চারুর নাম্বার বন্ধ! বেশ কয়েকবার কল দিলাম না নাম্বার বন্ধ! কী করব বুঝতে পারছি না। এরমধ্যে খাবার নিয়ে এসেছে।
সবাই খাবার খাচ্ছে। ছোটো শালিরা খাবার জন্য অনুরোধ করছে। ভিতরে কেমন একটা অস্থিরতা কাজ করছে! কী হবে বুঝতে পারছি না। কিন্তু এদের মধ্যে কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়া নেই! সব যেন স্বাভাবিক চলছে!
একটা সময় মনে হলো ধুর! আত্মীয় মনে হয় ভুয়া কথা বলে আমার সাথে মজা করেছে। যতই কিছুই হবে না বলি না কেন ভিতরে একটা চিন্তা ঠিকই কাজ করছে!
বন্ধুর তাগাদা এবং ছোটোদের সাথে কথা বলে নরমাল থাকার চেষ্টা করে যাচ্ছি।
খাওয়া-দাওয়ার পর্ব শেষ হওয়ার পর আমার ডাক পড়ল মুরুব্বিদের ওখানে। দেখলাম কাজী সাহেব চলে এসেছেন।
চারুর বাবা আরও আত্মীয় স্বজনরা সবাই হাজির। মুরুব্বীরা দেন মহর নিয়ে আলোচনা করছেন। আমার বাবা নেই মামাই গার্জিয়ান। মামার দেন মহর নিয়ে এত মাথা ব্যথা নাই। আমার দুঃসম্পর্কের নানাই ওনাদের সাথে কথা বলছেন। আমি চারপাশে সেই কমন আত্মীয় কে খুঁজছি। না, তাকে দেখা যাচ্ছে না!
ত্রিশ লাক্ষ দিয়ে শুরু হয়ে মাছ বাজারের মতো ধরাধরি চলছে ! আমার মনে হচ্ছে এরা ইচ্ছে করে একটা ঝামেলা পাকাতে চাচ্ছে যেন বিয়েটা বানচাল করা যায়! তর্ক যুদ্ধের মধ্যে কেউ একজন বলেই বসল দিলাম না এমন ছেলের কাছে মেয়ে! সম্ভবত উনি চারুর চাচতো চাচা হবে। চারুর কোনো আপন চাচ নাই।চারুর বাবা উনাকে থামালেন।
পনেরো লাক্ষে নেমে থেমেছে দেন মহর! আর কমানো যেত কিনা জানি না, নানা মেনে গেছেন! উনাকে খুব খুশি খুশি লাগছে!
শেষপর্যন্ত সব আশংকা দূর হয়ে বিয়েটা হয়েই গেল! আমি হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম!
যা ভয়টা পেয়েছিলাম, বলার মতো না।
বিয়ে শেষে দাঁড়িয়ে সবাইকে সালাম দিলাম। একে একে চারুর আত্মীয় স্বজন সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন চারুর মামা।
সবাইকে আমাদের আনা মিষ্টি বিতরণ করা হলো। সবার মুখে হাসি! আমি ভাবছি আত্মীয় আমার সাথে এমন একটা খেলা কেন খেলল! কেমন একটা ভয়ের মধ্যে ছিলাম পুরোটা সময় জুড়ে!
বিয়ে হতে হতে সন্ধ্যা হয়ে গেছে। চারুদের বাড়ি থেকে শ্যামলি যেতে ঘন্টা দুয়েক লেগে যাবে। আর কিছু আনুষ্ঠানিকতা সারতে রাত হয়ে গেল। চারু আজ খুব সেজেছে! মুখটা ভালো করে দেখার সুযোগ হয়নি। বিদায় বেলা চারুর বাবা ওর হাত আমার হাতে তুলে দিয়ে বললেন,” আমার মেয়েটাকে আজ থেকে তোমার হাতে তুলে দিলাম। দেখে রেখ বাবা।”
আমি কী বলব বুঝতে পারছি না। এ সব সময় কী বলতে হয় জানি না, প্রথমবার বিয়ে করছি তো তা-ই কিছুই জানা নেই।
মামা বললেন,” বিয়াই সাহেব কোনো চিন্তা করবেন না। আজ থেকে ও আমাদের মেয়ে।”
এ সময়টাতে খুব খারাপ লাগছে! একটা মেয়ে সবাইকে ছেড়ে পারি দেয় অজানা জায়গায়, অচেনা একজন মানুষের কাছে! চারুর সাথে কয়দিনের পরিচয় আমার? কতটুকু জানে ও আমায়? শুধু কিছু শব্দ আর একটা সই দিয়ে ওকে নিয়ে যাচ্ছি! ভাবতে কেমন লাগে! এখন থেকে এ মেয়েটার সব দায়িত্ব আমার! যাকে কিছুদিন আগে চিনতাম না!
