লন্ডনে এক নাস্তিকের সাথে এক রাত আমরা ডিনারের জন্য লন্ডনে অবস্থিত এক এ্যারাবিয়ান হোটেলে প্রবেশ করলাম। বসার সাথে সাথে ওয়েটার অর্ডার নিতে এল।
.
এমন সময় এশার আযান শুনলাম। তাই আমি খাবার টেবিল থেকে উঠে নামাযে গেলাম। ফেরার পরে একজন জিজ্ঞসা করল,”কী খবর স্যার ! কোথায় গিয়েছিলেন? আমরা আপনার জন্য সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছি!! “
.
আমি বললাম, “দু:খিত! নামায পড়ছিলাম। “
.
সে তাচ্ছিল্য ভরে বলল,” আপনি এখনো নামায পড়েন?
আপনি কি সারাজীবন ব্যকটেডেটই থাকবেন?
এই জামানায় আপনার মত শিক্ষিত লোক নামায পড়ে বেপারটা দু:খজনক !
.
আমি অবাক হয়ে বললাম,”ব্যাকটেডেটের কী করলাম?
আল্লাহ কি শুধু আরবেই আছে লন্ডনে নেই?
নামায কি শুধু আরবে ফরজ আর লন্ডনে মাফ?”
.
সে বলল,” ওকে, আমি আপনাকে কিছু প্রশ্ন করতে চাই, আশা করি আপনি উদার মনে সেগুলোর উত্তর দেবেন ।”
.
আমি বললাম,”আমারো একটা শর্ত আছে ; প্রশ্নের উত্তর পেলে আপনাকে পরাজয় স্বীকার করে নিতে হবে , রাজি থাকলে বলুন ?? “
.
তিনি বললেন, ” এই শর্তে আমি রাজি ।”
.
আমি বললাম, ” আচ্ছা তাহলে আলোচনা শুরু করা যাক? “
.
সে বলল,” আপনি কত বছর যাবত নামায পড়েন? “
.
আমি, “সাত বছরে বয়সে নামায শিখেছি এবং নয় বছর বয়স থেকে আর কখনো নামায ত্যাগ করিনি আর মৃত্যু পর্যন্ত করব-ও না, ইনশাআল্লাহ!”
.
—”আচ্ছা মৃত্যুর পরে যদি দেখেন, জান্নাত – জাহান্নাম, পাপ- পুণ্য বলে কিছু নেই তাহলে কী করবেন? “
.
—”আমি আপনার কথা অনুযায়ীই আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি ;যদি দেখি জান্নত- জাহান্নাম, পাপ- পুণ্য বলে কিছু নেই তাহলে কিছুই করতে হবে না, কেননা আমি ইবাদাত করেছি আল্লাহ তায়ালার জন্য জান্নাতের লোভে বা জাহান্নামের ভয়ে নয়।
যেমন আলী রা,বলেছিলেন –
“হে আল্লাহ! আমি জান্নাতের আশায় বা জাহান্নামের ভয়ে তোমার ইবাদাত করি না, বরং তুমিই একমাত্র ইবাদাতের উপযুক্ত তাই তোমার ইবাদাত করি! “
.
—”তাহলে এই যে এত বছর ধরে নামায পড়ছেন এটা পড়া বা না-পড়ার ভেতর কী পার্থক্য রইল? এগুলো তো সব বিফলে গেল , কেননা জান্নাত- জাহান্নাম বলে তো কিছু নেই? “
.
—”তখনো আমার আফসোস হবে না,কেননা নামাযে পেছনে তো শুধু কিছু সময়ই ব্যয় হয়েছে ; টাকাপয়সা তো লাগেনি নামায পড়তে , তাই নামাযে ব্যয় হওয়া সময়গুলোকে শরীর চর্চায় ব্যয় করা সময় ধরে নেব। “
.
—কিন্তু রোজা ?
রোজার ব্যাপারে কী বলবে?
রোজা রাখলে তো শুধু সময়ই ব্যয় হয়না বরং প্রচুর শারীরিক কষ্ট ও হয় ?
যদি মৃত্যুর পরে দেখেন জান্নাত- জাহান্নাম, আল্লাহ বলে কিছু নেই তাহলে আপনার এই না-খেয়ে কষ্ট করা বৃথা গেলনা? “
.
—”না তাও এগুলো বৃথা যাবে না কেননা তখন আমি রোযাকে ভেবে নেবো ‘আত্মিক পরিচর্যা’ । আর রোজার বৈজ্ঞানিক উপকারিতা তো এখন সবার জানা ।
তা ছাড়া রোজা রাখলে চরিত্রগত উন্নতি হয় ; মন পবিত্র থাকে এবং কাম ভাব দূরিভুত হয়।
অনেক অমুসলিম দেশেও মানুষ শারীরিক সুস্থতার জন্য না খেয়ে থাকে।
ফ্যাস্টিসের উপকারিতা নিয়ে গবেষণা করে অনেকে এওয়ার্ড ও পেয়েছ।
.
—”আচ্ছা আপনি কখনো মদ খেয়েছেন ? “
.
— “না কখনো খাইনি। “
.
সে একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করল,” কখনোই খাননি “
.
— “না কোনদিন না। “
.
—” যদি জান্নাত- জাহান্নাম কিছু না থাকে তাহলে কী লাভ হল মদের স্বাদ থেকে নিজেকে বঞ্চিত করে এবং বারের আনন্দ থেকে নিজেকে বিরত রেখে?? “
.
