অন্যরকম তুমি সিজন ২ পর্ব ৪
তানিশা সুলতানা
শশুড় বাড়ির লোকজন এতোটা বাজে হয়? ছোঁয়া তনুর রুমে এসে পায়চারি করতে থাকে। যাবে কি করে? এখন থেকে সে বাড়ি চিনে না। কাছে টাকাও নাই যে যাবে। তাহলে এখন কি করবে? কারো কাছে ধার চাইলে নিশ্চয় দিবে না৷
এসব ভাবতে ভাবতে সাদেক চলে আসে রুমে।
ছোঁয়া সাদেককে দেখে এগিয়ে যায়।
“আংকেল আমাকে কিছু টাকা ধার দিন প্লিজ৷ আমি পরে শোধ করে দিবো।
সাদেক আরাম করে খাটে বসে। ছোঁয়াকেও পাশে বসার ইশারা করে। ছোঁয়া বসে।
“এটা তোমার শ্বশুর বাড়ি। এখনে তোমাকে সবাই ভালোবাসবে না। সবাই তোমার পক্ষে থাকবে না। ভালোবেসে তাদের নিজের দিকে টানতে হবে। মন জয় করতে হবে। এভাবে পালিয়ে গেলে তো চলবে না বলো।
ছোঁয়া বলে
” আংকেল এখানে কেউ আমাকে চায় না। আমি কেনো গায়ে পরে মন জয় করবো?
“এখানে সবাই তোমাকে চায়। কিন্তু এটা কেউ স্বীকার করতে নারাজ। তোমার লক্ষ্য থাকবে সবার থেকে স্বীকার করানো। নতুন জীবন শুরু করেছো তুমি। এটা তোমার সংসার। এখানে সব থেকে বেশি অধিকার তোমার। তুমি পিছিয়ে গেলে তো হেরে গেলে।
হারা যাবে না মা।
ছোঁয়া চুপ করে থাকে। কি বলবে সে? সে নিজেও জানে এখন বাড়ি ফিরে গেলে বাবা মা ভালোবেসে গ্রহণ করবে না। এই মানুষ গুলোর অবহেলা সহ্য করা গেলেও বাবা মায়ের অবহেলা সহ্য করতে খুব কষ্ট হবে। সেটা পারবে না ছোঁয়া।
” তোমার বোনটা চলে গেছে। কোথায় আছে কি করছে এটা কেউ বলতে পারবে না। তোমাদের এলাকার মানুষ জন এটা নিয়ে প্রচুর কথা শোনাচ্ছে তোমার বাবা মাকে। অপমান করছে। এখন যদি তুমিও শ্বশুড় বাড়ি থেকে চলে যাও তাহলে তো তাদের অপমান আরও বেড়ে যাবে। মানুষজন আরও বেশি কথা শোনাবে৷
বাবা মায়ের অপমান মানতে পারবে তো মা?
ছোঁয়া চোখ বন্ধ করে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। জীবনটা গোলক ধাঁধায় আটকে গেছে। এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে যে যতদিন বাঁচবে অপমান সহ্য করতে হবে। কোনো উপায় নেই। কোনো রাস্তাও খোলা নেই।
তনু খাবার নিয়ে রুমে ঢোকে। ছোঁয়ার অন্য পাশে বসে টি-টেবিলে খাবার রাখে।
সাদেক ছোঁয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।
“খেয়ে নাও মা। তারপর ঠান্ডা মাথায় সিদ্ধান্ত নাও। তুমি থাকতে না চাইলে আমি জোর করবো না। শুধু বাবা মায়ের কথা মাথায় রেখো।
বলেই সাদেক চলে যায়। ছোঁয়া হাত না ধুয়েই খেতে থাকে। বড়বড় লোকমা দিয়ে খাবার খাচ্ছে সে। ভীষণ খিধে পেয়েছে তার।
তখন মনি আসে হাতে মাছের বাটি নিয়ে।
