- Motivational Story in Bengali.
- মোটিভেশনাল কথাবার্তা।
- পৃথিবীর সেরা মোটিভেশনাল গল্প।
- বিখ্যাত অনুপ্রেরণামূলক গল্প।
- story for students in bengali
1.Motivational Story in Bengali
বাসায় কিচেনের জন্য স্থায়ী চুক্তিতে নতুন গৃহকর্মী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ভদ্রমহিলার বয়স ৪৬।
বিবাহিত জীবনে উনি খুব অসুখী ছিলেন। স্বামী একদিন রিকশা চালালে তিন দিন বসে থাকত৷ ঘরে চেঁচামেচি করলে রিকশা নিয়ে বেরিয়ে গিয়ে কোথাও রিকশাটা রেখে ঘুমাত নইলে আড্ডা দিত৷ এরফলে সংসারে কখনই স্বচ্ছলতার মুখ দেখেননি। ফলে টানাটানির সংসারে উনিসহ সবাই অপুষ্টিতে ভুগত। আর হাতে কখনই পর্যাপ্ত টাকাপয়সা থাকত না।
ভদ্রমহিলা চারবার গর্ভধারণ করেছেন, দুইটা সন্তান অপুষ্টির কারণে খুবই দুর্বল থাকায় জন্মের কয়েকদিনের মধ্যে মারা যায়। আর দুই সন্তানকে বাঁচানো গেলেও এক বছরের আগেই বিভিন্ন অসুস্থতায় উন্নত চিকিৎসার অভাবে মারা গিয়েছে। এভাবে হারিয়েছেন তিন পুত্র আর এক কন্যাকে।
উনার স্বামীও চার নম্বর সন্তানের মৃত্যুর ঠিক আগে ক্যান্সারে ভুগে মারা যান।
এরপর হতে উনি মূলত একা। কাজকর্ম করেই নিজের খরচটুকু চালান। ভাইবোনেরা অল্পস্বল্প সাহায্য করে।
এই ভদ্রমহিলা বেঁচে আছেন, মাঝেমধ্যে হাসতেও দেখি।
অথচ কত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কারণে আমরা হতাশ হই। ব্যবসায় ক্ষতি, একটা পরীক্ষায় ফেল, একটা চাকুরী না হওয়া, প্রেমে ব্যর্থ হওয়া, একটা ঈদের পোশাক বা শাড়ি কিনতে না পারা, সামান্য ঝগড়াফ্যাসাদ আর মান অভিমান হতেও আমরা ঘুমের ওষুধ খাই এমনকি আত্মহত্যাও করি।
এরপর হতে বিষন্নতায় ভুগলে এই ভদ্রমহিলার কথা ভাববেন। তখন বুঝবেন, আপনি আসলে কত সৌভাগ্য নিয়ে জন্মেছেন। কত নেয়ামত, সম্পদ আর প্রাপ্তি আপনার জীবনে!!
Atique Ua Khan
২.মোটিভেশনাল কথাবার্তা
বুয়েট পড়ুয়া এক আপুর সাথে প্রায়ই কথা হয় । উনি সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টে পড়াশোনা করেন । মাঝে মাঝেই আক্ষেপ করে বলেন, ‘জানিস ছোটু এই সাবজেক্ট আমার ভালো লাগে না । কত আশা ছিলো কম্পিউটার সাইন্স নিয়ে পড়াশোনা করবো । কিন্তু নিজের কিছু ভুলের জন্য প্যাশন স্টাবলিশড্ করতে পারিনি ।’
কথাটা শুনে আমি স্বান্তনা দিলেও খুব অবাক হই এটা ভেবে, যেখানে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর স্বপ্ন থাকে শুধু বুয়েটের একটা সিট সেখানে উনি চার বছর ধরে আক্ষেপে পোড়েন পছন্দের সাবজেক্ট পাননি বলে ।
শিহাব ভাইয়ের সাথে মাঝে মাঝে মেসেঞ্জারে কথা হয় । রংপুর মেডিকেলে ভর্তি হয়েও বেচারার মন খারাপ । কথায় কথায় শুধু বলে, ‘ঢাকা মেডিকেল আমার স্বপ্ন ছিলো । এই রংপুর হওয়ার চেয়ে না হওয়াই ভালো ছিলো ।’
আমি শুধু মুচকি হাসি এই ভেবে যে মানুষের চাওয়া পাওয়ার একি হাল ! কারো মনে সুখ নেই ।
সায়ান ভাইকে দেখলে কেমন জানি করে বুকের ভেতর। ঈদের মধ্যেই বেশি দেখা হয় । এবার দেখা হলে বলেছিলাম, কি ভাই ঢাবি জীবন কেমন চলে ? উনি একটা ফিকে হাসি দিয়ে বললেন, ‘যখন শুনি পোলাপান বুয়েটে পড়ে তখন দুমড়ে মুচড়ে যাই আহা কত স্বপ্ন ছিলো !’
