- প্রথম প্রেমের গল্প
- সংক্ষিপ্ত প্রেমের গল্প
- বর্তমান প্রেমের গল্প
- প্রেমের গল্প পড়তে চাই
- আমার প্রেমের গল্প
- রিলেশনের কষ্টের গল্প
1. প্রথম প্রেমের গল্প
রমনা পার্কে প্রেমিকার সাথে বসে আছি আর বাদাম খাচ্ছি। এমন সময় দেখি একজন দ্বীনি ভাই আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে। ভালো করে তাকায় দেখি আরে এটা না আমার আব্বা!
তাড়াতাড়ি প্রেমিকার ঘাড়ে থেকে হাত সরিয়ে নিয়ে আমার আর প্রেমিকার মধ্যে দুই হাত ব্যবধানে দূরত্ব বজায় রাখলাম। প্রেমিকা আমার এই হঠাৎ অবস্থান পরিবর্তন দেখে বললো ” কি হইলো এতো দূরে গেলা কেন? একটু আগেই না বললা শীত শীত লাগছে”। আমি কাচুমাচু হয়ে বললাম চুপ করে বসে থাকো, সামনে যে লোক আমাদের দিকে এগিয়ে আসছেন উনি আমার আব্বা হুজুর। উনাকে দেখেই আপাতত গলা শুকিয়ে হাত পা গরম হয়ে গেছে।তাই দূরে আসছি। আর শুনো উনি সামনে এসে কিছু জানতে চাইলে বলবা তুমি আমার স্টুডেন্ট। আমি তোমাকে কেমিস্ট্রি পড়াই। আর আব্বা হুজুর খুব ভালো মানুষ আর আমাকে খুব ভালবাসে।
এর মধ্যে আব্বা হুজুর আমাদের সামনে এসে হাজির। উনি উনার বিশেষজ্ঞ চোখ দিয়ে একবার আমাকে আর একবার আমার প্রেমিকা সোমাকে স্ক্যান করে নিয়ে সরাসরি আমাকে প্রশ্ন করলেন তুই এই পার্কে কি করিস?
আমি আমতাআমতা করে উত্তর দিলাম। আসলে আব্বা পার্ক দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ আমার এই স্টুডেন্ট দেখে বসতে বললো তাই ওর সাথে বসে বসে গল্প করছিলাম।
আমার প্রেমিকাও আমার সাথে যোগ দিল হ্যাঁ আঙ্কেল। ভাইয়াকে দেখে আমিই বসতে বললাম। তাছাড়া জারণ- বিজারণ টা এখনো ঠিকমতো বুঝি নাই। তাই ভাইয়ার থেকে আবার সেসব বুঝে নিচ্ছিলাম। তাইনা ভাইয়া?
হ্যাঁ হ্যাঁ আব্বা। ও খুব ব্রিলিয়ান্ট ছাত্রী। ওকে কেমিস্ট্রি পড়াই।একটুতেই সব বুঝে যায়। কিন্তু জারণ-বিজারণ টা বুঝে নাই। তাই এটা নিয়ে আলোচনা করছিলাম।
মানুষ হঠাৎ অদ্ভূত কোনো প্রাণী দেখলে যেভাবে তাকিয়ে থাকে। আব্বাও আমার দিকে সেভাবে তাকিয়ে আছে। আর আমি একবার আব্বার মুখের দিকে আরেকবার প্রেমিকার মুখের দিকে দেখছি।
হঠাৎ আব্বা বলে উঠলো “তুই না এসএসসি তে দুইবার কেমিস্ট্রি তে ফেইল করছিলি? ইন্টারে একবার। তুই এমন গাধা হয়ে এই মেয়েটাকে কি শিক্ষা দেস”? বন্ধুরা আজকাল প্রেমিকার সামনে বাঁশ দেয় সেটা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু নিজের বাপ যে প্রেমিকার সামনে নিজের ছেলেকে এইভাবে বাঁশ দেয় এই অভিজ্ঞতা মনে হয় আমার ই প্রথম। প্রেমিকাকে বলছিলাম আমি এসএসসি ইন্টারে দুইটাতেই গোল্ডেন এ প্লাস পাইছি। ছেলে খুব ব্রিলিয়ান্ট। জগন্নাথে কেমিস্ট্রিতে পড়ি। কিন্তু আব্বা প্রেমিকার সামনে ইজ্জতের পুরা ফালুদা করে দিয়েছে।
আব্বার এসব কথা শুনে প্রেমিকা আমার দিকে আগুনের চোখে তাকিয়ে আছে। ঠিক এমন সময় আব্বা হুজুর আমাদের মাঝে বসে গিয়ে ওকে বললো দেখো মা আমার এই ছেলে কিভাবে তোমাকে পড়ায় এটা আমার ঠিক বুঝে আসছে না। যে ছেলে নিজের পরীক্ষায় ফেল করে তার ছাত্রীর রেজাল্ট কেমন হবে সেটা ভেবেই আমার কষ্ট হচ্ছে। তুমি কিছু মনে করো না মা।
মনে মনে বলতেছি ” আব্বাহুজুর আমার হাত দিয়ে কাপড় ছিঁড়ে আবার সুঁই দিয়ে সেলাই করে। দরকার নাই আর সেলাই করার। যে বাঁশ দেওয়ার তা দিয়েই দিছেন”। ঠিক এই সময় আব্বা হুজুর এক অদ্ভুত কথা বলে উঠলেন।
আচ্ছা তোর গার্লফ্রেন্ড শিলার খবর কি যে নিয়মিত আমাদের বাসায় ঘুরতে আসতো?