ছোঁয়ার এভাবে খাওয়া দেখে হেসে ফেলে সে। ফিক করে হেসে ওঠে। ছোঁয়া লজ্জা পেয়ে খাওয়া থামিয়ে ফেলে। আমতা আমতা করতে থাকে। শাশুড়ীর মতো উনিও এবার কথা না শোনায়। ছোঁয়াকে অবাক করে দিয়ে মনি ছোঁয়ার পাশে এসে বসে। ছোঁয়ার পাতে বড় এক টুকরো মাছ দেয়।
হেসে বলে।
” আস্তে আস্তে খাও। গলায় আটকে যাবে তো।
ছোঁয়া মৃদু হেসে আবার খাওয়া শুরু করে।
__
এই বাড়িটাতে ছোঁয়ার ভালো লাগছে না একদম। মানুষ নাই। খাবার খেয়ে যে যার রুমে ঢুকে গেছে। পুরো বাড়িটা খা খা করছে। তনু ভার্সিটিতে চলে গেছে।
ছোঁয়া একটু একটু পা ফেলে দেখছে বাড়িটা। তখনই দেখতে পায় কুকুর বিড়ালের সাথে পরি খেলছে বল নিয়ে আর খিলখিল করে হাসছে। বাচ্চাটা ভারি মিষ্টি। খালি একটু বেশিই মোটা।
ছোঁয়ার ঠোঁটের কোণেও হাসি ফুটে ওঠে। সে দূর থেকে দেখতে থাকে।
কুকুরটা ক্রিম কালার। বড়বড় লোম। দারুণ দেখতে। আর বিড়ালটাতো একটা কিউটের ডিব্বা। ধবধবে সাদা। ঠিক খরগোশের মতো।
খেলতে খেলতে হঠাৎ করে পরির বলটা পরে যায় নিচে। পরি বেচারি চিৎকার করে কেঁদে ওঠে হাত পা ছড়িয়ে। কুকুর বিড়াল দুটো অসহায় চোখে তাকিয়ে থাকে পরির দিকে।
ছোঁয়া এগিয়ে যাবে কি যাবে না ভাবতে ভাবতে সাবিনা চলে আসে। সে পরির কাছে গিয়ে হাত ধরে টেনে তুলে।
গালে দুটো থা*প্প*ড়ও বসিয়ে দেয়। এতে পরি ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকে। যদি আবার মারে।
সাবিনা পরিকে বকতে থাকে
“শয়তানের বাচ্চা আমার জানটা জ্বালিয়ে খাচ্ছিস। ম*র*তে পারিস না তুই? এতো বাচ্চারা পানি পরে ম*রে, অসুস্থ হয়ে মরে। তুই মরিস না কেনো?
ছোঁয়ার চোখে পানি চলে আসে। কোনো দাদিমা এভাবে বলতে পারে?
আরও একটা থাপ্পড় দিতে যাবে তখন ছোঁয়া গিয়ে পরিকে কোলে তুলে নেয়।
সাবিনা রেগে তাকায় ছোঁয়ার দিকে।
ছোঁয়া শক্ত গলায় বলে।
” ওকে মারবেন না শাশুড়ী। ও খুব ছোট। কেনো মারছেন এভাবে? বাচ্চারা তো কাঁদবেই।
সাবিদা দাঁতে দাঁত চেপে বলে
“খুব দরদ তাই না? দেখবো কয়দিন থাকে এই দরদ। এই বাচ্চাটা আমার পরিবারটাকে শেষ করে দিয়েছে। আমার সাদুকে
বলতে বলতে কেঁদে ফেলে তিনি। আর আঁচলে মুখ লুকিয়ে চলে যায়।
পরি ছোঁয়ার বুকে মুখ লুকিয়ে ফোঁপাচ্ছে। ছোঁয়া পরিকে বুকের ভেতর আঁকড়ে ধরে
” কাঁদে না পরি
আমি বল এনে দিচ্ছি।
বলে সে পরিকে নিয়েই নিচের নামতে থাকে। তার পেছন পেছন কুকুর বিড়ালও আসতে থাকে। পরি খুশি হয়ে যায়। সে তার ছোট ছোট হাত দুটো দিয়ে চোখের পানি মুছে ফেলে। ছোঁয়া মুচকি হাসে।
যখন টের পায় পেছনে কুকুর বিড়াল আসছে তখন ভ্রু কুচকে পেছনে তাকায়। আর সাথে সাথে কুকুর বিড়াল থেমে যায়।
