রুপকথা পর্ব ১৫
সকালে চোখ খুলে মাহিয়া নিহালের চেহারাটাই প্রথমে দেখতে পেল। ওর পাশ ফিরে আধ শোয়া হয়ে মাহিয়াকেই দেখছে ও।
– গুড মর্নিং জান।
মাহিয়া হেসে নিহালের বুকে নিজের মুখ ঢাকা দিল। গতরাতের সবকিছু মনে পরে গেল ওর। ভীষন লজ্জা লাগলো এই মুহূর্তে।
রাতে পুল থেকে রুমে এসে এক গভীর সুখের জোয়ারে ভেসে গিয়েছিল মাহিয়া আর নিহাল। একে অপরকে ভালোবাসায় বিন্দু মাত্র কমতি রাখেনি ওরা। প্রেমের উন্মাদনার প্রতিযোগিতা চলেছে দুজনের মাঝে অনেক্ষণ। কতো প্রকারের অনুভূতি যে ওদের মধ্যে উন্নত হচ্ছিলো সেই সময়ে তার হিসাব বোধহয় একজনও দিতে পারবে না। শুধু একে অপরের চিরতরে হয়ে যাওয়ার স্বাদ পাগলের মতোন মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছিল ওদের। আর সেই পাগলামির সাক্ষী হয়ে আছে এই অগোছালো ঘর।
-মাহিয়া, ব্রেকফাস্টের জন্য নিচে যাবা নাকি রুমেই অর্ডার দিব?
মাথা ওঠালো মাহিয়া,
– না, না নিচে যেয়েই করি। নয়তো অন্যরা পরে খেপাবে।
– আচ্ছা অন্যদের নিয়ে এতো চিন্তা আপনার? আর এই বেচারা হাসবেন্ড যে আরেকটু একা থাকতে চাচ্ছে বউ এর সাথে?
খিলখিল করে হাসলো মাহিয়া,
-তুমি চাও এখানে নাস্তা করতে? আমার কোনো সমস্যা নেই। অর্ডার দাও এখানে।
হেসে ফেললো নিহাল।
আরে আমি তোমাকে টিস করছিলাম একটু। আমাদের সবার সাথেই ব্রেকফাস্ট করা উচিৎ নয়তো আসলেই ওরা আমাদের খেপাবে। তুমি যাও, ফ্রেশ হয়ে আসো। তারপর একসাথে যাই।
মাহিয়া চলে যাওয়ার পর শুয়ে একটু চোখ বন্ধ করলো নিহাল। কাল সারা রাত ঘুমায়নি ও। মাহিয়াকে শেষ পর্যন্ত নিজের করে নিতে পেরে অসম্ভব খুশি ছিল ও। তবে কিছু ব্যাপারে মাথা এখনো গরম হয়ে আছে ওর। তাই রাতে মাহিয়া ঘুমিয়ে যাওয়ার পরেও নিহাল ঘুমাতে পারেনি। বারান্দায় চলে এসেছিল। মাহিয়ার প্রথমে বলা কথাগুলো নিয়ে ভাবতে বসেছিল।
অথই বলেছে ও নাকি মাহিয়াকে দয়া দেখিয়ে বিয়ে করছে। মাহিয়ার প্রতি সিম্প্যাথি শো করেছে। কিন্তু অথই এটা বলবে কেন? অথই তো মাহিয়ার ব্যাপারে কিছুই জানে না। ও তো এইসব সিনেই নাই। ওর এইসব বলার কারণ কি?
কিন্তু মিথ্যাতো মাহিয়াও বলেনি। নিহাল মাহিয়ার চোখে স্পষ্ট ভয় দেখতে পেয়েছিল অথই এর নামটা দেখে। তাহলে গন্ডগোলটা কোথায়?