আব্বার এই প্রশ্ন শুনে চোখে জোনাকি পোকা দেখতে লাগলাম। আব্বা আমার কয় কি! ওদিকে প্রেমিকা দেখি অপলক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
আমি আমতাআমতা করে আব্বাকে বললাম ” কোন শিলা আব্বাজান”? আব্বা বললেন ” আরে যে মেয়েকে আমার পকেট থেকে টাকা চুরি করে রেস্টুরেন্টে ট্রীট দিতে গিয়ে আমার হাতেনাতে ধরা খাইছিলি। যে মেয়ের বাবা আমার কাছে বিচার দিছিল তুই তার জুতা নিয়মিত মসজিদ থেকে চুরি করতিস। সেই মেয়ের কথাই বলছি।
আব্বা দেখেন পাস্ট ইজ পাস্ট। আমি এসব ভুলে গেছি।
আব্বা বললেন ” তবে মেয়েটা অনেক ভালো আছিল। দেখলেই সালামকালাম দিত।আজকাল মেয়েদের মধ্যে এসব একদম দেখা যায় না।যাইহোক, তোর বউ কল দিছিলো কইলো যাওয়ার সময় লবণ আর পিঁয়াজ নিয়ে যাইতে।
আমি তো অবাক, বিয়ে করলাম কবে আমি! কিছু একটা বলতে যাবো। এদিকে সোমা উঠে দাঁড়িয়ে আমার সামনে এসে ঠাস করে একটা থাপ্পড় দিয়ে সোজা হাঁটতে লাগলো।
আব্বা এমন সময় বলে উঠলো ” এ কেমন অদ্ভূত ছাত্রী তোর? শিক্ষক কে সম্মান দিতে জানে না”। আমি আব্বাকে কইলাম ” আপন মানুষকে বিশ্বাস করলে যা হয়”।
জারণ- বিজারণ
রিফাত আহমেদ
.
2. সংক্ষিপ্ত প্রেমের গল্প
বাসায় ঢুকেই মৌমিতা হঠাৎ ছুট দিল। বেসিনের সামনে গিয়েই হড়হড় করে বমি করা শুরু করল। আমি তো বুঝতে পারছিলাম না কী ঘটছে! বমি তো বন্ধ হওয়ার কোনো নামগন্ধ নেই।
আন্টি ছুটে এলেন, ‘কিরে, তোর কী হয়েছে?’
মৌমিতা জবাব দেয় না, মাথা নিচু করে বেসিনের দিকে তাকিয়ে মাথায় পানি ঢালছে। আন্টি এবার জিগ্যেস করলেন, ‘সত্যি করে বল, তোর এই সর্বনাশ কে করেছে?’
ও কিছু না বলে আমার দিকে আঙুল দেখাল। আন্টি এসে আমার গালে কষে একটা চড় দিলেন, আমি তো হতভম্ব! এগুলো কী ঘটে চলছে আমার সঙ্গে?
—হারামজাদা! অসভ্য! তুই মৌমিতার ফ্রেন্ড হয়ে ওর এত বড় ক্ষতি করলি? আমি তোকে বিশ্বাস করতাম।
—আন্টি আপনি এসব কী বলছেন? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না…!
—বেয়াদব! আমার মেয়ের এত বড় সর্বনাশ করে আবার ন্যাকামো করছিস!
এবার মৌমিতা বলে উঠল, ‘মা, তুমি ওকে কী বলছ? আমিই তো ওকে বলেছিলাম!’
—কী বলেছিলি?
—ও তো না করেছিল, আমি জেদ করেছিলাম রাস্তার পাশের মামা হালিম খাব। সেইটা খেয়েই তো আমার এই অবস্থা
৩.বর্তমান প্রেমের গল্প
আমার গার্লফ্রেন্ড একটা ছেলের সাথে ছবি পোস্ট করেছে! ছবিটা দেখেই বুঝা যায় দুইজন খুব ক্লোজ। গার্লফ্রেন্ডের এই আইডিতে আমি এড নাই!
আমার গার্লফ্রেন্ড কে জিজ্ঞেস করলাম, “তোমার এই আইডির কথা আমাকে বলোনি কেন?”
অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, “কোন আইডি রায়হান? আমার তো একটাই আইডি। সেটাতে তো তুমি আছ।”
পোস্ট বের করে সুইটি কে দেখালাম। সুইটি চোখ বড়ো করে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,” ওমা দেখছ বাবু! ছেলেটা কী ফাজিল! আমার ছবি দিয়ে ফেক আইডি খুলছে। তুমি এক্ষুণি রিপোর্ট করো।”
আমি আইডিতে রিপোর্ট করলাম। এরপরে ওই আইডিটা খুঁজে পাইনি। মনে হয় ফেসবুক ব্যান করে দিয়েছে। এর কিছুদিন পরে আরেকটা আইডি দেখলাম। সুইটি দেখে বলল, বাবু! আমি আর ফেসবুক চালাব না! এ সব ফাজিল ছেলেরা শুধু আমার ছবি দিয়ে কয়দিন পরপর ফেক আইডি খুলে। আবার দেখ ছবি এডিট করে অন্য ছেলের সাথে ছবি পোস্ট করে! ভাগ্যািস! তুমি দেখছ। যদি আব্বু দেখত তাহলে আমাকে মেরেই ফেলত। সুইটির আব্বু অবশ্য বিদেশে থাকে।
শুক্রবারে সুইটি কে কল দিলাম। ” আজ বের হতে পারবা? “
“না, বাবু আজ বের হতে পারব না।”
ভেবেছিলাম শুক্রবার আর বের হবো না। এক বন্ধু জোর করে নিউমার্কেটে নিয়ে গেল। সুইটি একটা ছেলের সাথে নিউমার্কেটে এসেছে। রাতে আমাকে বলল, “বাবু তুমি রবিন কে চিনো না? ও তো আমার কাজিন। আম্মু আমাকে পাঠিয়েছে একটা জিনিস কিনতে। তুমি কি আমায় অবিশ্বাস্য করো রায়হান?”
“না, না অবিশ্বাস্য কেন করব।”
সুইটির সাথে আমার দুইবছরের সম্পর্ক। মেয়েটা খুবই ভালো। দেখতেও বেশ সুন্দর!
রবিনের সাথে আমার একদিন দেখা হলো টি এস সি তে। রবিন অবশ্য আমাকে দেখে ডাকল, “রায়হান ভাই।”
আমি প্রথমে চিনতে পারিনি। পরে চিনলাম আরে এটা তো সুইটির কাজিন। রবিন আমার কাছে এসে বলল,” আপনি রায়হান ভাই না?”
