#ওহে প্রিয় .
#জান্নাতুল_নাঈমা
#পর্ব_১৩
৭.
সরস্বতীর বিয়ে। বিয়ের দিন জেসমিন সকাল সকালই চলে গেছে ওদের বাড়ি। শহড় থেকে বেশ দূরে গ্রামের দিকে বাড়ি ওর। বাইকে চল্লিশ মিনিটের মতো লাগে।অন্যান্য বান্ধবীদের সাথেই চলে গেছে জেসমিন। যাওয়ার পরই সরস্বতী আমাকে দেখতে না পেয়ে ভীষণ রেগে যায়। আমার যাওয়ার ইচ্ছে ছিলো না কিন্তু সরস্বতী ফোন করে প্রচন্ড রাগারাগি করলো। আবার লোভও দেখালো ওদের বিয়েতে নাকি বেশ মজা হয়। এর আগে কখনো হিন্দু বিয়ের অনুষ্ঠান দেখা হয়নি। নির্মল আমাকে রেডি হতে বলেই বেরিয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু ঘন্টাখানেক বাদে এসেই দরজায় করাঘাত করতে শুরু করলো। সবে শাড়ির কুঁচি দিচ্ছি তখন এমন ভাবে করা নাড়ছে যে কান ফেটে যাচ্ছিলো। আবার তাড়াহুড়োয় ঠিকভাবে শাড়ি পড়তেও পারছিলাম না। রেগেমেগে চিৎকার করে বললাম,
-‘ তুমি চলে যাও আমি নির্ঝরকে বলবো আমায় পৌঁছে দিতে। তোমার ভীষণ তাড়া তাই তুমি যেতে পারো ‘।
-‘ বড় ভাইয়ের দিকে নজর পড়ে না শুধু ছোটটার দিকে নজর লুচু মাইয়া ‘।
-‘ ওরে আমার সাধু পুরুষ রে ‘।
-‘ সাধু তো হতেই চাইছি সুইটহার্ট সুযোগ টাই তো দিচ্ছো না ‘।
-‘ দেবোও না ‘।
আর কোন সাড়া শব্দ পেলাম না। পুরো একঘন্টা সময় নিয়ে বেশ ভালোভাবে রেডি হয়ে বের হলাম। নির্মল তখন দরজার পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলো। সাদা পাঞ্জাবির ওপর মুজিব কোর্ট পড়া চোখে কালো চশমা, হাতে ঘড়ি, দেখতে কোন হিরোর থেকে কোন অংশে কম লাগছে না। মনে মনে একটু ভেঙচি কেটে দিলাম। আমাকে বের হতে দেখেই একহাত বুকের বা’পাশে চেপে ধরে আহত গলায় বলে ওঠলো,
-‘ ওহে পাষণ্ডময়ী এই নির্মল হৃদয়টা আর কতো আঘাতপ্রাপ্ত হবে? ওহে পাষণ্ডময়ী তোমার দিলে কি একটু দয়াও হয় না’?
-‘ ওহে দূর্বত্ত পুরুষ ঝাঁটার বাড়ি খেতে না চাইলে মুখটা বন্ধ রেখে চলো ‘। বলেই পাশ কাটাতে নিতেই আমার হাত টেনে ধরলো। আমি বিরক্ত হয়ে কড়া গলায় বললাম,
-‘ বের হওয়ার সময় এমন বেহায়াপনা না করলেই কি নয় ‘?
-‘ একটি বার কি প্রিয় সম্বোধন করা যায় না মোর প্রিয় ‘?