সেদিন রাসেল ভাইকে মেসেজ দিলাম, কি অবস্থা ভাই ? ভাই একগাদা ব্রোকেন হার্ট ইমোজি দিয়ে বললেন, ‘এত ট্রাই করছি রে ভাই কিন্তু হচ্ছে না । যে করেই হোক আমাকে বিদেশে যেতে হবে ! বিদেশে সেটেল্ড হয়ে যাবো ।’
আমি বেশি কিছু বললাম না । ওহ্ হ্যাঁ রাসেল ভাই গত বছর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট করেছে ভেটেরিনারি মেডিসিন এর উপর ।
আমি যখন হাইস্কুলে পড়াশোনা করি তখন দেখতাম এক স্যার মাঝে মাঝেই ফিসফিস করতো, ‘কেন যে এখানে চাকরি নিলাম, বেতন তো খুবই কম । আর একবছর কষ্ট করলেই কলেজে হয়ে যেত!’ আমি ভেবেছিলাম হাইস্কুলে বোধহয় বেতন-টেতন খুব একটা বেশি হয় না । এটাও ভেবেছিলাম হাইস্কুলে চাকরি পেলেও করবো না ।
গ্রামের প্রভাবশালী রমিজ মিয়ার কথা আর কি বলবো! নেশা একটাই শুধু জমি জমি আর জমি । গ্রামের সবচেয়ে ধনী লোক যার কোনকিছুর অভাব নেই, তবুও উনার কেন জমি কিনতে হবে ? কেন গাদা গাদা টাকা বানাতে হবে ? দুদিন পর ম*রলে তো সব শেষ ।
হাইস্কুলে থাকতে রাশেদের মোটর সাইকেল দিয়ে ড্রাইভিং শিখেছিলাম । ‘হোন্ডা’ কোম্পানির মোটর সাইকেল ছিলো । হঠাৎ রাশেদ দুই-তিনদিন স্কুলে আসে না । পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি এর থেকে ভালো মোটর সাইকেল না দিলে ও স্কুলে আসবেনা । আমি সেদিন লজ্জা পেয়েছিলাম, যেখানে আমার একটা সাইকেলই নাই আর ও মোটর সাইকেল চেঞ্জ করার জন্য জিদ ধরেছে ।
সোহা আপুর সাথে পরিচয় টা অনলাইনে হলেও বাস্তবের ভাইবোনের স্বাদ পাই আমরা । এত পজিটিভ মানুষ আমি খুব কম দেখেছি । সাংসারিক জীবনে তিনি অনেক হ্যাপি । বরং যা আছে তাই নিয়ে হ্যাপি । ভাগ্যকে মেনে নেন, নেগেটিভিটি পরিহার করেন, খারাপ জিনিস টাকে পজিটিভ ভাবে ঘুরিয়ে দেওয়ার এক অদ্ভুত ক্ষমতা আছে উনার । বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর করেছেন, কোনদিন শুনিনি তিনি অসুখী । হ্যাঁ সাংসারিক জীবনে দুএকটা কথা সবার হতে পারে তবে ভাইয়া কখনো আপুর নামে অভিযোগ করেননি । এজন্য আমি উনার কাছে সুখে থাকার মন্ত্র শিখি ।
আমার মহল্লার সবচেয়ে সুখী মানুষ বোধহয় হরিহরণ । সারাদিন রিক্সা চালিয়ে সন্ধ্যায় চা খেয়ে চাউল কিনে ঘরে ফিরে । গাদা গাদা টাকার স্বপ্ন নেই, জমি কেনার ধান্দা নেই । একদিন মজা করে জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘মেসো টাকা পয়সা কিছু জমাও । বুড়ো বয়সে কাজে লাগবে যে ।’
উনি ফোকলা দাঁতে উত্তর দেন, ‘রাখ তো বাপু! শেষ বয়সে ট্যাকা হারানুর ভয়ে আর ঘুম হারাম করবের চাইনে, চলছে চলুক!’
কেউ বুয়েট, কেউ ঢাবি আবার কেউ মেডিকেল ! কেউবা আবার প্রফেশনাল লাইফ নিয়ে হতাশ ! আর ব্যক্তিগত জীবন তো হতাশার কারখানা । এই হতাশা কমবেশি আমাদের সবার মধ্যেই আছে । ব্যাপারটা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে আমার পেতেই হবে নাহলে আমি শেষ । খুব কম মানুষই দেখেছি যারা নিজের বর্তমান অবস্থা কিংবা ভাগ্যকে মেনে নিয়ে ক্যারি অন করে । আমি বলছিনা যে লেখাপড়া বাদ দিতে হবে কিংবা ক্যারিয়ার নিয়ে ইচ্ছে রাখা যাবেনা । ব্যাপারটা হচ্ছে আপনি এত চেষ্টা করেও যখন সেটা পাননি তখন বুঝতে হবে সেটা আপনার জন্য নয় । এই সত্যটা মেনে নিতে সমস্যা কোথায় ?
আমরা পাই তো ঠিকই, তবুও চাহিদার ঘাটতি পূরণ হয়না । শুধু হলোনা, হয়নি আর কেন ? এসবের হিসেব মেলাতেই আমাদের জীবনের অনেক টা সময় কেটে যায় । বিনিময়ে শুধু হতাশা আর বিষণ্ণতা । জীবনের রং কোন দিক দিয়ে এসে কোনদিক দিয়ে হারিয়ে যাচ্ছে তা বুঝতেই পারছি না ।
বিশেষ করে লেখাপড়ার কথাটা বলতেই হবে । বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে প্রতিযোগিতামূলক সেক্টর । একজনকে দেখে আরেকজনের হিংসা, ও কেন উপরে উঠে গেলো, ও কিভাবে এটা করলো আরো কতকিছু ! সুখ নেই । কারো মনে সুখ নেই । বর্তমান পরিস্থিতি মেনে নিয়ে সুখে থাকা মানুষ খুবই কম ।
আপনি একটা জিনিস পাননি মানে সৃষ্টিকর্তা আপনার ভাগ্যে সেটা রাখেননি কিংবা সেটা আপনার জন্য ভয়’ঙ্কর । যেটা রেখেছেন সেটা অবশ্যই আপনার জন্য মঙ্গলজনক । কারণ সৃষ্টিকর্তা কখনো তার সৃষ্টির জন্য মন্দ জিনিস পছন্দ করতে পারেন না ।
অণুগল্প : সুখ
লেখা : সাদমান সাকিব
৩. পৃথিবীর সেরা মোটিভেশনাল গল্প
গতকাল ক্লাস নেয়া শেষ করে বিরতিতে এসে বসেছি। পাশে কলিগ ফোনে কথা বলছে।
উনি যে মেয়েকে প্রাইভেট পড়াতো তার রেজাল্ট দিয়েছে। অভিভাবক ওনাকে ফোন করেছে এটা জানাতে যে ছাত্রী গণিত, রসায়ন ও বাংলায় A+ মিস করেছে। আমার কলিগ চোখ কপালে তুলে বলল, “এতগুলো মিস গেল? কিভাবে সম্ভব?”
