# এক মুঠো রোদ .
# writer :নৌশিন আহমেদ রোদেলা
# পর্ব -৬
১০.
কারো ডাকে ঘুম ভেঙে গেলো রোজার। সারাদিনের পর রাতে খাবার খেয়েই ঘুমে তলিয়ে গিয়েছিলো সে। এরপর আর কিছু মনে নেই তার। কয়েকবার চোখ পিটপিট করে চোখ মেলে তাকালো রোজা। চোখের সামনে ভেসে উঠলো সোহেলের মুখ। কিছুক্ষণ ভ্রু কুঁচকে কোথায় আছে তা বুঝার চেষ্টা চালালো রোজা। রোজাকে চোখ মেলে তাকাতে দেখেই মুখ খুললো সোহেল,
— নিচে গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে ম্যাম। আপনাকে আপনার বাসায় পৌঁছে দেওয়া হবে। তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নিচে আসুন। স্যার ব্রেকফাস্ট টেবিলে ওয়েট করছেন।
সোহেলের কথায় খানিকটা অবাক হলো রোজা। সে কি ঘুমিয়েই দু দুটো দিন কাটিয়ে দিলো নাকি? মৃন্ময় তো বলেছিলো দু’দিন পর ছাড়া হবে তাকে। তাহলে এখন? রোজা বিস্মিত কন্ঠে বলে উঠলো,
— দু’ দিন হয়ে গেছে মিষ্টার টাকলা?
— জি না। দু’ দিন হয় নি। তবে সমস্যাটার সমাধান হয়ে গেছে। আপনি এবার যেতে পারেন। প্লিজ ফ্রেশ হয়ে নিচে আসুন। আমাদের লেইট হচ্ছে আর হ্যা, ডোন্ট কল মি টাকলা।
কথাটা বলেই মুখ কালো করে বেরিয়ে গেলো সোহেল। রোজার দেওয়া “টাকলা” নামটা পছন্দ হয় নি তার।। সোহেলের মনে হচ্ছে রোজার এই “টাকলা” নামটার জন্যই একদিনে চুল পড়া কয়েকগুণ বেড়ে গেছে তার। এভাবে চলতে থাকলে রোজার ভাষ্যমতো সে অতিশীঘ্রই টাকলা হয়ে যেতে পারে। মাথায় আস্ত একটা খেলার মাঠ নিয়ে ঘোরা নিঃসন্দেহে একটি ভয়ানক ব্যাপার। আর সোহেল মনে প্রাণে এই ভয়ানক ব্যাপারটাকে এড়িয়ে যেতে চাইছে। রোজা কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থেকেই আলসে ভাব নিয়ে উঠে দাঁড়ালো। আরো আধা ঘন্টা ঘুমোতে পারলে বেশ হতো। কিন্তু আপাতত তা সম্ভব নয় দেখে ধীর পায়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো সে। প্রায় ১৫ মিনিট পর গোসল সেড়ে বেরিয়ে এলো । মৃন্ময়ের রুমে মেয়েদের কোনো প্রসাধনী না থাকায় বাধ্য হয়েই শুধু চুল আঁচড়ে নিচে নামতে হলো তাকে। খাবার টেবিলে বসে আছে মৃন্ময়। একহাতে ফোন স্ক্রল করতে করতে অন্যহাতে খাবার খাচ্ছে সে। রোজা নামতেই সোহেল একটা হাসি দিয়ে চেয়ার টেনে দিলো। রোজা চেয়ারে বসতেই খাবার সার্ভ করা হলো । কিন্তু এতোকিছুর মাঝেও মৃন্ময় একবারও চোখ তুলে তাকালো না। যেন তার আশেপাশে রোজা নামে কেউ নেই, কেউ না। রোজা একগ্লাস পানি খেয়ে সোহেলের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,
— মিষ্টার সোহেল। আমার খাওয়া শেষ। আই থিংক আমি একাই চলে যেতে পারবো। আমাকে কি একটা রিক্সা বা সিএনজি ডেকে দিতে পারবেন, প্লিজ?
