রুপকথা পর্ব ১২
পরদিন সকালে মাহিয়া খুব ভোরে খাট ছাড়লো। রুমে রাখা সরঞ্জাম দিয়ে সুন্দর এক কাপ কফি বানিয়ে বারান্দায় চলে আসলো ও। ওদের রুমটা ঠিক সমুদ্রের উল্টোদিকে পড়েছে। সুবিশাল নোনা পানির চাদরটা এমন কেউ নেই, মনে হয়, যাকে মুগ্ধ করতে ব্যর্থ হয়। ঢেউয়ের সাদা ফেনাগুলো তীরে আছড়ে পরার দৃশ্য মাহিয়ার চোখে আটকে গেল। একপলকে সেদিকেই তাকিয়ে রইলো ও। গতকাল রাতে ওখানেরই কোনো এক জায়গায় নিহালকে জড়িয়ে ধরেছিল ও।
এখন চিন্তাটা মাথায় আনলেই লজ্জা লাগছে তবে তখন মনের গভীর পর্যন্ত একটা শান্তি বয়ে গিয়েছিল মাহিয়ার। নিহালের চওড়া বুকটায় মাথাটা দেওয়ার সাথে সাথেই নিজেকে কেমন যেন খুব সুরক্ষিত মনে হচ্ছিলো। আর নিহাল যখন ওকে নিজের মাঝে বেধে ফেললো তখন? উফ…. তখন মনে হচ্ছিল….. সেই অনুভূতির কথা মাহিয়া আর এখন মনে করতে চাচ্ছে না। গাল দুইটা অলরেডি গরমে পুরে যাচ্ছে ওর।
রাতে নিহাল মাহিয়াকে বুকের মাঝে নিয়েই ঘুমিয়েছিল। একে অপরের সান্নিধ্যেই কেটেছে তাদের পুরো সময়টা। তবে কেন যেন এর বেশী নিহাল আর কিছুই করেনি মাহিয়ার সাথে। মাহিয়া ভেবেছিল কিছু একটা হবে এই রাতেই তবে ও নিরাশ হয়েছিল। এখন সেই ভাবনাটা মাথায় আসতেই লজ্জা লাগলো ওর। ছিঃ ছিঃ কি সব চিন্তা করছে ও? এতো উতলা হচ্ছে কেন?
কফিটা শেষ করে এসে রুমে ঢুকতেই সরাসরি খাটে শোয়া নিহালের ঘুমন্ত চেহারার দিকে চোখ পড়লো মাহিয়ার। একদম বাচ্চাদের মতন করে ঘুমোচ্ছে। তবে এই সময়টাতেও বেশ হ্যান্ডসম লাগছে ওকে। এত মায়াবী চেহারা ওর। কিভাবে সম্ভব এতোটা আকর্ষণীয় হওয়া? মাহিয়ার পা দুটো ওকে নিহালের পাশে নিয়ে যেয়ে বসিয়ে দিল। অজান্তেই বাম হাতটা উঠে গাল স্পর্শ করলো নিহালের। খোচা খোচা ছোট দাড়িগুলো আঙ্গুলে লাগছিল মাহিয়ার। চাপা, খিলখিল হাসি চড়লো মাহিয়ার ঠোটে। একটু নড়ে উঠলো নিহালের চেহারা। সাথেসাথেই হাতটা সরিয়ে ওখান থেকে উঠে পড়লো মাহিয়া। নিহাল চোখ খুলে ওকে এতো কাছে দেখে ফেললে মাহিয়া খুবই বিব্রত বোধ করবে।
কফির মগটা রেখে ও ওয়াশরুমে চলে গেল ফ্রেশ হতে। ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে এসে দেখে নিহাল খাটে নেই। ব্যালকনিতে দেখা গেল ওকে। মাহিয়া ওর জন্য এক কাপ কফি বানিয়ে ব্যালকনিতে উঠলো।
-গুড মর্নিং
পেছনে তাকালো নিহাল,
– গুড মর্নিং। কখন ঘুম থেকে উঠসো তুমি?
