- মেঘে ঢাকা আকাশ ।
- বড়দের রোমান্টিক গল্প।
- বাংলা প্রাপ্তবয়স্কদের উপন্যাস।
- ১৮+ প্রেমের উপন্যাস।
- বিশ্বের সেরা নিষিদ্ধ প্রেমের উপন্যাস।
১.মেঘে ঢাকা আকাশ (ধারাবাহিক গল্প)
আমার ছাত্রী অবনিকে পড়াতে গিয়ে দেখলাম তাঁর আম্মু একটা ছেলের সাথে খুব অন্তরঙ্গ হয়ে বসে আছে। আমি তাদের দুজনকে দেখে লজ্জায় মুখ ঘুরিয়ে নিলাম। আমাকে দেখে তারা নিজেরাও নিজেদেরকে গুছিয়ে নিলো। আসলে মানুষের আসল চেহারাটা বুঝা যায় না। অবনির মা যে এরকম একটা খারাপ কাজ করতে পারে এটা কখনো আমার ভাবনায় আসেনি। তবে চাহিদার প্রয়োজনে মানুষ অনেক জঘন্য কাজও করে থাকে। নিজের থেকে বয়সে অনেক ছোট ছেলের সাথেও মানুষ প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারে সেটা আমি আজ বুঝলাম। আমি কিছু বলার আগেই অবনির মা আমাকে বলল,অবনি তো এখনো স্কুল থেকে ফেরেনি। আর আজ তুমি এতো আগেই পড়াতে আসবে সেটা বলবে না?
তখন আমি বললাম আজ মাসের শেষ তারিখ। তাই একটু আগেই পড়াতে এসেছি,টাকাটাও দরকার ছিলো।”
তখন অবনিরা মা বলল,
আচ্ছা ঠিক আছে। তুমি বসো আমি টাকা নিয়ে আসছি।”
কিছুক্ষণ পর অবনির মা এসে আমার হাতে দশ হাজার টাকা দিয়ে বলল,
“ও হচ্ছে আমার খালাতো ভাই সুজন। অবনিকে ওর কথা বলার দরকার নেই। তোমাকে অগ্রিম মাসের টাকাটাও দিয়ে দিলাম। তোমার নাকি টাকার সমস্যা বলেছিলে। আজকে পড়াতে হবে না তুমি বরং কালকে এসো।”
টাকাটা নিয়ে আমি চলে আসি। অবনিকে পড়াই আজ ছয়মাস হতে চলল। সত্যি বলতে অবনিকে আমি টাকার জন্যই পড়াই। অবনির বাবার টাকা পয়সার কোনো অভাব নেই। তাঁর বাবা বিদেশ থাকেন তাই আমাকে মাস শেষে পাঁচ হাজার টাকা দিতে কোনো সমস্যা হয় না। দশ হাজার টাকা পেয়ে সেখান থেকে মাকে চার হাজার টাকা দিলাম। আর বোনকে এক হাজার টাকা। বাকিগুলো আমার প্রয়োজনে কাজে লাগাবো রেখে দিলাম। মাকে দেওয়া এটা আমার প্রথম কোনো উপহার। আমি এর আগে কখনো মাকে টাকা দেইনি। টাকা দেওয়ার পর মায়ের চোখে যে আনন্দটা দেখেছিলাম সেটার কাছে পৃথিবীর সব আনন্দ তুচ্ছ। এক হাজার টাকা পেয়ে আমার বোন এতোটা খুশি হবে ভাবিনি। কিন্তু যখন টাকা পেয়ে সে আমাকে খুশিতে জড়িয়ে ধরে ভাইয়া বলল। তখন মনে হলো এমন বোনের জন্য জীবনে কিছু করতে না পারলে জীবনের কাছে ঋণী থেকে যাবো।
পরের দিন অবনিকে পড়াতে গিয়ে দেখলাম অবনি খুব সুন্দর করে সেজেছে। আকাশী রঙের শাড়িতে মেয়েটাকে অন্য দিনের চেয়ে আজ একটু বেশিই সুন্দর লাগছে। তাই পড়ানোর সময় তাঁর দিক থেকে কেনো জানি চোখ সরাতে পারছিলাম না। আমার এমন অবস্থা দেখে অবনি বলল,
“স্যার আপনার কি কোনো গার্লফ্রেন্ড আছে?”
নিজের ছাত্রীর মুখে এমন প্রশ্ন শুনে কিছুটা আনইজি ফিল করলাম। তারপরেও ধমকের শুরু বললাম।
“এসব কি প্রশ্ন? আমার গার্লফ্রেন্ড দিয়ে তুমি কি করবে? বাচ্চাদের এসব জানতে হয় না। তুমি পড়াশোনায় মনোযোগ দাও।”
তখন অবনি বলল,
“কে পিচ্চি? দেখেন আমি কতো বড় হয়ে গিয়েছি। আর ক্লাস নাইনে পড়া একটা মেয়েকে বাচ্চা বলা মোটেও উচিত না। আমার এক বান্ধবির বিয়ে হয়েছে,বাচ্চার মাও হয়ে গেছে। আর আপনি আমাকে বাচ্চা বলছেন।”
অবনির কথায় ঠিক। অবনিকে আজ মোটেও বাচ্চা বাচ্চা লাগছে না। বড়ই মনে হচ্ছে। শাড়ি পড়লে ছোট মেয়েদেরকেও অনেক বড় মনে হয়। অবনিকেও আজ বড়দের মতোই মনে হচ্ছে। আমি অবনির কথা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও পারলাম না। অবনি আবার জিগ্যেস করলো।
“স্যার আপনি কিন্তু বললেন না,আপনার কোনো গার্লফ্রেন্ড আছে নাকি?”
তখন বাঁধ্য হয়ে বললাম।
“ছিলো একসময় তবে এখন নেই। এবার খুশি তুমি? তোমার প্রশ্নের উত্তর খুুঁজে পেয়েছো।”
তখন অবনির চোখেমুখে অনেক আনন্দ দেখতে পেলাম। আমার গার্লফ্রেন্ড নেই শুনে অবনি এতোটা খুশি হলো কেনো বুঝতে পারলাম না।
প্রায় ছয় মাস পর হঠাৎ করেই জানতে পারলাম অবনির মা প্রেগন্যান্ট। এমন অবস্থায় সব জায়গায় জানাজানি হয়ে গেলো। যেহেতু অবনিদের বাসায় আমি বাদে আর কোনো ছেলে যাওয়া আসা করতো না তাই সবাই আমার দিকে আঙুল তুলতে লাগলো,আমাকে সন্দেহ করতে লাগলো। অবনির মা যখন আমাকেই দোষ দিলো তখন আমার মরে যেতে ইচ্ছে করছিলো। অবনির মা নিজেকে বাঁচানোর জন্য আমার নামে যে এতো বড় একটা মিথ্যা কথা বলবে আমি কখনো কল্পনা করিনি। অবনির সামনে সেদিন কি লজ্জাটাই না পেয়েছিলাম। কোনো অপরাধ না করেও আমি অবনির চোখের দিকে তাকাতে পারিনি। অবনি অনেক ঘৃণা নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো। সে কাঁদতে কাঁদতে যখন বলল।
“স্যার আপনি চাইলে তো আমিই আপনাকে এই সুখটা দিতাম। আপনাকে আমি ভালোবাসতাম। আর আপনি কিনা আমার মায়ের সাথেই এটা করলেন? আপনার প্রতি যে রেসপেক্ট ছিলো সেটা আপনি রাখেননি। আপনি কখনোই একজন শিক্ষক হওয়ার যোগ্যতা রাখেন না।”
কথা গুলোই বলেই অবনি আমাকে ধাক্কা দিয়ে তাদের বাড়ি থেকে বের করে দেয়। আমিও চলে আসি। এলাকার সবাই জেনে গিয়েছে বিষয়টা। তাই লজ্জায় কারো সামনে যেতে পারতাম না। বাসায়ও চুপচাপ থাকতাম,মা বাবা বোন কেউ আমার সাথে আগের মতো কথা বলে না। আমার জীবনটা যেনো একাকিত্বের এক নরকে পরিণত হলো। ঠিক এমন সময় আমার নরকীয় জীবনটাকে আরও বিষাক্ত করে তুলতে ফোন দিলো আমার প্রাক্তন।
মিলির সাথে আমার দুই বছরের সম্পর্ক ছিলো। হঠাৎ করেই একদিন প্রচণ্ড রাগারাগি হলো দুজনের মাঝে। সেদিনই ব্রেকআপ করলাম আমরা। তারপরে আমি আর তাকে কোনোদিন ফোন দেইনি। কারণ আমি আমার ইগোর সাথে কখনো আপোষ করতে চাইনি। সেও কখনো ফোন দেয়নি। আজ এতোদিন পর কেনো ফোন দিলো সেটার কারণ খুঁজতে গেলাম না। ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে ভেসে আসলো চির পরিচিত সেই কণ্ঠস্বর।
“তোমার সাথে বিচ্ছেদ হয়ে ভালোই হয়েছে। এমন একটা কাজ করবে কখনো ভাবিনি।”
“আমি ভেবেছিলাম এতোদিন পর ফোন দিয়ে তুমি জানতে চাইবে আমি কেমন আছি? কিন্তু তা না করে কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দিচ্ছো? এটা বলার জন্যই কি ফোন দিয়েছো?”
