বইঃ সাতকাহন (দুই খন্ড)
লেখকঃ সমরেশ মজুমদার
ধরণঃ সামাজিক জীবনধর্মী উপন্যাস
প্রকাশকঃ আনন্দ পাবলিশার্স
অনেকটা সময় নিয়ে নিলাম, প্রিয় বই বা পছন্দের বই নিয়ে লিখতে। ব্যস্ততার সাথে সাথে ঠিক কোন বইটিকে তালিকায় আনবো তা ভাবতেও কিছুটা সময় গড়িয়ে গেল। যে বইটি নিয়ে আজ লিখবো, তা নিয়ে আসলে খুব বেশী ভূমিকার প্রয়োজন নেই। কেননা, বই প্রেমী সবাই এই উপন্যাসটির সাথে বেশ ভালোভাবে জড়িত।
বইটির সাতকাহনে যাওয়ার আগে আমি এই লেখকের লেখা নিয়ে দুই একটি কথা বলতে চাই। জলপাইগুড়ি আর ডুয়ার্সের চা-বাগানের প্রেমে আমাকে এই লেখক ফেলেছিলেন। তাঁর লেখা প্রতিটি উপন্যাসে ডুয়ার্সের চা-বাগানের বর্ণণায় আমি যেন চোখ বন্ধ করেও সামনে তা দেখতে পেতাম। একসময়ে এই ডুয়ার্স আমার কাছে স্বপ্নের জায়গায় রূপ নিয়েছিল।
এবারে আসি আমার আজকের বই সাতকাহনে। এমন কোন মেয়ে নেই, যে কিনা কিশোরী বেলা থেকে তারুণ্যের মধ্যবর্তী সময়ের কোন এক ফাঁকে এই সাতকাহন উপন্যাসের দীপা চরিত্রের প্রেমে পড়েনি। আর শুধু মেয়েদের কথাই বলছি কেন, প্রতিটি বইপ্রেমী ছেলেও দীপাবলির ব্যক্তিত্বের প্রতি প্রবল ভাবেই ঝুঁকেছিল। এই বই পড়ার পর কেউ একবারের জন্যও দীপা হতে চায়নি, সেকথা কিন্তু অস্বীকার করবে না।
সমরেশ মজুমদারের “সাতকাহন”। যে উপন্যাসটি পড়ে প্রথম আমি ভাবতে শিখি। বুঝতে শিখি সত্যিকারের মেয়ে থেকে নারী হয়ে ওঠার প্রগাঢ়তা। জলপাইগুড়ির ডুয়ার্সের চা বাগান, আমার মন আর মাথায় এমনভাবেই গেঁথে গিয়েছিল যে, ওটা আমার স্বপ্নের বাগানে পরিণত হয়েছিল। একটা সুন্দর মসৃণ আর প্রাণবন্ত শৈশব যে কতিপয় কিছু ভুলের মাশুলে, গড়ে উঠার আগেই ভাঙার চক্রে ঘুরপাক খায় তা এই উপন্যাস থেকে খুব স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়।
দীপাবলি বন্দ্যোপাধ্যায়, উপন্যাসটির মূল নারী চরিত্র। ‘সাতকাহন’ উপন্যাসটির বিস্তৃতি, সূচনা ও প্রবাহধারা সবই এই চরিত্রকে ঘিরে। দীপা চরিত্রটি বাঙালী সেইসব নারীদের প্রতিনিধি, যাদেরকে পুরুষ শাসিত সমাজে কখনো সংস্কার, কখনো শাসন, কখনোবা দুর্বল দেখিয়ে অন্ধকার কালো কূপে ছুড়ে ফেলা হয়। কিন্তু, দীপা দেখিয়েছিল কিভাবে এসব হতাশা, চোখ রাঙানি আর কুসংস্কারকে উপড়ে ফেলে সামনে এগিয়ে যেতে হয়।
নিজের মাসী মেসো, অঞ্জলি আর অমরনাথকেই মা-বাবা জেনে বড় হতে থাকা দীপা খুব নাজুক মুহুর্তে, জানতে পারে তার আসল জন্ম রহস্য। এরপর মাত্র ১১ বছরে রুগ্ন এক লোকের সাথে বিয়ে, মাত্র এক রাতের সধবা জীবনযাপন। তারপর বৈধ্যব্যের কষাঘাতে বিনা নোটিশে জীবনের ছবি পালটে যাওয়া। বাবা অমরনাথকে হারানো, জীবন সংগ্রামে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করা, তারইমাঝে একটু ভালোবাসার ছোঁয়া আবার তা হারিয়ে যাওয়া। এভাবেই এগিয়ে গিয়েছে কাহিনীকারের কাহিনী।
