কিছু জোড়া শালিকের গল্প পর্ব ১০
: #ককটেইল
লেখিকা: #Lucky_Nova
ভ্যাবাচেকা খেয়ে তাকালো ত্রয়ী। থাপ্পড় মারার কথা নিজেই বলছে এই লোক! অদ্ভুত!
“কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আপনি?” কটাক্ষ করে বলল ত্রয়ী।
“যেখানে তুমি আর আমি ছাড়া কেউ থাকবে না।” মুচকি হেসে বলল নীল।
চোখ ছানাবড়া করে ফেললো ত্রয়ী।
“আমি কোথাও যাবো না। আমি বাসায় যাবো।”
“ভয় পাচ্ছ আবার।”
“ম..মোটেও না। ভয় কেনো পাবো!”
“সিওর?”
নীলের কথার ধরণে একটু হোঁচট খেলো ত্রয়ী।
নীল আড়চোখে দেখে মুচকি হাসলো।
ত্রয়ীর বাসার সামনে গাড়ি থামালো নীল। ত্রয়ীর সাথে নামলো গাড়ি থেকে। ঘুরে এসে ত্রয়ীর সামনে দাঁড়িয়ে চোখে চোখ রাখতেই চোখ নামালো ত্রয়ী। নীল বিনাবাক্যে ওর হাতটা ধরতেই চমকালো। নীল সিরিয়াস চোখের চাহনিতে চেয়ে বলল, “আমি ওই জানোয়ারকে ছেড়ে দেবো না।”
অবাক হয়ে তাকালো ত্রয়ী।নীল আরেকটু কাছে এগিয়ে এসে বলল,”ওর জন্য কাঁদবা না। মনে থাকবে?”
ত্রয়ী চোখ পিটপিটিয়ে চোখ নামালো।
“বলো, মনে থাকবে?”
ত্রয়ী চুপচাপ মাথা নাড়লো বাধ্য মেয়ের মতো।
ঠোঁট প্রসারিত করে হাসলো নীল। মৃদুস্বরে বলল, “Obedient bride!”
হঠাৎ এমন একটা কথায় অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো ত্রয়ী।
“কী করছো তুমি এত সময়?” প্রয়াস বাথরুমে নক করলো। তিয়াসার কোনো সাড়া নেই। সেই কখন ঢুকেছে এখনো বের হয় নি।
“বের হও। কই?” আবার নক করলো প্রয়াস।
কয়েক সেকেন্ড সময় নিয়ে দরজা খুললো তিয়াসা। সেদিনের মতো শুধু চোখটা দিয়ে উঁকি দিলো বাহিরে।
প্রয়াস কপাল কুচকে বলল, “কী? বাথরুমে ঘুমানোর প্লান তোমার?”
তিয়াসা ঠোঁট উলটে নাসূচক মাথা নাড়লো।
“তো! বের হও।”
তিয়াসা চোখ নামিয়ে ইতস্তত করতে লাগলো। ও জানে বের হলেই নির্ঘাত বকা খাবে।
প্রয়াস তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, “শুনতে পাচ্ছো না?”
তিয়াসা উপয়ান্তর না দেখে অবশেষে জড়সড় হয়ে বের হলো। দাঁড়ালো বাথরুমের পাশের দেয়াল ঘেঁষে।
ওকে দেখামাত্রই প্রয়াসের চোখ চড়কগাছে উঠে গেলো। শাড়ি খুলে ওড়নার মতো জড়িয়ে বের হয়েছে সে।
প্রয়াস আগাগোড়া দেখে নিয়ে কড়া গলায় বলল, “শাড়ি খুলেছো কেনো? পাগল তুমি?”
তিয়াসা হাসার চেষ্টা করলো একটু। পরিস্থিতি ঠান্ডা করার প্রচেষ্টা মাত্র। কারণ সে জানে তার দ্বারা অকাজ হয়েছে একটা।
“এখন এত রাতে আমি রেখাকে কোথায় পাবো?” চোখ পাকিয়ে বলল প্রয়াস।
তিয়াসার মুখটা চুপসে গেলো। দোষী মুখোভঙ্গিতে মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকালো সে।
ভারি বিপদে পড়ে গেলো প্রয়াস৷ এই মেয়ে এত ঝামেলা বাধায় কেনো? অফিসের কাজ সেড়ে এসে, বাসাতেও শান্তি নেই!
