# এটা কিন্তু গল্প নয় !
একটি প্লেন ফেল ও একটি বিয়ে পাশের কাহিনী
আজ থেকে ২৭ বছর আগর কথা । সে দিনটা ছিল নভেম্বর মাসের ১১ তারিখ। আমাদের উত্তর বঙ্গের গাইবান্ধায় অলরেডি তখন বেশ শীত পরে গিয়েছে। আমি সেদিন অন্যান্য দিনের মত বিকেল বেলা গিয়েছি আমাদের সংগঠনের নাটকের রিহার্সালে। রিহার্সাল থেকে ফিরতে ফিরতে সেই সন্ধ্যা আর শীতের সন্ধ্যা একটু তাড়াতাড়ি ঝুপ করেই নেমে আসে।
রিহার্সাল শেষ করে রিক্সা করে বাসার সামনে এসে নামতেই দেখলাম , আমাদের বাসার সামনের মাঠে একটা সাদা কার দাঁড়ানো । দেখে ভীষণ অবাক আর কৌতুহলী হলাম । এই মফস্বলে কারও বাসায় কার আসবে ভাবতেই পারছিনা । আমার আত্বিয় স্বজন মানেই রিক্সার প্যাসেঞ্জার। আমি গাড়ির ভিতর উঁকি ঝুঁকি দিয়ে ব্যাপারটা দেখার চেস্টা করি। দেখলাম গাড়িতে কেউ নেই।তবে আমাদের ড্রয়িং রুমে আলো জ্বলছে , কিছু কথাও শোনা যাচ্ছে । তার মানে আমাদের বাসাতেই কেউ এসেছে , আমি কাধে ঝোলাব্যাগ নিয়ে আমাদের বাসার আলাদা অন্য গেট দিয়ে ভিতরে এসে ঢুকি।
আমি ঘরে ঢুকতেই আমার ভাবি আমাকে এক পাশে টেনে নিয়ে গিয়ে বলে যে , সেই ব্যাক্তি এসেছে সাথে ওনার মেজ বোন এক চাচা আর দুই এক জন আত্মীয় । আজকেই নাকি সে আমাকে বিয়ে করে একেবারে ঢাকায় নিয়ে যাবে । (আচ্ছা এখানে বলে রাখি এখানে সেই ব্যাক্তি বলতে আমার যার সাথে প্রেমের সম্পর্ক ছিল তাকে বুঝিয়েছি) এই কথা শুনে আমার মাথায় বারি ।
প্রথমেই মনে এলো আমার সংগঠনের নাটকের কি হবে । আর আমি এ ভাবে ধর মুরগি করো জবাই টাইপের বিয়ে করতে চাইনা। আমার বিয়ে হবে হইচই করে ।কিন্তু কিসের কি ! আমার মত এই ক্ষুদ্র মুরগির বাচ্চার মত গলার চিউ চিউ আওয়াজ সেখানে খুব একটা সুবিধা করতে পারল না কারন সাথে ওনার মেজ আপা । উনি এক কথার মানুষ । মেজ আপা ওদের পরিবারের ডিসিশন মেকার। উনি চাইছেন আজকেই ভাইয়ের বউ নিয়ে যাবেন । ওনার নাকি রংপুর পর্যটন হোটেলে রুম বুকিং দেওয়া আছে । দেখলাম ওরা সুটকেস রেডি করেই এনেছে। তাই বাজাও বাদ্য ..