বাস্তব জীবনের এক নির্মম সত্যের বিন্যাস ছিল এই উপন্যাসে। লেখক তাঁর কলমের আঁচড়ে তা বুঝাতে সক্ষম হয়েছেন পূর্ণ মাত্রায়। জীবনের চড়াই-উতরাই, উত্থান-পতন, পাওয়া না পাওয়ার সিঁড়িপথ ধরে উপরে ওঠা আর নামার এক দারুণ উদাহরণ ছিল দীপার জীবন। যা অনেক মেয়েদেরকেই সামনে এগিয়ে যাওয়ার সাহস জুগিয়েছে।
সাতকাহন প্রথম ও দ্বিতীয়, দুইটি খন্ডের এই বই আমি দুইবার পড়েছি। দুই সময় ও বয়সে পড়েছি। দুবারের অনুভূতি ছিল ভিন্ন ও অনবদ্য। প্রথমবার পড়ে নিজেকে দীপার জায়গায় ভেবে নিতে একটুও দেরী করিনি। কিন্তু পরবর্তীতে দীপার নেয়া অনেক সিদ্ধান্ত আর পদক্ষেপের সাথে একমত হতে পারিনি। সে যাইহোক, পাঠক হিসেবে একেকজনের একেক মত বা ভাবনা আসতেই পারে। তবু এই বই অসাধারণ একটি উপন্যাস, যা জীবনে ভাবনার খোরাক জোগায়।
#সোমাদত্ত
………….
….
সাতকাহন উপন্যাসের চরিত্র
আমরা যারা নাইন্টিজ এর জেনারেশনের তাদের কাছে কমবেশি সাতকাহন ভীষণভাবে পরিচিত।ঐ সময়টায় স্কুলের বাইরে দুইটা কাজ আমাদের সারাক্ষণ ধ্যান জ্ঞান থাকত-এক খেলাধুলা,দুই বই পড়া।সেই সময়টায় ইন্টারেন্ট আর নেপচুন আমাদের কাছে সমান দুরত্বে ছিল।তো অন্যসবার মত আমিও স্কুলেই সাতকাহন পড়ে ফেলি।পড়তে শুরু করার পর থেকে শেষ করা পর্যন্ত এক অদ্ভুত মানসিক পরিবর্তন চলে আসে ভিতরে,বাইরে অন্যসব ঠিক ঠাক চলছে কিন্তু ভিতরে ভিতরে এক অদ্ভুত ভাঙ্গা গড়া চলছে,আর তা অবশ্যই দীপাবলীকে নিয়ে।তখন গল্পের বই এর সাতকাহন সম্পুর্ণ উধাও,মাথার ভিতর একটা জীবন্ত সাতকাহন ডালপালা মেলে বৃক্ষের আকার ধারণ করেছে।সেখানে বৃষ্টি হয়,রোদ উঠে।আমার দীপাবলির জন্য ভীষণ মন খারাপ হয়,মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে যায়। মাঝে মধ্যে রাস্তায় হুটহাট দেখা মেয়েদের সাথে দীপাবলীকে মিলিয়ে দেখি।কারো চোখ মেলে ত,নাক মেলে না।চুল মেলে তো ,হাইট মেলে না।সে এক ভারি মুশকিল সিচুয়েশন। ঠিক ঠাক দীপাবলীর মত একজনকেও পুরো মফস্বল সার্ভে করেও পাওয়া যায় না।ভিতরে ভিতরে এতকিছু হচ্ছে কিন্তু বাইরে কাউকে কিচ্ছু বুঝতে দিচ্ছি না।অনেকটা বুক পকেটে সমুদ্র বয়ে বেড়ানোর মত।ব্যাপারটা এমন আকার ধারণ করেছিল যে চোখ বন্ধ করলে আমি জলপাইগুড়ির চা বাগানে দীপাবলির স্পর্শ করা চায়ের পাতার ঘ্রাণ পেতাম।দীপাবলির শাড়ির আচল এসে আমার চোখে মুখে ছুয়ে যেত।সময় পেরিয়েছে অনেক কিন্তু এখনো এত ব্যস্ত জগতের সকল কোলাহলের মধ্যেও কখনো না কখনো হুট করেই কয়েক মুহুর্তের জন্য দীপাবলি সামনে এসে দাঁড়ায়।আবার হুট করেই মিলিয়ে যায়।মফস্বল পেরিয়ে শহর,এরপর রাজধানী কিন্তু ফলাফল শূন্য,আজও পুর্ণ দিপাবলির সাথে দেখা হল না।তবে বুকের মধ্যে একটা ক্ষীণ আশা সবসময় নিভু নিভু করে জ্বলতে থাকে,হয়তো কোন একদিন পথের মাঝে আমাদের দেখা হয়ে যাবে,কথা হবে চায়ের কাপে।সেইদিনটা আমার আর দীপাবলির!
