#writer_Mousumi_Akter
রাত দশটা বাজে।আলমারি খুলে সমস্ত সিগারেট ফেলে দিল রজনি। প্রান্তিক ডিভানে বসে পায়ের উপর পা তুলে কফি খাচ্ছিলো।রজনির এমন কান্ডে প্রান্তিক ভ্রঁ কুচকালো। কাহিনী কী? তার বউ এমন করছে কেনো? প্রান্তিক কফির মগে চুমুক দিয়ে রজনির দিকে তাকাল।রজনি কেমন উত্তেজিত হয়ে বলছে, ” এসব সিগারেট যারা তৈরি করে আর বিক্রি করে ওদের আমি অভিশাপ দিব। বাজে অভিশাপ। “
প্রান্তিক এবার কপালে কয়কটা ভাজ ফেলে প্রশ্ন করল, ” আর যারা খায় ওদের অভিশাপ দিবেনা?”
“না কারণ ওই সিগারেট খোরকে আমি ভালবাসি।”
প্রান্তিক উঠে এসে পেছন থেকে রজনিকে জড়িয়ে ধরে বলল, ” এত রাগ কেনো বউ?”
“খবরদার আমাকে ছোবেন না।যদি সিগারেট স্পর্শ করেন আমাকে আর স্পর্শ করবেন না।”.
প্রান্তিক রজনির ঘাড়ে থুতনি রেখে বলল, ” আচ্ছা আজ থেকে সিগারেট বাদ। চলো পাহাড় দেখে আসি।”
“সিগারেট ছাড়লে, আপনার সাথে জাহান্নামে যেতেও রাজি।শুধু কথা দিন আর ওসব খাবেন না।”
“না খাবোনা, তবে তোমার চুমু খাবো আনলিমিটেড।” বলেই দুষ্টুমি শুরু করল। রজনি হেসে দিয়ে পালাল। প্রান্তিক রজনির পিছ পিছ ছুটছে রুমজুড়ে।
কেটে গেল সাতদিন। ফোনের ভাইব্রেশনের শব্দে কেঁপে উঠল অন্তর শরীর। প্যান্টের পকেটে ফোন রাখা। পা সহ সমস্ত শরীর কাঁপছে অন্তর।প্যান্টের পকেট থেকে ফোন বের করে দেখল ফোনের স্ক্রিনে ভাষছে প্রান্তিকের নাম্বার। অন্ত ফোনটা রিসিভ করে কানে দিয়ে বলল, ” ভাই আপনার শরীর কেমন এখন?”
“তোর ভাবিকে কিছু বলেছিস?”
“কোন বিষয়ে ভাই?”
“আমার অসুস্থতা নিয়ে।”
“মাফ করবেন ভাই।জীবনে প্রথমবার আপনার কথার বিরুদ্ধে গিয়েছি। ভাবিকে আমার বলতেই হত। না হলে আপনি সিগারেট খাওয়া বাদ দিতেন না।”
“আমি কি তোর ভাবিকে ভ-য় পাই যে -সে বললেই আমি সিগারেট ছেড়ে দিব।”
“সত্য কথাটা কি বলব ভাই।”
“আবার কি সত্য।”
“আপনার মত কেউ অত বউ ভ-য় পায়না।আপনি একজন নির্ভীক মানুষ কিন্তু ভাবির কাছে ভীতু।”
“ভ-য় পাই মানে? তোর ভাবির এক হাত ধরলেই তো সে নড়তে পারেনা এখানে ভ-য় পাবার কি আছে।”
” তাহলে ভাবির সামনে গিয়ে বারবার বলেন কেনো তোমাকে আমি ভ-য় পাই।”
“শোন বউদের ঘন ঘন বলতে হয় তোমাকে আমি ভ-য় পাই এটা শুনলে ওরা খুশি হয়। সংসারে সুখ শান্তি বৃদ্ধি পায়।”
“তার মানে আসলে আপনি ভ-য় পাবার নাটক করেন।”
“বিয়ে করেছিস এইবার বুঝবি। বউ কি জিনিস। এদের ভ-য় না পেয়ে উপায় নেই। “
“আচ্ছা এই ব্যাপার ভাই।”
“তুই তোর ভাবিকে কথাটা বলে কিন্তু মোটেও ঠিক করিস নি অন্ত। তুই জানিস তোর ভাবির বয়স কম। আমাকে প্রচন্ড ভালবাসে। এত বড় সত্য সহ্য করার ক্ষমতা ওর নেই। তুই রজনিগন্ধ্যার শান্তি নষ্ট করলি কেনো? আজ থেকে প্রতিটা মুহুর্ত ও দুঃচিন্তায় থাকবে।আমাকে হারানোর ভয়ে ঘুমোবেনা।আমি কি ভাগ্যবান দেখ অন্ত। রজনিগন্ধ্যা নিজে টেনশন করছে, আমাকে ওষুধ খাওয়াচ্ছে।অথচ বুঝতে দিচ্ছেনা আমি মরণব্যাধিতে আক্রান্ত। ও ভাবছে আমি কিছুই জানিনা বোকা মেয়ে।”
