#চতুর্থ_প্রহর
#Yasira_Abisha (#Fatha)
ছয় মাস সংসার করার পরে আমার ডিভোর্স হয়ে যায়, আমার জীবনে যার হাতে হাত রেখে চলার কথা ছিলো সেই আমায় ছেড়ে চলে গেছে, তাই এখন আর বিয়ে ভালোবাসা এগুলোতে বিশ্বাস করিনা। কথাগুলো বলে ইরাদ উঠে চলে গেল।
ভালোবেসে বিয়ে করা বউ ফেলে চলে যাওয়ার পরে নিজেকে গুছিয়ে তুলতে অনেক কষ্ট হয়েছিলো আমার বন্ধুর তারপরেও সে পেরেছে।
চোখ দুটো অশ্রুসিক্ত হয়ে আছে আরিফের,
সে ঘটকের দিকে তাকিয়ে এই কথা গুলো বললো,
-তবে আজকে সেই তুচ্ছ ভেবে ফেলা যাওয়া ছেলেটা মস্ত বড় ডাক্তার আর সেই প্রাক্তন স্ত্রীর বর্তমান স্বামীর অপারেশন করে তার জীবন পর্যন্ত বাচিয়েছে তাহলে আপনারাই ভেবে দেখুন তার মন কতটা ভালো।
– হ্যাঁ তা বুঝতে পারলাম উনার অনেক নাম ও আসে এলাকায় কিন্তু বিয়ে করতে না চাইলে আপনারা কিভাবে করাবেন?
ইরাদের চাচি সায়লা বানু বললেন,
– ওর অভিযোগ মানি কিন্তু এভাবে তো সারাজীবন কাটানো যাবে না বিয়ে করতেই হবে, বয়স ৩৫ হয়ে গেছে। যতই না করুক বিয়ে আমরা করাবোই ইনশাআল্লাহ। ওর চাচা মারা যাওয়ার পরে এই ছেলেটা আমাদের দায়িত্ব নিয়েছিলো, নিজের ছেলে ও মানুষের জন্য এত করেনা এই ছেলেটা আমার জন্য আর আমার সন্তানদের জন্য যা করেছে। আরো জীবনটা কিভাবে পার করে দিবে আমরা কি এটা হতে দিব? প্রায় পাঁচ বছর আগে ভাই মারা গেলেন তার একবছর পরে ভাবি। ইরাদের সবভাইবোন বিয়ে করে তাদের জীবন নিয়ে ব্যস্ত। দিনশেষে ইরাদের তো কেউ নেই। আমারও বয়স হয়ে গেছে আজকে আছি কালকে নাই। পুরোটা জীবন আমার ছেলেটা একা কাটাবে কিভাবে?
চাচির কোথায় আরিফ মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিচ্ছে।
আরিফ আর ইরাদ ছোটবেলা থেকে খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু।
ইরাদের দুঃখ আরিফ সহ্য করতে পারেনা। সব সময় চায় ওর বন্ধু যেন ভালো থাকে। তাই এবার আরিফ জোরেশোরে উঠে পড়ে লেগেছে ইরাদকে বিয়ে করানোর জন্য যে করেই হোক। আরিফ বিয়ে করে সুখে আছে তার দুটো সন্তান আছে। এর এদিকে দিন শেষেই ইরাদ একা, সারাদিন যতই কাজে নিজেকে ডুবিয়ে রাখে তবুও তো কাউকে প্রয়োজন।
ইরাদ সকাল থেকেই চাচ্ছিল সবাইকে সে ইগনোর করবে। এই ভয়েই করে বাড়ি ফিরল কিন্তু এসেও রেহাই পেল না।
আরিফ আর চাচি পারেও বটে, ঘটককে এত রাত পর্যন্ত বসিয়ে রেখেছে। সকাল হলেই শুরু হবে আবার, দু’জন মিলে সবসময়কার মতো মেয়েদের ছবি এনে শুরু করবে
-দেখো বাবা মেয়েটা কতো সুন্দর
-দেখ ভাই মেয়েটা অনেক ভালো
এই সেই নানান মেয়েদের গুণকীর্তন করতে থাকবে।
এদিকে রাত দেড়টা বাজে রুহির সব পড়া শেষ। এখন সে বসে বসে ভাবছে কি করবে? কালতো আবারো ইরাদের ক্লাস আছে। সে সাবজেক্টটা বোধহয় একটু পড়ে নিলে ভালো হয়, যাতে আর কোনভাবে তার সামনে পড়ায় আটকাতে না হয় এবং লজ্জা পেতে না হয়।
খুব গভীর মনোযোগ দিয়ে বই খুলে পড়তে শুরু করেছে। এমন সময় তার মোবাইলে মেঘার ফোন আসে।
-আসসালামুয়ালাইকুম আপু কেমন আছো?
