আজ সূর্য আলো ছড়ায়নি। সময়টা দুপুর কিন্তু চারপাশের আবহ দেখে মনে হচ্ছে কিছুক্ষণের মধ্যে রাত নেমে আসবে। বেদেদের নৌকাগুলো পুষ্পনদীর বুক বেয়ে ছুটে চলেছে তানপুরা বাজারের দিকে। নদীর স্রোত উল্টো হওয়ায় নৌকার বেগ কম।
কিছুদিন আগেও এই নদীটি শুকিয়ে জীর্ণশীর্ণ হয়ে পড়েছিল। এখন বৃষ্টির পানিতে টলটলে রূপ ধারণ করেছে। প্রতিদিন বৃষ্টি হয়।
মুসল্লিরা জিকির করার সময় যেভাবে দুলে ঠিক সেভাবে নদীর দুই পাশের গাছগুলো বাতাসে দুলছে। ওইতো আকাশের ঈষাণ কোণে কালো মেঘের ঘনঘটা দেখা যাচ্ছে। কালো মেঘ দেখলেই জুলফার বুক ভারী হয়ে ওঠে।
‘বুউউউ, বুউউউ।’
বাচ্চার গলা শুনে জুলফা ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায়।
তাদের নৌকার পাশের নৌকাটি শিয়াইল্যাদের সর্দারের স্ত্রীর। তিনি বছর দেড়েক বয়সের নাতিকে কোলে নিয়ে বসে আছেন। সে তাকাতেই বাচ্চাটি হাসল। জুলফা
জিভ বের করে বাচ্চাটিকে ভেংচায়, বাচ্চাটিও হুবহু মুখভঙ্গি করে।
দীর্ঘদিন গাওয়াল চললেও সপ্তাহখানেকের মধ্যে সে ফিরে যাবে। কালীগঞ্জের এক বিয়ে বাড়ির মঞ্চে ভালো পয়সায় নাচার সুযোগ হয়েছে। কাজটি বুড়োর মারফতে পাওয়া।
জুলফা আকাশের দিকে তাকায়।সারাটা আকাশ ঢেকে গেছে কালো মেঘে। যেকোনো মুহূর্তে আকাশ ভেঙে জমিনে নেমে আসবে। নৌকা লোকালয় ছেড়ে হাওড়ের দিকে এগোতেই হঠাৎ কানে ভেসে আসে বেহালার সুর। বিষাদমাখা সেই সুর মনের ভেতরের মনকে উতলা করে তোলে। জুলফা ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে তাকায়। একটা বিশাল বড় নৌযান উত্তর দিক থেকে এগিয়ে আসছে। নৌযানটি কাছে আসতেই বিশাল ঢেউয়ে তাদের নৌকা দুলে ওঠে।
নৌযানটির ছাদে দুই পা ভাঁজ করে বসে আবিষ্টমনে বেহালা বাজাচ্ছে নাভেদ। নদীর তরঙ্গও যেন সেই সুরে মিশে অন্যরকম সঙ্গীতে পরিণত হয়েছে৷ বাতাসের ঝড়ে তার বাবরি চুল পাখির মতো উড়ছে। গায়ে জড়ানো ধূসর রঙের শাল। ইতিমধ্যে বেহালার মনকাড়া সুর সকল বেদেদের নজর কেড়ে নিয়েছে।
জুলফা হতভম্ব চোখে চেয়ে রইল, যেন মাত্রই অলৌকিক কিছুর আবির্ভাব ঘটেছে; হঠাৎ করে আকাশ থেকে ঝুপ করে নেমে এসেছে দেবদূত! প্রথম প্রেমের অনুভূতির অমৃত ধারা পুনঃপ্রবাহিত হতে শুরু করে। দুই বছর আগের যে রাতের স্মৃতির সমুদ্র মনের মনিকোঠা থেকে মুছে গিয়েছিল, সেই সমুদ্র পুনরায় উত্তপ্ত হচ্ছে। সেখানে নতুন করে স্থান করে নিয়েছে বেহালার সুর, আনন্দের সবুজ বাগানে প্রেমের পাখিরা বেহালার সুরের সুগন্ধে মধুর গান গাইতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে!