— রিক্সার কি দরকার ম্যাম? আমি আপনাকে পৌঁছে দিচ্ছি।
— নো থেংক্স। সেলিব্রিটিদের গাড়িতে উঠা আমার অভ্যেসে নেই। আই উইল ম্যানেজ।
কথাটা বলেই উঠে দাঁড়ালো রোজা। এবারও চোখ তুলে তাকালো না মৃন্ময়। ফোনের দিকে তাকিয়েই বলে উঠলো,
— আপনাকে যেহেতু আমরা এনেছি তো আপনাকে দিয়ে আসার দায়িত্বটাও আমাদের। সোহেল আপনাকে ড্রপ করে দিবে। লেট হিম ডু দিস।
মৃন্ময়ের কথা শুনেও না শুনার ভাব নিয়ে দরজার দিকে হাঁটা দিলো রোজা। তার পেছনে গেলো সোহেল। মৃন্ময়ের খাওয়া ইতোমধ্যে শেষ। বামহাতে ফোনটা নিয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াতেই চোখ পড়লো রোজার ভেজা চুলে। হাঁটুর একটু উপর অবধি লম্বা ঘন চুল। মৃন্ময়ের চোখগুলো খনিকের জন্য আটকে গেলো চুলের প্রতিটি ভাঁজে ভাঁজে। রোজা দরজার আড়াল হতেই একটা ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেললো মৃন্ময়। সিঁড়ির দিকে হাঁটতে হাঁটতে আজকের কাজের শিডিউল গুলো নিয়ে চিন্তা করতে লাগলো সে। সেই চিন্তাগুলোর মাঝেও গুঁটিশুটি হয়ে আরেকটা চিন্তা নাড়া দিতে লাগলো বারবার। রোজার সেই ঘুমন্ত মুখ আর ওই লম্বা চুলের চিন্তা। এক মিষ্টি বেদনার চিন্তা।
১১.
প্রিয়ন্তীর বাসার সামনে আসতেই একঝাঁক হিংস্র মানুষ চোখে পড়লো আরুর। সবার হাতেই লাঠি বন্ধুক আরো কতো কি। আরু ধুরুধুরু পায়ে আরেকটু সামনে যেতেই ছেলেরা অদ্ভুত চোখে তাকাতে লাগলো। তাদের সবার চোখেই হিংস্রতা ভরা লালসা। আরুর এবার বেশ ভয়ই লাগছে। দু’ চোখে চারপাশে শুধু রাফিনকেই খুঁজছে সে। তার বিশ্বাস রাফিন থাকতে তার কোনো ক্ষতি হবে না। কিছুতেই না। আরো কিছুটা হেঁটে যেতেই ছেলেদের সিটি আর অকথ্য ভাষায় কান ঝালাপালা হয়ে এলো আরুর। অসহায় চোখে এদিক ওদিক তাকাতেই রাফিনকে চোখে পড়লো তার। একটা কালো গাড়ির দরজা খুলে বসে আছে রাফিন। কফি কালারের শার্টের সাথে কালো জিন্স পড়েছে সে। রাফিনের সাদা শরীরে কালারটা বেশ ফুটে উঠেছে। হাতাদুটো গুটানো আর উপরের দুটো বোতম খোলা। পায়ে ব্ল্যাক স্পোর্টস ক্যাটস্ আর হাতে ব্ল্যাক ওয়াচ। সিল্কি চুলগুলো আজ কপালে এসে পড়ছে। ডান হাতে সিগারেট আর চোখে ব্ল্যাক সানগ্লাস। রাফিনকে দেখে যেনো আবারও নতুন করে প্রেমে পড়ে গেলো আরু। সব ভয় ডর ভুলে দৌঁড়ে গিয়ে রাফিনের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। হাঁপাতে হাঁপাতে কোমরে হাত রেখে বলে উঠলো,
— হ্যালো, মিষ্টার ভিলেন!
এমন একটা পরিবেশে কোনো মেয়ের কন্ঠ শুনে চমকে উঠলো রাফিন। চোখ মেলে তাকিয়ে আরুকে দেখেই অবাক হলো সে। এই মেয়েটা সবসময় কোথা থেকে দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে তার সামনে এসে পড়ে কে জানে? মেয়েটা কি পাগল নাকি? এসব কিছু ভাবতে ভাবতে আবারও চোখ বুঝে জ্বলন্ত সিগারেটে টান দিলো সে। এই মেয়েকে পাত্তা দেওয়ার কোনো মানেই হয় না। যে মেয়ে এমন একটা রামচড় খেয়েও পরের দিন দৌঁড়ে দৌঁড়ে সামনে এসে দাঁড়াতে পারে তার সাথে কি করা যেতে পারে জানা নেই রাফিনের। সাধারণ একটা মেয়ের এতো সাহস কি করে হতে পারে? খারাপ মেয়েরাও যে রাফিনকে দেখে ভয়ে কাঁপে সেখানে এই মেয়ে!! তার মতো একটা গ্যাংস্টারকে একটা মেয়ে ক্রমাগত ডিস্টার্ব করছে আর সে কিছুই করতে পারছে না, কথাটা ভেবেই অবাক হলো রাফিন।
— এইযে মিষ্টার? ঘুমিয়ে গেলেন?
