#ওহে প্রিয় .
#জান্নাতুল_নাঈমা
#পর্ব ২
.
আশ্চর্যের শেষ পযার্য়ে চলে যাই আমি। বিরক্তি তে চোখ,মুখ কুঁচকে ফেলি। ছোট বেলা থেকেই যে কেউ প্রথম দর্শনেই সুন্দরী বলে আখ্যায়িত করে। ক্লাস সিক্স থেকেই আমার জন্য বিয়ের প্রস্তাব আসতে শুরু করে। পড়াশোনায় ভালো বলে মা চাইতেন আমি পড়াশোনা করি। তাই বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এলে বাবা কিছু না বললেও মা সরাসরি না করে দিতেন।
মেট্রিক পাশ করার পর থেকে শুরু হয় অত্যাচার৷ সকাল-বিকাল বাড়িতে ঘটক আসা যাওয়া করতো। ছেলের মা,বাবা লোভ দেখাতো। ভরী ভরী স্বর্ণ দিয়ে সাজিয়ে নিবে, রাজরানী করে রাখবে। বিয়ের পর পড়াশোনাও করাবে। আমাদের পারিবারিক অবস্থার উন্নতি করে দেবে এই সেই নানা রকমের লোভ দেখাতো। আমার বাবা লোভে পড়লেও মা কখনো এসবে মন দিতো না৷ কারণ আমার মায়ের বড় বোনের শশুড় বাড়ির লোকও নাকি এমন অনেক ভালো মানুষী দেখিয়ে বাড়ির বউ করেছিলো। কিন্তু খালার সেখানে সুখ হয়নি। পড়াশোনাও করায়নি যার ফলে এখন অবদি শশুড় বাড়ির অত্যাচারে ভুগছে। আগে শশুড়-শাশুড়ী আর এখন ছেলে বউয়ের অত্যাচার সহ্য করছে। এসব দেখেই মা আমাকে আর ছোট বোনকে সব সময় বলতো আহি আমি তোদের উচ্চ শিক্ষিত করবো। আমি যদি মারা যাই তাহলে অনাকে তুই মানুষের মতো মানুষ করবি। তোরা দুবোন নিজের পায়ে দাঁড়াবি। কখনোই অন্যের ওপর ভরসা করবি না। কখনো অন্যের কাছে মাথা নত করে জীবন পার করবি না।
সেই মায়ের মেয়ে আমি সদ্য আঠারো তে পা দিয়েছি তখন৷ আমি বরাবরই প্রচন্ড সাহসী। পড়াশোনা করে শিক্ষিত হচ্ছি কোন অন্যায়ের কাছে মাথা নত করার জন্য নয়। তাছাড়া মানুষ বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসে ভদ্রভাবে, সভ্যতা বজায় রেখে। অথচ ঐ মানুষ টা গুন্ডা,মস্তানদের মতো আচরণ করছে। কথার মাঝেই পাওয়ার দেখাচ্ছে। বিয়ে তো পুতুল খেলা নয়, বিয়ে মামাবাড়ির আবদারও নয়, এভাবে অসভ্যের মতো বিয়ের প্রস্তাব দিলে কোন মেয়ে রাজি হবে? যেখানে বিয়ের জন্য মানসিকভাবেও প্রস্তুত নই আমি। তাই ত্যাজি গলায় বললাম,
-‘ বিয়ে কোন ছেলেখেলা নয়। আপনি বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছেন এতে কোন ভুল নেই কিন্তু আপনার প্রস্তাবের ধরনটা খুবই বাজে। তাই আপনার প্রস্তাব গ্রহণ করা আমার পক্ষে সম্ভব নয় ‘।
কথাটা বলা মাএই ওনি ভয়ংকর এক হাসি দিলেন। সেই হাসিতে বিরক্ত যতোটা না হয়েছিলাম তাঁর থেকেও ভয় পেয়েছিলাম দ্বিগুণ। কিন্তু সে ভয়টা ওনাকে বুঝতে না দিয়ে অপমানের সুরে বললাম,