মাহিয়া নিহালের দিকে কফি মগটা এগিয়ে দিয়ে বললো,
– এইতো একঘন্টা আগে মেইবি। ভোরের সমুদ্রের সিনারিটা মিস করতে চাচ্ছিলাম না। আমার মনে হয় এই সময়টায় সমুদ্র সবচাইতে পিউর থাকে। কিছুক্ষণ পরে দর্শনার্থীদের ভীড়ে কেমন ঘোলাটে হয়ে যায় সব।
মাহিয়া এই কথা গুলো সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে বলছিল আর নিহাল শুনছিল মাহিয়ার দিকে চেয়ে। একটা পলকও পরছিলো না ওর। মেয়েটার চেহারায় অনেক বেশী মায়া। খালি ইচ্ছা করে আদর করতে। কিন্তু মাহিয়া যদি আবার বাধা দেয় সেই রাতের মতন?
মাহিয়া কথার মাঝে একবার নিহালের দিকে চেয়ে ওর চাহনি দেখে লজ্জায় কথা থামিয়ে দিল। মাথা নিচু করে ঠোট চেঁপে হাসি দিল। কি মনে করে ডান হাতটা বাড়িয়ে মাহিয়ার রেলিঙ্গে রাখা হাতটা ধরলো নিহাল। ধরে নিজের কাছে ধীরে ধীরে টেনে আনলো মাহিয়াকে। এতক্ষণ কিছুই বলেনি মাহিয়া, শুধু নিহালের স্রোতে ওর কাছে গিয়ে পৌছালো। দেখতে ইচ্ছা হচ্ছিলো যে নিহাল কি করে ওর সাথে।
তবে যখন একেবারে কাছে এনে নিজের বুকের সাথে মাহিয়ার কাধ ঠেকালো, ভীষণ লজ্জা পেল মাহিয়া। তাও হওতোবা চুপ থাকতো ও যদি নিহাল সেখানেই থেমে যেত। মাহিয়ার ঘাড়ের পড়ে থাকা চুলগুলো সরিয়ে যেই না ওর ঠোটের স্পর্শ পড়লো অমনি চমকে উঠলো মাহিয়া। ছিটকে সামনে চলে যেয়ে নিহালের দিকে দুষ্টু মিষ্টি হাসি দিয়ে কপট রাগ দেখালো ও,
-অসভ্য ছেলে, এইসব কাজ কি মানুষ ব্যালকনিতে করে?
মাহিয়ার ইশারাটা চট করে ধরে ফেললো নিহাল,
-তো কোথায় করে দেখি?
এই বলে মাহিয়াকে জাপটে ধরতে গেল নিহাল, কিন্তু মাহিয়া তার আগেই রুমে ঢুকে গেছে। এক দৌড়ে মেইন দরজার কাছে চলে গেল ও। নিহালও দৌড়ে আসলো কিন্তু ততক্ষণে দরজা খুলে ফেলেছে মাহিয়া। নিহালকে হাসতে হাসতে খোঁচা দিল ও,
– বেটার লাক নেক্সট টাইম। হা হা হা।
এই বলে লবি ধরে দৌড়ে চলে গেল মাহিয়া। নিহাল গেটের কাছে এসে দেখলো ওকে। হাসতে হাসতেই বললো নিজেকে,
– কতক্ষণ আমার থেকে দূরে থাকবেন ম্যাডাম। আজ তোমাকে আমি আমার করেই ছাড়বো। জাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ।
এইদিকে মাহিয়া লবি থেকে দৌড়ে লিফ্টের কাছে আসলো। হাসতে হাসতে ওর জান শেষ। এসবের মধ্যে খেয়ালই করেনি যে ওর পাশে ওদের কিছু ফ্রেন্ডসরা দাড়িয়ে ছিলো।
– মাহিয়া, কি ব্যাপার? দৌড়াচ্ছিলা কেন তুমি?
টিনার প্রশ্নে সতর্ক হলো মাহিয়া। সামনের চুলগুলো কানের পেছনে সরিয়ে বললো,
– না কিছু না। এমনেই।
লিফ্ট চলে আসাতে বাঁচিয়ে দিল ওকে।
সবাই রেস্টুরেন্টে চলে এসেছে ব্রেকফাস্টের জন্য। অন্যরা যখন কুপন দিচ্ছিলো রিসিপশনে তখন মাহিয়ার খেয়াল হলো, তাড়াহুড়োয় ব্রেকফাস্টের কুপন ও আনতেই ভুলে গেছে। এখন কি করবে তাই চিনতা করছিল ও। রুমে তো যাওয়াই যাবে না। নিহাল কোনোভাবেই এখন ছাড়বে না ওকে। তাহলে কি হবে এখন? এখানে দাড়িয়ে থাকবে ও? নিহালের জন্য অপেক্ষা করবে?
