রোদ শুভ্রর প্রেমকথন পর্ব ৬২
শুভ্র ভাই আমাকে রান্না ঘরে দেখেই চোখ-মুখ পাথরের মতো গম্ভীর করে ফেললেন। গম্ভীর স্বরে ডাকলেন,
‘ এই রোদ? এদিকে আয়।’
আমি বিরক্ত চোখে চাইলাম। উদাস কণ্ঠে বললাম,
‘ আমি এখানে কাজ করছি শুভ্র ভাই। এখন যেতে পারবো না।’
শুভ্র ভাই ভয়ানক আশ্চর্য হয়ে বললেন,
‘ ফট করে বলে ফেললি পারবো না! তোর কথা শুনে মনে হচ্ছে, আমি এই পৃথিবীর অতি তুচ্ছ প্রাণী। এই ধরণীতে আমার কথার কোনো দাম নেই। শুধু দাম আছে তোর আর তোর বাপের। এই পৃথিবীতে তোরাই রাজা, মহারাজা। আমরা কীটপতঙ্গ। বুঝলাম শেরপুরের মানুষ, তাই বলে কোনো সিভিলাইজেশ্যন থাকবে না? আশ্চর্য!’
আমি চোখ গরম করে চাইলাম। চাকুটা ক্যাভিনেটের উপর শব্দ করে রেখে দাঁতে দাঁত চেপে বললাম,
‘ কথায় কথায় বাবা আর আমার শহর টেনে আনবেন না, শুভ্র ভাই। আপনারা তো একদম সিভিলাইজেশ্যনের পাহাড় কাঁধে নিয়ে বসে আছেন। কোনো সিভিলাইজড মানুষ অযথা দাঁড়িয়ে থেকে অন্যকে হুকুম দেয় না। আপনার দরকার আপনি কাছে আসুন! আমাকে ডাকছেন কেন?’
শুভ্র ভাই এবার এমন একটা ভাব করলেন যেন এহেন আতঙ্কের কথা তিনি তার এই ছাব্বিশ বছরের জীবনে শোনেননি। তিনি এখনই আতঙ্কে নীল হয়ে হার্ট ফেল পর্যন্ত ঘটিয়ে ফেলতে পারেন। গলার স্বর নামিয়ে বললেন,
‘ এখন সময়, দুপুর একটা বেজে বিশ মিনিট ঊনত্রিশ সেকেন্ড। তুই এই দিনে-দুপুরে এমন চিৎকার করে কেন আমার নাম খারাপ করছিস? আমি একবারও তোকে কাছে আসতে বলেছি? আমি বলেছি, এদিকে আয়। ময়মনসিংহ থেকে জাপান পর্যন্ত প্রত্যেকটা মানুষ জানে শুভ্র খুবই ভালো ছেলে। তুই এমন চিৎকার চেঁচামেচি করে কী প্রমাণ করতে চাস? তোর গলার যে সাউন্ড! উইদআউট মাউথস্পিকার পুরো ময়মনসিংহবাসী জেনে যাবে। এখন যদি আমার বিয়েশাদি না হয়?’
আমি হতাশ চোখে এই আজাইরা কথা বলা পুরুষ মানুষের দিকে চেয়ে রইলাম। রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এসে শান্ত কণ্ঠে বললাম,
‘ আমার গলার সাউন্ডের জন্য আমি বিশেষভাবে দুঃখিত শুভ্র ভাই। আপনি এখন দয়া করে বলুন, আপনি আমায় কেন ডেকেছেন?’
শুভ্র ভাই কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলেন। উনার চেহারার রঙ পাল্টালো। চোখে-মুখে স্পষ্ট দ্বিধা। টি-শার্টের কলার ঠিক করে কিছুটা অপ্রস্তুত কণ্ঠেই শুধালেন,
‘ তুই ঘন্টা কয়েক আগে আমার ঘরে গিয়েছিলি?’
আমি ‘সদ্য আকাশ থেকে পড়লাম’ ধরনের মুখভঙ্গি করে বললাম,
‘ আমি কেন আপনার ঘরে যাবো?’
শুভ্র ভাইয়ের এবার মিশ্র প্রতিক্রিয়া হলো। প্রথমে উনার মুখের উপর আষাঢ়ে মেঘ দেখা গেলো। তারপর খুব রেগে গেলেন,
‘ এমন একটা ভাব করছিস যেন আমার ঘর ভয়াবহ বিশ্রী জায়গা। ওখানে কোনো মানুষ থাকে না, ছাগল থাকে। আর আমি হলাম রামছাগল।’
আমি প্রত্যুত্তরে নিষ্পাপ চেহারা নিয়ে চেয়ে রইলাম। এমন একটা ভাব যেন তাবৎ দুনিয়ার সকল কিছুই আমার কাছে অঙ্ক বইয়ের সবথেকে অমিমাংশিত অঙ্ক! আর আমি হলাম ক্লাসের মাইনাস ওয়ান পাওয়া বাধ্যগত ছাত্রী। শুভ্র ভাইয়ের চটে যাওয়া মেজাজ আমার ভোলা চেহারা দেখে আরও চটে গেলো। উত্তরোত্তর মেজাজ খারাপের সকল পারদ ছাপিয়ে গেলো। মামানিকে গিয়ে বললেন,
‘ আম্মু? আমি এই মুহূর্তে জাপান চলে যাবো৷ তুমি দুটো গরু কিনে আমার ঘরে ঢুকিয়ে দাও। আমার ঘর তো গোয়াল ঘর। পা রাখলে ফোঁসকা পড়ে যাবে। গোয়াল ঘরে গরু থাকুক। আমার থাকার দরকার নেই।’
খণ্ডাংশ…
প্রেমকথন
রোদ শুভ্রর প্রেমকথন সম্পূর্ণ গল্পের লিংক
https://kobitor.com/rodsuvro/