-‘এবার আপনি আসতে পারেন’।
কথাটা বলে আমি যেই দরজা খুলতে যাবো অমনি ওনি আমার হাত টেনে ধরলেন। আমার মেজাজ গরম হয়ে গেলো। অচেনা একজন পুরুষ মানুষ এভাবে আমাকে স্পর্শ করবে আর আমি সেটা মেনে নেবো? পিছন ঘুরে ঠাশ করে এক থাপ্পড় লাগিয়ে দিলাম গালে। রাগান্বিত গলায় বললাম,
-‘ডোন্ট টাচ মি। নেতা হন আর যাই হন না কেনো আমি ভয় পাই না আপনাকে। মেয়েদের শরীরে বিনা পারমিশনে স্পর্শ করার শাস্তি এটাই। আপনি নেতা বলে অন্যান্য মেয়েরা খাতির যত্ন করলেও এই আহি সেটা করবে না’।
ওনি আমার হাতটা ছেড়ে দিলেন। ওনার চোখ,মুখ ভয়ংকর আকার ধারণ করলো। রক্তিম চোখে আমার দিকে তাকালেন ওনি। ওনার সেই চাহনীতে অন্তর আত্মা কেঁপে ওঠলো আমার। নিজেকে স্ট্রং রেখে শুকনো এক ঢোক গিলে যেই চলে যাবো তখনি ওনি হিংস্র গলায় বললো,
-‘ আই ডোন্ট লাইক ইট’ বলেই আমাকে খুব হিংস্র ভাবে শূন্যিতে তুলে ওনার কাঁধে তুলে নিয়ে ঘর থেকে বের হলো। প্রথমে আমি বুঝে ওঠতে পারছিলাম না ঠিক কি ঘটলো। যখন বুঝলাম তখন লজ্জায় মরে যেতে মন চাচ্ছিলো। চিল্লাতে শুরু করলাম। দুহাতে সমান তালে কিল,ঘুষি দিতে শুরু করলাম। কিন্তু এতে ওনি বিন্দু পরিমাণ রেসপন্সও করলেন না। সকলের সামনে নিয়ে গিয়ে গলা উঁচিয়ে বললেন,
-‘ আমার বউকে আমি নিয়ে গেলাম। তোরা আমার শশুড়, শাশুড়ী আর শালিকাকে যত্ন সহকারে আমার রাজ্যে নিয়ে যাবি ‘।
আমার বাবা ভয়ে দুহাত জোর করে কেঁদে ফেলে। বলে,
-‘ বাবা গো আমরা ছোটখাটো মানুষ। আমাদের কাছে জীবনের থেকেও সম্মানের মূল্য অনেক বেশী। এভাবে আমার মেয়েটাকে নিয়ে যেও না। তাহলে যে লোক সমাজে মুখ দেখাতে পারবো না’।
ওনি তখন বিশ্রি ভাবে হাসতে থাকে আর বলে,
-‘ আহ শশুর মশাই! মুখ দেখাতে না পারলে ঘরে শুয়ে-বসে আরাম করবেন। কি দরকার এমন চাঁদ মুখখানা সমাজকে দেখানোর? আমার শাশুড়ীর জিনিস অন্য কেউ কেনো দেখবে শশুর মশাই? ইটস ভেরী বেড ‘৷
আমার বাবা ওনার দু’পা আঁকড়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে। মা আঁচলে মুখ গুঁজে কাঁদছিলো তখন। ভয়ে ছোট বোনও কান্না শুরু করে। আমি ওনার থেকে ছুটার চেষ্টা করে যাচ্ছিলাম কিন্তু পারছিলাম না৷ বাবার থেকে পা ছুটিয়ে ওনি আবারো বিশ্রিভাবে হাসতে শুরু করে আর বলে,