এইসব সাতপাঁচই চিন্তা করছিল যখন পেছন থেকে আওয়াজ আসলো নিহালের। ঝট করে ফিরে দেখে, রিসেপশনে কুপনস জমা দিচ্ছে নিহাল। জমা দিয়ে পাশে এসে দাড়ালো ওর। নিচু হয়ে মাহিয়ার কানের কাছে এসে জিজ্ঞেস করলো ও,
– এভাবে দৌড় দিলা কেন?
মাহিয়া দুষ্টু একটা হাসি দিয়ে নিহালকে দেখলো কিন্তু কিছু বললো না। নিহালও ফিরিয়ে দিল ওকে সেই একই চাহনি।
সেইদিন দুজনের মাঝে প্রায় পুরোটা সময়ই এক আজব লুকোচুরি খেলা চললো। না, লুকোচুরি বললে একটু ভুল হবে। বলা উচিৎ ছোয়াছুয়ি চলছিল। নিহাল মাহিয়াকে বাগে পাওয়ার চেষ্টা চালিয়েই গেল কিন্তু মেয়েতো হাতে আসে না!
নাস্তার সময় নিহাল মাহিয়ার জন্য ওর পাশে জায়গা রেখেছিল। কিন্তু খাবার নিয়ে এসে ইচ্ছা করেই মাহিয়া বসলো ছন্দার পাশে যে কিনা নিহালের উল্টা পাশে একটা সাইডে বসা। বসার সময় মাহিয়া নিহালের দিকে একটা চ্যালেঞ্জিং লুক দিয়েই বসেছিল যেটা নিহালের বুঝতে অসুবিধা হয়নি। তবে নিহালও কি কম যায়? প্রথমে চোখের ইশারায় মাহিয়াকে পাশে এসে বসতে বললো ও। মাহিয়াও মাথা নেড়ে না করে দিল। দ্বিতীয়বার ইশারা করলো নিহাল, সেইবারও একই উত্তর মাহিয়ার থেকে। এইবার চুপ হলো নিহাল এক মুহূর্তের জন্য। মাহিয়ার থেকে চোখ সরিয়ে এদিক ওদিক দেখতে লাগলো। নিহালের এই আচরণে বেশ অবাক হলো মাহিয়া। কি করতে চাচ্ছে ও?
খাওয়া সার্ভ করা ছিল বুফে স্টাইলে। তাই একটু পরে ছন্দা উঠলো আবার খাওয়া নিতে। নিহালও একি সাথে উঠলো খাবার আনতে। মাহিয়া ইতিমধ্যে নিজের খাওয়ায় মনোযোগ দিয়েছে। তবে বেশিক্ষণ মনোযোগটা রাখতে পারলো না। কারণ নিহাল তাড়াতাড়ি খাবার নিয়ে এসে ছন্দার জায়গায় বসে পড়লো। মাহিয়ার মুখ হা হয়ে গেল ওর কান্ডকারখানায়। ছন্দা এসে দেখে ওর সিটে নিহাল বসা,
– এই নিহাল, তুমি আমার সিটে বসছো কেন?
