রুপকথা পর্ব ২
নিহাল কাবিন নামায় সই করার পর কাজি সাহেব বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার ঘোষণা দিলেন। সবার হাত এরপর দোয়ার জন্য উঠলো। নিহাল সেই মুহূর্তে মহান আল্লাহ্ র কাছে শুধু এইটুকু দোয়া করলো যে মাহিয়াকে ও যেন সুখি রাখতে পারে চিরজীবন।
মাহিয়ার কান্না এখন থেমে ও একটু স্বাভাবিক হয়েছে। আশপাশে সবাই হাসাহাসি করছে ওদের নিয়ে। কিছুক্ষণ পর জানান দেওয়া হলো যে বর আসছে রুমে। মাহিয়ার ডান পাশের জায়গাটা খালি করে দেওয়া হলো যাতে নিহাল এসে ওখানে বসতে পারে।
নিহাল মাহিয়ার পাশে এসে বসাতে মাহিয়া একটু কেপেঁ উঠলো। কম্পনটা অনুভব করলো নিহাল কিন্তু রিয়্যাক্ট করলো না। মাহিয়ার দিকে তাকালো না পর্যন্ত। ওকে নিজের মত গুছিয়ে ওঠার সময় দিলো। মাহিয়াও বুঝতে পারলো যে নিহাল কেনো ওর দিকে তাকাচ্ছে না। নিহালকে দেড় বছর ধরে চিনলেও গত ছয় মাসে ভালোভাবে ওকে জেনেছে মাহিয়া। নিহালের, চুপ থেকে অনেক কথা বলে ফেলার অভ্যাস আছে। এই চুপ থেকেই মাহিয়ার কান্না, মেন্টাল আনস্টেবিলিটি সব সামলেছে নিহাল আর তনু। ওর পাগলামিকে টলারেট করেছে ওরা। ওদের দুইজনের প্রতি মাহিয়া চির কৃতজ্ঞ থাকবে এই জন্য। তবে তাই বলে এই বিয়েটা নিহালের করা কি খুব জরুরী ছিল?
জামাই বউকে পাশাপাশি বসিয়ে শরবত খাওয়ানো থেকে নিয়ে যা যা রসম ছিল তা পুরণ করা হলো একে একে। তারপর দুপুরের খাবারের আয়োজনে বড়রা উঠে পড়ে লেগে গেলেন।
মাহিয়া আর নিহালের পাশে তখন ছিল ওদের বন্ধুবান্ধবের দল।
– সো নিহাল। কোরবান হয়ে গেলি তাহলে? তোর আজ থেকে জীবন শেষ। হাহাহা
– জীবন কেন শেষ হবে? আমাদের বান্ধবী জল্লাদ নাকি যে নিহালের জীবন শেষ করে দিবে?
– বউ জল্লাদ হলে তো জামাইরা বেচেই যেত। একবারে দাড় টেনে স্বামীর ফাসি হতো। কিন্তু বউরাতো জামাইদের তিলে তিলে মারে। একবারে মরতে দেয় না। কি বলিস শাওন? তোর তো দুই মাস ধরে এক্সপেরিয়েন্স হচ্ছে। টিনার অত্যাচার কেরম লাগে রে?
– কি যাতা বলিস রনি তুই? বাসায় যেয়ে মাইর খাওয়ানোর প্ল্যান করাচ্ছিশ নাকি?
ওরা যখন এইসব মজায় মেতে ছিল তার মাঝেরই কোনো এক ক্ষণে নিহাল আড়চোখে তাকালো মাহিয়ার দিকে। নিজের স্ত্রীকে দেখে মনে মনে মুগ্ধ হয়ে গেল ও। হালকা, ঘরোয়া সাজে অপরুপ সুন্দর লাগছে মাহিয়াকে। মেয়েটার চেহারায় অনেক মায়া খুজে পায় ও। আজও সেটা দেখতে পাচ্ছে নিহাল। তবে তার সাথে কিছুটা জড়তাও কি আজ দেখতে পাচ্ছে ওর চেহারায়? গুটিসুটি মেরে বসে থাকায় নিহালের মনে হলো একটু অস্বস্তি বোধ করছে মাহিয়া। তাই আস্তে করে ওকে বললো,
– বসতে কষ্ট হচ্ছে?