মেজাজটা প্রচন্ড খারাপ হয়ে গেলো। এক ঝটকায় হাতটা ছাড়িয়ে মামির রুমে গিয়ে মামি কে বলে বেরিয়ে পড়লাম। বাইকে বসার পরও ওর সাথে কথা বলছিলাম না। রাস্তায় অনেক ছেলেমেয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে ছিলো। নির্মল সাদা পাঞ্জাবি আর আমি সাদা জরজেট শাড়ি যার জমিনে গোল্ডকালার চুমকি দিয়ে কারুকাজ করা ছিলো। শাড়িটা মামিরই নির্মলের ড্রেসআপের সাথে আমার ড্রেসআপের কালার ম্যাচ হওয়াতে অনেকেই আমাদের কাপল ভেবেই হা করে চেয়েছিলো। বিষয়টা নির্মল বেশ এনজয় করলেও আমি চরম বিরক্ত হচ্ছিলাম। ওর মিটিমিটি হাসিতে আমার গা জ্বলে যাচ্ছিলো। সহ্য করতে না পেরে শেষে পিছন থেকে ওর চুল বেশ শক্ত করে টেনে ধরি। ব্যাথায় ও শুধু ‘আউচ’ করে ওঠে তবুও মুখের হাসি একটুর জন্যও উধাও হয়নি। ব্যার্থ হয়ে নিজেও হেসে ফেললাম। নির্মল গলা উঁচিয়ে বললো,
-‘ এই সাবা শাড়িতে তোমায় একদম হুরপরীর মতোন লাগে। সাদা শাড়িতে কোন রমণীকে এত্তো অস্থির লাগে তোমায় না দেখলে জানতেই পারতাম না। একদম শুভ্রময়ী আমার শুভ্রময়ী ‘।
আমি ওর পিঠে কিল দিয়ে বললাম,
-‘ ফাউল কথা বাদ দিয়ে চুপচাপ বাইক চালাও নয়তো লাফ দিবো ‘।
-‘ এই না জানেমান বিয়ের আগেই বিধবা হওয়ার শখ নেই আমার ‘।
.
আগে কখনো হিন্দু বিয়ে দেখিনি সেবারই প্রথম। বেশ এনজয় করেছি সরস্বতীর বিয়ে তে। সেই সাথে বিনোদনও নিয়েছি অনেক। এক ঝাঁক মেয়েরা এসে বেশ লটরপটর করার চেষ্টা করে নির্মলের সাথে। কিন্তু নির্মল তাঁদের পাত্তাই দেয়নি সব সময় আমার পিছু ঘুরঘুর করেছে আর বলেছে,
-‘ আহা আমি কত্তো ভালো হয়ে গেছি তবুও আমার প্রেয়সীর মন গলেনা ‘।
আমি ভেঙচি কেটে বলি,
-‘ এ জীবনে আর গলবেও না ‘।
বৈশাখ মাসের মাঝামাঝি সময়। বিয়ে বাড়ি থেকে বের হতে হতে সন্ধ্যা পার হয়ে গেলো। আকাশের অবস্থা ভীষণ করুণ। প্রকৃতি যেনো হুট করেই নিস্তব্ধ হয়ে শোক পালন করছে। যা হয়তো কিছু সময়ের ব্যবধানেই উচ্চধ্বনি বাজিয়ে, অশ্রুপাত ঘটাবে।
মামি বার বার করে বলে দিয়েছিলো সন্ধ্যার আগেই বাসায় ফিরতে। অথচ সন্ধ্যা পেরিয়ে গেলো। বাইক স্টার্ট দেওয়ার দশমিনিটের মাথায়ই শুরু হলো উল্টাপাল্টা বাতাস। নির্মল সহ সামনে পিছনে সবগুলো বাইক থেকে সকলেই হৈহৈ করে ওঠলো। যেনো কোন অনুষ্ঠানের সূচনা ঘটছে। আমি বিরক্ত হয়ে নির্মলের কাঁধে শক্ত করে চেপে ধরে চিবিয়ে চিবিয়ে বললাম,
-‘ ফাইজলামি করার বহুত টাইম আছে আপাতত সিরিয়াস হও বাসায় মামি একা আছে দ্রুত ফিরতে হবে আমাদের ‘।
নির্মল চেঁচিয়ে ওঠে বললো,
-‘ ইয়াহু সুইটহার্ট চারদিকে শশ শব্দে বাতাস বইছে। ক্ষণে ক্ষণে বিদ্যুৎ চমকানোতে মনে হচ্ছে ইহা আমাকে প্রেমের আহ্বান জানাচ্ছে। আহা কি প্রেমময় অনুভূতি রোমান্স টোমান্স করো জান ‘।
-‘ তোমার মতো গর্দভই এই প্রাকৃতিক দুর্যোগকে প্রেমের অনুভূতিতে গুলিয়ে ফেলবে। আমার মাঝে মাঝে কনফিউশান হয় তুমি সুস্থ তো ‘?
