কিছু জোড়া শালিকের গল্প পর্ব ৯
#মুখোশ
লেখিকা: #Lucky_Nova[গল্প কপি নিষেধ]
ত্রয়ী অনেক সময় ধরে মেঝেতে থম মেরে বসে আছে। কোনো হেলদোল নেই। চোখের পাপড়ি পর্যন্ত নড়ছে না। একদম পাথর হয়ে বসে আছে।
একটু আগে দেখা ছবিগুলো মেঝেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। সবগুলো ছবি দেখার ইচ্ছে হয়নি ত্রয়ীর। বিশ্বাসই করতে ইচ্ছে করছে না। নুহাস সত্যিই খেলেছে এতদিন! তার অগোচরে অন্য মেয়েদের সাথে সম্পর্ক রেখেছে? এত বাজে সে?
ভাবতেই দম বন্ধ লাগছে ত্রয়ীর। খুব কষ্ট হচ্ছে।
শুধু মনে হচ্ছে এসব মিথ্যে। বানোয়াট। নুহাস খারাপ নয়।
ত্রয়ী ঢোক গিলে গলা ভিজানোর চেষ্টা করলো।
সবটা ও নুহাসের থেকে শুনতে চায়। নুহাস কেনো এমন করলো সেটা নুহাসকেই বলতে হবে। নাহলে শান্তি পাবে না ত্রয়ী।
কোনোমতে উঠে দাঁড়িয়ে ফোন হাতে নিলো ত্রয়ী। এরমধ্যে নীল অনেকবার ফোন করেছে। কিন্তু তোলে নি ত্রয়ী। নুহাসও করেছে। এতদিন পর। তবে মাত্র একবার।(লেখিকা লাকি নোভা)
ত্রয়ী যন্ত্রের মতো নির্বিকার হয়ে নুহাসের ফোনে কল করলো। কল ঢুকলো। কয়েক ঘণ্টা আগে পর্যন্তও কল ঢুকছিলো না বলে অস্বস্তি হচ্ছিলো। আর এখন কল ঢুকছে বলে অস্বস্তি হচ্ছে। গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। শ্বাস আটকে আসছে।
কয়েকবার রিং হওয়ার পরে ফোন তুললো নুহাস।
“হ্যাঁ, বলো। বিয়ে ভেঙেছে? আমি একটু সমস্যায় ছিলাম। ফোনটা নষ্ট হয়ে গেছিলো।”
ত্রয়ী নিশ্চুপ রইলো।
“হ্যালো? ত্রয়ী শুনতে পাচ্ছ?”
“হু।” ক্ষীণ স্বরে কোনোমতে বলল ত্রয়ী। খুব হাঁসফাঁস লাগছে। ছবিগুলোর দৃশ্য চোখের সামনে ভাসছে শুধু।
“বলছো না যে! বিয়েটা ভেঙেছে?”
ত্রয়ী নিজেকে সামলালো। নিস্তেজ গলায় বলল, “আমার সাথে দেখা করতে পারবে? এখনি।”
নুহাস চুপ করে রইলো কিছুক্ষণ। অবাক কণ্ঠে বলল, “তুমি একা দেখা করতে চাচ্ছ? সূর্য কোনদিকে উঠলো আজ?”
উত্তর দিলো না ত্রয়ী।
এটা ঠিক, নুহাস প্রায়ই আলাদাভাবে দেখা করতে চাইতো। একা সময় কাটাতে চাইতো। কিন্তু ত্রয়ী এ বিষয়ে রাজিই হতো না। ভার্সিটি ছাড়া অন্য কোথাও দেখা করাই সম্ভব হতো না। আরকি ত্রয়ীই দেখা করতো না।
নুহাস ভেবেছিলো প্রথম কয়েকমাস হয়তো এমন করবে। তাই তালে তাল মিলিয়ে বলেছিলো ত্রয়ী যা চায় তাই-ই হবে। পরে হয়তো রাজি করানো যাবে।
কিন্তু না! ত্রয়ী তেমনই রইলো। এবিষয়ে মেয়েটা অনেক বেশিই সিরিয়াস। বাহিরে দেখা করতেই চাইতো না। একপ্রকার টাইম নষ্টই হচ্ছিলো ওর পিছনে। সুযোগটাই পাওয়া যাচ্ছিলো না।
কিন্তু আজ কিনা সে নিজে থেকেই দেখা করতে চাইছে! ভাবা যায়!
