ছেলেটির আন্তরিকতা দেখে লোকটি অনুমতি দিল। কিছুক্ষণ পর ছেলেটি হাতে ঘড়ি নিয়ে গোলাঘর থেকে বেরিয়ে এলো। সাধের ঘড়িটি হাতে পেয়ে লোকটি আনন্দে কেঁদে ফেললো। কিছুক্ষণ পর নিজেকে সামলে লোকটি ছোট বাচ্চাটিকে জিজ্ঞাসা করলো সবাই যেখানে ব্যর্থ হয়েছে সেখানে ও কিভাবে এত অল্প সময়ের মধ্যে সফল হলো! ছেলেটি উত্তর দিল, ‘আমি তেমন কিছুই করিনি। গোলাঘরে ঢুকে কিছুক্ষণ চুপচাপ বসেছিলাম। কিছুক্ষণ পর সবকিছু নীরব হয়ে গেলে ঘড়িটার টিকটিক আওয়াজ শুনে কিছুক্ষণ খুজতেই পেয়ে গেলাম!’
অস্থির এবং অশান্ত মনের চেয়ে স্থির এবং শান্ত মনের ক্ষমতা এবং কার্যকারীতা অনেক বেশি। জীবনের সংকটময় মূহুর্তগুলোতে অশান্ত এবং অস্থির না হয়ে কিছুক্ষণ স্থির হয়ে বসে মনটাকে শান্ত এবং স্থির করুন, সংকট থেকে উত্তরণের জন্য উপায় পেয়ে যাবার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে বহুগুণে। প্রতিদিন কিছুটা সময় নিজের জন্য রাখুন, এ সময়টা নিরিবিলি থাকুন এবং শান্ত মনে ভবিষ্যত পরিকল্পনা এবং বর্তমানের সমস্যা গুলো নিয়ে চিন্তা করুন, ফলাফল দেখে নিজেই অবাক হয়ে যাবেন।
২.বাস্তব জীবনের শিক্ষণীয় গল্প
…………
…………….
– একটা টিউশনি করবে?
– কোথায়?
– ভবানিপুরে।
– ছাত্র না ছাত্রী?
– ছাত্র। ক্লাস এইট।
– ছাত্র পড়াব না।
– পুলিশ অফিসারের ছেলে। বাবা ডিআইজি। ভালো মাইনে দেবে। ভালো খাবার পাবে। আরে এতো বড়ো পুলিশের ঝাড়ুদার হতে পারাও ভাগ্যের। সুপারিশে চাকরিও হয়ে যেতে পারে। দুদিন পর আইজি হবেন।
————————-
রাজি হয়ে যাই রাজীবের প্রস্তাবে।
রাজীব বলল, মাইনে মাসে আটশ টাকা।
সে সময় আটশ অনেক টাকা। কিন্তু টিউশনিটা রাজীব নিজে না করে কেন যে আমাকে দিচ্ছে বুঝতে পারছিলাম না।
– তুমি করছ না কেন?
– আমার সময় নেই।
ডিআইজি সাহেবের ছেলের নাম অনি। ফর্সা, তবে ধবধবে নয় কিন্তু বেশ মায়াময়। বিশাল বাড়ি, বারান্দায় দামি ফুলের টব। চারিদিকে সমৃদ্ধির ছড়াছড়ি। রাজীব আমাকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে চলে গেল।
ছাত্রের মুখোমুখি হলাম।
– স্যার, বেড়াল প্রথম রাতেই মেরে ফেলা উচিত। আমার কথা নয়, আমার বাবার কথা, ঠিক না?
– ঠিক। কিন্তু বেড়াল কোথায়?
– আছে স্যার, আছে। অনেক বড়ো বেড়াল।
– আমি বেড়াল মারব কেন?
– একটা কথা বলব?
– বলো।
– আগের কথা আগে বলে দেওয়া ভালো। রাখলে আমারও লাভ আপনারও লাভ। নইলে দুজনেরই ক্ষতি। আমি চাই না আপনার ক্ষতি হোক।
– কী কথা বলে ফেল।
– আপনার মাইনের চল্লিশ পার্সেন্ট আমাকে দেবেন। আপনার মাইনে আটশ টাকা। চল্লিশ পার্সেন্টে হয় তিনশ কুড়ি টাকা। তবে আমাকে তিনশ দিলেই হবে, কুড়ি টাকা আপনার বখশিস। কী বলেন স্যার?
প্রথমে মাথাটা ঝিম ঝিম করে ওঠে। ইচ্ছে করছিল ঘুরিয়ে একটা চড় দিই। হাত এগিয়ে নিয়েই থামিয়ে ফেলি। মুহূর্তের মধ্যে স্বাভাবিক করে ফেলি আমাকে। তারপর সহজ গলায় আদর মেখে বললাম, কম নেবে কেন বাবা?
