###পরগাছা ৫ম পর্ব
###লাকি রশীদ
আমি মনে মনে বলি, তুমি কি চেহারা পড়তে পারো না মা? এ প্রশ্নের জবাব তো নীতুর চেহারাতেই লেখা আছে। নীতু এবার মাকে বলল,
ভালোই তো লাগলো ভদ্রলোককে। এবার মায়ের প্রশ্ন,ভালোই তো বলছিস কেন? টেনেটুনে কোনো মতে ভালো বলতে হবে না। নীতু হেসে বলছে,এক
সন্ধ্যায় কি একটা মানুষ কেমন তা বুঝতে পারা সম্ভব মা? তবে ভদ্রলোক খুবই বিনয়ী এটা বলা যায়। কথাবার্তা আস্তে বলেন। আমিও আমার শর্তের কথা জানিয়েছি। সবই কি উঠোনে দাঁড়িয়ে বলবো না কি? ঘরে চলো তো।
মায়ের মনের অস্থিরতা আমি বেশ বুঝতে পারছি।মুখ লাল হয়ে গেছে,নাক তিরতির করে কাঁপছে।
আপনমনে হাসছি বাচ্চা হলেও কতো দুশ্চিন্তা, কতো পেরেশানি………. আবার ছোটফুপুর দুঃখ
তার বাচ্চা নেই। আমি ছোট থাকতে একবার ফুপু
এসে দেখেন, মা আমাদের পিঠাপিঠি ৪ ভাইবোন কে এক প্লেটে ভাত নিয়ে সবার মুখে তুলে তুলে খাওয়াচ্ছেন। আমার মনে আছে ছোট ফুপু ঝরঝর করে কেঁদে বলেছিলেন, আল্লাহর ইচ্ছা দেখো বিনু তোমাকে ৪টা বাচ্চা দিয়েছেন। আমার একটাও নেই। কি সুন্দর বাচ্চাগুলো মায়ের হাতে খাচ্ছে। আমার সদা হাস্যোমুখী মা তখন বলছেন,
আপনি আখেরাতে ইনশাআল্লাহ এর উত্তম প্রতিদান পাবেন ছোটবু। এখন আমার মনে হচ্ছে মা হলেও কষ্ট, না হলেও কষ্ট্য
নীতু টেবিলে বসতেই মা একগ্লাস পানি ঢেলে
ওকে দিয়ে বললেন, ঝটপট খেয়ে জলদি করে কি কথা হয়েছে বলে যা। নীতু এবার থেমে থেমে বলছে উনাকে বলেছি রেজাল্ট আমার ভালো হবে ইনশাআল্লাহ। চাকরি করলে উনার বা উনার পরিবারের কারো আপত্তি আছে কি না জানতে চেয়েছি। বললেন, না কোনো আপত্তি নেই। বললাম আমার স্যালারী আমার ইচ্ছেমতো খরচ
করতে চাই। বললেন, কোনো সমস্যা নেই। আরো কিছু টুকটাক কথা বলে আসার সময় বললাম,
আমি খুব খাটতে পারি। অলস টাইপের লোক আমার ভীষণ অপছন্দের। আপনি কেমন, একটু জানতে চাই। উনি হেসে বললেন, আপনার মতো যদিও এতোটা খাটতে পারি না, কিন্তু অলস বলার
মতো দুঃসাহস কারো হবে না।
মা এবার বললেন, গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল। আগে আগে চাকরি হবে,স্যালারী ইচ্ছে মতো খরচ করবো……. এতো সব বলার কোনো মানে হয়? এতো বকবকের দরকার কি? নীতু এবার রেগে গেল, শোনো মা আমি সবকিছু ক্লিয়ার করে যদি বুঝি ঠিক আছে, তবে বিয়ে করব নয়তো না।
পরে ঝামেলা থেকে আগে ঝামেলা হওয়াই তো ভালো। মা বলছে, তাহলে তোর বাবাকে কি বলব
বল্। নীতু বলছে,আচ্ছা মা তুমি এতো তাড়াহুড়ো করছো কেন বলোতো? আমাকে বাড়ি ছাড়া করার জন্য তুমি যেন একেবারে অস্থির হয়ে গেছ।
আমি এবার মাকে বলি,সব ব্যাপারে চিন্তা করতে করতে তোমার অবস্থা কাহিল হয়ে পড়েছে। কিছু দিনের জন্য ছোট ফুপুর কাছে তোমাকে রেখে আসা উচিত।
ঠিক সেই সময় বড়ফুপু ও বিন্দু বেড়ানো শেষ করে ঘরে ঢুকেছে। বড়ফুপু জিজ্ঞেস করছেন, কাকে ছোট ফুপুর বাসায় নিয়ে যাবি রে খোকা?
