#পর্ব-১৬
#তাহিনা_নিভৃত_প্রাণ
আয়নার সামনে দাড়িয়ে তৈরি হচ্ছে তটিনী। পড়োনে সাদা পাথরের কাজ করা ড্রেস৷ মাথায় লম্বা বেনী করা। ঠোঁটে লিপস্টিক লাগিয়ে নিজের সাজ কমপ্লিট করলো সে। এরমধ্যে তার ছোট আন্টি এসে বললেন, ‘পাত্র চলে আসছে কাছেই।’
তটিনী লজ্জা পেলো৷ আয়নার দিকে তাকিয়ে নিজেকে দেখতে লাগলো। মিনমিন করে জিজ্ঞেস করলো, ‘পাত্রের নাম কি আন্টি?
তটিণী-র আন্টি বললেন, ‘রুদ্র।’
ঘুম থেকে লাফ দিয়ে উঠলো তটিনী। শেষ পর্যন্ত এমন স্বপ্ন দেখতে হলো তাকে। তটিণী-র মাথা ভনভন করছে। চারিদিক থেকে রুদ্র প্রতিধ্বনি শুনা যাচ্ছে। বিছানা থেকে উঠে কাঁচের জানালার গ্লাস খুললো সে। বাহিরে ভোরের আলো ফুটে গেছে। সেহরি খেয়ে ঘুমিয়ে ছিলো সে। ভোরের পাখিদের কিচির-মিচির আওয়াজ শুনা যাচ্ছে। তটিনী নিজের মুখে হাত ভুলালো। রুম থেকে বের হয়ে নিচে নামতে লাগলো।
রুদ্র তখন ডোয়িং রুমে বসে বাবা চাচাদের অফিসের কিছু ফাইল দেখছিলো। এতো সকালে তটিণী-কে নামতে দেখে কপালে ভাজ পড়লো তার। ভ্রু কুঁচকে বলল, ‘এতো সকাল উঠেছিস কেন? যা গিয়ে ঘুমা।’
তটিণী-র লজ্জা পেল৷ রুদ্রকে নিয়ে ওমন আজগুবি স্বপ্ন তাকেই কেন দেখতে হলো? এবার সে স্বাভাবিক হবে কিভাবে?’
রুদ্র তটিণী-র কোনো উত্তর না-পেয়ে বলল, ‘কি ব্যাপার কথা বলছিস না কেন?’
তটিনী মিনমিন করে বলল, ‘কিছু না রুদ্র ভাই৷ ওই ঘুম ভেঙে গেলো সেজন্য উঠে আসলাম।’
রুদ্র নিজ থেকে প্রস্তাব দিলো, হাঁটতে বের হবি?’
তটিনী ইচ্ছে থাকা সত্যেও বলল, ‘না রুদ্র ভাই, আজ হাঁটতে যেতে ইচ্ছে করছে না।’
রুদ্র আশ্চর্য হলো হয়তো। যে মেয়ে হাঁটতে পছন্দ করে তার নাকি হাঁটতে যেতে ইচ্ছে করছে না।’
রুদ্র গম্ভীর স্বরে বলল, ‘কি হয়েছে তোর? কি নিয়ে চিন্তা করছিস?’
তটিনীর গলা শুকিয়ে গেলো। রুদ্র উঠে এসে দাড়ালো তটিণী-র কাছে৷ বলল, ‘কি চলছে তোর মনে?’
তটিনী মন খারাপ করে বলল, ‘কিছু না রুদ্র ভাই। আমার আসলে রুপান্তরের ব্যাপারটা নিয়ে চিন্তা হচ্ছে।
রুদ্র ভাবুক স্বরে বলল, ‘কোন বিষয়?’
‘মজনু ও রুপান্তরের ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তা হচ্ছে।বিয়ে তো হয়ে গেলো। কিন্তু দুজন দুজনের সাথে এমন ভাবে চলে যেনো ওদের মধ্যে বন্ধুত্ব ছাড়া আর কোনো সম্পর্ক নেই। ওদের ভবিষ্যত কি হবে রুদ্র ভাই? ওরা কি কখনো এই বিয়েটা মেনে নিবে?’