হলুদ বাটো মেন্দি বাটো গান হল । হোটেল থেকে খাবার কিনে আনা হল কারন রান্নার সময় নেই ।আমার সংগঠনের বড় ভাই দাদা ছোটভাই রা হৈহৈ করে ছোটাছুটি করে কাজ করতে লাগলো ।
রাত দশটার দিকে কাজি ডেকে কবুল কবুল । সব কিছু কেমন ঘোরের মধ্যে হয়ে গেল । আমি চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতেই রাত ১১ টার মধ্যে সেই সাদা কার আমাকে নিয়ে গাইবান্ধা থেকে রংপুর পর্যটন মোটেলে । আমার বাসর হল পর্যটন মোটেলে সবার সাথে সারা রাত গল্প করে ।তবে সবাই গল্প করল আমি শুধু শুনে গেলাম। ছিলাম কেমন ঘোরের মধ্যে । বিয়েটা আসলে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। মনে হচ্ছিল এ সত্যি নয়।
গল্পে গল্পে সেখানেই আসল কাহিনি উন্মুক্ত হল, ভাই বোনের ক্রিমিনালের মত হাসি আর কাহিনী শুনে আমার রাগে গা জ্বলতে লাগলো । সেখানেই শুনলাম
আমার শ্বশুরের মৃত্যু দিবস ছিল ৯ নভেম্বর । ভাই বোন তা পালন করার জন্যে বগুড়ার গ্রামের বাড়িতে এসেছিলেন। আজ এই ভাইবোনের একসাথে সৈয়দ পুর থেকে প্লেনে করে ঢাকায় ফেরার কথা ছিল কিন্তু তারা সেই প্লেন ফেল করেছে । এয়ারপোর্টে গিয়ে দেখে প্লেন টাটা বাই বাই ।
সেখানে বসেই দুই ভাইবোন প্লান করে যেহেতু প্লেন ফেল তাই বিয়ের প্লান যে ভাবেই হোক পাশ করাতে হবে। ওরা আমার জন্যেও পরের দিনের একটা প্লেনের টিকেট কেটে ফেলে ।
পরের দিন প্লেনে করে আমাদের ঢাকা আগমন । মেজ আপা আমাকে এনে ওনার গুলশানের বিশাল বাড়িতে ওঠালেন।উনি আমার শাশুড়ি মাকে টেলিফোন করে ওনার বাসায় আসতে বললেন ।আমি এত বড় বাড়িতে ভয়ে শুকনো মুখে বসে থাকলাম । সবাই চলে এলো দুপুরের পরেই । এখানে মেজ আপা মানে ওনার কথার উপর কেউ কথা বলতে পারবেনা । তাই কেউ ভয়ে টু শব্দ করে নি … । সেদিন ই সন্ধ্যায় সবাই আমাকে নিয়ে শশুর বাড়িতে চলে এলো । ২৭ বছর আগে সেই যে এই বাড়িতে এসে ঢুকলাম । সেখানেই কচ্চপের মত হয়ে গেছি ।
এতক্ষন আমার বিয়ের গল্প বললাম ।
এখন বলছি আজ সকালের গল্প ।
সকালে আমার আর দুই ছেলের জন্যে রুটি বানালাম । পতি দেবতার জন্যে পরোটা বানালাম উনি আবার পরোটা ছাড়া খেতে পারেন না। চা ভাজি। সব করলাম। দুপুরের খাবার ফ্রিজে রেখে দেখিয়ে দিলাম । কি কি খাবে । আমি কিছুক্ষন ওনার চারপাশে অহেতুক ঘুরঘুর করলাম । দেখলাম সে মাছ রাঙ্গা টিভিতে রাঙ্গা সকাল দেখায় ব্যাস্ত । প্রচণ্ড অভিমান নিয়ে আমি রেডী হলাম অফিস আসার জন্যে । কি মনে করে ফেস বুকে ঢুকলাম । আমি সাধারনত সকালে ফেসবুকে আসিনা । দেখলাম ছবি সহ সে বিবাহ বার্ষিকীর স্ট্যাটাস দিয়েছে তার ফেস বুকিয় বন্ধুরা শুভেচ্ছার বন্যায় ভাসিয়ে দিচ্ছে ।
মনটা কেন জানি বিষাদে আর তিক্ততায় ভরে গেল । এত কাছাকাছি আমরা দুই জন অথচ সে এক বারও মুখে উচ্চারন করে কাছে নিয়ে শুভেচ্ছা পর্যন্ত জানালো না । অথচ ফেসবুকে বিশাল স্ট্যাটাস দিয়ে বসে আছে। আমাদের সম্পর্ক গুলো কি আজকাল অন্ত;জালেই আটকে গিয়েছে । অনেকেই হয়ত মনে মনে বলছেন আপনি নিজে শুভেচ্ছা জানালেন না কেন স্বামীদেরকেই কেন আগে জানাতে হবে! কথা সত্যি । তবে আমার মনে হয় সংসারের এই নুন তেলের হিসাবের চাপে বউরা তো একটা দিন আলাদা অন্য রকম এটেনশন চাইতেই পারে । এতে দোষের কিছু নেই ।
অফিসের জন্যে ঘর থেকে বের হলাম । দুই চোখ ভরতি পানি নিয়ে দুই তিন বার বললাম ‘’আসি এই গেলাম কিন্তু ! ভাবছি ! যদি সে দরজার কাছে এসে একবার মাথায় হাত দিয়ে বলে ‘’ আচ্ছা আসো ‘’ সেই আশায় ! ধুর কিসের কি ! ইস আমি এত হ্যাংলা!
এই লেখাটা অফিসে এসে লিখছি। লিখতে লিখতে সিদ্ধান্ত নিয়েছি । আজ অফিস থেকে বের হয়ে এলোমেলো ঘুরব । দেরী করে রাত করে বাসায় ফিরব । সব সময় টাইম মত ফিরি বলে আমাকে পেয়ে বসেছে । আজকে খুঁজুক সে আমাকে !
রচনাকাল
.
.