ফুলসজ্জা সিজন ২ পর্ব ৩
লেখিকাঃ #অনামিকা_ইসলাম “অন্তরা”
. . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . .
বাসা থেকে বেশ ক্ষাণিক’টা দুরে গিয়ে আবির থামে। নীলিমা তখনও দৌঁড়াচ্ছে। নীলিমার জন্য দাঁড়িয়ে ছিল আবির, তখনি আবিরের বাবার ফোন। কলটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে বলে উঠে-
” এভাবে রাগ দেখিয়ে হনহনিয়ে এক কাপড়ে বাসা থেকে বের হয়ে গেলি, তো বউয়ের কাপড়-চোপড় কেনার জন্য টাকা কি কিছু আছে সাথে?”
উফফ্! বাবা আমি ভুলে গিয়েছিলাম। প্লিজ বাবা আদিবা আপুকে ফোনটা দাও। উতলা কন্ঠে আবিরের জবাব।
এত উতলা হতে হবে না। আদিবা আলমারি থেকে কাপড়-চোপড় বের করছে। তুই মোড়ে একটু দাঁড়া।
ঠিক আছে, বাবা! রাখি…..
আবির কল রেখে পাশে নীলিমার দিকে তাকায়। নীলিমা এতক্ষণে ওর কাছে এসে পৌঁছেছে আর বড় বড় নিঃশ্বাস ফেলছে। আবির সেদিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে নীলিমাকে, কি হলো হাফাচ্ছ কেন?
নীলিমা:- আপনার জন্য’ই তো….
আবির:- আমার জন্য???
নীলিমা:- তা, নয়তো কি? এভাবে কেউ দৌঁড়ায়?
আবির নীলিমার পা থেকে মাথা পর্যন্ত ভালো করে দেখে প্রশ্ন করে, উচ্চতা কত?
নীলিমা:- ৫ফিট, দেড়…..
আবির:- এই জন্য’ই তো…….
নীলিমা:- কি?
আবির:- দৌঁড়াচ্ছ তুমি, আমি নয়।
নীলিমা:-…(মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে)
মিনিট পাঁচেক পর সেখানে উপস্থিত হয় আবিরের বোন আদিবা। নীলিমার হাতে কাপড়ের ব্যাগটা দিয়ে আবিরের হাতে কিছু টাকা তুলে দেয়। অতঃপর বিদায় নেয় আদিবা……
আরো মিনিট দশেক হেঁটে তবেই বাসস্টপে পৌঁছতে হবে ওদের, কারণ এখানে গাড়ি-ঘোড়া পাওয়া যায় না। তাই আবির আবারো হাঁটা শুরু করলে পিছন দিয়ে দৌঁড়ানো শুরু করে নীলিমা। কিছুদুর গিয়েই থেমে যায় আবির। ফিরে তাকায় নীলিমার দিকে। নীলিমা দৌঁড়ে এসে আবিরের সাথে একত্রিত হলো।
দাও, ব্যাগটা আমার কাছে দাও।
নীলিমা হাত বাড়াতেই আবির ব্যাগটা নিয়ে নেয়। তারপর গম্ভীর কন্ঠে বলে, এবার হাঁটো….. পিছনে যাতে না পরো।
নীলিমা:- আজ ছোট বলে…..