উপায়ন্তর না পেয়ে নিজের কাবার্ড থেকে একটা শার্ট নিয়ে ধরিয়ে দিলো প্রয়াস।
দাঁতেদাঁত চিপে বলল, “এটা পরে বের হও। যাও।”
তিয়াসা ভ্রুকুটি করে তাকালো শার্টের দিকে।
“এটাই পরতে হবে।” তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল প্রয়াস।
তিয়াসা নিলো শার্টটা। বাথরুমে ঢুকে শার্টটা গায়ে জড়িয়ে বেরিয়ে এলো বাহিরে। আর ওকে দেখামাত্রই বেশ থমকালো প্রয়াস।
চওড়া কাধ আর প্রশস্ত গলা বিশিষ্ট ধূসর রঙের শার্টটা অতিরিক্ত ঢিলেঢালা হয়েছে তিয়াসার গায়ে। কাধ-গলার এপাশ ওপাশ থেকে হেলে পড়ছে বার বার। তিয়াসাও ঠিক করছে। কিন্তু লাভ হচ্ছে না। গলা থেকে কাধের অংশ উন্মুক্ত করে দিয়ে বার বার গড়িয়ে পড়ছে।
সবচেয়ে নিষিদ্ধ অংশে চোখ পড়তেই প্রয়াস অগোছালোভাবে চোখ সরিয়ে নিলো তিয়াসার দিক থেকে। অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো বেশ।
বেহায়া মনকে সায় দিতেও আর তাকালো না তিয়াসার দিকে। এদিক ওদিক তাকিয়ে জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে চট করে বিছানায় শুয়ে পড়লো উলটো পাশ ফিরে। এমন কঠিন পরিস্থিতিতে তাকে এ জীবনে কখনই পড়তে হয় নি। এই মেয়েকে সাহায্য করে যে এমন বিপদে পড়তে হবে তা এজীবনে কল্পনাও করে নি প্রয়াস।
তিয়াসা গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে গিয়ে শুয়ে পড়লো প্রয়াসের পাশে।
কপালে ভাঁজ পড়ে গেলো প্রয়াসের। মেয়েটা এত নির্দ্বিধায় বিশ্বাস করে কেনো ওকে? এত অবুঝ!
দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে নড়েচড়ে চোখ বন্ধ করলো প্রয়াস। কিন্তু বন্ধ চোখের সামনে কিছুক্ষণ আগের দৃশ্য ভাসতেই চোখ খুলে ফেললো। হাঁসফাঁস লাগছে খুব। গরমে শরীর ঘামছে।
জোর করে ঘুমানোর চেষ্টা করেও লাভ হলো না। যতবার চোখ বন্ধ করছে ততবারই সব এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।
প্রয়াস মুখ দিয়ে বড়ো করে কয়েকবার শ্বাস নিতে নিতে জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিলো।
উঠে বসে তিয়াসার দিকে না তাকিয়েই অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে বলল, “চুপচাপ ঘুমাও এখানে। আমি ওই রুমে যাচ্ছি। ভুলেও আসবা না।”
কথাটা বলে বিন্দুমাত্র দেরি না করে বেরিয়ে গেলো প্রয়াস।
ভ্রু কুচকে গেলো তিয়াসার। সেও বিছানা ছেড়ে উঠে চলে গেলো পাশের রুমে। কিন্তু ভিতরে ঢুকতে পারলো না। কারণ প্রয়াস ভিতর থেকে দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। তিয়াসা যে আসবে সেটা হয়তো ওর জানাই ছিলো।(লেখিকা লাকি নোভা)
তিয়াসা কপাল কুচকে দরজা ধাক্কাতেই প্রয়াস ওপাশ থেকে বলল, “ওই রুমে যাও।”
তিয়াসা শুনলো না। সে এখানেই ঘুমাবে। তিয়াসা আরো কয়েকবার দরজা ধাক্কাতেই প্রয়াস আঁটসাঁট স্বরে ধমকে উঠলো, “আর একবার দরজা ধাক্কালে, কালই তোমাকে হোস্টেলে পাঠাবো।”
মুখটা ম্লান হয়ে গেলো তিয়াসার। আঁধার নেমে এলো যেন। অশ্রুতে টইটুম্বুর হয়ে গেলো চোখদুটো। চুপচাপ ভিজে চোখে মাথা নুয়ে দাঁড়িয়ে রইলো দরজার কাছে। আর দরজা ধাক্কালো না। শব্দও করলো না।
এমনকি সারা রাত ওভাবেই ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো। পা ভেঙে আসলেও বসলো না।
প্রয়াস অনেক অবাক হয়ে গেলো সকালে ওকে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে। বিস্ময়ে হা হয়ে গেলো মুখটা।
“তোমার মাথা খারাপ? এখনো এখানে দাঁড়িয়ে আছো?”
