###পরগাছা ২য় পর্ব
###লাকি রশীদ
পরদিন সকাল থেকেই বড় ফুপুর দেশে আসা উপলক্ষ্যে মার কাজকর্ম শুরু হয়ে গেছে। আমার ফুপু অনেক আজব প্রকৃতির মানুষ। গরমের দিনে কি পাগলেও লেপ বের করিয়ে রাখে? গায়ে দিবেন না কিন্তু পাশে থাকা চাই। নীতু বলে,এসব কষ্ট দেবার ফন্দি। এতো গরমে এসি কমিয়ে রেখে ছেন আবার ওদিকে লেপ, কাঁথা সাজিয়ে রেখে দিয়েছেন। প্রায় প্রতিবার উনি আসার সময় মা নীতু কে নিয়ে কঠিন মুখে সবকিছু করে।
আমি নীতু কে বলি, আজ আর বের হবো না। তোকে সাহায্য করি চল। ফ্যানের ঝুল ঝাড়লাম,
জানালার গ্ৰীল মুছে ডাষ্টিং করছি…….. নীতু হেসে বলছে তোর বৌ তো অনেক খুশি হবে রে। এতো সুন্দর করে ঘর পরিস্কারের কাজ করছিস। হঠাৎ দেখি বিন্দু এসে নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়েছে যেন ধুলোবালি না লাগে। বললাম কি রে আমাদের সাহায্য করতে এসেছিস? সে আস্তে আস্তে বলে,
মা বকে আমাকে পাঠিয়েছে। মা জিজ্ঞেস করলে বলো,আর কাজ নাই প্লিজ। ও চলে যেতেই নীতু হেসে বলছে, পৃথিবীতে এই পিসই বিন্দু আছে।
বেলা ১১টার দিকে খালা এসে কেঁদে কেঁদে মাকে
বলছে, গিয়ে দেখে মেয়েকে তার স্বামী এত বেশি মেরেছে যে জ্বর উঠে গেছে। অনেক কষ্টে নিজের
কাছে নিয়ে এসেছে। মেয়ে আর যেতে চায় না। মা এবার বলছে,ধনী হোক আর গরীব হোক আল্লাহ কার ভাগ্যে যে কি লিখছে কেউ জানে না। বেশি খারাপ মনে করলে আজ সন্ধ্যায় নিয়ে এসো। আমি পাড়ার ডাক্তারকে দেখিয়ে দিবো না হয়। আমি হেসে বলি, তোমাকে তো এতো বলেও ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া যায় না। অন্য কে নিয়ে যেতে ঠিকই একপা বাড়িয়ে আছো। এবার দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,এরা গরীব মানুষ বাবা। মেয়ে যতোদিন ভালো না হবে, আরেকটা মানুষের খাওয়া যোগাড় করতে মায়ের উপর চাপ পড়বে। তাই মেয়ের সুস্থ্য হওয়াটা অনেক দরকারি।
বড়ফুপু এলে মার ডাক্তার দেখাতে দেরি হয়ে যাবে নিশ্চিত,তাই মাকে জোর করে বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে এলাম। ডাক্তারের কথামতো
টেষ্ট করে রিপোর্টের জন্য বিশাল করিডরে দুজনে অপেক্ষা করছি। মা হঠাৎ বলে উঠল, বিয়ে হলে স্ত্রীকে এমন ভাবে আগলে রাখবি খোকা। তার সুখদুঃখের সাথী হবি। আমি সবসময় দোয়া করি, আমার দুটো ছেলেকে আল্লাহ তাআলা তুমি অনেক ভালো ছেলে, ভালো স্বামী, ভালো বাবা হিসেবে কবুল করো। আমি এবার হেসে বলি, তুমি তো একেবারে বাবা পর্যন্ত বানিয়ে ফেললে। মা মৃদু হেসে বলল,বাবারে সেই দিন দেখবো কিনা কে জানে !!! কালকে রাতে সারাক্ষণ হাতের ব্যথায় কাতর হয়ে ভাবছি, আমার সবকিছু অগোছালো এখনো। একটা বাচ্চাকেও কোনো দিক লাগাতে পারি নি। এতো উঃ আঃ শুনে না পেরে তোর বাবা শেষে তার গামছা কাঁধে বেঁধে দিয়েছে। আমি এবার হেসে বলি, সে তো বাবার ঘুমের সমস্যা হচ্ছিল বলে মনে হয়। দুইজনেই এবার হাসি, কিন্তু মনে ভয় লাগছে সুখের দিনে তুমি থাকবে তো মা?
