#চতুর্ত্রিংশ #Yasira_Abisha (#Fatha)
পাপাকে ইরাদ বসে নিজের সবটা বললো,
পাপা কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বলতে শুরু করলেন,
– বাবা আমার মনে হয়না যদি কারো আগে বিয়ে হয়ে থাকে তাহলে সে খারাপ হয়ে যায়।তবে বেশির ভাগ সংসার নষ্ট হয়ে থাকে ছেলেদের দোষে যদিও সব ক্ষেত্রে এক নয়। আর তোমাকে আমি প্রথম থেকেই দেখে বুঝেছি তুমি ভালো একজন ছেলে আমার পরিচিত নাহলে হয়তো আমি আবার ভাবতাম এই বিষয়ে, আর আমাদের মেয়ে যেহেতু তোমাকে পছন্দ করেছে তাতে আমার কোনো আপত্তি নেই। পরিবারের বাকি সবার সাথে আমি এই বিষয়ে কথা বলবো। আমার মনে হয় না এই বিষয়ে কারো দ্বিমত হবে, আর রুহির বাবা আমার ভায়রাকম ভাই বেশি আমার তরফ থেকে তোমাকে পছন্দ করা মানে অন্য দিক দিয়ে কোনো সমস্যা হবে না।
– রুহির বাবা?
– রুহি আমার ওয়াইফের জমজ বোনের মেয়ে। ও জন্মের সময়ে ওর মা মারা যায়। এরপর থেকে ওকে দেখাশোনা আমি আর আমার ওয়াইফই করতাম। আমি কোনোদিন মনে করিনি আমার এক মেয়ে রুহি আমার জন্য সবসময় আমার ছোট মেয়ে ছিল আর থাকবে।
ইরাদ মুচকি হাসলো।
.
পরদিন…..
পাপার তরফ থেকে সবটা মেনে নেওয়ায় রুহি যেনো একটা ভরসা পেলো।
পুরো পাচঁটা দিন রুহি আর ইরাদ একসাথে ছিলো, এই কয়েকটা দিনের মধ্যেই যেনো বিগত তিন বছরের দূরত্ব গুলো একদম ঘুচে গেছে। এবার অপেক্ষার প্রহর শেষ করতে চাইছে রুহি। ইরাদকে কিছুদিনের জন্য নিজের করে পেয়ে মন তো আর ভরছে না। সারাটা জীবন ভোরের সূচনা ইরাদের বুকে মাথা রেখেই করতে চায় রুহি। রাতের শেষ জোৎস্নাটাও ইরাদের হাত ধরেই দেখতে চায় রুহি। এরকম হাজারো আশা আছে মনের মাঝে লুকিয়ে সেসকল স্বপ্ন গুলো রুহি বাস্তবায়ন করতে চায়। আর এসব কিছুই বাস্তবতা পেতে পারবে শুধু আপু মা বাবাকে জানানোর পরে। সবাই কবে আসবে আর রুহি সবটা খুলে বলবে এই অপেক্ষা আর যেনো রুহির সহ্য হচ্ছে না। সকালে ফিরে এসে রুহি ঘুমিয়ে ছিলো। এমন সময় সোবহান সাহেব রুহিকে ডেকে তুললেন,
– মামনী
– পাপা কখন ফিরেছো বাসায়?
– এইতো মামনী কিছুক্ষন আগে। তোমার জন্য সারপ্রাইজ আছে।
– কেমন সারপ্রাইজ পাপা?
– তোমার বাবার সাথে আমি সবটা শেয়ার করেছি ইরাদের ব্যাপারে।
-পাপা?
– হুম
– এরপর কি হলো?
– ও বললো আমার ডিসিশনে ওর ভরসা আছে এবং ইরাদের ও তোমার ব্যাপারটা ও মেনে নিয়েছে। কারণ মেঘার বিয়েটাও আমি ওর কথায় দিয়েছিলাম ওর বন্ধুর ছেলের সাথে। আর মেঘা ভালো ও আছে। আমরা আমাদের মেয়েদের জন্য খারাপ চাইবো না কোনোদিন এটা আমরা জানি।
এই বলে সোবহান সাহেব হাসলেন
তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই তার মুখটা গম্ভীর হয়ে এলো
– কি হলো পাপা?
-এখন সমস্যা একটাই?
– তোর মা আর বোন,ওরা ইরাদের ব্যাপারটা স্বাভাবিক ভাবে নিবে না আমার মনে হয়।
-এখন কি করবো?
– আজকে রাতে ইরাদকে আসতে বলো আমাদের বাসায়।
– রাতে কেনো পাপা?
– দরকার আছে মা। আগে বলো তুমি।
.
রুহি ইরাদকে ফোন করে,
-আসসালামু আলাইকুম
– ওয়ালাইকুম আসসালাম
– কি করছেন?
