নয়নে লাগিল নেশা পর্ব ২১
WriterঃMousumi_Akter
“গেরামের মান ইজ্জত কি কিছুই রাখবা না মুনসুর ভাই? তোমার মাইয়্যারে দেইখা তো মনে হয় ভাজা মাছ খান ও উল্টায় খাইতে পারেনা। এহন শহরে গিয়া সিনেমার মত হাত ধইরা ফষ্টি নষ্টি কইরা বেড়াইতাছে। এই গেরামের আর পাঁচটা মাইয়্যা কি শিখব। তোমার মাইয়্যার কঠিন শাস্তি না দিলে গেরামের সবার মাইয়্যাই এইসব অকাম কইরা বেড়াইবো।তাও আবার যেই সেই পোলা না এই গেরামের অর্ধেক জমি-জমার মালিক মাহমুদ চৌধুরীর একমাত্র পোলার হাত ধইরা নাইচা বেড়াইতাছে। ওই পোলায় কি তোমার মাইয়্যারে বিয়া করব কোনদিন। দুই চার দিন হাত ধইরা ঘুরব ফষ্টি নষ্টি কইরা ছাইড়া দিব। “
গ্রামের ছোট বাজারে মুনসুর আলী সবজি বিক্রি করতে গিয়েছিল। ভরা বাজারের মাঝে ফেলে যাচ্ছে তাই ভাবে বলছে গ্রামের মোড়ল।
সাইড থেকে আরেকজন বলে উঠল, “মিয়া বাই আপনের কি বিশ্বাস হয় এহনো কোনো আকাম করে নাই? বাচ্চা কাচ্চা একটা পেটে বাঁধাই নিছে কীনা খোঁজ নিয়া দেহেন মুনসুর ভাই। “
এত জঘন্য কথা কানে আসতেই নিজের দুই কান হাত দিয়ে চেপে ধরল মুনসুর আলী। তার মেয়ে সম্পর্কে এত খারাপ কথা সহ্য করতে পারছে না। ইতমধ্য সে জানতে পেরেছে তার মেয়ের বান্ধবী প্রান্তিকের বোন। তাছাড়া প্রান্তিক বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে তার মেয়েতো এই বিয়েতে রাজি না। তাহলে যার সাথে বিয়েতে রাজি না তার হাত ধরে ঘুরবে কেনো? এতটাও খারাপ মেয়ে তো তার নয়। প্রান্তিক কে তার মেয়ে পছন্দ করেনা বলে সে তার স্ত্রীকে জানিয়ে দিয়েছে যতই প্রান্তিক ভাল হোক আমার মেয়ের যেহেতু পছন্দ না এই বিয়ে দিবনা।বিয়ে হল মনের ব্যাপার। যেখানে আমার মেয়ে মন থেকে মেনে নিচ্ছেনা সেখানে বিয়ে দিলে মেয়ে ভাল থাকবেনা। মেয়ের প্রতি অসম্ভব দূর্বল মুনসুর আলী। মেয়ের সব ইচ্ছার ই গুরুত্ব আছে তার কাছে। হয়ত বান্ধবী বাড়ি গিয়ে প্রান্তিকের সাথে দেখা হয়েছে কোনভাবে কথা বলেছে। কিন্তু সেই ছবি গ্রামে এত বাজে ভাবে ছড়িয়ে দিল কে? এত খারাপ কথা সে শুনছে ভাল কথা কিন্তু তার মেয়ে শুনলে সহ্য করতে না পেরে গলায় দঁড়ি দিবে। মেয়ের এই খারাপ সময়ে সে মেয়ের পাশে থাকবে। এই মুহুর্তে বাবা হিসাবে নিজের মেয়ের পাশে থাকা জরুরী। এখনি বাড়িতে গিয়ে সে তার মেয়েকে কোনো আত্মীয় বাড়ি রেখে আসবে। মেয়ে লেখাপড়া আত্মীয় বাড়ি থেকেই করবে। তবুও মেয়েকে লেখাপড়া করাতে হবে।মানুষের কথা কানে নেওয়া যাবেনা।এসব মনে মনে ভেবে সবজির ঝুড়ি ফেলে হাঁটা দিল। পেছন থেকে মোড়ল ডেকে বলল,
” দাঁড়াও মুনসুর কই যাও?”