—” যদি দেখি জান্নাত-জাহান্নাম পাপ-পূণ্য বলে কিছু নেই ; আমি ভেবে নেবো আমি মদ পান থেকে বিরত থেকেছি আমার শারীরিক সুস্থতার জন্য। কেননা মদ পানের কারণে শরীরে অনেক প্রকার রোগ- ব্যাধি দেখা দেয় । কত সংসার কত সমাজ নষ্ট হয়ে গেছে এই মদের কারণে। আপনি অমুসলি দেশগুলোর দিকে তাকালেই বেপারটা স্পষ্ট হয়ে যাবে। “
.
— “আচ্ছা বুঝলাম মদ না খেয়ে তোমার স্বাস্থ্যগত ভাবে কিছুটা লাভ হয়েছে কিন্তু তুমি যে, কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করে হজ্জ্ব করেছো।
যদি মরণের পরে দেখ, জান্নাত- জাহান্নাম বলে কিছু নেই বা পাপের কারণে মানুষের কোন শাস্তি নেই বা পুণ্যের কারণে কাউকে জান্নাত দেয়া হচ্ছে না তাহলে তোমার হজ্জ্বের সফরে খরচ করা টাকাগুলোর তো বিফলে গেল তাই না “
.
—” না তাহলে ও এগুলো বিফলে যায়নি। তখন আমি ভাববো এটা ছিল আমার জন্য একটা ‘ট্যুর’ । মানুষ তো লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে ইন্ডিয়া,আমেরিকা, মালোশিয়া ট্যুর করে , আমিও ভেবে নেবো হজ্জ্বের সফরটা ছিল আমার জন্য একটা ট্যুর। “
.
সে কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,”আমি আমার পরাজয় স্বীকার করে নিচ্ছি।”
.
আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, “বলেন তো এখন আমার অনুভূতি কী? “
.
—”নিশ্চয় আপনি খুব আনন্দিত, কেননা আপনি বিজয়ী হয়েছেন, আমার সবগুলো প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। “
.
—মোটেও আনন্দিত নই, কেননা এখন আপনাকে প্রশ্ন করতে হবে। আমার অবশ্যি আপনার মত এতোগুলো প্রশ্ন নেই, আমি শুধু আপনাকে একটা ছোট্ট প্রশ্ন করব। আমি তো প্রমাণ করলাম যে, যদি দেখি মৃত্যুর পরে জান্নাত- জাহান্নাম, হাশর-পুলসিরাত বা হিসেব- নিকেশ নেই তাহলে তো আমার আফসোস করার কিছু নেই ।
কিন্তু আমার প্রশ্ন হল : “আপনি যদি মৃত্যুর পরে দেখেন এগুলো সব আছে? কুরআন- হাদিসে জান্নাত- জাহান্নামের যে,বর্ণনা দিয়েছে ; গরম পুজ পান করানো হবে, বিষাক্ত সাপ দংশণ করবে, আর নানাবিধ কঠিন কঠিন আজাবের বর্ণনা — এগুলো সব সত্য , তাহলে আপনি কী করবেন?? “
.
সে কোন উত্তর না পেয়ে আমার মুখের দিকে চেয়ে রইল।
.
আমি বললাম , ” আচ্ছা আমি আপনাকে এখনি উত্তর দিতে বলছি না। আপনার যেদিন ইচ্ছে হয় সেদিন উত্তর দিয়েন।
.
ইতিমধ্যে আমাদের অর্ডার উপস্থিত হল । আমরা যথারিতি খাওয়া-দাওয়া শেষ করে সবাই সবার বাসায় ফিরে গেলাম।
.
তার পর থেকে তার সাথে আমার কোন যোগাযোগ ছিল না, কিন্তু আমি আল্লাহর দরবারে তার হেদায়েতের জন্য রোনা-জারি চালু রাখলাম।
.
কিছুদিন পরে হঠাৎ তার নাম্বার থেকে ফোন এল ; সে আমাকে ওই হোটেলে দেখা করতে বললেন।
.
সেখানে গিয়ে আমি তাকে দেখে অবাক হলাম। তার মুখ ভর্তি দাড়ি, গায়ে লম্বা জামা।
.
মুসাফার জন্য হাত বাড়াতেই সে আমাকে জড়িয়ে ধরে অঝর ধারায় অশ্রু বিসর্জন দিতে লাগল।
.
আমি জিজ্ঞাসা করলাম, কী হয়েছে?
.
সে বলল, ” আমি তোমাকে এখানে ডেকেছি আমার উত্তর দেয়ার জন্য ;
” সেদিনের পর থেকে তোমার কথাগুলো সবসময় আমার কানে বাজতে থাকত ; আমি খেতে পারতাম না , ঘুমোতে পারতাম না , আমি কোন কাজে মন বসাতে পারতাম না, আমি নিজের ভেতর অন্য ‘আমি’কে অনুভব করছিলাম।
.
আলহামদুলিল্লাহ! এখন আমার ভেতর এক নতুন ‘আমি’র জন্ম হয়েছে ;
আমি বিশ বছর পর আবার নতুন করে নামায পড়া শুরু করেছি।
বিশ বসর যাবৎ ইসলামকে ঘৃণার করার পরেও আবার পরিপূর্ণভাবে ইসলামে ফিরে এসেছি।
আল্লাহ তায়ালা তোমাকে উত্তম বিনিময় দান করুন!
এবং আমাকে জান্নাতে তোমার সাথী হিসেবে কবুল করুন!
.
(সংগৃহীত)
#ইসলামিক_গল্প