আমি বলি, মাকে দিয়ে আসবো টেনশন কমানোর
জন্য। ফুপু এবার বিস্মিত স্বরে বলছেন, কেন ছেলে টাকে কি তোর পছন্দ হয়নি? নীতু এবার বললো, পছন্দ হয়েছে কিন্তু আরেকটু ভেবে দেখতে চাচ্ছি। বড়ফুপু এবার পানের বাটা থেকে তৈরি করা একটা খিলি মুখে দিয়ে বললেন,কালে
কালে কতো কিছু দেখলাম রে মা। আমাদের বাবা মা তো বিয়ে ঠিক করে বলেছে,অমুক দিন বিয়ে তোমার। আর কোনো কথা বলার উপায় নেই। পরদিন থেকে বিয়ের আগে পর্যন্ত খালা, ফুপু, চাচী,মামী যে যে রান্না ও নাস্তা বানাতে উস্তাদ ওরা
চলে এসে শিখিয়ে পড়িয়ে দিচ্ছে। এখন তো যুগ উল্টে গেছে পুরোপুরি। তবে এটা ঠিক আমাদের
নীতু যে পরিবারে যাবে,সেই পরিবারের সৌভাগ্য যে এমন বৌ তারা পাচ্ছে। শুধু বিন্দুটাই কোনো কাজ শিখলো না। এই মেয়েটার ভবিষ্যত খারাপ হবে……. এই আমি বলে দিলাম। বিন্দু বলছে,
হয়েছে এখন আবার আমাকে নিয়ে কথা বলতে হবে না। বড়ফুপুর সমস্যা হলো কোথায় থামতে হয়, সেটাই বুঝেন না। এমনিতে মার দুশ্চিন্তা নিয়ে আমরা ভেবে জেরবার……. উনি আবার বিন্দুর কথা বলছেন।
রাতে ছোট ফুপু মাকে ফোন করে বলছে,বিনু আমাকে তোমার সাহায্য করতে হবে বোন। মা বলছে বলুন কি করবো? ফুপু এবার তার পরিকল্পনার কথা বলছে। ফুপার না কি আগামী পরশু জন্মদিন। ফুপু অনেক আইটেম রান্না করে ফুপা কে সারপ্রাইজ দিতে চায়। আমরা সবাই যেন দুই দিনের জন্য তার বাসায় যাই। মা
জিজ্ঞেস করছে, না থাকলে হয়না বুবু? ফুপু বলে,
না হবে না। কাল সকাল ১১টায় গাড়ি পাঠাবো, কোনো কথা শুনতে চাই না, সবাই চলে এসো। রাতেই সবার ব্যাগ গুছিয়ে রাখো। ডিনারে খেতে বসে মা বাবাকে বলছে,ছোটবু ফোনে এইরকম বলেছেন। এখন কি করি বলো তো? বাবা হেসে বলছে,বেশ তো সবাই চলে যাও। কোথাও যাওয়া হয় না তোমাদের। একটা ভালো ব্রেক হবে দেখো।
মা বিস্মিত স্বরে বলে, আমরা যাবো মানে? তুমিও তো যাচ্ছ। বাবা মাথা নেড়ে বলছে, আমার কাজ
আছে বিনু। তোমরা যাও। মা এবার শ্লেষের হাসি
হেসে বলছে, তাইতো !!! তোমার তো রাজকার্য আছে, তুমি আবার কিভাবে যাবে?