রিপোর্টের দেরি দেখে ডাইনিং হলে গেলাম। ৩৫০ টাকায় ভাত খাওয়া যায়। কিন্তু কেউ খেতে চাচ্ছি
না। স্যান্ডউইচ ও চা খেয়ে কিছুক্ষণ পর রিপোর্ট নিয়ে চেম্বারে ঢুকতেই বর্ষীয়ান ডাক্তার সব দেখে বললেন,ক্যালসিয়ামের অভাবে ও অন্য আরেক কারণে দুই হাড়ের জয়েন্ট ফাকা হয়ে গেছে। আমাদের দেশের মেয়েরা বাচ্চাদের দুধ খাওয়াতে খাওয়াতে নিজের কথা বেমালুম ভুলে যায়। ভারী কিছু তোলা, ঝুঁকে কাজ করা সব নিষেধ। খাঁটি দুধ পেলে এককাপ দুধ প্রতিদিন খেতে হবে। পেইনকিলার দিয়েছেন তবে একান্ত সহ্যের বাইরে না গেলে খাবার দরকার নেই। সাথে দুইটা ঔষধও খেতে বললেন। একমাস পরে আবার আসতে হবে।
রাতে ডিনারের পর দাঁড়িয়ে থেকে ঔষধ খাইয়ে
এলাম। সকালে মা খুব খুশি হয়ে বলছে, এতো দিন পর খুব আরামে ঘুমিয়েছি রে বাবা। বড়ফুপু পরশু আসবেন বলে বাবা বাজার থেকে কি কি আনবে লিষ্ট করছে। নীতু বললো, একসাথে বেশি বেশি বাজার করার দরকার নেই। উনি খান না খান শুধু রাঁধতে বলবেন। আমাদের খালা আরো দুই বাসায় কাজ করেন। নয়তো উনাকেই দিনরাত
থাকার জন্য রেখে দিতাম।
নির্দিষ্ট দিনে বাবা ও আমি গিয়ে ফুপু কে এয়ার পোর্ট থেকে নিয়ে এলাম। এসেই হুলস্থুল লাগিয়ে দিয়েছেন, গতবারের বিছানার চাদর যে ভেতর থেকে বের করা হয়েছে তা কি ধুয়ে বিছানো হয়েছে? ওয়াশরুমে নতুন বালতি হলেও নতুন মগ
কেন কেনা হয়নি? শাওয়ারের ছিদ্র দিয়ে এতো কম পানি আসে কেন? মা আমাদের পইপই করে নিষেধ করেছে উনাকে কিছু না বলার জন্যে। তাই কেউ কিছু বলছি না। গোসল করে টেবিলে খেতে আসলেন। নয় নয় করে অনেক আইটেম মা রেঁধে রেখেছে। এবার উনি ডাক শুরু করেছেন, সবাই একসঙ্গে খাবো বলে। বিন্দু একবার এসেই রুমে চলে গেছে। আমি বললাম, এগারোটার সময় কিভাবে খাবো ফুপু? রাতে না হয় একসাথে খাবো।
বাবা যথাআজ্ঞা বলে প্লেট নিয়ে বসে গেছে। নীতুর অসাধারণ সহ্যশক্তি ও ধৈর্য্য। ফুপুর ধরারও শক্তি নেই, কি পরিমান বিরক্ত সে ফুপুর আসার আগে ছিল ও এখনও আছে। সে দেখি ২/৩ টুকরো গরুর গোশত তুলে নিয়ে খাচ্ছে । ফুপু গল্প
করে যাচ্ছেন, দেশে আসার সময় এয়ার হোষ্টেস কিভাবে তার সাথে বেয়াদবি করেছে। তার ছেলে যদি সাথে থাকতো তবে তিনি সেই মেয়ের চাকরি খেয়ে নিতেন। আমি আপনমনে শুধু হাসছি, যেখানেই ভদ্রমহিলা যান যেখানেই তার ক্ষমতা দেখানোর চেষ্টা।
আমার বাবা মা কেউই পান খান না। কিন্তু ফুপুর জন্য আনিয়ে রাখা হয়েছে। পান মুখে দিয়েই বলছেন, এবার লাগেজ খোলার পালা। খোকা একটা একটা করে খোলতো বাবা। বিন্দু কোথায় গেল, ওকে আগে ডাক দে। আমি বিন্দুকে আসার জন্য বলতেই ও বলছে, আমি ওখানে যেতে চাই না ছোটভাই। কোত্থেকে অদ্ভুত অদ্ভুত সব কাপড় আনেন, আমি কি এসব পরি না কি? কখন রাগ উঠবে, কি থেকে কি বলবো…… তখন আবার মা বকতে বকতে শেষ করে দিবে। তুমি গিয়ে বলো প্লিজ ও ঘুমিয়ে গেছে।