-আলহামদুলিল্লাহ আমি ভালো তুই কেমন আছিস?
-আমিও ভালো। ঘুমাওনি যে ?আজকে রেস্ট করো তুমি
-হ্যা ঘুমাবো কিন্তু আমার ছোট্ট খুকি এত কষ্ট করছে, তাই আমার খুব খারাপ লাগছে।
-আরে না না আপু কষ্টের কি আছে? আমি তো এভাবেই আজকে রাতে জেগে পড়তাম।
-দুলাভাইয়ের এখানে থাকাতে আরো ভালো হলো তুমি একটু রেস্ট করতে পারলে।
-রেস্ট কি হয় রে? আমিতো টেনশনে শেষ।
-আপু তুমি টেনশন করো না কারণ ডক্টর ইরাদের মতন একজন ডক্টরের হাতে দুলাভাই এর অপারেশন হয়েছে। উনি স্বনামধন্য একজন ডক্টর, সব জায়গায় উনার চর্চা যে উনার হাতে কোনো পেশেন্ট আলহামদুলিল্লাহ এখনো মারা যান, দুলাভাই খুব শীগ্রই সুস্থ হয়ে যাবেন।
ভেতর থেকে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে মেঘা বললো,
-তুই রাতে খেয়েছিস।
-আমি খেয়েছি। তুমি খেয়েছ ?
-হ্যাঁ,
– আপু, দিবা পড়তে বসছে?
-ও পড়তেছে।
-ঠিক আছে আমি তাহলে রাখি। তুমি জলদি ঘুমাও তো
– ওকে আদর তুই ও ঘুমা।
রুহি মেঘা সম্পর্কে খালাতো বোন হয়। কিন্তু তাদের সম্পর্ক আপন বোনের মতোই, রুহি আর মেঘার মা দুজন জমজ বোন ছিলেন আনোয়ার বেগন আর মনোয়ারা বেগন।
বিয়ের অনেক বছর পরেও রুহুর মার কোল জুড়ে কোন সন্তান আসেনি। তখন দুই মায়ের একটি মেয়ে ছিল মেঘা, প্রচুর আহ্লাদে বাবারা ও মায়েরা তাকে বড় করেছেন।
মুখে যা চাইতো তাই তাকে এনে দেওয়া হতো।
একে তো ধনী পরিবারের মেয়ে। আর উপরে এতটা আহ্লাদী। রাগ,জেদ তার নাকের ডগায় থাকতো। ছোট থেকেই যা পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা করতো তা নিয়েই ছাড়তো যে করেই হোক।
মেঘার ১৪ বছরের ছোট রুহি। এত বছর পর মেঘার খালা অর্থাৎ রুহির মার কোল জুড়ে ছোট্ট রুহি আসে। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে, যেদিন রুহির জন্ম হয় তার পরের দিনই তার মা মারা যায়। তখন থেকেই মেঘার মা মনোয়ারা বেগম রুহিকে নিজের মেয়ের মতন করে বড় করেছেন। রুহির বাবাও নিজের মনে পাথর চাপা দিয়ে সিলেটেই নিজের মেয়েকে খালার হাতে তুলে দিয়েছিলেন। কারন সে চিটাগাংয়ের থাকতেন, চিটাগাং এর এমপি রুহির বাবা সালাম সাহেব।