– এমনি।
– না, আমি পুরো তিনশ কুড়িই দেব।
– তাহলে স্যার খুচরো দিতে হবে। আমি একশ টাকার নিচে খুচরো রাখি না।
– তাই হবে।
বিচিত্র অভিজ্ঞতার আশায় আমার মনটা ফুরফুরে হয়ে ওঠে। মজার হবে টিউশনিটা, দেখি কতদূর যেতে পারে অনি। মাস শেষ হওয়ার কয়েক দিন আগে আমি একটি খামে করে তিনশ কুড়ি টাকা অনির হাতে তুলে দিই।
অনি যথাসময়ে টাকা পেয়ে খুশি।
হাসি মুখে বলল, স্যার, আপনি খুব ভালো মানুষ।
আমি বললাম, তুমি আমার কাছ থেকে শিখছ আর আমি শিখছি তোমার কাছ থেকে। দুজনের মাইনে ঠিক সময়ে দিয়ে দেওয়া উচিত। তাহলে শ্রমের মর্যাদা মাসের প্রথমদিকে হাসার সুযোগ পায়।
অনি বলল, থ্যাংক ইউ স্যার। সব মানুষ যদি আপনার মতো হতো!
চার মাস পর ডিআইজি সাহেব পড়ার রুমে এলেন। এতদিন তাকে একবারও দেখিনি, বেশ গম্ভীর চেহারা, দেখলে সমীহ আসে। চোখের চশমায়, দামটা পুলিশের পোশাকের মতো ঝিলিক মারছে, হাতের ঘড়িতে আরও বেশি।তিনি অনির একটি খাতা হাতে তুলে নিয়ে দেখতে দেখতে বললেন, মাস্টার, আপনার মাইনে চারশ টাকা বাড়িয়ে দিলাম।
– কেন স্যার?
– আমরা পুলিশের লোক। গুণীর কদর করতে জানি। এ পর্যন্ত কোনো মাস্টার আমার ছেলের কাছে দুই মাসের বেশি টেকেনি। প্রত্যেকে আমার ছেলেকে বকা দিয়েছে, মেরেছে, অশ্রাব্য কথা বলেছে। ছেলে কেবল আপনারই প্রশংসা করেছে। আপনি নাকি ভালো পড়ান।
তিনি একটা কলম ও একটা ডায়েরি আমার হাতে দিয়ে বলেন, এগুলোর আপনার।
– থ্যাংক ইউ স্যার।
কলমটা ছিল সম্ভবত পার্কার। তখন তো আর মোবাইল ছিল না, ওই সময় পার্কার ছিল আমাদের কাছে স্মার্ট ফোনের মতো লোভনীয়।
সাহেব চলে যেতে অনি বলল : স্যার।
– তুমি কী কলম আর ডায়েরি হতেও ভাগ চাইছ?
অনি হেসে বলল, না স্যার। ও সবে আমার আগ্রহ নেই। টাকা হলে সব পাওয়া যায়।
– তবে?
– আমার পাওনা এখন চারশ আশি টাকা। আমি আশি টাকা নেব না, একশ টাকা নেব। তার মানে পাঁচশ টাকা।
– ঠিক আছে। তুমি আমার টিচার, তোমাকে কুড়ি টাকা বেশি দিতে না পারলে আমার জ্ঞান অর্জন হবে কীভাবে?
অনির হাসিটা আরও বিস্তৃত হলো। কমিশন নিলেও পড়াপাড়ি বেশ ভালোই হচ্ছে। আরও তিন মাস কেটে যায়। এরমধ্যে, আমার মাইনে আরও দুশ টাকা বেড়ে গেছে। অনিকে এখন টাকা দিতে কষ্ট হচ্ছে না।
সেদিন বাইরে খুব বৃষ্টি হচ্ছিল। অনিকে অন্যদিনের চেয়ে বেশ আনমনা মনে হচ্ছে।
বললাম, কী হয়েছে?
– স্যার, আমাকে একটা কাজ করে দিতে হবে।
– কী কাজ?
– একটা চিঠি লিখে দিতে হবে।
– চিঠি তো লিখেই দিই।
– স্কুলের চিঠি নয়।
– কোন চিঠি?
– আমার প্রেমিকা, সরি স্যার বান্ধবীকে দেওয়ার জন্য।
– কী লিখব?
– আপনার মতো করে আপনি লিখে দেবেন। আমি তাকে ভালোবাসি। তাকে না দেখলে বুকটা কেমন মোচড় খায়। কিছু ভালো লাগে না। সে খুব সুন্দর।
চিঠি লিখে দিলাম গভীর ভাষায়, প্রেমের মমতায়।
রাস্তায় এসে ইচ্ছেমতো হাসলাম। অনি আর রেহাই পাচ্ছে না।
–
খবর পাঠিয়েছে, শুক্রবার তাদের বাড়ি যেতে হবে। অনির জন্মদিন।
কী নিয়ে যাই?
