নয়নে লাগিল নেশা পর্ব ২
WriterঃMousumi_Akter (কপি করা নিষিদ্ধ)
প্যাকেট থেকে লাস্ট সিগারেটটা নিয়ে দুই ঠোঁটের মাঝ বরাবর চেপে ধরে রেখেছে প্রান্তিক। খালি প্যাকেটটা দূরে ছুড়ে মারল।এক পা মাটিতে আরেক পা বাইকের স্ট্যান্ডে। বাইক হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। চোখ দুটো দিয়ে যেন বলেন বহ্নিশিখা ঝরছে। কপালে কয়েকটা ভাঁজও পড়েছে। ফরসা মুখশ্রীতে অযত্নে বেড়ে ওঠা খোঁচা খোঁচা দাড়ি। যদিও এটা তার স্টাইল বলা যায়।রাগে সমস্ত মুখশ্রী লাল বর্ণ ধারণ করেছে।প্যান্টের পেছন পকেটে হাত দিয়ে হাতড়ে লাইটারটা বের করল। আ*গুন জ্বা*লিয়ে মুখ হালকা নিচু করে সিগারেট ধরাল। জোরে জোরে কয়েক টান দিয়ে নাক দিয়ে গলগল করে সিগারেট এর ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে বলল, “শ্রাবণ, রজনীগন্ধাকে পাহারা দিতিস না এতদিন?”
“জি ভাই, রেগুলারই ভাবির কলেজের সামনে দাঁড়িয়েছি কিন্তু একদিনও পায়নি।পরে শুনলাম কলেজ বন্ধ ছিল। আজই প্রথম দেখা ভাবির সাথে।”
“এর আগে পরে তো আর আমার সম্পর্কে রজনীগন্ধাকে কিছুই বলিসনি, তাই না? ”
“না ভাই।”
“তাহলে ও রেগে আছে কেন? আমাকে তো চিনে না। তাহলে ওর একজন অপরিচিত যুবকের প্রতি রেগে যাওয়ার কারণ কী?”
“ভাই, সেটাই তো বুঝলাম না।”
“আমার মাথা ফেটে যাচ্ছে শ্রাবণ! একদম ফেটে যাচ্ছে। পৃথিবীর সব ধ্বং*স করে দিতে মন চাইছে।”
“ভাই, বেশি টেনশন করবেন না। আমরা আছি তো । কেন আর কী কারণে ভাবি রে’গে আছে আমরা খুঁজে বের করব।”
“ইনহেলারটা দে শ্রাবণ।”
শ্রাবণ দ্রুত ইনহেলারটা বের করে দিল।প্রান্তিক ইনহেলার ছাড়া চলতে পারে না। বেশি রেগে গেলে, বেশি চিন্তা করলেই নিঃশ্বাস আটকে আসে তার। প্রান্তিক মুখে ইনহেলার দিয়ে শ্রাবণের দিকে দৃষ্টিপাত করল। ইনহেলার মুখ থেকে বের করে বলল, “আজ থেকে সারাক্ষণ ওঁকে পাহারা দিবি। অন্তু, তুই, সাজিদ সবাই সারাক্ষণ ওরে পাহারা দিবি। ওঁকে সেইফ রাখবি। খেয়াল রাখবি যেন, ভুলেও কেউ রজনীগন্ধার সুবাস নেওয়ার চেষ্টা না করে। করলে জায়গায় পু’তে ফেলবি। বাকিটা আমি হ্যান্ডেল করব।আর তোদের হাত খরচ এই মাস থেকে ডাবল করে দিলাম।”
“ভাই আপনার জন্য আমরা জা’ন নিয়ে হাজির। আর আপনি বলছেন এই কাজের জন্য আমাদের হাত খরচ বাড়িয়ে দিবেন!”
“এই পৃথিবীতে একটাই আকাশ আর আকাশের একটাই চাঁদ, তেমনি এই পৃথিবীতে প্রান্তিক চৌধুরী একজনই আর তার একটাই রজনীগন্ধা। জীবনে অনেক টাকা ইনকাম করেছি কিন্তু কখনো এত সুখ আর মানসিক শান্তি পাইনি। যেটা ওই মেয়ের মুখ দেখার পর পেয়েছি। আগে জানতাম টাকা থাকলেই সব হয়। প্রচুর মেয়ে পাওয়া যায় ইজিলি। অনেকে মেয়েও পেয়েছি কিন্তু ভিন্ন কিছু ফিল হয়নি। সব মেয়ের সা’দ আর ঘ্রাণ একই। কিন্তু এই একমাত্র মেয়ে যার ঘ্রাণ আলাদা, সা’দ ভিন্ন যেন দামি কোনো ডায়মন্ড যা চাইলেই ছোঁয়া যায় না। শ্রাবণ, এই মেয়েকে আমার লাগবেই। আর আমার লাগবে মানে লাগবেই। ও আমার। রজনীগন্ধার দিকে জাস্ট কেউ আড়চোখে তাকালেই চোখ দ’টো তুলে পু’তে দি’বি।”
“ভাই, পুতে ফেলার মতোই কাজ করেছে আজ রোমিওর চ্যালারা।”
“কী কাজ?”
