#দ্বিতীয়_প্রহর
#Yasira_Abisha (#Fatha)
মাঝরাতের সময় হুট করে অচেনা একটা মেয়ে আমার বুকে এসে লুটিয়ে পড়লো যা আমাকে হতভম্ব করে দিয়েছে, কারণ এমন সিনেমাটিক দৃশ্য আমার সাথে কেনো বাস্তবে কারো সাথেই হয় না।
এজন্যই আপাতত আমিও অবাকের চতুর্থ আসমানে আছি। আমার এতো বছরের ক্যারিয়ারে কোনোদিন এমনটা হয়নি যে হসপিটালের বাইরে কোনো মেয়ে এসে গায়ের ওপরে পরে গেছে এবং দাঁড়ানো থেকে ধপ করে মাটিতে পরে গেলো, যেহেতু হাসপাতালের
বাইরে এমন ঘটনা ঘটে তাই আমি ধরেই নিলাম সে হয়তো অসুস্থ, মেয়েটাকে সে অবস্থাতেই ডাক দিলাম কিন্তু কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে তাকে কোলে করে নিয়ে হসপিটালের ভেতরে চলে এলাম,
আমার কোলে একটা মেয়েকে দেখে সবাই খুবই অবাক হয়ে আছে
-নার্স, পেশেন্ট দেখতে হবে এখানে আসুন।
আমি যখন ক্রস করে যাই তখন মেঘা কে দেখতে পেলাম নিচে, আমাকে ও বোধহয় সে দেখেছে তবে আমি একপলক ও তাকাই নি তার দিকে। একটা সময় ছিলো মেঘা সামনে থাকলে আশেপাশে কে আছে? কি করছে কোনো দিকেই খেয়াল যেতো না তবে আজকে তার দিকে আমি ফিরেও তাকাই না। আসলে সময় বড়ই অদ্ভুত কখন পাল্টে কি রূপ নেয়? কেউ তা বুঝতে পারে না।
আমি পাশের কেবিনে নিয়ে মেয়েটাকে বেডে দিয়ে দিলাম যেই সড়ে আসবো এমন সময় সে আমার ডান হাতের কনিষ্ঠ আঙুলটা ধরে রাখে, হাতটা ছাড়ানোর চেষ্টা ও করলাম কিন্তু শক্ত করেই ধরেছে। বয়সটা বেশি না, বাচ্চা বয়সের মেয়ে বড় জোর ২১/২২ বছর হবে।
মহিলা ডাক্তার এসে চেক করলো তাকে, সে ঠিক আছেন
আপাতত সে আমাকে ধরেই রেখেছে আর আমি পাশের চেয়ারে বসে আছি। ভোর হয়ে এলো প্রায় ফজরের আযান হবে এমন সময় মেয়েটার জ্ঞান ফিরেছে, আমি তখন বসে ঘুমিয়েই গিয়েছি কিন্তু মনে হচ্ছে কে যেনো আমার দিকে তাকিয়েই আছে তন্দ্রার মধ্যে আবছা আবছা তাই লাগছিলো, চোখ খুলে দেখি একটা মেয়ে ভয়ার্ত চেহারা নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে তাকে দেখতেই রাতের সব গুলো কথা আমার মাথায় খেলে গেলো।
তবে আমি দেখি মেয়েটা একদম দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছে। আমি তাকে জিজ্ঞেস করতে যাবো কিছু তখন সে আমাকে দেখে একটা দৌড় দিয়ে কেবিন থেকে বেড় হয়ে যায়।
তার এমন অদ্ভুত আচরণ দেখে আমি প্রচুর অবাক হয়ে যায়, এটা কি হলো?
আমাকে দেখে কি সে ভয় পেয়ে গেলো?
উঠে ফ্রেশ হয়ে নিজেকে একবার আয়নায় দেখে নিলাম, নাহ আমাকে তো এমন লাগছেনা তাহলে সে এমন করে গেলো কেনো?
এটা আমার জন্য একটা বড় ধরনের রহস্য হয়ে রয়ে গেলো।
তবে রহস্য হলে কি আর করার?
কতশত পেশেন্ট দেখা লাগে সারাদিনে আমার, কিন্তু এমন কাউকে আগে দেখিনি,তবে এসব না ভেবে আপাতত বাসায় যাওয়াটাই ঠিক হবে কারণ আজকে এই হসপিটালের কমিউনিটির বিশেষ অনুরোধে কিছুদিন মেডিকেল কলেজে ক্লাস নিতে হবে আমার।
গাড়ির সামনে আসতেই দেখি গাড়ির ওপরে একটা গোলাপ রাখা। এই রকম গোলাপ বাংলাদেশে আসার পর থেকে প্রতিদিন বাসায় পাই আজকে তা হাসপাতালের পার্কিং এরিয়ায়? ব্যাপারটা আসলে এখন আর উপেক্ষা করতে পারছিনা, বিষয়টা সত্যিই আমাকে ভাবাচ্ছে
বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে নামাজ, নাস্তা শেষ করেই আমি ঘুম দিলাম। ১০টার দিকে বের হতে হবে।
.
