কনে বদল পর্ব ১১
“তোর কী পরিকল্পনা চারু?”
চারু কিছু বলল না। হয়ত কাউকে এখন জানাতে চাচ্ছে না।
“তুই কি আমার সাথে থাকবি?”
“অবশ্যই থাকব। হলের জীবনে হাঁপিয়ে উঠেছি এবার একটু স্বাধীনভাবে থাকব।”
“তাহলে তো ভালোই হলো।”
“তোকে একটা সুখবর দেয়া হয়নি চারু। ভাবছিলাম এসেই তোকে বলব। তোর মনটা এত খারাপ দেখলাম তাই বলা হয়নি।”
“কী খবর রে?”
“আমার একটা চাকুরি হয়েছে। “
চারুর মুখে হাসিফুটে উঠে। “কীসের চাকুরি রে?”
“ডেইলি স্টার পত্রিকায়।”
“বাঃ! এত দারুণ খবর। তোর অনেকদিনের ইচ্ছা পূরণ হলো।”
“সত্যি খুব ভালো লাগছে! তুইও এবার একটা কিছু শুরু কর, দেখবি ভালো লাগবে।”
“চল আজ তোকে ট্টিট দিব।”
চারু আর কাজল বাসা খুঁজতে বের হয়েছে। এ পর্যন্ত দশটা বাসা দেখা হয়েছে। বাসার সব ঠিকঠাক কিন্তু যখনি শুনে ওরা দুইজন মেয়ে থাকবে, বাড়িওয়ালা বাসা ভাড়া দিবে না বলে দেয়।
ওরা এখন আছে তের নাম্বার বাড়ির সামনে। আধুনিক বাড়ি, বাড়ির সামনের গেটে বড়ো করে লেখা কুকুর হতে সাবধান।
বাড়ি দেখে চারু বলল, চল যাই এ বাড়িতে আমাদের ভাড়া দিবে না। আর দিলেও ভাড়া দেয়ার সামার্থ আমাদের নেই।”
“আঃ! দেখ কী সুন্দর বাড়ি! এমন একটা বাড়ি দেখার সুযোগ পেয়ে চলে যাব? ভিতরটা একটু দেখে আসি, এমনিতে তো ঢুকা যাবে না।”
বাড়ির ভিতরে ঢুকে চারদিকে দেখছে। সত্যি খুব সুন্দর একটা বাড়ি! বাড়িওয়ালা থাকেন দ্বিতীয় তলায়। চারু যেতে রাজি না। কাজল বলল,” এসেছি যখন বাড়িওয়ালার সাথে দেখা করেই যাই।”
দরজা খুললেন বাড়িওয়ালা মুখলেছুর রহমান নিজেই। এখন তিনি একাই থাকেন। স্ত্রী গত হয়েছে কয়েকবছর আগে। ছেলে-মেয়ে বিদেশে থাকে। উনিও বছরে ছয় বাহিরে থাকেন।
কাজল সালাম দিল,”আসসালামু আলাইকুম “
“ওয়ালাইকুম সালাম।”
” আমরা বাসা ভাড়ার জন্য এসেছি। “
“গেটে কি টু-লেট আছে?”
“জি, আছে। আচ্ছা তোমরা ভিতরে আস। কিছু মনে করো না তুমি করে বললাম। বয়সে তোমরা আমার মেয়ের মতো।”
“না, না ঠিক আছে আংকেল। “
বিশাল কিং সাইজের একটা ড্রয়িং রুম। দেয়াল ঝুলছে একটা প্রেইন্টিং, সেটা যে খুব দামি হবে বুঝা যাচ্ছে। কী সুন্দর প্রেইন্টিং টা! নিচে লেখা মানুষ নিজেই তার স্রষ্টা।
সোফায় পাশাপাশি বসে পড়ল কাজল আর চারু ওদের বিপরীত পাশে বসলেন বাড়িওয়ালা। “আমি মুখলেছুর রহমান। “
“আমি কাজল আর ও চারু।”
“কী করো তোমরা?”
“ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে পড়ি।”
“খুব ভালো! আসলে তোমরা যে টু-লেট টা দেখে এসেছ ওটা ছিল তিনতলার একটা ফ্লাটের জন্য। বাসাটা ভাড়া হয়ে গেছে কিন্তু কেয়ারটেকার ভুলে টু-লেট টা খুলেনি! “
তিনি কেয়ারটেকার কে ফোন দিয়ে এখনি টু-লেট টা খুলতে বললেন।
“আচ্ছা, ঠিক আছে আংকেল। আজ তাহলে আমরা উঠি।”
“না, বসো। তোমাদের কে আমার খুব ভালো লেগেছে। তোমাদের জন্য একটা অফার আছে। আমার ছাদে একটা বড়ো রুম আছে। আমি এটা ভাড়া দেই না। তোমরা চাইলে রুমটাতে থাকতে পার।”
কাজল চারুর দিকে তাকিয়ে চোখের ইশারায় জানতে চায় ওর মত কি? চারু ইশারা করে বুুঝায় দেখি তারপর সিদ্ধান্ত নিব।
“চলো তোমাদের রুমটা দেখাই।”
রুম দেখে ওদের দারুণ ভালো লাগে। বাড়ির ছাদে নানা রকম গাছ লাগানো। একটা বড়ো রুম ঠিক না মনে হয় একটা এক রুমের ফ্লাট। সব কিছুর ব্যবস্থা আছে। সব ধরনের ফার্নিচারও আছে।
“রুম কেমন লাগল?”