“ভাবিরে অনেক অশ্লীল কথা বলেছে। আমার র*ক্ত টগবগ করছিল রাগে। এমনিই ওই রোমিওদের আমি দেখতে পারি না। কিন্তু আপনিই তো বলেছেন আপনার গ্রামে যেন ভুলেও আমরা মা’রা’মা’রি না করি। আপনার আদেশ মাথায় রেখেই রোমিওর চ্যালাদের কিছুই বলি নাই ভাই। তবে এত জঘন্য কথা শোনাইছে যা শুনলে আপনার মাথা ঠিক থাকবে না।”
“প্রান্তিকে র*ক্ত কণিকা ভয়ানক তেজে জ্ব*লে উঠল। রাগে টগবগ করছে। চোখে-মুখ হিংস্ররূপ ধারণ করল সাথে সাথেই। এখনি চোখ দু’টো বেরিয়ে আসবে।কপালের দু’পাশের শিরা ভেসে উঠল। চোখে মুখে ভয়ঙ্ক’র হিংস্রতা। দেখে মনে হচ্ছে– এখনি সব ভস্ম করে দিবে। সিগারেট মাটিতে ফেলে জুতা দিয়ে পিশে নিয়ে বলল, “কী বলেছে?”
শ্রাবণ তখনকার সব ঘটনা খুলে বলল।প্রান্তিক রাগে কাঁপতে কাঁপতে তার সামনে থাকা গাছে গায়ের সমস্ত বল প্রয়োগ করে লা* থি মে*রে বলল, ‘শু*য়া*রে*র বাচ্চাদের জন্য কবর খোড়।”
“ভাই ওদের তো লজ্জা নেই দেখছি। সেবার না কলেজে আপনার বোন প্রিয়তাকে হয়রানি করার জন্য আচ্ছা পি*টা*নো পে*টা*লে*ন। ওদের তো দেখছি বিন্দুমাত্র লজ্জা নেই।”
“আশেপাশে দেখ তো রোমিওর চ্যালাপ্যালা কেউ আছে কি না।”
“না, ভাই আপনারে দেখেই সবগুলা ভ্যানিশ হয়ে গিয়েছে। সেই মা**ইরের কথা মনে পড়লেই তো ওদের হাঁটু কাঁপে ভাই। ওদের সেই সাহস নেই যে আপনার সামনে এসে দাঁড়াবে।”
“ওদের কোথায় পাওয়া যাবে, শ্রাবণ?”
“ভাই, মনে হয় কালও থাকবে এইখানে।”
________________
সন্ধ্যায় প্রান্তিক বাসায় ফিরল। সাথে শ্রাবণও আছে। শ্রাবণ সব সময় প্রান্তিকের সাথে থাকে। প্রান্তিকের সব থেকে বিশ্বস্ত মানুষ হলো শ্রাবণ। প্রান্তিকদের বাড়িতেই শ্রাবণ একটা রুমে থাকে। প্রান্তিকের মা-বাবা নিজের ছেলের মতোই জানে শ্রাবণকে।প্রান্তিকদের বিশাল বড়ো বাড়ি শহরে। ঢাকায়ও বাড়ি আছে। কয়েকটা গাড়িও আছে; তবে প্রান্তিক কখনো গাড়িতে চলে না। তার বাইক খুব প্রিয়। ডায়নিং-এ বসে আছে প্রান্তিকের বাবা মাহবুব চৌধুরী আর মা আঞ্জুমান চৌধুরী সাথে একমাত্র বোন প্রিয়তা। তাদের সাথে বসে এক লোক পান চিবোচ্ছে। এই লোকটাকে প্রান্তিক আগে থেকেই চিনে। উনি প্রান্তিকদের গ্রাম বালুরচর গ্রামের ঘটক সলেমান। প্রান্তিক আড়চোখে তাকাল সলেমান ঘটকের দিকে।আঞ্জুমান আর মাহবুব ছেলের মুখের গম্ভীর চেহারা দেখে দু’জন দু’জনের দিকে তাকালেন। তাদের ছেলে কি আজ আবার কারো সাথে ঝামেলা করেছে! মুখের এমন ভয়ানক অবস্থা কেন?