নৌযানটি পাশ কেটে ধীরে ধীরে বহু দূরে চলে যায়। এতো দূরে যে মনে হচ্ছে কালো মেঘাচ্ছন্ন আকাশটি নৌযানসহ নাভেদকে আলিঙ্গন করে বুকে টেনে নিচ্ছে। চোখের পর্দা থেকে বিলীন হয়ে যায় নাভেদের উপস্তিতি। রয়ে যায় শুধু হাওড়ের জলের সঙ্গে মিশে যাওয়া কালো আকাশ। জুলফা সেদিকে অপলক চেয়ে থাকে। বেহালার সুরটা এখনো কানে বাজছে। একটা নতুন অনুভূতি ছুটে বেড়াচ্ছে বুকের এপাশ থেকে ওপাশ। চারপাশটা শূন্যতায় খাঁ খাঁ করছে।
মঞ্চে অভিনয় করার সুবাদে জীবনে কত-শত পুরুষের সঙ্গে সাক্ষাৎ ঘটেছে কিন্তু ওমন অনুভব তো আর কারো জন্য হয়নি। কীসের এই অনুভব?
তানপুরা বাজারের ঘাটে বেদেদের নৌকা থামে। বাজারে মানুষের ভিড়। শত গ্রামের মধ্যমনি এই তানপুরা বাজার। সারা সপ্তাহ বাজার বসে, সবকিছু পাওয়া যায়। সবসময় খদ্দের ও ব্যবসায়ীদের ভিড় লেগে থাকে। আগামীকাল রাতে একটি মাহফিল অনুষ্ঠান হবে এবং বাজার প্রাঙ্গণে মেলা বসবে৷ এছাড়া এখানে একটি জাগ্রত মাজার আছে। দুই রাকাআত নফল নামায আদায় করে শুদ্ধ মনে যেকোনো মানত করলে নাকি তা পূরণ হয়৷ তাই দূর দূরান্ত থেকে নানা ধরনের মানুষ এখানে উপস্থিত হয়।
মেলা অবধি বেদেরা বাজারের পিছনের পরিত্যক্ত জায়গায় ঝুপড়ি ঘর তুলে থাকবে। তারপর আশেপাশের গ্রামে যে যার মতো ব্যবসা করবে। তানপুরা থেকে সকল গ্রামাঞ্চল, ব্যবসায়ী অঞ্চল কাছাকাছি। সহজে যাতায়াত করা যায়।
জুলফা ও তার বোন জুঁইয়ের কাঁধে সাপের ঝাঁপি। রঞ্জন না আসলেও স্ত্রী বৈশাখী এসেছে। ব্যবসার পাশাপাশি তার এখানে আসার আরেকটি কারণ হচ্ছে, ছেলের সুস্থতা। শুনেছে, মাজারে একটা বিশাল পবিত্র সাদা পাথর আছে। সেখানে ছোট বাচ্চারা হামাগুড়ি দিয়ে গড়াগড়ি খেলে বাচ্চাদের উপর রহমত বর্ষিত হয়। তার ছোট ছেলের বারোমাস অসুখ লেগে থাকে। কিছু খেতে চায় না, খেলাধুলা করে না, সারাদিন কোলে নেতিয়ে থাকে। যত দিন যাচ্ছে অসুস্থতা যেন বেড়েই চলেছে। তাদের মতো দরিদ্র যাযাবরদের শহরের চিকিৎসক দেখানোর পয়সা নেই। এই মাজারই শেষ ভরসা। যদি উপকার হয়!
পরিত্যক্ত জায়গাটির পাশেই একটি বড় খাল। যেটি পুষ্পনদীর সঙ্গে গিয়ে মিশেছে। এখানে সর্বক্ষণ বাতাস বইতে থাকে৷ জুলফা ভাতিজাকে কোলে নিয়ে খালের রেইনট্রি গাছের নিচে গিয়ে দাঁড়ায়৷ মা-ভাবি পলিথিনের ঝুপড়ি ঘর বাঁধছে, হাতেহাতে সাহায্য করছে জুঁই। তাদের নৌকাগুলো খালের পশ্চিম কোণে বেঁধে রাখা। জুলফা নৌকার অগ্রভাগে গিয়ে বসে। ভাতিজাকে সামনে শুইয়ে পেটে সুড়সুড়ি দিয়ে গদগদকণ্ঠে বলে, ‘আব্বা…ও আমার আব্বা একটু হাঁটবেন?’