“বাসায় চলে আসো আমার। কেউ নেই।”
বুকটা ধক করে উঠলো ত্রয়ীর। ঘৃণা হচ্ছে খুব। রিলেশন চলাকালীন বিভিন্ন ফালতু কথা বলতে চাইতো নুহাস। কিন্তু এড়িয়ে যেত ত্রয়ী। ভাবতো হয়তো ছেলেরা এমনই। কিন্তু এখন সবটা জেনে তীব্র ঘৃণা হচ্ছে। সাথে অদ্ভুত রকমের কষ্টও হচ্ছে। নুহাসকে কী সত্যিই ভুল চিনলো ও!
“বাসায় নয়। কোনো একটা রেস্টুরেন্টে।” নির্লিপ্ত কণ্ঠে বলল ত্রয়ী। এতদিন সে যে বোকামি করে নি সেটা আজও করবে না।
“রেস্টুরেন্টে?” হালকা হতাশ হলো নুহাস। বলল, “এখনো বিশ্বাস করো না আমাকে?”
ত্রয়ী চোখ বন্ধ করে হাত মুষ্টিবদ্ধ করলো। গা কেমন জ্বলে যাচ্ছে এসব কথায়।
“আচ্ছা।” দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললো নুহাস। একটা রেস্টুরেন্টের নাম বলে দিলো আসার জন্য।
ত্রয়ীর বাসা থেকে বেশ দূরেই সেটা। তাও ত্রয়ী যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলো।
পোশাকটা পালটে পার্সে ছবিগুলো ভরে নিলো। ছবিগুলো গুছানোর সময় হাত পা কেমন থরথর করে কাঁপছিলো। বুকটা ভার হয়ে আসছিলো।
ত্রয়ী নেমে এলো নিচে। সাবিহাকে কোথায় যাচ্ছে সেটা বলেই বেরিয়ে গেলো। পালটা কোনো প্রশ্ন করার সুযোগ অব্দি দিলো না সাবিহাকে। হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন তিনি।(লেখিকা লাকি নোভা)
সবে দুপুর গড়িয়েছে। সূর্যের তেজ অনেক। কাঁচের দেয়াল ভেদ করে টেবিলে এসে রোদ ঝলকাচ্ছে। ত্রয়ী বেশ কিছুক্ষণ ধরে স্থির, নির্বিকার ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে বাহিরের দিকে শূন্য দৃষ্টি মেলে।
“কী ব্যাপার বলো তো?” হাসিমুখে মুখোমুখি বসতে বসতে বলল নুহাস।
ত্রয়ী মলিন মুখটা তুলে তাকালো নুহাসের দিকে। চোখদুটো লাল হয়ে আছে একদম। ঠোঁটটা শুষ্ক হয়ে আছে।
“Are you ok?” অবাক চোখে বলে টেবিলের উপরে রাখা ত্রয়ীর হাতটার উপর হাত রাখলো নুহাস।
ছলকে উঠলো ত্রয়ী। দেরি না করেই সরিয়ে নিলো হাতটা। নুহাস ভিতরে ভিতরে বিরক্ত হলেও বাহিরে প্রকাশ করলো না।
হাসিমুখেই বলল, কী হয়েছে?”
ত্রয়ী ভিতরে ভিতরে অবাক হচ্ছে। নিজের কাছে প্রশ্ন করছে যে এত ভদ্র, সভ্য আর হাসিখুশি মানুষটা কী সত্যিই মুখোশধারী? এক বারের জন্যও তো সন্দেহ হয়নি। অবিশ্বাস হয় নি।
ত্রয়ীকে স্থুল দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে নুহাস বলল, “কী? এভাবে কী দেখছো?”
ত্রয়ী কথা বলতে চাইলো। কিন্তু পারলো না। ঠোঁট নড়ছেই না। জ্বলন হচ্ছে অন্তরে।
নুহাস ঠোঁট উলটে বলল, “অদ্ভুত বিহেভ করছো তুমি।”
ত্রয়ী জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিলো। মুখ দিয়ে ধীরভাবে একটা নিঃশ্বাস বের করে দিয়ে নিজেকে সামনে নিলো ও।
নিজের পার্স থেকে সরাসরি ছবিগুলো বের করে এগিয়ে দিলো নুহাসের দিকে।
নুহাস ভ্রুকুটি করে চোখ নামিয়ে তাকালো। সাথে সাথে মুখের সদাহাস্যজ্বল ভাবটা উবে গেলো। মুখটা হয়ে উঠলো ফ্যাকাসে।
ত্রয়ীর দিকে চোর ধরা পরার মতো চাহনিতে চেয়ে বলল, “এসব? এসব তুমি কোথায় পেলে?”
ত্রয়ীর চোখ রক্তলাল হয়ে এসেছে। কান্নাটা গলা অব্দি আটকে রেখেছে ও। বুকটা ফেটে যাচ্ছে একদম। তবুও মুখে কিছু বলতে পারছে না।
নুহাস ছবিগুলো চট করে উলটে পালটে দেখে বলল, “এসব কী ত্রয়ী?”
