- আপনজন নিয়ে স্ট্যাটাস
- সমস্যা নিয়ে স্ট্যাটাস।
- পরিস্থিতি নিয়ে স্ট্যাটাস।
- আপনজন নিয়ে স্ট্যাটাস।
- পরিবার নিয়ে কষ্টের স্ট্যাটাস।
- ছেলেদের কষ্টের স্ট্যাটাস।
1.আপনজন নিয়ে স্ট্যাটাস
“ভাইয়া, ফ্রি হলে কল দিবেন কিন্তু। আপনার সাথে জরুরী কথা আছে।” ম্যাসেঞ্জারে পাঠানো সাবরিনার মেসেজটা পেয়ে একটু অবাকই হলাম। সাবরিনা সম্পর্কে আমার সেকেন্ড কাজিন। ওর বাবা আর আমার বাবা আপন খালাতো ভাই।
প্রায় সাত বছর ধরে সাবরিনা আমার ফেসবুক ফ্রেন্ড। ফেসবুকে আমার পোস্টে সাবরিনা লাইক কমেন্টে নিয়মিত হলেও ইতোপূর্বে কখনোই ম্যাসেঞ্জারে মেসেজ পাঠায়নি। তাইতো ওর মেসেজটাকে গুরুত্ব দিয়েই, আমার ফিরতি কল করা।
“ভাইয়া, কিভাবে যে কথাটা বলবো বুঝে উঠতে পারছি না। ভীষণ লজ্জার কিন্তু আবার কাছের লোকদের না বলে উপায়ও নেই। আমরা আসলে ভয়ানক বিপদে আছি ভাইয়া।” কথাগুলো বলার সময় সাবরিনার গলা কাঁপছে, ওর ধরা গলায় আসন্ন কান্নার আভাসটা স্পষ্ট।
“ভাইয়াকে নি:সংকোচে বলো, সুযোগ থাকলে অবশ্যই হেল্প করবো।” কথোপকথনের শুরুতেই সাবরিনাকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করলাম।
“ভাইয়া করোনা পরিস্হিতি শুরু হওয়ার পর থেকেই খুবই আর্থিক সমস্যায় আছি। অনেক কষ্ট করলেও লোক লজ্জার ভয়ে কারো কাছে মুখ ফুটে সাহায্য চাইনি। এখন বলতে গেলে আমাদের বাসার বাজার এক প্রকার বন্ধই!
নিজের জন্য না হলেও মেয়ে দুটোর জন্য খুব খারাপ লাগছে। সাত আর নয় বছরের লক্ষ্মী মেয়ে দুটো কিভাবে যেন বুঝে ফেলেছে পরিবারের এ দূর্দশার কথা। রোজা শুরু হওয়ার আগেই আমাদের সাথে ওরাও নফল রোজা রাখে। আর এই রমজান মাসে ওরা এখনো পযর্ন্ত একটা রোজাও মিস দেয়নি!” কথাগুলো বলেই সাবরিনার কান্না, আমার চোখও ভিজে এলো।
বছর দুয়েক আগে শেষবার যখন দেশে গিয়েছিলাম, সাবরিনার সাথে একটা বিয়ের অনুষ্ঠানে দেখা হয়েছিল। মুহূর্তেই মনে পড়ে গেলো পরীর মতো ওর দুটো ফুটফুটে মেয়ে সারাক্ষণ এদিক ওদিক ছুটে বেড়ানোর দৃশ্যটার কথা। সাবরিনার বর সোহেলও বেশ স্মার্ট, আমাদের ভোলারই ছেলে। একটা বায়িং হাউজে জব করে, আমার সাথে বেশ আন্তরিকতা নিয়েই কথা বলেছিল। নিঃসন্দেহে পুরো পরিবারটাকে সুখী পরিবার বলেই মনে হয়েছিল।