রবিন আমাকে কী করে চিনল বুঝতে পারলাম না। সুইটি কি ওর ফ্যামিলিতে আমার কথা বলেছে? মেয়েটা দেখি খুবই কাজের!
“হ্যাঁ, আমিই রায়হান। আপনি?”
“আমি রবিন। আপনি তো সুইটির কাজিন তাই না?”
হতবাক হয়ে চেয়ে রইলাম। রবিন বলল, “সুইটি আপনার কথা প্রায়ই বলে।”
“সুইটি আপনার কে হয়?”
“আপনি খুব ভালো মানুষ তাই বলছি। সুইটি আমার গার্লফ্রেন্ড। “
আমার কথা হারিয়ে গেছে! কোনোমতে নিজেকে সামলিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, “কতদিনের সম্পর্ক আপনাদের?”
“তিন বছর ভাই। “
ছেলে দেখি আমার সিনিয়র!
“ভাই সময় আছে?”
“হ্যাঁ ভাই।”
ছেলেটার মুখে এখনো হাসি লেগে আছে। একটু পরে অবশ্য হাসিটা থাকবে না! আমরা মধুর ক্যান্টিনে আসলাম। আগে একটু চা খেয়ে নেই। রবিনের হাসিটা দেখতে ভালো লাগছে! ও ভাবছে গার্লফ্রেন্ডের কাজিনের সাথে সম্পর্কে ভালো হচ্ছে। সামনে কাজে লাগবে! বলা তো যায় না যদি পালিয়ে বিয়ে করতে হয়।
চা খেতে খেতে বললাম রবিন তুমি কি “সুইটির কোনো ফেক আইডি দেখেছ?”
রবিন অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,” হ্যা ভাই। কয়েকটা ফাজিল পোলা এই কাজ করেছে! “
ঠিক আমার মতোই ওকে বুঝান হয়েছে! “আইডিটা এখন নাই তাই না?”
“আমি রিপোর্ট করার পর আর নাই।”
“আইডি ঠিকই আছে। তোমাকে ব্লক করা হয়েছে! “
এবার অন্য আইডি থেকে সুইটির আইডি খুঁজে বের করলাম। রবিন ঠিক বিশ্বাস করতে পারছে না।
“ভাই আপনি এ সব জানলেন কি করে?”
একটু হেসে বললাম, “আমিও তোমার মতো একজন ক্যান্ডিডেট! “
“বলেন কি!”
“আমি তো জানতাম তুমি সুইটির কাজিন।”
একটা ফেক আইডি খোলা ছেলেকে মেসেজ দিলাম। “আমি সুইটির কাজিন। তোমার সাথে কথা আছে যোগাযোগ করো।”
আমি আর রবিন হতবাক হয়ে শুনছি রাসেলের কথা। রাসেল হলো সুইটির ছবি দিয়ে ফেক আইডি খুলেছে। এটা অবশ্য সুইটির কথা। আসল ঘটনা রাসেলের সাথে সুইটির সম্পর্কে চার বছর ধরে চলে!
রবিন বলল, “ভাই আপনি তো আমার এক বছরের সিনিয়র! “
তিনজন মিলে আর দুইটা আইডির রাজন আর আসলাম কে পাওয়া গেল। এরা সবাই সুইটির বয়ফ্রেন্ড। রাজনের সাথে সম্পর্ক পাঁচ বছর আর আসলাম আমাদের সবার সিনিয়র। ওর সাথে সুইটির সম্পর্ক ছয় বছর! প্রতি বছর একজন করে যোগ হয়!
সুইটি এখন আমাদের কারো সাথে যোগাযোগ করছে না। ওর বাবা বিদেশ থেকে আসছে। কাজেই এখন ও খুব ব্যস্ত থাকবে। এটা অবশ্য আমাদের সবাইকে আলাদাভাবে জানিয়েছে সুইটি!
একজন মধ্যবয়স্ক লোকের সাথে সুইটি কে দেখলাম আমরা। এখন আমরা পাঁচজন একসাথে সুইটিকে ফোলো করি!
রাতে সুইটিকে মেসেজ করলাম,” আজ তোমার বাবার সাথে তোমাকে দেখলাম। তোমরা শপিং গেছিলা বুঝি?”
“হ্যাঁ, পরে কথা হবে। এখন আমাকে মেসেজ দিবে না। “
রবিন আমাকে কল দিয়ে বলল, “ভাই জলদি আসেন। “
“কী হয়েছে ভাই?”
“আসেন আপনাকে বলছি সব।” ছেলেটাকে খুব উত্তেজিত মনে হচ্ছে।
আমি রবিনের সাথে দেখা করতে গেলাম একটা রেস্টুরেন্টে। গিয়ে দেখি রাসেল আর আসলামও এসেছে। মনে হয় সুইটির নতুন কোনো বয়ফ্রেন্ড পাওয়া গেছে!
“কী হয়েছে রবিন?”
আজ সুইটির বাবার সাথে দেখা। একটা দশ বছরের মেয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আমি ভেবেছিলাম সুইটির ছোটো বোন হবে।
আমি সামনে গিয়ে সালাম দিলাম, “আংকেল কেমন আছেন? “
উনি আমাকে চিনতে পারল না। চেনার কথাও না! আমি বললাম, “আমি সুইটির ক্লাসমেট। “
“আমাকে আংকেল ডাকছেন কেন!”
“আপনি সুইটির বাবা না?”
বিরক্ত হয়ে বললেন, “সুইটি আমার স্ত্রী। এটা সুইটির মেয়ে!”
ভাই আমি দ্রুত পালিয়ে এসেছি। পরে খবর নিয়ে জানলাম উনি সুইটির দ্বিতীয় হাসবেন্ড!
৪.প্রেমের গল্প পড়তে চাই
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রেম কাহিনী ………..