দেশের উন্নয়নের জন্য সে সবসময়ই ব্যাস্ত থাকতেন, যার স্ত্রীকেও ঠিক মতো সময় দিতে পারতেন না, আর এখন মেয়েকে ও ঠিকভাবে সময় দিতে পারবেন না, বড় করতে পারবেন না, তা তিনি ভালো করে জানতেন। সে নিজের স্ত্রী আনোয়ারা বেগমকে এতই ভালোবাসতেন যে এই কারনে আর কোনদিন সে বিয়ে করেননি।
আজকে রাতে ইরাদের বাসায় চাচি থাকছেন আর আরিফ নিশ্চিত সকালে আবার চলে আসবে তাই ভোরবেলা আযানের আগে ইরাদ বাসা থেকে বের হয়ে যায়। যাতে চাচি ওকে আটকে এসব কিছু বলতে না পারে। এবং মোবাইলটাও বন্ধ করে রাখে।
সকালে ইরাদ মসজিদ থেকে নামাজ পরে হসপিটালে চলে যায়।
এদিকে সকাল ১১টার দিকে আরিফ ঘটকের থেকে ছবি নিয়ে ইরাদের সাথে দেখা করার জন্য মেডিকেল কলেজে যায়, ক্লাসের বাইরে আরিফ গিয়ে দেখলো ও ক্লাস নিচ্ছে আর সব ছেলেমেয়েরা ক্লাস করছে। এদিকে রুহি যে পলক ও ফেলছে না, এক ঘোরে ইরাদের দিকে তাকিয়ে আছে এই জিনিসটা আরিফ বাইরে থেকেই লক্ষ্য করেছে, রুহি অনেক সুন্দরী একজন মেয়ে যে কারোই তার দিকে চোখ যাবে স্বাভাবিকভাবে আর এইজন্য ঠিক আরিফ ও তাকে খেয়াল করেছে
ক্লাস শেষে আরিফ কে দেখে ইরাদ বলে,
– তুই আজকে অফিসে যাসনি?
– নাহ যাই নি, তুই চল এখন
– কোথায়?
– তোর কেবিনে চল কথা আছে
কেবিনে গিয়ে ইরাদের কাছে অনেক গুলো মেয়ের ছবি দিয়ে আরিফ বললো,
– মেয়ে পছন্দ কর,
ইরাদ সব গুলো মেয়ের ছবি দেখে আরিফকে বললো
-এখানে সব গুলো মেয়ের বয়স ২২-২৩ এর মধ্যে হবে। তুই জানিস না আমার বয়স কতো? এই বাচ্চা মেয়েদের ছবি কেনো নিয়ে এসেছিস?
– আরে বিয়ের জন্য কোনো বয়স হয় না, দুই জন প্রাপ্ত বয়স্ক হলেই হয়।
– নাহ হয় না, হাসবেন্ড ওয়াইফ ৫-৬ বছরের গ্যাপ পর্যন্ত পার্ফেক্ট এতো গ্যাপে একদম ১ জেনারেশন গ্যাপ হয়ে যায়, আর আন্ডারস্টান্ডিং এ সমস্যা হয়।
এদিকে ইরাদ যখন ক্লাস শেষ করে বেড় হয় তখন সে ভুলে নিজের মোবাইল রেখে চলে যায় ক্লাসে এবং রুহি তা দেখে, সে সময়ই রুহি ফোনটা নিয়ে ইরাদের কেবিনে যায়।
আরিফ ও ইরাদের কথোপকথন এর মাঝে রুহি নক করে
ইরাদ- আসুন
রুহিকে ভেতরে আসতে দেখে আরিফ, সামনাসামনি দেখে মেয়েটাকে আরিফের পছন্দ হয়ে যায় ইরাদের জন্য। কিন্তু রুহির আসল পরিচয় ইরাদ বা আরিফ ওরা কেউই জানে না আর রুহিও জানে না ইরাদের জীবনের ঘটে যাওয়া ঘটনা
(চলবে…)