###পরগাছা ৪র্থ পর্ব
###লাকি রশীদ
আজ এতো বেশি রোদ যে বাইরে তাকালেই যেন চোখ ব্যথা করবে। এতো দিন ধরে ইন্টারভিউ এতোটা দিচ্ছি এখন তো আর ভয় লাগার কথা না
কিন্তু পেট গুড়গুড় করে,কি রকম অস্থির অস্থির লাগে। আমি যতোই শান্ত হয়ে থাকতে চাই ততোই
যেন মনটা অশান্ত হয়ে যায়। আজকের এই চাকরিতে ইন্টারভিউ ২ ধাপে হবে। আজকে যারা
টিকবে তারা পরেরটাতে যাবে। ভয় লাগছে খুব,
তবে স্বস্তির কথা এই যে কালকের ঝামেলায় মা এসব আর খেয়াল করছে না।
সারা দিন চলে গেছে, মধ্যেখানে শুধু লাঞ্চব্রেকের
জন্য একঘন্টা ছিল। ইন্টারভিউ খুব একটা ভালো হয়নি। তবে যা বলেছি কনফিডেন্স নিয়ে বলেছি।
এরচেয়ে অনেক ভালো ভাবে ইন্টারভিউ দিয়েও কাজ হয়নি। তাই অনেকটা নিরাশ হয়েই বাসায় ফিরে এসেছি। ঢুকতেই ছোট ফুপুর গলা শুনে খুব ভালো লাগছে। এই এক মহিলা যে আমাদের বাসার সবার প্রিয়। হৈচৈ করে রাতারাতি পরিবেশ
পাল্টানোতে জুড়ি নেই ছোট ফুপুর। সে আমাকে দেখেই চিৎকার করে উঠল, কি রে বিধ্বস্ত হয়ে কোথা থেকে ফিরলি? আমি হেসে বলি, বেকারের আবার বিধ্বস্ত বা ভালো অবস্থা বলে কিছু আছে নাকি? শীত গ্ৰীস্ম সব সমান। বলেই বুঝলাম কি ভুল করেছি। এখন লেকচার শুরু হবে ফুপার সাথে তাদের দোকানে বসলে কি এমন ক্ষতি হবে আমার? অনেক গুলো দোকান তাদের, ভালো বেতনও পাওয়া যাবে কিন্তু এতো লেখাপড়া করে
এসবে ঢুকতে হবে ভাবলেই মনটা খারাপ হয়ে যায়। মা ই সবার আগে মন খারাপ করবে।
কিন্তু আজ খোকার ভাগ্য ভালো, ফুপুর কোল থেকে বিন্দুর মাথা সরিয়ে আমার মাথা রাখতেই চুলে হাত বুলাতে বুলাতে বলছেন, এতো চিন্তা কেন করিস বাবা? আল্লাহ চাইলে এতো দৌলত,
এতো রিযিক দিবেন………..শুধু ভালো সময়ের
অপেক্ষা। আমি চেয়ে দেখি মা এখানে নেই, তাই ফিসফিস করে বলি মায়ের জন্য চিন্তা লাগে ফুপু।
দেখে যেতে পারবে তো? ফু দিয়ে যেন সব চিন্তা দূর করে দিলেন…..আরে হবে হবে।শোন সারাক্ষণ
মায়ের কথা না ভেবে ছোটফুপুর কথাও ভাবিস। প্রথম বেতন পেলে আমাকে কিন্তু সুন্দর একটা শাড়ি কিনে দিতে হবে। আমি জানি এসব তিনি আমাকে খুশি করার জন্য বলছেন।তার আলমারি দামী শাড়িতে ভরপুর। কারো কাপড়প্রীতি কোন পর্যায়ের হতে পারে এটা তাকে না দেখলে বুঝা কষ্টকর।
আবেশে চোখ বুজে আছি বলে এবার বলছেন, কি রে খাবি না? শুধু আদর খেলেই চলবে? বলি, আমি খেয়ে এসেছি। বড়ফুপুর মেজাজের খবর কি বলো? পরিবেশ এখন শান্ত না অশান্ত? ফুপু এবার আদর করে বলছেন,আরে বাবা আপা হলো নারকেলের মতো। বাইরে শক্ত ভেতরটা নরম। নীতু গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে যখন বলেছে