এর মাঝেই সলেমান ঘটক বলে উঠল,
“আরে প্রান্তিক বাজান, তোমার লাইগাই বইসা ছিলাম।”
প্রান্তিক বিরক্তিভরা চোখে-মুখে ভ্রু কুঁচকাল।ভ্রু-কুঁচকে প্রশ্ন ছুড়ল,
“কেন?”
“মাইয়্যাগো বহুত ছবি আনছি আজ। তোমার আইজ পছন্দ হইব-ই। না হইয়্যা যাইব না।”
প্রান্তিক আবারও কৌতুহলীভাবে প্রশ্ন ছুড়ল,
“কেন? মেয়েদের ছবি দেখে কী করব?”
“বিয়ার লাইগা।”
প্রান্তিক এবার বাম ভ্রু উঁচিয়ে বলল,
“আপনি আবার বিয়ে করবেন?”
“তওবা তওবা, তোমার বিয়ার লাইগা।”
“আমি আর কয়বার বিয়ে করব?”
“ক্যান আগেও বিয়ে করচ?”
“ হ্যাঁ, করেছি।”
“কবে বিয়া করলা?”
“সপ্তাহ খানিক আগেই।”
“কোন হানে বিয়া করলা?”
“আমাদের গ্রামেই।”
“এ্যাহ! আমাগো গ্যারামেই? ক্যাডা? নাম কী মাইয়ার? তার বাপের নাম কী?”
ঘটক মনে মনে বিড়বিড় করছে, “আহারে! কতগুলান ট্যাহা মিস করি ফেললাম।”
“সৈয়দ মুনসুর আলীর মেয়ে রজনী।”
“কও কী! সে তো আমার ঘরের কোনায়।”
“শুনেছি আপনি তার জন্য সম্বন্ধ ঠিক করেছেন।”
“মাইয়া তো দ্যাখতে পরির লাহান।গ্যারামের থেইকা অনেক কাজ-ই আসে আমার কাছে।”
“একটা বিবাহিত মেয়ের জন্য ঘটকালী করবেন আর?”
”না।”
“ওর জন্য কোনো ছেলে নিয়ে যদি ওর বাবার কাছে যান তাহলে আপনাকে তিন টু”ক” রো করা হবে।”
ঘটকের এক সেকেন্ডের জন্য আত্মা কেঁপে উঠল। প্রান্তিককে যারা চেনে তারা জানে ও যেমন ভালো তেমন ই ভ’য়া’নক। ওর দ্বারা সবই সম্ভব। ঘটক চশমাটা নাকের উপর থেকে ঠেলে সোজা করে জিজ্ঞেস করল,
“তা বিয়া কবে কবে হইল? কিছুই তো জানলাম না।”
“এখন তো জেনেছেন তাই না? এখন থেকে যে রজনীর ব্যাপারে জিজ্ঞেস করবে বলবেন যে ওই মেয়ে বিবাহিত। একটা বিয়ে ঠিক করলে কত পান?”
“পাত্রর বুইঝা কতা।”
“আজ থেকে বিয়ে ঠিক করা নয় বরং বিয়ে ভাঙার জন্য টাকা পাবেন আপনি বুঝেছেন।”
“বুঝলাম না কতা।”
“রজনীর এক একটা বিয়ে ভাঙতে ১০,০০০ করে টাকা পাবেন।দূর গ্রাম থেকে যেখান থেকেই সমন্ধ আসুক আপনার প্রথম কাজ হবে পাত্র পক্ষকে জানিয়ে দিবেন মেয়ে বিবাহিত। দেন আমাকে জানাবেন।বাকিটা আমি বুঝে নিবো।এবং ওই মেয়ের বাপ ভাইয়ের কাছে আমার প্রশংসা করবেন।আপনি ঘটক নিশ্চয়ই শিখিয়ে দেওয়া লাগবে না কী বলতে হবে।”
“না, না, বাজান। এইগুলান আমি ভালাই পারব।কিন্তু ঘটনাখান কী? নিজেরাই কইরা ফেলছো বিয়া।”
“এসব আপনাকে না জানলেও চলবে।ঘাড়ে নিজের মাথা রাখতে চাইলে আপনার কাজ ঠিক ঠাক ভাবে করুন।”
“তাইলে আর কী করণের।তোমার বইনের লাইগাই পাত্র দেহি কি কও বাবা।পাশের শহরেই একটা পাত্র আছে।তোমাগো মতই পরিবার।তার বাপে এইবার চেয়্যারম্যান হইয়া যাইবো।”