ওপাশ থেকে ছাত্রীর মা আর এপাশ থেকে টিচার হাহুতাশ করলেন অনেকক্ষণ। ছাত্রীর মা জানাচ্ছেন ছাত্রীর বাবা মেয়ের ভালো রেজাল্ট উপলক্ষে পার্টি দেয়ার সব আয়োজন সম্পন্ন করে ফেলেছিলেন। কিন্তু এখন সব প্ল্যান ভেস্তে গেল। অভিমানে তিনি মেয়ের সাথে কথা বলাই ছেড়ে দিয়েছেন।
আমার কলিগ বলছেন আংকেল আদর দিয়ে দিয়েই তো ওকে মাথায় তুলেছিল আন্টি। এবার আদর একটু কমাতে বলবেন নাহলে ইন্টারেও এমন হবে।
ছাত্রীর মা সায় মেলালেন। জানালেন ছাত্রী পাশেই বসে কান্না করছে এবং টিচারকে বললেন তাকে একটু বকাটকা দিয়ে দিতে।
আমার কলিগ বললেন ওকে ফোনটা দেন আন্টি, আমি বকে দিচ্ছি।
এই হচ্ছে অবস্থা। আশানুরূপ রেজাল্ট না হলে একজন মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত কিশোরীকে এভাবেই বাবামা আর শিক্ষক মিলে আরো বিপর্যস্ত করে তুলছিলেন। অথচ এসব বলবার ওটাই উপযুক্ত সময় ছিল না। এসব ওনারা পরে বলারও সময় পেতেন। এই যে রেজাল্টের পর আত্মহত্যাগুলোর খবর আসে এসব কারণেই আসে।
এই গেল দুপুরের ঘটনা। এবার বিকেলের ঘটনা বলি। আমার আরেক কলিগকে তার ক্লাস থ্রিতে পড়ুয়া মেয়ে কল দিয়ে আনন্দে নাচতে নাচতে বলছে, “আম্মু, আমাদের আগামী মাসের ১৬ তারিখ পর্যন্ত ছুটি। কত্ত লম্বা ছুটি! আজ অনেক খেলব। প্লিজ আম্মু টিচারকে কল দিয়ে বল না আজ না আসতে, আজ পড়ব না।”
আমার কলিগ রাগী রাগী গলা নিয়ে বললেন, “ছুটি কি খেলার জন্য দিয়েছে? পড়ার জন্য দিয়েছে। জাস্ট এখন হাতমুখ ধুয়ে পড়তে বস। বাসায় এসে যেন তোমাকে পড়ার টেবিলে পাই।”
উনি কল কাটার পর বললাম আপা একটা দিন তো খেলতেই পারত। এত লম্বা ছুটি, কত আর পড়াশোনা ওদের? ছোট্ট এখনো। উনি বললেন এখন থেকেই যদি আপা ছুটি মানেই খেলাধুলা আর অবসর ভাবে, বড় হয়েও দেখা যাবে ছুটিতে পড়বে না। তাই অভ্যাস করাচ্ছি!
আমাদের শিক্ষার্থীদের নয়, মোটিভেশন এবং কাউন্সিলিং আসলে প্রয়োজন অভিভাবক এবং শিক্ষকদের। একজন কিশোরীর বিষাদ, একজন শিশুর আনন্দ উচ্ছ্বাসকে আপনি যদি ছুঁতেই না পারেন, কেমন দায়িত্বশীল অভিভাবক আর শিক্ষক আপনি!
কেবল চাপের উপর চাপ প্রয়োগ করেই কি সবাইকে ভালো রেজাল্ট করানো যায়? একেকজন মানুষের চাপ নিতে পারার ক্ষমতা একেক রকম। অতিরিক্ত চাপে যদি আত্মহত্যা করে বসে নিজেদের ক্ষমা করতে পারবেন?
আরেক অভিভাবক একবার আমাকে বলছিল তার ছেলের জন্য সিইউতে আইআরে পড়ুয়া প্রাইভেট টিউটর রেখেছেন। কিন্তু তিনি টিউটরের উপর বিরক্ত কারণ টিউটর যত সময় পড়ায় তার চেয়ে বেশি সময় ছাত্রের সাথে খেলে। খেলার সময়টুকুতে সে বাড়তি সিলেবাস কেন কমপ্লিট করে রাখছে না তাই তিনি বিরক্ত। বললাম আপনার ছেলে কোন ক্লাসে? বলল কেজিতে পড়ে!