তিয়াসা চোখ তুলে তাকালো না। গোমড়া মুখে মাথা নুয়ে আঙুল খুটতে লাগলো। প্রয়াসের উপরে খুব অভিমান হয়েছে ওর। একবারের জন্যও সে কাল রাতে দরজাটা খোলে নি। দেখতেও আসে নি। এত নিষ্ঠুর! আবার হোস্টেলেও দিয়ে দিতে চেয়েছে!
তিয়াসার দিকে কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো প্রয়াস। মেয়েটা সত্যিই ভারি অদ্ভুত। একে আজই ডাক্তারের কাছে নিতে হবে। পাগলামির চিকিৎসা শীঘ্রই করা উচিত।
এই নিয়ে ছয়বার ফাইলগুলো রেডি করেছে ক্যান্ডেল। এর আগে পাঁচবারই বাতিল করেছে ইভান। লোকটা যে প্রতিশোধ নিচ্ছে এটা বুঝতে বাকি নেই আর। সহ্যশক্তির সীমা অতিক্রম হয়ে গেছে ওর। মনে মনে ঠিক করে নিয়েছে যে এবার বাতিল করলে মুখ বুজে সহ্য করবে না। উচিত কথা শুনিয়েই ছাড়বে। দরকার হলে চাকরিও ছাড়বে। (লেখিকা লাকি নোভা)
ক্যান্ডেল নক করে ঢুকলো ভিতরে।
ইভান ল্যাপটপের স্ক্রিন থেকে চোখ তুলে তাকালো একবার। মাথা নেড়ে সম্মতি দিয়ে বসতে ইশারা করলো ক্যান্ডেলকে।
ক্যান্ডেল বসলো। থমথমে মুখে এগিয়ে দিলো ফাইলগুলো।
তারপর অপেক্ষা করতে লাগলো ফাইলগুলোর বাতিল হওয়ার। কারণ লোকটার পরিকল্পনাই হলো ওকে হয়রানিতে রাখা। সাথে অসভ্যতা তো আছেই। সেদিনের গাড়ির ঘটনা জীবনেও ভুলতে পারবে না ও। চিন্তা করলেই তো গা কেমন শিউরে ওঠে।
ইভান মুখ দিয়ে বিরক্তসূচক শব্দ বের করতেই ভ্রু কুচকালো ক্যান্ডেল। তাকালো তিরিক্ষি নজরে।
“হয়নি। কি করেছো এসব? বার বার একই ভুল!” বিরক্তিমাখা কণ্ঠে বলল ইভান।
চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো ক্যান্ডেলের। হাত মুষ্টিবদ্ধ করে রাগী স্বরে কটাক্ষ করে বলল, “হয়নি নাকি আমাকে হ্যারাস করার জন্য উপায় এসব?”