” বাড়িতে যাইতাছি।”
” বাড়িতে যাইয়া কি করবা? তোমার মাইয়্যা যে অকাম করছে এর বিহিত কি করবা? কিছু না বলেই চলে যাইতেছো? “
“ছোট মানুষ বোঝে নাই, তাই বইলা তো আর মাইয়্যা মাইরা ফেলতে পারব না। আপনারা তো কিছু বলতে বাকি রাহেন নাই। মাইয়্যারে বুঝাব যেন এইসব আর না করে।”
আরেকজন বলে উঠল,
“তোমার মত বাপ আছে বইলাই মাইয়্যারা এত অকামের সুযোগ পায়। ওই বড়লোকের পোলারে ডাইকা হুনো তোমার মাইয়্যারে বিয়ে করব কীনা? না করলে আইজকার মাঝেই তোমার মাইয়্যারে বিয়া দিবা।”
” বিয়া কি কইলেই দেওন যায়। আইজকার মাঝে পোলা কই পাবো?”
” পোলা আমরা দেখব, হয় মাইয়্যার বিয়া দিবা নয় আইজকার মাঝে গ্রাম ছাইড়া যাবা। নইলে তোমার মাইয়্যারে আমরা আইনের আওতায় দিব অকামের লাইগা। সংবাদ পত্রে উইঠা যাবে এই নিউজ।”
মুনসুর আলী মারাত্মক ভ-য় পেয়ে গেলেন।চেনা মুখ গুলোর ভয়ংকর রুপ দেখে সে অবাক হল। এত দিন যাদের আপণ ভাবত আজ বিপদের দিনে তাদের ভয়ংকর রুপ দেখে অবাক হচ্ছে। যার তার সাথে বিয়ে হবার চেয়ে প্রান্তিক ই ভাল হবে তার মেয়ের জন্য। মেয়ের হাত পায়ে ধরে বোঝাবে প্রান্তিক কে বিয়ে করার জন্য।
বাজারে বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে শ্রাবণ।মাথায় হেলমেট পরা। পুরা ঘটনা দেখছে। প্রান্তিক ই শ্রাবণ কে পাঠিয়েছে পুরা গ্রামের ঘটনা জানার জন্য। রজনীর ফ্যামিলির অবস্থা জানার জন্য। শ্রাবনের ফোন বেজে উঠল। শ্রাবণ ফোন রিসিভ করে বলল,
” হ্যাঁ ওস্তাদ বলেন।”
” শালা মাদারবোর্ড তুই আবার আমারে ওস্তাদ ডাকলি। এই এক ডাকে আমি বরবাদ হয়েছি তোর ভাবির কাছে। আমার সিগারেটের আ’গু’নে’র চেয়েও জ্বলন্ত প্রেমটা তোর জন্য হয়নি। আমি যদি তোর প্রেমে এর চেয়ে দ্বিগুন আ-গু-ন না জ্বালাইছি আমার নাম প্রান্তিক চৌধুরী নয়। একবার প্রেম খালি কর। আমি যে যন্ত্রণা পাইছি তার দ্বিগুন ফিরায় দিবো।”
” ওহ নো ভাই! বাপের জন্মে আপনারে আর ওস্তাদ ডাকব না। আমার বউ আপনার বোনের মত। তারে কষ্ট দিয়েন না।”
“তুই আগে আপডেট জানা। “
“ভাই ভাবির বাবাকে মানুষ যা তা বলছে। অবস্থা খুব ই খারাপ। ভাবিকে আজ ই বিয়ে না দিলে তারা খারাপ কিছুর হুমকি দিচ্ছে।”