“ভাইয়া, বনশ্রীর আমাদের এই ভাড়া ফ্ল্যাটটার এখন তিনমাসের ভাড়া বকেয়া। গত সপ্তাহে বাড়িওয়ালার লাস্ট ওয়ার্নিং পেলাম। সম্ভবত সামনের মাসে বাসাটা খালি করে দিতে হবে।” আমি এখন একটি কষ্টের গল্পের মনোযোগী শ্রোতা।
“বিশ সালের মার্চ মাসে করোনার প্রথম ধাক্কায় আমার স্কুলের চাকুরীটা চলে যায়। এরপর মে মাসে সোহেলেরটাও চলে গেল, বলতে গেলে বিনা নোটিশেই। চাকুরী থেকে দুজনের কেউই এক টাকাও সহায়তা পাইনি। ব্যাংকে অল্প কিছু জমানো টাকা ছিল। দ্রুত শেষ হতেই, আমাদের জীবনটা যেন পুরোপুরি অনিশ্চয়তায়।” সাবরিনার কথায় অনেক হতাশা, আমি একেবারেই চুপ।
“সোহেল আজীবন এই বায়িং হাউজের চাকুরীতেই। চাকুরী চলে যাওয়ার পর শত চেষ্টা করেও আজ পযর্ন্ত একটা চাকুরী ম্যানেজ করতে পারিনি। আজও একটা অফিসে যাচ্ছে চাকুরীর খোঁজে।
এই ঘোরতর বিপদে লালমোহন থেকে আমার শ্বশুর তিনমাস আগ পযর্ন্ত বাসা ভাড়ার টাকাটা পাঠাতেন। উনার নিজের জমানো পুরো অর্থ আমাদেরকে দিয়ে এখন নিজেই নিঃস্ব। আমার বাবা অবশ্য এখনো কিছু টাকা পাঠাচ্ছেন। তবে বড় ভাইয়া করোনায় মারা যাওয়ার পর থেকে আমাদের পুরো পরিবারই আর্থিক কষ্টে আছে। তাইতো আমি নিজেই আর আব্বাকে চাপ দিতে চাচ্ছি না। ” সাবরিনার পরিবারের করুন অবস্হাটা আমি মুহূর্তেই উপলব্ধি করতে পারলাম। সত্যই খুব খারাপ লাগলো। অনেক পরিবারের আজ একই অবস্হা।
“এরই মধ্যে সোহেল আর আমি পরিচিত অনেকের কাছ থেকে ধার করে অনেক টাকার ঋণে জর্জরিত। পাওনাদারদের তাগাদাতেও মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত। এদিকে বাচ্চা দুটো স্কুলের কথা চিন্তা করে ভোলাতেও চলে যেতে পারছি না। সব মিলিয়ে আমরা খুব করুন অবস্হায় আছি ভাইয়া।” সাবরিনার ধরা গলায় বলা কথাগুলো শুনে আমার দীর্ঘ শ্বাসটা সম্ভবত সাবরিনার কানেও গেল।
তবে এরপর সাবরিনার বলা কথাটার জন্য কিন্তু আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না ” ভাইয়া ভনিতা না করেই বলছি, রোজায় নিশ্চয়ই আপনাদের কিছু যাকাত দেওয়ার প্ল্যান রয়েছে। যদি সম্ভব হয়, আমাকে কিছু যাকাতের টাকা পাঠান। আমাদের ভীষণ উপকার হবে। ধার চাইছি না, কারণ ধার কবে শোধ করতো পারবো, তা জানি না। এছাড়া এমনিতেই আমরা অনেক ঋণগ্রস্ত, আর বাড়াতে চাইনা।” সাবরিনার বেশ স্বাভাবিক ভাবে আমার কাছে যাকাতের টাকা চাওয়াটা আমার মাথায় যেন বাজ হয়ে আসলো। ভীষণ দুঃখ পেলাম আমার এই অসহায় বোনটার জন্য।