সরু চোখে তাকালো ইভান।
ক্যান্ডেল কড়া চোখে তাকিয়ে আরো বলল, “আমার উপর রিভেঞ্জ নিতেই এই ধরণের চিপ কাজ? এমন হলে আমি নিজেই তোমার সাথে কোনোরকমের কাজ করতে চাই না।”
ইভান শুনলো ওর কথা। তারপর হাসলো তাচ্ছিল্যের সাথে। যা দেখে আরো ক্ষেপলো ক্যান্ডেল।
“তোমার এমনটা মনে হয়?” তাচ্ছিল্যের হাসিটা ধরে রেখে বলল ইভান।
ক্যান্ডেল রুক্ষ দৃষ্টিতে তাকালো।
ইভান ফাইল খুলে ক্যান্ডেলের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, “এই প্রজেক্ট বাঙালি ট্রেডিশনের উপর ভিত্তি করে। যার বিন্দুমাত্র চিহ্নও তোমার কাজে আমি পেলাম না। ছয়বারের একবারো না। অবশ্য এতে তোমার দোষ নেই। আরকি আমিই বুঝিনি যে তোমার বাঙালিয়ানার সম্পর্কে জ্ঞান বা ধারণা কোনোটাই নেই। জানলে আমি নিজেই রিজেক্ট করে দিতাম। অন্য কাউকে নিতে বলতাম।”
ক্যান্ডেল অবাক চোখ তাকালো।
“আমি ভেবেছিলাম প্রথমবারের পর আর ভুল হবে না। বাট তুমি যে রিভেঞ্জ টাইপ কিছু ভেবে কাজে ফোকাস করছো না, সেটা বুঝতে পারিনি। বুঝতে পারলে আমিই হেল্প করার জন্য কাউকে বলে দিতাম। যাদের বাঙালি ট্রেডিশন বা কালচার সমন্ধে ধারণা আছে।”
পরোক্ষ অপমানে মুখটা বর্ণহীন হয়ে গেলো ক্যান্ডেলের। লজ্জাবোধও হলো বেশ।
ইভান দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে ল্যাপটপের স্ক্রিনের দিকে ফিরলো। কীবোর্ডে কিছু টাইপ করে গুগল ঘেটে কিছু বের করে ল্যাপটপটা ক্যান্ডেলের দিকে ঘুরিয়ে দিয়ে বলল, “এগুলো দেখো। আশা করি বাঙালিয়ানা সম্পর্কে ধারণা আসবে।”
ক্যান্ডেল চুপসানো মুখে তাকালো। ইভান এগিয়ে দিলো ল্যাপটপটা।
ক্যান্ডেল দেখলো। আর নিজের গাফিলতি ভালোভাবেই বুঝলো। নিজের এত বড়ো বোকামি কল্পনাও করতে পারেনি ও।
সব ভুল শুধরে ক্যান্ডেল এবার কাজটা করে উঠতে পারলো। একবার চেষ্টাতেই পারলো। কারণ ইভান এবার আর বাতিল করলো না। এটা হয়েছে বলে ফাইনাল করে দিলো।
খুব বড়ো একটা ঝামেলা ঘাড় থেকে নেমে গেলো যেন।
আর এই খুশিতে ক্যান্ডেলের কোম্পানির মালিক ডিনার অফার করলেন শুধু প্রজেক্টের কর্মচারীদের জন্য।
সবাই ডিনারের জন্য কাছেপিঠের একটা ফাইভ স্টার হোটেলে এলো। যদিও ডিনারে আসার বিন্দুমাত্র ইচ্ছেও ক্যান্ডেলের ছিলো না, তাও ভদ্রতার খাতিরে আসতেই হলো।
একটা বড়ো টেবিলে বসলো সবাই। খাবার অর্ডার করে শুরু হলো কথাবার্তা।
আদনান জুবায়ের খুব হাস্যরসিক মানুষ হওয়ার সবাই বেশ খোসগল্প শুরু করলো। হাসাহাসি, হৈ হট্টগোলে মেতে উঠেলো প্রায় সবাই।
ডিনার শেষ হলো এক পর্যায়ে। সবাই প্রস্তুতি নিতে লাগলো বাসায় ফেরার।