আমি এবার বলি, তুই সবসময় এতো স্বার্থপর কেন রে? আমার, নীতুর ও মার কি এসব করতে ভালো লাগছে? আমরাও তো বিরক্ত হচ্ছি, উপায় নেই বলেই করছি। বিন্দু এবার বলছে, তোমরা ভাইবোন তো মহান মানুষ। আমি তো এতো ভালো নই। হঠাৎ দুজনেই চেয়ে দেখি,মা দরজায় দাঁড়িয়ে আছে। দেরি দেখে মনে হয় ভেবেছে কিছু একটা গোলমাল হয়েছে। তাই চলে এসেছে। বিন্দুর দিকে তাকিয়ে বলল,কি হলো তোর ফুপু ডাকছেন
শুনতে পাচ্ছিস না? তাড়াতাড়ি দুজন চলে আয়। এবার সে করলার রস খাওয়া মুখ করে এগোচ্ছে।
ফুপু প্রতিবার সবার জন্য কিছু কাপড় নিয়ে আসেন। এবারেও মায়ের জন্য জরি, চুমকি দিয়ে ঠ্যসা একটি শাড়ি এনেছেন। আমি জানি এটাও মা পরবে না। মা সুতি পরলেও অনেক রুচিশীল শাড়ি পরে। নীতুর জন্য একটি ড্রেস ও বিন্দুকে কাফতান টাইপের একটা কিছু দিলেন। আমার ও বাবার জন্য টি শার্ট এনেছেন যদিও বাবা কখনো টি শার্ট পরে না। এবার খুব দামী কিছু বের হচ্ছে এমন ভাব করতে করতে বিশাল সাইজের ৫/৬
টা খোপের ঢাকনাসহ বড় এক ডিসের মতো বের করে মাকে দিয়ে বললেন,নাও বিনু তোমার জন্য অনেক কষ্টে এই মসলার প্লেট এনেছি। তোমার ইচ্ছে মতো পেঁয়াজ, রসুন বাটা এতে রাখতে পারবে।
আর চুপ করে থাকতে না পেরে বিন্দু বলে উঠৈ, এতো বড় এটা ফ্রিজে ঢুকবে তো? সাথে সাথে ই মা সামাল দেয়, কেন ঢুকবে না রে? ডিপফ্রীজে ঢুকাবো। খুব সুন্দর হয়েছে বড়বুবূ। এটা আমার অনেক কাজে আসবে। বাচাল বিন্দু এবার বলছে, আপনাকে না গতবার বললাম ওখানকার এইসব
কাপড় চোপড় থেকে বাংলাদেশের কাপড় অনেক ভালো ও সুন্দর। যে টাকা দিয়ে কিনবেন তা দিয়ে আমরা এখানে আমাদের পছন্দ মতো কিনে নিতে পারতাম। আপনি মনে হয় ভুলে গেছেন। ফুপু কিছু বলার আগেই বাবা বিগলিত স্বরে বললো,
কি যে পাগলের মতো বলিস্। ওখানকার কাপড় আর দেশের কাপড় কি এক হলো নাকি? এবার ফুপু তার হতভম্ব ভাব কাটিয়ে বললেন,মিন্টু তোর
ছোট মেয়েটা বেশি বুঝে। এতো বুঝলে শশুরবাড়ি গেলে উঠতে বসতে খোঁটা খাবে এই আমি বলে দিলাম।
এই চাপানউতোর কতক্ষন চলতো জানি না, মা ই এখানে ইতি টানলো। স্থির কঠিন চোখে তাকিয়ে বললো,বিন্দু তুই তোর রুমে যা তো। বিন্দু এবার ফুপুর দিকে তাকিয়ে বলল, আমি তো রুমেই ছিলাম মা। আসবো না বলেছিলাম,তোমরা ই তো ধরে বেঁধে আনলে। ফুপু এবার বললেন, অনেক অন্যায় হয়ে গেছে মা। রাণীসাহেবা কে আমাদের ডাকাই উচিত হয়নি। এতো বেয়াদব হয়েছিস তুই,
আমাকে তোর চোখেই লাগে না? নীতু এতোক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিল, এবার বললো ফুপু বিন্দু