ছোট্ট শিশুটি খিলখিল করে হাসল…কী মিষ্টি করে হাসে এই একরত্তি মানুষটা! কবে যে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে দৌড়ে বেড়াবে। ভাতিজাকে বুকের সঙ্গে চেপে ধরে গালে চুমু খেয়ে আদুরে কণ্ঠে বলল, ‘সোনা আব্বা…আমার বাপজান।’
বেশ কয়েকটি গলার চিৎকার শোনা যাচ্ছে। কী হয়েছে ওখানে? জুলফা আতঙ্কে শক্ত হয়ে গেল। হন্তদন্ত হয়ে ভাতিজাকে নিয়ে উপরে উঠে দেখে বাজারের সভাপতি দলবলসহ লাঠি-সোঁটা নিয়ে তাদের এখান থেকে তাড়াতে এসেছে। কিছুতেই স্থানীয়দের আশেপাশে থাকতে দিবে না। তেঁতো একটা অনুভূতিতে চিড়বিড়িয়ে উঠল জুলফার শরীর৷ এতো বড় পৃথিবীর কোথাও তাদের জন্য এক টুকরো নিজস্ব জমি নেই! যেখানেই যায় মানুষ কুকুর-বিড়ালের মতো লাঠি নিয়ে তাড়ায়! জুলফা আর সামনে এগোল না, অসহায়ত্বের কান্নায় কণ্ঠরোধ হয়ে এলো। শক্ত হয়ে সেখানেই দাঁড়িয়ে রইল।
তানপুরা বাজার থেকে বেশ কিছুটা দূরে পুষ্পনদীর ওপারে বিস্তৃত হাওর। সেখানে দুই মাইলের আশেপাশেও কোনো বাড়িঘর নেই। বেদেরা সেখানে গিয়ে আশ্রয় নেয়। মধ্যরাত অবধি গোছগাছের কাজ করে। এদিকটায় প্রচণ্ড বাতাস। জামাকাপড় বেসামালভাবে উড়ছে। ঝড়বৃষ্টি বা বজ্রপাত হলে খুব ভোগান্তি হবে, নৌকা ছাড়া আশ্রয় নেয়ার জায়গা থাকবে না। তবুও ঝুঁকি নিয়ে তারা জনমানবহীন হাওরে কয়দিন থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এছাড়া পথ নেই। তানপুরা বাজারে এখন ব্যবসার সময়। বাজারের আশেপাশে থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ।
জুলফাকে একাকী বাইরে বসে থাকতে দেখে বৈশাখী গলায় নরম সুর টেনে বলল, ‘ঘুমোতে যাসনি যে?’
জুলফা ঘাড় ঘুরিয়ে ভীষণ দুঃখী গলায় বলল, ‘মোদের কি নিজেদের ঘর হবেনে?’
বৈশাখী প্রতিত্ত্যুরে কিছু বলল না। জুলফা উচ্চাকাঙ্খী, স্বপ্নবাজ। তার বিশ্বাস একদিন তার নিজের ভিটা হবে, বাড়ি হবে, কোনো অভাব থাকবে না…তবে তারা এই স্বপ্ন দেখে না, সাহস পায় না। নদীই তাদের ভিটা, নৌকাই তাদের ঘর আর অভাব হচ্ছে নিত্যসঙ্গী। সেদিন আর জুলফা ঝুপড়ি ঘরে গিয়ে ঘুমাল না। বিষাদমাখা মন নিয়ে খোলা আকাশের নিচে রাত কাটিয়ে দিল৷ হাওড়জুড়ে ঘুরে বেড়াল।
জীবন পরিবর্তনের তাগিদে সে এখন জমিদার বাড়ির বধূ হয়েছে। পরিবারের সদস্যদের জন্য নিজস্ব আবাসস্থল তৈরি হয়েছে। কিন্তু মনটা এখনো যাযাবরের মতোই রয়ে গেছে। মনের অন্ধকারে ভালোবাসার মিষ্টি আলো নেই, প্রিয় মানুষের পূর্ণতা অনুভব করার অভাবে তার জীবনের গতি কোনো দিকদিশা পাচ্ছে না।
শব্দর দরজার কড়া নাড়ছে, ‘জুলফা…দরজা খুলো।’
শঙ্খিনীর থেকে জুলফার অসুস্থতার খবর শুনে সে ছুটে এসেছে খোঁজ নিতে। অনবরত ডেকে যাচ্ছে। জুলফা বাধ্য হয়ে দ্বার খুলে।
তার চোখেমুখে বিমর্ষতার ছাপ দেখে শব্দর চিন্তিত গলায় জানতে চাইল, ‘ঠিক আছো? হঠাৎ মাথা ব্যথা হলো কেন?’