নিহালের সেই মুহূর্তে মনে আসলো মাহিয়ার পরের কথাগুলো। ও বলেছিল শাহেদ অথইকে সব বলেছে। কিন্তু ওর নিজের বানানো একটা গল্প শুনিয়েছিল ও। তখন একে একে ছক মিলতে থাকলো। শাহেদের মিথ্যা ইনফ্ল্যুেন্সের শিকার হয়েছে অথই, নিহালের বুঝতে কষ্ট হলো না। তার প্রেক্ষিতেই এইসব কিছু মাহিয়াকে বলেছিলো ও।
শাহেদের এই কুকির্তীর কথা চিন্তা করতেই পায়ের রক্ত মাথায় উঠলো নিহালের। ওর স্ত্রীকে নিয়ে কি উল্টা পাল্টা বলেছে শাহেদ তা জানা খুব জরুরী। তার ওপর অথইয়ের কাছেও তো মিথ্যা বলে ওকে অন্ধকারে রেখেছে। সাথে সাথে নিহাল ফোন করেছিল অথইকে। তবে ফোন ধরতে পারেনি অথই। মেসেজ লিখে পাঠিয়েছিল যে কাজে আছে। পরের দিন ফোন দিবে। তার সাথে আরেকটা মেসেজ দিয়েছিলোও। দেশে ফিরছে অথই। দুই দিন পরেই ফ্লাইট।
শেষ মেসেজটা পড়ে খুশি হয়েছিল নিহাল। ভাল হয়েছে যে অথই আসছে। তাহলে সামনাসামনি কথা বলতে পারবে ওরা। তখনই ক্লিয়ার করবে সব কনফিউশান।
কারো ঠোটের আলতো পরশ ওর কপালে লাগাতে চোখ খুললো নিহাল। মাহিয়া হাসিমুখে ওর সামনে দাড়ানো।
– আমাকে উঠিয়ে নিজেই ঘুমিয়ে গেলে? চলো উঠে পড়ো। দেরী হয়ে গেছে তো।
নিহাল কি উঠবে, মাহিয়ার হাত ধরে টেনে ওকেই বরঞ্চ নিজের পাশে শুইয়ে দিল। তারপর নিজে উঠে চমকে যাওয়া মাহিয়ার দুহাত চেপে ধরে বললো বললো,
-দেরী হচ্ছে, না? আরও কতোটুকু দেরী করা যায় দেখা যাক।
নাস্তায় নামতে আসলেই অনেক দেরী হয়ে গেল ওদের। বাকিদের খাওয়া প্রায় শেষের পথে। নিহাল ওর বন্ধুদের মাঝে কথা বলতে চলে গেল আর মাহিয়া রইলো মেয়েদের মাঝে।
দুপুর একটার বাসে ফিরতি টিকেট কাটা ছিল ওদের। সাড়ে বারোটার মধ্যে চেক আউট করে সোজা বাস স্ট্যান্ডে পৌছালো ওরা।
সবার মুখে এইবারের ট্রিপ নিয়ে নানান আলোচনাই হচ্ছে সকাল থেকে। মাহিয়া আর নিহাল ওদের বন্ধুদের অভিজ্ঞতাগুলো শুনছিলো মন দিয়ে। কিন্তু একটিও তাদের কাছে ততটা মূল্যবান মনে হলো না যতোটা তাদের নিজেদেরটা ছিল। কারণ এইবার কক্সবাজারে এসে এক নতুন মাহিয়া আর নিহালের জন্ম হয়েছে। এখানে এসে এক হতে পেরেছে ওরা। এই ট্রিপে তারা একে অপরকে স্বীকার করেছে মন থেকে। এই দুই দিনে প্রথমবারের মতন সত্যিকার অর্থে ওরা স্বামী স্ত্রীর আসল বন্ধনের স্বাদ পেয়েছে মাহিয়া আর নিহাল।
ঢাকায় ফিরতে ফিরতে রাত দশটা পার হয়ে গেল। নিহালের গাড়িটা বাস স্ট্যান্ডে চলে আসায় কোনো সমস্যা হলো না ওদের বাসায় যেতে।
মাহিয়া বাসায় পৌছে দৌড়ে প্রথমে নিজের শাশুড়িকে জড়িয়ে ধরলো। আয়েশা তো সম্পূর্ণ অবাক। হেসে নিজের বউকে জিজ্ঞেস করলেন,
– আরে, আরে কি ব্যাপার আম্মু? দুই দিন বুঝি আমাকে খুব মিস করসো?
– থ্যাঙ্কস মা।
– কিসের জন্য থ্যাঙ্কস দিচ্ছো তুমি?
