More than love পর্ব ১১
মেঘলা_আহমেদ
“-মাল্টিভার্স আছে এটা বিশ্বাস করো তো?
রুহির কথায় সাইমন অবাক হয়ে বলল-
-” এটা শুধু বিজ্ঞানীদের ধারনা মাত্র। এর কোন অস্তিত্ব নেই।
-” সাইমন মন দিয়ে শোন। আলফা গ্রহ হল অন্য একটি ইউনিভার্সের গ্রহ। যেটি দেখতে হুবহু পৃথিবী গ্রহের মতো। বিশ্বজগতে বহু ইউনিভার্স আছে। এবং সবগুলোতেই একটা করে পৃথিবীর মত গ্রহ আছে। এমনকি প্রতিটা গ্রহতে এই পৃথিবীতে যা যা আছে তার কপি আছে। তোমার এমনকি আমারো কপি আছে ঐ সব ইউনিভার্স এ। এগুলো প্যারালাল ইউনিভার্স বুঝলে। মানে সমান্তরাল বিশ্ব। সবসময় সমান্তরালে চলে এই বিশ্বগুলো তাই আমরা কেউই এগুলো কে দেখতে পাইনা। যেমন ধরো এই ইউনিভার্স এ আমি তোমার সাথে কথা বলছি। কিন্তু অন্য ইউনিভার্স এ আমি তোমাকে চিনিও না। আবার হতে পারে অন্য কোন ইউনিভার্স এ আমরা দুজনেই মা/রা গিয়েছি। এমনটা হতেই পারে।
সাইমনের মাথায় সব তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। সে চোখ বন্ধ করে বলে –
-” তো এইসব প্যারালাল ইউনিভার্স এর ধারনা আমাকে দিচ্ছো কেন? এসব বলার জন্য ডেকেছো? আর এই আলফা গ্রহ দিয়েই বা আমি কি করবো।
রুহি সাইমনের পাশে বসে। কাঁধে হাত দিয়ে বলে-
-” ওহ সাইমন রিল্যাক্স। এত হাই/পার হচ্ছো কেন? তোমাকে এসব এখন আমার বলতে হচ্ছে। কিন্তু আমরা আমাদের প্ল্যানেট এ থাকলে এসব নিয়ে তুমিই রিসার্চ করতে। তোমার কি এটলিষ্ট কিছু মনে নেই। দাঁড়াও আমি বলছি। শোন আলফা আমাদের গ্রহ। আমরা আলফা গ্রহেই বসবাস করতাম। আর আমরা বর্তমানে অতীতে আছি। এই মেশিন টি আবিষ্কার করেছিল রোজার মা। আমরা আলফা বাসীরা উন্নত জাতি হয়েও এই মেশিন আবিষ্কার করতে পারিনি। এই মেশিনের ভাবনা তাদের মাথায় আসলেও, তারা কিছু ত্রুটির জন্য এক ইউনিভার্স থেকে আরেক ইউনিভার্স এ যাওয়ার পথ আবিষ্কার করতে পারেনি। কিন্তু এই পৃথিবীর বাসিরা সেটা করেছে। কিন্তু আলফা হচ্ছে প্রচুর উন্নত গ্রহ। পৃথিবী বাসিরা যা কল্পনাও করেনি আলফা বাসীরা তা বহু আগেই আবিষ্কার করে ফেলেছে। কিন্তু কি করে জানি এই মাল্টিভার্স ভ্রমনের ব্যাপারটা গোলমাল হয়ে গেছে। যা আলফা বাসির আগেই পৃথিবী বাসিরা আবিষ্কার করে ফেলেছে। আমরা আলফা প্ল্যানেট থেকে শুধু এই মেশিনের সিস্টেম সম্পর্কে জানতেই এখানে এসেছি।
সাইমন অবাক হয়ে শুনছে। এসব যেনো তার বিশ্বাস হচ্ছে না। অবাক কন্ঠে জিজ্ঞেস করে-