পরিণত বয়সে সুনীল যাকে ভালবেসে ছিলেন তিনি ছিলেন একজন ফরাসী তরুণী। নাম মার্গারিট ম্যাথিউ। সাতাশ বছরের এই তরুণীর সঙ্গে সুনীলের সাক্ষাৎ হয়েছিল আমেরিকায়। সুনীল তথন মধ্য-পশ্চিম আমেরিকার আইওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্য বিভাগের ‘ক্রিয়েটিভ রাইটিং প্রোগ্রাম’-এ অংশ নিতে এক বছরের জন্য সেখানে গিয়েছিলেন। মার্গারিট ছিলেন ওই বিশ্ববিদ্যালয়েরই ফরাসী বিভাগের শিক্ষিকা। সুনীল আইওয়া যাওয়ার দু’বছর আগে থেকেই তিনি সেখানে শিক্ষকতা করছিলেন।
মার্গারিটের আগ্রহ ছিল ভারতীয় পুরাণ ও সংস্কৃতিতে। অন্যদিকে সুনীলের গভীর অনুরাগ ছিল ফরাসী ভাষা ও সাহিত্যে। দু’জনে ছিলেন দু’জনার পরিপূরক। সুতরাং খুব দ্রুত তাদের মধ্যে অন্তরঙ্গতা হয়ে গিয়েছিল। ঘণ্টার পর ঘণ্টা, কথনো বা সারাদিন দু’জন একই ঘরে গল্প করেছেন, ড্রিঙ্ক করেছেন, খাবার ভাগাভাগি করে খেয়েছেন, এমন কী মাসিক খরচও শেয়ার করেছেন। দু’জন এতটাই অন্তরঙ্গ হয়ে উঠেছিলেন যে, কেউ কাউকে ছাড়া দীর্ঘ সময় থাকতে পারতেন না।
সুনীল তার ‘ছবির দেশে, কবিতার দেশে’ শীর্ষক আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থে তাদের সম্পর্ক ও ঘটনা প্রবাহের যে বর্ণনা দিয়েছেন, এতে এটুকু পরিষ্কার যে তাদের সম্পর্কটা শুধু বন্ধুত্বের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। দু’জন দু’জনকে গভীরভাবে শুধু ভালই বাসেননি, প্রেমেও পড়েছিলেন। মার্গারিট তার ধর্মীয় সংস্কারের কারণে এবং সুনীল তার বাস্তব পরিস্থিতি ও দেশে ফেরার টানে প্রকাশ্যে এ প্রেমের কথা একে-অপরের কাছে স্বীকার করেননি। অবশ্য শেষের দিকে মার্গারিট অনেকখানি দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন, ভালবাসা ও ধর্মীয় বিশ্বাসের টানাপোড়নে ভেঙ্গে পড়েছিলেন। অন্যদিকে সুনীল নিজেকে সামলে নিতে পারলেও মার্গারিটের জন্য তার হাহাকারের কথা বহুবার স্বীকার করেছেন তার লেখায়।
মার্গারিটের সঙ্গে সুনীলের বন্ধুত্বের সূত্রপাতটা ছিল বেশ মজার। একদিন সুনীল তার ‘ক্রিয়েটিভ রাইটিং প্রোগ্রাম’-এ অংশগ্রহণকারী বন্ধুদের নিমন্ত্রণ করেছিলেন বাসায়। ওই দলে মার্গারিটও এসেছিলেন তার এক বান্ধবীর সঙ্গে। যাওয়ার সময় মার্গারিট তার একটি বই ফেলে রেখে যান সুনীলের বাসায়। পরের দিন বইটা নিতে যাওয়ার সময় মার্গারিট বলেন, তিনি শকুন্তলা উপাখ্যানটা বুঝতে চান। সুনীল যদি তাকে এটা বুঝিয়ে দেন, তাহলে তিনিও তাকে অনেক ফরাসী কবিতা পড়ে শোনাবেন। এ প্রস্তাবে সুনীল খুশী হয়েছিলেন। কিন্তু এরপর মার্গারিটের আর দেখা নেই। সুনীলও তাকে মনে মনে খুঁজছিলেন, কিন্তু লজ্জায় কাউকে সে কথা বলতে পারছিলেন না। পরে একদিন লাইব্রেরীতে দেখা হলে সুনীল তাকে বললেন, ‘কী ব্যাপার শকুন্তলার উপাখ্যান শুনতে তুমি আর এলে না?’ জবাবে মার্গারিট বলেন, ‘তুমি তো আমাকে ডাকোনি।…আমি নিজে থেকে তোমার বাড়িতে দু’বার গেছি। তারপরও কি আবার সেধে সেধে যাব ?’