-‘ উহুম প্রেমরোগে ভুগছি আমি ডাক্তারের হৃদয় বড় পাষাণ। সারাক্ষণ চিকিৎসা নেওয়ার জন্য ছটফট করি কালনাগিনী টা ফিরেও তাকায় না ‘।
কথাটা শোনামাএই রেগেমেগে ওর ঘাড় বরাবর কিল বসাতে যাবো তাঁর আগেই প্রচন্ড শব্দ করে বিদ্যুৎ চমকালো আর আমি ভয়ে আচমকাই ওর পেট শক্ত করে জড়িয়ে পিঠে মাথাটা শক্ত করে চেপে চোখ খিঁচে বসে রইলাম। ঝিরিঝিরি শব্দ করে বৃষ্টিরা নেমে এলো পৃথিবীর বুকে। নির্মল বাইক থামিয়ে স্তব্ধ হয়ে গেলো। যখন বুঝতে পারলাম কি ঘটেছে লজ্জায় মাথা কাঁটা যাচ্ছিলো। এদিকে বাতাসের তীব্র বেগ বৃষ্টির শীতল করা স্পর্শে শরীরে কাঁটা দিয়ে ওঠলো। সকলের বাইক এগিয়ে গেছে পেছন পড়ে আছি আমি আর নির্মল। একহাত দিয়ে কপাল থেকে থুতনি অবদি পানি মুছে ঝাঁঝালো গলায় বলে ওঠলাম,
-‘ এসব কি ফাইজলামি মাঝপথে হা করে বসে আছো কেনো ‘?
-‘চারদিকে প্রেমের আলিঙ্গন কবে হবে তোমার আমার মিলন’
অমন একটা বিপর্যস্ত অবস্থায় উতলে ওঠা প্রেমময় বাক্য শুনে মেজাজ আমার তুঙ্গে ওঠে গেলো। ইচ্ছে রকম চড়,থাপ্পড়, কিল,দিতে শুরু করলাম। আর ও হাসতে হাসতে মাফ চেয়ে বাইক স্টার্ট দিলো। কিন্তু খুব একটা এগোতে পারলো না। আমার মৃদু আর্তনাদে থেমে গেলো। চোখে কিছু পড়েছে আমার। দ্রুত বাইক থামিয়ে ওর বাটন ফোনের লাইট অন করে চোখটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলো কিছু পেলোনা।কিন্তু চোখে কেমন ঘা দিচ্ছিলো আমার। হাতের তালুতে বৃষ্টির পানি জড়ো করে করে চোখে দিতে থাকলাম বেশ কিছু সময় পর চোখে আরামও পেলাম। ঝড়, বৃষ্টির মাএা যেনো তীব্র থেকে তীব্রতর হতে থাকলো। সেসময় বৃষ্টির সাথে পড়তে থাকলো বরফ টুকরো। শিলাবৃষ্টি শুরু হওয়ায় আর সম্ভব হলো না বাইক নিয়ে এগোনোর। আশেপাশে বাড়িও নেই কাঁচা রাস্তার দুপাশে চড়াক্ষেত। খানিকটা এগিয়ে দেখতে পেলাম একটি দোকান। নির্মল আর দেরি করলো না বাইক নিয়ে হেঁটে চলে গেলো দোকানের সামনে আমিও ওর পিছু পিছু গেলাম। টিনের বেড়া,টিনের চাল, দশ-বারো হাত লম্বা দোকানটি। ভিতরে এক বৃদ্ধ লোক কুপি জ্বালিয়ে বসেছিলো। বারান্দায় আমি আর নির্মল গিয়ে দাঁড়াই। একপাশে একটি বেঞ্চিতে তিনটে ছেলে বসে গল্প করছিলো। আমাদের দেখে একটি ছেলে টর্চ জ্বালিয়ে আমাদের দিকে ধরে নির্মলকে প্রশ্ন করলো,
-‘ কি ভাইয়ে ভাবিকে নিয়ে বেড়াতে গিয়েছিলে নাকি ‘?
