রুপকথা পর্ব ১৬
পরের কয়েকদিন নিহাল চেষ্টা চালিয়ে গেল অথইয়ের সাথে বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করার। প্রথম দিকে অথই ওর সাথে দেখা করতো, এই বিষয়ে কথা উঠলে নিহালের সাথে ঝগড়া বাধায় দিত। কোনোবারই দুইজনের একজনও একটা ট্র্যাকে পৌছতে পারছিল না। অথইয়ের সেই একই সুর। শাহেদকে মাহিয়া ফাসিয়েছে। ওর নিজের কোনোই দোষ ছিল না।
মাস খানেক এভাবে যাওয়ার পর অথই আস্তে আস্তে নিহালের সাথে দেখা করা কমিয়ে দিতে থাকলো। ওর কল ধরতো না। ধরলেও বলতো বিজি। তাও নিহাল হার মানতে নারাজ। আর ওর পেছনে মাহিয়া তো ছিলোই। নিহাল যতই অথইয়ের বেস্ট ফ্রেন্ড হোক না কেন, ও তো একটা ছেলে। একটা মেয়ের মন গভীরভাবে বোঝা ওর পক্ষে অতটা সোজা না। সেই সব অনুভূতিগুলো মাহিয়া বুঝিয়ে দিত নিহালকে। বলা যায় এক প্রকার গাইড করে যাচ্ছিলো নিহালকে ও অথইকে বুঝতে। কিন্তু কোনোকিছুই কাজে লাগছিল না। অথই নিজের জায়গায় অনড় রইলো।
এরই মাঝে সেমিস্টার শেষ হলো। নিহাল এর লাস্ট সেমিস্টার ছিল এটা। এখন পুরোদস্তুর বিজনেসে জয়েন করার জন্য তৈরী হয়ে উঠলো ও। আয়েশা নিজের ছেলে কে ফরমালি ইন্ট্রোডিউস করানোর জন্য এক বিশাল অনুষ্ঠানের আয়োজন করলেন যেখানে তাদের বিজনেস এ্যাসোসিয়েট্স ছাড়াও শহরের নামি ধামি কিছু বিজনেসম্যানদেরও আমন্ত্রণ পাঠানো হয়েছিল।
মাহিয়া নিহালের এই দিনটার জন্য সব শপিং নিজে করেছে। ওকে নিয়ে যেয়ে নতুন স্যুট অর্ডার দিয়েছে, সেটার সাথে ম্যাচিং এ্যাকসেসরিস কিনেছে। নিজের জন্য শাড়ি কিনেছে। মাহিয়ার উচ্ছাস দেখে নিহাল হাসতে হাসতে শেষ। মাহিয়া কপট রাগ দেখায়,
– এভাবে হাসছো কেন? আমার হাসবেন্ড এখন একজন রেকগনাইজড বিজনেসম্যান হয়ে যাচ্ছে, একটা প্রেসেন্টেশনের ব্যাপার আছে না?
দেখতে দেখতে সেই দিনটাও চলে আসলো। পার্টির জন্য মাহিয়া আজকে পার্লার থেকেই সেজে এসেছে। রুমে ঢুকে নিহালকে দেখালে ওর চোখ উঠলো কপালে।
– ওহ মাই গুডনেস। মাহিয়া চলো ভেগে যাই।
অবাক হলো মাহিয়া,
– কি আবলতাবল বকছো? ভেগে যাব কেন?