মূলতঃ এ ঘটনার পর থেকেই দু’জনের বন্ধুতের শুরু। পরবর্তীকালে দু’জনের সম্পর্কটা যখন গাঢ় হয়, তখন মার্গারিট একদিন কথায় কথায় বলেন, বইটা তিনি সুনীলের বাসায় ইচ্ছে করেই ফেলে রেখে গিয়েছিলেন। যাতে তার সঙ্গে আরেকবার দেখা হয়। জবাবে সুনীলও বলেন, লাইব্রেরীতে মার্গারিটের সঙ্গে তার হঠাৎ দেখা হয়নি। তার দেখা পাওয়ার জন্য তিনিও কয়েকদিন ধরে লাইব্রেরীতে যাওয়া-আসা করছিলেন। সুনীল লিখেছেন, পুরনো এ ঘটনাটা নিয়ে পরে তারা দু’জনেই বেশ হাসাহাসি করেছেন।
মার্গারিট ছিলেন গোঁড়া ক্যাথলিক পরিবারের মেয়ে। তার দুই বোন ছিল নান্ (সন্ন্যাসিনী)। সুনীল লিখেছেন, মার্গারিটের বাড়িতে যাওয়ার কথা শুনে মার্গারিট তার হাত চেপে ধরে কাতর গলায় বলেছিল, “সুনীল, প্লীজ, তুমি আমাকে বিয়ে করতে চেও না।… তুমি চাইলে আমি না বলতে পারব না। কিন্তু আমার মা-বাবা এমন কষ্ট পাবেন, আমার অসুস্থ মা এমন আঘাত সহ্য করতে পারবেন না। না, না, তা আমি পারব না।
এর দুই-তিন বছর পর স্বাতীর প্রেমে বাঁধা পড়েন সুনীল। তবে স্বাতীকে সুনীল মার্গারিটের সব কথাই খুলে বলেছিলেন এবং একই সঙ্গে মার্গারিটকেও জানিয়েছিলেন স্বাতীর কথা। মার্গারিট মেনে নিয়েছিলেন সবকিছু। স্বাতীও মার্গারিটকে চিঠি লিখেছিলেন। মার্গারিট শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন সুনীল-স্বাতীর বিয়েতে।
সুনীলের বিয়ের কয়েক বছর পর মার্গারিটের জীবনে ঘটে এক দুঃখজনক ঘটনা। শ্বেতাঙ্গ মার্গারিটকে একদিন রাস্তা থেকে একটি মাইক্রোতে করে তুলে নিয়ে যায় কয়েকজন কৃষ্ণাঙ্গ দুর্বৃত্ত। তারপর তার আর কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি…….।
সুনীল লিখেছেন, “মার্গারিটের কাছ থেকে আমি অনেক দূরে সরে এসেছি। আমার বয়স বেড়েছে, কিন্তু তার বয়স একটুও বাড়েনি… মার্গারিট বেঁচে থাকলে এতদিনে তার সঙ্গে আমার কী রকম সম্পর্ক হতো, তা জানি না। তবে ফরাসী দেশের মাটিতে পা দিলেই আমি যেন শুনতে পাই তার যৌবনময় কণ্ঠস্বর। তার উচ্ছসিত হাসির শব্দ, তার চোখ দিয়েই এখনো অনেক কিছু দেখি।”
তথ্যসূত্রঃ সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘পায়ের তলায় সর্ষে” এবং “ছবির দেশে, কবিতার দেশে” উপন্যাস।
বিঃদ্র- কিছু পার্সোনাল রহস্য লুকিয়ে আছে,,,,,,,, সরি আপু
৫.আমার প্রেমের গল্প
উথাল-পাথাল প্রেম
ইদানীং খুব ছোটবেলার মতো প্রেম করতে ইচ্ছে করে!
খুব গোপনে তোমায় ভাবতে ইচ্ছে করে!
উথাল-পাথাল প্রেমে স্বপ্নাতুর হতে ইচ্ছে করে!
সেই সেরকম, যেমন ধরো-
স্কুলের পথে হেঁটে যেতে যেতে কেবল তোমায় খোঁজা!
ক্লাসরুমের ব্লাকবোর্ডে তোমার নাম
খুব যতনে, খুব মমতায় খোদাই করা!
নোটবুকের পাতায় নানা সংকেতে তোমার উপস্থিতি নিশ্চিত করা!
প্রথম অক্ষরের সাথে প্লাস মাইনাস মিলিয়ে ভবিষ্যতের প্রহর গোনা!
কিংবা অলস সময়ে ‘পুজোর ফুল ভালবাসা’ গান শুনে হঠাৎ কেঁদে ফেলা!
ঈদ কার্ডের এক কোণায় তোমার হাতে লেখা আমার নাম!
তুমি বসে আছো ভেবে কোনো কোনো মোড়ে পা ভারি হয়ে যাওয়া!
অথবা সেই কালো শার্টে খুব পাশ দিয়ে চলে যাওয়া!
আর মিষ্টি গন্ধে সারাদিন আমার পাগল পাগল থাকা!
তোমাকে খুব ছোট্টটি যদি বানিয়ে দেয়া যেতো-
নিজেকেও যদি আবার সেই বয়সে নেয়া যেতো-
পাগল করা ভালবাসতাম তবে এবার।
প্রথম প্রেমের ভুল দরোজায় যেতে দিতাম না!
কিংবা অকারণ কামনায় ভাসতে দিতাম না।
যতোটা কষ্টে ঝরেছিলো দুইটি বছর-
সবটুকু নিজের মধ্যে ধারণ করতাম তার।
যদি সেই মিষ্টি সময় পেতাম আবার-
লিখে নেয়া চিবুকে প্রাসাদ বানাতাম!
কঠিন প্রেমে দখল করতাম বুকের জমিন!
লাঠিয়াল বসিয়ে পাহারা দিতাম চারপাশ!
দমবন্ধ হলেও ছাড়তাম না তোমার স্বাধীন ভূমি!
খুব ইচ্ছে হচ্ছে সেই ছেলেমানুষি প্রেমে মজতে!
বেখেয়ালি বেহিসেবী বেসামাল প্রেম!
চোখের মধ্যে আগুন, আর বুকের মধ্যে ফাগুন নিয়ে
তোমার সাথে পালিয়ে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে খুব!!!