আবির মুচকি হেসে পাশে ফিরে তাকায়। নীলিমা তখন আবিরের সমানে সমানে থাকার জন্য দৌঁড়াচ্ছে রীতিমত।
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বাড়ি থেকে বের হলেও প্রচন্ড জ্যামে আটকে থাকার কারনে আবির নীলিমাকে নিয়ে সন্ধ্যা ৬টায় ঢাকায় নিজ বাসায় পৌঁছে। ক্লান্ত আবির ব্যাগটা আলমারির ভিতর ঢুকিয়ে রেখে বিছানায় ধপাস করে শুয়ে পরে। এদিকে নীলিমা কৌতূহলী দৃষ্টিতে রুমের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে তাকাচ্ছে ঠিক যেমনটা রাস্তায় করেছিল। জীবনের প্রথম শহরে এসেছে, তাই অবাক দৃষ্টিতে বিশ্ব রোডের নিচে দাঁড়িয়ে ঘুরঘুর করছিল নীলিমা। চালককে ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে আবির নীলিমার এ হেন আচরণ দেখে মিটিমিটি হাসছিল। নীলিমার তাতে কোনো খেয়াল নেই। ও তখনও গোল হয়ে যাওয়া রাস্তার দিকে ঢ্যাব ঢ্যাব করে তাকিয়ে। কাছে গিয়ে ছুঁয়ে দিতেই হুশ হয় নীলিমার। আরেকবার এভাবে ঘুরঘুর করতে গিয়ে গাড়ি চাপা পরছিল, অল্পের জন্য বেঁচে গেছে। ভাগ্যিস, আবির টান মেরে কাছে নিয়ে আসছে।
এটা রুম, বিশ্ব রোড না। ঘুর ঘুর করা রেখে, ফ্রেশ হয়ে আসো। আবিরের কথায় ঘোর কাটে নীলিমার। যাচ্ছি বলে দরজা দিয়ে বাহির হয়ে আরেক বাসার রুমে প্রায় ঢুকে পরছিল, দরজার সামনে থেকে আবির গিয়ে নীলিমাকে টেনে আনে। তারপর ওয়াশরুমের কাছে নিয়ে যায়।
আবির:- এটা ওয়াশরুম, আর যেখানে ঢুকছিলা ঐটা বেডরুম। সদ্য বিবাহিত এক দম্পতি ঐখানে ভাড়া থাকে।
নীলিমা:- আসলে আমি জানতাম না…(মন খারাপ করে)
আবির:- ইটস ওকে।
নীলিমা:- আপনিও কি এখানকার ভাড়াটিয়া???
ফিরে তাকায় আবির। একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলে, এটা আমার বাবার ফ্ল্যাট বাসা। কিনে ভাড়া দিয়ে রাখছে।
সারাদিনের জার্নি,
ক্লান্ত শরীর নিয়ে আবির কিচেনে যেতে পারবে না বলে বাহির থেকে খাবার কিনিয়ে আনল। বিরিয়ানির প্যাক। নীলিমার হাতে একটা দিয়ে আবির খাওয়া শুরু করল। নীলিমা ঢ্যাব, ঢ্যাব করে আবিরের দিকে তাকিয়ে আছে। আবিরের তাতে কোনো খেয়াল’ই নেই। পানি খেতে বোতল নেয়ার সময় হাত বাড়ালেই আবির নীলিমাকে আগের মতই বিরিয়ানির প্যাক হাতে নিয়ে দাঁড়ানো অবস্থায় দেখতে পায়।
আবির:- কি হলো? দাঁড়িয়ে আছ যে? খাবে কখন?
নীলিমা:- এখন।
আবির:- হুম, বসো….
নীলিমা খেতে খেতে আবিরকে প্রশ্ন করে, আপনার বাবার তো মাশাআল্লাহ অনেক সম্পত্তি আছে। তাহলে আপনি এত কিপ্টা কেন?
What? বিস্মিত চোখে আবির নীলিমার দিকে ফিরে তাকায়। কিপ্টা মানে? কি বলতে চাচ্ছো তুমি?
নীলিমা ভয়ে ঢোক গিলে। তারপর আমতা আমতা করে বলে, না মানে আপনার বাসায় প্লেট নেই তো তাই বলছিলাম।
অবাকের চূড়ান্ত সীমায় আবির, কে বলল প্লেট নেই? আমার যতগুলো খাবার প্লেট আছে, ততগুলো প্লেট কোনো ব্যাচেলর ছেলের নেই।
তাহলে এসবে খান কেন? নীলিমা ওর হাতে রাখা বিরিয়ানির প্যাকটা দেখিয়ে বলে। এতক্ষণে আবির আসল ঘটনা বুঝতে পারে। কোনো রকম হাসি আটকিয়ে বলে, এই শখ হলো আর কি! তাই খেলাম আজকে…..
খাওয়া দাওয়া শেষে আবির নীলিমাকে রুমে বসতে বলে, উপরে ভাড়াটিয়াদের রুমে যায়।
আবির:- আসব?
রিতু:- জ্বি, ভাইয়া আসুন।
আবির:- আড্ডা দিচ্ছিলে নাকি?
মিতু:- খেয়েছি তো, তাই একটু…..
