#রোগী কথন
পর্ব ৮২
#এ আঁধার ভাঙবে এমন আলো কই?
“বন্ধুর সাথে শারিরীক সম্পর্ক, ব্লিডিং এবং কিশোরীর মৃত্যু” নিউজটা শোনার পর থেকে কেমন একটা বিষাদের ভেতর দিয়ে যাচ্ছি। কে, কি, কেমনে, দায় কার? এসবে যাচ্ছি না। শুধু মনে হচ্ছে কোথাও একটা গলদ আছে। খুব বড় ধরনের গলদ। আমরা সন্তান লালন পালনে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশকে সযত্নে এড়িয়ে যাচ্ছি। সরকারও তার সবচেয়ে পটেনশিয়াল, উড বি ফিউচারকে ঘুমপাড়ানি মাসি পিসি টাইপ গান গেয়ে ঘুম পারানোর চেষ্টা করে চলছে। তারা ঘুমাচ্ছে তো না-ই বরং আমাদের মা বাবাদের ঘুম হারাম করে দিচ্ছে।
“বড় হলে এমনিতেই শিখবে। আমরা কি শিখি নাই? এগুলো আবার বলার কথা নাকি? কী জানি বাপু!” এইসব হেলাফেলা করে শারিরীক শিক্ষা, যৌন শিক্ষাকে সিন্ধুক বন্দী করে “সন্তান সুরক্ষিত আছে” ভাবনা পাগলের সুখ মনেমনে ছাড়া আর কিছুই না। আমাদের হেলথ এডুকেশন আর সেক্স এডুকেশন অতিমাত্রায় অবহেলিত বলেই এডোলেসেন্স জনগোষ্ঠী যৌনতা নিয়ে ফ্যান্টাসিতে ভোগে। আর পালে হাওয়া দিতে হাতের কাছে সবকিছু তো আছেই। এক ক্লিকের ম্যাজিক! ফলে আর কি…
একটা হয়তো চরম দাম দিয়ে শিরোনামে এসেছে। আর শত সহস্ররা আছে ইয়ো ইয়ো ব্রো এর জগতে। আর হ্যাঁ এটা যে সো কলড ইংলিশ মিডিয়ামেই সীমাবদ্ধ তা কিন্তু নয়। পার্থক্য শুধু ঢেউ এর কেন্দ্র আর পরিধিতে। কেন্দ্র যদি আদরের বাঁদর হয় পরিধি হলো দিন আনি দিন খাই। আর “লোকে জানলে কি বলবে?” রা তো আছেই। যাহোক বছর সাতেক আগের একটা ঘটনা বলি;
এক মা এলেন তার কিশোরী মেয়েকে নিয়ে। মেয়ের টাইফয়েড হয়েছে। বমি করে। কিছুই খেতে পারে না। অনেক ঔষধ বড়ি করেছে। কিন্তু কিছু উন্নতি হয় নাই। এক দমে কথাগুলো বলে মা থামলেন। চোখে মুখে দারিদ্র্যতা এবং দুশ্চিন্তার আঁকিবুকি। মেয়ের পেটে হাত দিয়ে খটকা লাগলো। বারো বছরের মেয়ে। প্রমান ছাড়া কথা বললে, খবর আছে। বঙ্গদেশে রঙ্গের অভাব নাই। সবখানে তারা তেনানো মুড়ি হলেও ডাক্তারখানায় হালুম!
প্রমান হাতে এলো। ছবি সহ। আল্ট্রাসাউন্ড বলছে, চব্বিশ সপ্তাহ! মা মানতেই পারছেন না। দুধের বাচ্চা! কোথাও যায় না। বাড়িতেই থাকে। মামা, চাচারা সব চোখে চোখে রাখে। বেচারা মা, কল্পনাই করতে পারেনি ” বেড়ায় ক্ষেত খায়!” এদিকে দুধের বাচ্চাও কঠিন চিজ। সে প্রথমে এবিউজের স্বীকার হলেও পরে এটাকে সহজ স্বাভাবিক হিসাবেই নিয়েছে এবং নিয়মিত অংশ গ্রহণ করেছে। যখন আর উপায় নেই, তখনও মাকে বলে নাই। উল্টো টাইফয়েড দিয়ে কঠিন চাপে রেখেছে। অবশ্য আমরা বাবা মায়েরা সন্তানের সাথে এমন একটা ভাব ধরে রাখি যে, সন্তান তার দৈনন্দিন মা বাবার কাছে বলার চেয়ে লুকাতেই স্বস্তি বোধ করে। অথচ হওয়ার কথা ছিলো উল্টা। মহিলার হাউমাউ কান্না এখনো আমার কানে লেগে আছে!
জীবনে যৌনতা থাকবে, এটাকে অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে সবকিছুর একটা বয়স আছে, নিয়ম আছে, ধর্মীয় নিয়ম নীতি আছে, নিয়ম ভাঙার শাস্তি আছে। ইহকাল এবং পরকালের বিচার আছে। এই কথাগুলো সন্তানকে বলতে হবে। বোধগম্য করে। ধৈর্য্য সহকারে। প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক মিডিয়ায়, পাঠ্য বইয়ে। সবখানে। বারবার। ধর্মীয় অনুশাসন মানি এবং মানতে বলি। আমি বিশ্বাস করি, পৃথিবীর কেনো ধর্মই অবাধ যৌনতার কথা বলে না। বলে পরিমিতিবোধের কথা, উপযোগীতার কথা। উচিত অনুচিতের কথা। সন্তানকে দূরে ঠেলে নয়, কাছে টেনেই কঠিনে কোমলে সঠিক শিক্ষাটা দিতেই হবে। এছাড়া পথ নাই আর কোনো।
জীবনে জোয়ার তো আসবেই। এটা যে প্রকৃতির অমোঘ নিয়ম। প্রকৃতিকে বাদ দেওয়া কাজের কথা নয়।
আর বাঁধ দিয়ে যে কাজের কাজ কিছুই হয় না, ফারাক্কাই তার প্রমান। তাই বলছিলাম কি, আসেন লুকিয়ে না থেকে, লুকিয়ে না রেখে সন্তানকে সঠিক শিক্ষাটা দেই। তার শরীরটা চেনাই। কোন কাজ কখন করতে হয়, কখন নয়, এটা বলি। ওরা যতো জানবে ততো আঁধার কাটবে। বাবা মায়ের চেয়ে সঠিক সুন্দর সহজ ভাবে কে বলতে পারে! কার আছে এমন ক্ষমতা?
বিঃদ্রঃ- প্রায় বছর খানেক পর রোগী কথন লিখলাম! অথচ এক সময় না লিখতে পারলে আমার ঘুম হতো না! আজকাল কী সহজে ভুলে থাকি প্রিয় কাজগুলো!
#Lady_in_Red