……….
………..
সাতকাহন উপন্যাসের চরিত্র দীপাবলি
আমি তখন ক্লাস নাইনে পড়ি, সমরেশ মজুমদারের “সাতকাহন” পড়ি।অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি একজন মেয়ে হয়েও দীপাবলি চরিত্রটা আমার কাছে বিরক্তিকর লেগেছিল। আমার কাছে মনে হয়েছিল দীপাবলির সবটাতেই বেশী বেশী। এত অহংকার কেন?একটু নত হলে,একটু আপোষ করলে কি হয়?
দীর্ঘ ২০ বছর পর বইটা আবার পড়লাম। কিন্তু কি অদ্ভুত!!! এখন এই দীপাবলি চরিত্রটাই কি ভীষণ ভালো লাগলো…….
এখন বুঝি সেটা আসলে দীপাবলির অহংকার ছিল না, ছিল আত্মসম্মান।
দীপাবলির চরিত্রের দৃঢ়তা,সততা,আপোষহীন মনোভাব আর আত্মনির্ভরশীলতা কি দারুনভাবেই না মন টাকে নাড়া দিল।
আমার ধারণা অনেক মেয়েই হয়তো সাতকাহন পড়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাবে,” আহারে,আমি যদি দীপাবলির মতো হতে পারতাম!”
কিন্তু কয়জন দীপাবলি হতে পারে?কয়জন মেয়ে পারে দীপাবলির মত নিজের আত্মসম্মান বজায় রেখে, কারো উপর নির্ভরশীল না হয়ে নিজের মত করে বাঁচতে????
অনেকেই হয়তো পারে।
কিন্তু বেশিরভাগ মেয়েই নিজের পরিবারের-সমাজের কথা ভেবে, নিজের সেই যোগ্যতা আর মেধা থাকা স্বত্তেও শুধুমাত্র আপনজনদের সুখের কথা ভেবে অথবা সবাই কি বলবে এটা ভেবে নিজের স্বপগুলো কে জলাঞ্জলি দেয়, নিজের আত্মমর্যাদা কে বিসর্জন দেয়।
কিন্তু নিজের আত্মসম্মান-স্বপগুলো কে হারিয়ে এভাবে বেঁচে থাকাটাকে কি আসলে বেঁচে থাকা বলে?
পরিবারের ভালোর জন্য, পরিবারের মানুষগুলোর সুখের দিকে তাকিয়ে মেয়েটা হয়ত হাসিমুখে সারাটাজীবন কাটিয়ে দেয়।কিন্তু মেয়েটার এই হাসির আড়ালে তার চোখের পানি,তার শূন্যতা, তার হাহাকার গুলো কি কেউ দেখতে পায়?
লেখাঃ সুমাইয়া চৈতী
……
………..
