মায়াবতী পর্ব ৩
তানিশা সুলতানা
“তুই এখানে কেনো?
ড্রাইভ করতে পারিস তুই?
বুকে হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে বলে অর্ণব। অথৈ উওর দেয় না তাকায়ও না পর্যন্ত অর্ণবের দিকে। তন্নি মাথা নিচু করে ফেলে। ঘোমটা টা আরও একটু টেনে নেয়। যেটা নজরে পড়ে অর্ণবের।
মনে মনে বলেও ফেলে ” একটু একটু করে না টেনে। একেবারে গলা সহ পেঁচিয়ে ফেলো ওড়নাটা ইডিয়েট”
কিন্তু বলতে পারে না। কারণ এখানেই অথৈ। এমনিতেই রেগে আছে। এটা বললে একদম ব*ম হয়ে ফুটে যাবে।
“তোর তন্নিকে পেছনে বসতে বল। আমি পৌঁছে দিয়ো আসছি।
অথৈয়ের থেকে কোনো জবাব না পেয়ে বলে অর্ণব।
” আমি একাই যেতে পারবো অথৈ।
তন্নি রিনরিনিয়ে বলে।
“কটামী করো কেনো সাথে সাথে? চিনো তুমি আমায়? কটামি, বেয়াদবি এসব পছন্দ না আমার।
ধমক দিয়ে বলে অর্ণব। কেঁপে ওঠে তন্নি। অথৈ ও চমকে ওঠে।
চোখ পাকিয়ে তাকায় অর্ণবের দিকে অথৈ।
” আরে ইয়ার একটু পরেই বর চলে আসবে। এখানে বসে থাকলে জাস্ট টাইম ওয়েস্ট হবে।
অথৈ মুখ বাঁকিয়ে অন্য দিকে তাকায়।
“আমার ওইভাবে বলা ঠিক হয় নি। আই নো দেট। নেক্সট টাইম বলবো না। আই প্রমিজ।
এবার প্লিজ একে নামিয়ে দিয়ে আসি? আমার ফ্রেন্ডরাও ওয়েট করছে আমার জন্য। তোকেও খুঁজবে সবাই।
অথৈ নেমে পড়ে গাড়ি থেকে। তন্নির পাশে এসে দরজা খুলে দেয়। তন্নি বিনা বাক্যে নেমে পড়ে।
তারপর দুজন পেছনে বসে। অর্ণব দুই ভ্রু আড়াআড়ি ভাবে কুঁচকে তাকায় অথৈয়ের দিকে।
“তুই ও যাচ্ছিস? মানে একটা মেয়ের জন্য দুজনেরই সময় নষ্ট করবো?
বিরক্তি হয়ে বলে অর্ণব।
” আমি কোনো মন্ত্রী মিনিস্টার নই যে সময় নষ্ট হবে।
কাঠ কাঠ গলায় বলে অথৈ। অর্ণব ফোঁস করে একটা শ্বাস টেনে গাড়িতে বসে পড়ে।
তন্নি মাথা নিচু করে বসে আছে।
তন্নিদের বাড়ি খুব বেশি দুরে না। দশ মিনিটের রাস্তা।
“এসে গেছি।
অথৈ বলে ওঠে।।আর অর্ণব গাড়ি থামিয়ে ফেলে। উঁকি দিয়ে বাড়িটা দেখার চেষ্টা করে।
অথৈ আর তন্নি নেমে পড়ে।
” যাচ্ছি হ্যাঁ?
তন্নি অথৈয়ের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে এক দৌড়ে বাড়িতে ঢুকে যায়। অর্ণব ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থাকে। এটা বাড়ি?
অর্ণবের কাছে মুদি দোকান মনে হচ্ছে। ছোট বেলায় স্কুলে যাওয়ার সময় দেখেছে এরকম দোকান। যে দোকান গুলো টিনের হয়। এখন অবশ্য এরকম দোকান নেই।
“এটা বাড়ি? মানে এখানে থাকে ও?
অর্ণব নিজের কৌতুহল আটকে রাখতে না পেরে বলেই ফেলে।
অথৈ অর্ণবের পাশে বসে পড়ে।
” সবাই তো আর তোর আমার মতো দশ তালায় থাকে না। তাদের বাবার কারি কারি টাকাও নেই।
অর্ণব বিরক্ত হয়।
“সোজা কথা সোজা ভাবে বলতে পারি না তুই তাই না?
বলেই গাড়ি চালানো শুরু করে অর্ণব।
___
অথৈ পা টিপে টিপে বাড়িতে ঢুকে। মায়ের রুম থেকে আওয়াজ আসছে। নিশ্চয় ভাইকে পড়াচ্ছে। রান্না ঘরে উঁকি দেয় অথৈ। সেখানে উনুনে ভাত বসানো। দুপুরের এঁটো থালাবাসন গুলো পড়ে আছে। কথা ছিলো অথৈ বাসায় ফিরে রান্না করবে। শুকনো ঢোক গিলে প্লেট নিয়ে সেখানে নিজের আনা খাবারগুলো রাখে। তারপর ওড়না কোমরে গুঁজে কাজে লেগে পড়ে।
সব কাজ শেষ করে তারপর খাবার নিয়ে মায়ের রুমে যায়। তন্নির ভাইয়ের নাম তামিম। সে ক্লাস টু তে পড়ে।
” মা আমি এসেছি।
তন্নি দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বলে।
ইতি বেগম বিরক্ত হয়ে চোখ পাকিয়ে তাকায় তন্নির দিকে।
“আসতে বলেছিলো কে তোকে? থেকে যেতে পারতিস। “মা আমি এসেছি” এসে আমাকে উদ্ধার করেছো তুমি।
রেগে বলে ইতি বেগম।
তন্নির হাসি মুখটা চুপসে যায়।
“আপু আমার জন্য কি এনেছিস?