মাহিয়া হালকা করে মাথা নেড়ে না বুঝিয়ে দিলো। নিহাল সবার মাঝে আর কিছু বললো না তখন।
দুপুরের লাঞ্চের পর নিহালরা সবাই মাহিয়াদের বাসা থেকে বিদায় নিলো। যাওয়ার আগে মাহিয়া বাহিরে এসে শশুরবাড়ির সবাইকে সালাম করলো। নিহালের সাথে একবার শুধু চোখে চোখ পড়লো ওর। আর কিছু না।
গাড়িতে উঠে নিহাল নিজের বাসায় যাওয়ার পথে মগ্ন হয়ে পড়লো মাহিয়ার স্মৃতিচারণে।
মাহিয়াকে প্রথম নিহাল দেখেছিলো আজ থেকে প্রায় দেড় বছর আগে ভার্সিটির বসন্ত উৎসবে। আজও নিহালের স্পষ্ট মনে আছে চত্বরের মাঝে দাড়ানো মেয়েটার দিকে ওর চোখ আটকিয়ে যাওয়ার কথা। দুপুর তখন। সূর্য মোটামোটি মাথার ওপরে। নিহাল ভার্সিটির মূল চত্বরের এক পাশের ছাউনিতে বসে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলো। কালচারাল প্রোগ্রাম মাত্র শেষ হয়েছে। সেখানে নিহালের একটা সোলো পারফরমেন্স ছিল সেইবার। সেটাই শেষ করে এসে বসেছিল ও আর এরই মাঝে অথই আসলো ওর কিছু মেয়ে ফ্রেন্ডসদের নিয়ে।
– এই নিহাল তোর গান তো ফাটাফাটি হলো রে। আমাদের মন ভরায় দিসিশ তুই। সবার মুখে তোর গানেরই চর্চা হচ্ছে। পুরো দস্তুর সেলিব্রিটি হয়ে গেসিশ আজ তুই।
কানে কানে বললো,
-মেয়েরা তো এমনেই তোর পাগল, আজ আরও মাথা গেসে এগুলার।
তারপর অথই আবার জোড়ে কথা শুরু করলো,
-এখন তোর সাথে একটা ছবি না তুললেই নয়। আয়তো আমাদের সাথে একটা ছবি তোল, এফবি তে দিব।
অথইয়ের বান্ধবীদের মাঝে ছন্দাও ছিল। ওর ফোন হঠাৎ বেজে ওঠায় ছবি তোলা থামাতে হলো বাকিদের।
– হ্যালো, মাহিয়া? হ্যা আমিতো এইযে চত্বরেই। তুই কই? তুইও চত্বরে? কোথায় দেখতে পাচ্ছিনাতো। এতো মানুষরে বাবা! হ্যাঁ হ্যাঁ এইবার দেখসি। এই ডানে তাকা। হাত নাড়ছি আমি।
ছন্দা তারস্বরে এত জোড়ে কথাগুলো বলছিল যে নিহাল সহ বাকি সবার চোখ ছন্দা যাকে ডাকছে তার দিকে চলে গেল। টিয়ার মাঝে গোলাপি ফ্লোরাল প্রিন্টের শাড়িতে মোড়ানো একটা মেয়ে দাড়িয়ে আছে চত্বরের মাঝে। ছিপছিপে গড়নের মেয়েটার লম্বা চুলগুলো রোদে চিক চিক করছিলো। রোদ থেকে বাচঁতে এক হাত কপালে ছায়ার কাজ করছিলো ওর। হাত ভরা কাঁচের চুড়িগুলো নিহালের চোখ কাড়লো প্রথমে। ছন্দার ইশারায় এদিকে হাটা দিল মেয়েটা। বাকিরা চোখ সরিয়ে ফেললেও মেয়েটার দিকে কেন যেন তাকিয়ে রইলো নিহাল। চোখ সরাতে মন চাচ্ছিল না ওর।