অনেক চিন্তাভাবনা করে অনির বান্ধবীকে দেওয়ার জন্য একটা চিঠি লিখি।
অনি চিঠি পড়ে এত খুশি হয় যে, সে মাসের পুরো কমিশনটাই আমাকে ফেরত দিয়ে দেয়।
অবাক হয়ে বললাম, ফেরত দিলে যে?
অনি আমাকে আরও অবাক করে দিয়ে বলল : আপনার লেখার সম্মানি। স্যার, চিঠিটা একদম ফাটাফাটি হয়েছে।
লেখার সম্মানি! আমি চমকে উঠি। লেখার প্রথম আয়, এ তো মস্ত ব্যাপার! তাহলে কেন এতদিন লিখিনি! অনির উৎসাহে উৎসাহিত হয়ে পত্রিকায় লেখা শুরু করি। তারপর আস্তে আস্তে লেখা আমার নেশা হয়ে যায়।
–
যতই গল্প করি, যতই প্রেমপত্র লিখে দিই না কেন, লেখপড়ায় অনিকে এমন কৌশলে ব্যস্ত রাখি যে, সে ধীরে ধীরে বইয়ে ঝুঁকে পড়ে, তার সব আনন্দ অন্যান্য জায়গা থেকে বইয়ের পাতায় এসে ভীড় করতে শুরু করে। আগে তার বাবাকে বলত চকলেটের কথা, এখন বলে বইয়ের কথা। আগে ইলেকট্রনিক্স জিনিসে তার আলমারি ছিল ভর্তি; এখন সেখানে ঠাঁই পেয়েছে বই, পৃথিবীর বিখ্যাত লেখকদের নানা বই। আমার কাছ থেকে নাম নিয়ে যায় বইয়ের, নিয়ে আসে তার বাবাকে দিয়ে। দেশে না পেলে বিদেশ থেকে। কত দামি দামি বই, আমার কাছে মনে হতো, সামর্থ্যবানদের ইচ্ছাই প্রাপ্তি।
আরও তিন মাস পর আমার মাইনে হয় পনেরশ টাকা। অনেক সরকারি অফিসারও তখন এত মাইনে পেতেন না। এখন অনির পাওনা গিয়ে দাঁড়ায় ছয়শ টাকায়।
মাসের শেষদিন অনিকে ছয়শ টাকা দিতে যাই। লজ্জায় চোখটা নিচু করে ফেলে সে। আগের মতো দ্রুত হাত এগিয়ে দিচ্ছে না।
– সরি স্যার।
– নাও তোমার টাকা।
– লাগবে না স্যার।
– আরে নাও। আমি অত টাকা দিয়ে কী করব?
– স্যার, একমাসে যতটাকা আপনাকে দিই, আমি একদিনে তার চেয়ে অনেক বেশি দামের চকলেট খাই। একটা চকলেটের দাম একশ টাকা, দিনে কুড়িটা চকলেট আমি একাই খাই। বাবার হুকুমে সুইজারল্যান্ড থেকে আসে।
তারপরও আমি বললাম, নাও।
– লাগবে না স্যার।
– আগে লাগত কেন?
– তাস খেলতাম, ওকে দিতাম। এখন তাস খেলা সময় নষ্ট মনে হয়, বই পড়ি।
আমি সাফল্যের হাসি নিয়ে বের হয়ে আসি।
অ্যানুয়াল পরীক্ষার পর অনির ওখানে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। সাহেব বলেছেন এক মাস পর থেকে আবার পড়ানো শুরু করতে। আমার মতো ভালো মাস্টারকে তিনি ছাড়বেন না। বদলি হলে সেখানে নিয়ে যাবেন।
পনের দিন পর দেখি আমার মেস বাড়ির সামনে একটা বিরাট গাড়ি দাঁড়িয়ে।
হন্তদন্ত হয়ে বের হয়ে আসি।
অনি আর তার বাবা নামছেন।
সাহেব বললেন, মাস্টার আমার ছেলে থার্ড হয়েছে। এর আগে কোনোদিন পঞ্চাশেও ছিল না। এক বছরের মধ্যে আপনি আমার ছেলেটাকে বদলে দিয়েছেন।
ডিআইজি সাহেব আমার হাতে একটা ঘড়ি তুলে দিয়ে বললেন, আমার ছোট ভাই আমার জন্য সুইজারল্যান্ড থেকে এনেছেন। আপনাকে দিলাম। এটি কোনো বিনিময় নয়, উপহার; ভালোবাসার নিদর্শন।
আনন্দে আমার চোখ ঝাপসা হয়ে আসে। এমনভাবে কেউ আমাকে কোনোদিন এমন উপহার দেননি।
অনি আমায় প্রণাম করে বলল, স্যার, আপনি আমাকে বদলে দিয়েছেনে।
– মাস্টার, অনি আমাকেও পাত্তা দিত না। এ ছেলের কাছে আমি ছিলাম কেবল টাকার ঝুড়ি। আপনি তাকে মানুষ করে দিয়েছেন। বলুন কীভাবে সম্ভব হয়েছে?