সাতকাহন রিভিউ
সাতকাহন
পাঠ_প্রতিক্রিয়া
আংরাভাসা নদীর তীরে চা বাগানের কোয়ার্টারে সন্ধ্যাবেলায় গাছের উঁচু ডাল থেকে চাঁপা ফুল তুলে আর অন্ধকার ভোরে ছড়িয়ে থাকা শিউলি ফুল কুড়িয়ে বালিকাটির গল্প শুরু হয়েছিল। সমবয়সী বালক বন্ধুদের সাথে নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে হাতির তাড়া খেয়ে ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌড়ে পালাতে পারলেও জীবনের চরম নিষ্ঠুরতা থেকে তো সবাই পালাতে পারে না। মাত্র এগারো বছর বয়সে বিকৃত মানসিকতার দুশ্চরিত, লম্পট এক প্রভাবশালীর প্রতাপের বলী হয়ে তার অসুস্থ পুত্রের বধু হয়ে তাকে ছাড়তে হয় চা বাগান। কিন্তু একদিন পরেই সে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয় আবার সেখানে। পরের দিন সংবাদ আসে তথাকথিত স্বামীটি না ফেরার দেশে চলে গেছে মেয়েটিকে একরাশ স্বস্তি দিয়ে। কিন্তু শুধুমাত্র বিয়ে নামের একদিনের পুতুল খেলায় অকাল বৈধব্য লেখা হয়ে যায় তার ললাটে। ততক্ষণে সে জেনে গেছে আরও একটি নির্মম সত্য, যাদেরকে বাবা মা বলে জানতো এতকাল তারা তার জন্মদাতা জন্মদাত্রী নয়।
এমন নিষ্ঠুর সত্য আর আঘাতে ক্ষত বিক্ষত হতে হতেই অন্ধকার আর কুসংস্কারাচ্ছন্ন চা বাগান থেকে স্বাধীনচেতা দীপাবলী পৌঁছে যায় ভারতবর্ষের সর্বোচ্চ সরকারি চাকুরী আই আর এস পদে। এরজন্য তাকে পাড়ি দিতে হয়েছে এক ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ উত্তাল পথ। হারিয়ে গেছে তার শৈশবের প্রিয়জনরা তার জীবন থেকে। একা, একদম একা শুধুমাত্র প্রবল জেদ আর দৃঢ় প্রতিজ্ঞা দীপাবলীকে সমাজের সম্মানজনক অবস্থানে পৌঁছে দিলেও স্বাভাবিক জীবন সে কখনোই পায় না। চাকুরী জীবনের পদে পদে কর্মকর্তাদের দুর্নীতি, নৈতিক অবক্ষয় আর স্খলনের দৌরাত্ম্য সংগ্রামী নীতিবাদী দীপাবলীকে আরও বিপর্যস্ত, আরও একা করে দেয়। আবার বিয়ে করে ব্যক্তিজীবনের একাকীত্ব দূর করতে চাইলেও সেখানেও মানিয়ে নিতে পারে না সে। নিজেকেই প্রশ্ন করে, সে কি অসামাজিক? সে কি অস্বাভাবিক? তার জীবনে আবার নেমে আসে সেই একাকীত্ব, সেই নিঃসঙ্গতা।
‘দীপাবলী’ শুধু গল্পের চরিত্র নয়, দীপাবলী একটি লড়াইয়ের নাম, আদর্শের নাম, প্রেরণার নাম। দীপাবলী আমাকে বারবার ভাবায়। হৃদয়ের কোথায় যেন ভীষণভাবে ছুঁয়ে যায়। তাকে রক্তমাংসের মানুষ বলে
ভ্রম হয়। খুব, খুব আপন মনে হয় দীপাবলীকে।
অনেকদিন পরে সমরেশ মজুমদারের ‘সাতকাহন’ পুরোটা পড়ে আবারো সেই পুরনো দুঃখবোধ এলো, কলকাতার বা ভারতের লেখকেরা যে সত্য, সরকার-সমাজের দুর্নীতি আর কূপমণ্ডূকতার যে চিত্র নিঃসংকোচে তুলে ধরতে পারেন আমরা সেটা পারি না। আমাদের ‘হারাই হারাই, সদা হয় ভয়’। সর্বত্র নিষেধাজ্ঞা আর কঠোর আইন কানুনের শৃঙ্খল আমাদের চারপাশে বেড়ি হয়ে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে দেয়া।
এ কারণেই দীপাবলীর মতো চরিত্র আমাদের সাহিত্যে তৈরি হয় না। এমনকি কোন দৃঢ়চেতা নায়ক চরিত্রও নয়। নমনীয় কমনীয় রমণীয় নারী চরিত্র আর বাউণ্ডুলে, খামখেয়ালি পুরুষ চরিত্রগুলোই আমাদের লেখকেরা সৃষ্টি করেন তাদের লেখায়। এমন নির্দোষ চরিত্রের আড়ালে নিজেরা নিরাপদ বলয়ে অবস্থান গড়ে নেন। আমাদের দেশে এরাই জনপ্রিয়তা পায়।
‘সাতকাহন’ বারবার পড়েও আবার পড়ি। প্রতিবার নতুন করে আবিষ্কার করি বইটিকে। নতুন ভাবনায় ঋদ্ধ হই আবার।
……….
………….
