গ্রাম বাংলার মজার গল্প উকুন
সফিক তার গার্লফ্রেন্ডকে কল দিয়ে বললো,
– তোমার মাথায় কি উঁকুন আছে?
– না তো, আমার মাথা একদম পরিষ্কার, ওসব কেন আমার মাথায় থাকবে৷ তুমি জানো না আমি কতো যত্ন করি আমার চুল।
– হ্যাঁ জানি তো, কিন্তু আমার তো মনটা খারাপ হয়ে গেল।
– কেন কি হয়েছে?
– একটু আগে রেললাইন ধরে হাঁটছি তখন দেখি একটা লোক তার স্ত্রীর মাথার উঁকুন বের করে দিচ্ছেন।
– তারপর?
– আমার কাছে এতটা রোমান্টিক লাগলো, খুব ভালো লাগছে। আমি তাদের সঙ্গে কথা বললাম তখন আরও ভালো লাগলো।
– তাই নাকি?
– হা। তারপর মনে মনে ভাবলাম আমার স্ত্রীর যদি মাথায় উঁকুন থাকতো তাহলে আমিও তো তার মাথা থেকে উঁকুন বের করতাম। দুজনেই হাসতে হাসতে গল্প করতাম।
– সত্যি বলছো?
– হা সত্যি বলছি কিন্তু তোমার তো উঁকুন নেই।
– একটা কথা বলি?
– হা বলো।
– আমি মিথ্যা কথা বলেছি। আসলে আমার মাথা ভর্তি উঁকুন, কতো চেষ্টা করছি কিন্তু কিছুতেই কমাতে পারি না। তোমাকে মিথ্যা বলছি কারণ তুমি যদি আমাকে পঁচা মনে করো।
– আমি আগেই সন্দেহ করেছিলাম তোমার মাথায় উঁকুন আছে। কিন্তু তুমি তো কোনদিনই স্বীকার করবা না তাই কৌশলে স্বীকার করালাম। পরবর্তী দেখা হবার আগেই মাথার উঁকুন শেষ করবা। দরকার হলে মাথা ন্যাড়া করে ফেলবা।
গার্লফ্রেন্ড তখন কি ধরনের ইমোজি দিয়ে কষ্ট প্রকাশ করবে সেটা ভাবছে।
সমাপ্ত।
রম্যগল্প।
উঁকুন।
মোঃ সাইফুল ইসলাম সজীব।
উকুন মারার উপায়
রম্য
উকুন ক্যাঁচাল
রাতে ঘুমাইতে গিয়া খেয়াল করিলাম মেয়ে ঘস ঘস করিয়া মাথা চুলকাইতেছে। বাচ্চা মেয়ে খুশকী হবে ক্যান? মনে হয় গরমে,ঘামে.. আপাতত ঘুমা, আগামীকল্য সকালে চেকিং হইবে।
পরের দিন স্কুল ফেরতা মেয়েকে পাকড়াও করিলাম। দেখি কি নিয়া আসিয়াছো স্কুল থেকে? মনে ভয় .. ইয়ে মানে নিজের অভিজ্ঞতার ঝুলি তো ভরা.. আরেকটু হইলেই উপচায় পড়ে আরকি!
যেইখানে বাঘের ভয় সেই খানেই সন্ধ্যা হয়! ইয়া মাবুদ, মাথা বোঝাই উকুন! ইয়াক থু! দেখার সাথে সাথে আমার মাথাও সিরসির করা শুরু করিল। উকুন বেড়াইতে আসিবে বাসায় আর পাড়া প্রতিবেশীর বাসায় ছাও দিবে না, তাই কি কভু হয়!
ও আম্মা.. আম্মাগো বলিয়া হামলাইয়া পড়িলাম আম্মার কান্ধে। আম্মা শুধান কি হইয়াছে? কহিলাম সব্বোনাশ হইয়াছে আম্মা। বাসায় রক্তচোষা ঢুকিয়াছে। কি? আম্মার চিল্লানীতে আমিই ভয়ে ভীত হইয়া গেলাম। আরে থামো থামো, এই রক্তচোষা সেই রক্তচোষা না। উকুন .. স্কুল হইতে কন্যা বিনা পয়সায় এই জিনিস আমদানী করিয়াছে। অখন উপায়?