মাহিয়া কিছু বলতে পারলো না। শুধু মাথা নিচু করে হেসে দিয়ে আবার নিজের শাশুড়িকে জড়িয়ে ধরলো। মনে মনে বললো,
– মা আপনি যদি সেইদিন নিজ পদক্ষেপে নিহালের বিয়ে আমার সাথে দেওয়ার চিন্তা না করতেন, আজ তাহলে এতো সুখ আমার ভাগ্যে জুটতো না। নিহালের মতন এত ভালো একজন জীবনসাথী হয়তোবা আমি পেতাম না। এর জন্য আপনার কাছে আমি চির ঋণি হয়ে থাকবো।
………………..
দুই দিন পর। নিহাল অফিসে বসে একটা এসাইনমেন্টের কাজ দেখছিল যখন ওর মোবাইল বেজে উঠলো। অথইয়ের নাম্বারটা দেখে হেসে উঠে ফোনটা রিসিভ করলো ও,
– হ্যালো। ওয়েলকাম টু বি ডি দোস্ত। খবর কি তোর? কয়টায় ল্যান্ড করলি?
ওপাশ থেকে অথইয়ের অট্টহাসি শুনতে পেল নিহাল।
– হায় নিহাল। এতোগুলা প্রশ্ন একসাথে করলে উত্তর দিব কোনটা? তাও দেই দাড়া, আমার খবর ভালো। আজ ভোররাতে ল্যান্ড করসি।
– ভোরে ল্যান্ড কইরা তুই আমারে এই দুপুর বারোটায় ফোন দিচ্ছিস?
– ওহ হ্যালো! লন্ডন কি পাশের বাড়ি পাইসিশ নাকি? জেট ল্যাগে কেমন ফিল হয় তুমি জানো না? এখনো মাথা ভনভন করছে। তাও কোনমতে ঘুম থেকে উইঠে তোরেই আগে ফোন দিলাম।
-বুজঝি, বুজঝি। এখন শুধু ফোনেই কথা কবি না দেখাও করবি?
– দেখা তো অবশ্যই করবো। চল্ দুইজন আজকে লাঞ্চে বের হই কোথাও। তোর সাথে মন খুইলে কথা হয় না কতো দিন। কতকিছু যে তোরে বলার আছে দোস্ত।
সেই আগের অথইয়ের আবদারের সুরটা শুনে নিহালের মনটা ভরে দিল। এতদিন ওর বেস্ট ফ্রেন্ডটা যে ছিল না তার কমতি আজ টের পেল ও।
– আচ্ছা কই খাবি বল্?
– স্টার কাবাব। অনেকদিন ওইখানকার অথেন্টিক কাচ্চি খাইনা দোস্ত। লন্ডনে খুব মিস করসি এগুলা।
– হাহাহা! ঠিক আছে, আমি আধা ঘন্টার মধ্যে আসতেসি।
অথইয়ের ফোনটা রেখে মাহিয়াকে ফোন দিল নিহাল,
– হ্যালো।
– মাহিয়া? আজ বাসায় লাঞ্চ বোধহয় করতে পারবো না।
– কেন? কোন মিটিং আছে নাকি?
– না আসলে অথই ইস ব্যাক ফ্রম লন্ডন। ওর সাথেই লাঞ্চে যাব।
অথইয়ের নামটা শুনে মাহিয়া একটা হার্টবিট স্কিপ করলো। একমুহূর্তের জন্য চুপ হয়ে গেল ও।
– মাহিয়া? কি হলো?
– না কিছু না। আচ্ছা ঠিক আছে তুমি অথইয়ের সাথে লাঞ্চ করে আসো। আমি মা কে বলে দিব। হ্যাভ ফান।
– থ্যাঙ্কস। লাভ ইউ।
হেসে দিল মাহিয়া,
– লাভ ইউ টু। বাই।
ফোনটা রেখেই কিছু কাজ শেষ করে বের হয়ে পড়লো নিহাল।
রেস্টুরেন্টে ঢুকতেই অথইকে দেখতে পেল নিহাল। হেসে ওর দিকে এগিয়ে গেল। অথই নিহালকে দেখেই দিল সেই চেনাপরিচিত চিৎকার,
– দোস্তওওওওও। কেমন আসিশ তুই?
