#তানিশা সুলতানা
এক ফালি রোদ চোখে পড়তেই ঘুমটা হালকা হয়ে যায় যায় অধরার। রোদটা একদম কড়াকড়ি ভাবে চোখে পড়েছে তার। চোখ বন্ধ করে রাখা দায় হয়ে গেছে। মাথা ভারি ভারি লাগছে। আরও ঘুমতে পারলে ভালো লাগতো। কিন্তু রোগ প্রচন্ড জ্বালাতন করছে। মাথার বালিশটা মুখের ওপর দিয়ে আবারও ঘুমানোর চেষ্টা করে অধরা।
এবং ঘুমিয়েও পড়ে। গত রাতে কেউ একজন হাতে পায়ে মলম লাগিয়ে দিয়েছে ঔষধ খাইয়ে দিয়েছে ব্যাথার। কপালে চুমু খেয়েছে অধরার।
এসব স্বপ্ন দেখে ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে।
তখনই দরজায় টোকা পড়ে। বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে। শান্তিতে কি একটু ঘুমতে পারবে না?
পরপর আরও কয়েকবার টোকা পড়ে। অলস ভঙ্গিতে চোখ বন্ধ করেই উঠে বসে। কোমরের ব্যাথাটা এখনো রয়ে গেছে। একটু নরাচরা করলেই সেটা বুঝতে পারছে ৷ ব্যাথায় চোখ মুখ কুঁচকে উঠে দাঁড়ায়। চোখ দুটো বন্ধ করেই হাতিয়ে হাতিয়ে দরজা অব্দি যায়।
দরজা ভেড়ানোই ছিলো। অধরা মেলে দেয়। মাহিম অধরাকে দেখে ভ্রু কুচকে ফেলে।
“ঘুম ভাঙে নি?
ধপ করে চোখ খুলে অধরা। তাকায় মাহিমের দিকে। মনে পড়ে যায় সকালের রান্নাটা তাকেই করতে হয়। মাহিমকে টিফিন বেঁধে দিতে হয়।
ভয়ে বুক টিপটিপ করতে থাকে তার। শুকনো ঢোক গিলে মাথা নিচু করে ফেলে। রিনরিনিয়ে বলতে থাকে
” আমাকে দশ মিনিট সময় দাও। আমি কিছু একটা বানিয়ে দিচ্ছি।
বলেই মাহিমকে পাশ কাটিয়ে যেতে নেয়।
“পারমিশন ছাড়া পা বাড়ানোর সাহস হয় কি করে?
দাঁড়িয়ে যায় অধরা। আড়চোখে তাকায় এক পলক মাহিমের দিকে।
মাহিম অধরার রুমে ঢুকে যায়।
খাটের পাশে থাকা পড়ার টেবিলে কয়েক কাতারে বই সাজানো। প্রচুর বই পড়ুয়া অধরা।
মাহিম টেবিলের উপর থেকে ফাস্ট এইচ বক্সটা তুলে নেয়।
অধরার বুকটা প্রশান্তিতে ভরে যায়। তার মানে সত্যিই উনি এসেছিলো। অধরা কোনো স্বপ্ন দেখে নি ইমাজিন করে নি। এটা বাস্তবতা ছিলো।
কিন্তু অধরার এই প্রশান্তি বেশিক্ষণ টেকে না। মাহিম গম্ভীর গলায় বলে ওঠে
” এটা এখানে এনেছিস কেনো? আজকাল পারমিশন লাগছে না তোর? পা বড় হয়ে গেছে?
ভ্রু কুচকে ফেলে অধরা। উনি আনে নি এটা? কাল উনি আসে নি এখানে? তাহলে কে এসেছিলো? এতো যত্ন করলো। ব্যাথা সারিয়ে দিলো?
“পৃথিবীতে সারপ্রাইজ দেওয়ার মতো কিছু আবিষ্কার করছিস না কি মনে মনে?
চমকে ওঠে অধরা। মাথা নিচু করে শুকনো ঢোক গিলে। বিরবির করে বলে
” না না এমন কিছু না।
“তাহলে কেমন কিছু?
” এমনি
“সকালে ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে বের হতে হয় জানিস না তুই?
” সময় দিলেন কোথায়?
মাহিম সেটা শুনতে পায় না। শুনতে চায়ও না। তার যেতে হবে তারা আছে।
অধরাকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার দেখে নেয়।
টিশার্ট পড়েছে বিধায় দুই হাতের কালচে দাগ গুলো দেখা যাচ্ছে। একটু বাঁকা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কোমরে যে ব্যাথা সেটা ঢেড় বুঝতে পারছে।
মাহিম ফোঁস করে শ্বাস টানে।
“মাইর খাওয়ার মতো কাজ করিস কেনো? সাবধানে থাকতে পারিস না? অন্যের বাড়িতে থাকিস তুই। তাদের কথা মতো চলতে কি অসুবিধা? তাড়িয়ে দিলে যাবি কোথায়?
অধরার চোখের কোণে পানি চলে আসে। প্রিয় মানুষটার থেকে অপমান নিতে কষ্ট হচ্ছে। আশ্রিতা সে। লোকটা বারবার কথায় কথায় মনে করিয়ে দেয়।
” না কি তোর মায়ের মতো তোরও কোনো বয়ফ্রেন্ড আছে? তার সাথে ভাগতে চাচ্ছিস?