প্রান্তিক কাট সাঁট ভাবে বলে দিলো, “কোনো পলিটিক্যাল ফ্যামিলিতে আমার বোনের বিয়ে দিবোনা।পলিটিক্স এ জড়িত কোনো ছেলেকে আমার বোনের আশেপাশে ঘেষতেও দিবোনা।”
বলেই শ্রাবণ নিজের ঘরের দিকে তাকালো।প্রান্তিকের কথাটা শ্রাবনের কর্ণকুহরে যেতেই শ্রাবনের মুখটা মলিন হয়ে গেল।মলিন চোখে তাকালো প্রিয়তার দিকে।প্রিয়তাও অসহায় চোখে শ্রাবনের দিকে তাকালো।এখনি কেঁদে দিবে দিবে ভাব।চোখ দু’টো টলমল করছে।চোখের পানি আড়াল করতে উঠে গেল।ঘটক ও উঠে বেরিয়ে গেলো।
মাহবুব চৌধুরি এবং আঞ্জুমান চৌধুরী এতক্ষণ চুপচাপ ছিলো।তারা জানে তাদের ছেলের দ্বারা সব সম্ভব তাদের ছেলে অত্যন্ত সাহসী।কিন্তু তাদের না জানিয়ে বিয়ে করবার মত ছেলে তাদের নয়।সৈয়দ মুনসুর আলীর মেয়ে কোনো খারাপ আচরণ করেনিতো তাদের ছেলের সাথে।জিদের বসে কী ওই মেয়েকেই বিয়ে করতে চাইছে।মাহবুব চৌধুরী শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে বলল,
”কী হয়েছে রে শ্রাবণ?প্রান্তিক এত রে’গে আছে কেনো? ওই মেয়েকি কিছু বলেছে প্রান্তিক কে?”
শ্রাবণ হেসে দিয়ে বলল, “না চাচা। ভাইয়ের ওই মেয়েকে পছন্দ হয়েছে।বিয়ে করতে চাইছে।আপনাদের সাথে ভাই এ ব্যাপারে কথা বলবে।”
মাহবুব চৌধুরী এবং আঞ্জুমান চৌধুরী দু’জনেই ভীষণ অবাক হল।তাদের ছেলে বিয়ে করবে। সত্যি তার কোনো মেয়ে পছন্দ হয়েছে।দুজনে মিলে বিষয় টা নিয়ে আলাপ আলোচনা করছে।
শ্রাবণ এদিকে সেদিক তাকিয়ে প্রিয়তার রুমে প্রবেশ করল।প্রিয়তা রুমে নেই।প্রিয়তার রুমের মাঝ দিয়ে সাইডে একটা এক্সট্রা রুম আছে।কাঁন্না আটকাতে প্রিয়তা প্রায় এ রুমেই আসে।রুমটা সদর দরজা থেকে খানিক টা ভেতরে। দিন রাত কেউই এ রুমে প্রবেশ করেনা।প্রিয়তা বিছানায় উপুড় হয়ে কাঁদছে।শ্রাবণ দরজা টা খোলা রেখে এক্সট্রা রুমে প্রবেশ করল।যাতে দরজা খোলা দেখে কেউ মাইন্ড না করে।বিছানায় বসে প্রিয়তার কাঁধে হাত রাখল।শ্রাবণের স্পর্শতে প্রিয়তা বিছানা থেকে মুখ তুলে শ্রাবনের দিকে তাকালো।চোখ দু’টো লাল হয়ে গিয়েছে।অশ্রুসিক্ত চোখে তাকিয়ে আছে প্রিয়তা শ্রাবনের বাদামী আঁখিযুগলে।এই চোখ দু’টো প্রিয়তার নেশা।এই চোখ দু’টো তার ভীষণ প্রিয়।শ্রাবনের চেহারার বিশেষত্ত্ব তার বাদামী চোখ,সিল্ক চুল।চুল গুলো কপালে পড়ে থাকে আলগোছে।প্রিয়ন্তির অশ্রুসিক্ত চোখের দিকে তাকিয়ে হৃদয় টা আহত হল শ্রাবনের।প্রিয়তা উঠে বসল।শ্রাবণ নিজেকে স্বাভাবিক করে বলল,