– এতো সুন্দর বউ নিয়ে প্রোগ্রামে গেলে কনফার্ম কেউ না কেউ তো নিয়ে ভাগতে চাইবে। তাই আমি আগেই সেটা করে ফেলি।
নিহালের কম্প্লিমেন্ট দেওয়ার ধরণ বুঝতে একটু সময় লাগলো মাহিয়ার। কিন্তু যখন বুঝলো তখন হাসতে হাসতে ফিট হয়ে যাবার অবস্থা ওর। নিহালকে জড়িয়ে ধরলো ও।
– আজ এইসব বলছো, যখন বিজনেসের ভেতর পুরোপুরি ঢুকে যাবা তখন আমার দিকে তাকানোরই আর সময় থাকবে না তোমার। তখন কে কখন আমাকে ভাগায়ে নিয়ে যাবে খেয়ালই করবা না তুমি।
শক্ত করে নিজের স্ত্রীকে নিজের আবেশে বাধলো নিহাল।
– আমার বউয়ের দিকে চোখ তুলে কেউ তাকানোর সাহসটা আগে করে নিক। তারপর দেখবো কি হয়।
প্রোগ্রামের ভেন্যুতে আয়েশা আর নাবিল আগেই পৌছে গিয়েছিল। মাহিয়া সহ নিহালকে পরেই আসার জন্য বলা হয়েছিল। ওরা পৌছলে বেশ জাকজমক ভাবে ওদেরকে রিসিভ করা হলো। তারপর একে একে সবার সাথে পরিচয় পর্বে যোগ দিল ওরা।
মোটামোটি অর্ধ সংখ্যক অথিতিদের সাথে পরিচিত হওয়ার পর আয়েশা স্টেজে তার পরিবারকে নিয়ে উঠলেন। সবার উপস্থিতিতে নিজের সমস্ত দায়িত্ব এবং ওদের বিজনেসে নিজের স্থান আনুষ্ঠানিক ভাবে নিহালের কাছে হস্তান্তর করলেন। নিহলও সাদরে তা গ্রহন করলো।
এই আনুষ্ঠানিকতার পর নৈশভোজের জন্য সবাইকে আহবান জানানো হলো। নিহাল, মাহিয়া সহ বাসার সবাই গেস্টদের আপ্যায়নের দিকগুলো সুক্ষভাবে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো। প্রায় সবাই বসে গিয়েছিলো বলে হলওয়ে টা ছিল মোটমোটি ফাঁকা। হঠাৎ দরজার দিকে চোখ আটকে যায় নিহালের। অবাক হয়ে যায় ও অথইকে দেখে। ও এখানে কি করছে? নিহাল এই প্রোগামটা ফরমাল বিধায় ওর কোনো বন্ধুদের দাওয়াত দেয়নি। অথইয়ের কাছে যায় ও।
– অথই? ওয়েলকাম দোস্ত। আয় ভেতরে।
অথই একটু ইতস্তত বোধ করে।
– হমম। আসছি। আসলে আমি ওয়েট…
– হ্যালো অথই। কেমন আছো?
মাহিয়ার আওয়াজে নিহাল, অথই দুইজনই ঘুরে তাকায়। নিহাল লক্ষ্য করলো মাহিয়াকে দেখেই অথই কেমন শক্ত হয়ে গেল। ওর প্রশ্নের কোনো উত্তর দিল না। মাহিয়াও বোধহয় বুঝলো ব্যাপারটা। তারপরও নিজের হাসিমুখটা ধরে রেখেই বললো ও।
– নিহাল, অথইকে নিয়ে এখানে দাড়িয়ে আছ কেন? ভেতরে আস?
– হ্যা হ্যা। এই অথই চল্ ভেতরে।
– আমি যাচ্ছি। তুই যা। আই এ্যাম ওয়েটিং ফর… ওই তো চলে এসেছে।
অথই যেই দিকে হাটা দিল সেই দিকে তাকাতেই জমে গেল নিহাল। শাহেদকে আসতে দেখে রাগে ওর রগ টেনে উঠলো। হাত মুঠ করে ফেললো ও। মাহিয়াও দেখেছে শাহেদকে। ওর অবস্থা বেশী খারাপ হয়ে পড়লো তখন। ভীষণ অসুস্থিতে পড়ে গেল ও। মনের ভেতরে অজানা একটা আতঙ্ক ওকে গ্রাশ করতে থাকলো। অজান্তেই নিহালের কনুই জাপটে ধরলো ও।
শাহেদ এসে নিহালের সামনে দাড়ালো। অথই খুব আত্মবিশ্বাস নিয়ে শাহেদের হাত ধরে দাড়ানো। হাসছে দুজন। শাহেদ নিহালের দিকে হাত বাড়িয়ে দিল,
– কনগ্র্যাচুলেশনস অন ইওর নিউ এ্যাচিভমেন্ট দোস্ত।
নিহাল দাঁত খিচিয়ে উঠলো,
– তোর সাহস কেমনে হলো আমার অনুষ্ঠানে আসার? গেট আউট ফ্রম হিয়ার।
অথইয়ের চিৎকার কানে গেল নিহালের,
– এনাফ নিহাল! কোন সাহসে তুই শাহেদের সাথে এভাবে কথা বলছিশ? তোর কি মনে হয় এমনি এমনি তোর প্রোগ্রামে এসেছি আমরা? লো ক্লাস পাইসিশ নাকি আমাদের যে যেখানে খুশি সেখানে মুখ উঠায়ে চলে যাব? তুই মনে হয় ভুলে গেসিশ যে শাহেদের বাবা নিজেও একজন বিজনেস টাইকুন। আজ তোর এই আলিশান পার্টিতে উনি এবং শাহেদ দুইজনই ইনভাইটেড। সো বিহেভ নাইসলি উইথ ইওর গেস্ট অলরাইট?