ছোট ফুপুর বাসায় যেতে আমরা সব ভাইবোন ছোটবেলা থেকেই একপায়ে খাড়া। ঝকঝকে তকতকে মোজাইক পাথরে গড়া দুতলায় উঠলেই
আমাদের খুব খুশি লাগতো। তাছাড়া কোন কাজ করতে হয় না। তাকে ফুপা অনেক জন সহকারী
রেখে দিয়েছেন। প্রথম প্রথম আমাদের বাসায় ডিস ছিল না। তখন আমি আর ভাইয়া ছুতো পেলেই তার বাসায় চলে যেতাম। রাজার মতো
তার নরম সোফায় বসে টিভি দেখে দেখে নানান রকম নাস্তার অর্ডার দিতাম। পরে মা বুঝতে পেরে,
বকা দিয়ে দিয়ে ঘনঘন যাওয়া কমিয়ে দেয়। বিন্দু
এখন খেয়ে খেয়ে নীতু কে বলছে, পার্টি তো রাতে আপু। আমাকে জামদানি ড্রেস পরলে কি ভালো লাগবে, না কি অন্য কিছু পরবো? নীতু অন্যমনস্ক
সুরে বলল, তোর যা ভালো লাগে পরতো। এসব নিয়ে প্লিজ আমার সাথে কথা বলিস না। বিরক্ত লাগে আমার।
আমি মাকে বললাম আমি পরশুদিন যাবো মা। একদিন আগে এতো জন মানুষ গিয়ে রাতে থাকা…….. কেমন যেন লাগছে। বড়ফুপু সেটা আবার ছোট ফুপুকে ফোনে বলে দিতেই তার ফোন এসেছে, বেশি বড় হয়ে গেছিস ভাবছিস না কি? চড় মেরে সব দাঁত ফেলে দেবো বললাম। চুপচাপ কালকে চলে আসবি। বাবা ফুপুকে কি
বলে কিভাবে ম্যানেজ করেছে যে,সে পরশুদিন বিকেলে যাবে। আমি ভাবছি ফুপা যখন তার সামনে হঠাৎ করে হ্যাপী বার্থডে বলে চিৎকার করে উঠা অনেক লোক দেখবেন তখন কি তার অস্বস্তি লাগবে কি না। অবশ্য বড়লোক দের ব্যাপার স্যাপার ই আলাদা। তিনি হয়তো অনেক খুশিও হতে পারেন। তার দুই ছেলে, বড়ছেলে গাইনোকলজিস্ট আর ছোটছেলে মাল্টিন্যাশনাল
কোম্পানীতে চাকরি করে। এমনিতে খুব ই ভালো।
রাতেই মা বাবাকে পইপই করে নিষেধ করছে,
কখনো যেন চুলা না ছাড়ে। শেষে বন্ধ না করে ই
বের হয়ে যাবে। নীতু এসব শুনে চাপা গলায় বলে,
এসবের জন্য ই বিয়ে করতে ইচ্ছে করে না। ছোট খাট কতো জিনিস খেয়াল করতে হবে। না হয় সংসারে টর্ণৈডো বয়ে যেতে পারে। আমি হেসে বলি, আমার বাবার মতো শক্ত চিজ মামুন ভাই
হবেন না এটা আমি নিশ্চিত। নীতু এবার মাথা নেড়ে বলল, বিয়ের পর কে কোন রঙ দেখাবে কে জানে? ভালো হলেই ভালো।
পরেরদিন ছোটফুপুর ওখানে গিয়ে মনে হলো, না আসলে খুব মিস করতাম। ফুপু টাকা দিয়ে বলল,
তুই আর নীতু গিয়ে এই রুম ডেকোরেশনের জিনিসপত্র নিয়ে আয়। আমি বলি, কি দিয়ে রুম সাজায় আমার বা নীতুর কোনো আইডিয়া নেই। এবার চোখ বড় বড় করে বলছেন, এটা কি ফাইভ
ষ্টার হোটেল না কি? বাইরের কোনো গেষ্ট থাকবে না। শুধু আমরা আমরা ই। দুজনে বুদ্ধি করে সব কিছু নিয়ে এসে ঘরটা সাজিয়ে দে। গাড়ি নিয়ে যা,
এসে কাজে লেগে পড়। বড়ফুপু বলছেন, তিনি ছোট ফুপার পছন্দের নারকেলের নাড়ু বানাবেন।এই কাজের জন্য দুইজন সহকর্মী সাথে নিয়ে এদেরকে অনবরত বকছেন। সবচেয়ে অকূল পাথারে যেন পড়েছে মা। ‘কি করতে হবে ছোটবু’
বললেই ফুপু বলছেন, সারা জীবন তো শুধু কাজ
করেই এলে। এখন একটু বসো তো। তুমি কাঁচা আমের ভর্তা ভালবাসো বলে তা আনিয়েছি। এই