‘কেউ একজন জানে তাকে এই উ’ন্মা’দ ছেলেটা ভীষণ ভালবাসে।তার চোখের নোনা জলে আমার বুকে র*ক্তস্রোত বইয়ে দেয়।তবুও সে কাঁদে কেনো?’ বলেই শ্রাবণ প্রিয়তার কাঁধের উপর দিয়ে হাত রাখল।প্রিয়তাকে খানিকটা কাছে টেনে নিলো।আলগোছে প্রিয়তার মাথাটা শ্রাবনের বুকে এসে বিঁধল।শ্রাবণ দরজায় উঁকি দিয়ে দেখল কেউ আসছে কীনা? এ দিকটায় কারো আসার ও কথা নয় এ টাইমে।আসলেই বা কী? প্রেম করতে গেলে এত টুকু রিস্ক নিতেই হয়।প্রেম ভালবাসার পূঁজি হল ঝুঁকি। এটা নিতেই হবে।প্রেয়সীর চোখে জল,হৃদয় ব্যাকুল। প্রেমিক হিসাবে শ্রাবনের এই মুহুর্তে প্রেমিকার মন ভাল করাটাই গুরুত্বপূর্ণ কাজ।সব রকম ঝুঁকি নিয়েই প্রিয়তাকে বুকের সাথে আগলে ধরে বলল,
‘নিজের লাইফের রিস্ক নিয়ে প্রেম করছি।তাও যদি একজন এভাবে কাঁদে তাহলে কীভাবে হবে।দেখা গেলো প্রাণ টাও হারালাম তার হাসিটাও হারালাম।’
প্রিয়তা ফুপিয়ে কেঁদে উঠে বলল, ‘আমাদের বাড়ি কী আজ প্রথমবার এলে তুমি?যে রিস্ক এর কথা বলছো।’
‘এসেছি বাট প্রেম তো করিনি।প্রান্তিক চৌধুরীর বাড়িতে তারই বোনকে বুকে আগলে ধরাটা কী যেন তেন কথা।সেই হিসাবে আমি বলতেই পারি আমি তোমার ভাই এর চেয়েও সাহসী।তুমি জিতছো প্রিয়তা।দারুণ ভাবে জিতেছো।গর্ব করে বলতে পারবা এই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সাহসী ছেলে আমার প্রেমিক।’
‘প্রেমিক ই বলে যেতে হবে।কখনো সাহস করে বলতে পারব না যে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সাহসী পুরুষ আমার স্বামি।’
‘কেনো বলতে পারবা না শুনি।’
‘কারন তোমার সেই সাহস ই হয়নি আমাকে বিয়ে করার।’
শ্রাবন প্রিয়তার গাল টেনে বলল, ‘ছেলেমানুষ কত দুষ্টু জানো?এখন যেমন আছো ভাল আছো।বিয়ের পর প্রচুর দুষ্টুমি করব আমি।তুমি একদম বিরক্ত হয়ে যাবা।তাই বিয়ের জন্য এত উতলা হইও না।পরে কিন্তু সামলাতে পারবে না। ‘
‘এসব বলে কথা ঘুরানোর কী মানে আছে।তুমি এসব বলে কথা ঘুরাতে পারবে না শ্রাবন।আর কতবার বলব -চলো আমরা বিয়ে করে নিই।’
‘উফফ তুমি বুঝবে না প্রিয়তা।আমি ভাই এর সাথে বেইমানি করতে পারবনা।ভাই আমাকে ঠিক ই মেনে নিবে দেখে নিও।’
‘মেনে নিবে কীভাবে?তুমিতো ভাইয়াকে কখনো আমাদের রিলেশন এর কথা ই বলতে পারবানা।’
‘ভাই এর বিয়েটা হোক বলব।’
‘বলে কী লাভ।ভাইয়া তো বলেই দিয়েছে সে পলিটিক্যাল কারো সাথে আমার বিয়ে দিবেনা।’
‘দিবে সময় আসুক।এইবার একটু হাসো।তোমার রুমে আর বেশীক্ষণ থাকা যাবেনা।কেউ আসতে পারে।’
‘আসুক।এসে অন্তত দেখে আমাদের বিয়ে টা দিক।’
শ্রাবন হাসল।পকেট থেকে একটা গোলাপের কড়ি বের করে প্রিয়তার ঠোঁটে চেপে ধরে বলল, ‘এটা পানিতে ভিজিয়ে রাখো।দেখবে ফুটবে।আর শোনো আই লাভ ইউ। ‘
‘আই লাভ ইউ ঠু’
শ্রাবণ বেরিয়ে গেল প্রিয়তার রুম থেকে।প্রিয়তা তাকিয়ে রইলো শ্রাবণের দিকে।এই মানুষটাকে সে ভালবাসার চাইতে একটু বেশী ভালবাসে।
চলবে?..