হাত মুষ্টিবদ্ধ করলো ত্রয়ী। ভাঙা, কাঁপা গলায় উচ্চারণ করলো, “বুঝতে পারছো না?”
নুহাস এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো। এসব ছবি ত্রয়ীকে কে দিলো? কারণ ত্রয়ী যা বোকা তাতে এসব ওর দ্বারা নজরদারি করা সম্ভব না। তাহলে কে দিলো?
নুহাস হন্তদন্ত করে বলল, “তোমাকে কে দিয়েছে এসব? যত্তসব ফালতু। তুমি যা ভাবছো তেমন নয়। এগুলো সব মিথ্যে। তুমি বিশ্বাস করো না আমায়? কে দিয়েছে এসব?”
ত্রয়ী অবাক হয়ে তাকালো। স্পষ্ট প্রমাণগুলো অস্বীকার করছে নুহাস!
“আমি তো বলছি, তাই না? তোমার আমাকে বিশ্বাস করা উচিত। আর তুমি এতটা সন্দেহ কী করে করলে? আমার পিছনে লোক লাগিয়েছিলে? এত অবিশ্বাস?”
ত্রয়ীর দৃষ্টি স্থির, হতবাক। নির্লজ্জতার সীমা অতিক্রম করে ফেলেছে নুহাস। বিন্দুমাত্র অনুশোচনা নেই তার মধ্যে। উলটো ওকেই বড়ো মুখ করে কথা শোনাচ্ছে!
ত্রয়ী চোয়াল শক্ত করে নিজের পার্স নিয়ে উঠে দাঁড়ালো। কারণ নির্লজ্জদের সাথে তর্ক করা বৃথা।
“কোথায় যাচ্ছো তুমি?” হড়বড়িয়ে বলে উঠলো নুহাস।
ত্রয়ী পাত্তা না দিয়ে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে এলো। নুহাসও বেরিয়ে এসে পথ আটকে বলল, “থামো ত্রয়ী। ভুল বুঝছো তুমি আমাকে।”
যতই দেখছে ততই অবাক হচ্ছে ত্রয়ী। এত কিছুর পরেও এত বড়ো মুখে কী করে কথা বলে মানুষ?
ত্রয়ী ঘৃণাভরা চোখে তাকালো। কথা না বাড়িয়ে পাশ কাটিয়ে লিফটের কাছে এগিয়ে গেলো। বাটন চেপে দিলো নিচে যাওয়ার জন্য।(লেখিকা লাকি নোভা)
নুহাস এগিয়ে এসে ওর হাত ধরে বলল, “প্লিজ শোনো একটু।”
ত্রয়ী এক ঝটকায় নিজের হাত ছাড়িয়ে নিলো। অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, “খবরদার! একদম ছোঁবেন না আমায়।”
ত্রয়ীর এমন ব্যবহারে মেজাজ গরম হয়ে গেলো নুহাসের।
ত্রয়ী সিঁড়ি দিয়েই নামবে ঠিক করলো। সিঁড়ির কাছে এগিয়ে যেতে না যেতেই আবার হাতটা খপ করে ধরে নিলো নুহাস।
চমকে উঠলো ত্রয়ী।
“হাত ছাড়ুন আমার।” ত্রয়ী হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করেও পারলো না। একদম চেপে ধরেছে নুহাস। চোখ মুখের ভাব প্রচন্ড ভয়ানক।
ত্রয়ী ভয়ে চেঁচিয়ে ওঠার আগেই ওর হাতটা পিঠের পিছনে চেপে ধরে মুখটা অন্যহাতে চেপে ধরলো নুহাস। ভয়ে অন্তরাত্মা কেঁপে উঠলো ত্রয়ীর। অন্যহাত দিয়ে ঢেলে সরানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলো। ছটফটিয়ে উঠেও লাভ হলো না।
“এত তেজ কীসের? হ্যাঁ? তোর মতো কত মেয়ে আমার জন্য পাগল জানিস? তোর পিছনে যত সময় নষ্ট হয়েছে তা অন্য কোনো ***র পিছনে খরচ করলে আমার বেশি লাভ হতো।”
থমকে গেলো ত্রয়ী। কান ঝাঁঝাঁ করে উঠলো যেন। ত্রয়ী বিশ্বাসই করতে পারছে না এই নুহাসকে সে এতদিন ভালোবেসেছে। সত্যিই কি এটা সেই নুহাস?