হেটে আসতে আসতে একদুই বার শাড়ির সাথে পা বেজে যাচ্ছিলো মেয়েটার। ভিষণ বিরক্ত হয়ে কি যেন নিজের মাঝেই বিড়বিড় করছিলো ও। নিজের অজান্তেই নিহালের ঠোটে হাসি ছড়িয়ে পড়লো এটা দেখে। শাড়িতে অভ্যস্ত না এই মেয়ে তা বোঝাই যাচ্ছে।
কাছে এসে মেয়েটা একটা মিষ্টি হাসি দিল সবাইকে দেখে। ছন্দা পরিচয় করিয়ে দিল সবার সাথে ওর,
– গাইজ, এটা আমার ফ্রেন্ড মাহিয়া। ও ইংলিশ ডিপার্টমেন্টে পড়ছে। নাইন্থ সেমিস্টারে।
সবার সাথে পরিচয় হয়ে যখন নিহালের দিকে আসলো তখন মাহিয়া ওকে দেখে বললো,
– আপনার গানই তো মনে হয় শুনলাম কিছুক্ষণ আগে। খুব ভালো লেগেছে।
নিহাল কিছু বলতে যাবে এরই মাঝে ছন্দা কথা কাটলো,
– মাহিয়া, তনু কই? আমাদের স্টলগুলাও এখনো ঘুরা হয় নাই। খাবার সব শেষ হয়ে যাবে তো!
-নিচে দাড়িয়ে আছে ও। চল্।
-চল্ চল্। আচ্ছা নিহাল আসি, বাই।
নিহালের সামনে দিয়ে ছন্দার সাথে মাহিয়া নামের মেয়েটা চলে গিয়েছিল। নিহাল ওদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ছিল কতোক্ষণ তা পরে বুঝেছিল অথইয়ের ধাক্কায়।
– এই নিহাল, কখন থেকে ওইদিকে চেয়ে আছিস? কি আছে ওইদিকে?
নিহাল হেসে শুধু মাথা নেড়ে দিয়েছিলো সেইদিন।
এভাবেই নিহালের সাথে মাহিয়ার প্রথম পরিচয় হয়। সেই সময় নিহালের বিবিএ শেষের পথে। আর একটা সেমিস্টার বাকি ছিল ওর। পরের, মানে শেষের সেমিস্টারে একটা জেনারেল কোর্সে আবার মাহিয়ার সাথে দেখা হয় নিহালের। একই কোর্সে এনরোল হয় দুজন। সেই কোর্সে ওদের দুইজনেরই বন্ধুরা থাকায় বেশ মজায় কেটেছিল সময়টা। নিহালের মনে আছে মাহিয়াকে ও যতবারই দেখতো, ওর ততবারই ভালো লাগতো। মেয়েটার চোখদুটা আর হাসি একদম নজরকাড়া টাইপ ছিল নিহালের কাছে। নিহালের অবাক লাগত চিন্তা করে যে আজ পর্যন্ত যেখানে কোনো মেয়ে ওকে নিজের দিকে অনেক চেষ্টা করেও টেনে নিতে পারেনি, এখন সেই নিহালই নিজ থেকে কারোর প্রতি আকর্ষিত হয়ে যাচ্ছে। অবাক লাগতো এই ভেবে যে কিভাবে ও মাহিয়াকে আস্তে আস্তে নিজের মনের একটা জায়গার মালিক বানিয়ে দিচ্ছে।
ক্লাসে মাহিয়ার জন্য নিজের পাশের সিট টা রাখতো নিহাল। কিন্তু মাহিয়া এসে ওর বান্ধবী তনুর পাশেই বসতো। কিছুদিন এটা দেখে এক সময় ইচ্ছা করে নিহাল মাহিয়ার পরে রুমে ঢোকা শুরু করলো। মাহিয়া আর তনু বসার পর সুন্দর করে যেয়ে মাহিয়ার পাশে বসতো ও। শুধু দেড়টা ঘন্টা মাহিয়ার পাশে থাকার জন্য এগুলাও করেছে নিহাল। ব্যাপারটা অন্যদের নজরেও পড়েছিল। ওর বন্ধুরা দুই একবার বলেছেও,
-কি মামা? তুই আজকাল দেখি ফার্স্ট বেঞ্চার হয়ে গেসিশ? কি ব্যাপার বলতো?