-‘ আই ডোন্ট লাইক ইট শশুড় মশাই। বয়স হয়েছে আপনার এতো উত্তেজিত হবেন না। লোকের কাছে মুখ দেখানোর প্রয়োজন যাতে না পড়ে সেই ব্যবস্থা আমি করে দিব৷ বাজারঘাট, সংসার কোন কিছু নিয়ে চিন্তা করতে হবে না৷ মেয়ে জামাই আছে তো এতো চাপ নিচ্ছেন কেনো? এতো চাপ নিবেন না। এ বয়সে এতো চাপ নিলে তো স্ট্রোক করে মরে যাবেন আর আমার শাশুড়ী মা হয়ে যাবে বিধবা। আমি কিন্তু বিধবা শাশুড়ী এলাও করবো না ‘ বলেই চোখ মেরে আমাকে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়৷
পুরো এলাকার মানুষ দূর থেকে তামাশা দেখে। কেউ এগিয়ে আসে না আমাকে ঐ হিংস্র মানুষটার থেকে রক্ষা করতে৷ হাত, পা ছুঁড়াছুঁড়ি করতে করতে ক্লান্ত হয়ে যাই আমি। বুঝে যাই বিশ্রিভাবে ফেঁসে গেছি আমি। না গায়ের জোর না ক্ষমতার জোর কোনটাই নেই আমার। এই লোকটার সাথে পারবো না আমি। আমাকে অন্যভাবে কিছু করতে হবে। আইনের সহায়তা নিতে হবে। এলাকার সবাই চোখ থাকতে অন্ধ মুখ থাকতে বোবা হয়ে রইলো। যার কেউ নেই তাঁর আল্লাহ আছে দেশের আইন এতোটাও দূর্বল নয় আইনের সহায়তা নিলে নিশ্চয়ই এই লোকটার কঠিন শাস্তি হবে।
_____________________________
সারারাত নজর বন্দি করে রাখা হয় আমাকে। সকাল হতেই হ্যাভেন তালুকদারের মা আসে আমার কাছে। আমার শাশুড়ী মা রুবিনা তালুকদার। দূর্বল চোখ, মুখে তাকাই ওনার দিকে লম্বাচওড়া, ধবধবে সাদা চামড়ার মহিলা তিনি। পড়নে জামদানী শাড়ি, গা ভর্তি স্বর্নের অলংকার। বাঙালিভাবে শাড়ি পড়ায়, অমন ভারী গহনা পড়ায় মনে হচ্ছিল বহুযুগ আগের সময়ের জমিদার গিন্নি। আমার কাছে এসে আমার চিবুকে হাত রেখে মিষ্টি করে হেসে বললেন,
-‘মাশাআল্লাহ ‘।
তাঁর গলা থেকে একটি হাড় খুলেও আমাকে পড়িয়ে দিলেন। বললেন,
-‘ আমি তোমার শাশুড়ী মা ‘।
তখনি আমি চিনতে পারি ওনি হ্যাভেনের মা। ওনাকে দেখে আমি কেমন যেনো ভরসা পেলাম। কান্নামিশ্রিত গলায় বলে ওঠলাম,
-‘ আন্টি আপনার ছেলে আমাকে জোর করে তুলে এনেছে। প্লিজ আপনি আমাকে বাঁচান ‘।
আমার কথা শুনে ওনার মুখটা ছোট হয়ে গেলো কেমন। আমাকে ইশারা করে চুপ করতে বললো। তারপর নিজের মতো হেসে হেসে কিছুক্ষণ কথা বলে চলে গেলেন৷ আমি বুঝলাম আমাকে বাঁচানোর মতো কেউ নেই এখানে। ঠিক সময় সকালের খাবার দেওয়া হলো আমাকে। কিন্তু আমি খাবার মুখে তোলা তো দূরের কথা ছুঁয়েও দেখলাম না। দুপুর গড়াতে না গড়াতেই একদল মেয়ে এসে শাড়ী, গয়না পড়িয়ে দিলো। আমার নিষেধ তাঁরা শুনলো না। আমি যে একজন মানুষ সেটাই বোধ হয় সকলে ভুলে গেলো। পুতুল মনে করে নিজেদের ইচ্ছে অনুযায়ী সাজিয়ে গুছিয়ে চলে গেলো তাঁরা।
.