“এত কষ্ট করেও কিছু পাবো না তা কীভাবে হয়?” বাজে উদ্দেশ্য নিয়ে হাসলো নুহাস।
চরমভাবে শিউরে উঠলো ত্রয়ী। আরো দ্বিগুন ছটফটিয়ে উঠলো।(লেখিকা লাকি নোভা)
নুহাস ওর মুখটা চেপে ধরে ওকে দেয়ালের সাথে মিশাতেই ত্রয়ী আঁচ করে ফেলল কী হতে চলছে। একটা জানোয়ারের চেয়েও ভয়ংকর রূপধারণ করেছে নুহাস। সে এখন সবথেকে নিকৃষ্ট কাজটা করতেও দুবার ভাববে না। কিন্তু এই সুযোগটা ত্রয়ী ওকে কখনই দেবে না।
নুহাস অন্যহাত দিয়ে ওড়নাটা সরিয়ে দিতে চাইতেই ত্রয়ী নিজের সবটুকু শক্তি দিয়ে ধাক্কা দিলো। নুহাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললো। ধাক্কা খেলো রেলিং-এর সাথে। চরমভাবে ক্ষেপে উঠলো সাথে সাথে।
ত্রয়ী মূহুর্তের জন্য দেরি না করে সিঁড়ি বেয়ে নামতে চাইতেই ওর ওড়নাটা টেনে ধরলো নুহাস।
ত্রয়ী তাও থামলো না। ওড়ানাটা ওই জানোয়ারের হাতে ছেড়ে দ্রুত নেমে পড়তে লাগলো।
“Shit!” বলে ওড়নাটা মুঠোবন্দি করে নুহাসও পিছনে ছুটলো।
প্রতি ফ্লোরে একটা করে রেস্টুরেন্ট থাকায়, ত্রয়ী সিঁড়ি বেয়ে পরের ফ্লোরে নেমে সেই রেস্টুরেন্টে দৌড়ে ঢুকে গেলো।
ভিতরে ঢুকেই হাঁপাতে লাগলো হাপরের মতো। চোখ দিয়ে পানি গড়াতে লাগলো অনবরত। সবাই-ই অবাক হয়ে তাকালো।
“বাইরে বাইরে। উপর তলায় আমার সাথে…” অত্যন্ত ভীত কণ্ঠে এটুকু বলতে বলতেই ত্রয়ী থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে বসে পড়লো মেঝের উপর।
ডুকরে কেঁদে উঠতেই কয়েকজন এগিয়ে এলো ওর দিকে।(লেখিকা লাকি নোভা)
“আপু, আপনি ঠিক আছেন? কী হয়েছে?” একটা মেয়ে এসে ধরলো ত্রয়ীকে।
ত্রয়ী উত্তর না দিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে লাগলো। মেয়েটা ত্রয়ীকে আগলে ধরলো। তারপর নিয়ে বসালো একটা চেয়ারে।
“আপু শান্ত হন। ভয় নেই।” ত্রয়ীর পাশে বসে ওকে আঁকড়ে ধরে বলল মেয়েটা।
ত্রয়ী তার বুকে মুখ গুজে “আম্মু আম্মু” বলে কেঁদে ফেললো।
ত্রয়ীর সাথে যে বাজে কিছু হতে যাচ্ছিলো সেটা মোটামুটি আঁচ করতে পারলো সবাই।
ত্রয়ী এখনো কাঁপছে থরথর করে। চোখ থেকে জল গড়াচ্ছে অনর্গল।
“আপু শান্ত হন। আমরা আছি।” মেয়েটা সান্ত্বনা দিয়ে বলল। তারপর চোখ মুছে দিলো ত্রয়ীর।
ত্রয়ী চোখ তুলে তাকালো একবার। বুক ওঠানামা করছে ঘনঘন। ভয়টা এখনো কাটে নি। এত তাড়াতাড়ি কাটার কথাও নয়।
মেয়েটা চোখের ইশারায় ওর এক বান্ধবীকে কিছু বলতেই মেয়েটা তার ব্যাগ থেকে হিজাব নিয়ে এলো একটা। সেটা ত্রয়ীর বুকে জড়িয়ে দিয়ে বলল, “ভয় নেই আর আপু। শান্ত হন।”
ত্রয়ীর বুক এখনো ভয়ে ধড়ফড় করেছে। এমন বাজে পরিস্থিতিতে পড়াটা জীবনেও কল্পনা করেনি ও। চেনা মানুষ এমন অচেনা হয়ে জানোয়ারের বেশ ধরতে পারে তা জানা ছিলো না ত্রয়ীর। বুকটা মুচড়ে যাচ্ছে।