বিনুকে তাড়াতাড়ি মজা করে ভর্তা বানিয়ে দে তো।
গাড়িতে উঠে নীতু বলছে,মা কাজ আর চিন্তা করতে করতে অবসর সময় কাটানো ভুলে গেছে।
আমি মাথা নেড়ে বলি,হ্যা সেটাই। তাও আল্লাহর অনেক মেহেরবানী বড়ফুপু ঝামেলা বাধানো বন্ধ করেছেন। নীতু বলছে সেদিন শুনি বড়ফুপু তার ছেলে বা ফুপার সাথে ফোনে কথা কাটাকাটি করে
যাচ্ছেন, আমি নীতুর বিয়ের পর আসবো। শুধু শুধু এখন এসে কি করবো? এখনো কিছুর সাথে কিছুর খবর নেই, তার প্রোগ্ৰাম করা হয়ে গেছে।
আমি সাথে সাথেই বলি, তোর এই বিয়ে করতে না চাইলে করিস না। অন্য সম্মন্ধ না হয় দেখা যাবে।
সে এবার মৃদু হেসে বলল, ভদ্রলোক কে আমার আসলেই ভালো লেগেছে। কিন্তু কি জানিস ছোট ভাই,সম্পর্কে জড়াতে কেন যেন এতো ভয় বুকে ভর করে আল্লাহ মালুম। আমি তখন তার হাত ধরে বললাম, কিছু কিছু ভয় পাওয়া কিন্তু খুব ই
স্বাভাবিক ব্যাপার নীতু। সময়ে এসব কেটে যাবে
ইনশাআল্লাহ।
ফুপা কে লুকিয়ে সমস্ত রুম আমরা তিন ভাইবোন সাজালাম। বিকেলে আবার আমরা তিনজন মলে গিয়ে ফুপার জন্য লাল পাঞ্জাবি ও ফুপুর জন্য লাল জামদানি কিনে আনলাম।টাকা ফুপু দিলেন,
৪২ সাইজ হলেই পাঞ্জাবি ফুফার হতো। ফুপু ৪৪ সাইজ আনিয়েছেন, একটু বড়সাইজ নাকি ভালো আমি তাকে জিজ্ঞেস করি,বার্থডে তো ফুপার। তুমি কেন লাল জামদানি পরবে বলো তো? ফুপু মাথায় চাটি মেরে বললন, বেশি বুঝতে যাস না।
পরে মাথা ঘুরে পড়ে যাবি। চা খাবো সবাই আমরা টেবিলে বসেছি,ফুপার দ্বিতীয় স্ত্রী এসেছেন অনেক নাস্তা নিয়ে। ভদ্রমহিলা খুব সুন্দর করে কথা বলেন। সবাইকে খেতে বলে ফুপু কে নিজেই
এক বাটিতে নুডুলস দিলেন। ছোট ফুপু বলছেন, নাসরিন তুমি খাও তো। আমাকে বেড়ে দিতে হবে না। আমার মনে হচ্ছে, আল্লাহ তাআলা চাইলে কতো কিছুই যে চর্মচক্ষে দেখা যায়।
পরেরদিন সকালে মা আমাকে ডেকে নিয়ে চুপি চুপি বলছে, কিছুই তো বুঝতে পারছি না খোকা।
একটা কিছু রাঁধতেও দিলেন না, শুধু শুধু দুটো দিন কতো আরামে থেকে তাদের কষ্ট দিলাম। এখন তোর ফুপার বার্থডে তে কিছু না দিলে তো
কোনো মুখ থাকবে না বাবা। কি দেই বলোতো?
আমি হেসে বলি কি আবার দিবে, উনার তো সবই আছে। তাছাড়া, দামী কিছু না দিলে হয়ত ব্যবহার
করবেন না। তারচেয়ে না দেয়াই ভালো। মা এবার ফিসফিস করে বলল, আমি টাকা দিচ্ছি তুই দামী
সুন্দর দেখে একটা কলম নিয়ে আয়।
বাবা বিকেলেই চলে এসেছে। সবাই সাজগোজ করে বসে আছি। ফুপার বড়ছেলে শুধু চেম্বারে।
ছোট ছেলে, দুই পুত্রবধূ ও নাতি নাতনিসহ আমরা
সবাই ফুপার অপেক্ষা করছি। অনেক বলে বলেও ফুপুকে লাল জামদানি পরানো যায়নি। উনি না কি ফুপা রেডি হওয়ার সময় দ্রুতহাতে শাড়ি পরে ফেলতে পারবেন। আড্ডা জমে গেছে, মহিলারা একসাথে গল্প করছেন, নীতু ও বিন্দু ভাবীদের সাথে হাসি ঠাট্টায় মেতে আছে। আমি আর বাবা ফুপার ছোট ছেলের সাথে গল্প করে করে চা খাচ্ছি। হঠাৎ দেখি ফুপা দরজা দিয়ে ঢুকে ফুলের তোড়া বাবার হাতে দিয়ে বলছেন, হ্যাপি ম্যারেজডে শালাবাবু। এমন দিনও ভুলে বসে আছো !!! হ্যাপি ম্যারেজ ডে বিনু।অনেক শুভেচ্ছা