আরুর কথায় আবারও চোখ মেলে তাকালো রাফিন। সটান উঠে দাঁড়িয়ে আরুর হাত টেনে গাড়ির সাথে চেপে ধরলো সে। চারপাশে সবাই চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। রাফিন সেদিকে রাগী চোখে তাকাতেই ধীরে ধীরে সরে পড়লো সবাই। ঘটনার আকস্মিকতায় চমকে উঠলোও মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে আরু। কোনো গ্যাংস্টার তাকে গাড়ির সাথে চেপে ধরে দাঁড়িয়ে আছে তা তার কাছে মোটেও অস্বাভাবিক লাগছে না। নিজেকে কোনো মুভির হিরোইন মনে হচ্ছে তার। আরুকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে একরাশ বিরক্তি আর রাগ নিয়ে বলে উঠলো রাফিন,
— কি চাও তুমি? মাথায় ছিট আছে নাকি? তোমার কোনো ধারনা আছে, তোমার সাথে ঠিক কি কি করতে পারি আমি?
— কি কি করতে পারেন সেটা পরে শুনবো। আগে সরি বলুন।
— সরি? হুয়াই?(ভ্রু কুঁচকে)
— কাল যে আমায় চড় মারলেন তাই সরি বলবেন। জানেন কতোটা খারাপ লেগেছে আমার? এবার ঝটপট সরি বলুন আমায়।
— আর ইউ ম্যাড? সরি আর আমি? রাফিন চৌধুরী কখনো সরি বলে না। এনিওয়ে তুমি আমার পেছনে ঘুরছো কেন? উদ্দেশ্য কি তোমার? বলেছিলাম না আমার আশেপাশে আসবে না, শেষ করে দিবো তোমায়। কি বলি নি?
— হুম বলেছেন। বাট কি করার বলুন? আমি যেখানে যাই আপনি আমার সামনে এসে পড়েন। এনিওয়ে, এই রঙের শার্টে কিন্তু চরম রকম হ্যান্ডসাম লাগছে আপনাকে। একদম চকলেট বয়। (চোখ টিপে)
আরুর সাহস দেখে হতবাক হয়ে যাচ্ছে রাফিন। এই মেয়েটা তাকে ভয় পাচ্ছে না কেন বুঝতে পারছে না সে। রাগে শরীর জ্বলে যাচ্ছে ওর। নিজের রাগ সামলাতে না পেরে আরুকে আরো শক্ত করে চেপে ধরলো রাফিন। নিজের সবটা ওজন ওর উপর ছেড়ে দিয়ে হাতের সিগারেটটা চেপে ধরলো আরুর গলায়। আরু চোখ-মুখে খিঁচে চিৎকার দিয়ে উঠলো। সেদিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে বলে উঠলো রাফিন,
— বলেছিলাম না? দূরে থাকো,,জাস্ট স্টে এওয়ে ফ্রম মি। মনে থাকে না তাই না? এবার থেকে মনে থাকবে। আবার যদি দেখি তো সারা শরীর
জ্বালিয়ে দিবো তোমার। মাইন্ড ইট!