রাগ করো না ফুপু। তুমি রাগ করলে মার, আমার,
খোকার ভালো লাগে না…… এতেই আপা কাত হয়ে গেছে। আমি চট করে বিন্দুর দিকে তাকাই। চোখের ভাষায় বলতে চাই,কাল রাতে বলেছিলাম
যা সেটা সত্য তো? ছোট ফুপু বলে যাচ্ছে তারপর নীতু ও তার যুগলবন্দী কান্না শুরু হয়েছিল। নীতু এবার বালিশ ছুঁড়ে বললো, শুধু বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যে কথা বলা।
ছোটফুপুর জীবনটাও অনেক নাটকীয়তায় ভরা। বিয়ের পর তখন জানতে পারলেন তিনি কখনো মা হতে পারবেন না তখন বছর খানেক পর ফুপা কে বললেন, আমি বেশ বুঝতে পারছি তুমি এখন
আমাকে না গিলতে পারছো না ফেলতে পারছো।
আমি তোমাকে আরেকটি বিয়ে করার অনুমতি দিলাম। কিন্তু শর্ত হলো দোতলা আমাকে লিখে দিবে তুমি। আমি তোমার বৌ হয়ে থাকবো।যদি কখনো মনে হয়,এ বাঁধন ছেঁড়া জরুরী তখন চলে যাবো। বাকিটা তোমার ইচ্ছে। ফুপা তাকে দোতলা লিখে দিয়ে একতলায় নতুন বৌ নিয়ে আসেন।
সবচেয়ে সুন্দর ব্যাপার হলো,ফুপার ঐ পক্ষের
তিনটা বাচ্চা ফুপুর জন্য পাগল।মা বলেছে বড়মা বলে যখন তার কোলে আছড়ে পড়তো তখন কারো সন্দেহ করার কোনো উপায় ছিল না এরা তার নিজের বাচ্চা নয়। সবচেয়ে ছোট মেয়ে আমার সমবয়সী। অষ্ট্রেলিয়ায় থাকে, কিছুদিন আগে ফুপুকে টিকেট দিয়ে ওখানে দুই মাসের জন্য বেড়াতে নিয়ে গিয়েছিল। মজার মানুষ, শুধু গল্প করতে ভালবাসেন। তার সাথে গল্পে জমে গেলে কেউ আর উঠতে চায় না। রাতে মা ও নীতু
জোর করে তাকে রেখে দিয়েছে।
আমাদের পাড়াতেই ইন্জিনিয়ার চাচা বলে একজন ছিলেন। গতকাল হঠাৎ করে এসে, বাবা কে বলেছেন আমার ছেলের জন্য আপনার মেয়ে টাকে চাই। উনার ছেলে মামুন ভাইকে আমরা ছোট বেলায থেকে ই চিনি। ভাইয়ার সমবয়সী। মার্জিত, অনেক ভদ্র একজন মানুষ। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ান।
বাবা দুই দিন সময় নিল। মা, ফুপু ও নীতু কে বলার জন্য। নীতু মাকে বলল, তোমরা ভালো মনে করলে ঠিক আছে। কিন্তু ফাইনাল করার আগে, তার সাথে আমি একবার বসব। সেটা বাসায় বা রেষ্টুরেন্টে হতে পারে। ফুপু বললেন,সবার আগে আমরা মানে আমি আর তোর বাবা মা ওদের বাসায় গিয়ে দেখি কি অবস্থা, কেমন পরিবেশ।মা একটু দোনামোনা করলেও নীতু বলল,ফুপুকে নিয়ে ওখানে যাও মা।উনি আমার খারাপ চাইবেন না কখনো। আমি হেসে বলি,হ্যা কিন্তু এতো বড় বড় কথা শুনে ওরা না বেহুঁশ হয়ে পড়ে যায় !!!