“বাহিরে কেউ নাই রে। দেখে এলাম। তবে উপরতলায় এই পার্সটা পেলাম।” বলল একটা ছেলে।
মেয়েটা নিলো সেটা। ত্রয়ী এখনো কান্না থামাতে পারে নি। চোখের জল বাধ বানছে না। ভয়টাও কমছে না।
ত্রয়ী নাক টেনে টেনে কাঁদতে লাগলো।
মেয়েটা ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে মোলায়েম গলায় বলল, “কান্না থামান আপু। এখন কেউ কিছু করতে পারবে না। আমরা আছি।”
ত্রয়ী শান্ত হতে পারলো না। মেয়েটার বুক থেকে মাথা তুলে বসলো সোজা হয়ে। এখনো ঠোঁট কাঁপছে। চোখের জল গড়াচ্ছে।
ত্রয়ী ঘন ঘন শ্বাস নিতে নিতে দুহাত টেবিলে রেখে তার উপর মাথা নুয়ে কাঁদতে লাগলো। নিঃশব্দ কান্না। তবে থেকে থেকে হিঁচকি তোলার আওয়াজ আসতে লাগলো।
মেয়েটা ত্রয়ীর পিঠে হাত রাখলো। তাকালো ম্লান চোখে।
কাঁদতে দিলো ত্রয়ীকে। কেঁদে যদি একটু শান্ত হয়।
“ফোনটা কখন থেকেই বাজছে দোস্ত।” পার্সের দিকে ইশারা করে বলল ছেলেটা।
ফোনটা একদম সাইলেন্ট হলেও আলো জ্বলছে বলে বাহির থেকে বোঝা যাচ্ছে।
মেয়েটা পার্স নিয়ে ফোনটা বের করলো। তাকালো একবার ত্রয়ীর দিকে।
কিন্তু ত্রয়ী ফোনটা রিসিভ করার অবস্থায় নেই বলে মেয়েটাই রিসিভ করার কথা চিন্তা করলো। কারণ পরিবারের কেউ হলে হয়তো সুবিধা হবে। কাছের মানুষ পাশে থাকাটা জরুরি এখন।
তবে অচেনা নাম্বার দেখে খানিক ইতস্তত করলো মেয়েটা। অবশেষে ফোনটা তুললো।
হ্যালো বলার আগেই ওপাশ থেকে কেউ অঢেল বিচলিত কণ্ঠে বলে উঠলো, “ত্রয়ী? ত্রয়ী কোথায় তুমি? হ্যালো?”
মেয়েটা আমতাআমতা করে বলল, “হ্যালো, আসলে..”
অন্য কারো কণ্ঠ পেয়ে একটু অবাক হলো নীল। বিচলিত ভাবটা আরেকটু বাড়লো।
“হ্যালো? ত্রয়ী কোথায়? এটা তো ত্রয়ীর ফোন।”
“হ্যাঁ এটা তারই ফোন। আপনি কে বলছেন? আসলে একটু সমস্যা হয়েছে।”
“কী হয়েছে? ত্রয়ী ঠিক আছে?” ঘাবড়ে গেলো নীল।
“ঠিক আছে। খারাপ কিছু হয়নি। আপনি কী তার পরিবারের কেউ? যদি হন তাহলে একটু কষ্ট করে ‘সুইটমিট’ রেস্টুরেন্টে আসতে পারবেন?”
বুকটা ধক করে উঠলো নীলের। তাও নিজেকে সামলে দ্রুত গাড়ি ঘুরাতে ঘুরাতে বলল, “হ্যাঁ, এখনি আসছি আমি।”
তারপর উৎকণ্ঠা হয়ে বলল, “কী হয়েছে ওর সাথে?”
“আপু ঠিক আছে, ভাইয়া। আমি সীমা। আমি আপুর সাথেই আছি এখন। আপনি আগে আসুন। সব বলছি। চিন্তা করবেন না।” বলল সীমা।
নীলের দুশ্চিন্তা বাড়লো বৈ কমলো না। ওর বোকামির জন্যই হয়তো আজ ত্রয়ীর সাথে কিছু হয়েছে। নিজের উপর প্রচন্ড রাগ হচ্ছে ওর।
“ত্রয়ীকে দেওয়া যাবে?” উদগ্রীব হয়ে প্রশ্ন করলো নীল।
সীমা একবার তাকালো ত্রয়ীর দিকে। ত্রয়ী এখনো ফুপিয়ে কেঁদে যাচ্ছে। কথা তো বলতে পারবে মনে হয় না।
“মনে তো হয় না ভাইয়া।”
নীলের হৃদযন্ত্র থমকে গেলো যেন।
“কী হয়েছে ওর সাথে!”