– সরি আপু, ভুল হইসে রে। আমার ওই সিট টা খালি আছে। প্লিস বোন ওটাতে যেয়ে বস্।
নিহালের এহেন আকুতি শুনে হাসতে হাসতে ছন্দা হেটে চলে গেল ওখান থেকে।
নিহাল এবার মাহিয়ার সেই চ্যালেঞ্জিং লুকটা ফিরিয়ে দিল ওকে। বেচারি মাহিয়া! একদম নিহালের জালে ধরা পরেছে । নিহাল এখন কি ওকে শান্তি মতন খেতে দিবে? তাও চুপচাপ নিজের খাওয়ায় মন দেওয়ার চেষ্টা করছিল মাহিয়া। কিন্তু যা ভয় পাচ্ছিলো তাই হলো।
নিহাল নিজের পায়ের পাতা দিয়ে মাহিয়ার পায়ে আলতো ছোয়া বোলাতে শুরু করলো। মাহিয়া তখন খাচ্ছিলো কেক। নিহালের টাচ পেয়ে এমন চমকে গেল যে এক মুহূর্তের জন্য খাবার আটকে গেল গলায়। আর শুরু হলো মাহিয়ার কাশি। আশপাশের সবাই কি হলো কি হলো করে হইচই ফেলে দিল। নিহাল ততক্ষণে মাহিয়াকে পানি খাইয়ে অবশ্য শান্ত করেছে। একটু জিরিয়ে নিহালের দিকে রেগে তাকালো মাহিয়া। নিহালের হাসি তখন দেখে কে। মুখ টিপে হাসতে হাসতে কোনোমতে নাস্তা শেষ করলো ও।
নাস্তার পর সুইমিংপুলে যাবে ঠিক করলো সবাই। যেহেতু সায়মনের সুইমিংপুলে নামার বিশেষ ড্রেসকোড আছে তাই সবাইকেই রুমে যেয়ে প্রথমে চেঞ্জ করতে হলো। নাস্তার শেষে রেস্টুরেন্টেই ছেলেরা সারাদিনের ঘোরাফেরার আলোচনা করছিল, এই ফাঁকে মাহিয়া কিকার্ড নিয়ে রুমে যেয়ে ঝটপট ড্রেস পাল্টে সোজা সুইমিংপুলে চলে আসলো। নিহাল মাহিয়াকে রুমে না পেয়ে খুজতে খুজতে পুলে এসে পুরাই অবাক হয়ে গেল। মাহিয়া ওকে ছাড়া একাই পুলে চলে এসেছে। মাহিয়ার মুখে স্পষ্ট চোরাভাব দেখে তখন কিছু বললো না নিহাল।
সবাই পুলে আসার পর যে যার মতন পানিতে নেমে গেল। ওদের সংখ্যাতেই ভরে গেল পুলটা। মাহিয়ার পানি বেশ পছন্দ তবে ও সাঁতার পারে না। তাই একা একা গভীর পানিতে যেতে একটু ভয় লাগছিল ওর। কিন্তু আবার পুলের ইনফিনিটি সাইডটাও দেখার ইচ্ছা হচ্ছিল। নিহালের দিকে তাকালো ও। নিহাল ওইদিকের গভীর পানিতেই অন্যদের সাথে মজায় ব্যস্ত। ওকে ডাকলো মাহিয়া,
– নিহাল? এই নিহাল?
– বলো?
– একটু আসবা এইদিকে?
নিহাল মাহিয়ার পাশে আসলো,
– কি হয়েছে?
– আমাকে গভীর পানির দিকে নিয়ে যাওনা প্লিস? ইনফিনিটি সাইড টা দেখবো। একা পারছি না যেতে।
– ওওও, ম্যাডামের এখন আমার হেল্প লাগবে? কেন? সকাল থেকে না আমার কাছ থেকে পালাচ্ছেন আপনি? এখন কি হলো?
মাহিয়া নিজের লজ্জার মাথা খেয়েই বললো,
– এরকম করো কেন? নিয়ে যাওনা প্লিস।
পানির নিচ থেকে ওর কোমরটা জড়িয়ে ধরলো নিহাল,
– এক শর্তে নিতে পারি। ব্যলকনিতে যেভাবে কাছে নিয়েছিলাম সেভাবেই কাছে রাখবো এখানেও, সবার সামনে। তখন অসভ্য বলা যাবে না কিন্তু আমাকে। সরাও যাবে না আমার কাছ থেকে।
মাহিয়ার এবার আসলেই খুব বেশি লজ্জা লাগলো, নিহালের কাধে কপাল ঠেকালো ও। নিহাল হেসে দিয়ে ওর কিছু বুঝে ওঠার আগেই পানিতে কোলে তুলে নিল মাহিয়াকে। মাহিয়ার চেহারায় আকস্মিকতার ছাপ আসলেও মুখ দিয়ে কিছু বললো না ও। নিহাল এভাবেই পুলের একদম কোণায় নিয়ে গেল ওকে। ওখানে যেয়ে নামিয়ে দিল।
পুল থেকে বিচের অনেকটুকু দেখা যাচ্ছিলো। সেই মনোরম দৃশ্যই অনেকক্ষণ উপভোগ করলো দুইজন। প্রায় সবগুলো দম্পতি নিজেদের নিয়েই মেতে ছিল তখন বলে এতোজনের মাঝেও নিহাল আর মাহিয়াকে কেউ ডিস্টার্ব করলো না। নিহাল মাহিয়াকে সামনে রেখে পেছনে দাড়িয়ে দুই হাত দিয়ে ওকে ঘিরে রেখেছিল। এতে মাহিয়ার গায়ে নিহাল ছাড়া অন্য কারো স্পর্শই লাগছিলো না।
ব্যাপারটা খুব ভালো লাগলো মাহিয়ার। তাই ও ইচ্ছা করে এবার ঘুরলো নিহালের দিকে। পানিতে ভিজে নিহালকে সেই সময় সবচাইতে বেশী আবেদনময় লাগছিল মাহিয়ার। নিজের চোখ সরাতে একটুকুও ইচ্ছা হচ্ছিলো না ওর চেহারার ওপর থেকে। নিজের হাত দিয়ে আলতো করে নিহালের বুকে হাত রাখলো মাহিয়া। নিহাল সেই হাতটা নিজের হাতের ভেতরে নিয়ে প্রশ্ন করলো,
– সত্যি করে বলো তো আজ রুম থেকে পালালা কেন তুমি?