নির্ধারিত দিনেও বাবা দুপুর একটা পর্যন্ত ঘুমাচ্ছে।
মা অতিরিক্ত টেনশনে কিছুদিন ধরে কেমন পাগল পাগল হয়ে গেছে। দিনের মধ্যে একশ বার সবাই কে জিজ্ঞেস করছে, এখানে সম্বন্ধ করলে কেমন হবে? হঠাৎ বাবাকে এতো নিশ্চিন্তে ঘুমোতে দেখে রেগে ধাক্কা দিয়ে বলছে, মিষ্টি আনতে হবে না? তুমি এখনো ভোস ভোস করে ঘুমোচ্ছে যে !!!! মেয়ে বিয়ে দিবে এতো নিশ্চিন্তে থাকো কি করে
বলোতো? বাবা বিরক্ত হয়ে ওয়াশরুমে গেল। সবচেয়ে আশ্চর্যজনক ব্যাপার হলো, মামুন ভাই ও তার পরিবারকে বড়ফুপুর খুব পছন্দ হয়েছে। এসে বারবার বলছে, এতো অমায়িক মানুষ এরা।
ছেলেটাও ভীষণ ভদ্র। খোকা ওদের আমার ভীষণ পছন্দ হয়েছে।
এসব কর্মকাণ্ডের মধ্যেই আমার প্রথম পর্বের ইন্টারভিউ এ টিকে যাবার খবর ই মেইলে এলো ও দ্বিতীয় পর্বের ইন্টারভিউয়ের ডেট জানালো।
গেলাম কিন্তু ২য় পর্বটা আগের চেয়ে আরো খারাপ হয়েছে মনে হলো। এসব নিয়ে আমার আর ভাবতে ইচ্ছে হয় না। আল্লাহর ইচ্ছা যা হয়
তা ই মন্জুর।
নীতু আগামীকাল বিকালে মামুন ভাইয়ের সাথে দেখা করতে যাবে। ওর চেয়ে বিন্দু অনেক বেশি এক্সাইটেড, নীতু কি পরে যাবে। বড়ফুপু বারবার বলছেন, তুই শাড়ি পরে যা মা। নীতু হেসে বলছে,
আমি ড্রেসে কম্ফোর্টৈবল থাকি তাই এটা পরেই যাবো। তোমরা এসব নিয়ে এতো চিন্তা করো না
তো প্লিজ। আমি বললাম, আমার তো মনে হয় নীতুর পার্লারে গিয়ে সেজেগুজে যাওয়া উচিত।বড়ফুপু ঠাট্টা ধরতে না পেরে বলছেন,যা না রে মা। টাকা আমি দিবো। তোকে এসব নিয়ে কোনো চিন্তা করতে হবে না। নীতু এবার তেড়ে এসেছে,
ভালো হবে না ছোটভাই। কিসব ফাজলামি করছ।
পরদিন সকালে আমি ইন্টারভিউ এর জন্য বের হয়েছি। অদ্ভুত এক নিস্পৃহতায় মন ছেয়ে আছে।
বারবার মনে হচ্ছে, এবার না হলে ফুপার দোকানে
বসবার চিন্তা করতে হবে। ছোট বোনটার বিয়েতে আমার কোনো কন্ট্রিবিউশন থাকবে না…… এটা ভাবাই ভীষণ কষ্টকর। দোয়ায়ে ইউনুস পড়তে পড়তে বিশাল অফিসের ভেতর পা রাখলাম।
ক্যান্ডিডেট কম থাকার কারণে বেলা পৌনে এক টার দিকে আমার ইন্টারভিউ শেষ যায়। এখানে এসে গতবার নাঈম নামের অসম্ভব শুকনো একটা ছেলের সাথে পরিচয় হয়েছে। গল্গচ্ছলে গতবার বলেছিল,তার এপিলেপসি আছে। কেন যেন এই মুহূর্তে বাসায় যেতে ইচ্ছে করছে না। বললাম,চলো নাঈম কোথাও বসে লাঞ্চ করি। ও বললো,এই এলাকায় খেতে হলে গলাকাটা দাম নিবে।চলেন রিক্সা করে কিছুটা এগুনো যাক। মন বড় অদ্ভুত এক জিনিস, কখন কার উপর বিরুপ হয়,কখন কার দিকে হেলে পড়ে, কখন কার উপর ভালবাসায় সিক্ত হয়……তা কেউ বলতে পারে না।
নাঈমকে দেখলেই কেন যেন আমার ভাইয়ার কথা মনে পড়ে। অথচ ভাইয়া মোটেও এরকম শুকনো নয়। শেষদিকে যখন কিছুতেই কোনো একটা চাকরি হচ্ছে না তখন ভাইয়ার চোখে মুখে একটা দিশেহারা ভাব থাকতো। সেই অসহায় দৃষ্টি যেন আমি নাঈমের চোখে দেখতে পাই।
খেতে খেতে বলছে,এই চাকরিটা হবে কি না কে জানে? ঘরে এতো সমস্যা বাবার প্যারালাইসেস,
মা হার্টের রোগী…….. অনেক ভেজাল। আমি এবার বলি, সৃষ্টিকর্তা ছাড়া সাহায্য করার কেউ নেই রে ভাই। তীরে তরী ভেড়াতে একমাত্র উনাকে
প্রয়োজন। নাঈম তার খাবারের টাকা দিতে গেলে বলি,অন্যদিন দিবেন। আজকে আমার ভাইয়াকে আমি খাইয়েছি। কয়েক দিন ধরে খুব মিস করছি উনাকে। এখন আমার অনেক ভালো লাগছে।
এলোমেলো পায়ে হাঁটছি আর কোথায় যাওয়া যায় সেটা ভাবছি। হঠাৎ মনে হলো, আমি কার কাছে থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছি? চাকরি না হওয়া কি আমার দোষ? কেউ তো আমাকে এসব নিয়ে কিছু বলেও না। তাহলে এতো সংকোচ কিসের?