হেনা:- ভাইয়া বসুন।(চেয়ার টেনে দিয়ে)
আবির:- আসলে তোমাদের তো বলেছি’ই সকালে ফোনে তোমাদের ভাবির সম্পর্কে। ও আসছে আজকে আমার সাথে। এখন তোমরা কি সিদ্ধান্ত নিলা?
রোসা:- ভাইয়া আমি তো বেডে একা একা’ই থাকি। ভাবি থাকতে পারবে। আমার কোনো সমস্যা হবে না।
আবির:- ওকে, তোমরা তাহলে পড়াশুনা করো। পরে না হয় ওকে দিয়ে যাব।
আবির রুমে চলে আসল।
নীলিমাকে ভালো ভাবে বুঝিয়ে শুনিয়ে কিছুক্ষণ পর ওদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে চলে আসল।
পরদিন রাত্রিবেলার ঘটনা___
ডিনার করে আবির একটু বাইরে গিয়েছিল, বাইরে থেকে এসে দেখে নীলিমা মুখ ভার করে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। প্রশ্ন করে আবির, কি হলো? মন খারাপ? মন খারাপ করে উত্তর দেয় নীলিমা, আমি ওদের সাথে থাকব না।
আবির:- কিন্তু কেন?
নীলিমা:- ওরা কিসব কথা বলে, হাসাহাসি করে। আমার ভাল্লাগে না।
আবির:- ওরা পড়াশুনা করে একটু মজা করে। আর কথা কিন্তু তুমিও কম পারো না। তাই প্লিজ, আর কোনো অজুহাত নয়, চলো।
আবির নীলিমাকে একরকম জোর করেই উপরে রুমে দিয়ে আসে। রুমে এসে শুইছিল আবির। প্রায় ঘন্টাখানেক বিছানায় ছটফট করে উঠে বসে আবির। কোনো ভাবেই ভালো লাগছে না দেখে ছাদে যায়। ছাদ থেকে ফেরার সময় অনেক হাসাহাসির আওয়াজ আসে রুম ঐ মেয়েদের রুম থেকে। কিসের এত হাসি এটা বলার জন্য দরজার কাছে যেতেই আবির থমকে যায়। কিসব উল্টাপাল্টা প্রশ্ন করছিল ওরা নীলিমাকে।
রোসা:- তোদের একটুও লজ্জা নেই? এই ছোট্ট মেয়েকে কি সব আজেবাজে প্রশ্ন করছিস তোরা?
রিতু:- আজেবাজে নয়, তাই না ছোট আপু? আসো, বসো এখানে।
মিতু:- আচ্ছা, নীলিমা এবার একটু বলো তো বাসর রাত্রে কি হয়েছিল তোমাদের মাঝে?
নীলিমা:- কি হবে?(বোকার মত)
হেনা:- মানে কিভাবে শুরু করছ….?!!!
রিতু:- হ্যাঁ, হ্যাঁ! বলো বলো….
নীলিমা:- কি শুরু করব? আমি ফ্লোরে ঘুমাইছি, আর ওনি খাটে।
মিতু:- ইয়া আল্লাহ! তোমরা আলাদা ঘুমিয়েছিল? তোমাদের হয়নি…?
নীলিমা:- আপু আমি আপনাদের কথা বুঝি না। আর আমার ঘুম পেয়েছে। ঘুমাবো…
নীলিমা উঠতে গেলে ওকে টান দিয়ে হেনা বসিয়ে দেয়। তারপর আবারো প্রশ্ন করে, বলছি তোমার বর কি তোমার শাঁড়ির আচল ধরে টান দেয়নি?
বোকা মেয়ে লাফিয়ে উঠে বলে- হ্যাঁ, আপু! দিয়েছে তো। কালকে সকালে ওনি আমার আঁচল ধরে টান দিয়েছিল।
সবাই একসাথে বলে উঠল, ওয়াও!