জুলফা সঙ্গে সঙ্গে নাটকীয় ভঙ্গিতে দুই আঙ্গুলে কপাল চেপে ধরে বলল, ‘কী জানি! একটু বিশ্রাম নিলে হয়তো সেরে যাবে।’
‘আমি কি মাথা টিপে দেব?’
জুলফা খটোমটো গলায় বলল, ‘ প্রয়োজন নেই। কিছুক্ষণ একা থাকতে চাই।’
‘ঠিক আছে, বিরক্ত করব না। নিচে যাচ্ছি। তুমি ঘুমানোর চেষ্টা করো।’
উত্তরের জানালা দিয়ে বসন্তের বাতাস এসে কক্ষ জুড়ে লুটোপুটি খাচ্ছে। জুলফা নরম বিছানায় নিজেকে সঁপে দিয়ে মনের ভেতরে শান্তি অনুভব করার চেষ্টা করে। নাহ…শান্তি লাগছে না। নিচ তলা থেকে একটা শক্তিশালী চুম্বক টানছে। কিছুতেই সেই টান উপেক্ষা করা যাচ্ছে না। মনের উপর আর অত্যাচার করা সম্ভব নয়। অনেক চেষ্টা করেছে বর্তমানের সঙ্গে মানিয়ে চলার…আর নয়৷ যে বর্তমান অতীতের অনুভূতির সঙ্গে পেরে উঠে না সেই বর্তমানের কোনো মূল্য নেই৷ গহন অন্ধকার গুহা থেকে এইবার মাথা তুলে দাঁড়াতে হবে। জুলফা অশান্ত মনকে শান্ত করার জন্য হাঁটা দিল নিচ তলার দিকে।
শেষ সিঁড়িতে এসে দাঁড়াল। এখান থেকে বৈঠকখানার দৃশ্যপট স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। সুফিয়ান, শব্দর ও আশিক জামান গম নিয়ে আলোচনা করছে।
পাটোয়ারীরা ভুঁইয়াদের সঙ্গে বিশাল পরিমাণ গম পাইকারিতে নেয়ার চুক্তি করেছে। গম কাটা থেকে শুকানো ও সংরক্ষণের পুরোটা সময় নাভেদ এই গ্রামে থাকবে। এখান থেকে গম প্রস্তুত করে একেবারে শহরে নিয়ে যাবে।
নাভেদ আড়তে থাকবে শুনে সুফিয়ান লজ্জিত কণ্ঠে বলে উঠলেন, ‘এ কথা বলে আমাদের ছোট করছেন। এতো বড় বাড়ি থাকতে পাটোয়ারী পুত্র আড়তে কেন থাকবে? ব্যাপারটা আমাদের জন্য অসম্মানের।’
সুফিয়ান এমন ভঙ্গিতে কথাটি বললেন যে আশিক জামান প্রত্যুত্তরে কিছু বলার মতো পেলেন না। ভদ্রলোক হেসে বললেন, ‘বেশ, বেশ। তবে তাই হোক।’
নাভেদ প্রথম থেকেই হাস্য বদনে চুপচাপ বসে আছে। এই পর্যায়ে কথা বলল, ‘আমার জন্য আড়তই সবচেয়ে ভালো হয়।’
কথাটি বলে সংকুচিতভাবে একবার বাবার দিকে তাকাল। বাবার কঠোর চাহনি দেখে সঙ্গে সঙ্গে বলল, ‘বাবা যা ভালো বুঝেন।’
আশিক জামান গাল ভরে হেসে বলেন, ‘আমার ছেলে থাকছে৷ আমি আজ বিকালেই চলে যাব।’
‘আজকের দিনটা অন্তত থেকে যান?’ বলল শব্দর।
‘সে হয় না। আমার… ‘