“সেটা বলার প্রয়োজন মনে হয়নি কারণ তুমি ভালোই আছো। সেজন্যই হয়তো নিজের থেকে বয়সে অনেক বড় একটা মেয়ের সাথেও অবৈধ সম্পর্কে জড়াতে পেরেছো। ভালো না থাকলে মানুষ এমন কাজ করতে পারে? বল।”
“আর সবাই না হয় আমার সম্পর্কে জানে না তাই এমনটা বলছে। কিন্তু তুমি তো আমার সম্পর্কে সব জানো,আমাকে চেনো আমি কেমন মানুষ। তারপরেও এমনটা বললে? তোমার সাথে তো দুইটা বছর রিলেশন করেছি কখনো তো একটা চুমুও খেতে চাইনি তোমাকে। তুমিই বল,তোমার সাথে যদি আমি ফিজিক্যাল রিলেশন করতে চাইতাম তাহলে কি তুমি না করতে? আমার তো মনে হয় না তুমি না করতে। যেখানে তোমার মতো মেয়ের সাথে এমনটা করিনি সেখানে আমার থেকে বয়সে বড় একটা মহিলার সাথে এটা করবো কি করে ভাবলে তুমি?”
ঠিক এমন সময় বাবা আমার রুমে এসে পড়ায় আমি ফোনটা কেটে দিলাম। দীর্ঘ দুইমাস পর আমার রুমে কেউ আসলো,আমার সাথে কেউ কথা বলল। আমার তো ভালো লাগার কথা,খুশি হওয়ার কথা। কিন্তু আমি খুশি হতে পারলাম না বরং বাবার কথাগুলো শুনে চোখের পানিটাকে অনেক চেষ্টা করেও ধরে রাখতে পারলাম না।
বাবা যখন বললেন,
“কয়েকদিন পর তোর বোনকে দেখতে আসবে। আমি চাই না তোর কারণে আমার মেয়ের বিয়েটা ভেঙে যাক। তুই এক বছরের জন্য এই বাড়ি থেকে চলে যা। সবাই জানবে তোকে আমরা ত্যাজ্যপুত্র করেছি। তোর সাথে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। একবছরে যদি কিছু করতে না পারিস,নিজের বেঁচে থাকার মতো অবস্থা তৈরি করতে না পারিস তাহলে চলে আসিস। তখন তোর বোনের বিয়ে হয়ে যাবে। তাই আর কোনো সমস্যা হবে না। তবে আমি চাইবো না তুই আর কখনো এই বাড়িতে ফিরে আস। তোর কারণে আমি আমার মান সম্মান সব হারিয়েছি। কাজটা করার আগে তোর ভাবা উচিত ছিলো তোর সাথে তোর পরিবারের মানসম্মানটাও মিশে আসে। যাইহোক তোর মাকে আমি এখনো কথাটা বলিনি। তুই চলে যাওয়ার পরেই বলবো। আজ রাতেই চলে যাবি। তোর মা কিংবা বোনের সাথে দেখার করার দরকার নেই। টাকা লাগলে বল,দিয়ে দিবো।”
আমি কিছু বলতে পারলাম না। আমি জীবনে কোনোদিনও চিন্তা করিনি আমার বাবা আমার প্রতি এতো কঠোর হবেন কখনো। কাঁদতে কাঁদতে শুধু বললাম।
“না কোনো টাকা লাগবে না।”
আমি লক্ষ্য করলাম আমার কান্না ভেজা কণ্ঠটাও বাবার ভিতরটাকে নাড়া দিতে পারলো না। বাবা আমার রুম থেকে চলে গেলেন।
ফোনের দিকে তাকাতেই দেখলাম একুশবার ফোন দিয়েছে মিলি। এখনো দিয়েই যাচ্ছে। তাঁর ফোনটা ধরতে ইচ্ছে করছিলো না। কারণ সবকিছু গোছগাছ করতে হবে,আজকেই বাবা আমাকে চলে যেতে বলেছেন। জানি না কোথায় যাবো,যাওয়ার মতো তেমন কোনো জায়গাও নেই। তবে যেতো তো হবে। পৃথিবীটা তো অনেক বড়,কোথাও না কোথাও তো জায়গা হবে?
চলবে……….
#মেঘে ঢাকা আকাশ
পর্ব ১
লেখাঃ আমিনুর রহমান
পর্ব ১-৬
https://kobitor.com/category/uponas/megh/page/2/
২. বড়দের রোমান্টিক গল্প
(১৮+ সতর্কতা। গল্পে প্রসঙ্গক্রমে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য প্রযোজ্য কিছু বিষয় এসেছে।)
সংগ্রাম
চেনা জানা পরিমণ্ডলে আমার শ্বশুরবাড়ি ‘উদার’ হিসেবে পরিচিত। তারা উদার, কারন তারা যৌতুক নেন নাই। তারা উদার, কারন বৌ-শ্বাশুড়ির যুদ্ধ বলে জিনিসটা এই সংসারে অনুপস্থিত। তারা উদার, কারন তারা বিয়ের পরেও বৌকে পড়াশোনা করার অনুমতি দিয়েছেন, শুধু তাই না, বরং পড়াশোনা করার খরচও দেন। আমার স্বামী প্রতিদিন ভার্সিটিতে আমাকে ড্রপ করেন। এসবই উদারতা।
আমার মা-খালারা একত্রিত হলেই এসব কথা ওঠে। তারা আশা করেন এমন সোনার টুকরো সংসার দেখে তাদের মেয়েদেরও বিয়ে দেবেন। আমার অন্যান্য বান্ধবীরা এবং অন্যান্য সম্পর্কের বোনেরাও বলে, আমি খুব ভাগ্যবতী। আমার বাপের বাড়ি-শ্বশুরবাড়ি দু’টোই সাপোর্টিং। আমি তাদের কথায় হাসি হাসি মুখে সায় দেই। ঠিক, দারুন সাপোর্টিং আমার চারপাশ, প্রতিবেশ।
কিন্তু আমি এতো উদারতা চাইনি। আমি চাইনি আমার শ্বশুরবাড়ি এতো উদার হোক, আসলে আমি চাইনি পড়াশোনা চলাকালীন সময়ে আমার শ্বশুরবাড়ি-ই হোক। আমি চাইনি আমার স্বামী ভার্সিটিতে সকালে ড্রপ করে আসুক।
আমি চেয়েছিলাম আমার পড়াশোনা শেষ করতে। আমি চেয়েছিলাম বিসিএস ক্যাডার হতে। আমি এডুকেটেড হোমমেকার হতে চাইনি, আমি চেয়েছিলাম ন্যাশন মেকার হতে।
আমার ফ্যামিলি এতো সাপোর্টিং যে আমি এতো আপত্তি জানানোর পরও তারা আমার বিয়ে পিছিয়ে দেয়নি। মেয়ে থার্ড ইয়ারে পড়ে এটা নাকি শুনতে ভালো। মেয়ে ফাইনাল ইয়ারে এটা বললে নাকি মেয়ের বয়স বেশি শোনায়। বয়সী মেয়েদের এইদেশে বিয়ের বাজারে দর নেই। ফলে দর থাকতে থাকতেই আমার বিয়ে হয়ে গেল। যেদিন বিয়ে হলো তার নয় দিন পরে আমার ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হলো। আমি অনেক বলেও বিয়ের অনুষ্ঠান ফাইনাল পরীক্ষার পরে নিতে পারিনি।
সেসবের পরও আমি পরীক্ষা দিতে গেছি। রেজাল্টের পর আমি পাশ করেছি জেনে সবাই ধন্য, ধন্য করতে এলো। এতোকিছুর মাঝেও পাশ করা চাট্টিখানি কথা নয়। আমি অনেক কষ্টে মুখে হাসি ধরে রাখলাম। কিন্তু আমার চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা হচ্ছিল, ‘আজ আমি টেনেটুনে পাস করেছি। কিন্তু গত দুই ইয়ারে আমি টপ করেছিলাম।’
সারাদিনের অভিনন্দন বার্তার পরে রাতে আসে, আসে স্বামী-স্ত্রীর একান্ত সময়। সে সময় পতিদেব বললেন, তুমি পাশ করবে সেটাই তো ভাবিনি। আমি বললাম, তোমার তো অবাক হওয়া উচিত আমি পরীক্ষা দিতে পারলাম কি করে সেটা ভেবে? কোনদিনতো আমাকে মাফ দাওনি। কোনদিনতো ভাবোনি রাত গেলে সকালে আমার পরীক্ষা আছে কি না।
তারপর যা আমাকে ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় প্রতিদিন করতে হয়, ব্লাউজ খুলে বললাম, কি হলো? আজ লাগবে না?