শাহেদের দিকে ফিরলো অথই,
– আমি বলসিলাম আমাদের আসার দরকার নাই এখানে। এই ইনসাল্ট হওয়ার খুব ইচ্ছা ছিল তোমার?
অথইকে শান্ত করলো শাহেদ,
– কাম ডাউন অথই। নিহালের আমার ওপর রাগ হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। তবে আমি এবার সব ঠিক করে ফেলবো, দেইখো তুমি।
তারপর নিহালের দিকে ফিরলো ও,
– দ্যাখ নিহাল এটা তোর ইনগারেশন পার্টি। এখানে সিন ক্রিয়েট না করাটাই ভালো। তোর আমার উপস্থিতি ভালো না লাগলে, আমি চলে যাব। বাট তার আগে আব্বুর সাথে একটু দেখা করে নিতে দে আমাকে। এট লিস্ট লেট মি ইনফর্ম হিম দ্যাট আই এ্যাটেন্ডেড দা পার্টি।
নিহালের ভেতরে রাগে কাঁপছিল। চেহারার প্রত্যেকটা নার্ভ টানটান হয়েছিল। কিন্তু কিছু করলো না ও। বরং রাস্তা ছেড়ে দিয়ে ওদের ঢোকার জায়গা করে দিল।
শাহেদ ঢোকার সময় মাথা নিচু করেই ঢুকছিল তবে মাহিয়ার দিকে চোখ পড়তেই একটু সোজা হলো ও। ভেতর থেকে শিউরে উঠলো মাহিয়া। নিহালের কনুইয়ে নিজের খামচির জোর আরও বাড়িয়ে দিল। ওর হাতটা ধরে ওকে সান্তনা দিল নিহাল। তারপর ওকে নিয়ে নিজেও হলে ঢুকে পড়লো।
প্রোগামের বাকিটা সময় হাজার চেষ্টা করেও নিহাল নিজের রাগ ঝরাতে পারছিল না। তবে মাহিয়া সামলে নিয়েছিল নিজেকে। অন্তত নিহালের জন্য এটা ওকে করতে হচ্ছিলো তখন। শাহেদের সাথে দেখা হওয়ার পর থেকে একটা মুহূর্তের জন্যেও সরেনি ও নিহালের কাছ থেকে। বাকি যাদের সাথে নিহালের প্রথমে পরিচয় হয়নি তাদের সাথে আয়েশা ওকে পরিচয় করিয়ে দিতে লাগলেন। তাদের মাঝে শাহেদ এবং ওর বাবাও ছিল। ওদের সামনে এসে নিহাল আবার শক্ত হয়ে পড়লো। মিস্টার খান বললেন,
– মিসেস রহমান, আপনার সাথে আমার কোনো বিজনেস ডিল না থাকলেও আমরা কিন্তু আরেক ভাবে রিলেটেড। আমাদের ছেলেরা কিন্তু উনিভার্সিটির বন্ধু। দেখেন তো চিনতে পারেন কিনা?