রোসা বিছানা থেকে লাফিয়ে উঠে বলল, ওরে কেউ আমারে মাইরালা।
চুপ কর এলিয়েন! শুয়ে আছিস, শুয়ে থাক। কথা বাড়াইস না। পাশ থেকে রিতুর জবাব।
তোরা কি মানুষ নাকি অন্য কিছুরে? এই ছোট বাচ্চাটার পিছনে কেন লাগছিস? কি লাভ তোদের এসব করে?(রোসা)
আমরা যা ইচ্ছে তাই করব। তুই কেন শুনছিস এসব? তুই কানে তুলা দিয়ে শুয়ে থাক। রোবটের বাচ্চা রোবট….(রিতু)
রেগে যায় রোসা। বিছানা থেকে উঠে, নীলিমার হাত ধরে। বোন তুমি ভাইয়ার রুমে থাকো, ঐটা বেশ নিরাপদ। তবুও এখানে আর এসো না। কথাটা বলে দরজা খুলে রোসা। দরজার সামনে আবিরকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে নীলিমার সাথে সাথে কেপে উঠে রোসাও। কিছু একটা বলতে যাবে রোসা তার আগেই নীলিমার হাত ধরে টানতে টানতে ওকে রুমে নিয়ে যায় আবির। রাগান্বিত গলায় বলা শুরু করে,
রেগে গিয়ে শাঁড়ির আঁচল ধরে টান দিয়েছিলাম, সেটাও ওদের বলতে হলো। বলি তোমার কি নূন্যতম কমন সেঞ্ছ বলতে কিচ্ছু নাই? মন খারাপ করে নীলিমার জবাব, ওরা আমায় জিজ্ঞেস করছে তাই বলছি……
দাঁতে দাঁত চেপে আবির বলে, তাই বলে এসব কথাও তুমি বলে দিবে? গোপনীয়তা বলতে কি কিচ্ছু বুঝো না তুমি? মাথা নিচু করে নখ চিমটাতে চিমটাতে নীলিমার জবাব, আমি তো মিথ্যে কিছু বলিনি। তারপরও ধমকাচ্ছেন কেন?
ধমকাবো না তোমায়, চুমু দিব। ওরা ব্রেন ওয়াশ করছে, আর তুমি কি না….। ভুলটা আমার’ই হয়েছে। যাক।
ড্রিম লাইট’ টা জ্বালিয়ে বিছানার মাঝখানে কোলবালিশ রেখে তার একপাশে নীলিমাকে শুতে বলে আবিরও শুয়ে পরে। মুখটা কালো করে কিছুক্ষণ পর নীলিমাও শুয়ে পরে।
পরের দিন ক্লাস টেনের একসেট বই আর প্রতি বইয়ের জন্য নোট কিনে আনে আবির। বই দেখে আবিরের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে নীলিমা, এগুলো আমার?
হ্যাঁ, তোমার। তোমায় পড়াশুনা করতে হবে এখন থেকে। বাসায় বসেই পড়বা, পরীক্ষার সময় আমিই নিয়ে যাব তোমাদের স্কুলে। চোখগুলো ছলছল করে নীলিমার। মনে হচ্ছে এখনি কেঁদে দিবে।আর হ্যাঁ, এখন থেকে কথা একটু কম বলার চেষ্টা করবা। অযথা বকবক না করে বইয়ে মনোযোগ দিবা। কাজ হবে যেটা। নীলিমা আচ্ছা বলে মাথা ঝাঁকায়।
৬,৭দিন পরের ঘটনা____
আবির কলেজ থেকে ফিরে। বাসায় ফিরে আবির নীলিমাকে কিছুক্ষণ পর পর পেটে হাত বুলাতে দেখে। কিছুটা অবাক হয় আবির। প্রশ্ন করে নীলিমাকে, নীলিমা তোমার শরীর খারাপ? মাথা ঝাঁকিয়ে না বলে নীলিমা।
রাত্রে খাবার খেয়ে শুয়েছিল আবির। পাশ থেকে নীলিমা বলে উঠে, শুনছেন! আমি পেটে হাত দিয়েছিলাম কেন জানেন?
মাথা উঁচু করে নীলিমার দিকে তাকায় আবির। প্রশ্ন করে, কেন?
উত্তর দেয় নীলিমা, দেখছিলাম বাবু আছে কি না পেটে।
চমকে উঠে আবির, What? কিসের বাচ্চা? কার বাচ্চা?
নীলিমার উত্তর, কার আবার আমার। বিয়ে হয়েছে বাচ্চা হবে না???
কিছুটা ঘাবড়ে গিয়ে প্রশ্ন করে আবির, বিয়ে হলেই বুঝি বাচ্চা হয়?