আজ রাতে খাটের দূরত্বটুকু অতিক্রম করে এসে আমার শরীরে হাত দেয়া তার পক্ষে সহজ ছিল না। যেটা তার পক্ষে করা সহজ সে সেটাই করলো। ঠাস করে চড় মারলো গালে। আমি একবারের জন্য গাল না ছূঁয়ে দেখলাম, না ব্লাউজের বোতাম লাগালাম, সে অবস্থায় শুয়ে পড়লাম পাশ ফিরে। এখন বাবুর রাগ উঠেছে। তাই খাবে না। না খাক। রাগ পড়লে ক্ষিদে পাবে। হয়ত খেতে ইচ্ছে হবে। খাবার বাড়া থাকলো। ইচ্ছে হলে খাবে।
আমার বাবা পড়ার খরচ দিতে চেয়েছিল। আমার শ্বশুর ভালোমানুষি দেখিয়ে বলেছে, না, না, বিয়ের পরে মেয়ে এখন আমাদের। নিজের মেয়ের পড়ার খরচ আপনার কাছ থেকে নিতে পারবো না। বাবা হৃষ্টচিত্তে ফিরে গেছেন। দশজনের কাছে বড় মুখ করে আমার শ্বশুরের, শ্বশুরবাড়ির সুখ্যাতি করেছে। বাবা চলে গেলে শ্বশুর শ্বাশুড়িকে বলেছে, ‘পড়ার টাকা নিলে যখন চাকরি করতে চাইবে তখন না করা যাবে না। আর আমরা টাকা দিলে তখন আমরা যা বলবো তাই হবে। টাকা নিয়ে মাথা বেচে দিতে পারবো না।’
আমার উদার শ্বশুর আমার পড়াশোনার খরচ দিয়ে ভবিষ্যতে আমার চলাফেরার রাস্তা বন্ধ করে দেয়ার চাল চাললেন।
আমার স্বামী প্রতিদিন আমাকে ভার্সিটিতে দিয়ে আসেন বটে কিন্তু সেটা তার সময় মতো। প্রতিদিন তাই প্রথম দিকের একটা দুটো ক্লাস মিস করিই। রাতের আদর ভালোবাসার পর ভোর রাতেও তার শরীর আরেক ছপ্পা জেগে ওঠে। সেটাও আমাকে মেনে নিতে হয়। সেই ক্লান্তি কাটিয়ে বৌয়ের হাতে বানানো নাস্তা খেয়ে যখন সাহেবের সময় হয় তখন আমাকে ভার্সিটিতে পৌঁছে দেন। যেই আমার নাইন্টি আপ এটেন্ডেস ছিল প্রথম দুই ইয়ারে সেই আমার ফাইনাল ইয়ারে জরিমানা দিয়ে এক্সাম দিতে হয়েছে।
তারপরও ক্লাসের বান্ধবীরা যখন বলে যে, ‘তুই খুব লাকি, হাবি প্রতিদিন তোকে পৌঁছে দেয়’ তখন আমি অনিচ্ছায়ও একটু হাসি, কিছু বলার ইচ্ছা করে না, শক্তিও পাই না।
ওদের সাথে কথাবার্তাতেই শুধু না, ক্লাসেও ক্লান্তিতে স্যাররা কী বলছেন বুঝতে পারি না, মাঝে মাঝে শুনতেও পারি না। এই নিয়েও রসিকতা হয়।
স্যার একদিন বললেন, নতুন নতুন বিয়ে হলে জামাইয়ের কথা মনে করে অন্যমনস্ক হয়ে যাওয়া খারাপ বা অস্বাভাবিক নয় কিন্তু বাড়ি গেলেই যেহেতু দেখা হবে আর এই ক্লাস যেহেতু আর দ্বিতীয় বার হবে না তাই জামাইয়ের ভাবনা রেখে ক্লাসে মনোযোগ দেয়াটাই ভালো নয় কি? আমি কান লাল করে বসে থাকলাম। আমার আরক্ত মুখোবয়ব দেখে সবাই আমার আর আমার জামাইয়ের সুখি দাম্পত্য জীবন মনে মনে খুব কল্পনা করে নিলেন।
মাস্টার্সের ফাইনালটা খুব ভালোভাবে দেয়ার ইচ্ছা ছিল। মনে করেছিলাম এই ক’টা দিন বাড়ি থাকবো। শ্বশুরবাড়ির কারো কাছে আগে থেকে বলিনি। আগে মা-বাবা’র সাথে আলাপ করে তারপর ভেবেছিলাম জামাইকে জানাবো। এখন আমি দু’একটা কথা নিজে থেকে বলি, নিজে নিজে করি। কিন্তু মাকে বলতেই মা বলল, দেখ শর্মীকে বলে। আমি খুব অবাক হয়ে গেলাম। মা বললেন, ওর ঘর, ও’কে বলতে হবে না!
বিয়ের আগে আমি আর শর্মী একঘরে একখাটে ঘুমাতাম। আমার বিয়ের পরে শর্মী তার মতো করে ঘর সাজিয়েছে। সে ঘরে কি তবে আমি এখন শুধু আগুন্তক?
মা’র কথা আমি উড়িয়ে দিলাম। শর্মী আবার আপত্তি করবে কেন? মাকে জিজ্ঞেস করলাম, আচ্ছা, শর্মীকে আমি বলছি। বাবা কোন আপত্তি করবে নাতো? মা রান্নাঘর থেকে যেন কথা এড়াতেই বললেন, শর্মীর সাথে আগে কথা বল।
ব্যাপার কি ভাবতে ভাবতে আমি শর্মীর ঘরে ঢুকি। বললাম, আবার আমরা একসাথে থাকতে পারবো। মজা হবে, বল? শর্মী খুব অবাক হয়ে বলল, একসাথে থাকবো মানে? আমি আস্তে করে বললাম, মাস্টার্সের পরীক্ষা এখান থেকে দেব ভাবছি।
: তুমি থাকবে কোথায়? এখানে? আমার নিজের পরীক্ষা, আরো অনেক ঝামেলা আছে, এখন আর একসাথে থাকা যাবে না। কি সব বলো না তুমি?