এখনো অনেক ছোট। এতো ভেবেচিন্তে কথা বলতে পারে না। এখানে এতো সিরিয়াস হবার কিছু নেই। বিন্দু তুই এক্ষুনি ফুপু কে স্যরি বল্। সে বিরস মুখে স্যরি বলে রুম থেকে বের হয়ে গেল।
ফুপু আসবেন আর ঝামেলা করবেন না,তা কি কখনো সম্ভব? পরেরদিন সকাল নয়টায় ফোন করে করে তার ৪/৫ জন বান্ধবী কে ডাকলেন। লাঞ্চের দাওয়াত দিলেন,অথচ যে রাঁধবে তার সাথে কথা বলেননি এখনো।আমার দিকে তাকিয়ে
বললেন আমি কিছু মাছ লিখে দিচ্ছি আর টাকা দিচ্ছি, খোকা তুই ঝটপট বাজার টা সেরে আয় তো বাবা। বাবা ছাড়া আমরা সবাই টেবিলে মজুত। আমি আকাশ থেকে পড়লাম যেন, মিষ্টি করে হেসে বললাম আপনি আসায় গতকালও বের হতে পারিনি ফুপু। আজকে যেতেই হবে, খুব একটা জরুরী কাজ আছে।
আমার কথা শেষ হতেই এবার তার গলা চড়ে
সপ্তমে উঠে গেছে। কি ব্যাপার বিনু? আগে আমার
ভাইপো/ ভাইঝি তো এতো বেয়াদব ছিল না। হঠাৎ করে এরা এরকম হয়ে গেল কেন? আমি দেশে এলে যদি তোমাদের সমস্যা হয় তবে তুমি সরাসরি বললেই তো হয়। ছেলে মেয়ে দিয়ে এভাবে অপমান করানোর মানে কি? আমি বলি,
আপনি মাকে শুধু শুধু দোষ দিচ্ছেন কেন? মা এখানে কি করলো? মা এবার আমাকে বললো, উনি যা লিখে দেন সেটা এনে তোমার দরকারি কাজে যাও খোকা। মা রেগে গেলে আমাদের কে
তুমি করে বলে। অগত্যা তা ই সই। এইমাত্র আমি গোসল সেরে এসেছি, এখন মাছের বাজারে ঢুকে মাছের গন্ধ গায়ে মাখো। কি যে এক যন্ত্রনা এই ভদ্রমহিলা কে নিয়ে। তার রুমে নিয়ে বললেন,
খাতা কলম নিয়ে আয়। আমি বলি আর তুই লিখ। আমি ফোন বের করে বলি, বলে যান আমি টুকছি। চিতল মাছ,বাইম মাছ,গুতুম মাছ সহ নানান মাছের নাম বলছেন। আমি বলি, এতো কিছু তো কখনো বাবা ছাড়া আনিনি। বাবাকে ডাক দেই? সাথে সাথে ফুপুর চিৎকার, তোর বাবা কে ঘুম থেকে তুলবি কেন? তুই ই পারবি যা তো।
একটা বিরাট চিতল মাছ সহ বাইম মাছ, পাবদা মাছ,ও পোলাও এর চাল নিয়ে এলাম। মায়ের উপর চাপ বেশি পড়বে…….. এটা ভেবেই হয়তো নীতুও বেরোয়নি। মা চিতল মাছ কাটিয়ে ৫/৬ পিস করে আনতে বলেছিল। দেখলাম ঝটপট হাতে পিঠগুলোকে আলাদা করে ফেললো। ছোট করে কেটে খালাকে বেটে দিতে বললো। ঝাজরি
তে বাটা অংশগুলো তুলে কাটা আলাদা করল।
তারপর, কাটা ছাড়া মাছে কি সব মসলা মিশিয়ে কোপ্তার আকার দিতে লাগলো। একটা বানাতে ই
আমি বলি তুমি অন্য কাজ করো মা, আমি সুন্দর করে তোমার কোপ্তাগুলো গড়ে দিচ্ছি।
মা এবার তার গরমে লাল হয়ে যাওয়া মুখ মুছে বললো,তোর না কোথায় যাবার কথা বাজান। যা আমি এইসব চট করে রেঁধে ফেলবো দেখিস। আমি বলি, কোপ্তাগুলো বানিয়ে ই চলে যাবো মা। এবার হেসে আমার হাতে তেল মাখিয়ে দিয়ে মা বললো, যার গর্ভে এতো এতো ভালো ছেলে মেয়ে আল্লাহতাআলা উপহার দিয়েছেন, তার কি আর কোনো দুঃখ থাকতে পারে বাপ? সেই সময় খালা পাটা ধুতে ধুতে বললো, একটা জরুরী কতা বলি।