“যারা হুমকি দিচ্ছে তাদের নাম গুলা মুখস্থ কর নামতা মুখস্থ করার মত।”
“আচ্ছা ভাই।”
“এত দুঃসাহস কার হল শ্রাবণ। তার ক-লি-জা আছে বলতে হয়। তবে ওই ক-লি-জা ভুনা হবে আর সেটা আমার শখে কু**ত্তা**য় খাবে বুঝতে পারতেছে না বেচারা। তবে মুখোশের আড়ালে থাকা শত্রুকে ধন্যবাদ। আমাকে রজনীর থেকে আলাদা করতে গিয়ে আরো কাছে নিয়ে আসল। শয়তান ভাবে এক রকম সৃষ্টিকর্তা ভাবে অন্যরকম। আজ রাতে বিয়ে হবে রজনির তবে সেটা অন্য কেউ নয় প্রান্তিক চৌধুরীর সাথে। গ্রামের মোড়ল সহ বাকি যারা আছে ওই বাজারে দাঁড়িয়েই নিউজ টা দিয়ে দে।”
প্রান্তিক ফোন রেখে মৃদু হেসে বলল, ” রজনীগন্ধ্যা মানুষ এত বোকা কেনো বলোতো। তোমার এই হ্যান্ডসাম প্রেমিক পুরুষের মত চালাক হতে পারেনা? তারা কি ননসেন্স যে আমি তোমাকে অন্য কারো সাথে বিয়ে হতে দিতাম। আমি সেল্ফ কনফিডেন্স আছেনা নিজের প্রতি। আমতো জানি তুমি আমাকে ভালবাসবেই। আমার মত কি কারো তোমাকে ভালবাসার ক্ষমতা আছে। তোমাকে ভালবাসার জন্য প্রয়োজনে তুলে এনে নিয়ে করতাম। তুমি নিঃসন্দেহে জিতেছো এটা একদিন বলবা।”
যখন মানুষ মুনসুর আলীকে খারাপ কথা বলতে ব্যস্ত তখন ই শ্রাবণ মাথার হেলমেট খুলে বলল, ” থামেন আপনারা। রজনির বিয়ে আজ ই হবে সেটা প্রান্তিক চৌধুরীর সাথেই হবে। এই গ্রামের যত মানুষ আছে সবার ই দাওয়াত রইল প্রান্তিক চৌধুরীর পক্ষ থেকে।আর মোড়ল সাব গরু যে কয়টা লাগে মানুষ হিসাব করে কিনে ফেলেন। যাচাই খাওয়া হবে।”
শ্রাবন মুনসুর আলীকে বলল, “আঙ্কেল বাইকে উঠুন,আমি পৌছে দিচ্ছি। আর চিন্তা করবেন না আপনি নিশ্চিন্তে প্রান্তিক ভাইয়ের সাথে নিজের মেয়েকে তুলে দিতে পারেন। ”
বাজারে উপস্থিত সবাই খুব অবাক হল। প্রান্তিক চৌধুরী কীনা একজন কৃষকের মেয়ে বিয়ে করবে।
বাড়িতে বিছানায় সুয়ে সুয়ে কাঁদছে রজনী। পাড়ার মানুষ দলে দলে আসছে আর যা তা কথা বলে যাচ্ছে তার পরিবার কে। জীবন আর ভাগ্য এখন তাকে কোথায় নিয়ে যাবে কে জানে?…
চলবে?…
(এডিট ছাড়া ছোট পর্ব তাও লিখতে অনেক সময় লেগেছে। এখন থেকে সপ্তাহে দুইদিন বড় পর্ব দিবো।গ্রামের ভাষা গুলো ও এলোমেলো আছে। প্রান্তিক রজনীর বিয়ে খেতে প্রস্তুত হয়ে যান। আর রেসপন্স করুন সবাই।)