“চিন্তা করবেন না। খারাপ কিছু হয়নি। আপু ঠিক আছে। শুধু একটু ভয় পেয়েছে।”
নীল মুখ দিয়ে বড়ো বড়ো নিঃশ্বাস ফেলে নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করলো। ও আন্দাজ করেছিলো এমন কিছু। এজন্যই ত্রয়ীর বাসায় গিয়েছিলো। কারণ ত্রয়ীকে ছবিগুলোর কথা বলার পর ফোনটাই তুললো না আর।(লেখিকা লাকি নোভা)
কিন্তু নীল দেরি করে ফেললো ওর বাসায় যেতে। ত্রয়ী বেরিয়ে পড়েছিলো আগেই। জানোয়ারটা নিশ্চয়ই ত্রয়ীর সাথে জঘন্য কিছু..!
ভাবতেই চোয়াল শক্ত হয়ে এলো নীলের। কপালের পাশের শিরা দপদপ করে উঠলো রাগে।
“ওর সাথেই থাকো। আমি আসছি। ফোন কাটতে হবে না।”
“আচ্ছা ভাইয়া।”
নীলের পৌঁছাতে বিশ মিনিট লেগে গেলো। অতি সত্বর সিঁড়ি বেয়ে উঠে গেলো পাঁচ তলায়। রেস্টুরেন্টে ঢুকেই অস্থির দৃষ্টি বুলিয়ে নিতেই চোখ আটকালো এক কোণায়।
ত্রয়ীকে ওভাবে কাঁদতে দেখে থমকে গেলো খানিক। বুকের ভিতর ঝড় শুরু হলো যেন। সশব্দে নিঃশ্বাস ফেলতে ফেলতে এসে দাঁড়ালো ত্রয়ীর পাশে।
সীমা নীলকে দেখে উঠে দাঁড়িয়ে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন করলো, “আপনিই সে?”
নীল ত্রয়ীর দিকে স্থির দৃষ্টি রেখে মাথা নাড়লো ধীরভাবে।
ত্রয়ী এখনো টেবিলের উপর রাখা হাতে মাথা গুজে হিঁচকি তুলে কাঁদছে। শরীরটাও হালকাভাবে কাঁপছে।
নীল আহত দৃষ্টিতে তাকিয়ে ত্রয়ীর পাশে একহাত ঠেস দিয়ে ঝুকে অন্যহাতটা ওর মাথায় হাত রাখলো। আলতো করে বেদনার্ত, ভারি গলায় ডাকলো, “ত্রয়ী?”
ত্রয়ী কাঁদতে কাঁদতেই মাথাটা হাতের উপর ঠেস দিয়ে রেখেই হালকা ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো নীলের দিকে। ওর কান্নারত বিমর্ষ মুখটা দেখতেই বুকের ভিতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো নীলের।
চোখের সাদা অংশ লাল হয়ে গেছে একদম। ফুলে গেছে চোখের নিচটা। ঠোঁট দুটো কাঁপছে বিরতিহীনভাবে।
নীল ঢোক গিললো কয়েকটা। ত্রয়ীর দিকে ব্যথিত নয়নে তাকিয়ে ম্লান কণ্ঠে বলল, “সরি ত্রয়ী।”
ত্রয়ী নাক টেনে চোখ মুছলো। সোজা হয়ে বসে মাথা হালকা নুয়ে রাখলো। মুখটা লাল হয়ে আছে।
নীল বিষাদময় চোখে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ।
ত্রয়ী কান্না থামিয়েছে। যদিও মুখটা শুকিয়ে কাঠ হয়ে আছে।
“ধন্যবাদ অনেক।” সীমার দিকে তাকিয়ে বলল নীল।
“ধন্যবাদের কিছুই নেই ভাইয়া৷ আমরা কিছুই করিনি।”
নীল দুর্বোধ্য হাসলো।
ত্রয়ী এতক্ষণে চোখ তুলে তাকালো নীলের দিকে। চোখাচোখি হতেই চোখ নামিয়ে নিজের পার্সটা হাতে নিলো। উঠে দাঁড়িয়ে অগোছালো দৃষ্টিতে সীমার দিকে তাকিয়ে বলতে চাইলো কিছু। কিন্তু মুখ ফুটে কিছুই বের হলো না। মনটা এখনো বিমর্ষ।
“ভালো থেকো আপু।” সীমা এগিয়ে এসে ত্রয়ীর হাত ধরলো।
ত্রয়ী হাসার চেষ্টা করে মাথা নাড়লো। ক্ষীণ স্বরে বলল, “ধন্যবাদ।”
সীমা হাসলো মিষ্টি করে। তারপর মজার ছলে বলল, “এই ভাইয়াটা আপনার কে হয় আপু?”