ক্যান্ডেল কিছু একটা বলে আগে আগেই বেরিয়ে এলো। আর বের হতে গিয়েই চোখ আটকালো হাতের ডানে। তার প্রাক্তন পিয়াসের দিকে।
চোখাচোখি হলো দুজনেরই। স্থির, শীতল চাহনিতে চেয়ে রইলো ক্যান্ডেল। বুকের মধ্যভাগে তোলপাড় শুরু হলো মনে হয়।
পিয়াস গোপন নিঃশ্বাস ফেলে চোখ সরালো। ক্যান্ডেলকে এড়িয়ে যেতে চলে যেতে লাগলো অন্যদিকে।(লেখিকা লাকি নোভা)
হতভম্ব হয়ে গেলো ক্যান্ডেল। কপালে ভাঁজ পড়লো অবিশ্বাসের। সত্যিই মানুষ রাতারাতি রঙ বদলায়। পিয়াসই সেই প্রমাণ। সেদিনের পর থেকে আর যোগাযোগই রাখে নি পিয়াস।
কিন্তু জবাবদিহিতা তো করতেই হবে। এভাবে এড়িয়ে যেতে দেবে না ক্যান্ডেল।
ক্যান্ডেল দ্রুতপদে এগিয়ে গিয়ে পথ আটকে দাঁড়িয়ে গেলো পিয়াসের। ফলে দাঁড়িয়ে পড়তে হলো পিয়াসকে। নির্বিকার ভঙ্গিতে তাকালো ক্যান্ডেলের দিকে।
“পালাচ্ছো?” তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল ক্যান্ডেল।
পিয়াস দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললো। হালকা বিরক্তি ভরা চাহনিতে চেয়ে বলল,”দেখো ক্যান্ডেল, আমি তোমার সাথে কোনো কথা বলতে চাচ্ছি না। তুমিও কথা বাড়িও না।” বলেই পাশ কাটিয়ে চলে গেলো পিয়াস।
পুনরায় এড়িয়ে যাওয়ায় দাঁত কিড়মিড় করলো ক্যান্ডেল। রাগে গা জ্বলে গেলো যেন।
আবার এগিয়ে গেলো ও। পিছন থেকে পিয়াসের কলার ধরে টেনে ঘুরালো নিজের দিকে। অবাক হয়ে তাকালো পিয়াস।
আশেপাশের দুই একজন লোকও তাকালো।
ক্যান্ডেল রাগচটা ভঙ্গিতে বলল, “এড়িয়ে কেনো যাচ্ছো আমাকে? নাকি সত্যিই নিরার সাথে রিলেশনে জড়িয়েছো?”
পিয়াস শান্তভাবে তাকিয়ে ক্যান্ডেলের হাত থেকে নিজের কলারটা ছাড়িয়ে নিলো। স্বাভাবিক ভাবেই উত্তর দিলো, “হ্যাঁ। একই প্রশ্ন কতবার করবা আর?
হতবাক হয়ে গেলো ক্যান্ডেল।
“হ্যাঁ? মানে তুমি এতটা নিচে কী করে নামতে পারলে?লজ্জা করে নি আমার সাথে রিলেশনে থাকাকালীন অন্যমেয়ের সাথে মেলামেশা করতে?”
পিয়াস অবজ্ঞাসূচক ভাবের সাথে বলল, “না করেনি। এখনো যে কেনো আমার পিছনেই পড়ে আছো বুঝিনা!”
হতভম্ব হয়ে তাকালো ক্যান্ডেল।
“তুমি আমার টাইপের না। বুঝেছো? এজন্যই, যে আমার টাইপের তার সাথেই জড়িয়েছি। এখন শুধু শুধু আমাকে বিরক্ত করো না তো! অসহ্য লাগে আমার। যত্তসব।” কথাটা বলেই চলে গেলো পিয়াস।
থম মেরে দাঁড়িয়ে রইলো ক্যান্ডেল। শেষ কথাগুলো বুকের মধ্যেও আঘাত হানলো যেন। মাথাটা শূণ্য হয়ে গেলো একদম।
রিলেশনের তিন বছরে এসে পিয়াস বলছে সে ওর টাইপের না। টাইপের না হলে তিন বছর কীভাবে সম্পর্কে ছিলো? তখন এটা মনে হয়নি? তখন অসহ্য লাগেনি? বিরক্ত লাগেনি?