পন্ডিতের মত জোর গলায় বলে উঠে নীলিমা- না, না! শুধু বিয়ে হলেই হবে না। এক বিছানায় থাকতেও হয়। আমার এক ভাবিরও তো বাচ্চা হয়ছে বিয়ের পর। ওনিও ভাইয়ার সাথে একবিছানায় থাকত। তার কয়দিন পরেই ওনার বমি হতো, মাথা ঘুরত। এরপরে লাবিব হয়েছে….
আমিও তো গতকাল বমি করছি, আমারও তো গাড়ি থেকে নামার সময় মাথা ঘুরছে।(নীলিমা)
নীলিমা, কাল তুমি জার্নি করছিলা। আমার সাথে ঘুরতে গিয়েছিলা। তাই…..
পুরো কথা বলতে পারেনি আবির, তার আগেই গড় গড় করে বলতে থাকে নীলিমা, আমি মোটেও গাড়িতে উঠলে বমি করি না, মাথাও ঘুরে না। আমার কেন জানি মনে হচ্ছে আমার পেটে বাবু আছে।
বাচ্চা মেয়ের কথায় দম ফাটানো হাসি আসছিল আবিরের। কিন্তু হাসতে গেলে কারন বলতে হবে
পুচকিটাকে। আবির চাচ্ছে না বাচ্চা মেয়েটার মগজে পোকা ঢুকাতে। চাচ্ছে না বলেই হাসি আটকানোর জন্য অন্য পাশে ঘুরতেই নিচে পরে যায়…..
ছোট্ট একটা হাত আবির ওর চোখের সামনে দেখতে পায়। আনমনেই মুখে হাসি ফুঁটে উঠে ওর। হাতটা ধরেই আবির বিছানায় উঠে, শুয়ে পরে। পাশাপাশি বালিশে দুজন শুয়ে আছে। নিশ্চুপ আবির পিচ্চি নীলিমার হাসি দেখছে। যখন থেকে পরে গেছে সে, তখন থেকেই হাসার শুরু। একটু একটু করে হাসি বাড়তেই আছে। একপর্যায়ে শুয়া থেকে উঠে বসে হাসতে থাকতে। হাসতে হাসতে পেট ব্যথা হয়ে গেছিল বোধ হয়, তাই ওমাগো করে পেটে হাত দিয়ে মাঝখানে বিরতি নিয়েছিল। এখন আবার হাসার শুরু করছে। হাসতে হাসতে পাশে রাখা কোলবালিশ জড়িয়ে ধরছে আর বলছে- ওমাগো! এতবড় হয়েও পরে যায়….!!!
চুপ করো! ভদ্রতার রেশ মাত্র নেই ভেতরে। কারো বিপদ থেকে মানুষ হাসে??? অনেকটা ধমকের স্বরেই কথাটা বলে আবির। চুপ হয়ে যায় নীলিমা।
অভিমানে নাক, গালটা ফুলে গেছে নীলিমার। কিছুক্ষণ শুয়ে থেকে বিছানা থেকে উঠে চলে যায় সে। প্রথমে আবির ভাবছে হয়তো ওয়াশরুমে গেছে কিন্তু ২৫ মিনিট অতিবাহিত হওয়ার পরও যখন নীলিমা ফিরেনি তখন শুয়া থেকে উঠে, কি করছে নীলিমা এটা দেখার জন্য ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়াই। নিশ্চুপ নীলিমাকে ওয়াশরুমের ঠিক পাশেই মাথা নিচু অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখতে পায়। কাছে যায় আবির। ঠোঁট বাকিয়ে বালিকা নিঃশব্দে মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে আছে নীলিমা, সাথে নখ দিয়ে নখও কাটছে। মৃদু হেসে কাছে যায় আবির। অনেক দিন হলো পিচ্চিদের কান্না দেখে না, আজ সেই কান্না দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে। খুব ইচ্ছে হচ্ছে পিচ্চির ঠোঁট বাকানো কান্না দেখতে। আর তাইতো আদর করে কাছে টানার পরিবর্তে ধমক দেয় আবির- কত করে বলছি নখ দিয়ে নখ কাটবে না, তারপরও এরকম করছ।