সাহিলের জ্ঞান ফিরেনি এখনো, মেঘা কেবিনে শুয়ে আছে সোফার মধ্যে মা বাবা ঢাকার বাসায় চলে গেছে। মা যদিও বলেছিলো মেঘাকে বাসায় যেতে সেই থাকবে কিন্তু মেঘা অমত দেখিয়ে বললো সে আজ দুপুর পর্যন্ত থাকবে যখন ননদের ক্লাস শেষ হবে তাকে একবারে বাসায় যাবে। সেই সময়টা মা বাবা থাকবে হসপিটালে, নিজের সাথে নিজে আজকে কথা বলছে মেঘা। আচ্ছা আমি কি কষ্ট পাচ্ছি? কেনো পাচ্ছি? আজকে ইরাদকে আমি এই জায়গায় দেখেছি বলে এটা কি আমার মনের হিংসে? হ্যাঁ এটা সত্যি আমি ভাবিনি এতো বড় জায়গায়, এত সম্মান, এত প্রভাব এসবের মধ্যে ইরাদকে দেখবো। তাই কি আমি এতোটা চমকে গেছি? বুঝতে পারছি না, তবে আমার কাছে ব্যাপারটা ভালো লাগে নি আমি খুব অস্থির হয়ে আছি। রাতেও দেখলাকম একটা মেয়েকে কোলে করে ইরাদ আমায় ক্রস করে গেলো, যদিও মেয়েটার চেহারা দেখতে পাইনি। আগে কোনোদিন ইরাদ আমাকে দেখলে আন্য সব কাজ ভুলে যেতো আর এখন সে আমার দিকে ফিরেও তাকায় না। আমি প্রথম থেকেই খেয়াল করেছি আমাকে দেখে একদম অচেনা অচেনা ব্যাবহার করছিলো ইরাদ। আচ্ছা আজকে যদি আমি দেখতাম সেই মধ্যবিত্ত ইরাদকে তাহলে কি আমি যতটুকু ওকে নিয়ে ভাবছি ওতটুকু ভাবতাম? নাহ হয়তো ভাবতাম না, তখন আমার অহং সন্তুষ্ট হতো আমি হয়তো ভালো থাকতাম এমন কষ্ট পেতাম না।
.
ইরাদ মেডিকেল কলেজে এসে পড়েছে ৯.৫০ বেজে গেছে, ১০টা থেকে কার্ডিওলজি ক্লাস আছে সেই ক্লাসেই আজ ইরাদ যাবে হাটছে তখন থেকে দেখলো একটা মেয়ে সিড়ির সামনে হাটতে গিয়ে পরে গেলো এবং তার বই গুলো ও ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরে গেছে, মেয়েটা কমলা রঙের সালোয়ার কামিজ পরেছে, বাতাসে তার খোলা চুল এসে মুখ ঢেকে গেছে ইরাদ।হেটে সামনে আসতেই দেখলো এটা তো আজকের সেই মেয়েটা,
সে সময়ই ইরাদকে নিতে অন্য ডাক্তাররা এলো। মেয়েটাও গায়েব হয়ে গেলো কিছুক্ষনের ভিতরেই,
ইরাদ ১০টায় ক্লাসে এলো, সবাই সালাম দিলো
ইরাদ ওয়ালাইকুম আসসালাম বলে ক্লাস শুরু করলো। হঠাৎ ইরাদ খেয়াল করলো সেই মেয়েটা এই ক্লাসে, তার মানে সে এই মেডিকেলে পড়াশোনা করে সে। অদ্ভুত একটা মেয়ে এখানে সেখানে পরতে থাকে, কিছুক্ষণ পরে সবাই ওয়ার্ডে যাবে, ইরাদ এতই সুদক্ষ একজন টিচার তার দেওয়া লেকচার আরো ১০ মিনিট আগেই শেষ হয়ে গেছে আরো কিছু সময় আছে হাতে, একজন স্টুডেন্ট বলে উঠলো -স্যার আমাদের সাথে পরিচয় তো জিজ্ঞেস করলেন না এখনো, আমরা আপনার সম্পর্কেও জানতে চাই।
ইরাদ মুখে একটা হাসি দিয়ে বললো,
– ঠিক আছে আসুন আমরা পরিচিত হই
– আমি কার্ডিয়াক সার্জেন্ট ডক্টর ইরাদ, কার্ডিওলজি নিয়ে পোস্ট গ্রাজুয়েশন করে নিউইয়র্কে প্রাকটিস করছিলাম সদ্য বাংলাদেশে আমাকে ইনভাইটেশন দেওয়া হলো আর অনেক বছর পরে নিজের দেশে ফিরে এলাম কিছু দিনের জন্য । আর আজকে আপনাদের সামনে ক্লাস নিচ্ছি।