নির্মল আমাকে ওদের নজর থেকে আড়াল করে কিছু বলতে নিতেই আমি ছেলেটার উদ্দেশ্যে বলে ওঠলাম,
-‘ ভাই না জেনে না শুনে আগেই কাউকে ভাবি বলা কি উচিত? আপনি আগে জেনে নেবেন না ওনার সাথে আমার ঠিক কি সম্পর্ক? তারপর না হয় মন্তব্য করবেন৷ আমি ওনার বউ নই তাই ভাবি বলার প্রশ্নই ওঠে না আপু বলতে পারেন ‘।
কথাগুলো বলার সময় নির্মল বেশ অস্থিরতার সাথে আমাকে চুপ করাতে চেয়েছে কিন্তু আমি চুপ করিনি। ছেলেগুলোও কেমন চোখে চেয়ে রইলো আমার কথা শুনে। আমি নির্মলের পাশে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলাম। বেশ ঠান্ডা লাগছিলো জরজেট শাড়ি পড়েছি, চুপচুপে হয়ে ভিজেও গেছি। প্রচন্ড ঠান্ডা লাগছিলো। শাড়ির আঁচল টেনে জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। নির্মল কে বললাম নির্ঝরকে ফোন করে জানাতে আমাদের পরিস্থিতি। কিন্তু নির্মল রক্তচক্ষু তে চেয়ে রইলো। আবছা আলোতে ওর মুখখানি দেখে বুঝতে পারলাম দাঁতে দাঁত চেপে দাঁড়িয়ে আছে। ভ্রু কুঁচকে হাত নেড়ে প্রশ্ন করলাম,
-‘ কি ব্যাপার কাহিনী কি মেজাজ গরম মনে হচ্ছে? খুব তো প্রেম প্রেম পাচ্ছিলো এখন কি ভয় লাগছে নাকি ‘? বলেই মুচকি হাসলাম। তখনো বুঝতে পারছিলাম না কতো বড় বিপদের সম্মুখীন হতে যাচ্ছি আমরা।
সময় যেনো কাটছিলোই না৷ দোকানদার দাদু দোকানের ঝাপ নামিয়ে দিলেন। আমি খেয়াল করলাম তিনটে ছেলে কেমন চোখে যেনো তাকাচ্ছে বার বার। শুধু আমি না নির্মলও খেয়াল করছিলো। তাই আমাকে বার বার আড়ালে রাখার চেষ্টা করছিলো। একসময় বিদঘুটে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়ে
গেলো। ছেলে গুলোর নোংরা দৃষ্টি বুঝতে খুব একটা সময় লাগলো না আমার। আমি কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। বার বার শাড়ির আঁচল টানা দেখে নির্মল আমার হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে বাইকের কাছে এগিয়ে গেলো। ছেলেগুলোর হাভভাব ভালো ঠেকছিলোনা বিধায়ই সিদ্ধান্ত নেয় ঝড়, বৃষ্টি মাথায় করেই ফিরবে৷ কিন্তু বাইকে ওঠতে পারিনা কেউই। ছেলেগুলোর মধ্যে একটা ছেলে আমার আঁচল টেনে ধরে৷ আমি ভয়ে আঁতকে ওঠে নির্মল বলে দেই এক চিৎকার। নির্মল সঙ্গে সঙ্গে ঐ ছেলেটির কলার চেপে ধরে। বাকি দুজন ছেলে আমার সাথে অসভ্যতামি শুরু করে দেয়। আমি রেগে ঠাশ করে ওদের একজনের গালে চড় বসিয়ে দেই। এদিকে নির্মলের সাথেও ওদের মারামারি লেগে যায়। শুরু হয়ে যায় বিশৃঙ্খল অবস্থা। কেয়ক মিনিটের ব্যবধানেই আরো দশ,বারোজন ছেলের উপস্থিতি ঘটে। তিনজনের সাথেই নির্মল পেড়ে ওঠছিলোনা। ছেলেগুলো আমার শরীরে নোংরাভাবে স্পর্শ করছিলো বারেবার। কোনভাবেই আটকাতে পারছিলোনা নির্মল তারওপর অতোগুলো ছেলে দেখে ভয়ে কলিজা শুকিয়ে গেলো আমার। ভয়াবহ কিছু ঘটবে বা ঘটতে চলেছে বুঝতেই নির্মল বাঘের মতো গর্জে ওঠলো। নিজের সর্বস্ব শক্তি দিয়ে ওদের থেকে ছাড়িয়ে নিজের বুকে টেনে নিলো আমায়। চিৎকার করে বললো,