আমার কথা কি কানে যায় না? কেঁপে উঠে নীলিমা। ছোট বাচ্চাদের মতই মাথা উঁচু অবস্থায় থেকে’ই চোখটা ঘুরিয়ে আবিরের দিকে নেয়। আবিরের রাগান্বিত দৃষ্টি দেখে আবার নখ কাটায় ব্যস্ত হয়ে পরে নীলিমা, সেই সাথে ঠোঁট বাকিয়ে নিঃশব্দে কান্না। এক টানে বুকে নিয়ে আসে আবির নীলিমাকে। পিঠে, মাথায় হাত বুলাতে থাকে। আদর পেয়ে থামার পরিবর্তে আহ্লাদী আরো ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে।
দিনগুলো এভাবেই কাটছিল হাসি আনন্দে, দুষ্টু-মিষ্টি খুনসুটিতে।
সেদিন ছিল বুধবার___
নীলিমার মনটা প্রচন্ড খারাপ। কারণ, পরদিনই ওর স্কুলের শেষ দিন। অথচ ও যেতে পারছে না। নীলিমাদের ব্যাচের বিদায়ী অনুষ্ঠান। যেহেতু বিদায় অনুষ্ঠানটা ফেব্রুয়ারির ২১তারিখ স্থির হয়েছে, তাই সব মেয়েরা আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিল সবাই মিলে একই রঙের শাঁড়ি, চুড়ি আর চুলগুলো খোঁপা করে তার সাথে বেলীর মালা পরে স্কুলে সমবেত হবে। নীলিমার মন খারাপ কারন একদিকে ও ঢাকায় আছে, অন্যদিকে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও ও যেতে পারবে না। কারণ, আবিরের কলেজে নাকি কি পরীক্ষা চলছে। আর না যাওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ, ও শাঁড়ি পরতে পারে না। ও বাড়িতে আবিরের বোন আদিবা পরিয়ে দিয়েছিল, কিন্তু এখানে তো তেমন কেউ নেই। মন খারাপ করে নীলিমা যখন সোফায় বসে তখন তার পাশে এসে আবির বসল।
মন খারাপ??? **নতুন নতুন রোমান্টিক গল্প পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: “নিঃস্বার্থ ভালোবাসা”**
মাথা নাড়ে নীলিমা। প্রশ্ন করে আবির, মন খারাপের কারণটা কি জানা যাবে? নীলিমা জানায়, কালকে বিদায় অনুষ্ঠান হবে আমাদের স্কুলে অথচ আমি যেতে পারব না। প্রশ্ন করে আবির, যেতে পারবে না মানে? স্কুলের শেষ দিন আর তুমি যাবে না?! কেন???
জবাব আসে, আপনার স্কুলে পরীক্ষা। কালতো ১১টার সময় অনুষ্ঠান শুরু হবে।
পরীক্ষা শেষ। মন খারাপের কিছু নেই, গাড়ি আছে তো! তো আর সমস্যা কী? সকাল সকাল আমরা রওয়ানা দিয়ে দিব।
—তারপরও যেতে পারব না।(নীলিমা)
—- কেন?(আবির)
—– ওরা সবাই লাল সবুজের শাঁড়ি, লাল চুড়ি, খোপায় বেলীর মালা পরে আসবে।আমার তো আর ওদের মত এতকিছু নেই।(নীলিমা)
বোকা মেয়ে! এই জন্য কেউ মন খারাপ করে? আবির বসে থেকেই ফোন করে ফোন করে ওর বন্ধুর কাছে। বন্ধুকে নীলিমার শাঁড়ি, চুড়ি আর বেলী ফুলের মালার কথা বলে ফোনটা রেখে নীলিমার দিকে তাকায়। নীলিমা ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে আবিরের দিকে তাকিয়ে।
ব্যস! বন্ধুকে বলে দিয়েছি। ও নিয়ে আসবে। যেহেতু ও তোমাকে দেখেছে তাই ঠিকঠাক মাপেই সবকিছু কিনবে, কোনো সমস্যা হবে না। এখন চলো তো! খিদে পেয়েছে খুব!