ও.. উকুন! তাই বল, আমিতো ডরাইয়াছি। আম্মার কথায় স্বস্তির আভাস। যাক পরের কয়দিন সাঁড়াশী অভিযানে অগুনতি বড়, মাইজ্যা আর ছোট রক্তচোষার দল নিহত হইল। আমিও খুশি, মেয়েও আরামে ঘুমায়। কিন্তু এই বদের দল তো অত সহজে পরাজয় মানব না। কয়দিন ঝিমানীর পর আবার এ্যাটাক! ইয়াল্লা, আমারে বাঁচাও।
চিরুনী অভিযান ব্যর্থ। দোকান থিকা খুঁইজ্যা পাইতা ইংলিশ শ্যাম্পু আনিলাম। ইহা নাকি অব্যর্থ মহৌষধ উকুন নির্মূলে। মাগার কাজ হইল না। জামাই রাতে বাসায় ফিরা দেখে কন্যাদ্বয় ঘুমের মধ্যে ঘসঘস করিয়া মাথা চুলকায়। চোখ গরম করিয়া আমার দিকে তাকিয়ে বলে, ন্যাড়া করাইয়া দাও না কেন?
আমি চোরের মত মুখ করিয়া কই, আহা! এত লম্বা চুল মাইয়্যার, কাইট্যা ফালামু? পাষান! তুই একটা পাষান! কথাডা মনে মনেই কই, মুখে কইতে ডর লাগে!
আরো কয়দিন চলল এম্নে। শেষ মেষ যমুনার জল ম্যালাদূর গড়াইলো। শ্বশুর আব্বা ও ফোন কইরা কয়, ন্যাড়া কইরা দ্যাও। মনে মনে কই, এই দুইডারে না হয় দিলাম। মাগার এই বুইড়া বয়সে আমি ন্যাড়া হমু? ই..ই..ই…
অবশেষে দুই মাইয়ার কান্নাকাটির এপিসোড আর নাপিত গোপালের হাতে মস্তক মুন্ডন! এরা দুইজন না হয় নিস্তার পাইল কিন্তু আমি? আব মেরা কেয়া হোয়েগা রে কালিয়া বলি আর আয়নায় নিজের ন্যাড়া সুরত কল্পনা করি।
ইউরেকা! ইন্টারনেট হাতে দো দুনিয়া সাথে। শুরু হইল খোঁজ-দ্যা সার্চ!
ইউ টিউব ঘেটে বের করলাম কি কি উপায়ে উকুনের বংশ করা যায় ধ্বংশ! কয়েকটা এপ্লাই করলাম, কাজ হইলো না। এক রাতে উকুনের কামড়ানিতে অতিষ্ঠ হইয়া নবোদ্যমে সার্চ দিতে পাইলাম আজব তরীকা! পেট্রোলিয়াম জেলী! উহা বেশী পরিমানে লাগাইয়া এক রাত্রি রাখিলে নাকি বেচারারা সাফোকেটেড হইয়া অক্কা পাইবে। সাত-পাঁচ না ভাবিয়া আয়নার সামনে বসিয়া যত্ন করিয়া বড় কৌটা খালি করিলাম। জামাই আসিয়া কয়, কি দিছো মাথায়?
আহ্লাদে আটখানা হইয়া যখন বৃত্তান্ত বলিলাম সে এমন একটা লুক দিল! ঠিক ঠিক তার চক্ষের ভাষা পড়তে পারলাম। “ বলদা মাইয়ায় করছে কি!”
যাউক উকুনের নিঃশ্বাস বন্ধ হইল কিনা জানিনা তয় আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হবার যোগার। গরমে হাসফাঁস করি আর মনে মনে বলি, পাঞ্জেরী সকাল হবার আর কত দেরী?