অনুভূতিহীন হয়ে পড়তেই এক হাতে দেয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়ালো ক্যান্ডেল।
চোখ ঝাপসা হয়ে এলো। কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই গালে গড়িয়ে পড়লো অশ্রু।
আশেপাশের কয়েকজন আড়চোখে দেখতে লাগলো ওকে।
ক্যান্ডেল না তাকিয়েও বুঝলো। ব্যাপারটা যে সত্যিই কতটা লজ্জাজনক আর অপমানের তাও বুঝলো। হয়তো অদৃশ্য হওয়ার ক্ষমতা থাকলে এই মূহুর্তে ও অদৃশ্যই হয়ে যেত। এতটা অসহায় আগে কখনই লাগে নি ওর।
ক্যান্ডেল হতাশ হয়ে মাথা নোড়ালো। আরো একফোঁটা জল গড়িয়ে যেতেই ওর মাথাটা কেউ কোট দিয়ে ঢেকে দিলো।
অবাক হয়ে গেলো ক্যান্ডেল। বারকয়েক চোখ পিটপিটিয়ে মুখ তুলতেই বেকুব বনে গেলো।
ইভান পকেটে হাত গুজে ভাবলেশহীন নির্লিপ্ত কণ্ঠে বলল, “You look pathetic.”
ইভানের কথায় ভ্রু কুচকে গেলো ক্যান্ডেলের।
শেষ পর্যন্ত কিনা এই কাপুরুষটার সামনেই পড়তে হলো! সব নিশ্চয় দেখেছে। এজন্যই অপমান করতে এসেছে।
ভেবেই রাগ হলো ক্যান্ডেলের। ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলে গমগমে গলায় বলল, “মজা করতে হলে অন্যকারো সাথে করো। আমি মোটেও মুডে নেই।”
“You should know how to ignore.”
“মানে?” কপাল কুচকে বলল ক্যান্ডেল।
“নিজেকে হাসির পাত্র না বানিয়ে বাসায় যাও।”
বাঁকা চোখে তাকালো ক্যান্ডেল। এই লোক ওকে বাসায় যেতে বলার কে?
“আমার ইচ্ছা হলে যাবো। তোমার কী?”
এমন বাঁকা কথায় ভ্রু কুচকালো ইভান।
“কাল মিটিং আছে। টাইমলি প্রেজেন্ট থাকতে হবে।”
“আমি সবসময় টাইমলিই থাকি।” আগ্রাসী উত্তর দিয়ে ক্যান্ডেল কোটটা মাথা থেকে তুলে ধরিয়ে দিলো ইভানের হাতে। তারপর গটগট করে হেঁটে ঢুকে গেলো সামনের ক্লাবটাতে।
ওর দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো ইভান। এগিয়ে গিয়ে ঢুকতেই অবাক হয়ে গেলো।
ক্যান্ডেল ককটেইলের বোতল থেকে পানীয় গ্লাসে ঢালতে ঢালতে একবার তাকালো ইভানের দিকে। তারপর চোখ ঘুরিয়ে চুমুক বসালো গ্লাসে।
ভ্রু দ্বয়ে ভাঁজ ফেলে তাকিয়ে রইলো ইভান। মেয়েটার কমন সেন্স এতটা কম কী করে হয়! এত রাতে একা ড্রিংক করছে!
দেখতে দেখতেই পুরো বোতল শেষ করলো ক্যান্ডেল। আরেকটা অর্ডার দিলেও ওয়েটার দিতে চাইলো না।
কিন্তু ক্যান্ডেল নেশা হয়ে যাওয়ার দরুন ঝামেলা শুরু করে দিলো মেয়েটার সাথে।
এক পর্যায়ে বাধ্য হয়ে দিতেই হলো তাকে।
ইভান ফোনে কথা বলতে বলতে খেয়াল করলো সবই। কথা শেষে এসে দাঁড়ালো ওর পাশে। আসক্তিহীন মুখভঙ্গিতে বলল, “মাথা ঠিক আছে তোমার?”
ক্যান্ডেল চোখ মুখ কুচকে ফেললো। চোখ তুলে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো ইভানের দিকে।
বিরক্তিমাখা জড়ানো কণ্ঠে বলল, “হ্যাঁ, আমার মাথা ঠিকই আছে। সমস্যা তোমার মাথায়।”
কপালে গাঢ় ভাঁজ পড়লো ইভানের।
মেয়েটা আরেকটা বোতল সামনে এনে রাখতেই ইভান বলল, “এটা নিয়ে যান। আর লাগবে না।”
“লাগবে।” সাথে সাথে তীব্র কণ্ঠে বলে উঠলো ক্যান্ডেল।
মেয়েটা হাত বাড়িয়েও গুটিয়ে নিলো।
ইভান চোখের ইশারায় নিতে বলতেই সে আবার হাত বাড়ালো।(লেখিকা লাকি নোভা)
ক্যান্ডেল সাথে সাথে বোতল ধরে নিয়ে বলল, “বলেছি না, না!”