আবির-নীলিমা খাওয়া দাওয়া করে শুয়ে বসে থেকে, আসর নামাজটাও আদায় করে নিয়েছে। কিন্তু বন্ধুর ফেরার কোনো নাম নেই। আবির ফোন করে বন্ধুকে। জিজ্ঞেস করে, কিরে! শাঁড়ি কি তৈরি করে আনছিস নাকি? এত দেরী কেন হচ্ছে? উত্তর দেয় জোবায়ের, ঠিক’ই ধরেছিস। তৈরি’ই করছি, তাই লেইট হচ্ছে। তবে সেটা শাঁড়ি নয় ব্লাউজ। মেচিং করে কাপড় কিনে বানিয়ে তবেই ফিরছি।
“এইরে! আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম। বলেই জিহ্বায় কামড় দেয় আবির।”
সন্ধ্যা ৭টায় জোবায়ের শাঁড়ি, চুঁড়ি, বেলির মালা, সেফ্টিপিন আর অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস আবিরের বাসায় পৌঁছে দিয়ে যায়।
রাত্রি ১০টার দিকে খাওয়া দাওয়া করে একটু শুয়েছিল আবির। তখন’ই ডাক দেয় নীলিমা। শুনছেন…..!!!
আবির ফিরে তাকায় নীলিমার দিকে। কিছু বলবে? নীলিমা মাথা নিচু করে জবাব দেয়, আমি শাঁড়ি পরতে পারি না। বিছানায় উঠে বসে আবির, পরতে পারো না মানে? আমাদের বাসায় কিভাবে পরেছিলা? মন খারাপ করে জবাব দেয়, ঐটাতো আমি এমনিই পরেছি। পরে দেখলেন না পরে গিয়েছিলাম? তারপর আদিবা আপু পরিয়ে দিয়েছিল……
কিন্তু এখন তো ওরা নেই!(আবির)
—- এজন্য’ই বলছিলাম দরকার নেই যাওয়ার। আমি না হয় পরে ১দিন গিয়ে এডমিট কার্ডটা নিয়ে আসব।(মন খারাপ করে নীলিমার জবাব)
ধমক দেয় আবির!
আবিরের ধমকে কেঁপে উঠে নীলিমা।
—যাও শাঁড়ি নিয়ে আসো।
কোনো কথা না বলে তাড়াতাড়ি আলমারি থেকে শাঁড়ি বের করে আবিরের দিকে এগিয়ে দেয়।
—– শুধু শাঁড়ি কেন? শাঁড়ির সাথে কি আর কিছু পরতে হয় না নাকি?
এবারো নীলিমা তাড়াতাড়ি কাপড় বের করে এনে আবিরের সামনে দাঁড়ায়। আবির মুখে দুষ্টু হাসির রেখা টেনে বলে, ওগুলোও কি আমি পরিয়ে দিব নাকি? এভাবে এগুলো আমার দিকে এগিয়ে দিচ্ছ যে? লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে নীলিমা। মুখটা কেমন লাল হয়ে গেছে। নীলিমার লজ্জা পাওয়া দেখে আবির রসিকতার স্বরে বলে, ওহ! ম্যাডাম তাহলে চাচ্ছে আমি এগুলো পরিয়ে দেই! ওকে, দাও। আবির মুখে দুষ্টু হাসি নিয়ে হাত বাড়াতেই আবিরের হাত থেকে শাঁড়ি নিয়ে দৌঁড় দেয় নীলিমা। আবির হাসতে হাসতে বিছানায় শুয়ে পড়ে। মিনিট দশেক পর চেঞ্জ করে পরণে কোনো রকম শাঁড়িটা প্যাঁচিয়ে রুমে আসে নীলিমা। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে প্রায় ঘন্টাখানেক ট্রাই করেও নীলিমা পারেনি ঠিক করে কুঁচি দিতে। না পেরে আয়নার দিকে রাগে চিরুনি ছুঁড়ে মারে। আড়চোখে সবটা দেখছিল আবির। স্মিতহাস্যে এবার বিছানা থেকে নেমে নীলিমার কাছে যায়। আয়নার ভিতর দিয়ে আবিরকে দেখতে পেয়ে মলিন মুখে ঘুরে তাকায় নীলিমা।
আমাকে দাও, আমি পরিয়ে দিচ্ছি। হাসি আটকিয়ে অনেকটা স্বাভাবিক ভঙ্গিতে আবির কথাটা বলে।
আহারে! মেয়েটা ঠিক আমার মতই,
সহজ সরল বোকা সোকা। তাইতো দুষ্টু আবিরের এক কথায়’ই রাজি হয়ে যায়। এগিয়ে যায় আবিরের দিকে। সুন্দর করে কুঁচি তুলে নীলিমার দিকে তাকায়।
বোকা নীলিমা কিছু না বলে দাঁড়িয়ে আছে। প্রশ্ন করে আবির, গুজে দেই???