শর্মীর প্রতিক্রিয়া দেখে বুঝি আমি আজ আমার ঘরে অনাকাক্ষিত। সবখানে এধরনের প্রতিক্রিয়া পেতে আমি অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি। প্রচন্ড রাগ হচ্ছিল। চিৎকার করতে ইচ্ছে করছিল। বলতে ইচ্ছে করছিল, ভেবে দেখ বিয়ের পরে এ ঘর যখন তোরও থাকবে না তখন তোর কেমন লাগবে? কিন্তু আমি কিছুই করলাম না। এতোদিনে জেনে গেছি আমি প্রতিবাদ মানেই সম্পর্কের অবনতি। আমি কথা ঘুরিয়ে বললাম, না মানে, মনে করেছিলাম আর কি পরীক্ষার আগে দু’য়েকদিন থাকবো। তেমন কিছু না।
: আমার পরীক্ষা তো, তাই বললাম আর কি। দু’একদিনের জন্য কিছু না, কিন্তু এখান থেকে পরীক্ষা দিতে গেলে আমারই হয়ত পড়া হবে না। তুমি কিছু মনে করো না আপা।
না, আমি শর্মীর কথায় কিছু মনে করি না। কিন্তু আমি ভাবতে থাকি তাহলে আমি কী করবো। পরীক্ষায় আমাকে ভালো করতেই হবে। অনার্সে প্রথম দুই ইয়ারে রেজাল্ট ভালো ছিল বলে সব মিলিয়ে রেজাল্ট একটা হলেও মাস্টার্সে রেজাল্ট ভালো করতে ভালো পরীক্ষা দিতেই হবে। আমার সাপোর্টিং বাবার বাড়িতে কোন রকম আশ্রয় না পেয়ে আমি নিরুপায় হয়ে আমার উদার শ্বশুরবাড়িতে ফিরে আসি।
সেই রাতেও পতিদেব আমাকে ভালোবেসে(!) টানে নিজের দিকে। উত্তেজনার আতিশয্যে টের পায়নি সে যে আমি সক্রিয় নই। নিজের মতো নিজেকে সন্তুষ্ট করে গভীর ঘুমে যখন সে নিমগ্ন তখন আমি নিজেকে পরিস্কার করি। একটু পানি খাই। তারপর সাইড ল্যাম্পের আলোতে পড়তে বসি। আমি সবকিছু হারিয়ে এমন একটা পর্যায়ে পৌঁচেছি যে, আমি কিছুতেই আমার অবশিষ্ট থাকা আমাকে হারাতে পারি না। যাদের আমি আপন, স্বজন ভেবেছি তারা একে একে দূরে সরে গেছে। অর্জিত বিদ্যাই হতে পারে এমন বন্ধু, সহায় যা কখনও আমাকে ছেড়ে যাবে না। এই শক্তির অভাবে আমাকে যা কিছু চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। আর আমি তা মেনেও নিয়েছি। আমি শিক্ষিত হোমমেকার হবো, না শিক্ষিত ন্যাশনমেকার সে সিদ্ধান্ত আমার হবে। কিন্তু আমি যদি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হই তাহলে আমাকে তাদের সিদ্ধান্তের কাছে আত্মসমর্পণ করা ছাড়া উপায় থাকবে না। আমি তা চাই না।
আর তাই উদার শ্বশুরবাড়ির বৌ আর সাপোর্টিং বাবার বাড়ির মেয়ে এই আমি স্বামীর শারীরিক প্রয়োজন মিটিয়ে এই ক্লান্ত শরীরেও নিজের সংগ্রামের জন্য নিজেকে তৈরি করি।
#ম্যারিটাল_রেপ
#ছোটগল্প
৩. বাংলা প্রাপ্তবয়স্কদের উপন্যাস
#স্বীকার
(শুধুমাত্র প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য।)
“দোস্ত অফিস শেষে আমার সাথে একটু দেখা করতে পারবি? একটা আর্জেন্ট বিষয়ে কথা বলবো। কথাটা ফোনে বলতে পারছি না।” ভার্সিটি বন্ধু তমালের গলার স্বরেই কলটার গুরুত্ব বুঝলাম। তাইতো ওকে না করতে পারলাম না। সন্ধ্যায় বসুন্ধরা মলের ফুডকোর্টে আসবো বলেই অফিসের কাজে মনোযোগ দিতে পারলাম না। তমালের বিয়ে ঠিক হয়েছে, অল্পকিছুদিনের মধ্যেই সব ফর্মালিটিজ হতে যাচ্ছে। আর এই মুহূর্তে ওর আমার সাথে একান্তে কথা বলার এই অনুরোধটা কিন্তু আমার কাছে মোটেও ভালো কিছু বলে মনে হল না।
আমি আসাদ, বেসরকারি একটা ব্যাংকে চাকুরী করি। তমালও ব্যাংকার তবে ও অন্য আরেকটিতে আছে। আমার সাথে তমালের বন্ধুত্ব এক যুগেরও বেশিকাল ধরে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং ডিপার্টমেন্টের সহপাঠী তমাল, এসএম হলে আমার রুমমেটও ছিল। যদিও ওর মিরপুরে বাসা বলে, হলে ও খুব একটা থাকতো না। আমার কিন্তু ভার্সিটি লাইফ থেকেই ওদের বাসায় যাওয়া আসা ছিল। আর সব মিলিয়ে এতোদিনে তমাল আমার শুধু বন্ধুই নয়, অনেক আপন একজন। আমরা দুজনেই সবকিছু শেয়ার করি, অকপটে।
“দোস্ত, রূপার সাথে আমার বিয়েটা ভেঙ্গে দিতে হবে। তোর একটু হেল্প লাগবে!” সন্ধ্যায় দেখা হতেই তমালের বলা এ কথাটায় যেন আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো।
এইতো গত মাসে তমালের বাবা মা অনেক পাত্রী দেখে রূপার সাথে বিয়েটা চুড়ান্ত করলে। মাস খানেকপর ওদের বিয়ে। আমরা ওর বন্ধুরা যেখানে চার পাঁচ বছর আগেই বিয়ের কাজটা শেষ করে ফেলেছি, সেখানে তমাল কিন্তু কিছুতেই বিয়ে করতে চাইতো না। কত যে যোগ্য মেয়ের সন্ধান দিয়েছি, তমাল কিন্তু কখনোই বিয়েতে আগ্রহ দেখায়নি। অতঃপর ওর পরিবার বিশেষ করে আমেরিকা থেকে দেশে বেড়াতে আসা বড় বোনের চাপেই রূপার সাথে বিয়ের এই সম্বন্ধটা ফাইনাল হয়। বিয়ের প্রস্তুতিও এখন চলছে বেশ জোরেশোরে।
“দোস্ত তোর সাথে একটা গোপন কথা শেয়ার করছি। আমার এই ভীষণ কষ্টের কথাটা চাইলেই কাউকে শেয়ার করতে পারছি না। তোকেই আজ প্রথম জানালাম, আমি ইরেকশনাল ডিসফাংশনের ডায়াগনোজড পেশেন্ট। গত সপ্তাহেই নিশ্চিত হলাম। দোস্ত আমি নপুংসক।” তমালের বলা শেষ কথাটায় আমি ভীষণ কষ্ট পেলাম, ওর চোখে পানি। আজ সন্ধ্যায় প্রিয় বন্ধুর কাছ থেকে এরকম কিছু শুনতে হবে, আমি কিন্তু কিছুতেই কল্পনা করতে পারিনি। দীর্ঘদিন ধরেই যে এটা ওর সমস্যা, তমাল আমার কাছে আছ অকপটে শেয়ার করলো। তাইতো এতোদিন ধরে বিয়েতে ওর অনাগ্রহের বিষয়টি টের পেলাম।
“দোস্ত সমস্যাটা আঁচ করতে পেরেই কিন্তু আগে কখনো বিয়েতে আগ্রহ দেখাইনি। কিন্তু বাবা যখন রূপার সাথে আমার বিয়েটা ফাইনাল করে ফেলে, তখনই আমার টনক নড়লো। এরই মধ্যে রূপার সাথে আমার কিন্তু বার কয়েক দেখাও হয়েছে। ও আমাকে হবু স্বামী বলে ধরে নিয়ে আন্তরিকতা দেখাতেই প্রথমবারের মতো ডাক্তারের শরনাপন্ন হলাম। ডাক্তার আমার সমস্যাটা নিশ্চিত করতেই, আমি সিদ্ধান্ত নিলাম বিয়েটা করছি না, ভেঙ্গে দিব। আর যাই হোক রূপার জীবনটাতো আমি নষ্ট করতে পারি না।” ভীষণ মন খারাপ করে বলা তমালের কথাখুলো আমাকেও ছুঁয়ে গেল। বিষন্ন মনে আমিও তমালের সিদ্ধান্তের সাথে একমত হলাম।
এরপর আমি তমালের বাবার সাথে বিষয়টি নিয়ে একান্তে কথা বললাম। আংকেলের মূর্ছা যাওয়ার দশা। আমি আংকেলকে আশ্বস্ত করলাম, যথাযথ চিকিৎসা করলে তমাল সুস্হ হয়ে উঠবে। তবে এই মুহূর্তে তমালের পক্ষে বিয়ে করা সম্ভব নয়, সবকিছু বিবেচনা করে আংকেলও মেনে নিল। এরপর পারিবারিক সমঝোতার মাধ্যমেই তমাল রূপার বিয়ের পরিকল্পনাটা বাদ দেওয়া হল।
এরপর তমালের যথাযথ চিকিৎসা নেওয়ার বিষয়টিতে ওর পরিবারের সাথে আমিও জড়িত হয়ে গেলাম। ডাক্তারের পরামর্শ ও সুচিকিৎসায় বছর দুয়েক পর তমাল কিন্তু আর নপুংসক নয়। এরপর প্রচন্ড আত্মবিশ্বাস নিয়েই তমাল বিয়ে করলো, বেশ জাকজমকের সাথে। বিয়ের পর সবকিছু ঠিকঠাক মতো চলছে, তমাল এটা কনফার্ম করতেই ওর পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মতো আমিও হাফ ছেড়ে বেঁচেছিলাম।
এরপর বছর খানেকের মধ্যেই তমালের কন্যা সন্তানের বাবা হওয়া, সিদ্ধেশ্বরীতে ওর ফ্ল্যাট কিনে উঠে যাওয়া, ওর স্ত্রীর একটি নামী বেসরকারি কলেজে চাকুরী হওয়া এসব খুশির সংবাদে যারপরনাই আনন্দিত হয়েছি। তবে এসব খুশির সংবাদ তমালের বলা ” দোস্ত আমি আর নপুংসক নই!” ঐ সংবাদটার কাছে কিছুই নয়।
(শেষ।)
৪.১৮+ প্রেমের উপন্যাস
“অবৈধ”
———————————————————————————
আজ আমার শরীর ও মন, দু’টোই ভিষণ খারাপ….