সকাল এলো, এরপর শুরু হইল যজ্ঞ। শ্যাম্পু সাবান কিছু দিয়াই আর পেট্রোলিয়াম জেলি দূর হয় না। শেষে উপায়ান্তর না দেখিয়া আবার গুগল মামার শরনাপন্ন! ডিশ ওয়াশিং লিকুইড দিয়া যাইতে পারে! খোদা, সে এক নাজেহাল দশা।
মোটামুটি সাত দিন আমার মাথার চুল ঝাড়ুর শলার মত সোজা হইয়া ছিল। আর এই সাতদিন কতই যে বিদ্রুপপূর্ণ হাসি সহিতে হইয়াছে তাহা আর না বলি।
সারকথা হইল, ইউ টিউব বা গুগল করিয়া সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করে এমন ওয়ান এন্ড অনলি বেকুব আমি!
লুনা_নুসরাত
উকুন মারার ঘরোয়া উপায়
ছোটবেলা থেকে আমার মায়ের ধারনা আমি তিনটা জিনিস ভালো পারি। এক উকুন বাছতে, দুই পাকা চুল বাছতে, তিন সুইয়ের মধ্যে সুতা ঢুকাতে। আমি বাবার পাকা চুল বাছতাম দশ পয়সা রেটে। একটা পাকা চুল দশ পয়সা। চুল বাছতে বাছতে আমার বাবা ঘুমিয়ে পড়তেন। পরে উনার কাছে পয়সা চাইলে উনি কঠিন কঠিন ট্র্যান্সলেশন ধরতেন। ট্র্যান্সলেশন কর
আমি বাবার পাকা চুল বাছিতে বাছিতে উনি ঘুমিয়ে পড়িলেন অতঃপর আমি উনার কাছ থেকে পারিশ্রমিক দাবী করিলাম।
আমি ট্র্যান্সলেশনের ভয়ে পয়সা চাওয়া বাদ দিলাম।
একদিন মা বলছে
শুন উপরের তালার নতুন ভাড়াটিয়া ভাবীটা এসেছে। উনার মন খারাপ। তুই যা মজার মজার কথা বলে উনার মন ভালো করে দে।
আমি একটু নড়েচড়ে বসলাম।
উনার মন খারাপ কেন?
আর বলিস না। উনার মেয়েকে কোন ছেলে প্রেম নিবেদন করে চিঠি দিয়েছে। বেচারীর তাই ভীষণ মন খারাপ। আমিও বলি কোন বদ ছেলে যে এই কাজ করেছে। ওর মা বাবার উপর ঠাডা পড়ুক।
কি উল্টা পাল্টা কথা বলতেছো। ছেলেটার পরিবার এবং ছেলেটাতো খুব ভালো হইতে পারে। উনি ঐ ছেলের সঙ্গে মেয়েকে প্রেম করতে দিলেইতো পারে।
কি কস? তোর মাথা ঠিক আছে? ছেলের ভালো পরিবার তুই জানোস কেমনে? আর মেয়েকে কি প্রেম করতে দিবে। মেয়ে পড়ে ক্লাস ফোরে।
আরে কোন মেয়ের কথা বলতেছো। আমি উনার বড় মেয়ের কথা বলতেছি।
ও বুঝছি। ঐটাতো উনার মেয়ে না। কাজের মেয়ে। সুন্দর দেখতে। ফিটফাট জামা পড়ে।
ঐদিন না বললা উপর তালার ভাবীর মেয়েটা সংসারী হবে। দেখলেই বুঝা যায়।
আরে আমি কই কি আমার ছেলে বুঝে কি? সেদিন উনার বাসায় গেলাম। দেখলাম মেয়েটা হাড়ি পাতিল দিয়ে খেলতেছে। তাই বলছিলাম আর কি। কোন ছেলে যে এমন একটা কান্ড করলো। ওর মাথার উপর ঠাডা পড়ুক।
আম্মা তুমি উল্টা পাল্টা ইনফরমেশন দিবা আর বলবা আমার মাথার উপর ঠাডা পড়ুক তাহলে হইলো কিছু।
সেই কথা শুনে আমার মা দিয়েছে আমাকে দৌড়ানি।
আমার মা আমার মতোই অদ্ভুত।
সেদিন আমাকে ডেকে আমার হাতে টাকা দিয়ে বলে শুন ভালো দেখে দুইটা হোন্ডার হেলমেট কিন।