-‘ কেউ স্পর্শ করবি তো খুন করে ফেলবো ‘।
ছেলেগুলোর মধ্যে একজন বিশ্রিভাবে হেসে ওঠলো বললো,
-‘ কি ভাইয়ে মজা শুধু তুমি একাই নিবা আমাদেরও নিতে দাও। রাত,বিরাতে মধু খেতে বের হয়েছো তাও আবার ঝড়,বৃষ্টির তোয়াক্কা না করে অবশ্যই উন্নতমানের মধু ‘।
বলেই টেনে নির্মলের থেকে সড়ানোর চেষ্টা করে আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করে নির্মলকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করতে থাকি। বলতে থাকি,
-‘ নির্মল বাঁচাও আমায় মরে যাবো প্লিজ নির্মল আমায় ছেড়ো না ‘।
নির্মলও আমায় শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। ছেলেগুলো একদিকে নির্মলকে টেনে হিঁচড়ে সড়ায় অন্যদিকে আমাকে। নির্মলের গায়ে পরপর আঘাত করতেই থাকে। আমার শাড়ি টেনে খুলে ছুঁড়ে ফেলে কাঁদায়। নির্মল আমার সেরূপ দেখে ছুটে আসতে নিতেই ওর দুহাত দুদিক থেকে টেনে ধরে বুক বরাবর সমানে লাথি দিতে থাকে একজন। আমার আর্তচিৎকার, প্রকৃতির আর্তচিৎকার ভয়াবহ এক পরিবেশের সৃষ্টি করে। কুকুরের মতো একজন আমার শরীরের আঁচড় কাঁটছে আরেকজন আমার শরীরের অবশিষ্ট পোশাক অনাবৃত করতে ওঠে পড়ে লেগেছে। চোখের সামনে নিজের ভালোবাসার মানুষ টির অমন নির্দয়ভাবে অসম্মানিত হতে দেখে পাগল হয়ে যায়৷ নির্মল। চিৎকার করে বলতে থাকে,
-‘ তোরা কেউ বাঁচতে পারবিনা। রোমান চৌধুরী তোদের ছাড়বেনা ‘।
এইটুকু কথাই যথেষ্ট ছিলো ওদের ভয় পাওয়ার জন্য। আমাকে ছেড়ে দিয়ে নির্মলের দিকে তাকায় ওরা। তখনি একজন বলে ওঠে,
-‘ আরে ভাই বিপদে পড়লে বড় বড় নেতার নাম অনেকেই স্মরণ করে তাই বলে তোরা ভয় পাবি কাজের কাজ কর ‘।
ততোক্ষণে আমি কাঁদা মাখানো শাড়িটা নিয়ে গায়ে জড়িয়ে ফেলেছি। ছেলেগুলো আবারো আমার দিকে আসতে নিতেই এক খামচি কাঁদা তুলে ছুঁড়ে দেই মুখের দিকে। নির্মল ওদের থেকে ছুটার জন্য ধস্তাধস্তি করছে আর বলছে,
-‘ বিশ্বাস না করলে একবার ছাড় জাষ্ট একটা ফোন করবো ‘।
ছেলেগুলো ভয়ার্ত মুখে একে অপরের দিকে তাকালো। ততোক্ষণে আমি দোকানের পিছনে গিয়ে লুকিয়ে পড়েছি। নির্মল ওদের থেকে ছাড় পেতেই ফোন বের করে ওর চাচা রোমান চৌধুরী কে ফোন করে। জীবনে কখনো চাচার পরিচয়ের প্রয়োজন পড়েনি ওর। এমপির ভাতিজা হয়েও কখনো ক্ষমতার বড়াই করেনি। আজ চরম বিপদগ্রস্ত হয়ে চাচাকে স্মরণ করতেই হচ্ছে। ফোন করে যখন বড় আব্বু বলে লোকেশন জানালো তখনি ছেলেগুলোর পিল চমকে যায়। ভয়ে একেকজনের হাঁটু কাঁপতে থাকে। কতোবড় ভুল করেছে ওরা তা বুঝতে বিন্দু টাইমও নেয় না। এমপির ভাতিজাকে আটকে তাঁর বন্ধু কে রেপ করতে উদ্যত হয়েছিলো। ঠিক কি শাস্তি অপেক্ষা করছে ওদের জন্য?