পা বাড়াবো সৌমিকের ফোন,মাছ কিনতে চায়। আমি সাথে গেলে ভালো হয়। বললাম আসছি এক্ষুনি। জীবনে আর কখনোই মনে হয় আমি মাছ কিনতে যেয়ে এতো খুশি হইনি। বাসায় না যেতে পারার অজুহাত পেয়ে আমি খুবই খুশি।
সৌমিকের মা মাছ ছাড়া অন্য কিছু খান না। আমি বলি, বেশি বাজার করতে হলে আমি বাবাকে নিয়ে যাই। খারাপ হলে বকা দিতে পারবি না দোস্ত। সে হেসে বলে, খারাপ হলে তোর গায়ের ছাল চামড়া ছিলে নেবো বেটা।
আঁশটে গন্ধে ভরা মাছ বাজার ঘেঁটে বড় কাতলা একটা, প্রচুর পরিমাণে মলা মাছ,দেশী মাগুর কিনলাম। হঠাৎ চোখ পড়লো একজন বড় বড় বাইম মাছ নিয়ে বসে আছে। ওর কাছে ৫টাই আছে,দাম ২ হাজার বলছে। দামাদামি করে ১৫০০ টাকায় আনলাম। পকেটে এতো টাকা নেই,
টান পড়বে নিশ্চিত। সৌমিকের কাছে থেকে ধার নিলাম। মাছের ব্যাগ নিয়ে হাঁটছি আর ভাবছি,
মেয়েদের কি অদ্ভুত এক জীবন !!! ফুপা ও বাচ্চা রা পছন্দ করে না বলে বড়ফুপু বাইম মাছ খেতে পারেন না বা আনেন না। আমার এক কাজিনের দুঃখ, শশুরবাড়ির মানুষ চ্যাপা শুঁটকির গন্ধ সহ্য করতে পারে না বলে ও খেতে পারে না। ওর মা মাঝে মাঝে বানিয়ে কৌটাতে ভরে দিয়ে আসেন।
মনের কথা সৌমিককে বলতেই ও বলে, মেয়েদের
দুঃখের কথা ভেবে তোর আর এতো চোখের জল ফেলতে হবে না।মেয়েরা অনেক কঠিন চিজ ভাই।
বাসায় ঢুকে দেখি শুনশান নীরব হয়ে আছে। নীতু
রেষ্টুরেন্টে মামুন ভাইয়ের সাথে দেখা করতে গেছে। ফুপু আর বিন্দু পাশের বাসার আন্টির বাসায় বেড়াতে গেছে। বাবা তো যথারীতি বাসায় নেই। মা দুহাত তুলে অস্ফুটে কি যেন মোনাজাত করছে। বললাম কি মা? সত্যি করে বলতো কার জন্য এতো কেঁদে কেঁদে দোয়া করলে? চটজলদি জবাব,নীতুর জন্য রে বাবা। ভাগ্য টা যেন ওর খুব ভালো হয়। আমি কপট রাগ দেখাই,হ্যা সব দোয়া তো শুধু ওর জন্য। শোন আমার জন্য খুচরা কিছু অন্তত করো। মা চুলে টান দিয়ে বলছে, মা দোয়া না করলে এতো এতো ভালো থাকিস কি করে?