ছোঁয়া আঙুল তুলে শ্বাশিয়ে বলে
“একদম আমার পেছনে আসবে না। আমি পছন্দ করি না তোমাদের।
তারা মাথা নিচু করে লেজ নাড়াতে থাকে। ছোঁয়া ভেংচি কেটো আবারও হাঁটতে থাকে। তারাও পেছন পেছন আসতে থাকে। ছোঁয়া দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।
তাদের বসের মেয়েকে নিয়ে যাচ্ছে সে। পাহাড়া দিতে আসবেই। পারফেক্ট সিকিউরিটি গার্ড যে।
বলটা আঁটকে গেছে গাছের মাথায়। পরিকে কোল থেকে নামিয়ে ছোঁয়া গাছটার দিকে তাকিয়ে আছে। খুব বড় না গাছটা। চিকন আর খানিকটা লম্বা। হাত দিয়ে নাগাল পাওয়া যাবে না।
পরি আবারও কেঁদে ফেলবে এমন অবস্থা।
ছোঁয়া একবার পরির মুখের দিকে তাকাচ্ছে তো আবার বলটার দিকে তাকাচ্ছে।
পরি ঠোঁট ফুলিয়ে বলে
” মাম্মা বল?
ছোঁয়া কুকুর বিড়ালের দিকে তাকায়। তারাও বলটার দিকে তাকিয়ে আছে। ছোঁয়া কোমরে হাত দিয়ে বলে
“এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো আপনারা? যান বলটা এনে দিন। সিকিউরিটি যে আপনারা।
কুকুড় লেজ নারিয়ে ঘেউঘেউ করে ওঠে। যেনো সে বললো ” পারতে পারলে দাঁড়িয়ে থাকতাম না কি”
আর বিড়ালটা চুপচাপ আছে। যেনো সো বোঝাতো চাচ্ছে “আমি পারতে পারছি না বলে লজ্জিত”
ছোঁয়া কোমরে ওড়না গুঁজে গাছে ওঠার প্রস্তুতি নেয়। গাছে উঠতে সে এক্সপার্ট। এলাকার একটা গাছেও পেয়ারা থাকতো না তার জ্বালায়। যত বড়ই গাছ হোক না কোনো সে উঠে যেতে পারে।
চুল গুলো হাত খোঁপা করে গাছে উঠে পরে। গাছটা এতোটাই চিকন যে ছোঁয়ার ভর নিতে পারছে না। সমানে কাঁপছে।
ছোঁয়া বলটা ফেলে দেয়। পরি বল পেয়ে লাফাতে থাকে।
সাদি বাসায় ফিরছিলো। পরির কন্ঠ পেয়ে এগিয়ে যায়। ছোঁয়াকে বাঁদরের মতো গাছে ঝুলতে দেখে বিরক্ত হয় সাথে রাগও হয়। এই শেখাচ্ছে মেয়েটা তার বাচ্চাকে?
সাদি ধমক দিয়ে বলে ওঠে
“কি হচ্ছে এখানে?
ছোঁয়া তারাহুরো করে সাদির দিকে তাকাতে গিয়ে গাছটা ভেঙে ঠাসস করে পড়ে যায় মাটিতে। গাছটা সাদির পছন্দের। এটা ওই এনে লাগিয়েছিলো কয়েক বছর আগে।
ছোঁয়া ভীষণ ব্যাথা পায় পায়ে। সে পা ধরে চোখ মুখ খিঁচে আছে। পরি মাম্মা বলে কান্না শুরু করে দিয়েছে। কুকুড় বিড়াল হতাশ হয়ে তাকিয়ে আছে। যেনো তারা বুঝতেই পারছে না এখানে কি হচ্ছে।
সাদি ফোঁস করে শ্বাস টানে।
” প্রতিবন্ধী তুমি? না কি অন্য কিছু? প্রবলেমটা কি তোমার?
ছোঁয়া ফট করে চোখ খুলে এক লাফে দাঁড়িয়ে যায়। সাদির দিকে তেঁড়ে আসতে আসতে বলে
“হ্যাঁ আমি প্রতিবন্ধী। এবার প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যবস্থা করে দিন।
চলবে……………