“সাবরিনা, তুমি চিন্তা করো না শীঘ্রই আমি তোমাকে কিছু টাকা পাঠাবো। তবে আমার এ বছরের যাকাত অলরেডি আদায় করা হয়ে গেছে। তাই টাকাগুলো তোমাকে ও তোমার দুই মেয়েকে ঈদ উপলক্ষ্যে উপহার হিসেবেই দেওয়া হচ্ছে বলে ধরে নিবে।” ইচ্ছা করেই যাকাতের তথ্যটা মিথ্যা করে বললাম। এরপর সাবরিনার ব্যাংক একাউন্ট ডিটেইলস নিয়ে, দ্রুত ফোন রেখে দিলাম। এরপর বিষন্ন মনে ভাবতে লাগলাম, সময় কতো দ্রুত বদলে যেতে পারে।
সেদিন রাতেই সাবরিনার আরেকটা মেসেজ। যারপরনাই অবাক হলাম “ভাইয়া সোহেলের আজ একটা চাকুরী হয়েছে। আপনাকে এখন আর কোন টাকা পাঠাতে হবে না। অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া। আমাদের জন্য দোয়া করবেন।”
ছোট্র একটা মেসেজ, অনেকদিন পর আমাকে ভীষণ খুশি করে দিল। শেষ কবে এতো সুখী বোধ করেছিলাম তা মনে করতে পারছি না। সাথে সাথেই আমার ব্যাংকের অনলাইন একাউন্টে বসে গেলাম। সাবরিনাকে প্রতিশ্রুত ঈদ সেলামীটা পাঠিয়ে দিলাম, তখুনি। এতদিন কষ্টের পর আমার বোন আর ভাগ্নিরা নিশ্চয়ই এবার একটা আনন্দময় ঈদ প্রত্যাশা করে। প্রত্যেকের ঈদ হউক আনন্দময়।
শেষ
2.সমস্যা নিয়ে স্ট্যাটাস
বাংলাদেশে এখন খুব গরম।
পেটের সমস্যা বহুগুন বেড়ে গেছে। হজমে সমস্যা হয়, এরকম গুরুপাক খাবার থেকে বিরত থাকবেন। পানি খাবেন বেশি। দোকানে হাতে চিপা তেঁতুলের রস, রাস্তার শরবত-টরবত একদম খাবেন না। তারচাইতে বাসায় ঠান্ডা বেলের শরবত, কাঁচা আমের শরবত, তরমুজ খেয়ে হাইড্রেটেড থাকবেন। যারা নতুন বিয়ের করেছেন, তারা স্বশুর বাড়ি গিয়ে শাশুড়ি আম্মার দুই হাত ধরে অনুরোধ করে বলবেন, আম্মা.. দুইটার বেশি আইটেম করবেন না, চুলোর পাশে কম থাকবেন। কম দামি মাছ মাংসেও ভালো আইটেম বানানো যায়। মুরুব্বিদের বেশি চুলার কাছে যেতে দিবেন না।
.
এ গরমে সকালের বেস্ট নাস্তা হলো ঝিঙে ভাজি দিয়ে রুটি। সাথে একটু পাটালি গুড়। এ জীবনে অনেক সবুজ দেখছি, কিন্তু ঝিঙে ভাজির মতো মিষ্টি সবুজ পাইনি। শুধু নামেই ভাজি; সবজি থেকে পানি বের হয়ে তরকারির মতো হয়ে যায়। ঝোলটা বেশি মজা। যদি ঝিঙে না পান, পাঁচফোড়ন দিয়ে মিষ্টি কুমড়া ভাজি করলেও হবে। খোসা পাতলা করে ছিলবেন, যাতে টুকরাগুলো সেদ্ধ হলেও ভেঙে না যায়। এর ফ্লেভারের কোনো তুলনা নাই। প্রতিদিনই রঙিন সবজি খাবেন।
.
দুপুরে বেস্ট আইটেম হলো কাঁটাওয়ালা বাটা মাছের দোপেঁয়াজা আর ঘন মাসকালাইয়ের ডাল। মাছে যত কাঁটা, তত স্বাদ। মাছ হলো প্রেম আর গোলাপের মতো; কাঁটা না থাকলে মজা নাই। এ চাইতে পুষ্টিকর আর রুচি বর্ধক খাবার যদি কেউ দেখাতে পারেন, এই জাভেদ ভাত খাওয়াই ছেড়ে দিবে।
মাসকালাইয়ের ডাল খাওয়ার নিয়ম হলো উঁচু রেলিং দেওয়া থালের সেভেন্টি ফাইভ পার্সেন্ট ডাল দিয়ে ভর্তি করে তারপর ভাত ছাড়তে থাকবেন। পরীক্ষাগারে পানিতে এসিড ঢালার মতো; ভুলেও এসিডে পানি ঢালবেন না। ঠিক উপচানোর আগে স্টপ করে দিবেন। তারপর বাটা মাছটা আস্তে করে ভাসিয়ে দেবেন। ঠিক যেন বঙ্গোপসাগরের মাঝে চর কুকরি মুকরি। গামলা গামলা ভাত চালান করে শেষ পর্যন্ত লোকলজ্জার ভয়ে আপনাকে থামতে হবে। হাফটাইমে দাঁড়িয়ে এঁটো হাত আসমানে তুলে আস্থাভাজন কাউকে অনুরোধ করবেন লুঙ্গির গিট্টু আরো লুজ করে দিতে। মহিলারা কী করবেন আমার জানা নাই।
.
মাসকালাইয়ের ডালের সুবিধা হলো একটু পিঁয়াজ আর কাঁচামরিচ দিয়ে সেদ্ধ করলেই কেল্লা ফতে। যে খুশবু লুটে রে ভাই.. ভাত চিবানোরও টাইম পাবেন না; শুধু সুরুৎ সুরুৎ আওয়াজ। ক্ষুধার্ত আইড় মহিষের সামনে লবন মেশানো এক ড্রাম ভুষির পানি দিলে যেভাবে পাম্প হতে থাকে! [এ উদাহরণ আমি আগেও দিয়েছি, আবারো দিলাম বলে দুঃখিত] বাটা মাছের কাটা নিয়ে টেনশন করবেন না; গলায় বাধলে দুই নলা ভাত না চিবিয়ে ফাউ ফাউ গিলে ফেলবেন। ঝামেলা করে ইলিশ মাছের পেটির ‘ভি’ শেপড কাঁটা; বাপ রে বাপ.. গলায় বিঁধলে বাঘের পা ধরে কান্নাকাটি করলেও লাভ হয় না। শেষমেশ সারসের কাছে যাওয়া ছাড়া উপায় থাকে না।
.
আর রাতে ভাত চুলায় দেওয়ার সময় একটা পাতলা সুতির পরিষ্কার কাপড়ে দুই মুঠ মসুরের ডাল পুটলি বেঁধে চালের মধ্যে ছেড়ে দেবেন। ভর্তা হবে। সাথে এক পোয়া কচি ঢেঁড়শ। ভাতের মধ্যে সেদ্ধ হতে থাকবে। পারলে মা অথবা নানী-দাদিকে দিয়ে ভর্তা করিয়ে নেবেন। উনাদের হাতে জাদু আছে। না থাকলে আর উপায় কি… নিজেই করে ফেলবেন। সিম দিয়েও হবে, তবে পোকার ভয় থাকলে রড লাইটের আলোয় চেক করে নেবেন। আগেকার আমলে ক্যামেরার নেগেটিভ ফিল্ম চেক করার মতো। সর্ষে তেল, কাঁচামরিচ আর পেঁয়াজ দিয়ে ভর্তা। অমৃত! ভরা পেটে ছাদে গিয়ে উদাস ভঙ্গিতে কামিনী গাছটার আশ-পাশে একটু হাঁটাহাঁটি করে মধুর স্মৃতিগুলো একটু ঝালাই করে নেবেন। ঘষামাজা না করলে স্মৃতিতেও ধুলো পড়তে থাকে।
.
আগে দেখতাম আম্মা বেগুন পুড়িয়ে প্লেটের উপর মেলে ধরে ভেতরে পোকা খুঁজতো। পেয়েও যেত বেশ কিছু। অতো সুন্দর সবুজ সেদ্ধ পোকাগুলো কেন যে ফেলে দিতো। আমি শিওর আগে হাজার হাজার বেগুন পোকা নিজের অজান্তেই খেয়েছি। ওগুলা নাকি অনেক পুষ্টিকর আর স্বাদের। মুখের মধ্যে মাখনের মতো গলে যায়। তবে ইঁচড়ে লার্ভাগুলোর মাথা একটু ঝামেলা করবে; সামনের দাঁত দিয়ে মাথাটা কেটে নিয়ে খেজুরের বোঁটার মতো থু করে ফেলে দিলেই হলো?
.
রাতে কম খাবেন।
দুপুরের খাবারের সাথে এডজাস্ট করতে হবে। একটা টেবিল ফ্যান কৌশলে মশারির মধ্যে ঢুকিয়ে নিয়ে ফাঁকফোকর সিলগালা করে দেবেন। টিকটিকিগুলো ব্যস্ত পোকা ধরার খেলায়। এরা এতই চালাক আর ধুরন্ধর.. চিতা বাঘ ফেল। এক গাদা ফড়িং গিলে পেট ফুলিয়ে হেলে দুলে দেয়ালে হেঁটে বেড়াবে রাজার হালে। লেবু চায়ে চুমুক দিতে দিতে সেবা প্রকাশনীর “তিনটি উপন্যাসিকা” জাতীয় শ্বাসরুদ্ধকর বই পড়তে পড়তে কখন যে ঘুমিয়ে যাবেন.. অনেক রাতে হয়তো বয়ে যাবে কালবৈশাখী ঝড়। লুকিয়ে চালাবে তান্ডব। কৃষ্ণচূড়া আর সজনে গাছের নরম ডালগুলো ভেঙে মাটিতে লুটোপুটি খাবে। জানালা দিয়ে হিমশীতল বাতাসের বন্যা বয়ে যাবে। নিমেষেই সব ঘাম শুষে নিয়ে শরীরে বুলিয়ে দেবে অনাবিল শান্তির পরশ। মুখের চামড়া হয়ে যাবে টানটান। তীব্র গরমের পরে এক পশলা শীতল বাতাসের মর্ম, স্বর্গীয় অনুভূতি বাংলাদেশের মানুষের চাইতে আর কে বেশি জানে?
.
মাঝ রাতে কারেন্ট চলে আসলে হঠাৎ ঘড়ঘড় আওয়াজ দিয়ে ঘুরে উঠবে সিলিং ফ্যান। ওটা বন্ধ করে, গায়ে চাদর মুরি দিয়ে আরেক দফা শান্তির ঘুম।
নির্ঘুম হুতুম প্যাঁচা কার্নিশে বসে গম্ভীর গলায় শাসাতে থাকবে দুষ্টু ইঁদুর আর সাপগুলোকে..
.
.
জাভেদ ইকবাল
৩.সমস্যা নিয়ে স্ট্যাটাস
আত্মহত্যা
-এই যে আপু, এত রাতে এখানে কি করছেন?
-আত্মহত্যা করতে আসছি। আপনার কোনো সমস্যা?
-হ্যাঁ
-কি সমস্যা?
-এখানে বসে আমি গাঁজা খাই
-তো?
-তো এখানে আপনার লাশ পাওয়া গেলে কাল থেকে পুলিশ আসবে। গাঁজা খাব কোথায়?
-অদ্ভুত লোক আপনি! একজন মানুষ আত্মহত্যা করতে যাচ্ছে। আর আপনি গাঁজা নিয়ে পড়ে আছেন?
-এটাকে বলে নিজের চরকায় তেল দেওয়া
-আপনার চরকায় তেল দেওয়া হয়ে গেলে এখান থেকে ফুটেন
-তা চলে যাব। তার আগে একটা প্রশ্ন আছে
-কি?
-আত্মহত্যা কি দিয়ে করবেন?
-বিষ খাব
-সেই পুরোনো টেকনিক। ট্রাই সামথিং নিউ, উইম্যান
-আমাকে উইম্যান বললেন কেন?
-ওমা, ট্রান্সজেন্ডার না কি আপনি?
-ট্রান্সজেন্ডার কেন হব?
-তাহলে? দেখে তো মনে হয় না আপনি মেইল
-আরে মেইল কেন হব?
-তাহলে আপনি কি? ভুত না কি? এই রে, আজকে মাল খাওয়ার আগেই পিনিক হলো!
-অসহ্য লোক আপনি। আমার বয়স ২৩, তেইশ বছরে মেয়েকে কেউ উইম্যান বলে?
-এবার বুঝছি
-বুঝলে যান
-যাচ্ছি, আরেকটা প্রশ্ন
-বলুন?
-কেন করবেন?
-কি কেন করব?
-আত্মহত্যা?
-তা জেনে আপনি কি করবেন?
-না মানে গল্পটা জেনে রাখলাম। বন্ধুবান্ধবের আড্ডায় বলতাম। একটু বাচাল স্বভাবের কি না!
-শচীনটা ধোঁকা দিছে
-শচীন কে?
-আমার বিএফ
-বিএফ মানে?
-বয়ফ্রেন্ড
-ধোঁকা দিলো বুঝলেন কি করে?
-হি হ্যাড সেক্স উইথ মাই বেস্টি। আই হ্যাভ দ্যাট ভিডিয়ো
-বেস্টি মানে কি?
-বেস্টফ্রেন্ড
-ওহ, মজা নিলো তারা, আর আপনি আত্মহত্যা করবেন?
-আমি শচীনকে অসম্ভব ভালোবাসি
-তো?
-তো কি? ধোঁকা খেয়েছেন কোনোদিন? খেলে বুঝবেন কতটা কষ্ট হয়
-না তা খাইনি। তবে জয়েন্ট খেয়েছি। এত ভালো লাগে। ট্রাই করবেন না কি একবার?
-জয়েন্ট কি?
-গাঁজা গাঁজা
-আমি কোনোদিন সিগারেটও খাইনি। আর আপনি আমাকে গাঁজা সাধছেন?
-আপনি তো কোনোদিন আত্মহত্যাও করেন নি। তবুও ঢ্যাং ঢ্যাং করে চলে আসছেন। তাও আবার ওল্ড টেকনিক!
-অসহ্য লোক তো আপনি
-মন্দ বলেন নি, হাতে ওটা কিসের টিউব?
-বিষের
-অ্যালুমিনিয়াম ফসফেট না কি?
-হ্যাঁ
-নিজেকে ছাড়পোকা মনে হয়?
-না তো
-তাহলে অ্যালুমিনিয়াম ফসফেট কিনেছেন কেন?
-এটাই পেয়েছি। আর আমি বিষ সম্পর্কে অত বেশি জানি না
-খুব স্বাভাবিক, জানলে বিষ খেয়ে মরতেন না। আচ্ছা এর ভেতর ৩০ টা ট্যাবলেট আছে। সব মনে হয় না দরকার হবে আপনার। বাকিগুলো আমাকে দিয়ে দিন। রুমে আজকাল ছাড়পোকা ভালোই ডিস্টার্ব করে।
-আচ্ছা আপনি কি রক্তে মাংসের মানুষ?
-কেন বলুন তো!
আমি আত্মহত্যার কথা বলছি অথচ আপনি একটু বিচলিত নন?
-আমি মানুষ তবে বিচলিত নই!
-কেন?
-আপনার জীবনের গুরুত্ব আপনার কাছেই বেশি থাকা উচিত। সেই আপনিই সেটা ধ্বংস করে দিতে চাচ্ছেন। এখানে আমি বিচলিত হয়ে কি করব?
-উফফ
-তবে আপনি আমার সাথে জয়েন্ট খেতে পারেন। হান্নানকে দিয়ে গত সপ্তাহেই কুষ্টিয়া থেকে আনিয়েছি। একের জিনিস!
-গড
-আবার গডকে টেনে আনছেন কেন?
-জীবনে কখনো বেঁচে থাকার ইচ্ছে হারিয়েছেন?
-অসংখ্যবার
-কি করেছেন তখন?
-জীবনকে উপভোগ
-কিভাবে?
-মদ খেয়েছি, গাঁ
-গাঁজা খেয়েছেন তাই তো?
-আরে আরে, আপনি বুঝলেন কি করে?
-আপনাকে দেখেলেই বোঝা যায়
-বলেন কি!
-আপনি আগাগোড়া একটা মাদকাসক্ত
-আর আপনি মরনাসক্ত
-আই হ্যাভ আ রিজন এটলিস্ট
-নট ইনাফ টু ডাই
-কথায় তো মনে হয় পড়াশোনা জানেন
-তা জানি বৈকি! দর্শন বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর
-ক্যাম্পাসেই তো খেতে পারেন, এই ভাগাড়ে কেন আসছেন?
-আপনাকে ফলো করতে করতে
-মানে?
-আপনার মোবাইল আর হল কার্ড কোথায়?
-ব্যাগেই আছে
-চেক করে দেখুন
-এ কি, পাচ্ছি না তো
-এগুলো তো?
-আপনার কাছে কি করে গেলো?
-মুদি দোকানের ওখানে ফেলে এসেছিলেন। ডাক দেওয়ার আগেই রিকশায় ওঠে এখানে চলে আসলেন। ফলো করতে করতে আমিও চলে এসেছি
-তাহলে আপনি এখানে গাঁজা খেতে আসেননি
-আমি গাঁজা খাই না। শুধু আপনার সাথে কথা বলা শুরু করতে চেছিলাম।
-কেন?
-লাল টুকটুকে একটা মেয়ে এত রাতে এই ভাগাড়ে কি করে তা জানতে কার না ইচ্ছে করবে?
-ওহ
-একটা কথা বলি আপনাকে
-বলুন
-জীবন কোনো তুচ্ছ ব্যাপার না
-জানি
-জেনেও তাচ্ছিল্য করাটা অন্যায়
-আই যাস্ট লস্ট মাই মাইন্ড
-দেন ফাইন্ড ইট। হোয়াট ইজ লস্ট ক্যান বি ফাউন্ড!
-এটা কি আপনার কথা
-না, মুভির ডায়লগ!
-একটা উপকার করবেন?
-মাইন্ড খুঁজে দিতে হবে?
-না, আমাকে হলে পৌঁছে দেবেন?
-হল গেট তো এখন বন্ধ থাকার কথা
-তাও ঠিক
-রাতে মেডিকেল মোড়ে আড্ডা দিয়েছেন কখনো?
-না
-আমার সাথে যেতে পারেন
-গিয়ে কি করব?
-জীবন দেখবেন
-কিভাবে?
-সেটা চায়ের দোকানে বসলেই দেখতে পারবেন।
-কি দেখা যায় ওখানে?
-এক মুহুর্ত বেঁচে থাকতে মানুষের আহাজারি। কাছের মানুষদের ক্লান্তিহীন দৌড়ঝাঁপ। দিনের পর দিন অনিদ্রা। টিকে থাকার লড়াই!
-চলুন তবে
-এতক্ষণে আপনার নামটাই তো জানা হলো না
-আইডিকার্ডে নাম দেখেন নি?
-খেয়াল করিনি
-সাবা
-সুবাসী বাতাস
-মানে?
-আপনার নামের অর্থ
-এতকিছু কি করে জানেন?
-ঐ যে বললাম, একটু বাচাল স্বভাবের কি না! জানতে হয়!