বললাম, ভালোবাসা, শুধুই ভালোবাসা।
– আপনি আমার কাছ থেকে কী চান?
– ভালোবাসা, শুধুই ভালোবাসা।
টিউশনি এবং ভালোবাসা
ঘটনার সময়কাল : জানুয়ারি ১৯৮৬।…
–
বিশিষ্ট লেখক ড. আমিন। “ভালবাসা, শুধুই ভালবাসা” গল্প অবলম্বনে
৩.বাস্তব জীবনের ফেসবুক স্ট্যাটাস
বাড়িতে চোর ঢুকেছে!
গাধা ও কুকুর পাশাপাশি বসে আছে।
গাধা ভাবছে কুকুর হয়তো চোরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।
কিন্তু, না। কুকুর চুপচাপ বসে আছে।
কুকুরের নীরবতায় গাধার মনে সন্দেহ দেখা দিলো।
সে কুকুরের কাছে এসে বললো ভাই, একটাকিছু করো,
চোর তো গুদাম ঘরের তালা ভাঙ্গা শুরু করে দিয়েছে।
গাধার কথায় কুকুর কর্ণপাত না করে বসে রইলো।
হঠাৎ গাধা চেয়ে দেখলো কুকুরের সামনে হাড্ডি।
হাড্ডির সাথে মাংসও আছে।
গাধা নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছেনা।
এ কি দেখছে সে ?
বাড়ির একমাত্র পাহারাদার তার প্রিয় কুকুর ভাই কি শেষ পর্যন্ত ঘুষ খাওয়া শিখে ফেলেছে ?
তাও আবার চোরের মত বেইমান, বিশ্বাসঘাতক, নিকৃষ্ট প্রাণীর
কাছ থেকে ? ছিঃ! ছিঃ! ছিঃ!
এদিকে চোরেরা তালা ভেঙ্গে ঘরের ভেতরে ঢুকে পড়েছে।
গাধা আর চুপ থাকতে পারলোনা,
সে গগনবিদারী চেঁচামেচি শুরু করে দিলো।
তার চিৎকারে বাড়ির মালিকের ঘুম ভেঙ্গে গেলো।
মালিক খুব বিরক্ত হলো। সে ঘর থেকে বের হয়ে
দেখলো কুকুর নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে, আর গাধা
লাফাচ্ছে। মালিক ভাবলো হয়তো গাধাকে জ্বিনে
ধরেছে অথবা পাগল হয়ে গেছে । তাই সে রাগান্বিত হয়ে লাঠি দিয়ে গাধার পিঠে বেশকয়েকটা
আঘাত করল। এতে গাধা খুবই ব্যথিত হলো ।
এখন গাধা কোথায় যাবে? মালিকের সম্পদ রক্ষা
করতে গিয়ে উল্টো মার খেতে হলো। অবশ্য চোর
ধরা যার দায়ীত্ব ছিলো, সে ঘুষ খেয়ে চুপ থেকেছে।
আর গাধা অন্যের দায়ীত্ব মাথায় নিয়ে অপরাধী
হয়েছে।
অগত্যা গাধা মনে মনে ভাবছে- দায়ীত্বশীলরা নষ্ট হয়ে
গেলে করার কিছুই থাকেনা। এ সময় কিছু করতে
যাওয়া বোকামী ছাড়া আর কিছুনা।
গল্পটা এখানেই শেষ।
কিন্তু আমার ভাবনা এখান থেকেই শুরু।
আমরা যারা চোরদের বিরুদ্ধে লেখালেখি করছি,
তাদের অবস্থাও ঐ গাধার মত।কথা বলে অপরাধী হচ্ছি।
আর কুকুররা টোপ গিলছে এবং শত কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা হচ্ছে।
তাই চোর ও কুকুরের গলাগলি যতদিন থাকবে-
ততদিন আমাদের মত গাধাদের চোখ বুজে সহ্য করা ছাড়া
আর কোন উপায় নাই ।
তবে একথা সত্য যে, চোরের দশদিন সাধুর একদিন ।
কথায় বলে
পাপ বাপকেও ছাড়ে না,,,,,,,,@ collect
৫.মেয়েদের সম্পর্কে কিছু বাস্তব কথা
আমার গার্লফ্রেন্ড একটা বারোভাতারি। সে চায়,আমি ছাড়াও তার আরো বফ হোক। কিন্তু আমি বেচে থাকতে এই কুকর্ম কখনো হতে দিবোনা। তাই সেদিন প্রেমিকাকে ফোনে বলেছিলাম,” আজ বাইক এক্সিডেন্ট করতে করতে বেচে গেছি”। সে আমাকে উত্তর দিলো,” চিন্তা কইরোনা। তুমি মরলে আমি মেহেদির সাথে রিলেশন করবো। তবুও আমাকে সুখি রেখে আমি তোমার আত্মাকে খুশি রাখার চেষ্টা করবো”। যাইহোক, কথাটা শুনে সেদিন রাতে ২বার মরতে গেছি।কিন্তু হাত পা কাটার ভয়ে আর আত্মহত্যা করিনি।