শাহনাজ রানু
৬.রিলেশনের কষ্টের গল্প
ভালোবাসা নয়, প্রেম
এখন গভীর রাত। বিছানাতে পাশে ফারহান শুয়ে আছে। কিছুক্ষণ আগেই আমাদের মধ্যে আদর আর ভালোবাসা হয়েছে। ভালোবাসা শেষ হওয়া মাত্রই ফারহান ঘুমিয়ে পড়েছে। সবসময় তাই হয়। আজকেও তাই হয়েছে। আমার ঘুম আসে না। আমি শুয়ে শুয়ে জেগে থাকি। সবসময় তাই হয়। আজকেও তাই হচ্ছে। পাশে ফিরে ফারহানের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ করে ওর প্রতি আমার খুব মায়া লাগলো। অদ্ভুত বিষন্নতায় মনটা বিষে যাচ্ছে।
ফারহানের সাথে আমার প্রথম পরিচয় দশ বছর আগে। আমরা তখন সবেমাত্র ভার্সিটিতে ঢুকেছি। প্রথম থেকেই আমি রাগী স্বভাবের ছিলাম। রক্ষনশীল পরিবার থেকে আসা আমি, তাই অনেক ট্যাবু কাজ করেছিল আমার মধ্যে। ছেলেরা খুব সহজে আমার ধারে কাছে আসতে পারতো না। কেউ কেউ একটু সাহস করলে, দ্বিতীয়বার আমার কাছে ঘেঁষার কথা আর মনে করতো না। ক্যাম্পাসের সবাই এটা জানলেও, আমার কাছে ছেলেদের আসার চেষ্টা বন্ধ হলো না। কারণ, বন্ধুরা বলে থাকে, আমি না কি খুবই সুন্দরী। আমার ভিতরে না কি এমন কিছু একটা আছে যা অন্যদের ভীষন টানে।
ফারহান এসেছিল আমার কাছে। ক্লাসে মাঝে মাঝে ওকে দেখতাম। খুব আহামরি ধরনের কিছু ছিল না। সেই ফারহান একদিন আমার কাছে এসেছিল। ইংরেজি সাহিত্য ক্লাসে ইপ্সিতা ম্যাম যখন রোমিও জুলিয়েট পড়াচ্ছিলেন, সেই ভরা ক্লাসে, হঠাৎ করেই ফারহান সোজা আমার সামনে এসে দাঁড়ালো। আমার চোখে চোখে তাকিয়ে স্পষ্টভাবে বলতে লাগলো, ‘সত্য কথা হচ্ছে, অনেক অনেক আগেই আমি তোমাকে আমার হৃদয়টা দিয়ে দিয়েছি, আমার সম্পূর্ণ হৃদয়টাই। এবং সেই হৃদয়টা আমি কখনই ফিরিয়ে নিতে চাই না। আমি জানি, আমি নিশ্চিতভাবেই জানি, তোমার সাথে আমার কখনো দেখা না হলেও আমি তোমাকে খুব, খুব মিস করতাম’। কথাগুলো বলা শেষ করেই ফারহান নিজের সিটে গিয়ে বসে পড়লো। ইপ্সিতা ম্যামসহ ক্লাসের সবার কোলাহল হঠাৎ করেই থেমে গিয়েছিল। ম্যাম কথার খেই হারিয়ে ফেললেন, হঠাৎ করেই রোমিও জুলিয়েট থেকে কোট করা শুরু করলেন, ‘মাই বাউন্টি ইজ এজ বাউন্ডলেস এজ দ্য সী, মাই লাভ এজ ডীপ; দ্য আমারআই গিভ টু দি, দ্য আমারআই হ্যাভ, ফোর বোথ আর ইনফিনিট’। আর আমি?
প্রথমে আমার খুব রাগ হয়েছিল। প্রবল ক্রোধে আমি ঘেমে উঠছিলাম। মনে হচ্ছিল ক্লাসের সবার সামনে ফারহানকে চরমভাবে অপমান করি। অথচ কিছুই বলতে পারিনি আমি। পুরো ক্লাসে আর কিছুই আমার কানে ঢুকেনি। বুঝতে পারছিলাম কেউ ইপ্সিতা ম্যামের লেকচারে সময় দিচ্ছে না, কিন্তু নিজেদের ভিতর ফিসফিস করে যাচ্ছে। কোনোরকমে ক্লাসটা শেষ হওয়ামাত্রই আমি ছুটে গেলাম ফারহানের সামনে। সবাই অপেক্ষা করছিল ভীষন কিছু একটা ঘটে যাবার জন্য, সম্ভবত ফারহানও অপেক্ষা করেছিল। আমি ফারহানের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম, কঠোরভাবে বলতে লাগলাম, ‘ভালোবাসলেই কী এইভাবে দুনিয়াসুদ্ধ সব লোককে জানিয়ে এটিকেটের পরোয়া না করে ভালোবাসি কথাটা বলতে হবে? আমার কী অবস্থা হতে পারে একবারও বোঝার চেষ্টা করোনি? নিজেকে কী ভাবো তুমি? ভেবেছ, এইভাবে আমাকে ভালোবাসি বলবে, আর আমি রাজি হয়ে যাব?’ একটু থামলাম আমি, বুক ভরে শ্বাস নিলাম। তারপর আচমকা বলে ফেললাম, ‘হুম, আমিও তোমাকে ভালোবাসি। তুমি আমাকে যাদু করেছ, আমার মনে, আমার শরীরে। তোমাকে ভালোবাসি খুব এবং এই মুহূর্ত থেকে আর কখনো তুমি থেকে আমি পৃথক হবো না!’ ক্লাসের সবাই আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো, সেই তাকানোতে ছিল প্রবল বিস্ময় আর অবিশ্বাস!
চার বছর প্রেম করলাম আমরা। এই সময়ে আমরা কষ্ট পেয়েছি, রাগ করেছি, অভিমানে জর্জরিত হয়েছি, আবার দুইজন দুইজনকে প্রবলভাবে ভালোবেসেছি। ফারহান ওর কথা রেখেছে, সবসময় আমাকে মিস করেছে খুব। আমিও আমার কথা রেখেছি, কখনোই ফারহান থেকে পৃথক হইনি। অবশেষে একদিন আমাদের বিয়ে হল। আমরা দুইজন দুইজনকে আপন করে পেলাম। একান্তে কাছে আসলাম আমরা। আজ মনে হয়, সেটা না হলেই ভালো হতো!
প্রতিটি মেয়ের মতো বিয়ে নিয়ে, বাসর রাত নিয়ে, আদর করা নিয়ে আমারো কিছু ফ্যান্টাসি ছিল। বিয়ের প্রথম রাতেই আমার সেই ফ্যান্টাসি নষ্ট হয়ে গেলো। আমি চেয়েছিলাম ফারহানের সাথে প্রথম রাতটাতে দুইজনে ছাঁদে বসে হাত ধরে চাঁদ দেখবো আর রবীন্দ্র সঙ্গীত শুনবো। অন্যদিকে ফারহান চেয়েছিল আমাদের ফুল শয্যা হোক। ফারহানের কষ্ট দেখতে আমার ইচ্ছে হয়নি। আর তখনই দ্বিতীয়বার ধাক্কা পেলাম আমি, যদিও অনেকদিন বুঝতে পারিনি, সেটা ছিল আমার দ্বিতীয় ধাক্কা!