তামিম গলা উঁচু করে দেখার চেষ্টা করে বলে।
তন্নি আবার হেসে ফেলে।।এগিয়ে গিয়ে ভাইয়ের সামনে খাবার নামায়। তামিম খুশিতে গদগদ হয়ে খেতে শুরু করে।
তন্নি নয়ন ভরে দেখতে থাকে।
” এখানে খাম্বার মতো দাঁড়িয়ে আছিস কেনো? সর চোখের সামনে থেকে।
তেঁতে উঠে বলে ইতি বেগম।
তন্নি মুখ ফুটে বলার সাহস পায় না “মা আমি ভাইয়ের সাথে খাই?” সে মাথা নিচু করে চুপচাপ বেরিয়ে যায়। চোখের কোণে একটুখানি পানিও জমে যায়। সেটা হাতের উল্টো পিঠে মুছে ফেলে।
সিদ্ধ আলু মরিচ ডলে ভাত খেয়ে নেয় তন্নি।
___
আজকে কলেজে যেতে হবে। অথৈ যাবে না বলে পরপর তিন দিন কলেজ মিস দিয়েছে তন্নি। আজকে অথৈয়ের যাওয়ার কথা।
সকাল সকাল সব কাজ সেরে তন্নি তৈরি হয়ে নেয়।
ইতি তামিমকে রেডি করাচ্ছে স্কুলের জন্য।
“মা আমি যাচ্ছি। ভাইকে নিয়ে যাবো?
” না আমিই দিয়ে আসবো। তুই যা।
আর হ্যাঁ তাড়াতাড়ি ফিরবি। তোর বড়লোক বান্ধবীদের সাথে একদম এদিক সেদিক টইটই করে ঘুরবি না। আমার কানে যদি আসে না? পড়ালেখা বন্ধ করে দিবো তোর। বলে দিলাম।
তন্নি মাথা নিচু করে হ্যাঁ বলে।
তারপর আকাশী রংয়ের ওড়নাটা ভালো করে মাথায় পেঁচিয়ে ব্যাগটা কাঁধে চাপিয়ে বেরিয়ে যায়।
প্রতিদিন অথৈকে ডেকে নিয়ে যায় তন্নি। কিন্তু আজকে বাড়ির মধ্যে ঢুকবে না পণ করেছে। ওই জল্লাদ লোকটার সামনে পড়তে চায় না তন্নি৷
তন্নির ফোন নেই যে কল করে অথৈকে বের হতে বলবে। তাই অথৈদের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে। গেইটের দারোয়ানও এখানে নেই। নিশ্চয় খেতে গেছে। এবার করবে কি তন্নি?
খানিকটে পায়চারি করে একটা বুদ্ধি বের করে তন্নি। মুচকি হেসে এক দৌড়ে চলে যায় অথৈদের বাড়ির পেছনে। উদ্দেশ্য অথৈয়ের রুমের জানালায় ঢিল ছুড়ে মারবে।
ছোট সাইজের একটা ইটের টুকরো খুঁজে নেয় তন্নি। অথৈয়ের বেলকনির দরজা বন্ধ।
এবার তন্নি ঠাস করে ঢিল ছুড়ে দেয়। সাথে সাথে একটা পুরুষ কন্ঠের চিৎকার ভেসে আসে। তন্নি ভয় পেয়ে দৌড়ে গাছের আড়ালে চলে যায়।
ঢিলটা লেগেছে অর্ণবের কপালে।
তন্নি অথৈয়ের রুম মনে করে যে রুমে ঢিল ছুড়ে মেরেছে সেটা ছিলো অর্ণবের রুম। পাশাপাশি হওয়াতে বুঝে উঠতে পারে নি তন্নি।
তন্নি ঢিল ছুড়েছে আর তখনই অর্ণব দরজা খুলেছে। ব্যাসস লেগে গেছে কপালে।
অর্ণব কপাল ধরে জোরে সরে একটা চিৎকার দিয়েছে।
তন্নি গাছের আড়াল থেকে দেখে হেসে ফেলে। যাকক জল্লাদ বেডাকে একটা শিক্ষা দেওয়া তো গেলো।
ততক্ষণে আশা অথৈ আনোয়ার চলে এসেছে। আশা অর্ণবকে ধরে আহাজারি শুরু করে দিয়েছে। কপালে একটুখানি কেটে গেছে অর্ণবের। অথৈ ভ্রু কুচকে এদিক সেদিন তাকাচ্ছে কালপ্রিটকে দেখার জন্য। যখনই গাছের আড়ালে তন্নির ওড়না দেখতে পায়। অথৈ শব্দ করে হেসে ওঠে।
অর্ণব আশা আর আনোয়ার তাকায় অথৈয়ের দিকে।
“আমি ব্যাথায় ম*র*ছি আর তুই হাসছিস?
অর্ণব রেগে বলে।
” তোর ড্রামা দেখে হাসি পাচ্ছে। এই টুকুনি ছিলে গেছে তাতেই যে চিৎকার দিলি।
আমি তো ভেবেছিলাম পা একটা খসে পড়েছে। যাই হোক৷ আমি কলেজে যাচ্ছি৷
এই ড্রামা দেখার টাইম নাই।
বলেই অথৈ চলে যায়।
“মম দেখেছো তোমার মেয়ের এটিটিউট? কোথা থেকে কুড়িয়ে এনেছিলে একে?
“ওর কথা ছাড় তো তুই। চল আমার সাথে মেডিসিন লাগিয়ে দিচ্ছি।
তুমি ডাক্তারকে কল করো।
আনোয়ার ডাক্তারকে কল করতে থাকে।
চলবে
বেশি বেশি শেয়ার করে দিবেন।