কদিন আগে আমি ঢাকা যাচ্ছিলাম একটা কাজে। লঞ্চে উঠেছি যাতে নিরিবিলি যেতে পারি। হটাৎ দেখি একটা লঞ্চ ঢুবে গেছে। মানুষ তা ভিডিও করে ফেসবুকে আপলোড দিচ্ছে। এদিকে আমি সরাসরি ক্লিয়ার দেখতে না পেয়ে,ফেসবুকে ভিডিও দেখতে যাই। আর লগইন করতেই দেখি,আমার প্রেমিকা স্ট্যাটাস দিছে,” ওপারে ভালো থেকো। তুমি কোনো চিন্তা করোনা। তোমার এই প্রিয়তমাকে আশিক ভালো রাখবে”। ওর স্ট্যাটাস দেখে কমেন্ট করলাম,” হারামজাদী, আমি মরিনাই। ফিরে আসি,এরপর তোর আশিকের পরিচয় বের করবো”।
শান্তি নাই ভাই, শান্তি মারা গেছে। একবার মেহেদি, এখন আবার আশিক কে। ধীরে ধীরে বুঝতে পারলাম গার্লফ্রেন্ড দুইভাতারী হয়েছে। কিন্তু তাকে আমার আটকাতে হবে। তাকে ছাড়া আমি বাচবো না। এই নাহ, এই কথা তাকে ভুলেও বলা যাবেনা।
ঢাকা থেকে আসার পর আমি রাতে তার বাসার সামনে যাই। ভেবেছি তাকে শান্ত মাথায় বুঝাবো। দেওয়াল টপকে ভিতরে গিয়ে দেখি, তার বারান্দার দরজা বন্ধ। কয়েকটা ধাক্কা দিতেই গার্লফ্রেন্ড এসে দরজা খোলে। আমি রুমে ঢুকেই তাকে জড়িয়ে ধরে বললাম,” আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি “। আমার কথায় সে বলল,” জলদি পালাও”। আমি অবাক হয়ে বললাম,” কেনো,রুমে কেও আসবে নাকি”। সে আমার কাধে মাথা রেখে বলল,” অলরেডি চলে এসেছে”। আমি মাথা তুলে এদিক সেদিক তাকিয়ে দেখি,জানালার পর্দাটা নড়ছে।অথচ আমি পর্দার পাশ দিয়ে আসিনি। ঠিকই ধরেছেন,সে অন্য কাওকে পালাতে বলেছে।
যাইহোক, মাত্র তিনভাতারী হয়েছে। এইটা ব্যাপার না।আমি বেচে থাকতে তাকে ভাতারী বানাবো না। তাকে বুঝতে দেইনি আমি। রাতে তার কপালে চুমু দিয়ে আসার সময় খেয়াল করি,তাদের গেটের সামনে কেও দাঁড়িয়ে আছে। আমি একটু হেটে গাছের আড়ালে লুকিয়েছি। এরপর দেখি গার্লফ্রেন্ড চারভাতারী।অর্থাৎ লোকটা দেওয়াল টপকে ভিতরে গেছে। কিন্তু আমি বেচে থাকতে তাকে বারোভাতারী হতে দিবোনা।এইটা তো মাত্র চারভাতারী।
বাসায় এসে তাকে কল দিলাম। প্রথমবার রিসিভ করেনি।দ্বিতীয়বার কল দেওয়ার পর ধরেছে। আমি গভীর গলায় বললাম,” তুমি আমাকে ভালোবাসো”?। সে নরম গলায় বলল,” হুম বাবু,আমি তোমাকে সবার থেকে বেশি ভালোবাসি “। চোখের কোনায় পানি এনে ফোনটা কেটে দিয়েছি। মনে মনে বললাম,” আমাকে সবার থেকে বেশি,তারমানে ওদেরকে একটু হলেও বাসে।সমস্যা নাই,আমি থাকতে তোমাকে আর কারো হতে দিবোনা”।
পরেরদিন আম্মুর সাথে হেল্প করার জন্য মুরগি কাটছিলাম।ভিডিও কলে সাদিয়া ছিলো। মানে আমার গার্লফ্রেন্ড সাদিয়া। কথার ফাকে ভুলে হাত কেটে যায় আমার।হালকা রক্তও বের হয়েছিলো।সে আমাকে ওপাশ থেকে বলল,” চিন্তা কইরোনা রিয়াজ। তোমার আঙ্গুল পড়ে গেলে শিশিরের আঙ্গুল দিয়ে সারাবো।তুমি একটুও মন খারাপ কইরোনা”। মন চেয়েছে ফোনের ভিতর থেকে তাকে বটি ছুড়ে মারি।