রাফিনের কথাগুলো শেষ হতেই আরুর গাল বেয়ে দু’ফোটা জল গড়িয়ে পড়লো। ধরা গলায় বললো,
— আহ্ জ্বলছে খুব। আমাকে একটু পানি দিবেন? শরীরে জ্বর তো বারবার গলা শুকিয়ে আসছে। আপনি সরুন প্লিজ, নিঃশ্বাস নিতে পারছি না আমি। প্লিজ সরুন।
রাফিনের এতোক্ষণে খেয়াল হলো, মেয়েটার শরীরে সত্যিই খুব জ্বর। আরুকে ছেড়ে দিয়ে একটু দূরে দাঁড়ালো রাফিন। গাড়ি থেকে পানির বোতলটা নিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে বোতলটা এগিয়ে দিলো সে। আরু কাঁপা হাতে এক ঢোক পানি খেয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে উঠলো,
— আপনি আস্ত একটা অসুখ মিষ্টার ভিলেন। আপনার সাথে দেখা হওয়ার পরই ভীষন কষ্ট হয়। তবু দেখুন বারবার এই কষ্ট পেতেই ছুটে আসি।
কথাটা বলে বোতলটা গাড়ির উপর রেখে প্রিয়ন্তীর বাসার দিকে হাঁটা দিলো সে। গলার দিকটা জ্বলছে খুব। মাথাটা এমন ভারি ভারি লাগছে কেন?জ্বরটা নিশ্চয় বেড়েছে খুব?কিছুটা এগিয়েই পা’ দুটো টলে উঠলো আরুর। মাথা ঘুরে পড়ে যেতে নিয়েও সামলে নিলো। রাফিন ব্যাপারটা দেখেও উল্টো ঘুরে দাঁড়ালো। আরু হাঁটতে পারছে কি পারছে না তাতে বিন্দুমাত্র মাথাব্যাথা নেই তার। কেন থাকবে? সে যে খারাপ মানুষ। খারাপ মানুষের যে মায়া থাকতে নেই। নির্দয়তা আর মায়া এই দুটো তো উল্টো স্রোতের ধারা। এই ধারা গুলো কখনো মিশতে পারে না। কিছুতেই না। প্রিয়ন্তির বাসায় ঢুকেই জ্ঞান হারিয়েছে আরু। একা বাসায় অসুস্থ আরুকে নিয়ে ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে সে। গলার দিকে ব্যান্ডেজ করে দিয়েছে কিন্তু এতো জ্বর!! এই জ্বর কিভাবে নামাবে প্রিয়ন্তী? মাথা কাজ করছে না তার। এদিকে ভাবিও ফোন দিয়ে চলেছে ক্রমাগত…. কি করবে, কি বলবে কিছুই ভেবে পাচ্ছে না সে। অবশেষে একবুক সাহস নিয়ে ফোনটা রিসিভ করলো সে। ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে উৎকন্ঠিত কন্ঠে বলে উঠলো লিনা,
— হ্যালো আরু? কই তুই বোন? চার ঘন্টা হয়ে গেছে বের হয়েছিস। ফেনটাও তুলছিস না। আমার টেনশন হয় না বুঝি?
— ভাবি? আমি প্রিয়ন্তী।
— প্রিয়ন্তি তুমি? আরুর ফোন তোমার কাছে কি করে?(অবাক হয়ে)
— আসলে আরু হাঁটতে হাঁটতে আমাদের বাসায় চলে এসেছে। এখানে এসেই সেন্স হারিয়েছে ও। জ্বরটাও খুব বেশি। কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না আমি।
— কি বলছো এসব? এতোদূর? আমি এক্ষুনি আসছি।
— না না ভাবি। এদিকে গন্ডগোল হচ্ছে। রাফিন চৌধুরীর গুন্ডারা মল ভাঙচুর করছে। আপনি আসবেন না প্লিজ। এতে বিপদ আরো বাড়বে। তার থেকে বরং জ্বর নামানোর কিছু একটা ওয়ে বলুন। আমি চেষ্টা করে দেখি।তারপর সব স্বাভাবিক হলে না হয় আসবেন।
লিনা প্রিয়ন্তীকে সব বুঝিয়ে দিলেও মনটা ছটফট করছে খুব। তার বোনটা ওখানে জ্ঞান হারিয়ে পড়ে আছে আর ও হাতগুটিয়ে বাসায় বসে আছে। কিচ্ছু করতে পারছে না সে। কিচ্ছুটি না। এটা কি মেনে নেওয়া যায়? আরিফও ফোন তুলছে না। এই ছেলেটা এতোটা কেয়ারলেস কেন বুঝে না লিনা। ফোনটাও তোলার সময় নেই তার? অসহ্য! একদম অসহ্য!
১২.
বাবার ঠিক সামনে চেয়ার টেনে বসে আছে রোজা। বাবা চুপচাপ বইয়ের দিকে তাকিয়ে আছেন। রোজা জানে বাবা রেগে আছেন। তবুও সাহস নিয়ে বলে উঠলো সে,
— সরি বাবা। বাট আই ওয়ান্ট টু বি আ জার্নালিস্ট। কোনো সুপারস্টারের পেছনে দৌঁড়ানো টাইপ জার্নালিস্ট নয় তোমার মতো ইনভেস্টিগেটর জার্নালিস্ট হতে চাই বাবা। ছোট থেকে তোমার মুখে যে প্রাপ্তির ছায়া দেখে আসছি সেই ছায়াটা আমিও পেতে চাই। মৃত্যু তো একদিন আসবেই বাবা। আমি এখন মরে গেলেও তো তুমি ধরে রাখতে পারবে না বাবা। নিজের জীবন নিয়ে যেখানে ভয় করছো না সেখানে আমার জীবন নিয়ে এতো ভয় কেনো বাবা? আমি তোমার দুর্বলতা হয়ে বাঁচতে চাই না বাবা। তোমার স্ট্রেন্থ হয়ে বেঁচে থাকতে চাই। প্লিজ বাবা। প্লিজ!