ঘন্টাখানিক পর বর বেশে রুমে এলো হ্যাভেন। ওনাকে দেখে রাগে আমার শরীর কাঁপছিলো। কিন্তু আমি ওনাকে রাগ না দেখিয়ে অনুরোধের কন্ঠে বললাম,
-‘প্লিজ আমার এতো বড় সর্বনাশ করবেন না’।
-‘যার জীবনের পুরোটা জুরেই সর্বনাশের খেলা তাঁকে তুমি সর্বনাশ করতে নিষেধ করছো? আই লাইক ইট’।
আমি ডুঁকরে কেঁদে ওঠলাম। আমার কান্নার শব্দে ওনি বিরক্ত হয়ে টানা সুরে বললেন,
-‘ আই ডোন্ট লাইক ইট ‘।
.
কবুল বলার সময় যখন আমি কবুল বলছিলাম না তখন ওনি আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললেন,
-‘ আমার শশুড়-শাশুড়ী মা বোধ হয় বড্ড কষ্টে আছে ডিয়ার! উপস সাথে আবার পুচকে শালিকা ‘।
হুহু করে কেঁদে ওঠলাম আমি। সকলের সামনেই চিৎকার করে বললাম,
-‘ আমার মা বাবা কোথায়? কোথায় আমার বোন। কি করেছেন আপনি ওদের সাথে ‘?
আমার উঁচু গলা শুনে এক ভারী গম্ভীর পুরুষালি কন্ঠস্বর ভেসে এলো,
-‘ আহ রুবিনা নতুন বউ কে বলে দাও এ বাড়ির বউরা এমন গলা উঁচু করে কথা বলে না ‘।
কন্ঠস্বর টা ছিলো আমার শশুর হুমায়ুন তালুকদারের। তখনো আমি ও বাড়ির কাউকে দেখিনি এক আমার শাশুড়ী আর হ্যাভেন ছাড়া। আমার শশুরের কথা শুনে আমার শাশুড়ী মা আমার গা ঘেষে বসলেন। মিনতির সুরে বললেন,
-‘ বউ মা কবুল বলো ‘।
-‘ আমি আমার বাবা,মায়ের কাছে যাবো ‘।
হ্যাভেন তখন আবারো ফিসফিস করে বললো,
-‘ তিন কবুল না বললে এ জীবনে আর বাবা,মা, বোনের মুখ দেখা হবে না ‘।
-‘ আমি আপনাকে পুলিশে দেবো। দেশে আইন-কানুন আছে এভাবে আপনি আমাদের মতো অসহায়দের ওপর জোর জবরদস্তি করতে পারেন না। একটা সুযোগ জাষ্ট একটা সুযোগ পাই ছাড়বোনা আমি আপনাকে’।
-‘ চোখ তুলে একবার আশেপাশে চেয়ে তো দেখো পুলিশ কাকুরাও উপস্থিত রয়েছে এখানে’।
আমি চমকে আশেপাশে তাকাতেই দেখি পুরো ড্রয়িং রুম জুরে গিজগিজে মানুষ। এতো মানুষের ভীড়ে দুজন পুলিশকেও দেখতে পেলাম। যারা ড্রিংক করছে একপাশে দাঁড়িয়ে। কাল থেকে না খেয়ে ছিলাম সারাদিন মুখে একটা দানাও তুলিনি। তারওপর এভাবে মানসিক টর্চার করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে শরীর ছেড়ে দিলাম আমি। হ্যাভেন নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো আমায়। জ্ঞান হারিয়েছি কিনা দেখতেই আমার মুখের দিকে ঝুঁকে এলো। আমার চোখ দিয়ে অনবরত পানি ঝড়ছে। দূর্বলতায় নেতিয়ে পড়েছিলাম কিন্তু জ্ঞান হারাইনি। তা দেখে বাঁকা হেসে কাজি সাহেবকে ইশারা করলো হ্যাভেন। আবারো চারদিক থেকে ধ্বনি উচ্চারিত হলো, -‘বলো মা কবুল’।
.
