মসজিদ আল-হারামকে হারাম কেন বলা হয়, জানেন কি?
ইসলামের প্রধানতম এবং পবিত্রতম মসজিদের নাম হচ্ছে মসজিদ আল-হারাম। এই মসজিদে আদায় করা এক রাকাত নামাযের সওয়াব লক্ষ রাকাতের সমান! এখানে অবস্থিত কাবার দিকে ফিরে মুসলিমদের নামাজ পড়তে হয়। হজ্জ ও উমরার পালনের জন্যেও মসজিদুল হারামে উপস্থিত হতে হয়। কিন্তু কেউ কি কখনো ভেবে দেখেছেন যে, এত পবিত্র যেই মসজিদ সেটাকে হারাম কেনো বলা হয়?
আমরা সবাই জানি হারাম শব্দের অর্থ হচ্ছে “নিষিদ্ধ”, তাহলে এই মসজিদের ক্ষেত্রেই কেন হারাম শব্দটি ব্যবহৃত হয়? অনেকে আবার না বুঝে ” হারাম” বললে গুনাহ হবে ভেবে এটাকে “হেরেম শরীফ” ও বলে থাকেন, যেটা সম্পূর্ণ ভুল। যাই হোক এবার মূল ব্যাখ্যায় আসছি।
আসলে এই পবিত্র মসজিদ এবং এর সংলগ্ন ৯৯ একর জায়গার পুরোটায় কিছু কাজকে হারাম বা নিষিদ্ধ করা হয়েছে যেগুলি ওই এলাকার বাইরে হালাল। যেমন: গাছ কাটা, গাছের পাতা ছেঁড়া, ফুল ছেঁড়া, প্রাণী হত্যা বা শিকার করা, অস্ত্র বহন করা, কোনো অপরাধের শাস্তি প্রদান করা এই কাজগুলি সাধারণভাবে হারাম না। কিন্তু এই মসজিদের বেষ্টনীর মধ্যে হারাম, আর তাই এর নাম মসজিদ আল-হারাম।
হারাম বলার দ্বিতীয় কারণটা হচ্ছে উপরে বর্ণিত কাজগুলোকে ওই এলাকায় হারাম করার মাধ্যমে এই মসজিদের পবিত্রতা আর অবস্থানকে একটা অন্যরকম উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
১৯৭৯ সালের আগ পর্যন্ত মসজিদ আল-হারামে আত্মরক্ষার জন্যেও অস্ত্র বহন করা নিষিদ্ধ ছিলো। ১৯৭৯ সালের নভেম্বরের ২০ তারিখ ফজরের নামাজের সময় ইসলামী চরমপন্থীরা জোহাইমান আল ওতাইবির নেতৃত্বে মসজিদ আল-হারাম দখল করে নেয়। জোহাইমান মসজিদে উপস্থিত সবাইকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ঘোষণা দেয় যে, তাদের নেতা মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল-কাহতানীই হচ্ছেন ইমাম মাহাদি এবং সব মুসলমানদের আহ্বান জানানো হয় তাকে মেনে চলার জন্য অথবা মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হতে।
ফ্রেঞ্চ কমান্ডোদের তও্বাবধায়নে সৌদি সরকার হাজার হাজার সৈন্য এবং কমান্ডো পাঠায় মসজিদ পুনর্দখলের জন্য। পুরো দুই সপ্তাহ সশস্ত্র অভিযানের পর অবশেষে ৪ঠা ডিসেম্বর মসজিদ আল-হারাম পুনরুদ্ধার সম্ভব হয়। এই লড়াইএ শতশত জঙ্গি, নিরাপত্তা বাহিনী ও বন্দী নিহত হয়। এই ঘটনার পর থেকে ইসলামী স্কলারদের সাথে আলোচনার পর সৌদি সরকার মসজিদ আল-হারাম সংলগ্ন এলাকায় মসজিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিরাপত্তা রক্ষীদের অস্ত্র বহন করতে অনুমতি দেয়।
(মসজিদ আল-হারাম অবরোধের ঘটনা একলাই একটা পোস্ট হতে পারে, কারণ এখানে খুবই সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিয়েছি। যারা পড়ছেন তারা চাইলে সেটা নিয়ে আলাদা করে লেখা যেতে পারে।)