-” আচ্ছা আমরা যদি আলফা গ্রহেরই হয়ে থাকি তাহলে এই পৃথিবীতে এতগুলো বছর কি করছি। সিস্টেম জানতে কি এত সময় লাগে? এটার আবিষ্কার করার পদ্ধতি তো রোজার মায়ের কাছ থেকেই জানতে পারতে। পরে তাকে মে রে দিলেই হতো।
-” সাইমন তুমি যেমন বলছো আমরা ঠিক তেমনটাই করতাম রোজার মা থাকলে। কিন্তু রোজার মা আর আমার মায়ের জন্য সব উলোট পালট হয়ে গেছে। শোন একদিন সকালবেলা আমি বাবা কে সাহায্য করছিলাম ল্যাবের কাজে। আমার বাবা অনেক বড় একজন সাইন্টিস্ট। এই গ্রহের আয়মান একজন ডাক্তার এবং শুধু রোজার বাবা। আর আলফা গ্রহের আয়মান একজন সাইন্টিস্ট এবং রোজা আর রুহির বাবা। আমারো একজন যমজ বোন আছে যার নাম রোজা। আর এই পৃথিবীর রোজার ও একটা যমজ বোন ছিল। যে জন্মের সময়েই মারা যায়। মারা গিয়েছে ভালোই হয়েছে। তো শোন বাবার সাথে তখন ল্যাবে ছিলাম তখন বাহিরে অনেক শোরগোল শুনতে পাই। আমরা বাহিরে এসে দেখি রোজাপু কাঁদছে। আর পাশে একটা বিরাট মেশিন থেকে ধোঁয়া বেরোচ্ছে। জিজ্ঞেস করতেই সে বলে মা আর রোজা নাকি রান্না করছিল। তখনি এই মেশিন টা এখানে এসে আছড়ে পড়ে তীব্র আলোর সহিত। রোজা ভয়ে কাছে যাচ্ছিল না। কিন্তু মা সামনে পা বাড়াতেই দেখে তার মত হুবহু দেখতেই একজন মহিলা বের হয় মেশিন থেকে। মা অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিল। তখনি মহিলাকা চিৎকার করে বলে-
-” ও নো। আমি তো অন্য ইউনিভার্স এ এসে পড়েছি। তুমি আমার কপি তাইনা? টাইম মেশিন না বানিয়ে এ কি বানালাম?
মা কিছু বলতে যাবে তার আগেই দুজনে ফ্ল্যাশ করে ভেনিস হয়ে যায়। রোজাপু তারপর চিৎকার করে। তার কথা শুনে আমি থ হয়ে গেলাম। বাবা দেড়ি না করে আমাদের সিসিটিভি ফুটেজ থেকে করে দেখে রোজাপুর কথাই সত্যি। কিন্তু এরপর বাবা যা বলল তা শুনতে আমি প্রস্তুত ছিলাম না। আগেই বলে রাখি আমার বোন যে রোজা সে ছিল খুব ভীতু স্বভাবের। এতই ভীতু যে ভয়ে বাবার ল্যাবেও যেত না। বাবা তখন আমাদের দুই জনকে দুই পাশে নিয়ে বলে-
-” তোরা শোন। ঐ যে তোদের মায়ের মত দেখতে মহিলাটি উনি তোদের মা তবে এই গ্রহের নয় পৃথিবী গ্রহের। তোরা তো জানিস মাল্টিভার্স সম্পর্কে। সে অন্য এক প্যারালাল ইউনিভার্স থেকে এসেছে। আর প্যারালাল ইউনিভার্স ভ্রমনের মেশিন কেউ আবিষ্কার করতে পারেনি ঠিকভাবে। উনি টাইম মেশিন আবিষ্কার করতে গিয়ে ভুল করেছেন যার কারনে ব্ল্যাকহোলের মাধ্যমে এই আলফা প্ল্যানেট এ চলে এসেছে। কেউ যদি এক ইউনিভার্স থেকে অন্য ইউনিভার্স ভ্রমন করতে যায়। এবং তার কপির সাথে দেখা হয় তাহলে ফ্ল্যাশ হয়ে তারা দুজনেই ভ্যানিশ হয়ে যাবে। এখন তোদের মা কে ফিরিয়ে আনতে হলে কাউকে পৃথিবীতে যেতে হবে।