আমি জাস্ট তাজ্জব বনে গিয়েছিলাম। কিছু কিছু অভিভাবক নিজেদের এত সবজান্তা শমসের ভাবেন! একটা কেজির বাচ্চাকে কতটা কেয়ার করলে একটা অনার্স পড়ুয়া ছেলে তার সাথে খেলে তাকে আনন্দ দিয়ে পড়াচ্ছে।
আমাদের মোটিভেশনাল স্পিকারদের উচিত ছেলেমেয়েদের বিখ্যাত ব্যক্তিদের গল্প বলার পাশাপাশি বাবা মায়েদের বিখ্যাত ব্যক্তির বাবামায়েদের গল্প বলা। যেমন বলতে পারেন টমাস আলভা এডিসনের মা নানসি ম্যাটিউজ এল্লিওটের গল্প।
এডিসন লেখাপড়ায় দুর্বল ছিলেন বলে সপরীক্ষায় ফলাফল খারাপ করায় স্কুল থেকে চিঠি দিয়ে তাকে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হয়। চিঠি পেয়ে তার মা কী জানি ভাবছিলেন সজল দৃষ্টিতে! তারপর তার সামনেই উচ্চস্বরে পড়তে লাগলেন চিঠিটা।
‘আপনার পুত্র খুব মেধাবী, এই স্কুলটি তার জন্য অনেক ছোটো এবং এখানে তাকে শেখানোর মতো যথেষ্ট প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক নেই। দয়া করে আপনি নিজেই তার শিক্ষার ব্যবস্থা করুন’।
তারপর মায়ের কাছেই শিক্ষা লাভ করেন এডিসন। অনেক বছর পর টমাস আলভা এডিসন যখন বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী, শিল্পপতি তখন আর জীবিত নেই তার মা।
সে সময় পুরনো সে চিঠি খুঁজে পান এডিসন। সেই চিঠিতে লেখা ছিল- ‘আপনার সন্তান স্থূলবুদ্ধিসম্পন্ন, সে এই স্কুলের উপযুক্ত নয়, আমরা কোনোভাবেই তাকে আমাদের স্কুলে আর আসতে দিতে পারি না’।
তারপর এডিসন তাঁর ডায়রিতে লিখেন, ‘টমাস আলভা এডিসন একজন স্থূলবুদ্ধিসম্পন্ন শিশু ছিলেন। একজন আদর্শবান মায়ের অনুপ্রেরণায় তিনি শতাব্দীর সেরা মেধাবী হয়ে উঠেন’।
অভিভাবকদের শোনানো উচিত আব্রাহাম লিংকনের পুত্রের শিক্ষককে পাঠানো চিঠির কথা। চিঠির একাংশ ছিল এমন, “তাকে শেখাবেন পাঁচটি ডলার কুড়িয়ে পাওয়ার চেয়ে একটি উপার্জিত ডলার অধিক মূল্যবান। এও তাকে শেখাবেন, কিভাবে পরাজয়কে মেনে নিতে হয় এবং কিভাবে বিজয়োল্লাস উপভোগ করতে হয়।”
অভিভাবক যতদিন মোটিভেট না হবেন, এই হতাশ প্রজন্মকে উদ্যমী করে তোলা ততদিন সহজ হবে না। পিঠে স্কুলব্যাগের মতই দিনদিন পাহাড় সমান ভারী হতে থাকবে হতাশা।
জান্নাতুন নুর দিশা
৪. বিখ্যাত অনুপ্রেরণামূলক গল্প
মেট্রিকে কোনমতে পাশ করা আমার এক ফ্রেন্ড যে ইংলিশে নিজের নাম লিখতে গেলেও একবারে লিখতে পারতো না সে কিনা ইন্টারে এ প্লাস পায়!! পরে শাহজালাল ইউনিভার্সিটিতে চান্স পায়!! শেষ খবর সে স্কলারশিপ পেয়ে আমেরিকায় পিএইচডি করতে গেছে!! এই গল্পে একটুও বাড়ায়া কিছু বলি নাই, আমার স্কুল ফ্রেন্ডরা সাক্ষী!!
ইন্টারে আমার এক ফ্রেন্ড যে অংক পরীক্ষার দিন এ টু জেড আমার খাতা দেখে পরীক্ষা দিয়ে পাশ করে!! ২০১১ সালে মাইক্রোসফটের আয়োজন ইমাজিন কাপে অংশগ্রহণ করে বাংলাদেশ টিম প্রথম হয় আর তাদের চার সদস্যের টিমের একজন ছিল আমার সেই ফ্রেন্ড!! এইবারও একটুও বাড়ায়া বলি নাই!! কলেজ ফ্রেন্ডরা সাক্ষি!!
আরেক ফ্রেন্ড ইন্টারে মুখে আনলে পাপ হয় এমন রেজাল্ট করে এখন ডাক্তার হয়ে গেছে!! কিছুদিন আগে সরকারি ভাবে নিয়োগ পাইছে!!
গদাই!! আমার একবন্ধুর নাম!! আমার কাঁধেই মাথা রেখে কান্না করছে ইন্টারের রেজাল্টের পরে!! আব্বার গালি খায়া নিজের চোখের পানি মুইছা দিশা পাই না তারে কি সান্ত্বনা দিবো?? আর সে এখন দেশের নামকরা কোম্পানির একজন ফার্মাসিস্ট!!