আমি খুব রক্ষনশীল পরিবারে বড় হয়েছি। ছোটবেলা থেকেই শিখে এসেছি স্বামীর ইচ্ছাই সব ইচ্ছে। বিয়ের আগে আমার মা আমাকে ফিসফিস করে বলেছিলেন, কখনো স্বামীর সামনে এগ্রেসিভ হবে না। আমি তখন কথাটার মানে বুঝতে পারিনি। পরে বুঝলাম। আদর করার সময় আমি যখন ফারহানের উপরে উঠতে চাইলাম, ফারহান খুব অবাক হল। আমি বুঝেছিলাম এটাই হয়তোবা এগ্রেসিভ। মায়ের কথাটা তখন আমার কানে বার বার বাজছিল। আমি আর এগ্রেসিভ হতে পারিনি, আজও না!
কিন্তু আমার কষ্ট হতে লাগলো। ফারহান খুব ভালো মানুষ। কিন্তু ও আমার কষ্টটা বুঝতে পারেনি। ও শুধু নিজের শরীরটাই বুঝেছিল, আমার চাহিদার কথা চিন্তা করেনি। দিনে দিনে আমার কষ্ট বাড়তে লাগলো, প্রবল কষ্টে শরীর দুমড়ে যেতে লাগলো। আমার মাঝে মাঝে খুব মায়া মায়া কন্ঠে বলতে ইচ্ছে করতো, ‘ফারহান, তুমি কি ডাক্তার দেখাবে?’ বলতে পারতাম না! রক্ষনশীলতার লেবাস আমাকে টেনে ধরতো। আরো একটা কারণে আমি ফারহানকে কিছুই বলতে পারতাম না। আমরা সহপাঠী ছিলাম, আমরা বন্ধু ছিলাম- তখন সবকিছু আমরা শেয়ার করতাম। কিন্তু বিয়ের পর ফারহান আর বন্ধু থাকলো না, স্বামী হয়ে উঠলো। আর আমিও বুঝতে পারছিলাম এক অসীম আনন্দের সৈকতে গিয়েও সেই আনন্দের সাগরে ভাসতে পারছিলাম না!
এমন পরিস্থিতিতেই নাফিসের সাথে আমার পরিচয়। ইনফ্যাক্ট, নাফিস ছিল ফারহানেরই বন্ধু, স্কুল লাইফ থেকেই ওদের বন্ধুত্ব। খুব ঘনিষ্ঠ ছিল ওরা। ফারহান যখন ভার্সিটিতে ভর্তি হয়, নাফিস স্কলারশীপ নিয়ে দেশের বাইরে চলে গিয়েছিল, কানাডাতে। ফারহানের কাছে আমি প্রায়ই নাফিসের কথা শুনতাম। আমাদের বিয়েতে ওর দেশে আসার কথা ছিল। কিন্তু আসতে পারেনি। পরে শুনেছিলাম এক কানাডিয়ান মেয়েকে সে বিয়ে করেছিল, ঐ সময়ে ডিভোর্সের প্রক্রিয়ার মধ্যে যাচ্ছিল। আমি আজো জানি না, কেনো নাফিসের সাথে জেসিকার ডিভোর্স হয়েছিল। নাফিস যখন দেশে এলো, ফারহান আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিল। ততদিনে আমি কষ্টগুলোকে মানিয়ে নিতে শিখে গিয়েছিলাম। আমাদের এক মেয়েও হলো, ছোট্ট ফুটফুটে রাজকন্যা। এমন পরিস্থিতিতেই নাফিসের সাথে আমার পরিচয়। পরিচয় হয়েই সব তালগোল পাকিয়ে গেল।
নাফিস ফারহানের উল্টো, সবদিক থেকেই। দেখতে সুদর্শন, ব্যবহারে বিনয়ী কিন্তু স্পস্টভাষী, কাজে চৌকস। প্রথম দেখাতেই নাফিসকে আমার খুব ভালো লেগেছিল। নাফিসেরও সম্ভবত আমাকে ভালো লেগেছিল। তাই সময় অসময়ে সে প্রায়ই আমাদের বাসায় চলে আসতো। কখনো সে সময়ে ফারহান থাকতো, কখনো থাকতো না। ফারহান ব্যবসার কাজে খুব ব্যস্ত থাকতো। আমাকে খুব একটা সময় দিতে পারতো না। সে সময়টা দিতে লাগলো নাফিস। নাফিসের কাছ থেকে সময়টা পেতে আমারো ভালো লাগতো। এই ভালো লাগার কোনো ব্যাখ্যা ছিল না, আজো আমি বের করতে পারিনি। নাফিসের সাথে আমি শপিং এ চলে যেতাম, নাফিসের সাথে আমি ঘুরতেও যেতাম। এভাবেই আমার সাথে নাফিসের একদিন ভালোবাসাবাসি হয়ে গেলো, আমরা একে অপরকে আদর করলাম।
কীভাবে এটা হলো জানি না। ইংরেজিতে একটা কথা আছে নটি ফর্টি। বয়স যখন চলিশের কাছাকাছি আসে, তখন না কি মেয়েরা তাদের শরীরের সব চাহিদা বুঝতে পারে। কারণ, ততদিনে সে অভিজ্ঞ হয়ে উঠে, সন্তান জন্মদানের পর্ব শেষ হয়ে যায়, সন্তান বড় হতে থাকে, সংসারের চাপও অনেকখানি কমে যায়। সে তখন শরীরের অবদমিত চাহিদাগুলো পূরণ করতে চায়। বিছানাতে স্বামীকে ছিড়ে ফেলতে চায়, নিজে ছিড়তে চায়। আমার হয়তো নটি ফর্টি হয়েছিল, কিন্তু স্বামী ফারহানকে সেটা বলতে পারিনি!