তটিণী-র দিকে গভীরতা নিয়ে তাকালো রুদ্র। বলল, ‘বিয়ে ছেলেখেলা নয় ঐশি। বিয়ে যেহেতু হয়েছে আজ ওদের মনে কোনো প্রভাব না ফেললেও কিছু বছর পর ফেলবে। টিনেজ বয়স পাড় হলেও একটা ছেলের পুরোপুরি বুঝতে সময় লাগে অনেক। মজনু বুদ্ধিমান ছেলে। একদিন বুঝবে সব। রুপান্তর বুঝদার মেয়ে। হয়তো সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে। কি করবে না করবে ভেবে পাচ্ছে না। তবে একটা সময় পর এগুলো সহজ হয়ে যাবে। বছরের পর বছর গেলে ওরা এটা নিয়ে ভাবতে শুরু করবে। বিয়ে নিয়ে ভাবতে গেলে একজন আরেকজনকে মনে করে থমকে যাবে। এবং তখনই দুজনের এক হওয়ার চান্স আসবে। সবই ওদের ইচ্ছের উপর নির্ভর করছে৷ হয়তো কেউ জানেনা ওদের বিয়ের বিষয়ে। কিন্তু আল্লাহ জানেন। আর আল্লাহ তার বান্দাদের কোনো কারণ ছাড়া কখনো কিছুতে ফেলে দেন না। গট ইট?
তটিনী মাথা নাড়ালো। রুদ্র পুনরায় বলল, ‘হঠাৎ বিয়ে নিয়ে পড়লি যে? মাথায় বিয়ে নিয়ে কি চলছে তোর?’
তটিনী নিজেকে যথাসম্ভব স্বাভাবিক করলো। রুদ্র যে-ই চালাক, তাকে ধরে ফেলবে শেষে। রুদ্র গম্ভীর চাহনি দেখে তটিণী-র মাথা ঘুরতে লাগলো। দৌড়ে নিজের রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো। রুদ্র কিছু সেকেন্ড থম মে রে দাড়িয়ে থেকে হেসে ফেললো। মাথার চুল এলোমেলো করে পুনরায় সোফাতে ফিরে গেলো। ডুব দিলো অফিসের কিছু জরুরি ফাইল দেখাতে।
*
তটিনী, রুপান্তর ও মজনু মোবাইলে ভিডিও কলে যুক্ত হলো। ঈদের বন্ধ দিয়ে দিয়েছে কলেজে। আর মাত্র দু’তিন দিন। তারপরই ঈদ। রুপান্তর ও তটিনী কি পড়বে না পড়বে তা-ই নিয়ে আলোচনা করছে। মজনু গম্ভীর মুখে তাকিয়ে দুই মহিলার কথোপকথন গিলছে। একসময় বিরক্ত হয়ে বলল, ‘বাদ দে নাে এবার, আর কতো এক কাহিনি নিয়ে কথা বলবি তোরা? ঈদের দিনের প্লান ঈদের দিনই করিস। পড়ে আছে তো দুদিন।
তটিনী দাঁত কিড়মিড়িয়ে বলল, ‘তোর সমস্যা কি? আমরা সারাদিন সারারাত কথা বলবো। তোর শুনতে ইচ্ছে না করলে ডিসকানেকটেড হয়ে যা। ফালতু।
মজনু বেচারা চশমা ঠিক করে হাতজোড় করে বললো, ‘ক্ষ্যামা করে দেন মা, আমার ভুল হয়ে গেছে। আপনারা প্লিজ সাংসারিক আলোচনা শুরু করুন। আমি দর্শক হয়ে আছি।’
তটিনী ও রুপান্তর পুনরায় কথা বলতে শুরু করলো। মজনু একসময় ঘুমিয়ে পড়লো। নিজেদের আলোচনার ফাঁকে মজনুকে ঘুমাতে দেখতে পেলো তারা। দুজন হি হি করে হাসতে শুরু করলো। বেচারা মজনু ঘুমের মধ্যে লাফ দিয়ে উঠলো। স্কিনে তাকিয়ে মন খারাপ করে বলল, ‘তোরা এসব শয়তান কেন? তোগো আল্লাহ কি দিয়ে বানাইছে বইন?