“খুব ভালো!”
“গুড তাহলে আরকি ঝটপট চলে এসো। তোমাদের সাথে জমিয়ে আড্ডা মারা যাবে।”
“কত দিতে হবে?” একটু সংকোচ নিয়ে জিজ্ঞেস করে চারু।
“সে তোমরা যা দাও। তবে একটা শর্ত আছে আমার বাগানটার যত্নে নিতে হবে পারবে না?”
“হ্যাঁ, সূচক মাথা নাড়িয়ে চারু বলে, একটা পাকাপাকি কথা হলে ভালো হত না?” কাজল সায় দেয়।
“তোমরা ওঠ, সে পরে দেখা যাবে।”
চারু কেমন একটু চিন্তিত হয়ে বলল,”উনি এমন করে আমাদের রুম দিলো কেন! কয়েক মিনিটের পরিচয়ে ভালো লাগা তৈরি হয়ে গেল?”
“তুই বিষয়ে খুব বেশি চিন্তা করিছ!”
“উঠে দেখি ভালো না লাগলে ছেড়ে দিব। এটা তো কোন বড়ো বিষয় না তা-ই না।”
কাজল আর চারু নতুন বিষয় চলে এসেছে। বাসায় সব কিছুই ছিল। খাট, টেবিল, ছোট এক সেট সোফা মোটামুটি যা প্রয়োজন তার সবই আছে। ওদের তেমন কিছুই কিনতে হয়নি। ওরা এ সব আসবাবপত্র ব্যবহার করতে রাজি ছিল না। বাড়িওয়ালা এক প্রকার জোর করেছে। চারুর মনে লোকটাকে নিয়ে একটা খচখচানি আছে।
“রুমটা সত্যি সুন্দর কি বলিছ চারু?”
“তা তো ঠিকই আছে কিন্তু –“
“এখন তোর বাজে চিন্তা গেল না! আচ্ছা তোর পরিকল্পনাটা তো বললি না?”
“দেখ কাজল যে কোনো কাজ করার জন্য, পায়ের নিচে মাটিটা শক্ত থাকা দরকার। প্রথমে আমাকে একটা ভালো অবস্থানে যেতে হবে।”
“এটা তুই ঠিক বলেছিস। নিজের অবস্থান ভালো না থাকলে একটা সময় ভেঙে পড়তে হয়।”
————-
সকাল সাতটায় আমরা সেইন্ট মার্টিন যাওয়ার জাহাজে চড়লাম টেকনাফ থেকে। নীলা আপু আর লিটন ভাইয়ের জোরাজোরিতে তাদের সঙ্গী হতে হলো। নীরু খুব খুশি। নীলা আপুর সাথে নীরুর ভালো সখ্য গড়ে উঠেছে! ও খুব অল্প সময়ে সবার সাথে কেমন করে যেন মিশে যায়! এটা ওর খুব ভালো একটা গুন!
জাহাজে যাওয়ার সময় একদল সাদা পাখির দল জাহারের সাথে সাথে উড়ছে। অনেকে চিপস, রুটি খাবার ছুড়ে মারছে পাখিগুলো উড়ন্ত খাবার খাচ্ছে। দৃশ্যটা দেখতে বেশ ভালো লাগছে! নীলা আপু আর নীরুও শুরু করলো পাখিদের চিপস ছুড়া।
এগারোটার সময় আমরা পৌঁছেলাম সেইন্ট মার্টিনে। জাহাজ থেকে নেমে আমরা গেলাম ব্লু মেরিন রিসোর্টে। তিনতলা এ রিসোর্ট বেশ বড়সড়, নিজস্ব রেস্টুরেন্টে আছে। আমাদের রুম থেকে সমুদ্র দেখা যায়।
চারিদিকে সমুদ্র মাঝে ছোটো একটা দ্বিপ। এখানে অনেক নারিকেল পাওয়া যায়। লোকাল মানুষগুলো খুব ধার্মিক প্রকৃতির। দুপুরে কয়েক পদের সমুদ্রের মাছ খেলাম। খুবই সুস্বাদু মাছ! বিকালে নীরুকে নিয়ে বের হয়েছি সমুদ্রের পাড়ে। নীরু নীল রংয়ের একটা শাড়ি পরেছে। ওকে নীল পরির মতো লাগছে! অনেকেই সমুদ্রের সাতার কাটছে। আমার খুব ইচ্ছে হচ্ছিল নেমে পড়ি।
পাড় ধরে অনেকটা পথ হাটঁলাম দুজনে এক সাথে। নীল আপু আর লীটন ভাই আসেনি। ওনারা ক্লাম্ত হয়ে গেছে! বলল, “তোমরা ঘুরে আস। রাতে বারবিকিউ পার্টি করব।”
“নীরু ডাব খাবা? এখানের ডাব নাকি খুব মিষ্টি হয়!”