অঢেল অনীহা নিয়ে হ্যাভেন তালুকদারের নামে তিন কবুল বলি আমি। ঐ তিন কবুল আমার কাছে মৃত্যুদন্ড থেকেও কঠিন ছিলো। আর হ্যাভেনের কাছে ছিলো আমাকে সম্পূর্ণ ভাবে তাঁর আয়ত্তে নেওয়ার মূলমন্ত্র।
কবুল বলার পর পরই মা, বাবা, বোনকে নিয়ে আসা হয়। তিনজনের মুখে দুঃখের লেশমাত্র নেই। কিন্তু ওদের দেখে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠি আমি। আমার মা আমার পাশে এসে বসে। হ্যাভেন ওঠে যায় আমার পাশ থেকে। মা আমার হাত চেপে ধরে বলে,
-‘আহি মা যা হয়েছে, হয়েছে সবটা মেনে নে তুই৷ দেখবি খুব সুখী হবি। এ বাড়ির প্রত্যেকটা মানুষই ভীষণ ভালোরে মা ‘।
আমি ছলছল চোখে তাকাই মায়ের মুখের দিকে। ভাঙা আওয়াজে বলি,
-‘ মেনে নেওয়ার মতো কিছু ঘটেছে আম্মু? এমন বিকৃত মস্তিষ্কের একটা মানুষ কে কি করে স্বামী হিসেবে মেনে নেবো আমি। এ বাড়ির মানুষ যদি ভালোই হয় এমন অন্যায়কে কি করে মেনে নিচ্ছে তাঁরা ‘?
অসহায় মুখে তাকায় মা কিছু বলতে নিবে তখনি একটি মেয়ে এসে আমাকে চেপে ধরে। বলে,
-‘ ভাবি ও ভাবি আমার সুন্দরী ভাবি এদিকে তাকাও দেখো আমি তোমার একমাএ ননদিনী হিয়া ‘।
হ্যাভেনের ছোট বোন হিয়া এসে আমার সাথে পরিচিত হয়। একে একে ও বাড়ির সকলের সাথেই পরিচয় করানো হয় আমাকে। হ্যাভেনের দুটো কাজিন নাম হ্যারি আর হিরা। সম্পর্কে আমার দেবর তাঁরা। শশুর শাশুড়ী, দেবর,ননদ,চাচা শশুর সকলের সাথেই পরিচয় হয়। আমার চাচি শাশুড়ী নাকি অনেক বছর হলো পরোলোকগমন করেছেন৷ সকলের সাথে পরিচয় পর্ব শেষে হিয়া আমাকে হ্যাভেনের রুমে নিয়ে যায়। রুমে ঢুকেই গা ঘিনঘিন করে ওঠে আমার। পুরো রুম ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। বিছানায় গোলাপের পাপড়ি দিয়ে ইংলিশে লিখা ছিলো – এংরি বার্ড হ্যাভেন ম্যারিড উইথ সুইট বার্ড।
হিয়া আমাকে কাবার্ড দেখিয়ে বললো,
-‘ওখানে তোমার সব প্রয়োজনীয় জিনিস রাখা হয়েছে যাও যা লাগে নিয়ে বাথরুম গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও নয়তো আমার দাদানের পেট খারাপ হয়ে যাবে’ বলেই মুচকি হেসে বেরিয়ে গেলো।
আমার কান দিয়ে গরম ধোঁয়া বের হচ্ছিল তখন। শরীরে কাটা দিচ্ছিলো কেমন। যে বিয়েটাই আমি মন থেকে গ্রহণ করিনি যে মানুষ টাকেই স্বামী হিসেবে গ্রহণ করিনি তাঁর সাথে কি করে ভাবতেই গা শিউরে ওঠলো। কিন্তু লোকটা যে পরিমাণের অসভ্য,ইতর আমি কি এই জঘন্য ইতরের থেকে রেহাই পাবো?