অর্থাৎ সে পাচভাতারী। এইভাবে প্রতিনিয়ত একটা একটা করে বেড়েই যাচ্ছে। শেষে বারোভাতারিতে পা ফেলে সাদিয়া। আমি তাকে নরম গলায় বলেছি” তুমি এতো জনের সাথে কেনো রিলেশন করো? আমি কি তোমাকে কম ভালোবাসি”?। আমার কথায় সে বলল,” তুমি ৫ মিনিটের বেশি পারোনা”।
ঢাকা গুলিস্তানের ফ্লাইওভারের নিচে একটা ব্যানার আছে। ওখানে লেখা আছে, ” যৌনরোগ সমাধান করুন।মাত্র এক ফাইলেই যথেষ্ট। দীর্ঘসময় উপভোগ করুন আনন্দের মুহূর্তকে”। ওখানে একটা মোবাইল নাম্বার আছে। সেটা আমি ফোনে রেখে দিয়েছি।তবে হ্যা,আমি বেচে থাকতে আমার গার্লফ্রেন্ডকে বারোভাতারি থেকে তেরোভাতারি হতে দিবোনা। আর এই কথাটা তাকে বলা যাবেনা।
আপনারাও ওখান থেকে নাম্বারটা নিতে পারেন। এক ফাইলেই যথেষ্ট কিন্তু।
পরিশিষ্ট /
ডাক্তারকে কল দিয়ে শুনতে পাই, তার স্ত্রি তাকে ঝাড়ি মেরে বলছে,
– রাতে কাছে আইবি না। তোর থেকে রফিক ভালো পারে।
#বারোভাতারি ( রম্য গল্প)
লেখক- #রিয়াজ_রাজ
…………………….
……………………..
সকালে মায়ের ব্যাগ থেকে কীভাবে পাঁচ হাজার টাকা মেরে এনেছি। তার কলেজের ক্যম্পাসে বসে বান্ধবীদের বলছিলাম।
সবাই দাত খিলিয়ে হাসছে। রুবি বলে উঠল,
– উচিত কাজ হয়েছে। এত বড় মেয়ের একটা হাত খরচ লাগে না?
আমি বললাম, আজ রবিনের জম্মদিন ওকে টিট্র দেবো।
সবাই হেসে উঠতেই, পেছন থেকে একটা মেয়ে বলে উঠলো,
– তুমি প্রাইমারি স্কুলের ম্যাডাম আফসানা আন্টির মেয়ে, আয়েশা না?
– হ্যাঁ, কেন?
– তুমি যে টাকাটা মেরে এনেছো সেটা আন্টি কাল আমার মায়ের থেকে ধার নিয়েছে।
আমার মাও পাশের বাসার আন্টির কাছে গিয়ে আধা ঘন্টা বসে থাকার পর ধার করে এনেছে।
তুমি যদি এখন এই টাকা খরচ করে ফেলো। আন্টিকে আবার ধার করতে হবে। আমার মায়ের টাকাটা আগামী মাসে তখন দেওয়া হবে না। আমাদের পাশের বাসার আন্টিটা খুব বাজে স্বভাবে। খুব খারাপ কথা বলবে।
তাই বলছি তুমি যদি বেশি খরচ না করো তাহলে আন্টিকে টাকা ফেরত দিয়ে দিও। তোমাদের ঘরে নাকি চাল নেই। কিছু মনে করো না।
মেয়েটা এই কথা বলে ওর ব্যাগ নিয়ে বেড়িয়ে যেতেই আমি ভীষণ রকম লজ্জা পেলাম বান্ধবীদের সামনে। কেউ কিছু বলল না। মুখ টিপে হাসছে।
আমি একটা অপ্রস্তুত হাসি দিয়ে ওদের সামনে থেকে ব্যাগ টা নিয়ে বেড়িয়ে যাচ্ছিলাম।
তখন রবিন ওখানে আসতে আমি চলে যাচ্ছি দেখে ও যখন আমাকে ডাক দেয়, তখন রুবি বলে উঠলো,
– ও তোমার জন্য মায়ের কাছ থেকে টাকা মেরে এনেছে, বেচারি এখন ফেরত দিতে যাচ্ছে। বাসায় নাকি চাল নেই।
এইবলে সবাই হেসে উঠতেই আমি ছুটে পালিয়ে এসে তাড়াতাড়ি রিকশায় উঠে গেলাম। রবিন কয়েক টা ডাক দিলো তবে আমি শুনলাম না।
আমি আমার জামার দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগলাম, গত সাপ্তাহে মাকে শায়েস্তা করতে অনলাইনে দেড় হাজার টাকা দামের তিন ড্রেস অর্ডার করে, ক্যাশ অন ডেলিভারি দেবো বলেছিলাম।ওরা ড্রেস নিয়ে এলে আমি ড্রেস নিয়ে দরজা বন্ধ করে দিই তাই মাকে সারে চার হাজার টাকা দিতে হয়। তার জন্য এই ধার হয়ত।