আমি খুশীতে বাকবাকুম। আমার মা এই ঈদে আমাকে বাইক উপহার দিবে। আমার সারাজীবনের স্বপ্ন। আমি আমার বাইকের পেছনে আমার প্রেমিকাকে বসিয়ে ঘুরে বেড়াবো। প্রেমিকা পেছন থেকে আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাখবে। আমি গান গাইবো
এই পথ যদি শেষ না হয় তবে কেমন হতো তুমি বলোতো।
আমি সিদ্ধান্ত নেই আমার প্রেমিকা কুলসুম বেগমকে এই ঘটনা জানাতে হবে। আমি কুলসুমকে ফোন দিলাম।
কুলসুম আমার ফোন ধরেই।
এই শুনো বাসায় আসো। তোমার পাঞ্জাবী নিয়ে যাও।
কুলসুমের বাপ সেই লেভেলের বড়লোক। আমার স্বপ্ন এই বাড়িতে আমি একদিন ঘর জামাই হবো। কুলসুমের বাড়ির দারোয়ানের সঙ্গে আমার খায় খাতির ভালো। প্রথম দিকে আমাকে ঢুকতে দিতো না। এরপর একদিন তারে সিগারেট সাধলাম। মাঝে মধ্যে চা, নাস্তা খাওয়াই। এখন বন্ধুত্বপূর্ন সম্পর্ক। আমাকে দুলাভাই ডাকে।
কুলসুম আমার সামনে অনেকগুলো পাঞ্জাবী ধরলো।
কোনটা নিবে?
আমি ভীষণ খুশী। কুলসুম আমার জন্য এতগুলো পাঞ্জাবী নিয়ে এসেছে। অবশেষে আমার হলুদ রঙয়ের পাঞ্জাবী পছন্দ হলো। হিমু হিমু একটা ভাব আছে। কুলসুমকে আমার বাইকের ঘটনা বললাম। শুনে কুলসুম মহা খুশী। শুনো হলুদ রঙয়ের পাঞ্জাবীর সঙ্গে হলুদ রঙয়ের হেলমেট কিনবে।
কুলসুমের আর তর সইছে না।
সে ফেসবুকে পোষ্ট দিতে গেলো।
এইবার বয়ফ্রেন্ডের বাইকে চড়ে ঈদের দিন ঘুরে বেড়াবো।
বের হওয়ার সময় দারোয়ানের সঙ্গে দেখা।
দুলাভাই কোনটা নিছেন?
আমি পাঞ্জাবী দেখালাম।
যাক রঙটা কিন্তু ভালা। আপনারে মানাইবো। এইবার পাঞ্জাবী বিতরণ শুরু হইবো।
বাহ। আমার জন্য আটকিয়ে ছিলো?
হুম দুলাভাই। আপনি কোনটা নেন। এইজন্য আপা বলছে আপনি পছন্দ করার পরে বিতরণ করতে। যাকাতের পাঞ্জাবী হইলেও কিন্তু দুলাভাই কোয়ালিটি ভালো। ধুইলেও রঙ উঠবো না।
আমার অবশ্য আগেও সন্দেহ হয়েছিলো কুলসুম আমাকে যাকাতের পাঞ্জাবী দেয়। কিন্তু ঘরজামাই হওয়ার লোভে সব সহ্য করতে হচ্ছে।
আমি মন খারাপ করে বাইকের হেলমেট কিনতে গেলাম।
আমার জন্য একটা হলুদ রঙয়ের হেলমেট কিনলাম আরেকটা কুলসুমের জন্য গোলাপী রঙয়ের হেলমেট কিনলাম। মনটা কিছুটা ভালো হলো।
বাসায় এসে মাকে হাক ডাক শুরু করলাম।
আম্মা বাইক কই। বাইকের চাবি দাও। আমি হেলমেট কিনে নিয়ে আসছি। এক চক্কর দিয়ে আসি।
কি কস? কিসের বাইক? তোরে তো হেলমেট কিনতে কইলাম চীনের রকেটের অংশ নাকি পৃথিবীতে পড়বো। কোন সময় তোদের মাথার উপর পড়ে সেই চিন্তায় আমার ঘুম নাই। আমিতো আর বাইরে যাই না। তুই আর তোর বাপ যাস। এখন থেকে দুইজন হেলমেট পইড়া বের হবি। সবসময় হেলমেট পইড়া থাকবি। চীনরে কোন বিশ্বাস নাই।
দুঃখে আমার চোখে পানি আসতেছে। এখন আমি কুলসুমকে কি বলবো?