.
ফ্রেশ হয়ে বাথরুম থেকে বের হতেই দেখি হ্যাভেন বিছানায় শুয়ে আছে হাঁটুর ওপর এক পা রাখা। গুনগুন করে গান গাইছে পড়নে সাদা টিশার্ট কালো ট্রাউজার।
আমি কখনো বাহ্যিক সৌন্দর্য কে গুরুত্ব দেইনি। কিন্তু সেদিন সে মূহুর্তে মনে হলো ঐ লোকটার মতো কুৎসিত দেখতে এ দুনিয়ায় আর একটা মানবও নেই। সত্যি বলতে ওর স্বভাব, আচরণে তিক্ত হয়ে এমন ধারনা আপনাআপনিই চলে আসে আমার মনে। আমাকে দেখেই ওনি চট করে ওঠে বসে। বিশ্রিভাবে চেয়ে বিশ্রি একটা হাসি দিয়ে আমার কাছে এগিয়ে আসে। আমি দু পা পিছিয়ে যাই। তীক্ষ্ণ কন্ঠে বলি,
-‘ একদম কাছে আসার চেষ্টা করবেন না। কোন মেয়ে কে জোর করে বিয়ে করে রেপ করাকে পুরুষত্ব বলে না মি.হ্যাভেন তালুকদার ‘।
-‘ আমার নিয়মে তো এটা লিখা নেই সুন্দরী। বরং লিখা আছে এতো সুন্দরী বউকে বিয়ে করে রেপ না করলে বউ ভাববে আমি কা পুরুষ কিচ্ছু পারিনা আমি ‘।
বলেই বিশ্রি ভাবে আমাকে স্পর্শ করতে আসে। আমি পিছাতে পিছাতে একদম দেয়ালের সাথে মিশে যাওয়ার উপক্রম। সামনের এই জঘন্য মানুষ জঘন্য স্পর্শ থেকে নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করি। কিন্তু পারিনা। লোকটা আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে,
-‘ কে বলেছিলো এতো সৌন্দর্যের অধিকারীনি হয়ে এ পৃথিবীর বুকে জন্মাতে? তোমার এই সকল সৌন্দর্য হ্যাভেন তালুকদারের নামে উৎসর্গ করার জন্য প্রস্তুত হও সুন্দরী ‘।
চলবে…।
কার্টেসী ছাড়া কপি নিষেধ
হ্যাভেন চরিএটি অবশ্যই ভালো নজরে দেখবে না কেউ যেহেতু সে একটা মেয়েকে ক্ষমতার জোরে বিয়ে করছে। তাই বলে সে কোন হাদিস জানবে না তা তো হতে পারেনা। আমরা অনেক হাদিস জানি কিন্তু তা কি সবাই মানি? সমাজে এমন অনেক মানুষ আছে যারা নিজেদের স্বার্থে হাদিস ব্যবহার করে ধরে নিন হ্যাভেন সেই মানুষ দের মধ্যে একজন। আবার এটা বলবেন না হাদিস মানলে একটা মানবে কেনো? এখানে চরিএটাই নেগেটিভ। নেগেটিভ চরিএ ভালো না লাগলে ইগনোর করুন৷ আর হ্যাঁ হাদিসে রয়েছে আল্লাহর পর দুনিয়াতে কাউকে সেজদা করা জায়েজ হলে স্ত্রী কে বলা হতো স্বামীকে সেজদা করতে। হ্যাভেন নিজের স্বার্থে সেটাই বলেছে। হ্যাপি রিডিং।