শ্বাস বন্ধ হয়ে আসে অধরার। দুই কান গরম হয়ে যায়। মাকে সে ঘৃণা করে। তবুও মাকে নিয়ে কেউ কিছু বললে কলিজা পুরে তার।
অধরার দুই গাল বেয়ে টপটপ করে পানি পড়ে। হাতের উল্টো পিঠে পানি মুছে ফেলে।
“বাস্তবতা মেনে নিতে শিখ। ওয়াদা কর মায়ের মতো যেনো কেউ না বলে। যাতে সবাই বলতে বাধ্য হয় গোবরে পদ্মফুল তুই। সবাইকে দেখিয়ে দিতে হবে তুই একজন বেস্ট মানুষ।
আর আমার মায়ের থেকে দূরে থাকবি।
অধরা বলার মতো কথা খুঁজে পায় না। চুপচাপ নাক টানতে থাকে।
মাহিম ধমকে বলে ওঠে
“সামনে থেকে সর। ইডিয়টের মতো দাঁড়িয়ে থাকলে বেরবো কি করে?
অধরা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে দরজার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। মাহিম বেরিয়ে যায়। অধরা তাকিয়ে থাকে।
এখনো বুকটা ধুকপুক করছে। লোকটা সামনে আসলে স্বাভাবিক থাকতে পারে না সে। সারাক্ষণ খোঁচা মারা কথা আর অপমান।
” আমাকে ভালোবাসবেন কবে আপনি? আমার সব অপমান কবে মুছে দিবেন? কবে এক টুকরো সুখ এনে দিবেন আমায়?
অধরা হচ্ছে মাহিমের চাচাতো বোন। ছোট চাচার মেয়ে। অধরার যখন দশ বছর বয়স তখন অধরার মা তার প্রাক্তন প্রেমিকের সাথে চলে যায়। আর বাবা ঢাকায় চাকরি করে। সে অবশ্য এখনো বিয়ে করেনি। মাঝেমধ্যেই আসে অধরাকে দেখতে। মাসে মাসে টাকা পাঠায় অধরার জন্য।
মাহমুদা অধরাকে দেখতে পারে না। পান থেকে চুন খসলেই মারে, বকা দেয়। তবে খুব বেশি কাজ করায় না অধরাকে দিয়ে।
অধরা ফ্রেশ হয়ে ভার্সিটির জন্য তৈরি হয়ে বের হয়। আজকে রেস্ট নিতে পারলে ভালো হতো। কিন্তু সামনেই এক্সাম। একদিন মিস দিলে অনেক কিছুই মিস হয়ে যায়।
মুহিত ফোন দেখছে। আর তাকে খাইয়ে দিচ্ছে মাহমুদা। এই ছেলেটাকে তিনি ভীষণ ভালোবাসে। তিন ছেলে মেয়ের মধ্যে এই ছেলেটা তার চোখের মনি। ছেলেকে যেমন ভালোবাসে তেমনই ছেলেকে দেখে ভয় পায়।
মিথি খাচ্ছে। অধরা চুপচাপ গিয়ে মিথির পাশে বসে। চোখের ইশারায় গুড মর্নিং বলে।
পানি খাওয়ার জন্য ফোন থেকে চোখ তুলতেই অধরার মিষ্টি মুখখানা চোখে পড়ে মুহিতের। তার ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে।
” গুড মর্নিং অধরা
অধরা চমকে তাকায়। মাহমুদা শক্ত চোখে তাকায় অধরার দিকে। অধরা রিনরিনিয়ে মর্নিং বলে খেতে শুরু করে।
হতাশ হয় মুহিত। এভাবে মাথা নিচু করে রাখার কোনো মানে হয়? চোখে চোখ রেখে মর্নিং বলতে হয়। জানে না কি মেয়েটা?
“আম্মু আর খাবো না।
পানি খেয়ে গ্লাস রেখে বলে মুহিত।
মাহমুদা থালা নিয়ে বেসিনএ চলে যায়। এমনিতেই তার লেট হয়ে গেছে।
মুহিত তাকিয়েই আছে অধরার দিকে। মেয়েটাকে তার ভালো লাগে। প্রচন্ড ভালো লাগে।
মাহমুদা বেরিয়ে যায়।
মুহিত উঠে অধরার পাশের চেয়ারে বসে। অধরা কাচুমাচু হয়ে যায়।
” ব্যাথা কমেছে?
শরীর ঠিক আছে? জ্বর আসছিলো?
অধরার কপালে হাত দিতে যায় মুহিত। অধরা চোখ মুখ কুঁচকে খানিকটা পিছিয়ে যায়।
বিরক্ত হয় মুহিত৷ মিথি ঠোঁট টিপে হাসছে।
“আরে ইয়ার
জ্বর চেক করতে যাচ্ছিলাম। তোমার গলা টি*প*তে না।
অধরা তারাহুরো করে হাত ধুয়ে উঠে যায়।
” আমার খাওয়া শেষ।
বলেই ব্যাগ নিয়ে ছুটে যায় দরজার দিকে। মিথি এবার শব্দ করে হেসে ওঠে
“দাভাই আমিও বেরুচ্ছি।
” চল ড্রপ করে দিয়ে আসি।
“লাগবে না।
তোমায় একটা কথা বলি। অধরার সাথে এরকম করো না। তোমার সাথে ওকে মানাবে না। তা ছাড়া জানোই তো ও বড় ভাইয়াকে
বাকিটা শুনে না মুহিত। সে ধমক দিয়ে বলে
” ভার্সিটিতে যাচ্ছিস যা। এতো কথা কিসের
মিথি মুখ বাঁকিয়ে চলে যায়। মুহিত বাঁকা হাসে।
“অধরা
নামটা জোশ
আর তার থেকেও বেশি জোশ মাহিম। আমার ভাইয়া।
চলবে…………….
১–৯ পর্ব লিংক