আমিনুলের_গল্প_সমগ্র
উকুন মারার শ্যাম্পু ও উকুন মারার ঔষধ
আমার স্ত্রী আয়েশা প্রায়ই মাথা চুলকাতে চুলকাতে কানের কাছে ঘ্যানঘ্যান করে, “শাদবিন আমার মাথা থেকে উঁকুন এনে দাও।”
আমার খুবই বিরক্ত লাগলেও আমি ঘরের দরজা জানালা বন্ধ করে তার মাথায় বিলি কেটে দেই যেন আশেপাশের বিল্ডিং থেকে কেউ এই অদ্ভুত দৃশ্য না দেখেন। একদিন অনেকক্ষণ বিলি কাটার পরও যখন আমার চোখে কোনো উঁকুন ধরা পড়ল না তখন আমি হতাশ গলায় বললাম, “তোমার চুলে একটা উঁকুন তো দূরের কথা কোনো খুশকিও নেই।”
আয়েশা আহ্লাদী গলায় বলল, “এত সুন্দর করে চুলে বিলি কাটো তুমি আমার কী যে ভালো লাগে।”
আমি তখন ঠোঁট বাকিয়ে বললাম, “এই জন্য মিথ্যা বলবে?”
আয়েশা আমার গা ঘেঁষে ঘার ঘুরিয়ে চোখ বন্ধ করে তাকিয়ে রইল। আমি বললাম, “তোমার চোখ বন্ধ কেন?”
“তোমার শরীরের ঘ্রাণ আমার কী যে ভালো লাগে।”
“আর কী কী ভালো লাগে শুনি?”
“তুমি যখন বাসায় থাকো না, সব কাজকর্ম করে আমি তোমার শার্ট নিয়ে বোকার মতো বসে থাকি। তুমি কলিংবেলে টিপ দেওয়ার সাথে সাথে সেই শার্ট আমি তড়িঘড়ি করে হেঙ্গারে ঝুলিয়ে ফেলি। তোমাকে ইচ্ছে করে প্রতিটা সময় প্রতিটা মুহূর্তে আমার পাশে বসিয়ে রাখি।”
“এত ভালোবাসো তুমি আমাকে?”
আয়েশা চোখ খুলে বলল, “প্রেম কী? ভালোবাসা কী? বিয়ের আগেও আমি জানতাম না। এখনও জানি না। শুধু মনে হয়, তুমিই আমার অস্তিত্ব, তুমিই আমার অনুভূতি, তুমিই আমার আয়না।”
“আমি তোমার আয়না?” – বলে শেষ করার আগেই আয়েশা আমার আরও কাছে এগিয়ে এল। তার উষ্ণ নিঃশ্বাস আমার নাকের ডগায় অনুভূতি হলো। ঠিক তখনই আমার মনে হল, “তার ঠোঁটের এমন ছোঁয়া পেতে যুগযুগ ধরে পৃথিবীতে আমি বেঁচে থাকতে রাজি আছি।”
বেশকিছুদিন পরের ঘটনা।
অফিসের কিছু জরুরি কাগজপত্র গুছাতে দুপুরের খাবার খাওয়ার কথাও ভুলে গিয়েছিলাম। আমাদের অফিসের ওয়াশরুমটা যেমন দীর্ঘ, আয়নাটা তেমন বড়। সেদিন ক্লান্তি ভাব দূর করতে ওয়াশরুমে হাতমুখ ধুয়ে আয়নার দিকে তাকাতেই আয়শা আয়নার ভিতর থেকে রিনরিনে গলায় বলল, “এ্যাই শাদবিন!”