তোমাদের দুজনকেই। যার ম্যারেজডে তার পরিবারের লোকেরাই বিমূঢ়, বিস্মিত। বাকিরা সবাই মুচকি হাসছে, তার মানে ওরা সবকিছু জানে। সবচেয়ে অপ্রস্তুত হয়েছে বাবা মা।
ফুপু মাকে ভেতরের রুমে নিয়ে ঝটপট লাল জামদানি পরিয়ে নিয়ে এলেন। নীতু লাল গোলাপ মায়ের চুলে বেঁধে দিল। আমি অবাক চোখে মাকে
দেখছি। এতো সুন্দর লাগছে মাকে যেন বিষাদময়
পৃথিবীতে এক টুকরো লাল গোলাপের বাগান।
বাবা পাঞ্জাবি গায়ে লাজুক হাসি হেসে মায়ের পাশে দাড়াল। বেশ বড় কেক,মা এবার ফুপুর সব নাতি নাতনি দের ডেকে, ওদের সবাই কে নিয়ে কেক কাটলো। সে মনে হয় স্বপ্নেও ভাবেনি,বিয়ের ৩২ বছর পুর্তিতে এতো বিস্ময় লুকিয়ে ছিল।
আমাকে কেক খাওয়াতে এসে লজ্জায় মা বলছে,
দেখতো খোকা এই বয়সে তোর ফুপু লাল শাড়ি পরিয়ে দিয়েছেন। আমি কেক না খেয়ে মাকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলি, আমি তোমাকে ভীষণ ভালবাসি মা। তুমি ই একমাত্র দামী সম্পদ আমাদের। নীতু ও বিন্দুও এসে জড়িয়ে ধরে রেখেছে মাকে। বড়ফুপু এবার বললেন, কি রে তোদের বাবা কি পরিবারের কেউ না? তাকেও নিয়ে যা।
ঐ রাতেই আমাদের চলে আসার কথা ছিল। কিন্তু ফুপা আসতে দিলেন ই না। বললেন আজকে আমার শালাবাবু সহ তোমরা থাকো প্লিজ। কাল সকালে নাস্তা খেয়ে ই চলে যাবে কথা দিলাম।
রাতে ছাদে বারবিকিউ হচ্ছে। ডাক্তার ভাইয়া তার হাসপাতালের নানা অভিজ্ঞতা বলে যাচ্ছেন। হেসে হেসে আমরা শুনছি। রাত প্রায় সাড়ে এগারোটায় ঘুমুতে গেলাম। সকালে নাস্তার টেবিলে বসে ফুপা নীতু কে বলছেন, তোমার ফুপু বললো মামুন কে নিয়ে তুমি দোনামোনায় ভুগছো। আপাতদৃষ্টিতে দেখে ভালো মনে হলে,হ্যা বলে দাও মা। বছরের পর বছর একজন মানুষ কে দেখলেই যে
চেনা সম্ভব তা কিন্তু না। মানুষ চেনা এতো সহজ না।
এরমধ্যে আমার ফোনে কল এসেছে। আমি যে কোম্পানিতে ইন্টারভিউ দিয়েছিলাম সেখান থেকে মুশতাক নামে একজন বলছেন, চাকরি হয়ে গেছে আমার। আগামী পরশু সকাল সাড়ে দশটায় যেন অফিসে চলে যাই। বিস্তারিত তখন কথা হবে। উনি রাখার পর মুখ দিয়ে আমার যেন আর
কোনো আওয়াজ বের হচ্ছে না। কোনোমতে বলি,
আমার চাকরি হয়েছে। টলতে টলতে গিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে বলি, চাকরি হয়েছে মা। কি হলো তুমি বুঝতে পারছো? মা বলে, এক্ষুনি শুকরিয়া নামাজ আদায় করবো বাবা। আল্লাহর লাখ লাখ শুকুর। তোর ফুপুদের, বাবা ও ফুপা কে সালাম কর। ছোট ফুপু জড়িয়ে ধরে বলছেন,কি রে জোরে রাতটুকু রাখায় আমরাও কতো সুখের স্মৃতির সাক্ষী হলাম বল্। কি অস্থির হয়েছিলি রাতেই চলে যাবো বলে।
(চলবে)
###৬ষ্ঠ পর্ব under