কড়া চোখে তাকালো ইভান। ক্যান্ডেলকে বলল, “ফেরত দেও।”
“দেবো না।”
“অসুস্থ মস্তিষ্কের মানুষদের মতো কাজ করছো তুমি।”
মুখটা কুচকে ফেললো ক্যান্ডেল। ক্রুর চোখে তাকিয়ে বলল, “কী! আমি অসুস্থ?”
“হ্যাঁ। আপনি নিয়ে যান এটা।” কর্মরত মেয়েটাকে পুনরায় বলল ইভান।
তবে সে নিতে আসতেই ক্যান্ডেল “না” বলে চেঁচিয়ে উঠলো।
মেয়েটা চুপচাপ দাঁড়িয়ে চেয়ে রইলো হ্যাবলার মতো। কী করবে বুঝে উঠতে পারলো না।
ক্যান্ডেল বোতলে চুমুক বসাতেই তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো ইভান।
ক্যান্ডেল ওটাও শেষ করলো।
ক্যান্ডেল খালি বোতল নেড়েচেড়ে দেখে শব্দ করে রাখলো টেবিলে। চোখ বন্ধ করে গা এলিয়ে দিলো চেয়ারে।
মেয়েটা নামানো গলায় ইভানকে বলল, “স্যার, ওনাকে বাসায় নিয়ে যান। আমরা একটু পরেই বন্ধ করবো।”
বিরক্তিতে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললো ইভান।
মেয়েটা খালি বোতল আর গ্লাসগুলো তুলে নিতে নিতেই ক্যান্ডেল আলতো করে চোখ খুলে তাকালো। টেবিলের দিকে ঝুঁকে এসে শব্দ করে হাত রাখলো টেবিলে।
সচকিত হয়ে তাকালো মেয়েটা। ইভানও তাকালো।
ক্যান্ডেল বাহাতের তর্জনী ইভানের দিকে তাক করে জড়ানো কণ্ঠে বলল, “এই ছেলেটা একটা অসভ্য। আমাকে.. আমাকে বলে কিনা থার্টি ফোর!”
অবাক হয়ে তাকালো ইভান।
মেয়েটা বুঝতে না পেরে তাকালো ইভানের দিকে।
ক্যান্ডেল ইভানের দিকে ক্রুদ্ধ নজরে তাকিয়ে কড়া গলায় বলে উঠলো, “আমার থার্টি ফোর হোক আর ফোর্টিফোর, তোমার কী? আবার বলে থার্টি সিক্স টুয়ে…।”
ইভান সেকেন্ডের মধ্যে এগিয়ে এসে মুখ চেপে ধরলো ক্যান্ডেলের।
দাঁতেদাঁত চিপে বলল, “Shut up.”
ক্যান্ডেল মুখ দিয়ে শব্দ করার চেষ্টা করে হাত সরাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। হাত পা ছোড়াছুড়িও করতে শুরু করলো।(লেখিকা লাকি নোভা)
ইভান মুখ চেপে রেখেই মেয়েটাকে বলল, “আপনি যান।”
মেয়েটা মাথা নেড়ে দ্রুত স্থান ত্যাগ করলো।
ইভান ক্যান্ডেলের দিকে রাগত চোখে তাকিয়ে বলল, “কমন সেন্স সত্যিই কম তোমার। চুপচাপ বসো। একদম শব্দ করবা না।”
ক্যান্ডেল শুনলো না। মুখ ছেড়ে দিতেই পুনরায় চেঁচামেচি শুরু করে দিলো। আশেপাশের মানুষ তাকাতে লাগলো ঘুরে ঘুরে।
প্রচন্ড অস্বস্তিতে পড়ে গেলো ইভান। ক্যান্ডেলের যে প্রচুর নেশা হয়ে গেছে সেটা বুঝতে আর বাকি রইলো না। সেদিনের মতো আজও এই মেয়ে মান সম্মান ডুবিয়েই ছাড়বে।
ইভান ক্যান্ডেলের হাতের বাহু চেপে ধরে টেনে দাঁড় করালো ওকে।
ক্যান্ডেল ব্যথাতুর শব্দ করে চোখটা পুরোদমে কুচকে তাকালো ইভানের দিকে।
“বাসা কোথায় তোমার? বাসায় চলো চুপচাপ।”
ক্যান্ডেল হাত ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে গমগমে গলায় বলল, “যাবো না। এখানে থাকবো। উফ!ছাড়ো!”