শাহেদকে দেখে হেসে দিলেন আয়েশা।
– শাহেদ আপনার ছেলে মিস্টার খান? আমার বাসায় কতো আড্ডা জমেছে ওদের। কিন্তু এর মাঝে বাবা দেখলাম না তোমাকে।
– আন্টি আমি লন্ডনে চলে গিয়েছিলাম পোস্ট গ্র্যাজুয়েট করতে। ছুটিতে এসেছি।
আয়েশা হেসে পাশে অথই কে দেখলেন,
– আম্মু তুমি কেমন আছ? লন্ডনে তো তুমিও পড়তে গিয়েছিলা।
মিস্টার খান মাঝখানে কথা কাটলেন,
– এখানে একটা সুখবর আছে মিসেস রহমান। অথই আর শাহেদের বিয়ে ঠিক হয়েছে। আগামী মাসের দুই তারিখে ওদের এঙ্গেজমেন্ট। আপনারা সবাই কিন্তু অবশ্যই আসবেন। নিহাল, তুমি তো দুইজনেরই কমন ফ্রেন্ড। ইনভিটেশন দুইজনের থেকেই পাবা নিশ্চয়ই। হাহাহা।
ডেট ফিক্স হয়ে গেছে শুনে নিহাল একদম চুপসে গেল। আশা যে আর নেই অথইকে ফেরানোর তা বুঝতে ওর বাকি রইলো না।
রাতে রুমে এসে মনমরা হয়ে রইলো নিহাল। মাহিয়া নিজেই তো শক্ড। ও কি সান্ত্বনা দিবে ওর স্বামীকে। তারপরেও পাশে বসে হাত ধরে রইলো ও।
– আই হ্যাভ লস্ট মাহিয়া। আমার বেস্ট ফ্রেন্ডের ভবিষ্যৎ বাঁচাতে পারলাম না। অথই সবসময় খুব জেদি স্বভাবের ছিল। যা ওর মাথায় আসে, তাই করতে চায় ও। তবে তাই বলে এতো অযৌক্তিক একটা কাজ করবে ও নিজের জীবনের সাথে সেটা কখনোই মাথায় আসেনি আমার।
– নিহাল, তুমি নিজেকে ব্লেম করো না। আমরা সবাই এডাল্ট। ভাল মন্দ বোঝার ক্ষমতা আল্লাহ্ সবাইকে দিয়েছেন। তারপরেও যদি কেউ না ঠিক করতে চায় কিছু, তাহলে সেটা তোমার দোষ না। সো প্লিস স্টপ ব্লেমিং ইয়োর সেল্ফ।
সেই রাতের পর প্রায় এক সপ্তাহ এই বিষয়টা নিয়ে নিহাল আর মাহিয়ার মাঝে কোনো কথা হলো না। সুযোগই পেল না তারা। নিহাল সম্পূর্ণ বিজনেস টেকওভার করার পর থেকে মহা ব্যস্ত হয়ে পড়লো। আর মাহিয়াও নতুন সেমিস্টারের চাপে এইসবকিছু নিয়ে সময় দিতে পারলো না।
তবে মাহিয়া জানতো, নিহালকে অথইয়ের বিষয়টা মনে খচ খচ করেই চলেছে। ওপর থেকে না দেখালেও ভেতরে ভেতরে এই বিষয়ে খুবই আপসেট ও।
এরই মাঝে, চলতি মাসের শেষ সপ্তাহের একদিনে খুব কাকতলিও ভাবেই মাহিয়ার সাথে অথইয়ের দেখা হয়ে যায় একটা শপিংমলে। অথই মাহিয়াকে দেখে প্রথমে। ইগনোর করার চেষ্টা করে, তবে মাহিয়ার চোখও পরে যাওয়াতে পুরোপুরি তা আর করতে পারে না। ছুটে যায় মাহিয়া অথইর কাছে,
– অথই। কেমন অাছো?
অথই খুব ছোট্ট করে জবাব দেয়,
– ভালো।
মাহিয়া ওর এক্সপ্রেশনকে ইগনোর করে।
– তোমার সাথে দেখা হয়ে খুব ভালো লাগছে আমার। একাই এসেছো?