শুনেছি এই অবস্থায় শরীর খারাপ থাকেই, সাত মাস চলছে আমি গর্ভবতী। তাই হয়তো….কিন্তু মন খারাপ অন্য কারণে, কারণ টা ঠিক বুঝতে পারছি না তবে অনুমান করতে পারছি…
আমি অবিবাহিত মেয়ে। প্রেমিক কে ভালবাসার প্রমাণ দিয়েছিলাম। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারলেও তার বউ হতে পারিনি, সে তো আমাকে ভালোবাসেনি কখনো। প্রয়োজন মিটিয়েছে কেবল……
যেদিন বুঝলাম আমি মা হতে চলেছি, সবার আগে মা কে বলেছিলাম। ভেবেছিলাম কেউ না বুঝলেও মা বুঝবে…নাহ, মা বুঝেনি। সেদিন বাবা মা মিলে খুব মেরেছিল। পরদিন মেডিক্যালে নিয়ে গিয়েছিলো গর্ভপাত করাতে…
আমি সেখান থেকে পালিয়ে বাসায় চলে আসি..প্রথমেই একবার ভুল করেছি কাউকে বিশ্বাস করে, আবার করব?
সবার মতে পাপ করেছি। আচ্ছা আমি পাপ করেছি,কিন্তু বাচ্চাটার কি দোষ? ওকে কেন মারবো? কোন অধিকারে মারবো?
সেদিন থেকে বাবা মা আমার সাথে কথা বলেনা…আমার কলেজ যাওয়া বন্ধ,বাইরে যাওয়া বন্ধ…সারাদিন রুমে বসে থাকি, ভাবতে থাকি কিভাবে কি করব! কিভাবে সবকিছু সামলাবো! ভাবতে থাকি মানুষ কিভাবে কারো বিশ্বাস ভাঙে? কিভাবে সবকিছু লুটে নিয়ে ছুড়ে ফেলে দেয়?
আজ মা বাবা যাচ্ছে বড় আপাকে আনতে। বড় আপারও বাবু হবে। তারও প্রায় সাত মাস চলছে…বহু কষ্টে আপার বাবু হচ্ছে। বিয়ের ৬ বছর হয়ে গেছে, অনেক চেষ্টা করেছে,অনেক ডাক্তার দেখিয়েছে, তারপর এই বাবু….
সব্বাই খুশি! আপার কত্ত যত্ন! দুলাভাই রোজ সকালে এসে দেখা করে যায়, আবার রাতে অফিস সেরে আগে এখানে আসে ফলমুল নিয়ে, তারপর বাসায় যায়…
মা কে দেখি আপার মাথায় তেল দিয়ে দিতে, এই ওই কত বারণ করতে, এটা খেতে ওটা না খেতে বলতে….
আমাকে বলেনা, আচ্ছা আমার দোষের শাস্তি আমার বাচ্চাটা পাচ্ছে কেন? সে তো মাসুম! সে তো নির্দোষ, তারপরেও কেন?
একদিন খুব পেট ব্যথা করছিলো, আপার কাছে গেলাম জিজ্ঞেস করতে যে কি করব? আপা কি নিষ্ঠুর ভাবে বলে দিলো, “নিরা শোন এভাবে তুই আমার কাছে আসবি না! তোর পাপ আমার বাচ্চার আশেপাশে আসুক আমি তা চাই না!” কাঁদতে কাঁদতে ফিরে এলাম নিজের ঘরে….আপা এতো টা বদলে গেছে! এই আপাই তো বলতো, “নিরু পাগলি তোর বাবু হলে আমাকে দিয়ে দিস, আমার তো মনে হয় আর বাবু হবেনা রে!” আর আজ………..
মা বুঝি সব দেখেছে, শুনেছে….
তাইতো এসেছিল আমার কাছে…বলে গেলো “তোর আপার বাচ্চা টা খুব কষ্ট করে হচ্ছে তো তাই ও খুব ভয়ে আছে, তুই ওর কাছে যাস না কেমন? কোনো দরকার হলে আমাকে বলিস।” মার চোখে পানি ছিল! কেন ছিল? কে জানে….
এক রাতে আপার খুব ব্যথা উঠলো, তাকে মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়া হলো…সবাই গেছে, আমি যেতে পারিনি। আমাকে নিয়ে যাওয়া হয়নি, বাইরের কেউ যদি জেনে যায় মান সম্মান থাকবে না সেই ভয়ে লুকিয়ে রাখা হয় আমাকে….
কি নিয়ম এই দুনিয়ার! একদিকে বিবাহিত একজন মা হলে সবার ভালবাসা পায়,আদর যত্ন পায়, সম্মান পায়….অপরদিকে, একজন অবিবাহিত মা হলে তাকে ঘৃনা করা হয়! বাচ্চাকে অবৈধ বলা হয়! আচ্ছা, বাচ্চা বৈধ অবৈধ হয় না কি? বাচ্চা তো পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর নিয়ামত বলেই জানতাম।
ভোরবেলায় মা ফিরলো, জানতে পারলাম আপার বাচ্চাটা পেটেই মারা গেছে…
আপার অবস্থা ভালো না…জ্ঞান ফিরেনি…
খুব বেশি কষ্ট হচ্ছিলো আপার জন্য! আপার কত দিনের শখ স্বপ্নের বাচ্চা টা এভাবে চলে গেলো! এসব ভাবতে ভাবতেই আমার প্রসব ব্যথা শুরু হয়ে গেলো! মা কে ডাকি, ব্যথায় কাতরাতে থাকি, পাগলের মতো করতে থাকি ব্যথায়!
কতক্ষণ সময় গেছে জানিনা, চোখ খুলে পাশে পেয়েছি একটা রাজপুত্র! মা আমার রাজপুত্র কে কোলে নিয়ে বসে আছে! আমাকে বলছে, “নিরা দ্যাখ, এক্কেবারে তোর মতো হয়েছে তোর ছেলেটা!”
কোলে নিয়ে মনে হলো যেন দুনিয়ায় থেকেই স্বর্গ সুখ পেয়ে গেলাম!
সেদিন রাতে বাসায় দুলাভাই আসলো, আমার কাছে এসে বললো, “নিরা, তোর আপার অবস্থা ভালো না, ও জ্ঞান ফিরে থেকেই পাগলের মতো করছে,বাচ্চা খুঁজছে। আমরা বলেছি বাচ্চা পাশের কেবিনে আছে…….
ও দেখতে চায়! আমি জানিনা কিভাবে তোকে বলবো, বলা উচিৎ না সেটাও বুঝছি তাও উপায় না পেয়েই বলছি, তোর বাচ্চাটা তোর আপাকে দিবি!?”
আমি বুঝতে পারছিলাম না কি বলবো!
মায়ের মন বলছিলো, এই তো আমার বাচ্চা আমি দিবো কেন? অন্যদিকে বোনের মন বলছিলো, আপাকে বাঁচাতে হলে এইটা করতেই হবে! আর আমার বাচ্চা বাবার নাম পাবে, পরিচয় পাবে, এছাড়া আর কি চাই আমার?
আমার কলিজার টুকরা টা কে তুলে দিলাম দুলাভাই এর হাতে…বললাম “নিয়ে যান আপা আর আপনার ছেলেকে!”
দুলাভাই আমার বাবুসোনা কে নিয়ে গেলো।
নিজের সন্তানকে অন্যের হাতে তুলে দেয়ার কষ্ট শুধুমাত্র সেই মা ই বুঝবে, যেই মা কেবলই তার সন্তান দিয়েছে…
এই কষ্ট মাপার যন্ত্র নেই! তারপরেও স্বস্তি পাচ্ছিলাম এই ভেবে যে, আমার সন্তানের মা বাবা দুজনায় থাকবে, সে এই সমাজে মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারবে! আমার কাছে থাকলে পদে পদে এই সমাজে নিকৃষ্ট নিয়মের জাঁতাকলে পিষে যেতে হতো ওকে,
তা আর হবেনা!