আমি এমনিতেই সাহসী ছিলাম। আর এগুলো আমার কাছে এডভেঞ্চার ছিল। তাই আমিই বলি-
-” বাবা আমি যাব পৃথিবী তে। রোজাপু তো এসবের কিছুই জানে না। তোমার সাথে আমি কত কিছু দেখেছি ছোটবেলা থেকে। আমার বিশ্বাস আমি পারবো মা কে ফিরিয়ে আনতে।
বাবা তখন আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে-
-” আমি জানতাম তুই যাবি। কিন্তু মা রে এখানে যেতে হলে তোর যে অনেক নিয়ম মানতে হবে। আর রোজা এমনিতেও যেতে পারবে না। কারন পৃথিবীতে ওর কপি আছে। ও যদি যায় তাহলে তোর মায়ের মত ভ্যানিশ হয়ে যেতে পারে। কিন্তু পৃথিবীতে তোর কোন কপি নেই। কারন তোর কপি আগেই মারা গিয়েছে পৃথিবীতে। তাই তুই যেতে পারবি। তোর ভ্যানিশ হওয়ার ভয় নেই। কিন্তু তোকে অতীতে যেতে হবে তার জন্য। রোজার সেই মা/রা যাওয়া বোন হয়ে বড় হতে হবে। কিন্তু তোর বর্তমানের সবই মনে থাকবে।
আমার মাথায় তখন অন্য চিন্তা। তোমার চিন্তা সাইমন। কারন আলফা প্ল্যানেটে কিছুদিন পরেই আমাদের বিয়ের কথা ছিল। আমি তখন কাচুমাচু হয়ে বাবাকে বললাম –
-” বাবা তাহলে সাইমনের কি হবে?
বাবা মৃদু হেসে বলল –
-” মা রে আমি জানি জোড়া হারালে কি কষ্ট হয়। তুই চিন্তা করিস না। আমি ভেবেই রেখেছি। পৃথিবী গ্রহে সাইমন ও বেঁচে নেই। তাই তুই তোর সাইমন কে নিয়ে যেতে পারবি তবে সাবধান ওর স্মৃতি আমি মুছে দেবো। যাতে ওর কিছু মনে না থাকে। যখন ঐ পৃথিবীতে তোর ২২ বছর পূর্ণ হবে তখনি ওকে নিয়ে তুই ফিরে আসবি আলফা তে।
সাইমন বেশ উত্তেজিত হয়ে বলে-
-” কিন্তু তোমার মা কে ফিরে পাবে কিভাবে?
তখনি দরজায় কড়া নাড়ে রোজা। জোড়েই বলে-
-” এই রুহি দরজা খোল তাড়াতাড়ি।
রুহির গলা শুকিয়ে আসে। লিপি ও তো নেই। রোজা যদি দেখে সে আর সাইমন একসাথে দরজা বন্ধ করে আছে তাহলে তো কেলেংকারি হয়ে যাবে। রুহি তাড়াতাড়ি করে সাইমনকে কোথাও একটা লুকিয়ে ফেলে। এরপর চুলগুলো একটু এলোমেলো করে হাই তুলে দরজা খুলে বলে-
-” কি হলো ডাকছিস কেন?
রোজা অবাক হয়ে বলে-
-” তুই এই দুপুরেও ঘুমাচ্ছিলি?
তখনি রোদ্দুর রুহির ঘরে ঢুকে বলে-
-” কি ব্যাপার সাইমন কোথায়?
চলবে………