কোনো জবাব না দিয়ে মায়ের পাশে থেকে তার মোবাইল নিয়ে খালাকে ফোন দেই। খালা ধরতেই
বলি,কষ্ট করে বড় ৫টা বাইম মাছ কেটে দিয়ে যাবেন খালা? আপনার জন্য পান, সুপারি এনেছি,
যাবার সময় ১০০ টাকা ও মাছের মাথা ও চামড়া
নিয়ে যাবেন। শর্ত একটাই তাড়াতাড়ি আসতে হবে। নয়তো মাছগুলো পচে যেতে পারে। খালার
চট করে জবাব,আসিতেছি বাজান। উনার বস্তি আমাদের বাসা থেকে খুব একটা দূরে না। অদ্ভুত এক চোখে এবার মা তাকিয়ে বলল, টাকা কি বেশি হয়ে গেছে তোর? ৫টা বাইম মাছ কাটার জন্য বুয়াকে ডেকে ১০০ টাকা দিতে হয়? আমি ই
তো চট করে কেটে ফেলতে পারি। আমি মার দুই চোখে আলতো করে হাত বুলিয়ে বলি,যা করছো
বসে বসে তা করতে থাকো।আমাদের সবার এখন
তোমার দোয়ার বড্ড প্রয়োজন।
হাতমুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে এসে দেখি খালা কলিং বেল বাজাচ্ছে। খুলতেই জর্দার তীব্রগন্ধ ভক করে নাকে এসে লাগলো। জর্দা খেলে ক্যান্সার হয়….… খালাকে এই কথা আমি আর নীতু বলতে বলতে হয়রান। আমরা বুঝাতে গেলেই অপরাধী এক হাসি হেসে বলেন, জীবনে কোনো সুখ নাই বাফ। বাফে খ্যাদানো,মায়ের তাড়ানো, সোয়ামীর হাতে বেদম মার খাওয়া আমাদের দুইটা জিনিসে সুখ…… এক পান খাওয়া দুই কিরণমালা দেখা। মাইঝে মাইঝে একটা দুইটা বই দেখা। এইগুলাও
কাইড়্যা নিলে চলবাম ক্যামনে? আমি অবাক হয়ে বলি, আপনি বই পড়তে পারেন? নীতু বকা দেয়,
আরে বই মানে উনি বাংলা সিনেমা বুঝাচ্ছেন বুদ্ধু
হাবারাম। সেই থেকে আমি আর কখনো কিছু বলি না উনাকে। ভেবে দেখলাম বিনোদনহীন জীবনে সত্যি ই তো বেঁচে থাকাটাই বড় কষ্টের।
মাকে না উঠার জন্য বলে আমি চা বসাই। বেকার যুবক চা বানানো শিখলেও নিজের ও অপরের একটু উপকার হবে ভেবে ইউটিউব ঘেঁটে দুধ চা
বানানো শিখেছি। সেদিন খুঁতখুঁতে বড়ফুপুও বলে
ছেন, ভালো কোনো হোটেলের চায়ের থেকেও আমার বাবার চা ভালো হয়েছে। আমি জানি,খুশি
করার জন্য হয়তবা একটু বেশি বলে ফেলেছেন।
তিন কাপ বানিয়ে ঠিক যখন কাপে ঢালবো তখন উনার মাছের মাথা কাটা দেখে বলি, সেদিনও আপনাকে জিজ্ঞেস করতে চাচ্ছিলাম বাইম মাছের মাথা ও চামড়া তো দেখতেই কিরকম যেন। আপনি এগুলো কি তরকারি রেঁধে খান? না
জিজ্ঞেস করাই বোধহয় ভালো ছিল। এখন তিনি সবিস্তারে বুঝানো শুরু করেছেন,আলু দিয়া আর
এই মাছের কল্লা ও চামড়া দিয়া চচ্চড়ির মতো খাইতে ভীষণ মজা। আমি তার পাশে চায়ের কাপ রেখে বলি,আপনার ঘরে আলু না থাকলে দোকান
থেকে মনে করে নিয়েন।
মার সাথে চা খেয়ে বলি, রুমে বসে চিন্তা করলে কি তোমার সব সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে? চলো
উঠোনে একটু হেঁটে আসি। বুয়া মাছ ফ্রিজে রেখে ময়লা নিয়ে যাবার সময় টাকা দিয়ে বের হলাম। বাতাসে কৃঞ্চচুড়ার ডাল দুলছে, মা নীচে দাঁড়াতেই মায়ের গায়ের উপর অনেকগুলো লালফুল ঝরে পড়েছে। আমি হেসে বলি,দেখো দেখো মা ওরাও তোমাকে চিনে স্বাগতম বলছে। মা গাছের গায়ে হাত বুলিয়ে দিয়ে আদর করে বলছে, এরাও সবকিছু বুঝে বাবা, শুধু প্রকাশ করতে পারে না এই যা। ঠিক তক্ষুনি খুশিতে ঝলমল করতে থাকা
নীতু ঢুকেছে। মা কিশোরীদের মতো দৌড়ে গিয়ে নীতু কে বললো,কি রে কথা বলে কেমন লাগলো মামুন কে? আমি মনে মনে বলি, তুমি কি চেহারা পড়তে পারো না মা? এ প্রশ্নের জবাব তো নীতুর চেহারাতেই লেখা আছে।
(চলবে)
###৫ম পর্ব under