আমি কিছুক্ষণ বোকার মতো আয়নার সামনের দাঁড়িয়ে রইলাম। আয়েশা সবুজ পাড়ের লাল শাড়ি পড়ে আছে। কপালে লাল টিপ। হাতে কাঁচের চু্ঁড়ি পড়তে পড়তে সে ব্যস্ততার ভঙ্গিতে বলল, “বোকার মতো দাঁড়িয়ে না থেকে কথা বলো তো। বেশীক্ষণ থাকতে পারব না।”
আমি কাঁপা গলায় বললাম, “তুমি এখানে কেন? আমার তো ভয় করছে।”
“তোমাকে সেদিন না বললাম তুমি আমার আয়না, তাই আমিও তোমার আয়না। আয়না আয়নায় কাটাকাটি” – বলেই সে খিলখিল করে হাসলো।
আয়েনার সামনে মুখ বাড়িয়ে সে ফিসফিস করে বলল, “ওয়াশরুমে আর কেউ নেই, চট করে একটা চুমু খেয়ে ফেল। জলদি!”
আমি জ্ঞানশূন্য তার কথামতো চোখ বন্ধ করে (চোখ খোলা রেখে আমি চুমু খেতে পারিনা) আয়নায় আয়েশার ঠোঁটে চুমু খেলাম। সাথে সাথে আমার কলিগ আফনান সাহেব ওয়াশরুমে ঢুকে বললেন, “শাদবীন সাহেব, কী করছেন আয়নার সামনে।”
আমি আয়নার সামনে তাকিয়ে দেখি আয়েশা উধাও। অথচ তার লাল লিপস্টিকের দাগ আয়নায় লেগে আছে। আমি দ্রুত বেসিঙের ট্যাপ ছেড়ে আয়নায় ঘষা দিলাম। আফনান সাহেব কৌতূহলী চোখে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন।
সেদিন আমার সাথে কী ঘটল আমি মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝলাম না। মনে মনে ভাবলাম, দুপুরে কাজের প্রেসার আর ক্ষুধার্ত অবস্থায় আমার মাথা গুলিয়ে গিয়েছিল। রাতে বাসায় ফেরার পর আয়েশাকে দেখলাম সাদামাটা সেলোয়ার-কামিজ পড়া। সে ভাত বাড়তে বাড়তে বলল, “জানো আমার জ্বর জ্বর লাগে।”
“কখন থেকে?”
সে জবাব না দিয়ে চেয়ার টেনে পাশে বসল। আমি বললাম, “তুমি খাবে না?”
আয়েশা মুরগির মাংস আমার প্লেটে দিয়ে বলল, “আমার ক্ষিধে নেই।”
আমি এক লোকমা মুখে দেওয়ার সাথে সাথে সে করুন চোখে বলল, “কেমন হয়েছে খেতে?”
“ভালোই তো।”
“শোনো না, একটা কথা যদি বলি রাগ করবা নাতো?”
আমি হাসিমুখে বললাম, “রাগ কেন করব?”
“বিয়ের আগে থেকে আমি আবার ওঝা কবিরাজদের সাথে টুকটাক যোগাযোগ রাখতাম। বিয়ের পরও রাখি। এইবার এক ওঝার কাছ থেকে আয়না পড়া আনার পর থেকে আমার শরীর খারাপ হয়ে যাচ্ছে।”
আমি সাথে সাথে কাশতে কাশতে শুরু করে বললাম, “আয়না পড়া?”
আয়েশা পানি এগিয়ে দিয়ে বলল, “হ্যাঁ। তুমি এত অবাক কেন হচ্ছ? ওই আয়নায় আমি সাত দিন ভালো করে মুখ ধুয়ে মুখ দেখলে তুমি আমাকে ছাড়া এই জীবনে অন্য কাউকে ভালোবাসবা না। কিন্তু আজ সাত দিন হওয়ার সাথে সাথে আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছি।”
আমি ভুরু কুঁচকে বললাম, “এগুলো কেমন ধরনের পাগলামী? আমি এমনিতেই তোমাকে ছাড়া কাউকে ভালোবাসতাম না। এসব আয়না ফায়না আনতে হলো কেন?”