এইটা মনে হতেই জামাটা যেন সুচের মতো ফুটতে লাগলো।
বাসায় গিয়ে দেখি মা এখনো স্কুলে যায় নি। মোবাইলে কথা বলছে,
– না, না, আমি সব জায়গায় খুঁজেছি। কোথায়ও ও পাচ্ছি না। আমি শিওর আমি ব্যাগেই রেখেছি। মা অন্য পাশ ফিরে মোবাইলে কথা বলছে,
তাই আমি আস্তে করে মায়ের টেবিলে টাকাটা রাখতে গেলাম,
তখন মা বলছে৷
– না না, আমার ছেলে মেয়ে?ওরা হাত দেবে না। এই শিক্ষা আমি দিই নি। আমার মেয়েটা একটু জেদি আর কি। আসলে কিছুই তো দেওয়া হয় না ওদের সামান্য কিছু হাতখরচ দিই। তাই আর কি-
তাই বলে কখনো ব্যাগে হাত দেবে না।
ওদিক থেকে কি বলছে শোনা যাচ্ছে না। মা আবার বলে উঠলো,
– আজ তো ডাল আর ডিম দুটো রান্না করলাম, কাল কি খাবে ওরা ভাবছি, এখনো বেতন হতে আরো দশ দিন বাকি?কীভাবে যে চলবো? কোন দামী মাছ তো দিতে পারি না। দুটো ডাল ভাত ও যদি দিতে না পারি? মেয়েটা তো অন্তত একটা ডিম না পেলে ভাত মুখে তুলে না।
আমি দরজার পাশে দাঁড়িয়ে মায়ের কথা গুলো শুনে কান্না করছিলাম। ভাইয়াকে দেখে তাড়াতাড়ি চোখ মুছতেই। ভাইয়া বলল-
– তুই নিয়েছিস টাকা?
আমি মাথা নেড়ে সায় দিতেই ও আমার গালে একটা থাপ্পড় লাগিয়ে দেয়। বলল-
– আর কখনো এই কাজ করিস না। মা খুব কষ্ট পাবে।
ভাইয়া আমার হাত থেকে টাকা গুলো নিয়ে ভাংগতি টাকা গুলো পকেটে নিয়ে একটা পাঁচশো টাকার নোট দিয়ে সব মিলিয়ে মায়ের ব্যাগের পাশে রাখলো।
মোবাইল রেখে মা পাশ ফিরতেই ভাইয়াকে দেখে বলল-
-পেয়েছিস তুহিন?
ভাইয়া এক গাল হেসে বলে,
– হ্যাঁ, পেয়েছি, কোথায় রাখো আর কোথায় খুঁজে বেড়াও৷
মা একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে, টাকা টা হাতে নিয়ে ভাইয়ার দেওয়া নতুন পাঁচশো টাকাটা দেখে সন্দেহ চোখে বলল,
– কাল তো কোন নতুন টাকা ছিলো না। কোথায় পেলি টাকা তুই?
– এইখানেই তো ছিলো।
মা খানিক্ষন ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলো ভাইয়া মিথ্যা বলছে। আমি দরজার বাইরেই ছিলাম। মা রুম থেকে বের হয়েই আমাকে দেখে, সব টা বুঝতে পারলো এমন করে মাথা নেড়ে বলল-
– তুই এখন চুরিও করছিস?
ভাইয়া মাঝখানে এসে বলল,
– বাদ দাও না মা, ও তো ফেরত এনেছে। খরচ তো করে নি।
মা তাও আমার গায়ে হাত তুলতে এলে ভাইয়া মাঝে এসে ধরে ফেলে।
ভাইয়া বলল,
– আমি বলে দিয়েছি। ও আর করবে না।
তাও মা আমার গালে থাপ্পড় দিলে, আমি চিৎকার করে উঠি,
-বেশ করেছি নিয়েছি। ৫০ টাকা হাত খরচ দাও এতে কি হয়? তাই তো চুরি করেছি। আমার সব বান্ধবী কত খরচ করে। ওদের বাবা আছে তাই৷ আমার বাবা থাকলে নিশ্চয়ই আমাকেও দিতো। তুমি যখন দিতে পারছো না তখন চুরিই তো করতে হবে।
আমার কথা শুনে মা খাটে বসে পড়লো। আমি রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলাম, ভাবতে লাগলাম, থাপ্পড় দেওয়ার একটা শিক্ষা মাকে দিতেই হবে, আমাদের ইচ্ছে অনিচ্ছার কোন দাম নেই কি?