একটা গাড়িতে আমি চারু আর ছোটো বোন উঠলাম। মামা আর কয়েকজন আত্মীয় স্বজন অন্য গাড়িতে। বাসায় আসতে আসতে রাত দশটা। পুরোটা পথে চারু কোনো কথা বলেনি! পানি বা কোনো কিছু লাগবে কিনা জিজ্ঞেস করেছি, মাথা নাড়িয়ে না বলেছে শুধু ।
ছাদের চিলেকোঠায় আমাদের বাসর ঘর আয়োজন করা হয়েছে। এটা রুবিনার কাজ। ব্যাপারটা আমার কাছে ভালোই লেগেছে! চারুর সাথে ওর দুজন মামাত বোন এসেছে।
বন্ধুবান্দব সবাইকে বিদায় দিয়ে ছাদে যাব। চারু মনে হয় একা আছে উপরে। উপরে যাওয়ার সময় ছোটো বোন রুবিনা আমায় টেনে ওর রুমে নিয়ে গিয়ে গেল। ওকে কেমন উত্তেজিত লাগছে! গলা খাদে নামিয়ে বলল, “ভাইয়া ভাবিকে আজ কেমন জানি অন্যরমক লাগছে!”
“কেন কিছু বলছে নাকি তোকে?”
“না তা বলেনি।”
“তাহলে?”
“ঠিক বুঝতে পারছি না। তুমি যাও গেলেই বুঝবা।”
মাথায় একটা চাটি মেরে বললাম, “যা ভাগ তোকে এত পাকনামি করতে হবে না।”
উপরে এসে দেখি। ছোটো রুমটাকে ফুল দিয়ে খুব সুন্দর করে সাজিয়েছে। মনে হচ্ছে ফুলবাগানের মাঝে বসে আছে চারু! মাথায় লম্বা ঘোমটা দেয়া।
আমার কেমন কেমন লাগছে! লম্বা গোমটা দেয়া মেয়েটা আমার! সত্যি বলতে একটু একটু লজ্জাও লাগছে! নীরব হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। কী বলব ঠিক বুঝতে পারছি না! ছবির মতো নতুন বউয়ের গোমটা তুলে দেখব নাকি।
যদিও মোবাইলে কথা বলার সময় তুমি করে বলতাম এখন তুমি বলতে বাধছে! তাই আপনি করে শুরু করলাম,” আপনি চেঞ্জ করে আসতে পারেন। এত ভারি শাড়িতে খারাপ লাগছে নিশ্চয়ই! “
চারু গোমটা না তুলো মাথা দুলিয়ে না বলল। আবার নীরবতা! এবার চারুর শব্দে নীরবতা ভাঙলো, “তুমি দাঁড়িয়ে আছ কেন? “
বাঃ! চারুর কথায় কেমন সাহস বেড়ে গেল। চারুর কাছে এসে দেখি, চারু নিজেই গোমটা তুলে বসে আছে। চারুর মুখের দিকে তাকিয়ে আমার সারা দেহে বিদ্যুৎ বয়ে গেল। এত চারু না! যদিও ভারি সাজের কারণে বুঝতে একটু কষ্ট হচ্ছে! তবুও আমি নিশ্চিত এ চারু নয়। অন্য কেউ!
জিজ্ঞেস করলাম,” কে আপনি?”
চলবে–
কনে বদল পর্ব ২
® নাবিল মাহমুদ