ভাই আপুরা বিশ্বাস করেন এই মেট্রিক ইন্টারের পয়েন্ট কোনদিনও আপনার মেধা যাচাইয়ের উপায় হতে পারে না!! কোনভাবেই না!! এটা আপনাকে মার্কেট থেকে সরায়া দেয়ার একটা সিস্টেম!! আপনি কি মনে করেন আফ্রিকার জনসংখ্যা কত এটা দিয়ে আপনার মেধা যাচাই করা হয়?? ভুল!! এটা আপনাকে মার্কেট আউটের প্লান!! লক্ষ লক্ষ চাকুরী প্রত্যাশী আর হাতেগোনা জব সেক্টর!! বাদ দেয়ার উপায় কি?? ঠিক আছে জিগাও তারে, রবীন্দ্রনাথের পাশের বাসার বৌদির বাবার নাম কি?? এখন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডাইরেক্টরকে যদি প্রশ্ন করা হয় নিউটনের নানার নাম কি উনি কি পারবেন উত্তর দিতে?? তাই বলে কি বলবো উনি মেধাশূন্য??
আপনি কত পয়েন্ট পাইছেন বা কত পয়েন্ট পাইতে হবে তার পিছে না দৌড়ায়া আপনার নেশার পিছে দৌড়ান!! কিসে আপনার নেশা হয় আগে সেটা বের করেন!! যে বন্ধু মাইক্রোসফটের ইমাজিন কাপ জেতে সে বিছানায় কোলবালিশ নিয়ে ঘুমাইতো না, সে কম্পিউটার নিয়া ঘুম দিতো!! যে ডাক্তার হইছে সে কাউরে দেখলেই নার্ভ চেক করা শুরু করতো!! এটা তাদের নেশা ছিল!! আপনার নেশা কি আপনি জানেন??
আপনি পরীক্ষায় নাম্বারের পিছে দৌড়াচ্ছেন অথচ আপনার শরীরে আছে নাচ!! কিংবা গলায় গান!! হাতে আছে আঁকার জাদু!! আপনি ধরতে পারলেও আপনার প্রতিভা ধরতে পারলো না আপনার পরিবার!! তারা সন্তান দিয়ে ব্যবসা করবে লাখ লাখ টাকা কামাবে!! আরে ভাই জীবিকা গান গেয়েও করা যায়, করা যায় নেচে!! কাজে আনন্দ না থাকলে সে কাজে অর্থ উপার্জন করা যায় কিন্তু বাঁচা যায় না!! নিশ্বাস নিলেই মানুষ বাঁচে না!!
বাবারে কথা দে তুই উড়তে শিখবি?? কথা দে বাবা!! কথা দে তুই আমার এই শেষ ইচ্ছা পূরণ করবি!! কথা দে বাবা!!! আআ আআআ…
ছেলে বাবার শেষ ইচ্ছা পূরণ করতে পিঠে ডানা লাগায়া দিলো বাংলাদেশ ব্যাংকের ছাদের থেকে লাফ!! পরে আর কি, যা হওয়ার তাই হল!! বুদাই পোলা বুঝলোও না বাপ তারে পাইলট হইতে বলছে!!
এই হচ্ছে আমাদের অবস্থা!! বাপ মা কি চায় ঠিক মত বলেও না, আর পোলাপানও জানে না আসলেই বাপ আমার কি চায়!! কিংবা বুঝার চেষ্টাও করে না ছেলে কিংবা মেয়েটা আমার কি চায়!!
আমরা অলিম্পিকে সোনা চাই কিন্তু দৌড়াতে তুখোড় ছেলেটাকে ডাক্তার বানাই!! কিংবা যার হাতে রং তুলি শোভা পায় তারে দিয়া পিসির কিবোর্ড টিপাই!! আবার সোনাও কিন্তু চাই!!
সাকিবের বাপ যদি সেদিন সাকিবের হাতে ব্যাট তুলে না দিতো তাহলে আজ আমরা বিশ্ব সেরা অল-রাউন্ডার সাকিব আল হাসান কে দেখতে পেতাম না!! আজ আমরা দেখতাম নয়টা পাঁচটার অফিস শেষে ক্লান্ত শরীরে লুঙ্গি পরা, স্যান্ডো গেঞ্জি গায়ে বারান্দায় মোড়াতে বসে পিঁপড়া আলা ঠাণ্ডা চা খাওয়া সাকিব!!
-শিশির আরেক কাপ চা হবে??
-দুধ নাই!! একজনের চাকুরি আর সবার খরচ!!
কিছুদিন আগে আমার বাপ তার ছোট ছেলেকে সাকিব বানাতে একটা ক্রিকেট ব্যাট নিয়ে আসছে!! ফুটবল বিশ্বকাপের সময় কিনে দেয়া মেসির জার্সি গায়ে ভাই আমার এখন ঘরের মধ্যে ক্রিকেট খেলে আর মাঝে মাঝে টেনিস বলকে ফুটবল বানাইয়া দৌড় মারে!! ঘরের মধ্যে এমন দৌড় দিলে বাপ আমার ঠ্যাং ধইরা ঝুলাইয়া দিতো, কিন্তু আমি বাঁধা দিলাম না ভাইকে দৌড় দিতে, আজ যদি বল হাতে ভাইকে দৌড়াতে না দেই তবে একদিন আমার দেশের পতাকা নিয়ে দৌড়াবে কে?? গ্যালারিতে বসে ভাইয়ের চার ছয় দেখে চোখ ভেজাবো!! চোখ মুছতে মুছতে “ম্যারি মি তাহসিন” লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে তরুণীকে গিয়ে বলবো, সালাম কর মেয়ে, আমি তোমার ভাসুর লাগি!!