হঠাৎ এমন প্রশ্নে ত্রয়ী একটু অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো। চোখ পিটপিটিয়ে তাকালো নীলের দিকে। নীলও তাকিয়ে ছিলো।(লেখিকা লাকি নোভা)
আবার চোখাচোখি হতেই চোখ সরালো ত্রয়ী। লোকটার চোখের চাহনি আজ অন্যরকম। ম্লান, নির্জীব।
“ফিয়ান্সে।” ত্রয়ীর দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল নীল।
সবাই “ওহো” বলে সুর টানলো।
ত্রয়ী অপ্রতিভ হয়ে উঠলো যেন।
“অনেক সুন্দর মানিয়েছে আপনাদের।” আরেকটা মেয়ে বলল।
“হ্যা, সত্যিই।” তাল মিলিয়ে বলল সবাই।
নীল ধন্যবাদের হিসেবে ওদের বার্গারের ট্রিট দিয়ে দিলো। তারপর ওদের বিদায় জানিয়ে বেরিয়ে এলো ত্রয়ীকে নিয়ে। চুপচাপ নেমে এলো লিফটে করে। পুরোটা সময় নীল অনুশোচনাপুর্ণ চোখে তাকিয়ে রইলো ত্রয়ীর দিকে। মুখ ফুটে কিছু বলতে চেয়েও পারলো না। কারণ কী বলবে সেটাই বুঝতে পারলো না। ত্রয়ী না তাকিয়েও বুঝলো সেটা।
নিচে নেমে নীল গাড়ির দরজা খুলে ভিতরে ঢুকতে ইশারা করলো। গম্ভীর গলায় বলল, “আমি দিয়ে আসবো।”
ত্রয়ী তাকালো এক পলক। অতঃপর ইতস্তত করতে করতে বসলো ভিতরে। নীল ড্রাইভিং সীটে এসে বসে পূর্ণদৃষ্টিতে তাকালো ত্রয়ীর দিকে।
বিনয়ীভাবে ভরাট গলায় বলল, “তুমি ঠিক আছো?”
ত্রয়ী কোলের দিকে তাকিয়ে ছিলো। নীলের প্রশ্নে একবার আড়চোখে তাকিয়ে উপর নিচে মাথা নাড়লো।
“একা কেনো আসলা তুমি? যদি কিছু হয়ে যেত?” স্বাভাবিক কণ্ঠে অস্থির ভাব প্রকাশ পেলো নীলের।
ত্রয়ী কী বলবে বুঝতে পারলো না। নিরুত্তর হয়ে হাতের পার্সটা খুটতে লাগলো চুপিসাড়ে।
হঠাৎ করে নীল ওর ডান হাতটা ধরতেই চমকে তাকালো ও। নীলকে শক্ত চোখমুখে হাতের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে নিজেও তাকালো। হাতে লাল দাগ বসে গেছে।
ত্রয়ী চোখ সরালো। কষ্ট হচ্ছে খুব। আবার মনে পড়ে যাচ্ছে সবকিছু। নুহাস কিনা শেষ পর্যন্ত এত জঘন্য কিছু করতে চাইছিলো! তার মনে কোনো ভালোবাসাই ছিলো না? শুধু সুযোগের জন্যই সে অপেক্ষা করেছিলো!(লেখিকা লাকি নোভা)
“নুহাস করেছে?” থমথমে গলায় প্রশ্ন করলো নীল।
ত্রয়ীর চোখ ছলছল করে উঠলো। কান্না আটকে রাখার চেষ্টায় ব্যর্থ হতেই অশ্রু গড়িয়ে গেলো গাল বেয়ে।
নীল দেখলো৷ দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে সংযত করলো নিজেকে। ত্রয়ীকে কিছুতেই ওই জানোয়ারের জন্য কাঁদতে দেবে না ও। এজন্য এসব কথা বাদ দেওয়াটাই উচিত হবে।
“কেঁদো না। দেখি, এদিকে তাকাও।” হাতটা ধরে রেখে হালকা করে টানলো নীল।
ত্রয়ী অন্যহাতের পিঠে চোখ মুছে তাকালো আড়চোখে।
“তুমি তোমার হবু বরের সামনে পরপুরুষের জন্য কাঁদছো! কেঁদে কেটে চোখ একদম লাল করে ফেলেছো! ভালোই সাহস তো তোমার!” ভ্রু উঁচিয়ে বলল নীল।
বেশ ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো ত্রয়ী।
“আর এক ফোটা পানিও যেন না পড়ে।” সরু চোখে তাকিয়ে বলল নীল।
ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো ত্রয়ী।
নীল ঠোঁট কামড়ে চোখ রাঙিয়ে বলল,”কাঁদবা না একদম।”
ত্রয়ী চোখ সরিয়ে নড়েচড়ে বসলো। আবার আগের ধাঁচে ফিরে এসেছে লোকটা।
নীল গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বলল, “তুমি কি আজীবনই বোকা থেকে যাবা? চালাক হবা না?”