– ভালো আসি? তুই লন্ডনে যাইয়ে একটুও সভ্য হস্ নাই তাই না অথই?
– ফালতু কথা বলবি না নিহাল। আমি কবে অসভ্য ছিলাম?
– হাহাহা। না না! তোর মতন সভ্য মেয়ে এই পুরা শহরে খুজলে আর একটাও পাওয়া যাবে না। তা বাদ দে। আগে তোর খবর বল?
– খবর পরে, খাবার আগে। ক্ষিধায় জান শেষ আমার। তাড়াতাড়ি অর্ডার দে তারপর জইমে গল্প করবো।
খাবার অর্ডার দেওয়ার পরে দুই বন্ধুর মাঝে বিশাল আড্ডা জমলো। বেশীর ভাগ কথা অথই বললো। লন্ডনে থাকার সময়ের অনেক ঘটনা জানালো নিহালকে। এখানের সব বন্ধু বান্ধবদের নিয়েও অনেক আলাপ হলো ওদের মাঝে তবে নিহাল খেয়াল করলো, অথই ওর বিয়ের ব্যাপারে অথবা মাহিয়াকে নিয়ে কোনো কথাই ওঠালো না। জিজ্ঞেসও করলো না কিছু এই নিয়ে। এস ইফ ও যেন বিষয়টা জানেই না বা একদম ভুলেই গেছে।
নিহালের অথই এর সাথে ওই ঘটনা নিয়ে কথা বলাটা খুব জরুরী। জানা দরকার শাহেদ ওকে কি কি মিথ্যা বলেছে। কিন্তু মেয়েটা ওকে এই বিষয়ে কথা শুরু করার ফ্লোরই দিচ্ছে না। এতদিন পরে দেখা হয়ে নিহালই যদি এই বিষাদের কথা ওঠায়, সেটাও আবার খারাপ হবে। কি করা উচিত ভেবে পাচ্ছিলো না নিহাল। এর মাঝে খাবার চলে আসাতে একটু কম কথা বলে দুইজনই খাবারে মন দিল।
খাবার শেষ করে যখন ফালুদা খাচ্ছিলো তখন মুখ খুললো অথই,
– নিহাল দোস্ত, একটা নিউস আছে।
মুখ উঠিয়ে তাকালো নিহাল। অথই বলেই যাচ্ছে,
– আসলে তোর সাথে আজকে দেখা করার একটা বিশেষ কারণও আছে। আই হ্যাভ টেকেন আ বিগ ডিসিশন উইচ আই ওয়ান্টেড টু শেয়ার ইট উইথ মাই বেস্ট ফ্রেন্ড।
– কি ডিসিশন রে? বিয়ে শাদি করতেসিশ নাকি?
নিহাল মজা করেই বললো এটা। কিন্তু অথই এর চেহারা দেখে বুঝে ফেললো, তীর একদম ঠিক জায়গায় লেগেছে।
– সিরিয়াসলি ডুড! তুই আসলেই বিয়ে করছিশ?
অথই একটা লাজুক হাসি দিল। নিহাল তা দেখে বলেই ফেললো,
– ওয়ে হোয়ে! তুই কবে মেয়েদের মতন করে হাসতে শিখলি? আচ্ছা আচ্ছা সরি বাবা, ভুল হইসে আমার। আর মারিস না। এখন বল সেই হতভাগা… মানে সৌভাগ্যবান টা কে যে আমাদের অথইকে বিয়ে করার সাহস পোষণ করেছে?
চুপ হয়ে গেল অথই। একটু স্থির হয়ে গেল।
– কি রে? চুপ হয়ে গেলি ক্যান? কে সেই মহাপুরুষ? কই থাকে? লন্ডনে? মানে তোর সাথে কি লন্ডনেই পরিচয়?
– তুই ওকে চিনিশ নিহাল। ইউ নো হিম ভেরী ওয়েল।
– আমি চিনি? আমাদের ভার্সিটির কেউ নাকি?
-হমম
– আরে সাবাস! ভালোই হইসে তাইলে। এবার বল কে সে?
