যে শাড়িটি আমি আমার প্রাক্তন তমাকে গিফট করেছিলাম সেই শাড়িটিই আমার স্ত্রী আয়েশার পড়নে দেখে কিছুটা অবাকই হলাম।
কোনো প্রশ্ন না করেই ভাবতে লাগলাম এই শাড়ি আয়েশা পেলো কোথায়!
আয়েশাকে কিছু বুঝতে না দিয়েই জিজ্ঞাসা করলাম,
– এই রঙ এর শাড়িতে তোমাকে একদমই ভালো লাগছে না, তুমি বরং অন্যটা পরে ফেলো।
আয়েশা কিছুটা অবাক হয়েই বলে তুমি নিজে পাঠিয়ে আবার নিজেই বলছো যে ভালো লাগছে না। তাহলে নীল রঙ কিনলে কেনো জানোই তো নীল রঙ আমাকে মানায় না। আর এক সাথে এতোগুলো শাড়ি কেনো কিনতে গেলে যাই হোক তোমার সারপ্রাইজ আমার ভীষণ ভালো লেগেছে, ভেবেছিলাম তুমি রোবট টাইপের কিন্তু তুমি যে এতো রোমান্টিক ভাবতেই পারিনি। আংটি টাও আমার খুবই পছন্দ হয়েছে আর তুমি আমার আংটি চুড়ির মাপ এতো নিখুঁত জানো, আমি নিজেই তো নিজেরটা ঠিকঠাক কিনতে পারিনা।
হেসে হেসে কথা গুলো বলেই চলছিলো আয়েশা।
আমার আর বুঝতে বাকি রইলো না এসবই তমা আমাকে ফেরত পাঠিয়েছে।
আয়েশা রুম থেকে চলে যাবার পর আমি আলমারি খুলে শাড়ি গুলো দেখছি, শাড়িগুলোর ভাজই খুলে নি, একদম নতুন।
ড্রেসিং টেবিলের উপর রাখা চুড়ি গুলো ধরতেই বুকের মধ্যে কেমন যেনো অস্থির লাগছিলো।
ছাদে চলে গেলাম কারণ চোখের কোণের অশ্রু গুলো কোনোভাবেই লুকাতে পারছিলাম না।
তমা আমার প্রেমিকা ছিলো, তাকে প্রাক্তন বলতেও আমার কলিজা কেপে উঠে।
৮ বছর প্রেমের সম্পর্ক ছিলো আমাদের।
আমি পড়াশুনা করে বেকার ঘুরছিলাম, কোনোভাবেই চাকরী যোগাড় করতে পারছিলাম না।
বাবা মা বাসা থেকে কোনো খরচ দিতেন না। নিজের পড়াশুনা থাকা খাওয়ার খরচ টিউশনি করে কোনো রকম চালাতাম।
তমা আমাকে মানসিকভাবে সব সময় সাহস দিতো। মিথ্যে বলবো না তার কাছ থেকে আমি সব সময়ই আর্থিক সাহায্য নিয়েছি।
আমার হাত খরচ চলতো তার দেয়া টাকায়।
সে টিউশনি করে যা পেতো সব আমাকে সাপোর্ট দেয়ার জন্যই দিয়ে দিতো।
৮ বছরে ফুল আর চকলেট ছাড়া আমি তাকে কিছুই দিতে পারিনি। ইচ্ছে থাকলেও আমি তাকে ভালো জায়গায় ঘুরতে নিয়ে যেতে পারিনি। ভালো রেস্টুরেন্টে খাওয়ানো, দামী উপহার কিছুই দিতে পারিনি।
নিজের মধ্যে সব সময় অপ’রাধ’বোধ কাজ করতো।
ভাবতাম একটা জব হলে ওকে বিয়ে করে রাণীর মতো করে রাখবো ওর কোনো ইচ্ছাই অপূর্ণ রাখবো না।
অন্য বন্ধুদের প্রেমিকাদের মতো তমার কোনো চাহিদা ছিলো না সে সামান্য টং দোকানের চা তেও খুশি থাকতো।
হয়তো এই জন্যই তাকে আমি অনেক বেশি ভালোবাসতাম।
হয়তো আজও বাসি।
জানি বলা পা’প হচ্ছে। কিন্তু মি’থ্যা বলাও তো পা’প।
আমি তাকে ভুলতে পারিনি, এক মিনিটের জন্য ও না।
আমার জব নেই, ভবিষ্যৎ নেই ভেবে তার বাবা আমাকে বার বার প্রত্যা’খ্যান করেছেন।
হয়তো আমি কখনো বাবা হলে সেম কাজটাই করবো কারণ কোনো বাবাই চান না তার মেয়েকে কোনো বেকার ছেলের হাতে তুলে দিতে!
তমার তুলনার আমার পারিবারিক স্বচ্ছলতাও ভালো ছিল না।
পরিবারের বড় সন্তান হওয়ায় কোনো সিদ্ধান্ত ও নিতে পারিনি।
সাহস করে বলতে পারিনি তুমি চলে আসো।
আমার চাকরী টা হয়েছে তার বিয়ের ঠিক ১ মাস আগে।
ভাগ্যটাই এমন যে আমি যা আশা করেছিলাম তার চেয়ে অনেক বেশিই সেলারির চাকরীটা আমার হয়েছিলো।
শেষ দেখার দিন তার জন্য অনেক উপহার নিয়ে গিয়েছিলাম।
জীবনের প্রথম উপার্জনের টাকা দিয়ে তার জন্য নাকফুল আংটি কটা শাড়ি আর চুড়ি নিয়ে গিয়েছিলাম।
কোনো কথা বলছিলো না সে আমি নিজ হাতে তাকে চুড়িগুলো আর আংটি টা পড়িয়ে দিয়েছিলাম।
অনুরোধ করেছিলাম যদি এক চিমটিও ভালোবাসো আমার জীবনের প্রথম এবং শেষ উপহারটুকু স্মৃতি হিসেবে রাখো। দয়া করো আমাকে, সে অপলক দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে ছিলো।
বলেছিলাম যদি চাও আমি শেষ মিনিট অবধি অপেক্ষা করবো চলে এসো।
আমি জানি সে আসবে না।
যখন বারবার আসতো আমি উ’পেক্ষা করতাম।
জব হলেই বিয়ে করবো এই আশায়!
এখন আর সে তার পরিবারকে ল’জ্জিত করে বিয়ে ভে’ঙে আমার কাছে আসবে না।
আমি তবুও অপেক্ষা করেছি।
কিন্তু সে আসেনি।
আমার খা’রা’প সময়ে আমি তাকে পাশে পেয়েছি।
কিন্তু আমার সুখের দিনে সে আমার পাশে নেই।
আজ দেশ বিদেশে ঘুরে বেড়াই কিন্তু আমি তখন আমার ভালোবাসার মানুষটিকে ভালো একটি উপহার ও দিতে পারিনি।
শেষ যে উপহার গুলো দিয়েছিলাম সেগুলোও আমার বিয়ের খবর পেয়েই হয়তো পাঠিয়ে দিয়েছে।
তার চাহিদা ছিলাম আমি, আমার ভালোবাসা অন্য কিছুতে না।
আজ তাকে বড্ড বলতে ইচ্ছে করছে আমি তাকে ফিরিয়ে দিয়ে জীবনে হয়তো সবচেয়ে বড় ভু’লটিই করেছিলাম।
তাহলে দিনশেষে আমার মধ্যে শূন্যতা গ্রা’স করতো না।
(এক ভাইয়ার জীবনের কিছু অংশ)
© নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক