একসমুদ্রপ্রেম!
কলমে: নুসরাত সুলতানা সেঁজুতি
(৫১)
অগাধ,নিবিষ্ট ঘুমে মগ্ন পিউয়ের মনে হলো কেউ তার দিকে চেয়ে আছে। চক্ষুপল্লবই নেই সেই অজ্ঞাত মানুষের। পলক ফেলছে না। এত কী দ্যাখে? কেই বা দ্যাখে? পিউয়ের ভ্রু এক জায়গায় গুছিয়ে এলো। বিরক্ত হলো,শান্তির নিদ্রায় ব্যাঘাত ঘটায়। তৎপর চোখ মেলতেই মুখের সামনে দৃশ্যমান হলো একটি তামাটে চেহারা। পিউয়ের ভ্রু কুঞ্চন মিলিয়ে যায়। স্তব্ধ দুটো হরিনী দৃষ্টি। ধূসরকে এইভাবে চেয়ে থাকতে দেখে লজ্জায় আড়ষ্ট হলো পরপর। ধূসর কিছু বলল না। পিউ হঠাৎ চোখ খোলায়,অপ্রতিভ ও দেখালোনা তাকে। বরং একই রকম ঝুঁকে রইল সে। ফ্যানের প্রবল হাওয়ার প্রোকোপে পিউয়ের ললাটে এসে চুল পরে। ধূসর সে চুল সরিয়ে দিল স্বযত্নে।পরপর দুই ঠোঁট নেড়ে জানাল,
‘ গুড মর্নিং! ‘
পিউ হা করে তাকায়। ভীষণ অবাক সে। তারপর হাসতে যাবে এর আগেই ধূসর চোখমুখ পাথরের মত শক্ত করে বলল, ‘ বেলা অবধি ঘুমাবোর জন্যে কেউ কক্সবাজারে আসেনা। তৈরী হয়ে নীচে নাম,কুইক।’ পিউয়ের হাসিটা ফুটতে না ফুটতেই উবে গেল৷ ধূসর লম্বা পায়ে ত্যাগ করল কামড়া। সে ফটাফট উঠে বসে। ছড়ানো চুল গুছিয়ে নেমে দাঁড়ায়। টেবিলের পাশে নিজের ফোন দেখে ধূসরের ওপর খুশি হলো ফের। ওতো ভয়ের চোটে রুমে রেখে এসেছিল,উনি নিয়ে এসেছেন মনে করে?
পিউ ফোন তুলল হাতে৷ তানহা এখানকার আপডেট চেয়ে চেয়ে পাগল করে দিচ্ছে। অথচ স্ক্রিনে সাদিফের এত গুলো কল দেখেই চোখ কপালে তুলল। তড়িঘড়ি করে ব্যাক করল তৎক্ষণাৎ।
পিউয়ের নম্বর দেখে অধৈর্য হাতে রিসিভ করল সাদিফ। ওপাশ থেকে ব্যস্ত স্বর ভেসে এলো,
‘ ভাইয়া কল দিয়েছিলেন? আমি একদম দেখিনি।’
সকাল সকাল ঘুমঘুম, বাচ্চা কণ্ঠটা ভেতর নাড়িয়ে দিলো ছেলেটার৷ দীর্ঘ হেসে বলল,
‘ সমস্যা নেই। কেমন আছিস?’
‘ ভালো। আপনি? ‘
মনে মনে বলল,
‘ তোকে ছাড়া যেমন থাকা যায়।’
মুখে বলল,’ এইত একইরকম। খেয়েছিস?’
‘ না, সবে উঠলাম। আপনি কী অফিসে?’
‘ না। বের হব, তৈরি হচ্ছিলাম। ‘
‘ ভিডিও কল দেব? বাড়ির সবাইকে দেখতাম।’
সাদিফের হাসি বেড়ে আসে। ভেবে নিলো,বাড়ির সবাইকে নয়, পিউ হয়ত তাকেই দেখবে। লজ্জায় বলছে না। বলল, ‘ আমি দিচ্ছি।’
পিউয়ের সদ্য ঘুম ভাঙা চোখমুখ দেখে সাদিফের বক্ষ শীতল হলো। চোখ জুড়ালো। থেমে থেমে যাওয়া কণ্ঠস্বরে কথাবার্তা চালায়। এরপর নীচে নামে। পিউ বাড়ির সবার সাথে কথা বলল,দেখল। রিক্ত,রাদিফও বাদ নেই। শুধু বাবা,চাচ্চুরা অফিসে থাকায় কথা হয় না। তবে বাড়ির সবার একটাই কথা,
‘জলদি ঘোরাঘুরি শেষ করে আয়। তোদের ছাড়া ভালো লাগছে না।’
কথাটা যে-ই বলছে,তাকেই চমৎকার লাগছে সাদিফের। এই কথা খানা মুখ ফুটে সে বলতে পারে না। যাক! কেউত তার হয়ে বলে দিচ্ছে ।
প্রখর তাপের মধ্য দুপুর। ঘড়ির কাঁটায় টিকটিক করছে দেড়টা। অফিসের সবাই লাঞ্চ করতে ঝটপট উঠল। মারিয়া মনিটর বন্ধ করে ব্যাগের চেইন খুলল। মা টিফিন দিয়েছেন ওকে। পরোটা আর ডিম পোচ হয়ত। খিদেও পেয়েছে বেশ। সে বাটি বের করতে গেল,এর মধ্যে সাদিফ এসে পাশে দাঁড়ায়।
‘ এই ম্যালেরিয়া,লাঞ্চ করবেন না?’
হৃষ্ট চিত্ত তার৷ মারিয়া তাকাল। বাটিটা বাইরে না এনে ঢুকিয়ে রাখল আবার। মিহি কণ্ঠে বলল,
‘ না মানে,হ্যাঁ…. ‘
‘ না মানে কী? চলুন একসাথে লাঞ্চ করি।’
মারিয়া চাইল, ”না” বলবে। সাদিফের কাছাকাছি থাকা তার জন্য বিপজ্জনক। হৃদয় খুইয়ে বসে এমনিই বিপদে আছে। এই বিপদ আর কত বাড়াবে সে? অথচ তাও ঠোঁট নেড়ে মানা করার সাধ্য হয়না । মন যে স্বায় দেয়না! তার দোনামনা ভাবমূর্তি দেখে সাদিফ কপাল বেকে বলল,
‘ কী হলো,বসে আছেন কেন? চলুন,চলুন!’
মারিয়ার কোনও জবাবের তোয়াক্কাই করল না। হাতটা অকপটে টেনেটুনে সাথে নিয়ে চলল। মারিয়া একটু অবাক হয়। হাতের দিকে চায় বিস্ময়ে। পরপর ভাবে,সাদিফ তার মনের মানুষ হলেও,সেতো ওই চোখে বন্ধু। হাত ধরা তাতে এমন কী!
সাদিফ ক্যান্টিনে এসে থামল। জিজ্ঞেস করল,’ কী খাবেন?’
‘ আপনি যা খাবেন,তাই।’
‘ আপনার কোনও পছন্দ নেই?’
মারিয়া মনে মনে বলল, ‘ আপনার পছন্দই আমার পছন্দ। ‘
মুখে কিছু না বলে মাথা নাড়ল দুদিকে। সাদিফ হাসল। ভাত,মাংস সহ কয়েক পদ অর্ডার করল। পরিচ্ছন্ন টেবিল বেছে বেছে বসল । কথা চলল টুকটাক। তার মুখস্রী জ্বলজ্বল করছে। যেন পূর্বাকাশে,খুব ভোরে জেগে ওঠা শুকতারা। মারিয়া গভীর নজরে দেখল সেই মুখ। ওনাকে আজ একটু বেশিই খুশি লাগছে না?
ওয়েটার এসে
খাবার দিয়ে গেলেন এর মধ্যে। গা থেকে ধোঁয়া ছাড়ছে সেসবের। সাদিফ প্রফুল্ল কণ্ঠে বলল,
‘ লুকিং ডিলিশিয়াস! ‘
তারপর খেতে শুরু করল। কিন্তু মারিয়া তখনও চেয়ে। সাদিফ লোকমা তুলতে গিয়ে থামল,তাকাল, ভ্রু কুঁচকে বলল,
‘ খাচ্ছেন না কেন?’
‘ হু? খাচ্ছি।’
তারপর মন্থর গতিতে হাত চালাল ভাতে৷ সাদিফের সাথে এক টেবিলে এর আগেও খেয়েছে সে। ও বাড়িতে। কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা লাগছে খুব। লোকটা এত খুশি,অথচ তার মন অশান্ত কেন? কী কারণ এর?
দুজনের খাওয়া শেষ হয়। সাদিফ ঠোঁট মুছতে মুছতে প্রস্তাব রাখল, ‘ কফি?
মারিয়া মাথা নাড়ে। ‘ তাহলে চা?’
‘ হ্যাঁ। ‘
‘ তবে আমিও চা নেই।’
দুটো দুধ চা এলো ওয়ান টাইম কাপে। ওরা তখনও সেই টেবিলেই বসে। মারিয়া একটু চুপ থেকে বলল,
‘ ধূসর ভাইয়ারা কবে ফিরবেন?’
‘ কদিন পরেই। ‘
‘ ওহ।’
সাদিফ কাপে চুমুক দিতে দিতে আনমনে বলল,
‘ পিউ বাড়িতে নেই, আজ দুদিন হলো। ‘
কথাটা ধীরুজ স্বরে বললেও মারিয়ার কানে ঠিক পৌঁছায়। সে কাপের চায়ের দিক চেয়ে হাসল। খুব সামান্য,মৃদূ হাসি। সাদিফ খেয়াল করে বলল,
‘ হাসছেন যে!’
মারিয়া নিশ্চুপ। সেকেন্ড খানেক পার করে সরাসরি তার চোখের দিক চেয়ে শুধাল,
‘ আপনি পিউকে ভালোবাসেন, তাইনা?’
সাদিফ চমকে উঠল। হতবিহ্বলতায় কিছুক্ষণ কথাই বলতে পারল না। তার লাল রঙা ঠোঁট নড়ছে। দুচোখ জুড়ে রাজ্যের বিস্ময়।
মারিয়া মুচকি হাসল। ভুরু নাঁচিয়ে বলল,
‘ মিথ্যে বললাম?’
সাদিফ বোকা বনে গিয়েছে। কেশে গলা পরিষ্কার করে ঠিকঠাক হলো এবার। মুখ খুলতে গেলেই সে হুশিয়ার করল,
‘ ভালোবাসলে মিথ্যে বলতে নেই। স্বীকার করার মত সৎ সাহস রাখা উচিত বুকে।’
সাদিফের দৃষ্টি বদলায়। অস্বস্তি,আর অপ্রস্তুতা পালটে আসে স্বকীয়তার হাবভাবে। সুদৃঢ় কণ্ঠে জানায়,
‘ হ্যাঁ, বাসি।’
মারিয়া তৈরী ছিল। জানত,এরকম কিছুই শুনবে। কিন্তু তাও,বুকটা ভেঙে চুরমার হলো অকারণে। নিজের সন্দেহের তীর ঠিক জায়গায় ছোড়ার জন্যে গর্বে ফুলে না ওঠা বক্ষ দুইভাগ হলো পলকে। খুব যতনে ভেতরের কষ্ট চেপে, আপ্লুত হাসল সে। সাদিফ আগ্রহভরে শুধাল
‘ কিন্তু আপনি কী করে জানলেন? এ কথা কেউ জানেনা,এমনকি পিউ নিজেওনা। কে বলেছে তাহলে? ‘
‘ কে বলবে? আন্দাজ করেছি।’
‘ কী করে? ‘
‘ পিউয়ের দিকে আপনার তাকানো, আর বদলে যাওয়া চাউনী দেখে। তাছাড়া আপনার চেহারাতেই ভেসে ওঠে,আপনি ওকে ভালোবাসেন।’
সাদিফ হাসল। যেন উড়িয়ে দিল যুক্তি। বলল,
‘ ভেরী ফানি! আমি যথেষ্ট নিয়ন্ত্রনে থাকি। নাহলে পিউ এতদিনে বুঝতে পারত নিশ্চয়ই। ‘
মারিয়ার হাসি মোছেনি৷ ভীষণ গুছিয়ে সরাসরি বলল,
‘ হয়ত আমার মত করে ওরা আপনাকে দেখে না।’
বলার সময় তার মুখভঙ্গি ছিল স্বাভাবিক। কিন্তু কণ্ঠে কী যেন মেশানো! সাদিফের অদ্ভূত লাগে,হাসিটা কমে আসে।
মারিয়া খেয়াল করতেই মেকি উৎফুল্ল হয়ে বলল,
‘ তাহলে ঢিঁল আমি ঠিক জায়গায় ছুড়লাম মিস্টার সাদিফ। আমার এলেম আছে বলতে গেলে।’
‘ তাইত দেখছি। ‘
‘ কবে থেকে ভালোবাসেন পিউকে?’
সাদিফ মনে করার ভঙিতে বলল,
‘ সঠিক বলতে পারব না। তবে যতটুকু মনে আছে,বৃষ্টি তে সবাই মিলে ভিজছিলাম,বাঁজ পরায় পিউ আকড়ে ধরেছিল আমায়। সেবার প্রথম বার কিছু অনুভব হয়। ভালো লাগতে শুরু করে,এরপর সময় গড়ালে ভালোবাসা।’
‘ পিউকে জানাবেন না?’
‘ জানাব। চাইছিলাম আগে আম্মুকে বলব। সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব দেব বড় চাচ্চুর কাছে। কিন্তু মাঝে পুষ্পর সাথে বিয়ের চক্করে এলোমেলো হয়ে গেল সব প্ল্যান। তাই এখন, ওকেই আগে জানাতে হবে। ‘
মারিয়ার গলার কাছে কা*ন্না দলা পাকিয়ে ঘুরছে। যেন এক্ষুনি শ্বাসনালী ছিদ্র করে বেরিয়ে আসবে। যাকে ভালোবাসে,তার মুখে অন্য কাউকে ভালোবাসার কথা শুনতে কার ভালো লাগে? তারও লাগছে না। একটুও না। কষ্ট হচ্ছে,এক সমুদ্র সমান কষ্ট!
সাদিফ হঠাৎ নিজে থেকেই বলল,
‘ একটা সিক্রেট বলব? আপনি তো আমার বন্ধু,সিক্রেট বলাই যায়, তাইনা?’
‘ যদি মনে হয়,আমি আপনার বিশ্বাসের যোগ্য,তবেই।’
‘ আচ্ছা,এক সেকেন্ড। ‘
সাদিফ পকেট থেকে একটা ছোট বাক্স বের করল। গাঢ় লাল রঙ তার৷ ঢাকনা খুলে মারিয়ার সামনে ঘুরিয়ে শুধাল,
‘ কেমন হয়েছে?’
‘ সুন্দর!পিউয়ের জন্য নিশ্চয়ই? ‘
সাদিফ অবাক কণ্ঠে বলল, ‘ আপনার আই কিউতো সুপার্ব !’
মারিয়া হাসে। টেনেহিঁচড়ে বের করা হাসি।
সাদিফ বলল,
‘আসলে,কাল পিউয়ের জন্মদিন। ভাবছি কালই ওকে এই আংটি দিয়ে মনের কথা জানাব। ‘
মারিয়ার শ্বাস থামল। রক্ত প্রবাহ বন্ধ যেন। তবুও সহজ স্বরে বলল,
‘ কিন্তু ওতো ঢাকাতে নেই।’
‘ জানিতো,তাই জন্যে আজকে অফিস আওয়ারের আগে আগে,বেরিয়েই কক্সের ফ্লাইট ধরব। বারোটার আগে পৌঁছালেই হবে। সবার আগেই উইশ করব আমি। ‘
মারিয়া বুক হুহু করে কাঁ*দে। একটু থেমে শুধায়,
‘ পিউ অন্য কাউকে ভালোবাসে কী না জানেন?’
‘ কে পিউ? না না। আমি হান্ড্রেড পার্সেন্ট শিওর,ও কাউকে ভালোবাসেনা। এসব বোঝে কী না তারই ঠিক নেই।’
তার প্রত্যেয় অটল। আত্মবিশ্বাসী কণ্ঠ।
মারিয়া দীর্ঘশ্বাস ফেলল। ভাবল,’ আপনি কিছুই জানেন না। পিউয়ের আদ্যপ্রান্ত ঘিরে ধূসর ভাইয়ের নাম। সেখানে আপনার স্থান নেই,একটুও না। ‘
মুখে মধুর হেসে জানাল,’ শুভকামনা রইল।’
পুষ্প ছুটতে ছুটতে রুমে এলো। ইকবাল শার্টের বোতাম আটকাতে গিয়ে ওকে দৌড়ে আসতে দেখে থমকাল। জিজ্ঞেস করার আগেই, সে ঘন ঘন শ্বাস টেনে বলল,
‘ এই জানো,জানো কী হয়েছে?’
ইকবাল দুপাশে ঘাড় নাড়ে৷ কৌতুহলী সে। পুষ্প চোখ বড় বড় করে বলল,
‘ কাল,কাল পিউ আর ধূসর ভাই একঘরে ঘুমিয়েছে।’
ইকবাল তাজ্জব বনে বলল,
‘ কীহ? ‘
‘ হ্যাঁ । পিউয়ের রুমে তালা ঝুলছে। আমি ওকে খুঁজছিলাম। ভাইয়ার রুমের দরজা খোলা ছিল। ভাবলাম উনি উঠেছেন। উঁকি দিতেই দেখি পিউ ওনার বিছানায় গভীর ঘুমে তলিয়ে। একটু পর ধূসর ভাইকেও দেখলাম জেল লাগাচ্ছেন চুলে।’
ইকবাল বিমূঢ়তায় পল্লব ঝাপটাল চোখের।
‘ কী বোলছো? ধূসর তো এরকম নয়। ওতো ভালো ছেলে!’
পুষ্প ভ্রু বাকায়,’ তো আমি কখন বললাম ভাইয়া খারাপ!’
এই এক সেকেন্ড, তুমি কী মিন করছো? ওরা এক ঘরে শুয়েছে বলে আমি ওসব ভাবছি? ‘
‘ তাহলে? ‘
পুষ্প কটমট করে বলল,
‘ তোমার কি মাথায় ঘিলু নেই? আমি ওসব ভাবব কেন? আমি আমার ভাই-বোনকে চিনিনা? পিউ হয়ত রাতে ভয় পাচ্ছিল বা কোনও একটা কারণ হয়েছে বলে ও ঘরে ঘুমিয়েছে।’
‘ তাহলে এভাবে হন্তদন্ত পায়ে এলে কেন মাই লাভ? এটাত হেঁটে এসেও বলা যেত তাইনা? তুমি আসলে ঠিক কী মিন করেছো নিজে বুঝেছো তো?’
পুষ্প এ যাত্রায় নিভে গেল। মাথা চুল্কে বোকা কণ্ঠে বলল,
‘ আসলেইত,আমি যে কী বোঝালাম নিজেই জানিনা।’
‘ থাক। আমি যাচ্ছি,গিয়ে গুছিয়ে ব্যাপারটা দেখে আসছি।’
প্রতাপ সমেত ইকবাল হাঁটা ধরল। পেছনে পুষ্প বলল,
‘ বেশি গোছাতে গিয়ে ঘেঁটে দিওনা আবার।’
‘ আরে না না। আমি অত বেকুব নই।’
‘ চালাকও নও। ‘
ইকবাল ফিরে তাকাল। বউয়ের দিক চাইল ব্যর্থ চোখে। তারপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে বেরিয়ে গেল। পেছনে পুষ্প ঠোঁট চেপে হেসে ওঠে।
ধূসর ও বেরিয়েছে তখন,ইকবালের সাথে ওমনি মুখোমুখি হলো। দুজন সেই মুহুর্তে থামে। ধূসর ওকে দেখতেই বলল,
‘ তোর কাছেই যাচ্ছিলাম। শোন…’
ইকবাল মাঝপথে বলল,
‘ কেন,হেল্প চাই?’
সাথে ভ্রু নাঁচাল সে। ধূসর বলল, ‘ হ্যাঁ… ওই….’
সে আবার আটকে দিয়ে বলল,
‘ কী লাগবে,পরামর্শ? ‘
সাথে দাঁত দেখিয়ে দুষ্টু দুষ্টু হাসল। যেই হাসিতে সন্দেহ জাগল ধূসরের। ভ্রু গুটিয়ে বলল
‘ কীসের পরামর্শ? ‘
সে ‘ চ ‘ সূচক শব্দ করে বলল,
‘ ধূসর! আর নাটক করোনা ভায়া। পর্দা ফাঁস হয়ে গিয়েছে। ‘
ধূসর সরু করল চোখ,
‘ কীসের পর্দা?’
ইকবাল মেকি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
‘ কে যেন আসতেই চাইছিল না? বলছিল,তোর মাথায় খারাপ হয়ে গেছে ইকবাল? একটা কিছু বললেই হলো,পিউ কী করে আসবে? এটসেট্রা এটসেট্রা!’
‘ তো?’
‘ তো? হুহ,নিজে আসবিনা,পিউকেও আনবিনা। আর যেই দুজনেই এলি,একদম এক ঘরে? বাচ্চা মেয়ে ধূসর,এটলিস্ট বিয়ে অবধি ওয়েট করতে পারতি।’
ধূসর হতভম্ব চোখে চেয়ে রইল কিছুক্ষণ। পরপর দাঁত খিঁচে বলল,
‘ টেনে এক চড় মারব! তারছেড়া কোথাকারে! তোর আমাকে এমন মনে হয়?’
‘ মনে হওয়ার কী আছে? সব তো সামনা-সামনি দেখছি। দুধ কা দুধ,পানি কা পানি হয়ে গিয়েছে। ‘
‘ সব সময় যেটা দেখি সেটা সত্যি হয়না। পিউ ভ*য় পাচ্ছিল বলেই…
থামল,বলল,
‘ কিন্তু তুই এসব আজে-বাজে কথা কবে থেকে শিখেছিস? আমিত জানতাম, আমাকে তোর থেকে ভালো কেউ চেনেনা। ‘
ইকবাল হেসে ফেলল এবার। কাধ ধরে বলল
‘ মজা করছিলাম বন্ধু,ডোন্ট বি সিরিয়াস।’
ধূসরের মেজাজ খারাপ হলো। নাক মুখ ফুলিয়ে বলে,
‘ তুইও যেমন, তোর মজাও তেমন।’
হাতটা হঁটিয়ে দিয়ে গজগজে রাগ সমেত হাঁটা দিতেই ইকবাল উদ্বেগ নিয়ে বলল,
‘ আরে,আরে ধূসর আমি মজা করছিলাম তো। বন্ধু,এই শালা, না না সমন্ধি, শোন না ভাই।’
ধূসর শুনল না। চলে গেল। ইকবাল জ্বিভ কে*টে ব্যস্ত পায়ে পিছু নিলো তার। এইরে,চটে গেছে ছেলেটা! মজার ডোজ একটু বেশিই হয়ে গেল।
পিউ তীক্ষ্ণ চোখে পুষ্প আর ইকবালকে লক্ষ্য করছে। এরা সেই গতকাল থেকে ফিসফিস করে কথা বলছে। বলুক,ওটা সমস্যা না। কিন্তু তাকে দেখলেই কুঁলুপ আঁটছে মুখে। কেন? ব্যাপারটা কী! এরকম করার কী আছে? যেন বিশাল যু*দ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে দুজন। আর সে হলো শত্রুপক্ষের লোক। তাকে কিছু শোনানো পাপ,মহাপাপ।
সে শুনতেও চাইল না। দাঁড়িয়ে থাকল দূরে। ব্যকুল চোখে একবার ধূসরকে খুঁজল। সেই বিছানা ছাড়ার পর মানুষটাকে আর দেখেনি। কোথায় গেলেন উনি?
সকাল থেকে তার সাথে একটাও কথা বলেনি। দুপুরে খাওয়ার সময়েও না। এমনকি সবার গ্লাসে পানি ঢেলে দিলেও তাকে দেয়নি। একবার ভুল করে চেয়েও দেখেনি ওকে। উনি কী কালকের ব্যাপার নিয়ে এখনও রেগে? পিউয়ের মন ভারি হয়ে আসে। বিষন্নতায় ছাপিয়ে আসে বুক। নিজের ওপর বীতস্পৃহায় গলবিল তেঁতো লাগে। পণ করে,আর কোনও দিন কাঁপবেনা। কাঁপ*বেইনা।
এরমধ্যে ইকবাল কাছে এসে দাঁড়াল। খুকখুক করে কেশে মনোযোগ উদ্ধার করল তার। বলল,
‘ কী পিউপিউ! একা একা দাঁড়িয়ে কী করছো?’
পিউ আঁখিজোড়ার হদিস, সম্মুখে বহাল রেখেই শুধাল,
‘ আচ্ছা, ধূসর ভাই কোথায় গেলেন?’
‘ কাজে হয়ত। ‘
পিউ বিড়বিড় করে হতাশ কণ্ঠে বলল,
‘ এখানেও কাজ!’
ইকবাল খেয়াল করল,ওর চেহারার সুখ সুখ ভাব বিলুপ্তপ্রায়। ঘুরতে এসে এমন হলে হবে? তার মন ঘোরাতে,সরাসরি প্রসঙ্গ তুলল সে,
‘ আচ্ছা পিউ,কাল তো তোমার জন্মদিন। ভাইয়ার থেকে গিফট নেবে না?’
পিউ তড়িৎ বেগে তাকায়। কণ্ঠে অবিশ্বাস ঢেলে বলল,
‘ আপনার মনে আছে?’
‘ হ্যাঁ। আমার কেন? পুষ্পর ও আছে।’
পিউ হাসল। ভেবেছিল কারোর মনে থাকবেনা। বললও,
‘ আমিতো ভাবলাম কারোরই মনে থাকবে না।’
ইকবাল আকাশ থেকে পরার ভাণ করে বলল,
‘ কী বলছো? তোমার জন্মদিন আর আমি ভুলে যাব? এ হয়! তোমার একমাত্র দুলাভাই আমি। তুমি আমার একটি মাত্র শালিকা। ইহকালেও সম্ভব এ?’
তারপর মাথায় হাত বুলিয়ে মোলায়েম স্বরে শুধাল,
‘ বলো কী চাই? শাড়ি? উম,মেক আপ? অন্য কিছু?এই তোমার না একটা ল্যাপটপের শখ, চাই সেটা?’
‘ না না,আমার কিচ্ছু চাইনা ভাইয়া। ‘
ইকবাল ভ্রু গোছায়,
‘ কেন? ভাইয়াকে নিজের ভাবোনা?’
‘ এ বাবা! ভাবব না কেন? আসলে আমার তো সবই আছে। আপনারাও আছেন,আর কী চাই?’
‘,বড়দের মত কথা কেন? ছোট পিউপিউ ছোট থাকবে সব সময়, বুঝলে? আচ্ছা,এক সেকেন্ড, তোমার কোনও উইশ নেই? যেটা ফুলফ্যিল হলে তোমার মত খুশি কেউ হবেনা,এরকম কিছু?’
পিউ আনমনা হলো। সমুদ্রের জলের দিক চেয়ে উদাস স্বরে বলল,
‘ আমার একটাই চাওয়া,ধূসর ভাইয়ের মুখে একবার ‘ভালোবাসি’ শুনব।’
হুশ ফিরতেই লজ্জায় মাথা নামিয়ে নেয় সে। ইকবাল দাঁত বের করে হাসছে। যা দেখে লজ্জা দ্বিগুন বাড়ল ওর। সে প্রমোদ কণ্ঠে বলল,
‘ বাবাহ,কী প্রেম! আচ্ছা ধরো, ধূসর ভালোবাসি বলল,কী করবে তাহলে? ‘
পিউ দু-পাশে মাথা নেড়ে হাসে। ভাবে,
‘ আমি জানি,পৃথিবী উলটে গেলেও উনি কোনও দিন বলবেন না।’
সাদিফ অফিস শেষ করে সোজাসুজি এয়ারপোর্টে এলো। সমস্ত নিয়ম-কানুন শেষ করে নির্ধারিত বিমানের দিক এগোলো। তার দশ মিনিটের মাথায় আকাশে উড়ল তা। সাড়ি সাড়ি মেঘের দিক একবার দেখে সিটে মাথা এলিয়ে দিলো সে। ক্লান্ত লাগছে! নয় ঘন্টা অফিস করে এখন আবার এতটা পথের জার্নি! তক্ষুনি, মানস্পটে ভাসল পিউয়ের সুশ্রী চেহারাখানি। ওমনি শ্রান্তি উবে যায়। ঠোঁটে ফুটল স্মিত হাসি। বলল,
‘ আমি আসছি পিউ,তোর কাছে আসছি।’
‘ তার মানে তুই আমার কথা রাখবি না ধূসর?’
ইকবালের কণ্ঠ যতখানি নরম,ধূসর ততটাই শক্ত গলায় বলল,
‘ না।’
‘ পিউ খুব চায়,তুই ওকে ভালোবাসি বল।’
ধূসর ক্লান্ত চোখে চেয়ে বলল,
‘ আমার দ্বারা এসব হবে না ইকবাল।’
‘ কেন হবেনা? হওয়ালেই হবে। ভালোবাসিস না এমন তো নয়। তাহলে বলতে সমস্যা কোথায়?’
ধূসর পালটা যুক্তি দেখায়,
‘ ভালোবাসা মানেই জাহির করে বলা নয় । নিজের মধ্যে রেখেও ভালোবাসা যায়।’
‘ তাহলে তুই সত্যিই বলবি না?’
‘ বললাম তো না।’
ইকবাল মুখ কালো করে বলল,
‘ আমি পিউকে কত বড় মুখ করে বললাম। আমার সম্মান টা রাখবিনা?’
‘ ইকবাল,ডোন্ট বি আ চাইল্ড! সামান্য আমি পাশে গিয়ে দাঁড়ালেও ও…।
আর এসব কথা আসছেই বা কেন? পিউ নিজেও জানে আমি ওকে….’
দুটো কথাই অসমাপ্ত রেখে থেমে গেল। ইকবাল হেসে উঠে বলল,
‘ কী, কথা পাচ্ছিস না আর? পাবি কী করে? বলার কিছু থাকলে তো!’
ধূসর বিরক্ত হলো। চোখমুখ গুটিয়ে বলল,
‘ যা মনে করিস তাই। ‘
ইকবাল রেগে যেতে যেতেও নিজেকে ঠান্ডা করে। বুঝল ধূসরের সাথে চোটপাট দেখিয়ে লাভ নেই।
তাই শান্ত গলায় বলল,
‘আচ্ছা,ওকে দিবি বলে যেটা কিনেছিস,সেটা দিয়েই শুরু কর। ‘
ধূসর চুপ করে গেল। ভাবুক হলো তার মুখশ্রী। যেন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। জবাব দিচ্ছেনা দেখে হাসি ফুটল ইকবালের। বড় আশা নিয়ে বলল,
‘ তাহলে শুভস্ব শীঘ্রম?’
ধূসর নিশ্চুপ রইল খানিকক্ষণ। তারপর ঘাড় ফিরিয়ে ওর দিকে তাকায়। চিকণ ওষ্ঠে ভেসে ওঠে দুর্বোধ্য, দুষ্প্রাপ্য হাসি। ইকবাল এতেই অনুভব করে বিজয়ের রেশ। ধরেই নেয়,এইবার হয়ত পিউ তার বহু কাঙ্ক্ষিত কথাটি শুনবে!
পিউ চুপচাপ বিছানায় পা গুছিয়ে বসে। আচমকা বাইরে ধূসর আর ইকবালের কণ্ঠ শুনেই সচকিত হয়। ছুটে রুম থেকে বের হলো তারপর। ধূসর-ইকবাল কথা বলতে বলতে যাচ্ছে। পিউ দরজা টানতেই ওরা তাকাল। ওকে দেখে ইকবাল হাসলেও সঙ্গে সঙ্গে মুখ ফেরাল ধূসর। গটগট শব্দে এগিয়ে গেল তার লম্বা পা। পিউ আশাহতের ন্যায় চেয়ে রইল সেদিকে। মনের আনাচে-কানাচে ঝড়-তুফান ডুবিয়ে দিলো সব। ইকবাল কাধ উচু করে আবার চলে গেল। পিউয়ের চোখ ভিজে ওঠে। ধূসর ভাই এত রেগে যাবেন, কথা বন্ধ করবেন জানলে সে জীবনেও ওমন করতো না।
সে ধীর পায়ে আবার বিছানায় এসে আধশোয়া হলো। এর মধ্যেই পুষ্প ঘরে ঢোকে। হাতে বড় সড় প্যাকেট বাক্স। আবার তার মেক-আপ বহন করার বাক্সটাও আছে। পিউ ওকে দেখে কান্না সংবরণ করে,ঠিকঠাক হয়। পুষ্পর ঠোঁটে উপচানো হাসি। ঝলমলে মুখবিবর। সে সব জিনিসপত্র বিছানায় রাখে। এতকিছু দেখে পিউ অবাক হয়ে বলল ‘ এসব কী?’
পুষ্প সে কথার জবাব দিলো না। প্যাকেট বাক্স খুলে বের করল একটা কালো জামদানী। কী সুন্দর কারুকাজ! পালটা প্রশ্ন ছু*ড়ল,
‘ কেমন এটা?’
পিউ মাথা ঝাকায়,’ ভালো। কবে কিনেছিস? আগেতো দেখিনি।’
‘ আজকেই অনলাইন থেকে নিলাম। এক কাজ কর,ওয়াশরুমে গিয়ে পেটিকোট আর ব্লাউজ পরে আয়। আমি তোকে শাড়িটা পরিয়ে দিই।’
পিউ আশ্চর্য হয়ে বলল,
‘ আমি কেন শাড়ি পরব? কোন সুখে?’
‘ পার্টি আছে। আমাদের যেতে হবে সেখানে। এত কথা বলিস না,ধূসর ভাই তাড়াতাড়ি তৈরি হতে বলেছেন আমাদের।’
‘ তো অন্য কিছু পরি। শাড়ি কেন? আমার হাঁটতে কষ্ট হয় খুব।’
বলতে বলতে চোখ নামাল সে। মনে পড়ল ধূসরের সেই স্টোরির লেখা গুলো। বুক ভারি হলো। যার আকর্ষণ পেতে সে শাড়ি পরতে মরিয়া,সেতো আজ ফিরেও দেখবেনা। অভিমান করে আছে যে! আর এখন এত সাজগোজের ইচ্ছেও নেই।
পুষ্প বলল’ পরতে সমস্যা কী? আর হাঁটতে হবে না অত। গাড়িতে যাব, গাড়িতে আসব। তুই শুধু পরবি ব্যাস,আমিও তো পরেছি তাইনা? ‘
‘ আমার এখন ভালো লাগছে না আপু। জোর করিস না। ‘
পুষ্প ধপ করে বিছানায় বসে বলল,
‘ ভালো। পরতে হবে না। কত শখ করে আনলাম,আমার ইচ্ছের তো দামই নেই কারো কাছে। কে আমি, তাইনা?’
বোনের থমথমে চেহারা পিউয়ের কোমল হৃদয়ে দাগ কা*টে। ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে হেসে জানায়,
‘ আচ্ছা, পরে আসছি।’
সে ওয়াশরুমে ঢুকতেই পুষ্প যুদ্ধে-জয়ী হাসল। হাত ওপর নীচে ঝাকিয়ে বলল, ‘ ইয়েস!’
পুষ্প লাল টুকটুকে লিপস্টিকটা বের করতেই পিউ নাক সিটকে বলল,
‘ না না এত কড়াটা না। হাল্কা পাতলা কিছু। ‘
সে চোখ পাকিয়ে বলল,
‘ চুপ।’
পিউ চেহারা ওল্টায়। পুষ্প পাত্তাই
দিলো না। মন ভরে সাজিয়ে দিয়ে দম ফেলল। তারপর বোনের থুত্নী ধরে বলল,
‘ মাশ আল্লাহ! এটা আমার বোন? না পরী!’
পিউ মুচকি হাসল। পুষ্প বলল,
‘ শাড়িটা তোর গায়ে এত মানিয়েছে!’
তারপর বিড়বিড় করল,’ ধূসর ভাইয়ের পছন্দ আছে।’
পিউ সেটুকু শোনেনি। সে নিশ্চুপ হাত কোলের ওপর রেখে সেদিকে চেয়ে। এক ফাঁকে মুখ তুলে বলল,
‘ কখন যাব? সাড়ে এগারটার বেশি বাজে যে!’
‘ এইত, ওরা ডাকলেই।’
‘ ওনারা কোথায়?’
‘ নীচে।’
ঘড়িতে এগারটা পঞ্চাশ ছাড়াতেই পুষ্পর ফোনে মেসেজ এলো, ‘ চলে এসো। এদিকের কাজ শেষ। ‘
পুষ্প উঠে দাঁড়াল চটপট। ব্যস্ত কণ্ঠে বলল
‘ চল, চল, ডাকছে।’
‘ কখন ডাকল?’
‘ পরে শুনিস,আয়।’
পিউ যেতে যেতে আয়নায় একবার নজর বোলায়। ক্রিম রঙের মুখে কালো রং ফুটে ওঠা তাকে হুরের মত লাগলেও তার কাছে কিছুই ঠেকেনা। আপু যে কেন এত প্রসংশা করল!
পুষ্প এর মধ্যে ব্যাতিব্যস্ত হয়ে তার হাত টেনেটুনে চলে। রুম লক করে লিফটে উঠে বোতাম টিপতেই পিউ বলল,
‘ আমরা তো গ্রাউন্ড ফ্লোরে যাব। টপ ফ্লোর কেন দিলি?’
‘ কাজ আছে রুফটপে।’
পিউ আর কথা বাড়াল না। মন ভালো না থাকলে জ্বিভ নাড়াতেও কষ্ট। পুষ্প তাকে নিয়ে রুফটপে আসে। সেখানটা অন্ধকারে তলিয়ে। সে সাবধান করল, ‘ দেখে,আছাড় খাস না আবার।’
পিউ কিছু বলল না। তার চোখে-মুখে প্রগাঢ় জিজ্ঞাসা। এই অন্ধকার জায়গায় কীসের কাজ? আর সারা হোটেলে আলো জ্বলছে, এখানে কী হলো?
কাল রাতেও তো এখানটায় খাবার খেয়েছিল। কী আলো চকচকে ছিল জায়গাটা! পুষ্প আগেভাগে হেঁটে গেল। পিউ এগোলো পেছনে। তার গতি সুস্থির। তবে তিঁমিরের মাঝে কিছু দেখতে পাচ্ছেনা।
বোনকে ডাকবে, এর আগে চাঁদের জ্যোৎস্না, আশে-পাশের দালান-কোঠার আলোতে যতটুকু স্পষ্ট হয় তাতে দুটো পুরুষ অবয়ব চোখে লাগে। পিউ ভ্রু কোঁচকায়। বিলম্বব্যাতীত বুঝে নেয়, একটা ছায়া ধূসরের। অন্যটা তবে ইকবাল ভাই? ওনার না নীচে?’
তখন পুষ্পর কণ্ঠ পাওয়া যায়,
‘ আয় পিউ।’
পিউ মনে প্রশ্ন রেখে এগোলো। কাছাকাছি যেতেই আচমকা জ্বলে উঠল লাইট। হঠাৎ অত আলো এসে ঠিকড়ে পরল মুখে। চোখ ধাঁধিয়ে গেল পিউয়ের। সহ্য করতে না পারায় কুঁচকে এলো চেহারা। হাত দিয়ে বাঁচানোর প্রচেষ্টা চালাল নিজেকে। টিপটিপে নেত্রে তাকাতেই ওরা হৈহৈ করে, টেনে টেনে বলে, ‘ হ্যাপী বার্থডে টু ইউ।’ পিউ চমকে ওঠে। বারোটা বেজে গিয়েছে? বিস্মিত আঁখিতে আশেপাশে চাইতেই ফাঁকা হয় ঠোঁট। গতকাল এই এখানটায়,লোক গিজগিজ করা জায়গা আজ শূন্য। কিন্তু সাজগোজ,আর লাইটিং এর এক ফোটা কমতি নেই। তারপর ইকবালদের সামনের গোলাকার টেবিলের মাঝ বরাবর রাখা বিশালাকার ভ্যানিলা কেক। কেকের ওপরে বসানো এক ফুটফুটে গাউন পরিহিতা প্রিন্সেস। পিউ বিমূর্ত। পল্লব ঝাপ্টাল কয়েকবার। তার জন্মদিনের জন্যেই এত আয়োজন! পিউ সবটা দেখতে দেখতে বলল, ‘ এত কিছু? এত কিছু করেছেন আপনারা? ‘ ইকবাল জানাল, ‘ ইয়েস ম্যাম!আপনার জন্যেই এই গোটা রুফটপ আজ বুকিং করা হয়েছে, বুঝলেন? ‘ পিউ কৃতজ্ঞ হাসল। বিস্ময়কর দৃষ্টি কমিয়ে চাইতেই চোখাচোখি হলো ধূসরের সাথে। পড়নে কালো শার্ট,ছাই রঙা প্যান্ট তার। একভাবে,এদিকেই চেয়ে। ওইভাবেই, একবার তার আপাদমস্তক ঠান্ডা নজরে দেখল। ক্ষুরের মত চাউনীতে মুগ্ধতার বাণ। সেই বাণে এ- ফোড় ও-ফোড় হয় পিউয়ের ক্ষুদ্র দেহ। এমন মাদকের মত তাকিয়ে থাকলে চলে! পিউ কুন্ঠায় নুইয়ে পরে। ইকবাল অধৈর্য কণ্ঠে বলল, ‘ পিউপিউ, বারোটা বেজে এক,দাঁড়িয়ে না থেকে কেক কাটো, এসো।’
পিউ সহাস্যে এগোয়। ইকবাল সরে তাকে জায়গা দেয় ধূসরে পাশে দাঁড়ানোর। পিউ ঝুঁকে ফুঁ দিলো মোমে। সেটা নিভতেই হাত তালি পরল ইকবাল-পুষ্পর।
তারপর প্লাস্টিকের ছু*রিটা হাতে নিতেই ওপর থেকে সেই হাত মুঠোয় তোলে ধূসর। শক্ত করে আকড়ে কেকে পোচ বসায়। পিউ পুরোটা সময় চেয়ে রয় তার দিক।
শেষ দিকে ধূসর আড়চোখে ফিরল। মিলে গেল এক জোড়া সম্মোহনী দৃষ্টি। তন্মধ্যেই ধূসর ছোট্ট কেকের টুকরো ধরল তার মুখের সামনে। সে বিনাবাক্যে খেলো। লজ্জা,দ্বিধা কাটিয়ে এক টুকরো তার দিকেও ধরল।
ধূসর তার দিক চেয়ে, এক হাতে কব্জি আকড়ে সেটুকু খায়। পিউয়ের চোখে ভাসে পুরোনো চিত্রপট। সেই প্রথম ধূসরকে ভাত খাইয়ে দেওয়ার মুহুর্তরা।
এরপরে বাকীদের কেক খাওয়ায় সে।
ইকবাল একটা র্যাপিং বাক্স দিয়ে বলে,
‘গিফট চাওনা বলেছো,কিন্তু আমিতো কথা শুনব না৷ তাই এটা আমার পক্ষ থেকে।’
পিউ হেসে গ্রহণ করে সেই উপহার। ভার দেখেই আন্দাজ করল ইলেক্ট্রিক কিছু হবে। পুষ্পও একইরকম র্যাপিং বাক্স দিয়ে বলল, ‘ এটা ওর পক্ষের। ‘ তবে তার টার আকার ইকবালের চেয়ে ছোট।
তারপর ধূসরের দিক তাকাল পিউ। সে চুপচাপ দাঁড়িয়ে। ইকবাল মিটিমিটি হেসে বলল,
‘ ও বোধ হয় গিফট টিফট কেনেনি।’
পিউ মনে মনে বলল,
‘ উনিইত আমার গিফট।’
মুখে বলল, ‘ গিফট না হলেও চলবে। আপনারাও যে কেন করলেন এসব!’
ইকবাল প্রসঙ্গ এড়িয়ে পুষ্পকে বলল,
‘ মাই লাভ,চলো আমরা নীচ থেকে খাবার গুলো নিয়ে আসি।’
সে বুঝতে না পেরে বলল, ‘ খাবার?’
ইকবাল চোখ টিপে,ইশারা করে। পুষ্প সতর্ক কণ্ঠে বলে,
‘ ও হ্যাঁ হ্যাঁ, চলো। পিউ, তোরা দাঁড়া, আমরা এক্ষুনি আসছি।’
কোনও রূপ হু- হা, না শুনেই ত্রস্ত বেরিয়ে গেল দুজনে।
রুফটপের খোলা আঙিনায়, এক ঝাঁক আলো,আর ধেঁয়ে আসা হাওয়ার মধ্যেই দাঁড়িয়ে থাকল পিউ আর ধূসর।
ইকবাল- পুষ্প যায়নি। দুজন লুকিয়ে পড়ল আড়ালে। মাথা নামিয়ে উঁকি দিলো, ওরা কী করে দেখতে।
পুষ্প ইতস্তত করে বলল,
‘ এভাবে দেখা কি ঠিক হবে? আমার না ভীষণ লজ্জা লাগছে!’
‘ কেন?’
‘ না মানে,বড় ভাই আর ছোট বোনের প্রেম করা দেখব?’
ইকবাল তার চুল গুছিয়ে দিয়ে, চাপা কণ্ঠে বলল,
‘ ওরা যে তোমার ভাই বোন, ওসব মাথা থেকে ঝেড়ে ফ্যালো মাই লাভ। মনে করো, ধূসর আমার বন্ধু আর পিউ ওর বউ। সে হিসেবে ও তোমার ভাবি। ওকে?’
পুষ্প অনীহ কণ্ঠে বলল ‘ ধুর, তা আবার হয় না কী?’
‘ তাহলে চলো,চলে যাই।’
ইকবাল হাত টানতেই, পুষ্প আটকে মিনমিনিয়ে বলল
‘ না দেখি, থাক।’
–—-
সাদিফ হন্তদন্ত পায়ে হোটেলে ঢুকল। হাতঘড়িতে সময় দেখে চক্ষু চড়কগাছ । বারোটা পেরিয়েছে অনেকক্ষণ। এইরে,সবার আগে উইশ করা হলোনা বোধ হয়! সে এক প্রকার হুড়মুড়িয়ে গিয়ে দাঁড়াল রিসেপশনে। দায়িত্বরত ছেলেটিকে শুধাল,
‘ এক্সকিউজ মি! সিকদার ধূসর মাহতাব নামে কেউ রুম নিয়েছেন এখানে?’
ছেলেটি কিছুক্ষণ সুক্ষ্ণভাবে পর্যবেক্ষণ করল ওকে। তারপর সোজাসুজি বলল,
‘ সরি স্যার! আমরা এভাবে গেস্টদের ডেটা বাইরের কাউকে দেইনা।’
‘ না না আমি বাইরের লোক নই। আমি ওনার ছোট ভাই। আর সাথে যারা এসছে? ওরা আমার বোন আর দুলাভাই। আচ্ছা ওয়েট….বলে পকেট থেকে ফোন বের করল সাদিফ। গ্যালারি ঘেঁটে পুষ্পর বিয়েতে তোলা তাদের গ্রুপ ফটো মেলে ধরল ওনার সামনে। চেনা চেনা মুখ গুলো স্পষ্ট সেখানে। তিনি বিশ্বাস করলেন এবার। বললেন,
‘ হ্যাঁ স্যার,নিয়েছেন।’
‘ কত নম্বর রুম?’
‘৩০২, ৩০৩, আর ৩১৮,থার্ড ফ্লোর । তবে ওনাদের এখন রুমে পাবেন না।’
‘ কেন? বেরিয়েছে?’
‘ না,আসলে ওনাদের সাথে আসা একজনের বার্থডে আজ। সেটা সেলিব্রেট করার জন্যেই ওনারা পুরো রুফটপ বুক করেছেন। এখন সেখানেই।’
সাদিফ অবাক হয়। তবে ছোট করে জানায়,
‘ ওকে থ্যাংকিউ।’
তারপর হাওয়ার বেগে ছুটল। লিফটে উঠে ভাবল,একটা গোটা রুফটপ বুক করার বিষয় নিয়ে। এর মানে সবার মনে আছে পিউয়ের জন্মদিন আজ। পালন ও করছে। তাহলে ওদের মধ্যে এই আংটি কীভাবে দেবে ওকে? তার হৃদপিণ্ড লাফাচ্ছে। উত্তেজিত সে।
পিউ জমে যাচ্ছে। তুষারের ন্যায় শীতল হচ্ছে শরীর। নার্ভাসনেসে ভেতরটা ঢিপঢিপ করছে কেমন। একবার চোখ তুলে ধূসরের দিক চাইল। সে মানুষটার ধাঁরাল চাউনী, ওকে মাথা তুলে রাখার সাহস যোগাতে নারাজ। চটপট নামিয়ে নিলো আবার৷ সেই ক্ষণে ধূসরের পদযূগল এগিয়ে আসে। পিউয়ের হৃদকম্পন জোড়াল হয় । জোর করে শক্ত রাখল নিজেকে। কিছুতেই কাঁপবে না,একদম না।
ধূসর কাছে এসে থামল। সাদা রঙের একটা ছোট বাক্স তার সামনে ধরে বলল ‘ এটা তোর।’
ইকবাল টাস করে কপালে চ*ড় বসাল। বিদ্বিষ্ট স্বরে বলল ‘
‘আরে ব্যাটা, কেউ এইভাবে আংটি দেয়? হাঁটু মুড়ে দেবেনা? আজব!’
পুষ্প বলল, ‘ আহা থামো। বিরক্ত করোনা, দেখতে দাও।’
পিউ চোখ ওঠায়। বাকী গিফট টেবিলে রেখে আংটির বাক্স ধীরেসুস্থে হাতে নেয়। ঢাকনা খুলতেই উজ্জ্বল পাথর বসানো হীরের আংটিটা উঁকি দেয় সেথায়। পিউ বিস্ময়াহত হয়ে সেই আংটি দেখে গেল কয়েক পল। এটা কি ওর জন্য কিনেছেন ধূসর ভাই?
ওষ্ঠপুটের আড়ালে ভালোলাগা গেঁথে, আংটির বাক্স হাতের মুঠোয় শক্ত করে চে*পে ধরল সে । ইচ্ছে করছে বুকের মধ্যেই ঢুকিয়ে রাখতে।
ধূসর ঘাড় ডলল বাম হাতে। তাকে অপ্রস্তুত লাগছে। বারবার খরখরে ঠোঁট ভেজাচ্ছে জ্বিভে। তারপর পিউয়ের দিক তাকাল। কেমন খ্যাক করে বলল,
‘ এটা কি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকার জিনিস? এদিকে দে!’
পিউ ঘাবড়ে,বিভ্রান্ত হয়ে এগিয়ে দিল। ধূসর ছো মেরে নিয়ে আংটি বের করে বক্স ফেলে দিলো। দৈবাৎ আরো কাছ ঘেঁষে দাঁড়াল।
পিউয়ের তুলতুলে হাতের নরম আঙুল মুঠোতে নিলো। বিনাদ্বিধায়, সরু অনামিকায় প্রবেশ করাল নিজের প্রথম ভালোবাসার চিহ্ন।
ইকবাল হতচেতন কণ্ঠে বলল, ‘ আরে ব্যাটা! ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে ঠিকই আংটি পড়াল, দেখলে?
পুষ্প চ সূচক শব্দ করে বলল, ‘ উফ, তুমি থামবে? তোমার জন্য আমি এঞ্জয় করতে পারছি না।’
সাদিফ ছটফটে পায়ে ওপরে উঠল। যত এগোচ্ছে তার বক্ষস্পন্দন বাড়ছে। হঠাৎ,
সিড়িঘরের চূড়ায় ইকবাল- পুষ্পকে পেছন থেকে দেখে হাসি ভীড়ল ঠোঁটে। উচ্ছ্বসিত কদমে কয়েক কদম এগিয়ে ডাকতে গেল,এর আগেই চোখ পড়ল সম্মুখে। পিউয়ের আঙুলে ধূসরের আংটি পড়ানোর দৃশ্য, তাকে থমকে রাখল ওখানেই।
পিউ একবার আঙুলের দিক দেখে, ধূসরের চোখের দিক তাকায়। সময় নিয়ে অপেক্ষা করে। কিছু শুনতে চায়। অথচ মানুষ টার রা নেই। সে দাঁড়িয়ে আশপাশ দেখছে।
পিউ যেঁচে অধৈর্য, আকুল কণ্ঠে শুধাল,
‘ আর কিছু বলবেন না ধূসর ভাই?’
তার মনের মধ্যে নিরন্তর বাজছে,
‘ একবার ভালোবাসি বলুন না ধূসর ভাই। শুধু একবার!’
সাদিফের ঘেমে যাওয়া দেহ শীতল হয়ে আসছে। অজানা আশঙ্কায় ধড়ফড় করছে ভেতরটা। সে বিভ্রম সমেত দাঁড়িয়ে যখন, সেই সময় ইকবালের ফিসফিসে স্বর কানে আসে। সে চাপা কণ্ঠে বলছে,
‘ বলে দে না,ভালোবাসি। বল না হতচ্ছাড়া। আর কত অপেক্ষায় রাখবি মেয়েটাকে?’
সাদিফ বাকরুদ্ধ। তার জ্বিভ বিবশ। চোখ-মুখ ফ্যাকাশে। ধূসর ভাই পিউকে ভালোবাসি বলবেন মানে?
পিউয়ের দৃষ্টিযূগল কাতর। তিরতির করে অধর কাঁ*পছে। ব্যগ্র হচ্ছে বুক। একবার চায়,ধূসর ভালোবাসি বলুক। আজ শুনলেই সে ধন্য। আর না হলেও চলবে।
আচমকা ধূসর কোমড় চেপে ধরল। অনুষ্ণ হাতের ছোঁয়ায় পিউ কেঁ*পে ওঠে। সে টেনে ওকে কাছে নেয়,মিশিয়ে ধরে বুকে। গরম নিঃশ্বাসের তোপে পিউ চোখ বুজে ফেলল। এই দৃশ্যে ইকবাল-পুষ্প ফিক করে হাসে। অথচ সাদিফ কিংকর্তব্যবিমুঢ়! মস্তক থিঁতিয়ে এসেছে তার।
‘ তাকা পিউ।’
নিখাদ কণ্ঠে, নিভু চোখে তাকাল পিউ। অক্ষিপট স্থিত হলো দুজনের।
ধূসর গলার স্বর অপরিবর্তিত রেখে বলল,
‘ বিয়ে করব তোকে।
বউ হবি আমার?’
ইকবাল চোখ শৃঙ্গে উঠিয়ে বলল, ‘ ওরে শালা, ভালোবাসা টাসা বাদ? সোজা বিয়ে? ‘
পুষ্প স্ফূর্ত গলায় বলল, ‘ এই না হলে আমার ভাই!’
অথচ নিস্তব্ধ হয়ে পড়ল সাদিফ। রক্তশূন্য চেহারায় ওদের দিক চেয়ে রইল। হতভম্ব তার পৃথিবী ঘুরছে। টলছে পা। যন্ত্রনায় মুচড়ে উঠছে কলিজা।গোটা আকাশ চুর্ণবিচূর্ন হয়ে ভে*ঙে পরেছে মাথায়।
পিউ ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকে। কথা ফুটছে না,কণ্ঠরোধ। অবিশ্বাস ছুটছে দুই অক্ষিতে। কিছু সময় কাটল। ধূসর ও তাকিয়ে। পিউয়ের এই স্তম্ভিত,চমৎকৃত চক্ষুযূগল, এই হা হয়ে থাকা, অন্তর্ভেদী,শান্ত লোঁচনে পরোখ করে সে। কোনও রকম কোনও তাড়াহুড়ো নেই সেখানে। যেন সময় দিচ্ছে ওকে।
পিউ ধাতস্থ হতে পারেনা। এত দ্রুত এই বিস্ময় সামলানোর যোগ্যতা তার হয়নি। তার দৃষ্টি একইরকম। শুধু অধরদ্বয় নড়তে দেখা যায়। অনুনয় করে,
‘ আরেকবার বলুন!’
ধূসর যেন বাধ্য আজ। বিলম্বহীন বলল,
‘ বউ বানাব তোকে। সিকদার ধূসর মাহতাবের বউ।’
শেষ করার আগেই পিউ বিদ্যুৎ বেগে আ*ছড়ে পরল তার বুকের ওপর । ইকবাল হাত তালি দিতে গিয়েও পারল না,লুকিয়ে আছে মনে করে। তবে পুষ্প সে একে অন্যকে আগলে ধরল খুশিতে।
এক যুগ খরার পর, হঠাৎ এক পশলা বর্ষার সুখ পেয়ে হুহু করে কেঁদে ওঠে পিউ। সে কান্না বাধ ভাঙা। দুহাতে খা*মচে ধরে ধূসরের পিঠের শার্ট। ভিজিয়ে দেয় বক্ষপট। অথচ হাসল ধূসর। এক পেশে হাসি। তার বাধন দৃঢ়। ওমন আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেই মাথায় চুঁমু বসাল পিউয়ের।
সাদিফের থরথর করে পায়ের জমিন কাঁপে। কাঁপে সমগ্র শরীর। চশমার কোন ছুঁয়ে এক ফোঁটা উষ্ণ জল গালে এসে নামে। বুঝতে এক দন্ড বাকী নেই,ধূসর-পিউ একে- অন্যতে মত্ত। আর ওদের মাঝে সে তৃতীয় ব্যক্তি। স্রেফ তৃতীয়।
চলবে,………………
সম্পূর্ণ গল্পের লিংক
https://kobitor.com/somudro/
দুঃখ পেলেন? না শান্তি? আই ফিল স্যাড ফর সাদিফ। আহ আমার চাশমিশ টা!