-…… শাহেদ।
নিহালের মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠলো নামটা শুনে। পায়ের রক্ত মাথায় উঠতে এক মুহূর্ত সময় লাগলো না ওর। দাঁত খিচিয়ে জিজ্ঞেস করলো ও,
– কে?
– শাহেদ, নিহাল। আমাদের শাহেদ।
– ওখানেই চুপ হয়ে যা অথই। “আমাদের” বলতে কিছু নেই এখানে। আর ওই সব বাদ দে। তোর কি মাথা নষ্ট হয়ে গেসে? নাকি তুই কিছু খাচ্ছিস যে ওই শয়তান কে বিয়ে করার চিন্তা করলি তুই? ওই ইতর কে আমি সামনে পেলে মেরে ফেলবো আর তুই ওকেই জীবনসঙ্গী বানাতে চাস্?
– নিজের ভাষা ঠিক কর্ নিহাল। শাহেদকে এতো গালি দেওয়ার কোনো অধিকার নাই তোর।
-আমার অধিকার নাই? মাহিয়ার সাথে ও যা করসে তারপরও তুই এই কথা বলছিস অথই?
– নিহাল শোন? আই এ্যাম নট ইন্টারেসটেড এবাউট ওয়াট হ্যাপেন্ড উইথ ইউর ওয়াইফ। তোর বউয়ের কথা তোর বিশ্বাস করতে ইচ্ছা হইলে তুই করতে পারিস। কিন্তু আমি করি না। তাই ওই ঘটনার দোহাই দিয়ে আমাকে বলিস না শাহেদকে জাজ করতে।
– আর ইউ আউট অফ ইউর মাইন্ড অথই? তুই মাহিয়ার কথা বিশ্বাস করছিস না কিন্তু ওই স্কাউন্ড্রেলটার কথা বিশ্বাস করছিস? তুই তো ছিলিওনা সেই জায়াগায়। তুই কেমনে জানিস কে ঠিক কে ভুল? আমি ছিলাম ওখানে। আমি দেখেছি…
– কি দেখসিশ তুই? ওই রুমের ভেতর কি হইসে তুই দেখসিশ? দেখিস নাই। তাই তুই যেভাবে মাহিয়ার কথায় বিশ্বাস করসিশ, তেমনি আমিও শাহেদের ভাষ্য বিশ্বাস করসি।
– অথই তুই কি বলতাসিশ তুই নিজেও জানিস না দোস্ত। তুই বিশাল বড় ভুল করতে যাচ্ছিস। এখনো সময় আছে, সরে আয়।
– প্লিস নিহাল! তুই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ঠিক আছে কিন্তু তার মানে এই না যে আমার পার্সোনাল ডিসিশনে নাক গলানোর কোনো অধিকার তোর আছে। সো স্টে আউট অফ ইট। আমার যাকে মন চায় তাকে বিয়ে করবো। ইউ হ্যাভ নো রাইট টু সে এনিথিং।
অথইয়ের এই আচরণে থমকে গেল নিহাল। ওর মুখের স্পষ্ট বিরক্তির ছাপ দেখে আর কথা বাড়ালো না। কিন্তু নিজেকেও সামলে রাখতে পারছে না ও। গলা ফাটিয়ে চিৎকার দিতে ইচ্ছা করছে। তাহলে যদি রাগটা পরে। তবে এই ভরা রেস্টুরেন্টে সিন ক্রিয়েট করতে চাইলো না ও। তাই চুপ চাপ উঠে পড়লো চলে যাওয়ার জন্য। অথই তা দেখেই থামাতে চেষ্টা করলো নিহালকে,
– কই যাচ্ছিস তুই?
– কাজ আছে?
অথইয়ের রাগটা কমলো একটু,
– এতোদিন পরে তোর ফ্রেন্ড এসছে আর তুই কাজের বাহানা করে চলে যাচ্ছিস?