রুপান্তর ও তটিনী হাসতে লাগলো। মজনু ডিসকানেকটেড হয়ে ঘুমে ডুবে গেলো। রুপান্তর তটিণী-র দিকে তাকিয়ে বলল, ‘বেচারাকে অনেক জ্বালাই আমরা।
তটিনী মুখ বাঁকিয়ে বলল, ‘আহারে মায়া হচ্ছে বুঝি?’
রুপান্তর কিছু বললো না। তটিনী সিরিয়াস হয়ে বলল, ‘কিছু কি ভাববি না?
‘নারে সময় যাক, পরিস্থিতি কোথায় নিয়ে যাবে দেখি। তারপর নাহয় ভাবাভাবি হবে। তাছাড়া দুজনেই স্টুডেন্ট। আমি এখনো বিশ্বাসই করতে পারছি না মজনু আমার..! যাই হোক বাদ দে। ইফতার পর কথা হবে।’
তটিনী অনলাইন থেকে বের হলো। তার মন খারাপ হলো বান্ধবীর জন্য। জীবন এমন কেন? যে যাকে চায় তাকে পায়না। আর যাকে নিয়ে কিছু ভাবেই নি তার সাথেই জীবন জুড়ে যায়। এ কেমন খেলা?
তটিনী দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। হয়তো রুদ্রের কথাই ঠিক। একটা সময় পর দুজন ভাবতে বসবে। কিন্তু তখন দেরি হয়ে যাবে না তো?
তটিনী তার ছোট মাথাতে চাপ দিলো না আর। ফেসবুকে গিয়ে পোস্ট করলো-
‘যে যাকে চায় তাকে পায় না কেন?’
রুদ্র হয়তো তখন একটিভ ছিলো, তটিণী-র পোস্টে হা হা রিয়েক্ট দিয়ে ইনবক্সে মেসেজের ঝড় তুললো। সেগুলো এমন-
‘নিব্বির নিব্বি, কার লগে টাংকি মারোস? কিসব পোস্ট করস? কারে তুই পাস নাই? ঐশির বাচ্চা তোরে খু ন করে ফেলবো। এসব আজাইরা পোস্ট করার মানে কি? রমজান মাসে তোরে কি শয়তানে লাড়ে? ফাজিলের ফাজিল। সারাদিন টইটই করে ঘুরে আর ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়, ‘যে যাকে যায় তাকে পায় কেন?’ একবার ঘর থেকে বের হো তোকে বুঝাবো কেন পায় না। পড়াশোনা বাদ দিয়ে এসব করিস। বেয়াদব একটা।’
রুদ্রের দীর্ঘ ভাষণে তটিণী-র মাথা ঘুরতে লাগলো। সে তৎক্ষনাৎ পোস্টটা ডিলিট করে দিলো। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলো ইহজনমে আর কখনো স্যাড পোস্ট করবে না। সেটা যদি তার সাথেও হয় তবুও না। রুদ্র ভাইয়ের মতো পাবলিক লিস্টে রেখে কখনো স্যাড পোস্ট করা মানে নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মা রা। এমন ডেঞ্জারাস পাবলিক যার লিস্টে থাকে তার জন্য জীবনে দুঃখ থাকতে নেই। দুঃখের কথা ভাবতেও নেই।’
তটিনী বার্তা লিখলো, ‘আমি নিজের জন্য এটা পোস্ট করিনি রুদ্র ভাই। সকালে আপনাকে যা বললাম ওগুলো মাথায় ঘুরছিল। সেজন্য পোস্ট করেছি। আমি আর স্যাড পোস্ট করবো না আপনি প্লিজ মা বাবাকে কিছু বইলেন না। আমি তাদের শান্তশিষ্ট বাচ্চা, পরে তারা চিন্তা করবে।’
রুদ্র তটিণী-র বার্তা পড়ে তাছ্যিল করে বলল, ‘শান্তশিষ্ট বাচ্চা! হাহ্
(চলবে)