বাবা এবার চোখ তুলে তাকালেন। রোজার চোখের দিকে স্থির দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই করুণ স্বরে বলে উঠলো রোজা,
— প্লিজ বাবা! ইটস মাই ড্রিম, মাই প্যাশন, মাই এব্রিথিং। আমি অন্যকিছুতে কনসেনট্রেট করতে পারবো না বাবা। প্লিজ!
— ওকে। তুমি জার্নালিজমে যাবে বাট তারজন্য তোমাকে কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে। এটা তোমার স্বপ্ন হলে নিজেকে প্রমাণ করতে হবে তোমায়। সত্যিই, তোমার স্বপ্নে হস্তক্ষেপ করার অধিকার আমার নেই। আমি এখন একজন বাবা নই একজন সম্পাদক হিসেবে বলছি, নিজের টাস্ক কমপ্লিট করতে হবে তোমায়। যদি সফল হতে পারো তো আমার অফিসের একটা চেয়ার তোমার মিস. রোজা।
— কি টাস্ক বাবা? আই উইল ডু ইট। আ…
এটুকু বলতেই হুড়মুড়িয়ে ঘরে ঢুকে এলো তীর্থ। মুখ কাঁচুমাচু করে বলে উঠলো,
— সরি আঙ্কেল! এক্চুয়েলি রোজার সাথে আমিও আছি। আমারও একটা ব্যবস্থা করুন প্লিজ।
— টাস্ক টা কি শুনে নাও। ব্যবস্থাটা তোমাদের দুজনের ফলাফলের অবস্থার উপর নির্ভর করবে তীর্থ।
বাবা উঠে গিয়ে একটা পর্দা সরালেন। পর্দার পেছনে রাখা বোর্ডটাতে বড় করে লিখলেন ” আরিয়া আহমেদ ফয়সাল” তারপর ওদের দিকে ঘুরে বললেন,
— নামটা শুনেছো কখনো?
দু’জনেই একতালে মাথা নাড়লো। যার অর্থ শুনে নি। বাবা এবার বাঁকা হেসে টেবিলের উপর দুটো ছবি রেখে বলে উঠলেন,
— ইনিই আরিয়া আহমেদ ফয়সাল। এক যুগ আগের বিখ্যাত কন্ঠশিল্পী।
রাদিবের (বাবা) কথায় বিস্মিত হলো তীর্থ। বিস্ময় নিয়ে বলে উঠলো,
— ইনি একযুগ আগের বিখ্যাত কন্ঠশিল্পী হলে আমরা তাকে চিনিনা কেন? ইভেন নামটাও শুনি নি। ১২/১৪ বছর আগের শিল্পী হলেও তো এখন পরিচিত মুখ হওয়ার কথা তাই না?
— গুড কোশ্চেন ইয়াংম্যান। আরিয়া প্রায় ১৪ বছর আগে হঠাৎ করেই গুম হয়ে যায়। অনেকের ধারনা এক্সিডেন্ট হয়েছিলো তার। কিন্তু একজেক্ট তথ্য কারোরই জানা নেই। তিনি আদৌ বেঁচে আছেন নাকি সত্যি মারা গেছেন তাও জানা নেই কারো। তবে ইন্টারেস্টিং ব্যাপার কি জানো??
রাদিবের কথার উত্তরে দু’জনেই জিগ্যাসু কন্ঠে বলে উঠলো, “কি?”