“ভয় লাগে বুঝলে? বড্ড ভয় লাগে। আমার যে বান্ধবী টিয়া? ওর বয়ফ্রেন্ডকে সাত বছর ভালোবেসে বিয়ে করল। সাত মাসও স্বামীর ঘর করতে পারল না। কেমন লাগে এসব শুনলে একবার ভাবো?”
আমি খাওয়া রেখে উঠে হাত ধুতে ধুতে বললাম, “তুমি আমার সাথে কথা বলবে না।”
আয়েশাও সাথে সাথে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, “প্লিজ শাদবীন খাওয়া শেষ করে ওঠ। আমি জ্বর নিয়ে কষ্ট করে রান্না করেছি। আজ গ্যাস ফুরিয়ে গিয়েছিল। বাড়িওয়ালার ছাদে একটা লাকরির চুলো আছে সেখান থেকে রান্না করে এনেছি।”
আমি কঠিনস্বরে বললাম, “যতদিন তুমি ওঝা কবিরাজের কাছে যাওয়া বন্ধ না করবে আমি তোমার রান্না আর খাবো না।”
আয়েশা কাঁদো কাঁদো স্বরে বলল, “এমন করে বলিও না প্লিজ।”
আমি শোবার ঘরে চলেই যাচ্ছিলাম হঠাৎ লক্ষ করলাম আয়েশা দাঁড়িয়ে ডানে-বামে টলছে। আমি তার দিকে তাকিয়ে কিছু জিজ্ঞাসা করার আগেই সে মাথা ঘুরে ফ্লোরে পড়ে গেল।
আমি তাকে সেই অবস্থায় বিছানায় শুয়ে দিলাম। আয়েশার মাথায় পানি ঢালার বিশ মিনিট পর তার জ্ঞান ফিরল। তার সমস্ত শরীর ঝিকে জ্বর এসেছিল। কাপড় ভিজিয়ে তার শরীর মুছে দিলাম। বালিশ খাটের সাথে এলিয়ে তাকে আধশোয়া অবস্থায় বসালাম। সে হাসিমুখে বসে বলল, “এখন আবার ডাক্তার ডাকতে যেও না। জ্বর ছেড়েছে।”
আমি পাশে বসে বললাম, “খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। এত রাতে কাকে ডাকব? কাকে ফোন করব মাথায়, আসছিল না কিছু।”
আয়েশা বলল, “তুমি আমার উপর রাগ করিও না। আমি একটু এমন তাতো তুমি জানো। সবসময় ছোট ছোট ব্যাপারে ভয়ে ভয়ে থাকি। আর কখনও আমি ওঝা কবিরাজের কাছে যাব না।”
আমার শরীরও প্রায় ভিজে গিয়েছিল, আমি কাপড় পাল্টে কালো টি-শার্ট’টা পড়তে নিচ্ছিলাম। সাথে সাথে আয়েশা জোড়ালো কন্ঠে বলল, “ওটা পড়িও না। আবার কী না কী হয়? ওই টিশার্টও আমি কবিরাজের কাছ থেকে ফুঁ দিয়ে এনেছিলাম।”
আমি তার কোমল মুখের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললাম। সেও মুচকি করে হাসল।
গভীর রাত। আয়েশা গভীর ঘুমে মগ্ন। রাত তিনটার দিকে আমার ঘুম ভেঙে গেল। আমি ওয়াশরুমে যেয়ে চোখেমুখে পানি দিলাম। বাথরুম থেকে বের হবো সেই মুহূর্তে হঠাৎ পিছনের আয়েনার ভিতর থেকে কেউ আয়েশার কন্ঠে বলল, “তুমি এমন কেন গো? সবসময় খালি গায়ে থাকো। আমি যে কালো টি-শার্ট’টা দিয়েছিলাম ওটা পড়তে পারো না? ওটায় তোমায় খুব মানায়।”
আমার পিছনে ফেরার সাহস হলো না। ঝড়ের গতিতে সেখান থেকে দ্রুত বের হয়ে এলাম।
“আয়েশার আয়না”
Shadbin ShaQil