আসল কথায় যাই, প্রতিটা মানুষই কোন না কোন প্রতিভা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে!! করুনাময় কখনই কাউকে কম দেন না!! কেউ ক্রিকেট পারে, তো কেউ ফুটবল, কেউ কাবাডি, তো কেউ দাবা!! আবার কারো গলায় জাদু, কারো রং তুলিতে!! কিন্ত এই প্রতিভা গুলো বিকশিত হতে পারে না কারন আমাদের ভাবনা গুলো এক যায়গায় আটকে আছে!! সেই প্রতিভা গুলো বিকশিত হয় না কারন আমরা এখনো বাংলা ইংলিশ অংকে আটকে আছি!! আমাদের বাপ মায়ের একটাই শেষ কথা সবার উপর পড়ালেখা সত্য তাহার উপর নাই!!
অথচ মাথায় অংক না ঢুকা ছেলেটার মাথা কি দুর্দান্ত কবিতায় না ভরা!! নিউটনের সূত্র ধরতে না পারা ছেলেটা কি দুর্দান্ত ভাবেই না ব্যাট ধরে!! জাবেদা না পারা মেয়েটা কি সুন্দর করে না স্বপ্ন আঁকে রং তুলিতে!!
সমাজে টিকে থাকতে হলে পড়ালেখা করাটা জরুরি কিন্তু প্রতিভাবানরা টিকে থাকে তাদের প্রতিভার শক্তি দিয়ে!! আজ যদি পড়ালেখার কারনে আপনি আপনার সন্তানকে ব্যাট ধরতে না দেন তবে বঙ্গে সাকিবদের জন্ম হবে কেমনে??
পড়া লেখা আপনাকে শিখতে হবে আর প্রতিভা আপনি শরীরে নিয়েই জন্ম গ্রহন করেন!! শুধু যার যে প্রতিভা আছে তারে একটু সেই লাইনে দাঁড় করায়া দিতে হয়!! প্রতিভা আমারো ছিল, খালি সাপোর্ট দেয়ার মত কেউ ছিল না!! নাহয় আজ আমিও জাপানিদের মত সুমো কুস্তিগির হইতাম!! আফসোস সাপোর্ট দেয়ার কেউ ছিল না!! এই শরীর নিয়া কামলা দেয়া ছাড়া আর কোন গতি দেখি না!!
অংক করতে ইচ্ছা করছে না? ব্যাপার না, ফুটবল টা নিয়ে একটু দৌড়া!! ফুটবল ভালো লাগছে না?? তাহলে গীটারটায় হাত দাও নাহয় তবলায় একটু টুংটাং!! বাবা দেখিতো, এই কলমটা দিয়ে এই সাদা কাগজে একটা রঙ্গিন স্বপ্নের কথা লিখতো কিংবা আঁক!! মা দেখিতো তোর ঘোড়ার কত শক্তি!! আমার মন্ত্রীর সাথে পেরে উঠিস কিনা!! ওমা এই মেয়ে দেখি ভবিষ্যতের রানী হামিদ!!
কিছুই ভালো লাগে না তোমার?? তাহলে অন্তত একটা ঘুসি মারো!! মারলাম!! আবার মারো!! মারলাম!! আবার মারো!! মারলাম!! আবার মারো!! মারলাম!! আবার!!! আর কত মারবো?? মারতে থাকো যতক্ষণ না মুহাম্মদ আলী হচ্ছ!!
ইহা কোন মোটিভিশনাল স্পিচ না, ব্যর্থ মানুষ মোটিভিশনাল স্পিচ দিতে পারে না!! আমি নিজে উড়াধুরা রকমের ব্যর্থ মানুষ!! তবে ইতিহাস সাক্ষি ব্যর্থ মানুষরাই দুনিয়া লিড দেয়!!
-এইডা কে কইছে আপনেরে?? ব্যর্থরা দুনিয়া লিড দেয়??
-বোকা নিজেরে নিজে একটু সান্ত্বনাও দিতে পারবো না?? বল পারবো না??
5. Motivational story for students in bengali
–বিশ্বাস করেন ভাই আমি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়ার যোগ্য না।
–তাহলে কিভাবে চান্স পেলেন?
–জানিনা ভাই। কিভাবে চান্স পেলাম, এত ভালো সাবজেক্ট পেলাম এর কিছুই জানিনা আমি। কিন্তু সত্যিকথা আমি এসবের যোগ্য নই।
–আপনি পড়াশোনায় কেমন?
–ভালো না। আমি কিছুই পারিনা। সবাই সবকিছু পারে। একমাত্র গাধা আমি ভাই। আমাকে দিয়ে কিছু হবে না।
–আসলেই তো আপনাকে দিয়ে কিছু হবে না। আপনি এক কাজ করুন।
–কি কাজ?
–ইউনিভার্সিটি ছেড়ে দিন। বাসায় চলে আসুন। আপনি তো যোগ্য না। তাহলে শুধু শুধু সময় নষ্ট করবেন কেন?
–আমি তো তাই করেছি ভাই। গতকালকেই বাসায় চলে এসেছি তল্পিতল্পা সহ। আর যাবো না।
–বাসায় কিছু বলে নি?
–বাসায় বলছি ছুটি চলছে। একমাসের ছুটি। তাই চলে এসেছি।
–বাহ ভালো মিথ্যা বলতে পারেন। তো কি করবেন ভাবছেন?
–জানিনা ভাই। আমাকে দিয়ে পড়ালেখা হবে না। বাসায় আসার পর আরও ডিপ্রেশড হয়ে গেছি।
–যেমন?