ও এখন থেকে বৈধ, কারণ ওর বাবা আছে! এই সমাজে বৈধতার জন্য বাবার নাম জরুরি! মায়ের পেটে নয় মাস থাকার চেয়েও বেশি জরুরি!
মা অনেকদিন পর কাছে এসে মাথায় হাত রেখে, কপালে চুমু দিলো। তার বুকের মাঝে আমাকে নিলো।
আমি তার বুকে মুখ গুঁজে বললাম, “আমার বাবুসোনা কে আর কেউ অবৈধ বলতে পারবে না।
তাইনা মা?”
মা বললো “বাচ্চা কখনো অবৈধ হয়না রে মা!
আমাদের সমাজটাই অবৈধ!”
৫.বিশ্বের সেরা নিষিদ্ধ প্রেমের উপন্যাস
আমাকে হা-ডু-ডু খেলার মাঝখান থেকে এনে বিয়ের আসরে বসানো হয়।
আমি খুব রেগে মাকে বকা দিচ্ছিলাম। মা আমার চুল টেনে কাল আমাদের বাসায় আসা দাদা টার পাশে বসিয়ে দিলো। আমি খেলা ফেলে এসেছি তাই আমাকে ডাকতে এসে আমার বন্ধুরা আমাকে এই অবস্তায় দেখে চলে যায়।
বাবা চা বাগানের সাধারণ লেভেলের অফিসার। এইটা আমাদের কলোনী। আট পরিবারের এই পাড়া। এক পাশে উচ্চ লেভেলের অফিসার দের পাড়া অন্য পাশে শ্রমিকদের। তাই এই পাড়ার বাইরে যাওয়া হয় না। আর এই আট পরিবারে দশ ছেলে মধ্যে আমি একটা মেয়ে। ওদের সাথেই বড় হই আমি। কে ছেলে কে মেয়ে অত কিছু বুঝার মতো জ্ঞান আমাদের ছিলো না। এক সাথে খেলি, হেরে গেলে মারামারি করি, আবার একজন অন্যজনকে ছাড়া চলে না।
আমরা চার জন এক ক্লাসে অন্যরা ছোট। তবে খেলায় সবাই সমান। এইখানের স্কুলে মাত্র পনের বছর বয়সে মেট্রিক পরীক্ষা দিয়ে ফেলি। এখন কোন পড়ালেখা নেই তাই সারাদিন ওদের সাথে ঘুরি। বিশাল বিশাল সবুজ গাছের ডালে সবুজের গালিচায় মাঝে মধ্যে কোথাও কৃষ্ণচূড়া ছড়ানো পাহাড়ের খাদে কাটে আমাদের ছুটি।
মা আমাকে ঘরে রাখতে চায়। আমি শুনি না। সাথে ছোট ভাই অনুপকেও সাথে নিয়ে যাই।
একদিন ঘুরতে ঘুরতে বড় সাহেবদের পাড়ায় পেয়ারা চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ি। ওখানের এক স্যার আমাকে ডেকে বাবার নাম আর পাড়া কোনটা জিজ্ঞেস করে আমাদের যেতে বলে। ওনার একটা মাত্র ছেলে সে নাকি প্রতিবন্ধী তাই তার সাথে বিয়ে দেওয়ার জন্য আমাকে পছন্দ হয়েছে। বাবা চিন্তায় পড়ে যায়। বাবার আপন বলতে শুধু এক বোন। মায়ের দিক থেকে কেউ নেই কারণ মা ওদের অমতে বাবাকে বিয়ে করেছিলো।পিসি টা ঢাকায় থাকে, বাবা ওনাকে সব খুলে বললে ওনি ওনার ছেলেকে নিয়ে আসে কাল রাতে। আজ তার সাথে আমার বিয়ে। আজ রাতেই চলে যাবে ঢাকায়। আমি তখনো বুঝি নি বিয়ে কি, কোথায় যাবো? এইসব আমি পরে জেনেছি।
আমার কাছে এই কলোনী বাইরে যা কিছু তা বাইরের দুনিয়া বলেই জানি। দেখা হই নি কখনো। পিসি এসে আমাকে জড়িয়ে ধরেছিলেন। আমি নাকি একদম ওনার মেয়ে রিয়ার মতো। রিয়াকে আমি একবার দেখেছি। সব সময় অসুস্থ থাকতো। ক্যান্সারে শেষমেষ নিয়ে গেলো তাকে অন্য দুনিয়া।
মা আমাকে বলেছিলো আমার পরীক্ষা শেষ। আবার পড়া শুরু হতে হতে আমাকে বেড়াতে পাঠাচ্ছে। কাপড় নিতে চাইলে আন্টি বলে রিয়ার অনেক কাপড় পড়ে আছে নতুন। কিছু নিতে হবে না। তাও আমি দুইটা প্যান্ট নিয়েছিলাম কারণ সবে সেলোয়ার পড়া শুরু করেছিলাম দড়িতে গিট লেগে যেতো তাই মা রাবার দিয়ে সেলোয়ার বানিয়ে দেয়।
আমি পুরো রাস্তা ঘুম ছিলাম। সকালে ডেকে তুলে আমাকে বাসায় ঢুকানো হয়।
আমাদের সেমি-পাকা ঘর, স্যাতস্যাতে বাথরুম, ৬০ ওয়ার্ডের বাতি আর ইট ভেঙে ঘাস উঠা ঘরের থেকে এই বাড়ি যেন রাজ বাড়ি।
আমাকে পিসির সাথেই রাখা হয় সারাদিন এই ঘর ও ঘর ঘুরে বেড়ায় টিভি দেখি আর খেয়ে দেয়ে ঘুমাই।
মায়ের সাথে কথা হলে মা বলতো পিসির সাথে হাতে হাতে কাজ করতে। আমি রান্নাঘরে গেলেই পিসি বকা দিতো বলতো যখন সময় হবে সব তোকে করতে হবে।
আমি বলতাম কিছুদিন পর তো চলে যাবো। উনি তখন হাসতেন। আর বলে
-যা, ঘর গুছিয়ে ফেল তাহলে।
আমি ভুল করে উনার রুমে চলে যাই। বিছানায় কম্বল গায়ে ঘুমাচ্ছিলেন। উনি আমার সাথে কথা বলেন না তেমন। তার নাকি পরীক্ষা চলছে। আমি কম্বল টান দিতে উনি ধরফরিয়ে উঠে বসেন। আমি ভয় পাই। উনি বলে,
-এই মেয়ে, এইখানে কি করো? কিছু লাগবে?
আমি মাথা নেড়ে চলে আসি। আর কখনো যাই না সে রুমে।
মা বাবাকে আমাকে নিতে আসে না। রেজাল্ট দেওয়ার পর কাগজ পত্র নিয়ে আসে। এইখানের কলেজে ভর্তি করানোর জন্য। আমি বলি,
-আমি আর বাড়ি যাবো না?
মা বলে,
– মায়া এইটাই তোর বাড়ি। তোর বিয়ে গেছে। আর যাওয়া হবে না তোর সেখানে। এরা তোর মা-বাবা আর এই দাদা টা তোর স্বামী। এরা তোকে অনেক ভালো রাখবে। অনেক ভালোবাসবে। এতো ভালোবাসবে যে আমাদের ভুলে যাবি। আমাদের চেয়ে বেশি ভালোবাসবে।
আমি অবাক হয়ে বলি,
-এরচেয়ে বেশি কেউ ভালোবাসে নাকি?
মা হেসে বলে, বোকা মেয়ে।
মা বাবার সাথে ওটা আমার শেষ দেখা। মাস খানিক পর পাহাড় ধসে আমাদের পুরো কলোনী চাপা পড়ে কেউ বেঁচে থাকে না। অতটুকু বয়সেই বুঝে গিয়েছিলাম আমি খুব একা। এরা ছাড়া কেউ নেই।
আমাকে এইখানের কলেজে ভর্তি করানো হয়। প্রতিদিন এক প্যান্ট পড়তাম তা পিসি খেয়াল করে। আমি চুপ থাকি। পরে বলি,
-আমি দড়ি প্যান্ট পড়তে পারি না।
পিসি এত জোরে হাসে। আর বলে,
-বোকা মেয়ে, আগে বলবি তো।
কলেজে গিয়ে আমি যেন কুয়ো থেকে সাগরে এসে পড়েছি। এইখানের মেয়েদের চালচলা, কথাবার্তা আমার কাছে টিভিতে দেখা মেয়েদের মতো লাগে। এইটা মেয়েদের কলেজ ছেলে ছিলো না তাও মেয়েদের মুখে শুধু ছেলেদের কথা ছিলো। আর একটা শব্দ বয়ফ্রেন্ড-গার্লফেন্ড।
আমার কোন বান্ধবী ছিলো না। তাও মাঝেমধ্যে ওদের মাঝে গিয়ে বসতাম। একজন বললো-
-কি রে মায়া, তোর কয়টা বয়ফেন্ড ছিলো?