নীরু মিষ্টি করে হেসে বলল,” হ্যাঁ, চল খেয়ে দেখি।”
দুইটা ডাব কিনলাম। ঢাকার চেয়ে সস্তা হলেও দাম একাবারে কম না। তবে ডাবগুলো বেশ বড়!
ডাবের পানি একটু খেয়ে নীরু বলল, “সত্যি ভালো মিষ্টি পানি!”
“হ্যাঁ, তোমার মতো!”
ও কেমন একটু লজ্জা পেল।
রাতে লিটন ভাই বিশাল বারবিকিউ পার্টির আয়োজন করেছে। সমুদ্রের বিশাল একটা মাছ আনা হয়েছে বারবিকিউ করার জন্য। সাথে মুরগিও বারবিকিউ করা হবে।
লিটন ভাই বললেন, “তোমাদের জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।”
নীরু কৌতুহল হয়ে জিজ্ঞেস করল, “কী ভাই?”
“সেটা এখন বলা যাবে না। সময় হলেই দেখবা।” রহস্যময় হাসি দিলো লিটন ভাই।
বারবিকিউর সব দেখভাল করছে লিটন ভাই নিজে। রিসোর্টের দুইজন ছেলে আছে তাকে সাহায্য করার জন্য। লোহার শিকের ওপরে মাছগুলো রাখা হয়েছে নিচে জ্বলছে কয়লা। একটু পরপর মাছের গায়ে তৈল আর সস লাগানো হচ্ছে। সুন্দর একটা ঘ্রাণ আসছে মাছ থেকে।
লিটন ভাই আমাকে ডেকে ফিসফিস করে বললেন, রায়হান মদ চলবে নাকি? বারবিকিউর সাথে একআধটু না হলে চলে বলো?”
“ভাই আমি তো এ সব খাই না।”
“কী বলো!” উনি আবার রান্নায় মন দিলেন। নেশার সঙ্গী না পেয়ে বেচারার মনখারাপ হয়েছে মনে হয়। ভালো কাজ একা করা যায়। নেশা করতে দলবেঁধে। দল যত বড়ো হবে নেশায় তত মজা। এটাও লিটন ভাইয়ের কথা।
বারবিকিউ করা শেষ লিটন ভাই তার দল ভারি করে ফেলেছেন। রিসোর্টের তিনজন তার সাথে দিয়েছেন। তারা আলাদা একটা টেবিল নিয়ে বসেছে। নীলা আপু বারবার আমার দিকে তাকাচ্ছে। ওনার চোখে কেমন অবিশ্বাস! ঠিক বিশ্বাস করতে পারছে না। এমন পরিবেশ কোনো ছেলে মদ না খেয়ে বসে থাকে!
নীরু কে এ জন্য বেশ খুশি মনে হচ্ছে!
আমাদের সাথে আরো কয়েকজন পার্টিতে যোগ দিয়েছেন। সবাইকে মাছের বারবিকিউ দেয়া হয়েছে। মাছগুলো খেতে ভালোই হয়েছে।
লিটন ভাইয়ের সারপ্রাইজ দেখা গেল। ধবধবে সাদা পাঞ্জাবি পরা, মাথায় বড়ো চুল, গলা পর্যন্ত দাঁড়ি রাখা এক তাম্রিক জোগাড় করেছেন। উনি নাকি হাত দেখে সব বলে দিতে পারে!
লিটন ভাই ঘোষণা দিলেন, “যারা চান ভাগ্য পরীক্ষা করতে পারেন।”
প্রথমে নীলা আপু গেলেন বাবার কাছে। বাবা চোখ বন্ধ করে বসে আছেন। সবাই ওনার দিকে চেয়েছে আছেন। চোখ না খুলেই নীলা আপুর হাত ধরলেন। হাতের তালুর ওপর একটা আঙুল কিছুক্ষণ নাড়িয়ে বললেন,” তোর সামনে সুসংবাদ আছে! তোর অনেকদিনের ইচ্ছে পূরণ হবে।”
নীলা আপুর চোখমুখ খুশিতে জ্বলজ্বল করে উঠলো! ব্যাপারটাতে সবাই বেশ মজা পাচ্ছে। নীলা আপুর দেখাদেখি নীরু গেল হাত দেখাতে। মেয়েরা মনে হয় এসব খুব বিশ্বাস করে।
নীরুর হাতেও একইভাবে আঙুল নাড়াল। হঠাৎ করে নীরুর দিকে বড়োবড়ো চোখ করে তাকিয়ে বললেন, “তোর সামনে বড়ো বিপদ! ” নীরুর চোখে ভয়ের ছাপ!
চলবে–
® নাবিল মাহমুদ