–আমি আসতেই বাসার সবাই আমাকে অনেক আদর যত্ন নেওয়া শুরু করেছে। এমনিতেও বাসায় আসলে আদর যত্ন তো সবাইকেই করে। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে কোনো একটা বিশেষ কারণে আমার অতিরিক্ত আদর করছে।
–আদর তো সবাইকেই করে। এখানে এমন ভাবছেন কেন? আপনাকে কি আগে আদর করতো না?
–তা করতো। আমার মনে হয় আমার কোন রোগ হয়েছে। হতে পারে মানসিক রোগ। না হয় অন্য কোন জটিল রোগ। যেটা থেকে মুক্তির কোন উপায় নেই। আমি মনে হয় খুব তাড়াতাড়ি মারা যাবো। তাই বেশি আদর আপ্যায়ন করছে।
–আপনি শুধু শুধু চিন্তা করছেন। আচ্ছা আপনি তো প্রশ্ন চুরি করে পরীক্ষা দিয়ে ইউনিভার্সিটিতে চান্স পেয়েছেন। তাই না?
–না না। আমি প্রশ্ন চুরি করি নি।
–সত্যি করে বলেন। আমি কাউকে বলব না।
–আমি নিজের যোগ্যতায় চান্স পেয়েছি। অনেক ভালো পরীক্ষা দিয়েছিলাম। তখনই বুঝেছি চান্স পাবো। ভালো সাবজেক্ট পাবো।
–আপনি মিথ্যা বলছেন। আপনি প্রশ্ন পেয়েই পরীক্ষা দিয়েছেন।
–নারে ভাই। আমি ছোট বেলা থেকেই অনেক ভালো রেজাল্ট করতাম। প্রথম সারির ছাত্র ছিলাম। স্যার ম্যামদের অনেক প্রিয় ছাত্র ছিলাম। ক্লাসে কেউ পারতো না এমন প্রশ্নের উত্তর ও দিতে পারতাম। এসএসসি, এইচএসসি তে জিপিএ ফাইভ পাই। মোট কথা আমি চান্স পাওয়ার মতোই স্টুডেন্ট ছিলাম। ভর্তি পরীক্ষার আগে অনেক পরিশ্রম করেছি। আল্লাহ নিরাশ করেন নি। নিজের যোগ্যতাতেই এত ভালো ইউনিভার্সিটিতে চান্স পেয়েছি।
–একটু আগেই কিন্তু বলেছেন আপনি চান্স পাওয়ার যোগ্য না। এখন আপনিই বলতেছেন আপনার ক্যাপাবিলিটি ছিলো বলেই চান্স পেয়েছেন। মনে বিশ্বাস রাখুন আপনি পারবেন। এখন বলেন কি জন্য এত হতাশা?
–ক্লাসে স্যার যখন পড়ায় আমি বুঝতে পারি না। স্যার এক ঘন্টা লেকচার দিয়ে চলে যান। কে বুঝলো, কে বুঝে নি এসবের দিকে উনার খেয়াল নেই। তারপর স্যার যদি হঠাৎ কোন প্রশ্ন করে আমার মনে হয় জীবনের প্রথমবার শুনছি। তখন যদি দেখি পিছন থেকে কেউ উত্তর দেয়, স্যার বাহবা দেয় তখন আমার নিজেকে অনেক ছোট মনে হয়। কেন জানি মনে হয় আমি পড়ালেখা কন্টিনিউ করার মতো এবিলিটি রাখিনা। আমার ছেড়ে দেওয়া উচিত।
–এরকম কতদিন যাবত হচ্ছে?
–তিন চার মাস।
–কখন বেশি হতাশ লাগে?
–যখন দেখি আমার চাইতে খারাপ ছাত্র আমার চাইতে ভালো রেজাল্ট করছে তখন মনে হয় সবকিছু ছেড়ে দূরে কোথাও চলে যাই।
–একটা কথা মেনে নিন। কেউ ই খারাপ ছাত্র না। সবার ই যোগ্যতা আছে ভালো করার। যে ভালো করে সে অবশ্যই আপনার চেয়ে বেশি পরিশ্রম করে। এটা মেনে নিন। শুধু পরিশ্রম ই না, সে হয়তো ভালো করার টেকনিক আবিষ্কার করেছে। পড়া গুছিয়ে পড়ে। অবশ্যই সে আপনার চেয়ে বেশি চেষ্টা করেছে ভালো করার। এটাই সত্যি।
–মানলাম সে চেষ্টা করেছে বলে ভালো করেছে। কিন্তু আমি পারছিনা কেন? আমি তো এমন ছাত্র ছিলাম না। আমার মনে হয় আমি অলৌকিকভাবে ঠিকে গিয়েছিলাম। আমি এত ভালো সাবজেক্ট ডিজার্ভ করিনা।
–দেখেন এই রকম অনেকের ই হয়। সেলফ কনফিডেন্সের অভাব অনেকেরই থাকে। তার মানে এই না সবাই পড়া ছেড়ে দিচ্ছে। আগে যদি তিনঘণ্টা পড়তেন এখন আপনি ৬ ঘন্টা পড়বেন। পরিশ্রমের বিকল্প নেই।
–আমি চেষ্টা করেছি মনোযোগ দিতে। হচ্ছে না। একমাস চেষ্টা করেও কোন উন্নতি হয়নি।
–আচ্ছা বাদ দেন। বলেন তো ফেইসবুকের প্রতিষ্ঠাতা কে?