আমি চুপ থাকায় আবার বলে,
-আরে ছেলে বন্ধু!
– ওহ! দশজন।
– ও গড, কি বলিস? কেমনে সামলাতি?
আমি আবার বোকা হয়ে যাই, তখন সেঁজুতি নামে একটা মেয়ে আমাকে বাঁচায়।
-আরে ও তো গ্রামে ছিলো, মে বি স্কুল ফ্রেন্ডদের কথা বলছে। তাই না মায়া?
-হ্যাঁ, আমরা এক পাড়ায় ছিলাম সবাই এক সাথেই খেলতাম। তবে এখন কেউ নেই, সবাই যে-
সবাই এত জোরে হেসে উঠে আমি বাকি কথা বলতেই পারি না।
সেঁজুতি ওদের মতো হলেও কেমন যেন কোমল ছিলো। আমার সাথে বেশ ভাব হয়ে গেলো। ও ক্লাস না করে বয়ফ্রেন্ডে সাথে ঘুরতে গেলে আমি ওর জন্য নোট করে রাখি।
ও বললো- চল তোর বাসায় যাই, কে কে আছে রে?
– পিসি, পিসো আর এক দাদা। মা বলেছিলো আমার নাকি দাদাটার সাথে বিয়ে হয়ে গেছে।
সেঁজুতি হাটতে হাটতে দাঁড়িয়ে যায়।
-এমা, তোর বিয়ে হয়ে গেছে?
তার ঠোঁটে চিমটি কেটে বলে,
-ফার্স্ট নাইট কেমন ছিলো রে, ব্যথা পেয়েছিলি বেশি? আমি তো কত স্বপ্ন দেখি এই দিনটা নিয়ে।
আমি ওর কথার আগামাথা কিছু বুঝি না।
-কি বলিস এইসব? আমি তো পিসির সাথে ঘুমাই।
আমি ওকে সব বলি। তখন ও বলে,
-তার মানে তোদের এখনো সেক্স হয় নি?
আমি ওর মুখে প্রথম এই শব্দটা শুনি। তখন ও আমাকে অনেক কিছু বুঝায় যা আমি হা করে শুনি। মোবাইলে কিছু ভিডিও দেখায় আমি প্রথমে ভয় পেয়ে যাই। আমার ভয় পাওয়া দেখে ও আরো জোরে হাসে।
ও বুঝায় সবাই করে এইগুলো। আমি অবাক হয়। যেটা আমার কাছে হাত পা চোখের মতো প্রস্রাবের জায়গা সেটার জন্য পুরো আলাদা একটা দুনিয়া। এত পাগলামী মানুষের।
যতই বাজে লাগুক না কেন ব্যাপার গুলো আমাকে চম্বুকের মতো টানতে থাকে। মাঝে মধ্যেই পিসিকে রুমে পেতাম না। পিসো রিয়ার রুমে থাকতো হয়ত ওখানে যায়। আগে ব্যাপারটা কিছু না লাগলেও যখন থেকে বুঝতে পারি আমার ভীষণ লজ্জা লাগতো। পরের দিন আমি পিসির দিকে তাকাতে পারতাম না লজ্জায় কিন্তু পিসির কোন চেঞ্জ থাকতো না। আমি সেজুতিকে বললে ও বলে,
-দুর বোকা মেয়ে, ওনারা তো জামাই বউ।
একদিন সবাই খেতে বসি। আমি এখনো কোন কাজ করি না। রান্নাবান্না সব পিসি করে। আমি বলি,
-পিসি আরেকটু ভাত দাও না।
তখন পিসি ভাত দিতে দিতে বলে,
-তুই আমাদের মা-বাবা ডাকতে পারিস না?
আমি মুখ ফসকে বলে ফেলি,
-তো উনাকে কি দাদা ডাকতে হবে?
সবাই এত জোরে হেসে উঠে আমি লজ্জায় পড়ে যাই। এই লোকটাকে আমি খেয়ালই করি নি কখনো। কি সুন্দর করে হাসে। চশমা পড়া ছোট খাট ফর্সা মুখে এত মায়া। আমি যে উনার দিকে তাকিয়ে আছি আমি নিজেই জানি না। উনার চোখ পড়তেই ভ্রু কুচকে ইশারা করলেন, কি?
আমি তাড়াতাড়ি চোখ নামিয়ে ফেলি লজ্জায়। সে দিনের পর থেকে আমি ওনার আশেপাশে ঘুরতে থাকি। গিয়ে রুম গুছিয়ে রাখি। সে টিভি দেখলে তখন সোফায় গিয়ে বসি। সে কোন দিন কথা বললো তো কোন দিন বললো না। কিন্তু যখন সে বাসায় থাকে না আমার ভীষণ বিরক্ত লাগে। সেজুতিকে বলি, ও বলে, আমি নাকি প্রেমে পড়ছি।
-তাহলে তার ও কি এমন লাগে?
– তা তো জানি না। লাগলে তো সেও তোর দিকে তাকিয়ে থাকতো তোদের মধ্যে এখনো তেমন কোন সর্ম্পক নেই তার ও ইচ্ছে নেই। মে বি তার কোন গার্লফ্রেন্ড আছে।
একদিন পিসিরা এক আত্নীয়কে দেখতে যাচ্ছে। খুব অসুস্থ নাকি। একটু দুরে। আমার কলেজ নেই। উনি ভার্সিটি যাচ্ছিলো। তখন পিসি বললো আমাকেও নিয়ে যেতে। আমি তো ভীষণ খুশি। তারাতারি রেডি হয়ে আসি। খুব সুন্দর করি সাজি, সবুজ জামা পড়ি, কাজল দিয়ে চুড়ি পড়ি।
উনি কিছুক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে আবার চোখ নামিয়ে ফেলে।
তার সাথে এই প্রথম রিকসায় উঠেছি অদ্ভুত ভালো লাগছিলো। রিকসায় একটু একটু হাত লাগছিলো। আমি চুপ ছিলাম। সে বলল,
-কি নিয়ে পড়ায় ইচ্ছে আছে তোমার ভার্সিটিতে?
-আমার রসায়ন খুব ভালো লাগে।
-বাহ, বেশ তো। আমিও তো রসায়ন নিয়েই পড়ছি।
আরো কিছু টুকটাক কথা বললেন। আমি শুধু তার দিকে তাকিয়ে আছি। ভার্সিটিতে যাওয়ার পর সবাই শুধু জিজ্ঞেস করছিলো আমি কে?
উনি বলছেন, ওর নাম মায়া।
মনে হচ্ছিলো সবাই আমার কথা জানে। আমার ভালোই লাগছিলো। কিন্তু একটা মেয়েকে দেখলাম এসে ধুম করে পিঠে কিল বসিয়ে দিলো। আবার গায়ে পড়ে হাসছে। আমাকে দেখে বলল, আদিত্য এইটা কে?
-ও মায়া।
– আচ্ছা তোর পুতুল বউ। বলে হেসে গড়িয়ে পড়ছে। তখন উনি ওর মুখটা চেপে ধরেছে। মেয়েটা হেসেই যাচ্ছে। আবার কাছে গিয়ে কানে কানে কি যেন বলছে।
কেন জানি না আমার বুকের ভিতর খুব জ্বলছে আমি নিশ্বাস নিতে পারছিলাম না। এমনটা আমার কখনো লাগে নি।
-এই মায়া কিছু মনে করো না, ওর নাম অবন্তি, আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। বেশি ফাজিল আর কি।
আমি কিছু না বলে একটু হাসলাম। আসার সময় রিকশায় বললাম,
-মেয়েটা কি আপনার গার্লফ্রেন্ড?
-আরে না। ফ্রেন্ড। কেন?
– না আমার বান্ধবীদের দেখি বয়ফ্রেন্ডের সাথে এইভাবে কথা বলে। আর ছেলে মেয়ে বন্ধু হয় নাকি এই শহরে?
– হাহা৷ বোকা মেয়ে। তুমি যখন ভার্সিটি উঠবে তখন তোমারো বন্ধু হবে। তো তোমার বয়ফ্রেন্ড আছে নাকি?
আমি খুব রেগে ছিলাম। তখন রাগ দেখিয়ে বললাম,
-আমার তো বিয়ে হয়ে গেছে। আমার বয়ফ্রেন্ড কেন থাকবে?
-তো আমারও তো বিয়ে হয়ে গেছে। আমার কেন থাকবে?