আফা আইজ দুই রাকাত নামাজ পইড়া শুকরিয়া আদায় কইরেন। ভুইল্যা যাইয়েন না কইলাম।আর
এইসব কাউকে বইল্যেন না। নজর লাগবো। এই কথা শুনে আমি,মা আর নীতু হাসতে শুরু করি। খালা এবার তার মুখের পিক সামলাতে সামলাতে বলে, এইসবে হাসন নাই আব্বা। হাছা কতা সব।
আমার আগামীকাল একটা ভালো কোম্পানি তে
ইন্টারভিউ আছে। আগে আগে ইন্টারভিউতে যাবার আগে মাকে বলতাম, মা দোয়া করো। এতো দিন ধরে চাকরি হচ্ছে না বলে এখন আর লজ্জায় বলি না। আজ শোনলাম বন্ধু নাবিলের বড়ভাই না কি এরকম কোম্পানিতে চাকরি পেয়েছেন। এসব নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলতে চাচ্ছিলাম। এখন মনে হচ্ছে,বলেই বা কোন হাতি
ঘোড়া উল্টাবো !!! তারচেয়ে বরং মাকে সাহায্য করে যাই। প্রায় বাইশটার মতো কোপ্তা হয়েছে।সাইজ ঠিক আছে কিনা মাকে জিজ্ঞেস করতেই
মা হেঁসে বলল, আমার চেয়ে অনেক বেশি সুন্দর হয়েছে। চেয়ে দেখি নীতু চিতলের অনেক গুলো পেটি ধুয়ে রাখছে আর বলছে, মানুষ ভালো খাবারের জন্য সারাক্ষণ এর পেছনে এতো শ্রম ও সময় নষ্ট করে কেন আমি সেটাই বুঝিনা। আমি আর দেরি না করে এবার হাতমুখ ধুয়ে,কাপড় পাল্টে বের হলাম।
রাস্তায় বের হতেই ভাইয়া ফোন দিয়েছে। বাসার সবার কথা জিজ্ঞেস করতেই আজকের ঘটনা বলা শুরু করলাম। ভাগ্য ভালো বাসে বেশি ভিড় নেই,তাই আরামে কথা বলছি।আমাদের পরিবারে
সবচেয়ে নরম মনের মানুষ হচ্ছে ভাইয়া। মায়ের কথা জিজ্ঞেস করতেই তার গলা ধরে যায়। শেষে
বারবার বলছে, ঔষধ ঠিক মতো খাচ্ছে কি না
খেয়াল করিস খোকা। আর জাহাবাজ বড়ফুপুর
কবল থেকে যতোটা পারিস মাকে রক্ষা করিস্।
আমরা তিন ভাই বোন বাবার অনেক সমালোচনা করলেও ভাইয়া কখনো বাবার বিরুদ্ধে কিছু বলে না। এতো ভালো একটা ছেলে সে। একমাত্র মাকে খুশি করবো বলে আমাদের এতো এতো আপ্রান চেষ্টা। তীব্র গরমের তপ্ত দুপুরেও কষ্ট করে আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলছি,আপনি
তো সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী আল্লাহ তাআলা। আপনি ‘কুন’ বললেই সব হয়ে যায়। আমরা ভাই বোনদের ইচ্ছে পুরন করে দিন মাবুদ। আমার সারা জীবনের দুঃখী মাকে একটু সুখ দেখার তৌফিক দিন। সারাজীবন অন্যের বাসায় থাকা, অন্যের টাকায় চলা আমার মাকে নিজের কিছু পাওয়ার সুখ দিন। হে বিশাল সাম্রাজ্যধীপতি !!!
আজীবন দুঃখী এক মায়ের জন্য ছেলের এই প্রার্থনা টুকু বিফলে নিয়েন না। আমাদের পথচলা সহজ ও সুন্দর করে দিন। আমি দীনহীনের আর
কিছুই চাওয়ার নেই।
(চলবে)
###৩য় পর্ব নিচে