– ঢাকা একটা নতুন বাসা কিনেছি এবার আসার পরে, এর সব কাজ শেষ। এখন শুধু এটার ইন্টেরিয়ার ডিজাইন নিয়ে কাজ করাতে হবে তোমাকে কল দিবো ভাবছিলাম। আর তখনই তুমি কল দিলে।
– এটাই তো মনের টান
বলে রুহি খিলখিল করে হাসছে
ইরাদও মুচকি হাসছে রুহির কথায়।
– ম্যাডাম এখন পুরোটা আপনি মন মতো করে ডিজাইন করে নিয়েন আমি পারবো না করতে।
– ওকে স্যার আমিই করবো, এখন শুনুন জরুরি কথা।
– কি কথা?
– আজকে আপনি আমার বাসায় আসছেন ডিনারে।
– কেনো?
– পাপা ইনভাইট করেছেন আর অনেক ভালো একটা নিউজ আছে।
– কি সেটা?
-আমার বাবা আপনার আর আমার বিয়ের ব্যাপারে মেনে নিয়েছেন
– আলহামদুলিল্লাহ
– এখন দেড়ি করবেন না, জলদি বাসায় আসেন।
– এখন তো সন্ধ্যা
– আপনাকে দেখতে ইচ্ছা করছে তাড়াতাড়ি আসেন প্লিজ।
রুহির আহ্লাদী কথা গুলো শুনে ইরাদ হাসে, বাচ্চাদের মতো করে আবদার করছে।
– আসছি ইশার নামাজের পরে আপনি এখন রেস্ট নেন। আমার পাগলীটা।
রুহির ইচ্ছা করছে লাল শাড়ি পড়তে আজকে। রুহি সুন্দর করে লাল একটা শাড়ি পড়লো, চোখে কাজল দিলো শুধু, আর মাথায় হাত খোপা। বেশ লাগছে ওকে দেখতে।
এদিকে ইরাদ বেড় হবে তখনই ওর ম্যানেজার ওকে কল দিয়ে বললো,
– স্যার আমাদের আজকে মাঝ রাতে আপনার চিটাগং এর ফ্লাইট
– আজকে?
-জ্বি স্যার।
– শিট!
আমার একদম খেয়াল ছিলো না।
– স্যার তাই আপনাকে কল দিলাম
– কয়টায় ফ্লাইট?
– ভোর ৪টায়।
-ওকে।
ইরাদ ভাবলো একবার রুহিকে কল দিয়ে বলবে কিন্তু রুহিকে আর কল দিয়ে বললো না।
কারণ রুহি মন খারাপ করবে ইরাদের যাওয়ার কথা শুনলে তাই ওকে৷ সামনা সামনি গিয়ে ইরাদ রুহিকে বলবে যেনো ও মন খারাপ না করে।
রুহি ঘর থেক বেড় হবে এমন সময় ওর ফোনে মেঘা মেসেজ করে
“রুহি শোন, আমরা এখন বের হচ্ছি,
আজকে সকালের ফ্লাইটে সিঙ্গাপুর থেকে আমরা ব্যাক করবো ইনশাআল্লাহ।”
রুহি তো খুব খুশি হয়ে নিচে পাপাকে খবর দিতে গেলেন।
কিন্তু সোবহান সাহেব খুশি না হয়ে গম্ভীর হয়ে গেলেন।
-পাপা কি হলো?
– তোর মা আর বোন আসা মানেই তো বিপদ
– পাপা তারা ও মানবে
– মানবে কি না জানিনা তবে ছেলেকে খুব পর্যবেক্ষণ করবে এটা জানি।
-এখন বাবা?
– যা করার আজকেই করতে হবে
রুহি খুব ভয় পেয়ে গেলো। কারণ ইরাদের কোনো সমস্যা না থাকলেও একটা অতীত আছে। আর এই অতীত মা ও মেঘা কিভাবে নিবে তা রুহির জানা নেই।
এমন সময় ইরাদ এলো,
– আসসালামু আলাইকুম আংকেল
– ওয়ালাইকুম আসসালাম বাবা বসো।
রুহি ইরাদকে দেখে কিছুই বললো না। ও এখন চিন্তায় আছে বোন আর মা কে নিয়ে। যদি কোনো সমস্যা হয় আর ইরাদ রুহিকে রেখে চলে যায়?
আর এদিকে ইরাদ ভাবছে আজকে যাওয়ার কথা শুনলে রুহি কষ্ট পাবে। ওকে কিভাবে বলা যায়?
কিছুক্ষণ পরে সোবহান সাহেব বললেন,
-বাবা আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি তুমি রাজি কি না আমি জানতে চাই।
– জ্বি আংকেল?
– আমি চাচ্ছি আজকেই তোমার আর রুহির বিয়েটা দিয়ে দিতে।
– কেনো আংকেল?
– আজকের দিনটা ভালো
(সোবহান সাহেব আর মেঘা ও তার মায়ের কথাটা ইরাদকে বললো না, যেনো কোনো রকম বাজে প্রভাব না পড়ে এই ব্যাপাটায় ইরাদ ও রুহির সম্পর্কের ওপরে)
-ইরাদ রুহির দিকে তাকালো, রুহির চোখ দুটো যেনো ইরাদকে বলছে
– প্লিজ মানা করবেন না। অনেক তো হলো আর দূরে না থাকি এবার এক হয়ে যাই আমরা?
(খুব তাড়াতাড়ি এই গল্পটা শেষ হয়ে যাবে এবং নতুন গল্প শুরু হবে)