এতক্ষনের রাগ সব পানি হয়ে গেলো। মনে মনে কি যে খুশি লাগছিল৷ সেদিন পিসিরা আসল না। বৃষ্টি তাই। আমার একা ভীষণ ভয় লাগছে। তাই ওনার রুমের ওখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম।
– তোমার ভয় লাগলে তুমি এইখানে থাকতে পারো।
আমিও কথা না বাড়িয়ে খাটের এক কোণে শুয়ে গেলাম মাঝে বালিস দিয়ে। কিন্তু ভয় লাগছিল। যদি,
ঘুমের ঘোরে ওনার হাত একবার গায়ে এসে পড়ে আমি আঁতকে উঠে বসে থাকি। সারারাত ঘুম হয় না। সকালের দিকে ঘুমিয়ে পড়ি। সকালে ঘুম ভাঙ্গে ওনার ডাকে,
-মায়া তুমি এইভাবে বসে আছো কেন?
-আপনি গায়ে হাত দিয়েছিলেন তাই,
-সরি, একা থাকার অভ্যাস তাই। যাও
মা-বাবা এসে গেছে।
আমি রুম থেকে বের হতেই পিসি হাসে।
-কি রে ঘুম কেমন হলো?
-সারারাত তো ঘুমাতেই পারি নি উনার জন্য।
পিসি আর পিসো চোখাচোখি হাসছে।
আমি কিছু না বুঝে আবার বললাম-
-তোমার ছেলে এত হাত পা ছুড়ে উঠে বসে ছিলাম।
তখন পিসি এত জোরে হেসে উঠে আমি লজ্জা পেয়ে যাই। তখন উনি পিছন থেকে আলতো করে মাথায় বারি দিয়ে বলে
-বোকা কোথাকার।
এরপর পিসি আর আমাকে তার সাথে থাকতে দেয় না। এইটা নাকি আমার রুম৷ একদিন সে রুমে ঘুমাতে পারলে প্রতিদিন পারবো। আমি অনিচ্ছা শর্তেই যাই। মাঝেমধ্যে বালিস টপকে হাত এসে গায়ে পড়ে। প্রথম প্রথম বিরক্ত লাগলে। আমি খেয়াল করলাম কিছুদিন পর আমি অপেক্ষা করতাম কখন একটু আঙ্গুলের ছোয়া লাগবে। দুইদিন হাত আর এইদিকে আসে না। আমার ভাল লাগে না। অস্থির লাগে। ইচ্ছে করে গিয়ে হাত টা টেনে এইদিকে নিয়ে আসি। কিছুদিন পর ইচ্ছে করে আমি যাই বালিশ টপকে। একদিন পর খুব বৃষ্টি হচ্ছিল আমি জেগে ছিলাম সেও, আমি বালিশ সরিয়ে নিলে সে পাশ ফিরে। দুইজনের চোখেই সে রাতে হয়ত কিছু ছিলো যা কোন কথায় থাকে না। ভারী নিঃশ্বাস যেন মায়ারজাল।
এরপর শুধু তার স্বার্থপরতার গল্প। তার রোজ আমাকে বুকে নিয়ে ঘুমাতে হয়। একটু নড়াচড়া করা যায় না। নড়লে আরো জোরে চেপে ধরে। আমিও খেয়াল করলাম এরচেয়ে শান্তির ঘুম আমার কোথাও হয় না।
মাঝেমধ্যে রাগ করলে বালিশে শুয়ে পড়তাম তাই বিছানায় শুধু একটা বালিশ।
আমি কোথাও গেলে কি পড়ব আজ অবধি আমি ঠিক করতে পারি না। সে পছন্দ করে দিবে।
আর একটা আপদ, প্রতিদিন সে ফুল নিয়ে আসবে আমার মাথায় লাগাতে হবে। পিসি হাসে। আমার লজ্জা লাগে।
তার কি লাগবে না লাগবে আমাকে দেখতে হবে। মুখে কিছু বলে না। বললে সে বলে,
-আমি যদি বলে দিই, তোমার তো জানা হবে। এখন নিজে বুঝে নাও তাহলে আমায় তুমি আমার চেয়ে বেশি জানবে।
আমি মুখ ভেংছিয়ে বলি,- কত শখ!
– শখ নয় রে বোকা মেয়ে, এইটা ভালোবাসা।
তার ভালোবাসা যেন অত্যাচারে ভরপুর। গভীর ঘুম থেকে টেনে তুলে বলে,
-যাও তো খয়েরী শাড়ি টা পড়ো, আমি চুলে ফুল লাগাবো।
আমি ভয়ানক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকি কিন্তু করতে হয়। এরপরে যে সে মুগ্ধ চোখে শুধু চেয়ে রবে তার চোখের সে হাসির জন্য করি।
বৃষ্টির দিনে ব্যলকনিতে নাকি রাত কাটাতে হবে, সে আরেক জ্বালা। যেতে না চাইলে কোলে তুলে নিয়ে যায় চেয়ারে বসে থাকে। আমিও তার বুকে মুখ গুজে শুনতে থাকি, ভালোবাসি ভালোবাসি সে সুরে কাছে দূরে…….
এই যে কেমন ভালোবাসার জ্বালা আমি বুঝি না। সে চোখের ভাষায় নাকি শব্দ বলবে আমাকে বুঝতে হবে। প্রথম প্রথম না বুঝলেও পরে সব বুঝতে পারি।
এখন সব বুঝি পাকা গিন্নি আমি। ছেলেকে শাসন করা কঠিন মা আমি। মা বাবার খেয়াল রাখা বউ আমি। শুধু তার কাছেই রয়ে গেলাম বোকা মেয়ে হয়ে।
তার কাছে গেলে যেন আমি আসলেই বোকা হয়ে যাই। বুদ্ধি সব তার পায়ের কাছে রেখে শুধু ছেড়ে দি নিজেকে তার বুকে যেন নদীর পানিতে চুল খোলা রেখে শুধু গা ভাসিয়ে রাখা।
বাবা আমাদের ছেড়ে চলে গেলো ভীষণ খারাপ লাগতো মায়ের জন্য। কেমন যেন একা আর চুপ হয়ে যায়। আমার ভয় হয় ভীষণ ভয় হয়। আমি তো পারবো না এইভাবে একা থাকতে। তার অত্যাচার গুলো ছাড়া তো জীবন ভাবা যায় না।
তাকে ভীষণ ভাবে চেপে ধরি মাঝেমধ্যে, তখন সে আবার হাসে।
-বোকা মেয়ে, কোথায় যাবো? গেলে তোমাকে কে সামলাবে? তোমার শাড়ি কে বেছে দিবে?
এখন বয়স হয়ে গেছে তাও সে আমায় লাল শাড়ি পড়াবে। এখনো কাজল দিতে হয়। লাগাতে হয় ফুল। মানুষে হাসে, কারণ কোথাও গেলে এখনো হাত ধরে থাকে আমি নাকি পড়ে যাবো।
প্রতি পূর্ণিমা এখনো নির্ঘুম চায়ের কাপ হাতে কাটে। এখন ভগবানের কাছে শুধু প্রার্থনা করতে থাকি এই অত্যাচার যেন শেষ না হয়। থাক না এই অত্যাচারী মানুষটা এমন নতুন নতুন অত্যাচার নিয়ে৷
তার হলো মরণ রোগ। যেতে দেওয়া হয় না তার কাছে আমায়। এই রোগ নাকি ছোঁয়াছে। আমি বলি হোক না আমারো। কি দরকার তাকে ছাড়া আমার একার ভালো থাকা।ছেলে আমায় যেতে দেয় না তার কাছে। আমি ছুটে যাই। নিতে চাই সে রোগ। ভগবানের কাছে শুধু প্রার্থনা করতেই থাকি রাখো না বাঁচিয়ে আর কিছুদিন এই অত্যাচারী ভালবাসাটাকে।
ভগবান আমার কথা শুনে নি। তাকে নিয়ে গেলো সাথে সব অত্যাচার। আমাকে রেখে গেলো সুস্থ। এই যেন আরো বড় অত্যাচার।সত্যিই এখন আরো বোকা হয়ে গেলাম। শাড়ি বেছে দেওয়ার ঝামেলা নেই, সব লাল নীল শাড়ির রং ধুয়ে এখন সাদা।
তবে অত্যাচার গুলো যে এখনো ভীষণ জ্বালায়। বৃষ্টি রাতে এখনো ঘুম হয় না। বারান্দায় বসে থাকি। তবে এখন যে ভীষণ শীত করে আমার।
#অত্যাচারী_ভালোবাসা
#দোলনা_বড়ুয়া_তৃষা