স্বাস খুব জোরে ওঠানামা করতে শুরু করলো মাহিয়ার। নিহালের কানের কাছে নিজের মুখটা রাখলো ও,
– এই প্রশ্নের কি কোনো উত্তর আছে? তুমি নিজে বুঝতে পারো নাই?
মুচকি হাসি দিয়ে আকাশে তাকালো নিহাল। তারপর আবার চোখ রাখলো মাহিয়ার চোখে,
– মাহিয়া, তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করলে রাগ করবা?
– কি?
চুপ হয়ে গেল ও। মাহিয়া একটু কিছুক্ষণ চুপ থেকে অপেক্ষা করলো ওর কথা বলার। তারপর তাকালো ওর দিকে। একটা ইতস্তত নিহালকে সামনে পেল।
-কি হলো? কি জিজ্ঞেস করতে চাচ্ছিলা বলো?
– তোমার জন্মদিনের রাতে তোমার কাছে আসতে যেয়ে দেখলাম তুমি মুখ ফিরিয়ে নিলে। আজ যদি…. তোমার কাছে আসি, সেই রাতের মতনই কি মুখ ফিরিয়ে নেবে তুমি?
ঝট করে চোখ নামিয়ে ফেললো মাহিয়া। নিহাল দেখতে পেল মাহিয়ার চেহারা থেকে হাসিটা মুছে গেছে। এই ব্যাপারে কিছুই বললো না মাহিয়া। শুধু বললো ও পানি থেকে এখন উঠতে চায় তাই নিহাল যেন সিড়ির কাছে ওকে নিয়ে যায়। নিহাল এই ঘটনার পুরা স্তম্ভিত হয়ে পরেছিল। মাহিয়া যে মাইন্ড করেছে কথাটায় সেটা ও নিশ্চিত। নিহালের নিজেকেই নিজের কাছে ছোট মনে হলো তখন।
মাহিয়াকে পানি থেকে উঠিয়ে দিলে ও সোজা ওখান থেকে চলে গেল। একবারও ফিরে তাকালো না পেছনে। নিহাল ইচ্ছা করেই আর গেল না ওর পিছে।
আধাঘন্টা পর নিহাল রুমে আসলো। এসে মাহিয়াকে পেল না। সেন্টার টেবিলে রাখা একটা পেজের দিকে চোখ পড়লো ওর। নিহাল ওঠালো সেটা,
– স্বামী কাছে আসলে, হেসে যদি স্ত্রী সরে যায় অথবা স্বামী ধরতে গেলে যদি হেসে পালিয়ে যায় তার মানে এটা না যে সে চাচ্ছে না। এটার মানে তার মনে হ্যা আছে, কিন্তু মুখে প্রকাশ করতে পারছে না। বোকা!!!
নিহাল লেখাটা পড়ে নিজের হাসি থামাতে পারছিল না। হাত দিয়ে চুল আচড়ে চিন্তা করতে লাগলো, কি বোকামিটাই না সে করেছে এতোদিন। মাহিয়া ওর হওয়ার জন্য কবে থেকেই তৈরী আর ও একটা বেকুব যে সেটা বুঝতে পারেনি। কিন্তু আজ আর সেই ভুল করবে না ও। আজ মাহিয়াকে ভালোবাসবে নিহাল। নিজের মতন করে কাছে টেনে নিবে মাহিয়াকে।
চলবে…..