– হ্যা।
– ও। চলো কোথাও বসি। কফি খাই।
– আই ডোন্ট হ্যাভ টাইম। আমার এক জায়গায় যেতে হবে।
– প্লিজ অথই। কিছুক্ষণের জন্য বসে যাও। নয়তো তোমার ফ্রেন্ড যদি শোনে যে তোমার সাথে দেখা হওয়ার পরেও আমি তোমার কোনো খাতিরদারি করি নাই, তাহলে খুব রাগ করবে আমার ওপর। সো প্লিস চলো।
খুব বিরক্তি নিয়ে মাহিয়ার সাথে পাশের একটা কফিশপে বসলো অথই।
খাবার অর্ডার দিয়ে প্রথমে কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে রইলো দুজন। তারপর মাহিয়াই কথা শুরু করলো,
– আমি নিজেই কয়েকদিন ধরে তোমাকে ফোন করার চিন্তা করছিলাম। আজ সামনাসামনি দেখা হয়ে ভালো হলো।
– দেখো মাহিয়া, তুমি যদি তোমার জামাইয়ের মতন আমার আর শাহেদের সম্পর্ক ভাঙা নিয়ে কথা বলতে চাও তো আগেই বলে দেই, ইউ আর ওয়েস্টিং ইয়র টাইম হিয়ার। আমি নিহালের কথা যেহেতু শুনি নাই, তোমার কথায় মেনে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না।
একটা মিষ্টি হাসি দিল মাহিয়া,
– আমি তোমাকে কিছুই বোঝাতে চাই না অথই। আমি নিহালকেও এটা বলেছি, তোমাকেও বলছি যে আমরা সবাই প্রাপ্তবয়স্ক। ভাল মন্দের বুঝ আমাদের মাঝে আছে। সো কারো ডিসিশনের ওপরে অন্যদের কথা বলা উচিত না। তবে হ্যা, ওয়েলউইশারসদের কাছ থেকে এডভাইস নিতে আপত্তি হওয়ার কথা না বলে আমি মনে করি।
একটু থামলো মাহিয়া। আবার বললো,
– আমি তোমাকে এটা বলার তো কেউ না যে তুমি শাহেদকে বিয়ে করো না, তবে আমার নিজের অভিজ্ঞতার কথা তোমাকে অবশ্যই বলতে চাই।
এর মধ্যে খাবার চলে আসলো ওদের। মাহিয়া শুরু করলো আবার,
-আমাকে ছোটবেলা থেকেই সবাই বলতো আমি কিউট দেখতে। বড় হতে হতে সেই এডজেকটিভটা সরে যেয়ে তার জায়গায় বসলো, “এ্যাট্রাকটিভ”। কলেজ লাইফএ বহু প্রোপোজাল পেয়েছিলাম। ভালোও লেগেছিল দুই একজনকে, তবে কেন যেন আগানো হয়নি সেই দিকে। হয়তো বাবা মায়ের এক সন্তান চিন্তা করে পারিনি, পাছে যদি তাদেরকে কষ্ট দিয়ে ফেলি। ভার্সিটিতে এসেও ভালই ছিলাম একা। গন্ডোগোলটা বাধলো টেন্থ সেমিস্টারে গিয়ে। শাহেদকে পছন্দ হলো আমার। অবাক হলাম জেনে যে পছন্দটা আমার তরফ থেকেই প্রথম। শাহেদ মনে হয় করে না। একদম টিনএজ মেয়েদের মতন ওর আশপাশে ঘুরলাম কয়দিন ওর এ্যাটেনশন পাওয়ার জন্য। পেয়েও গেলাম সপ্তাহ খানিকের মধ্যে।
শুরু হলো একটু আকটু গল্প আমাদের। বন্ধুত্ব ভালো লাগায় উন্নত হলো। কিন্তু কারোর তরফ থেকেই কোনো প্রপোজাল আসে নি। তবে আমি যে ওর প্রতি একটু উইক হচ্ছিলাম তা বুঝতে কষ্ট হয়নি আমার। এরই মাঝে একদিন শাহেদ আমাকে ওর বাসায় ইনভাইট করলো। আমি খুব ইতস্তত বোধ করেছিলাম ওর এই প্রস্তাবে। পরে ও জানালো যে ওর অনেক বন্ধুদেরকেই ডেকেছে ও। আমি চাইলে আমার বন্ধুদেরও আনতে পারি। কিছুটা স্বস্তি পেলাম শুনে এই কথাটা। সেই সময় আমার বাবা মা কিছুদিনের জন্য একটা মেডিকাল কনফারেন্সে দেশের বাইরে ছিলেন। বাসায় আমার সাথে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড তনু ছিল তখন। ওকে বললাম আমার সাথে যেতে। রাজি হলো ও।