ভ্রুকুটি করে তাকালো ত্রয়ী। নীলের ঠোঁটে সুক্ষ্ম হাসির রেশ। সম্ভবত দুষ্টুমির হাসি।
ত্রয়ী মনে মনে ক্ষেপলেও উত্তর দিলো না।
“আমি ভেবেছিলাম তুমি বড়ো হয়ে চালাক হবা। বুদ্ধি বাড়বে তোমার। কিন্তু না! এখনো হাঁটুতে।”
উপহাস করা কথাগুলো হজম করতে পারলো না ত্রয়ী। এবার তপ্ত গলায় বলে উঠলো, “কী বলতে চান আপনি? আমি বোকা?”
“সন্দেহ আছে তোমার?” হাসিটা প্রশস্ত করে একপলক তাকালো নীল।
ত্রয়ী দাঁত কিড়মিড় করলো।
“যেমন দেখো, ওই জানোয়ারের বিষয়ে সত্যিটা মুখে বলে জানালাম, বিশ্বাস করলা না। ছবি দিলাম, তাও বিশ্বাস করলা না। ছুটে চলে এলা দেখা করতে। বোকা বলবো না তো কী বলবো?” আবার একঝলক তাকালো নীল। ত্রয়ীকে চোখা দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখে বলল, “এত প্রমাণ দিলাম তাও আমাকে বিশ্বাস করলা না। অথচ দেখো, এখন আবার সাত পাঁচ না ভেবে আমার গাড়িতে উঠে পড়েছো! এখন যদি আমি তোমাকে কোথাও নিয়ে যাই?”
চমকে উঠলো ত্রয়ী।
তাকালো বড়ো চোখ করে।
নীল মুচকি হাসলো। না তাকিয়েও বুঝলো মেয়েটা খানিক ঘাবড়েছে।
ত্রয়ী চকিত ভঙ্গিতে আশেপাশে লক্ষ্য করে দেখে নিলো গাড়িটা কোথায় যাচ্ছে। ঠিক পথে যাচ্ছে দেখে একটু স্বস্তি পেলো। তবে পুরোপুরিভাবে জড়তা গেলো না।
নীল ওকে আরেকটু ভয় পাইয়ে দিয়ে অন্যপথে নিলো গাড়িটা।
বুক ধকধক করে উঠলো ত্রয়ী। ভয়ার্ত চোখে তাকালো নীলের দিকে।
“কোথায় নিচ্ছেন গাড়ি?” আতঙ্কিত চোখে তাকিয়ে বলল ত্রয়ী।
“দূরে কোথাও।” ত্রয়ীর পানে চেয়ে ঠোঁট কামড়ে হেসে চোখ মারলো নীল।
থতমত খেয়ে গেলো ত্রয়ী।(লেখিকা লাকি নোভা)
“এখন বলো তুমি বোকা নাকি বোকা না?” বলতে বলতে ঠোঁট প্রসারিত করে হাসলো নীল।
“আম..আমি নামবো।” হড়বড়িয়ে বলল ত্রয়ী।
“নামো। কে মানা করেছে?” দায়সারাভাবে বলল নীল।
কপালে ভাঁজ পড়ে গেলো ত্রয়ীর।
“গাড়ি থামান আগে।” চুপসে যাওয়া মুখে বলল ও।
“লাফ দিয়ে নেমে পড়ো।” নীল এমনভাবে বলল যেন এটা খুব স্বাভাবিক একটা বিষয়।
হা হয়ে গেলো ত্রয়ী।
“তোমার বোকামির কোনো শেষ নেই, এবার বুঝেছো?”
গা জ্বলে যাচ্ছে ত্রয়ীর।
“আরো বলি শোনো। প্রথম দেখাতেই আমি তোমার ঠোঁটের তিল নিয়ে কমেন্ট করলাম, তোমাকে জড়িয়েও ধরলাম অথচ তুমি থাপ্পড় না দিয়ে উলটো ভয়ে পালালে।”
বোকা বনে গেলো ত্রয়ী।
নীল নম্র চোখে তাকিয়ে বলল, “তোমার উচিত ছিলো আমাকে থাপ্পড় মারা।”
(চলবে…)
লেখিকা লাকি নোভা
(গল্প কপি করা সম্পূর্ন নিষেধ)