নিহাল এদিক ওদিকের বাহানা দিয়ে ওদেরকে থামিয়ে দিত।
নিহালের ডিপার্টমেন্টের কিছু মেয়েরা নিহালের সাথে খুব চেষ্টা করতো ফ্লার্ট করার। মাহিয়া বোধহয় লক্ষ্য করেছিল ব্যাপারটা। একদিন বলে বসেছিল ও,
– আচ্ছা নিহাল, মেয়েগুলো তোমার পেছনে জোকের মতন লেগে থাকে, তোমার বিরক্ত লাগে না? আই মিন ওয়াই ডোন্ট ইউ গেট ইনগেজ্ড ওইথ সামওয়ান? তাহলেই তো এই ভ্রমরগুলো তোমার পিছ ছাড়বে। যারা আছে সবাইতো সুন্দর দেখতে। এদের মাঝেই তো কাউকে পছন্দ করতে পারো তুমি।
-নাহ্। এদের মাঝে একজনকেও ভালো লাগে না আমার। বেশী গায়ে পরা পাবলিক এরা। আজ আমাকে এপিলিং লাগছে তাই আমার পিছে ঘুরছে কাল তাদের কাছে আমার থেকেও সুদর্শন অন্য কাউকে লাগবে, তখন তার পিছে চলে যাবে।
-ওওও, তো তুমি সিরিয়াস কমিটমেন্টে বিশ্বাসী। ইন্টারেস্টিং।
-কেন? আমাকে দেখে সেটা মনে হয় না?
-না, ব্যাপারটা সেটা না। তুমি আসলে সব সময় এই মেয়েদের মাঝেই ঘিরে থাকো তো, তাই…
– তাই তুমি মনে করেছ আই এ্যাম কাইন্ড অফ আ প্লে বয়। হাহাহা। না, না, ডোন্ট ওয়ারি আমি মাইন্ড করছি না। যারা আমার ক্লোজ ফ্রেন্ড তারা বাদে সবার আমার ব্যাপারে এইটা ভাবাটাই স্বাভাবিক। বাট টুবি ক্লিয়ার, আমি সেরকম না। আমার কখনোই এমন কোনো গার্লফ্রেন্ড ছিল না কারণ আমি সিরিয়াসলি কোনো একজনের সাথে ইনভল্ভড হতে চাই।
-সো এখনো কেউ আসেনি তেমন, যাকে দেখে তোমার সিরিয়াসলি ইনভল্ভড হওয়ার ইচ্ছা জেগেছে?