— আরিয়া হারিয়ে যাওয়া বা গুম হয়ে যাওয়ার পর কেউ একজন নাটকীয় ভাবেই মিডিয়া জগৎ থেকে তার নামটা মিশিয়ে দিয়েছে। তার কাজ, তার গান এব্রিথিং! সব কিছু এক দুই বছরের মধ্যেই হাওয়া। এটা অবশ্যই সন্দেহের একটা বিষয়। আমাদের সময়কার এতোবড় একটা শিল্পীর নাম এখন গুনতির মধ্যেও আসছে না। আর তাতে কারো মাথা ব্যাথাও নেই, কিন্তু কেন? এই কেন এর উত্তরটায় তোমাদের খুঁজে বের করতে হবে। আরিয়ার হারিয়ে যাওয়ার পেছনের গল্পটাও খুঁজে বের করতে হবে তোমাদের।
তীর্থ আর রোজা একে অপরের দিকে তাকালো। এটা তাদের দু’জনের জন্যই একটা বড় সুযোগ। কিন্তু কোথা থেকে শুরু করবে তারা? রোযা একটা শ্বাস টেনে নিয়ে বললো,
— মিষ্টার আরিয়ার ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড? কোথায় থাকতেন বা কিছু?
— আরিয়া হলো সুপারস্টার আরিয়ান মৃন্ময়ের বাবা। আরিয়ান মৃন্ময় এখন যে বাড়িতে থাকছে ওখানেই থাকতো আরিয়া ফয়সাল। আমার ধারনা মতে, মৃন্ময় একজন টেলেন্টেট ছেলে সে এতোদিনেও নিজের বাবার এমন পরিণতির কারণ খুঁজে নি তা হতেই পারে না।(টেবিলে ঝুঁকে) সো, আরিয়ান মৃন্ময়ের বাড়িই এখন তোমাদের টার্গেট হওয়া উচিত। কিভাবে করবে সেটা নিতান্তই তোমাদের ব্যাপার আই জাস্ট ওয়ান্ট দি পজিটিব রেজাল্ট।
কথাটা বলেই বেরিয়ে গেলেন রাদিব। তীর্থ আর রোজা ঢোক গিলে নিয়ে একে অপরের দিকে তাকিয়েই বলে উঠলো,
— আবার মৃন্ময়!! ননননননননো।
তীর্থ বিছানায় বসে আছে।৷ আর রোজা সারা রুমময় পায়চারী করছে। তীর্থ কিছুক্ষণ চুপ থেকে চোখ-মুখ কুঁচকে বলে উঠলো,
— শালার এই মৃন্ময়ের জন্য কতোগুলো বাঁশ খেতে হলো আমাকে। আবারও তোর বাপে সেই আগের বাঁশই ঢুকিয়ে দিলো। শালার জীবনটা এখন বাঁশময়।
— শাট আপ প্লাস্টিক। এসব ফাউল কথা বাদ দিয়ে চিন্তা কর কি করে মৃন্ময়ের বাড়িতে ঢুকা যায়। একটা কাজ কর মৃন্ময়ের পি.এ এর মাধ্যমে জানার চেষ্টা ওই বাড়িতে রিসেন্টলি কোনো কাজের লোক,এসিসটেন্ট বা সিকিউরিটি অফিসার লাগবে কি না।
— আজব। আমি কিভাবে?
— মোবাইল নাম্বার আমি দিচ্ছি। নয়তো ওর ল্যাবট্যাব হ্যাক কর। তুই না হ্যাকিং মাষ্টার? আর তুষার ভাই তো কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার সো ভাইয়ের কাছ থেকে এটুকু ফেভার তো নিতেই পারিস, তাই না?(চোখ টিপ)
রোজার কথায় তীর্থ বাঁকা হেসে ফোন হাতে বেরিয়ে গেলো।
চারটা মানুষের মনে চলছে চার ধরনের খেয়াল। কেউ কারো ভালোবাসায় ঢুবে মরছে তো কেউ নিজের অস্তিত্ব লুকাচ্ছে। কেউ তার স্বপ্নের পথে হাঁটার কল্পনায় মত্ত তো কেউ সপ্নগুলোকে ভেঙে অব্যর্থ এক দুর্গ তৈরির চেষ্টায় ক্লান্ত। কারো জানা নেই চারজন যুবক-যুবতীর ভবিষ্যৎ। তাদের শেষ পরিণতি!! কি হবে তাদের শেষ আক্ষেপ?
# চলবে..
(অনেকেই জিজ্ঞেস করছেন আরু আর রোজার মধ্যে কোনো কানেকশন আছে কি না। বা মৃন্ময় বা রাফিনের মাঝে কোনো কানেকশন আছে কি না। তাদের বলি,ধৈর্য ধরুন। এক গল্পে যেহেতু আছে তো কানেকশনও আছে। কিন্তু কিভাবে কানেকশন সেটা তো পরের টুকু পড়লেই জানতে পারবেন। ধন্যবাদ)