“ভাবিকে বলেছি এইজন্য যেন আপনাকে সিগারেট স্পর্শ করতে না দেয়।”
“আমি মৃত্যুর আগেও সিগারেট খেয়ে যাবো। সিগারেট খেলে মানুষ মরে তোকে কে বলেছে। আর ক্যান্সার হলেই কি মানুষ মরে নাকি। যতক্ষণ আয়ু আছে ততক্ষণ আমি বেঁচে থাকবই।প্রতিটা সেকেন্ড ভীষণ ভাবে ইনজয় করব।”
“আপনার কিছু হবেনা ভাই। আপনি আমাদের সবার প্রাণ। আপনি ছাড়া কতগুলো মানুষ অসহায় ভেবে দেখেছেন।”
“আমাকে নিয়ে ভাবতে হবেনা। আমার বোনের খেয়াল রাখিস শুধু তুই।” প্রান্তিক ফোনটা কেটে দিল।
অন্ত ফোনটা ট্রাউজারের পকেটে গুজে বিছানার দিকে তাকাল। সাধা ধবধবে বিছানার চাঁদরের উপর কালো থ্রি-পিছ পরে সুয়ে আছে প্রিয়তা। অন্ত তাকাতেই সে চোখ খুলল। আশে পাশে তাকাল।কিছু একটা খুজছে। অন্ত দ্রুত উঠে এসে কিছুটা ঝুঁকে প্রিয়তার মুখের কাছে মুখ নিয়ে খুব খুব আগ্রহী কন্ঠে বলল, ” কিছু খুজছো?”
প্রিয়তা ক্লান্ত চোখে অন্তর দিকে তাকাল।অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়েই রইল।কিছুই বলছেনা।বিগত সাতদিনে প্রিয়তা মোটামুটি চোখ খুলছে।আগে তো চোখ ই খুলছিল না।এখানকার ডাক্তার দেখিয়ে মোটামুটি কিছুটা স্বাভাবিক এর দিকে এসছে।তবে অন্তর সেবা যত্ন ডাক্তারের থেকে বেশী কাজে দিয়েছে।
অন্ত আবার ও মোলায়েম কন্ঠে বলল, ” কিছু লাগবে?”
প্রিয়তা এক দৃষ্টিতে অন্তর চোখের তারায় তাকিয়ে বলল,
“আপনার চোখের মনি কালো। শ্রাবণের কটা ছিল।এইজন্য বেশী সুন্দর লাগত।”
অন্তর মুখটা কালো হয়ে গেল।কেন যেন প্রিয়তার মুখে শ্রাবণের নাম সহ্য করতে পারেনা অন্ত। ভেতরে ভেতরে জ্বলে।অনিচ্ছাকৃত হাসি দিয়ে বলল, ” হুম।”
“শ্রাবণ তো আপনার ঘনিষ্ট বন্ধু।আজ ও কি একটাবারের জন্য ফোন দিইনি আপনাকে।সে কি জানতে চাইনি আমি কেমন আছি?”
অন্ত আবার ও মলিন মুখে উত্তর দিল,” না। “
“ওহ।”
“কিছু খেয়ে ওষুধ খেতে হবে।”
“আপনাকে আর কতবার বলব আমার ওষুধ খেতে ভাল লাগেনা।আমি কিছু খাবনা।”
অন্ত খাবার মাখিয়ে প্রিয়তার মুখে পুরে দিয়ে বলল, ” খাবারের সাথে রাগ করতে নেই। তুমি খাওনি বলে আমিও খাইনি। তুমি খেলে আমিও খেতে পারতাম।”
প্রিয়তা খেয়াল করল অন্তর চোখ মুখ শুকিয়ে আছে। ছেলেটা সারাক্ষণ তাকে পাহারা দেয়। তাকে ধরে নিয়ে ওয়াশ রুমে যায়। সারাক্ষণ সব কিছুতে খেয়াল করে।
“
প্রিয়তা কিছু না বলে খাবার টা অনিচ্ছাকৃত গিলে ফেলল।খাবার গলার নিচে দিয়ে নামতে চাইছেনা।তবুও খেতে হল।অন্তর দিকে তাকিয়ে বলল, ” আমি খেয়েছি। আপনিও খেয়ে নিন।”
কি অদ্ভুত! জীবন। অন্তর প্রিয়তা আর শ্রাবণের।
চলবে?
(ঘুমের ঘরে লেখা এলোমেলো হতে পারে। সেজন্য অগ্রিম সরি।)