– উই আর নো মোর ফ্রেন্ডস অথই। ইফ ইউ ম্যারি দ্যাট স্কাউন্ড্রেল দেন উই আর ডান। আমি তোর পারসোনাল লইফ তো কি, কোনো লাইফ এর পার্ট ই থাকবো না। থাকতে চাইবো না। রেস্ট ইস আপ টু ইউ। তবে যাই করিস একটু ভেবে চিন্তে করিস। বাই অথই।
অথইকে কিছু বলার আর একটা সুযোগও না দিয়ে ওখান থেকে বের হয়ে গেল নিহাল। গাড়ির ভেতরে বসে দুই মিনিট থামলো। এই শীতের মাঝেও এসি জোরে চালিয়ে দিল। এই মাথা গরম নিয়ে গাড়ি চালালে নির্ঘাত এ্যাক্সিডেন্ট করার সম্ভবনা আছে। কিছুক্ষণ পর গাড়ি স্টার্ট দিল নিহাল। রওনা হলো বাসার পথে।
নিহাল লাঞ্চে আসবে না জেনে মাহিয়া ওর শাশুড়িকে আর ডাইনিং এ আসতে দেয় নি। ওদের দুজনের খাবার আয়শার রুমেই নিয়ে গিয়ে ওখানেই বসে খেয়েছে। তারপর শাশুড়ি কে শোয়ায়ে নিজের রুমে এসেছে। খাটে বসে বই পড়ছিলো ও যখন বেল বাজলো। নিহালের বেল বাজানোর ধরণটা চিনে গেছে এখন। দরজা খুলতে দৌড়ে গেল মাহিয়া।
কিন্তু একি চেহারা নিহালের? মাহিয়া দেখে কিছুটা ভয় পেয়ে গেল। ওর স্বামীর মুখ রাগে লাল হয়ে গেছে। মাহিয়ার দিকে একটুও না তাকিয়ে গট গট করে রুমে চলে গেল নিহাল। তাড়াতাড়ি দরজা বন্ধ করে ওর পিছে পিছে রুমে আসলো মাহিয়া। খাটে শুয়ে পড়েছে ছেলেটা। অসম্ভব ক্লান্ত লাগছে দেখে ওকে। আস্তে করে ওর মাথার পাশে বসে মাহিয়া আলতো করে পরশ বুলিয়ে দিল কপালে,
– এই, কি হলো? খুব খারাপ লাগছে?
মাহিয়ার দিকে একমুহূর্ত তাকিয়ে সোজা হয়ে বসলো নিহাল। মাহিয়া আবার জিজ্ঞেস করলো,
– অথইয়ের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলা না তুমি? কেমন আছে ও?
– অথই ইস গেটিং ম্যারিড মাহিয়া।
– ওআও! দ্যাট্স গ্রেট নিউজ…
– টু শাহেদ। শি ইস গেটিং ম্যারিড টু শাহেদ।
মাহিয়া এটা শুনে পুরাপুরি চুপ মেরে গেল। নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারলো না ও।
– কার সাথে?
মাহিয়ার দিকে তাকিয়ে একটা মলিন হাসি হাসলো নিহাল।
-আমিও শুনে তোমার মতনই শক্ড হয়েছিলাম। এখনো আছি।
মাহিয়া হুট করে নিহালের হাতটা ধরে বসলো,
– নিহাল, অথই কে বোঝাও প্লিস। ওকে এইখান থেকে সরতে বলো। আমার সাথে যা হয়েছে তা খুলে বলো ওকে। সত্যটা জানাও। যেভাবেই হোক, অথইকে শাহেদের সাথে বিয়ে করা থেকে থামাও নিহাল। নয়তো জীবনে অনেক বড় কষ্ট পাবে ও।
– তোমার কি মনে হয়, আমি চেষ্টা করি নাই মাহিয়া? ও আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। আমি ওর ক্ষতি কখনোই চাই না। অনেক ভাবে বুঝিয়েছি ওকে। বাট শি ইস ভেরি মাচ ডেটারমাইন্ড। আমার কোনো কথাকেই গোনায় ধরলো না ও। আমাকে উল্টা বলে ওর পারসোনাল লাইফ থেকে দূরে থাকতে। শেষে এমন মেজাজ গরম হইসে যে চলে আসছি ওখান থেকে। আর আসার আগে বলে আসছি যে ওই হারামির সাথে যদি ও বিয়ে বসে তাহলে আমার সাথে বন্ধুত্ব ওকে চির তরে ভুলতে হবে।