নির্মল রক্তচক্ষু তে চেয়ে যে দুটো ছেলে আমাকে স্পর্শ করেছিলো সেদুটোকে একের পর এক ঘুষি দিতে থাকলো। সবগুলো ছেলেই হাঁটু গেড়ে বসে নির্মলের পা ধরে বলতে থাকলো, ‘ভাই ভুল হয়ে গেছে’। নির্মল রাগে ক্ষিপ্ত হয়ে নিজের মাথা দিয়ে একজনের মাথায় বাড়ি দিলো। চিৎকার করে বলতে থাকলো -‘ ভুল করেছিস মারাত্মক বড় ভুল শাস্তির জন্য প্রস্তুত থাক ‘।
কিছুক্ষণ আগে কুকুরের মতো যারা আমাকে খুবলে খেতে এসেছিলো। এখন তাঁরা বিড়ালের মতো মিউ মিউ করছে?
“কি অদ্ভুত! একজন নারীকে অসম্মান করতে ওদের বুক কাঁপে না। একজন নারীর আর্তচিৎকার ওদের বিবেককে জাগ্রত করতে পারেনা। অপরিচিত একজন নারীর শরীর অনাবৃত করতে ওরা লজ্জাবোধ করেনা। ওদের বুক তখন কাঁপে যখন ক্ষমতাসীন কারো সাথে অসম্মানের শিকার হওয়া নারীটির সংযোগ থাকে। ওরা লজ্জা বোধ তখন করে যখন ওদের কৃতকর্মের জন্য ওদের রাজনৈতিক জীবন বিপর্যয়ের মুখে পড়ে। পৃথিবীর বুকে অবস্থান করা প্রতিটি মানুষ কে চিৎকার করে প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করে নারীর সম্মানের থেকেও ক্ষমতার মূল্য অনেক বেশী? কিসের রাজনীতি কিসের ক্ষমতা। নারী জাতটাই যদি না থাকতো কোথায় পেতে তোমাদের অস্তিত্ব? কোথায় থাকতো এই ক্ষমতা এই দম্ভ? নরপিশাচরা কেনো বুঝেনা নারীরা মায়ের জাত। মা জাতিকে তাঁরা কেনো বার বার কলঙ্কিত করতে আসে? তাঁরা কি বুঝেনা একটি নারীকে কলঙ্কিত করা মানে পুরো পৃথিবীর বুকে হাহাকার সৃষ্টি করা”
ওদের থেকে পা ছাড়িয়ে হন্যে হয়ে আশেপাশে চোখ বুলায় নির্মল। আমাকে দেখতে না পেয়ে বেদনাক্রান্ত গলায় চিৎকার করে ওঠে,
-‘ সাবা’।
ওর চিৎকার শুনে আমি ‘নির্মল’ বলেই ডুঁকরে কেঁদে ওঠি। দোকানের পিছন সাইটে খড়ের পালার চিপায় ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে বসে ছিলাম আমি। অন্ধকারে আমাকে দেখতে পারলোনা নির্মল। তবে কন্ঠ শুনে দ্রুত এগিয়ে এলো।
চলবে…
রিচেক দেওয়া হয়নি। ওদের কাহিনী শেষ পর্যায়ে আর দু পার্ট পরই আহি, হ্যাভেন আসবে।