ইরাদ এবার এক এক করে সবার পরিচয় জেনে নিলো এবার সে মেয়েটার পালা এলো,
সে যেন ইরাদকে দেখে ভয় পাচ্ছে এমন মনে হচ্ছিলো, কথায় জড়তা
– আ আ আমি আরিশা কবির রুহি। বলে দাঁড়িয়েই রইলো তখন
ইরাদ মাথা নেড়ে তাকে বসতে বললো,
এবার সবাই ওয়ার্ডে চলে এলো
এখন ইরাদ ফাইল দেখতে দেখতে এক এক জন কে এক একটা প্রশ্ন করছে এর মধ্যেই রুহির পালা এলো, রুহিকে দেখে ইরাদের একটা ধারণা হয়ে গেছে মেয়েটা একটু কেমন যেনো, একটু কেয়ারলেস টাইপের। একটা টাফ প্রশ্ন ধরলো ইরাদ ওকে যদিও ইচ্ছা করে জিজ্ঞেস করেনি মাথায় এসেছে তাই জিজ্ঞেস করেছে, আর ইরাদের যে ভাবনা ছিলো তাকে রুহি সঠিক প্রমাণিত করে দিলো।
প্রশ্নটার কোনো উত্তরই দিতে পারলো না,
ক্লাস শেষ করে ইরাদ বেড়িয়ে গেলো
দিবা- কিরে রুহি? তুই তো এই প্রশ্নটার উত্তর জানতি তাহলে বললি না কেনো?
– আমি নার্ভাস হয়ে গেসিলাম
– কেনো?
– ডক্টর ইরাদকে দেখে।
– ওহহ হ্যাঁ, উনি তো তোর ক্রাশ
– ক্রাশ ঠিক কি না জানি না তবে উনি আমার লাইফে অনেক ইমপর্টেন্ট একটা রোল প্লে করেন। তার কথা আমি ক্লাস টেনে থাকতে প্রথম আর্টিকেলে পড়ি সেই থেকেই তার ফেসবুক পেইজ ফলো করে আসছি, এবং সেখান থেকেই ইঞ্জিনিয়ারিং না পড়ে মেডিকেলে পড়ার ইচ্ছে জাগে আমার মনে। খুব ভালো রেজাল্ট ও করি।উনি আমার ইন্সপিরেশন, উনি আমার লাইফের রোল মডেল। সব মিলে তাকে আমি অনেক বেশি এডমায়ার করি।
– হয়েছে হয়েছে বাবাহ স্যারকে নিয়ে বলতে শুরু করলে তোর আর শেষ হয় না। আজ যখন স্যার তার পরিচয় বলছিলেন তখন আমি মনে মনে হাসি আর বলি স্যার আপনার ব্যাপারে আমি অনেক ভালো মতই জানি রুহির কৃপায়। সে সারাদিন আপনার সম্পর্কে এতো কথা বলে যে আমার কান ঝালাপালা হয়ে গেছে।
– চুপ থাক
– আর দেখ আজকে স্যারকে দেখে তুই পুরো বোবা হয়ে গেসিলি।
এই বলেই দিবা হোহো করে হাসলো
দিবার কথা গুলো রুহির একদম ভালো লাগলো না,
রুহির একদম রাগ লাগছে কারণ সে আসলেই ভাবে নি ইরাদকে দেখে সে এমন নার্ভাস হয়ে যাবে। ইরাদকে প্রথম যখন দেখবে তখন তার কত কথা ছিলো, সে যে ইরাদকে কত পছন্দ করে তার কাজকে দেখেই এই প্রফেশনে আসার ইচ্ছা হয়েছে এটা জানাবে। তাকে ধন্যবাদ দিবে কিন্তু কিছুই হলো না। রাতেও সে ওভার এক্সাইটেড হয়ে এভাবে জ্ঞান হারালো আর আজকে? আজকে তো একটা সিম্পল একটা প্রশ্নের উত্তর ও দিতে পারলো না। রুহির আপাতত কাজ হলো ইরাদের সামনে কিভাবে নার্ভাস না হয়ে থাকা যায়? সবকিছুই যে হারে সে ওলট পালট করছে এগুলো অবশ্যই কন্ট্রোল করতে হবে তার।
রুহি আর ইরাদ ভিন্নভাবে মানুষ হয়েছে তাদের স্বভাবগত দিক থেকেও কোনো মিল নেই, আর বয়সের দিক থেকেই বেশ কিছুটা পার্থক্য আছে। সব মিলে সামনে তাদের জন্য কি আছে তা রুহি বা ইরাদ কেউই জানে না তবে হ্যাঁ জীবনের অনেক কিছুই পাল্টে যাবে তাদের
(চলবে..)