আলোচনার মধ্যে হঠাৎ সিঁড়িতে নাভেদের নজর আটকে গেল। অসম্ভব সুন্দর চোখের চেনা চেনা তবু অচেনা জমিদার বধূটি স্তম্ভের মতো দাঁড়িয়ে আছে। মাথায় ঘোমটা নেই। চুলের হৃষ্টপুষ্ট বিনুনি বাম পাশের কাঁধের উপর দিয়ে বুক বেয়ে কোমর অবধি নেমে এসেছে। তার দিকেই চেয়ে ছিল। দুই জোড়া দৃষ্টি এক হতেই নাভেদের গা ছমছম করে উঠল। দ্রুত চোখ সরিয়ে নিল। সেকেন্ড কয়েক পর চোখের কিনার দিয়ে দেখল সুন্দর দৃষ্টি জোড়া এখনো তার দিকে তাকিয়ে আছে৷ কী আশ্চর্য! অস্বস্তিজনক বাকরুদ্ধতা প্রতিটি ইন্দ্রিয়কে ক্রমাগত ঠেসে যাচ্ছে। আশেপাশে থাকা কারো কথা মাথায় ঢুকছে না। বার বার মনে হচ্ছে, এই চাহনি সে একবার, দুইবার নয় বহুবার দেখেছে কিন্তু কোথায়?
শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হয় আশিক জামানও আজ জমিদার বাড়িতে থাকবেন। পাড়ার মাহফিলে ভুঁইয়াদের সঙ্গে সময় কাটাবেন। ভোজন কক্ষে যাবার জন্য সবাই বৈঠকখানা ছেড়ে হাঁটা শুরু করে। জুলফা দ্রুত ঘোমটা টেনে মাথা নত করে এক কোণে গিয়ে দাঁড়ায়। বাকিরা খেয়াল না করলেও পাশ কেটে যাবার সময় তার থরথর করে কাঁপতে থাকা ঠোঁট খেয়াল করল নাভেদ।
শব্দর জুলফাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলল, ‘উঠে এলে যে? ব্যথা কমেছে?’
তার চোখেমুখে জুলফার প্রতি ভালোবাসা, তীব্র ব্যাকুলতা। হঠাৎ জুলফার কলিজায় মোচড় দিয়ে রক্তপাত শুরু হয়। সে জোরপূর্বক হেসে মাথা নাড়ায়। সবাই চলে যেতেই আটকে রাখা কান্নাটা এবার বাঁধ ভাঙল। ঠোঁটে ঠোঁট চেপে চোখ বন্ধ করে কান্না চাপানোর চেষ্টা করে। চোখের দুয়ার উপচে গড়িয়ে পড়ে অশ্রু। কী করছে সে! এ কেমন বেহায়াপনা? ভেবেছিল যা হবার হয়েছে এইবার স্বামীকে ভালোবাসার চেষ্টা করবে। কিন্তু ভালোবাসার অনুভূতি যে স্বৈরাচার হয়, তাকে বশ করা যায় না। বরং এই অনুভূতি মানুষকে বশ করে নিজের মতো করে চালায়। জুলফা দুই হাতে মাথা চেপে ধরে। ভালোমন্দের দোলাচালে মস্তিষ্ক ফেটে যাচ্ছে। ইচ্ছে করছে ভারি কিছুর আঘাতে মাথাটা চূর্ণবিচূর্ণ করে ফেলতে।
চলবে…
[আজকের পর্ব নিয়ে কোনো মন্তব্য থাকলে গ্রুপে পোস্ট করে জানাতে পারেন। আগামী পর্ব থেকে কমেন্ট খোলা রাখা হবে।]