নিহাল সেইদিন মাহিয়ার এই প্রশ্নের উত্তরে শুধু ওর দিকে চেয়ে থেকেছিল কিছুক্ষণ। তারপর হেসে মাথা নেড়ে না করে দিয়েছিল। ওর প্রতি এত কিছু অনুভব করার পরেও নিহাল মাহিয়াকে মুখ ফুটে কিছুই বলেনি তখন। ওর অনুভূতি ব্যক্ত করেনি। কারণ ও জানতো মাহিয়ার তেমন কোন ফিলিংস ওকে নিয়ে নেই। তাই নিজের ভাবনাগুলো একসাইডে রেখে একটা নিবিড় বন্ধুত্বের সম্পর্কই রেখেছিল ও।
গাড়ি বাসার দোড়গোড়ায় পৌছতেই নিহালের অতীতের স্মৃতির সুতা কাটলো। নিজের রুমে ঢুকে দেখলো ওটাকে সাজানো হচ্ছে। একটা মলিন হাসি দিয়ে বের হয়ে আসলো ওখান থেকে নিহাল। জীবনে প্রথমবার যেই মেয়েটাকে ভালবেসেছিল আজ সেই ওর স্ত্রী। আজ তার সাথেই ওর বাসর রাত। তবে এই বাসর রাতের মহিমা নিহালের কাছে অনেক বড় হলেও মাহিয়ার কাছে নেই।
দুপুরের মধ্যেই বান্ধবীদের সাথে পার্লারে চলে গেল মাহিয়া। মেকাপ আর্টিস্ট যখন ওর কাছে জিজ্ঞেস করলো ওর কোনো পছন্দের সাজ আছে নাকি, মাহিয়া নির্লিপ্তভাবে জানিয়ে দিল নেই। একভাবে সাজালেই হবে। কিন্তু যখন সাজটা শেষ হলো, মাহিয়া এতো বেশী রকমের সুন্দর লাগছিল যা দেখে পার্লারের বাকি সদস্য এবং ক্লাইন্টসরাও ফিরে ফিরে তাকাচ্ছিলো ওর দিকে। মাহিয়ার এক বান্ধবীতো বলেই ফেললো যে নিহাল সকালে কোরবান না হলেও রাতে মাহিয়াকে দেখে কনফার্ম কোরবান হয়ে যাবে।
হলোও তাই। রাতের প্রোগ্রামে স্টেজে বসা
মাহিয়াকে দেখে নিহাল থমকে গিয়েছিলো। এতো বিয়েতে বউ দেখেছে ও তবে মাহিয়ার মতন এত সুন্দর কাউকে লাগেনি ওর কাছে। মাহিয়া ওর নিজের বউ বলেই এরকম লাগছে কি না কে জানে।
মাহিয়া চুপ করে বসে ছিল স্টেজে। কেউ এসে দেখা করলে শুধু মাথা উঠিয়ে সালাম করছিল আর হাসছিল। কিন্তু এটা মাহিয়ার আসল হাসি না। নিহাল যেই হাসির প্রেমে দিনে দিনে পড়েছিলো সেটা এই হাসিটা না।
সেই স্বর্গীয় হাসিটা ওই ভয়ানক রাতেই শেষ হয়ে গেছে। তারপর থেকে আজ অব্ধি সেই হাসিটা মাহিয়ার ঠোট ছয়নি। তবে নিহালও ঠেনে নিয়েছে, সেই হাসি ও মাহিয়ার ঠোটে আবার ফিরিয়ে এনেই ছাড়বে।
অনুষ্ঠান শেষ হতে হতে বেশ রাত হয়ে গেল। মেয়ে বিদাইয়ের সময় রোখসানা কান্নায় ভেঙে পড়লেন মাহিয়াকে জড়ায় ধরে। মাহিয়ারও অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়লো বাবা মার কাছে থেকে বিদায় নিতে গিয়ে। নিহালের বড় বোন, নামিরাকে নিহাল চোখের ইশারায় মাহিয়াকে সামলাতে বললো। নামিরাই সাবধানে বউকে গাড়িতে বসিয়ে নিজে এক পাশে বসে গেল। শশুর শাশুড়ির থেকে বিদায় নিয়ে মাহিয়ার আরেক পাশে বসলো নিহাল। সামনে নাবিল, মাহিয়ার দেবর বসলো ড্রাইভারের পাশে। চলতে শুরু করলো গাড়ি।