নাফিসের সাথে আদরের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত নাফিসের প্রতি যদি আমার সামান্যটুকুও ভালোবাসা থেকে থাকে, আদরের পর সেটা বেড়ে গিয়ে পাহাড়সম হয়েছিল। পার্থক্য ছিল একটাই, আগে ছিল মনের ভালোবাসা, পরে হলো সম্পূর্ণই শরীরের চাহিদা। আমি ফারহানের সাথে কখনো এগ্রেসিভ হইনি, অথচ নাফিসকে অবলীলায় আমার চাহিদার কথা বলতে পেরেছিলাম। আমার ফ্যান্টাসীগুলো ওকে শুনিয়েছিলাম। আমি খুব অবাক হই, যে রক্ষনশীলতার দোহাই দিয়ে আমি ফারহানের সাথে নিজেকে মেলে ধরতে পারিনি, নাফিসের সাথে সেই রক্ষনশীলতা আমাকে কোনো বাধাই দেয়নি! তবে কী বাঙ্গালী মেয়েরা শুধুমাত্র স্বামীর সাথেই রক্ষনশীল থাকে? সমাজ তাকে প্রথম থেকেই শিখিয়ে দেয়, স্বামীর ইচ্ছাই সব ইচ্ছে? স্বামী যেভাবে চাইবে, সেভাবে স্ত্রীকে ব্যবহার করবে? স্বামী যদি স্ত্রীর শরীরের চাহিদার কথা না ভাবে, স্ত্রী কখনো সেটা স্বামীকে জানাবে না? জানি না!
নাফিসের সাথেই আমি প্রথম বুঝলাম সুখের সাগরে কীভাবে অবগাহন করতে হয়। এই চরম পুলক এতোদিন আমার কাছে অধরাই ছিল। ফ্যান্টাসীগুলোকে আমি কবরচাপা দিয়েছিলাম। নাফিসই সেগুলোকে আবার তুলে নিয়ে আসলো। নাফিসের সাথে আমার মেসেঞ্জারে কথা হতো না, ভাইবারে চ্যাট হতো না, হোয়াটস অ্যাপে আমরা কানেক্টেড ছিলাম না। আমরা ফোনে কথা বলতাম না। শুধু সপ্তাহের এক নির্দিষ্ট দিনে নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট জায়গায় আমরা দেখা করতাম। দুইজন দুইজনকে প্রবলভাবে ভালোবাসতাম। তারপর একদিন আমি এক ভয়াবহ ব্যাপার আবিষ্কার করলাম।
আমার ভালোবাসা শরীর থেকে আবার মনে গিয়ে ঠেকেছে। শরীর পেতে পেতে আমার এখন নাফিসের মনও পেতে ইচ্ছে করছে। আমি ফারহানের কথা ভুলে যেতে চাইলাম, আমি আমার মেয়ের কথাও মনে আনতে চাইলাম না। আমি রক্ষনশীলতাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখাতে চাইলাম। নাফিসকে বললাম, আমি তোমার সাথে আজীবন থাকতে চাই। আমি ফারহানকে ডিভোর্স দিতে চাই। নাফিস আমার কথাগুলো চুপ হয়ে শুনলো। এরপর আমার দিকে স্থির তাকিয়ে বললো, ‘আমরা ভালোবাসছি না, আমরা প্রেম করছি। এটাই ভালো। তোমার জন্য, আমার জন্য, ফারহানের জন্য, তোমার মেয়ের জন্য, সমাজের জন্য’। আমি স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলাম। আমি নাফিসের কথা বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। নিজেকে খুব অস্পৃশ্য লাগলো, নিজের প্রতিই নিজের ঘৃণা প্রবল হলো।
অনেকদিন হলো আমি ফারহানের কাছে আসি না। নাফিসের কাছে আমার শরীর দিয়ে দেবার পর সেই শরীর আমার আর ফারহানকে দিতে ইচ্ছে করতো না। ফারহান খুব চাইতো। আমি বিভিন্ন অজুহাতে এড়িয়ে যেতাম। এক সময় ওর চাওয়াও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আমরা একই বিছানায় পাশাপাশি শুয়ে থাকতাম, কিন্তু কানেক্টেড থাকতাম না। আমরা একই ছাদের নিচে দিনের পর দিন কাটাতাম, কিন্তু সেখানে দিনের আলো আসতো না।
আজ রাতে আমি ফারহানের কাছে এসেছিলাম। প্রবলভাবে ফারহানকে চাইলাম। প্রথমে ফারহান খুব অবাক হয়েছিল। ও কিছুতেই আমার এই হঠাৎ পরিবর্তন বুঝতে পারছিল না। কিন্তু আমি জোর করলাম। আমি এবার এগ্রেসিভ হলাম। ফারহান অবাক হয়ে দেখলো, প্রথমবারের মতো দেখলো, আমার ফ্যান্টাসীগুলো। আমাকে অবাক হয়ে বলতে লাগলো, কোথায় ছিলে তুমি এতোদিন? আমি ফারহানের কথার কোনো জবাব দিলাম না। প্রচন্ড আবেগ নিয়ে ফারহানকে ভালোবাসতে লাগলাম। ভালোবাসতে বাসতে আমি একসময় কাঁদতে লাগলাম। ফারহান আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো। চোখ থেকে পানি মুছিয়ে দিল। আমাদের ভালোবাসা শেষ হলো। কিন্তু এর রেশ রয়ে গেল অনেকক্ষণ।
এখন গভীর রাত। ফারহানের দিকে তাকিয়ে দেখি ও ঘুমিয়ে পড়েছে। আগে সবসময় তাই হতো। আজকেও তাই হয়েছে। কিন্তু আমার ঘুম আসছে না। পাশে ফিরে ফারহানের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ করে ওর প্রতি আমার খুব মায়া লাগলো। না, ভুল বলেছি! নিজের প্রতিই নিজের মায়া লাগছে। অদ্ভুত এক বিষন্নতায় মনটা বিষে যাচ্ছে।
(না, এটিও নতুন কোনো গল্প নয়। ওনেক পুরানো। গল্পটি ‘ভ্রষ্ট সময়ে নষ্ট গল্প’ গল্পগ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত।
গল্পগ্রন্থঃ ভ্রষ্ট সময়ে নষ্ট গল্প
লেখকঃ এস এম নিয়াজ মাওলা