আবার একটু থামলো মাহিয়া। অথই ততক্ষণে পুরোপুরি মাহিয়ার কথাগুলো মন দিয়ে শুনছিল। এক সিপ কফি পান করে আবার শুরু করলো মাহিয়া,
– সেই রাতে আমি আর তনু শাহেদের বাসায় গেলাম। অনেককেই দেখতে পেলাম ওখানে। নিহালও ছিল। তবে আমি কেন যেন বেশী একটা কম্ফোরটেবল ফিল করছিলাম না। শাহেদ বোধহয় লক্ষ্য করেছিল ব্যাপারটা। আমার কাছে এসে আমার শরীর খারাপ লাগছে কি না জিজ্ঞেস করলো।
আমি হ্যা বলাতে আমাকে বললো ও পানি এনে দিচ্ছে। আমি পানি খাওয়ার পর কিছুটা ভালো ফিল করলাম প্রথমে, কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই মাথা ঘোরালো আমার। শাহেদ পাশেই ছিল। ওকে বললেই ও আমাকে ভেতরে নিয়ে গেল এই বলে আমার গ্যাস ফর্ম হচ্ছে বোধহয় যার কারণে মাথা ঘুরছে। ওর রুমে গ্যাসের টেবলেট আছে যেটা খেলে আমি ভালো ফিল করবো। আমার সেই সময় মাথা ঠিক ভাবে কাজ করছিল না।
কিছুক্ষণ পর শাহেদ একটা রুমে আমাকে ঢুকিয়ে পেছনে দরজা লাগিয়ে দিল। আমার তখনো সিক্থ সেন্স কাজ করছিল বলে আমি ওর কুমতলবটা বুঝে ফেললাম। দৌড়ে দরজার কাছে যেতে চাইলাম কিন্তু পেছন থেকে ধরে ফেললো ও। আমাকে নিজের দিকে তারপর ফিরিয়ে আমার কাছে আসার চেষ্টা করলো। আতঙ্কে মাথার ঝিমঝিম আরও বেরে গিয়েছিল আমার। তবুও ফাইট করে যাচ্ছিলাম আমি। তার কারণে শাহেদের নখের খামচি আর হাতের চড় আমার ঘাড়ে, হাতে বসে গিয়েছিল।
হঠাৎ বাইরের আওয়াজ আসলো আমাদের কানে। আমার নাম ধরে ডাকছিল কেউ। আমি চিৎকার দিতে যাব, শাহেদ আমার মুখ জাপটে ধরলো। তারপরও যতটুকু পারা যায়, আওয়াজ করতেই থাকলাম আমি। মনেহয় কিছুটা বাইরে পর্যন্ত গিয়েছিল সেটা। তাই শুনে নিহাল আর তনু চিৎকার করতে লাগলো বাহির থেকে। একপর্যায় দরজায় লাথির আওয়াজ পাওয়ায় শাহেদের মনোযোগ আমার ওপর থেকে কিছুটা সরলো, আর তখনি ওর হাতটা নিজের মুখ থেকে সরিয়ে দাঁত বসিয়ে দিলাম আমি। ও ব্যাথায় চিৎকার করতে করতে আমি দৌড়ে নিজেই দরজা খুলে দিলাম।
স্বাস নিয়ে অথইয়ের দিকে তাকালো মাহিয়া।
– এরপর কি হয়েছে আমি জানি না। জ্ঞান ফেরার পর দেখি আমি নিহালের গাড়িতে।
অথই, তোমাকে কোনো প্রকার ইনফ্লুয়েন্স করতে এই ঘটনা আমি বলি নাই। শাহেদ তোমাকে কি বলেছে তাও আমি জানি না। জানতেও চাই না। শুধু চাই তুমি ঘটনার দুটো পিঠই জেনে নাও। তারপর ডিসিশন তোমার। এ্যান্ড আই প্রে ইউ টেইক দা রাইট ডিসিশন। এর বেশী কিছুই বলবোনা আমি। অনেক সময় নিয়ে নিলাম তোমার অথই। কিছু মনে করোনা প্লিস। আজ আসি। তুমি বাসায় এসো। বাই।
এই বলে এক সম্পূর্ণ রুপে থমকে যাওয়া অথইকে রেখে কাউন্টারে বিল পরিষোধ করে কফিশপ থেকে বের হয়ে গেল মাহিয়া।
চলবে………