সারাদিন দরজা বন্ধ করে রাখলাম। রাতে মা ভাইয়া ভাত খাওয়ার জন্য ডাকছে। আমি ইচ্ছে করে কয়েক টা সিপিং পিল বিছানায় ফেলে রেখে ঘুমের ভান ধরে পড়ে রইলাম,
মা এক্সটা চাবি দিয়ে লক খুলে ঢুকলো। আমার ঘরে এই অবস্থা দেখে মা কান্না জুড়ে দিলো। ভাইয়া এসে আমাকে ভালো করে খেয়াল করল। আমি যে গভীর ঘুমে না ভাইয়া সেটা বুঝতে পেরে মাকে বলল,
-ওর কিছু হয় নি। তুমি যাও। ও আমাদের ভয় লাগাতে চাইছে শুধু।
মা ভাইয়ার কথায় অবাক হলেও এতক্ষনের কান্না চেহেরাটা শক্ত করে উঠে চলে গেল।
ভাইয়া আমার পাশে বসে বলল-
– উঠ, নাহলে মা মারবে আবার।
আমি উঠে বসতেই ভাইয়া বলল-
– মা কেন বাবাকে ছেড়ে চলে এসেছে জানিস?
– কেন? আমি জানি না। কখনো তো বল নি। এতবার জিজ্ঞেস করেছি।
-মা চলে এসেছে তোকে বাঁচাতে।
আমি ভাইয়ার দিকে অবাক হয়ে তাকালাম।
-হ্যাঁ। আমার বয়স তখন ছয় বছর৷ যখন মা আমাকে জানালো আমার একটা বোন হবে। কিন্তু বাবা চাইতো না কোন মেয়ে হোক। বলল, মেয়ে লাগবে না। ছেলে লাগবে। মেয়েদের সারাজীবন শুধু দিয়ে যেতে হয়।
এই নিয়ে রোজ ঝামেলা হলো। তুই হওয়ার আগে মা বাবার বিশাল সে বাড়ি ফেলে একা আমাকে নিয়ে বের হয়ে আসে। নানার বাড়িতেও অনেক পয়সা ওয়ালা ছিল কিন্তু মা কারো সাহায্য নেয় নি। এত পড়াশোনা করেও প্রাইমারি স্কুলের চাকরি নিলো আমাদের দেখতে।
মা এখনো যা ইনকাম করে তা দিয়ে হয় আমরা খেয়ে আরামে চলতাম কিন্তু মা বড় অংকের একটা টাকা সেইভ করে শুধু ভালো ভাবে যেন তোর বিয়ে টা দিতে পারে। যাতে কেউ বলতে না পারে বাবা নেই তাই ভালো করে বিয়ে দেওয়া হয় নি৷
আর তুই সারাক্ষণ চেষ্টা করিস কীভাবে মা কে কষ্ট দিবি। তাই তোকে আজ জানালাম। না হলে মা আমাকে বলেছিল যেন এই কথা তোকে আমি না বলি।
ভাইয়ার কথা শুনে আমি কান্না শুরু করে দিলাম।
ভাইয়া আমার মাথা হাত দিয়ে বলল,
-তোকে যে ভালোবাসবে তাকে তোর আর্থিক অবস্থা জেনেই ভালোবাসতে হবে। মিথ্যা দিয়ে সর্ম্পক চালানো যায় না। সে ছেলেকে তুই আজ হয়ত ভালো গিফট দিলি কিন্তু পরে সে যখন আবার চাইবে তখন?
-তুই কিভাবে জানলি?
-যে মেয়েটা তোকে বলেছে টাকাটা ফেরত দিতে ওর নাম মায়া। আমরা একজন আরেক জনকে ভালোবাসি আজ চার বছর। সে জানে আমার আর্থিক অবস্থা তাই আমাদের কোন দামী চাওয়া পাওয়া নেই। আজ অবধি ওকে গোলাপ ছাড়া কোন উপহার আমি দিই নি। কিন্তু ও এতেই খুশি কারণ ও আমার আর্থিক অবস্থা জেনেই ভালোবেসেছে। তুইও তো অবস্থা জানাবি।যখন দেখবি সে মেনে নিয়ে ভালোবাসছে তখন তার হাত ধরবি।
আমি মাথা নেড়ে সায় দিয়ে মায়ের কাছে গিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরলাম।মা আমাকে জড়িয়ে ধরে
কান্না শুরু করলো।
সত্যি এখনো অনেক পরিবারে সন্তানরা তাদের মা বাবা অর্থিক ভাবে অবস্থা টা বুঝতে চায় না। অন্যদের মতো চলতে চায়। এতে করে মা বাবাকে বিভিন্ন কষ্ট দিয়ে কথা বলে। তাই বলার আগে একবার ভাবা উচিত।
#অবস্থান
#দোলনা_বড়ুয়া_তৃষা
আমাদের সকল ছোটগল্পের লিংক একসাথে