হাত মোড়ামুড়ি করতেই ছেড়ে দিলো ইভান। ক্যান্ডেল ব্যালেন্স রাখতে না পেরে পড়ে গেলো ফ্লোরে। কোমড়ে ব্যথা পেয়ে কুকিয়ে উঠলো।
ইভানের দিকে মারমুখো ভঙ্গিতে তাকিয়ে বলল, “উফ, আমার কোমড়! অসহ্য লোক!”
ইভান তাকালো নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে। মানিব্যাগ থেকে টাকা বের করে টেবিলে রাখতে রাখতে ক্যান্ডেলকে বলল, “বাসা কোথায়?”
“যাব না। এদের সবাইকে তোমার আসল চেহারার কথা বলেই ছাড়বো। গাড়িতে কী করেছো ওটাও বলবো। সব বলবো।” কথাটা বলেই আবার হুলুস্থুল শুরু করলো ক্যান্ডেল।
মেজাজটা বিগড়ে গেলেও মাথা ঠান্ডা করলো ইভান। ওর চেঁচামেচির মাঝেই পুনরায় ওকে টেনে দাঁড় করিয়ে ক্লাবের বাইরে নিয়ে এলো জোর করে।
ক্যান্ডেল হাত মোড়ামুড়ি শুরু করতেই সরাসরি কাধে তুলে নিলো ওকে।
“আমি যাবো না বলেছি না? নামাও আমাকে।” পিঠে আঘাত করতে করতে বলল ক্যান্ডেল।
ইভান একদম বাহিরে নিয়ে এসে নিজের গাড়ির সামনে নামালো ওকে। ক্যান্ডেল গাড়ি ধরে দাঁড়ালো কোনমতে। মাথা ঘুরছে প্রচন্ড।
“টাইম ওয়েস্ট করাচ্ছো তুমি। বাসা কোথায় সেটা বলো?” কপাল কুচকে বলল ইভান।
ক্যান্ডেল উত্তর দিলো না। চোখ পিটপিটিয়ে তাকানোর চেষ্টা করলো ইভানের দিকে।
“কী জিজ্ঞেস করছি?” ভ্রুকুটি করে প্রশ্ন করতে করতেই হেলে পড়লো ক্যান্ডেল।
হকচকিয়ে উঠে ধরে নিলো ইভান। ক্যান্ডেল তাকালো সরু চোখে। আস্তে করে বিড়বিড়িয়ে বলল কিছু যা শোনা গেলো না।(লেখিকা লাকি নোভা)
ইভান আরো কয়েকবার ঠিকানা জিজ্ঞেস করলো। লাভ হলো না। মেয়েটা যতসব প্রলাপ বকছে। ভারি বিপদে পড়ে গেলো ইভান। কয়েক সেকেন্ড জায়গায় দাঁড়িয়ে চিন্তা করতে লাগলো কী করবে।
অবশেষে উপায়ান্তর না দেখে গাড়িতে বসালো ওকে।
ড্রাইভিং সিটে এসে বসে স্টার্ট দিলো গাড়ি।
বিষয়টা খানিক দূরে দাঁড়িয়ে অবাক চোখ তাকিয়ে দেখলো পিয়াস। হতভম্ব হয়ে গেলো পুরোদস্তুর। তবে এগিয়ে যাওয়ার আগেই গাড়িটা বেরিয়ে গেলো পার্কিং লট থেকে।
(চলবে…)
লেখিকা লাকি নোভা
(গল্প কপি সম্পূর্ণ নিষেধ)
(ভুল থাকতে পারে৷ ধরিয়ে দিয়েন।)