নীলিমা মাথা নেড়ে “হ্যাঁ” সূচক সম্মতি জানায়। আবিরের চোখে মুখে রাজ্য জয়ের হাসি। কোনো কথা না বলেই কুঁচিগুলো গুজে দিতে দিতে আবির নীলিমার দিকে তাকিয়ে হাসি দেয়। কেঁপে উঠে নীলিমা, তারপরও আবিরের দিকে তাকিয়ে আবিরের সাথে তালমিলিয়ে হাসি দেয়। প্রশ্ন করে নীলিমা, হয়েছে? আবির লক্ষ করেছে লজ্জায় নীলিমার চোখ মুখ কেমন অন্যরকম হয়ে গেছে। বিষয়টা আবির এনজয় করছে। আর তাইতো নীলিমার প্রশ্নের উত্তরে বলেনি, হয়নি! সবেতো প্রস্তুতি ম্যাচ। আবির আবারো শাড়ি নিজ ইচ্ছাতে এলোমেলো করে শাঁড়িতে কুচি তুলতে থাকে। যতবার আবির কুচি গুজে দিচ্ছিল, ততবার’ই শিউরে উঠছিল নীলিমা। পরক্ষণে আবিরের সাথে তালমিলিয়ে অকারণেই হেসে উঠছিল সেও।
এখনো হয়নি? অনেকটা হাফিয়ে উঠে কথাটা বলে নীলিমা। উত্তর দেয়, হ্যাঁ! এদিকটা হয়ে গেছে। এবার উপরে ঠিক করতে হবে। আঁচলটা দাও তো!
নীলিমা আমতা আমতা করে বলে, মামামানে…..?!!!
উত্তর দেয় আবির, সুন্দর করে ভাঁজ করে সেফ্টিপিনে আটকাতে হবে তো। না হলে তোমার বান্ধবীরা হাসাহাসি করবে না তোমাকে নিয়ে? দাও, দাও! দেখি, কিভাবে পরাবো সকালে। নীলিমা কিছু না বলে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। আবির নীলিমার শাঁড়ির আঁচল ভাঁজ করছে আর মুখটিপে হাসছে। আঁচলটা সেফ্টিপিন দিয়ে আটকানোর সময় আবিরের হাত নীলিমার ঘাড় স্পর্শ করলে নীলিমা কেঁপে উঠে। নজর এড়ায় না আবিরের। নীলিমাকে ছেড়ে দিয়ে সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। অনেকটা হিরোর ভাব নিয়ে প্রশ্ন করে, সত্যি করে বলো তো এই যে কুচি তুলে গুজে দিলাম, আঁচল ঠিক করে দিলাম, এতে তোমার কেমন ফিল হয়েছে? মানে তোমার অনুভূতিটা জানতে চাইছি। নীলিমা মাথা তুলে আবিরের দিকে তাকায়। আবির উৎসুক দৃষ্টিতে নীলিমার দিকে তাকিয়ে আছে। কাঁপা কাঁপা গলায় নীলিমার উত্তর, আআআপনি……
আবির খুশি হয়ে বলে, হ্যাঁ আমি…..
আপনি আআমায়…..
হ্যাঁ, বলো আমি তোমায়…….
—- কাতুকুতু কেন দিছেন?(নীলিমা)
ওরে, আমারে কেউ মাইরালা…!!!
কথাটা বলেই ধপাস করে বিছানায় পরে যায় আবির….
.
চলবে____
।
#কোনো গল্পের পর্ব খুজে না পেলে সর্বশেষ পোস্ট কমেন্ট করে জানাবেন।
।
।
।
#আপনাদের উৎসাহ পেলে পরবর্তী পার্ট দিবো। আসা করি সবাই লাইক কমেন্ট করে সাথেই থাকবেন।