মাহিয়াকে শশুরবাড়িতে বেশ আদরের সাথে স্বাগত জানানো হলো। নিহালের বাবা নেই তাই ওর মা, আয়েশাই সবকিছু নিজ হাতে করেছেন। এই বিয়েটাও তার নিজের উদ্যগেই দেয়া। মাহিয়া গত বছর নিহালের সব বন্ধুদের সাথে বাসায় এসেছিল ঘুরতে।
সেইবার আয়েশার সাথে অনেক কথা হয়েছিল মাহিয়ার। কথার মাঝেই মাহিয়া জানতে পেরেছিলো আয়েশার শারিরিক জটিলতার কথা। তখন ও নিজের বাবার নাম সাজেস্ট করেছিল একবার দেখানোর জন্য। আয়েশা ড: মিলনের কাছে গিয়েছিলেন এবং সঠিক চিকিৎসায় বেশ শান্তি পেয়েছিলেন তিনি। মেয়ের বন্ধুর মা শুনে ড: মিলন ও অনেক বেশি কেয়ার করেছেন আয়েশার। এরপর থেকে সুন্দর একটা সম্পর্ক গড়ে উঠে এই দুই পরিবারের মাঝে।
আয়েশা, নিহালের বিয়ের জন্য এখনি কোনো তাড়ায় ছিলেন না। তবে কয়েকদিনের ব্যবধানে দুইটা ঘটনা হলো, যার কারণে তিনি এই ডিসিশনটা নিয়ে নিলেন।
গত দুইমাস আগে এক এ্যাপয়েন্টমেন্টে মাহিয়ার বাবা বলেছিলেন আয়েশাকে যে তিনি মাহিয়ার বিয়ে দেবার জন্য ইচ্ছুক। কোনো সুযোগ্য পাত্র থাকলে আয়েশা যেন তাকে জানান। পরিচিতদের মাঝে অনেককেই বলেছেন তিনি। আয়েশাও তাদের মাঝে একজন।
তারই ঠিক দুই সপ্তাহ পর একদিন নিহালের স্টাডি টেবিল পরিষ্কার করতে গিয়ে ল্যাপটপে চোখ পরে আয়েশার। ডিসপ্লেতে একটা ফোল্ডার আলাদা করে রাখা।
ফোল্ডারটার নাম “মাহিয়া”।
কৌতুহলবশতই সেইটা খোলেন তিনি। এবং যা দেখেন তাতে অবাক হয়ে যান। ফোল্ডারটা জুড়ে শুধু মাহিয়ার ছবি। বিভিন্ন সময় তোলা। কিছু ছবিতে মাহিয়া ক্যামেরার দিকে তাকানো থাকলেও বেশিরভাগ ছবিগুলোই ওর অগচরে তোলা হয়েছে। শেষের ছবিটা হাতে আঁকা। মাহিয়ার হাসিটাকে অসাধারণভাবে তুলে ধরেছে নিহাল। হ্যাঁ ছবিটা নিহালই এঁকেছে। এটা দেখার পর আয়েশার সন্দেহের কোনো অবকাশ রইলো না। ছেলের পছন্দ বুঝে গিয়েছিলেন তিনি।
সেই রাতেই নিহালকে নিয়ে আলোচনায় বসেছিলেন আয়েশা। ছেলের পছন্দ নিয়ে কথা ওঠালে প্রথমে না করছিলো নিহাল। কিন্তু ল্যাপটপের ঘটনা বলার পর নিহাল মাথা নিচু করে চুপ হয়ে যায়। আয়েশা ছেলের চুপ্পিতেই যা বোঝার বুঝে গিয়েছিলেন।
পরেরদিন সকালে ড: মিলনকে ফোন দিয়ে তাদের বাসায় যাওয়ার অনুমতি চান তিনি। মাহিয়াদের বাসায় যেয়ে আয়েশা যখন সরাসরি নিহালের সাথে মাহিয়ার বিয়ের প্রস্তাব রাখেন তখন ড:মিলন এবং ড:রোখসানা খুবই খুশি হন। তাদের থেকে কোনো আপত্তি না থাকলেও মাহিয়ার মতামত জেনে পরে আয়েশাকে জানাবেন বলে দেন তিনারা। এরপর সেইদিনটা পার হয়ে যায়, মাহিয়াদের বাসা থেকে কোনো খবর না আসায় একটু চিন্তিত হয়ে পড়েন আয়েশা। তবে দ্বিতীয়দিন সকালে ফোন আসে ড: মিলনের। মাহিয়ার রাজি হওয়ার সুখবর জানান তিনি।
সেই থেকে শুরু হয় বিয়ের প্রিপারেশন যা আজ যেয়ে শেষ হয়েছে। আজ মাহিয়া তার বাড়ির বউ হয়ে এসেছে। নিহালের জীবনসঙ্গী হয়ে গেছে মাহিয়া।
চলবে…