–মার্ক জাকারবার্গ।
–উনার ব্যাপারে একটু বলি। উনার একজন প্রেমিকা ছিলো। কোন কারণে রিলেশন ভেঙে যায়। প্রেমিকা তাকে সবকিছু থেকে ব্লক দিয়ে দেয়। উনি কিন্তু আমাদের আট দশটা ছেলের মতো বিড়ি, সিগারেট, মদ, গাঁজা ধরেন নি। গাওয়া শুরু করেন নি “মাইয়া ও মাইয়া তুই অপরাধী রে “! উনাকে প্রেমিকা সকল সোশ্যাল মিডিয়া থেকে ব্লক করে দেয়। আর উনি নিজের চেষ্টায়, পরিশ্রমে ফেইসবুক আবিষ্কার করে ফেলেন।
–বাহ। এটা তো জানতাম না। উনি ভারতীয় হলে নিশ্চিত Break up song শুনেই রাত কাটাতেন। আর বাংলাদেশি হলে অপরাধী গান শুনে, ঘুমের ওষুধ খেয়ে দেবদাস হয়ে যেতেন। যাই হোক ভাই আমার এই সমস্যাটা কি কোন মানসিক রোগ?
–হ্যা। এটাকে বলে ইমপোস্টার সিনড্রোম। এটা ছেলে মেয়ে যে কারো হতে পারে। যারা অল্প পড়ে, কিংবা না পড়েই ভালো রেজাল্ট করতে চায় তারাই বেশি ভুগে এই রোগে। মূলত সেলফ কনফিডেন্সের অভাব, বন্ধু বান্ধব থেকে তিরস্কৃত হওয়া, শিক্ষকের অপমান, বাবা মায়ের বিরাট চাওয়া, সবকিছু মিলিয়ে এরা অনেক বেশি হতাশ হয়ে যায়। সব সময় ই এরা একটা মানসিক দুশ্চিন্তায় থাকে। মনে হয় এই বুঝি তার আসল রুপ ধরা পড়ে যাবে। সবাই বুঝে ফেলবে সে খারাপ ছাত্র, দেখতে খারাপ, কিংবা যেকোনো বাহ্যিক রোগ। তাই এরা নিজেদের গুটিয়ে রাখে সব সময়। আলাদা হয়ে যায় সবার থেকে। একাকীত্ব খুব খারাপ জিনিস। নিজের উপর অল্পবিস্তর যেটুকু বিশ্বাস যদি থেকেও থাকে তখন তাও হারিয়ে যায় অতল গহ্বরে।
–এর থেকে মুক্তির উপায় নেই?
–হ্যা অবশ্যই আছে। আপনি যদি কোন মানসিক ডাক্তারের কাছে যান তিনি আপনাকে এগুলোই বুঝাবেন, রোগটা সম্পর্কে জানাবেন। মোটকথা এর চিকিৎসা হলো কাউন্সিলিং করা।
–কি করবো বলেন প্লিজ।
–বাসায় আসছেন। কিছুদিন থাকেন। বাবার সাথে বাজার করতে যান, মায়ের সঙ্গে গল্প করুন, ছোট ভাই-বোন থাকলে ওদের পড়ান। নিজেকে ব্যস্ত রাখুন। আপনি পারবেন না/ আপনাকে দিয়ে হবেনা এসব ভাবা বন্ধ করুন। আপনি যথেষ্ট ভালো ছাত্র। হলে গিয়ে রুমের conformational change করুন।
–এটা কি ভাই?
–আপনার সিট চেঞ্জ করুন। আপনার রুমে যারা থাকে তারা নিশ্চিত আপনার বন্ধু। তাদের কোন একজনকে কনভিন্স করে তার সিটে আপনি যান। মোটকথা জায়গা পরিবর্তন করুন। নতুন পরিবেশে সবকিছুর প্রতি ভালো লাগা কাজ করে, মন ভালো থাকে। আমার গ্রামের বাড়িতে পাঁচটা রুম। আমার রুমে কয়েক মাস পড়ার পর আর ভালো লাগতো না। তখন তিনমাস ভাইয়ের রুমে পড়তাম, দুইমাস আপুর রুমে, কিছুদিন বাবার রুমে, তারপর আবার নিজের রুমে। একটা জায়গায় থাকতে থাকতে আসলেই বোরিং লাগে। যে জায়গায় বসে আপনার মন খারাপ হয়, নিজেকে ইনফিরিয়র মনে হয় সে জায়গায় যতবেশি যাবেন ততই খারাপ লাগবে। তাই সিট পরিবর্তন করুন, প্রতিদিন পড়তে বসুন, একা পড়তে ভালো না লাগলে গ্রুপ স্টাডি করুন। টেকনিক করে পড়ুন। কোন জিনিস সবচেয়ে দরকারি তা আগে পড়ুন। আর কে কি পড়লো, কার সব শেষ, কে পরীক্ষায় ফাটিয়ে দিচ্ছে এসবে আপাতত মনোযোগ দিবেন না। আপনি পারবেন, আপনাকে পারতেই হবে এমন মনোভাব রাখুন। দেখবেন অল্পকিছুদিনেই সব ঠিক হয়ে যাবে।
–অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই সাহস দেওয়ার জন্য। ইনশাআল্লাহ আমি পারবো। আজ, নয়তো কাল, নয়তো পরশু। আমি পারব, আমাকে পারতেই হবে। ভালোবাসা নিবেন ভাই।
–ধন্যবাদ। ভালো থাকুন।
ইমপোস্টার সিনড্রোম
জহিরুল হক জাবেদ