নিহাল এগুলা বলতে গিয়ে রাগে ফুসছিল। স্বাস বারবার জোরে ওঠা নামা করছিল ওর। এই দেখে মাহিয়া এই নিয়ে আর কথা বাড়াতে দিল না। নিহালকে ফ্রেশ হয়ে নিতে বললো। ক্লাসের জন্য অলরেডি দেরী হয়েছে দেখে তাড়াতাড়ি বের হওয়ার কথা নিহালকে জানালো ও।
যাওয়া, আসার পুরো রাস্তাতেই নিহাল চুপ চাপ গাড়ি চালিয়েছে। কোনো কথা বলে নি। মাহিয়াও ঘাটায়নি ওকে। রাতে ডিনারেও মা আর ভাইয়ের সাথে হাল্কা পাতলা গল্প করলো নিহাল। এরপর মাথা ব্যাথার বাহানায় রুমে চলে গেল।
সব ঠিকঠাক করে মাহিয়া যখন রুমে আসলো, নিহালকে বারান্দায় দাড়িয়ে থাকতে দেখলো ও। পেছন থেকে যেয়ে আলতো হাতে জড়িয়ে ধরলো নিহালকে। ওর পিঠে নিজের মাথা রাখলো । নিহাল সামনে দিয়ে মাহিয়ার দুটো হাত ধরলো।
– নিহাল, আমি কিছু কথা বলতে চাই। বলি?
এপাশ ফিরলো নিহাল,
– হমম, বলো।
– সম্পর্ক এতো ঠুনকো জিনিস না জান। তোমার আর অথইয়ের বন্ধুত্ব অনেক বছরের। এটাকে এভাবে শেষ বললেই কখনো শেষ হবে না। আর এই সময় তো অথইয়ের সবচাইতে বেশী ওর বেস্ট ফ্রেন্ডকে দরকার। আর এই সময়ই তুমি সরে আসলা? এটা ঠিক হয়নি নিহাল।
– তো কি করবো আমি বলো? শাহেদের প্রেমের জালে এমন ফেঁসেছে ও যে কোনো যুক্তিই মানতে চাচ্ছে না। কি পাঠ পড়াইসে ওকে শাহেদ, তা আল্লাহ্ই জানেন।
এই কথায় একটু চুপ হলো মাহিয়া। গলার আওয়াজ অনেক মলিন হয়ে গেল ওর,
– অথইয়ের এই পরিস্থিতি বুঝতে আমার একটুও সমস্যা হচ্ছে না। কারণ এক সময় ঠিক ওর জায়গাতেই আমি ছিলাম। শাহেদ কতোটুকু ম্যানুপুলেটিভ হতে পারে তা আমার জানা আছে। সেই কারণেই তো আমার জীবনে এতো বড় সর্বনাশটা হতে যাচ্ছিলো।
নিহালের দিকে তাকালো মাহিয়া,
– তাই বলছি, অথই কে দোষ দিও না নিহাল। শি ইস জাস্ট আ ভিক্টিম নাও। শি নাও নিডস ইউ দা মোস্ট। ওকে এই অবস্থায় ছেড়ে দিও না। আবার বোঝাও। পারলে যতক্ষণ না বুঝবে ততক্ষণ। কিন্তু হেল্প ওকে করতেই হবে। আমিও তোমার সাথে আছি। দরকার পরলে আমিও কথা বলবো অথইয়ের সাথে।
মাহিয়ার কথাগুলো নিহালের মনকে অনেক হাল্কা করে দিল। জড়িয়ে ধরলো নিজের বউকে ও।
– তুমি আমার লক্ষী একটা বউ। আমি কথা বলবো অথইয়ের সাথে।
খিলখিল করে হাসলো মাহিয়া,
– গুড। এখন শুইতে চলো। এই লক্ষী বউয়ের ঠান্ডা লাগছে এইখানে।
সেই দুষ্টু নিহাল, যাকে আজ সারাদিন মাহিয়া দেখেনি, আবার উপস্থিত হলো ওর সামনে।
– ঠান্ডা লাগছে তাই না? দেখি তো কি ব্যবস্থা নেওয়া যায় এর প্রেক্ষিতে?
বলেই আচমকা মাহিয়াকে কোলে তুলে নিয়ে রুমের ভেতরে ঢুকে গেল ও।
চলবে……