সাতকাহন রিভিউ ২
পাঠ_প্রতিক্রিয়া
আংরাভাসা নদীর তীরে চা বাগানের কোয়ার্টারে সন্ধ্যাবেলায় গাছের উঁচু ডাল থেকে চাঁপা ফুল তুলে আর অন্ধকার ভোরে ছড়িয়ে থাকা শিউলি ফুল কুড়িয়ে বালিকাটির গল্প শুরু হয়েছিল। সমবয়সী বালক বন্ধুদের সাথে নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে হাতির তাড়া খেয়ে ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌড়ে পালাতে পারলেও জীবনের চরম নিষ্ঠুরতা থেকে তো সবাই পালাতে পারে না। মাত্র এগারো বছর বয়সে বিকৃত মানসিকতার দুশ্চরিত, লম্পট এক প্রভাবশালীর প্রতাপের বলী হয়ে তার অসুস্থ পুত্রের বধু হয়ে তাকে ছাড়তে হয় চা বাগান। কিন্তু একদিন পরেই সে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয় আবার সেখানে। পরের দিন সংবাদ আসে তথাকথিত স্বামীটি না ফেরার দেশে চলে গেছে মেয়েটিকে একরাশ স্বস্তি দিয়ে। কিন্তু শুধুমাত্র বিয়ে নামের একদিনের পুতুল খেলায় অকাল বৈধব্য লেখা হয়ে যায় তার ললাটে। ততক্ষণে সে জেনে গেছে আরও একটি নির্মম সত্য, যাদেরকে বাবা মা বলে জানতো এতকাল তারা তার জন্মদাতা জন্মদাত্রী নয়।
এমন নিষ্ঠুর সত্য আর আঘাতে ক্ষত বিক্ষত হতে হতেই অন্ধকার আর কুসংস্কারাচ্ছন্ন চা বাগান থেকে স্বাধীনচেতা দীপাবলী পৌঁছে যায় ভারতবর্ষের সর্বোচ্চ সরকারি চাকুরী আই আর এস পদে। এরজন্য তাকে পাড়ি দিতে হয়েছে এক ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ উত্তাল পথ। হারিয়ে গেছে তার শৈশবের প্রিয়জনরা তার জীবন থেকে। একা, একদম একা শুধুমাত্র প্রবল জেদ আর দৃঢ় প্রতিজ্ঞা দীপাবলীকে সমাজের সম্মানজনক অবস্থানে পৌঁছে দিলেও স্বাভাবিক জীবন সে কখনোই পায় না। চাকুরী জীবনের পদে পদে কর্মকর্তাদের দুর্নীতি, নৈতিক অবক্ষয় আর স্খলনের দৌরাত্ম্য সংগ্রামী নীতিবাদী দীপাবলীকে আরও বিপর্যস্ত, আরও একা করে দেয়। আবার বিয়ে করে ব্যক্তিজীবনের একাকীত্ব দূর করতে চাইলেও সেখানেও মানিয়ে নিতে পারে না সে। নিজেকেই প্রশ্ন করে, সে কি অসামাজিক? সে কি অস্বাভাবিক? তার জীবনে আবার নেমে আসে সেই একাকীত্ব, সেই নিঃসঙ্গতা।
‘দীপাবলী’ শুধু গল্পের চরিত্র নয়, দীপাবলী একটি লড়াইয়ের নাম, আদর্শের নাম, প্রেরণার নাম। দীপাবলী আমাকে বারবার ভাবায়। হৃদয়ের কোথায় যেন ভীষণভাবে ছুঁয়ে যায়। তাকে রক্তমাংসের মানুষ বলে
ভ্রম হয়। খুব, খুব আপন মনে হয় দীপাবলীকে।
অনেকদিন পরে সমরেশ মজুমদারের ‘সাতকাহন’ পুরোটা পড়ে আবারো সেই পুরনো দুঃখবোধ এলো, কলকাতার বা ভারতের লেখকেরা যে সত্য, সরকার-সমাজের দুর্নীতি আর কূপমণ্ডূকতার যে চিত্র নিঃসংকোচে তুলে ধরতে পারেন আমরা সেটা পারি না। আমাদের ‘হারাই হারাই, সদা হয় ভয়’। সর্বত্র নিষেধাজ্ঞা আর কঠোর আইন কানুনের শৃঙ্খল আমাদের চারপাশে বেড়ি হয়ে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে দেয়া।
এ কারণেই দীপাবলীর মতো চরিত্র আমাদের সাহিত্যে তৈরি হয় না। এমনকি কোন দৃঢ়চেতা নায়ক চরিত্রও নয়। নমনীয় কমনীয় রমণীয় নারী চরিত্র আর বাউণ্ডুলে, খামখেয়ালি পুরুষ চরিত্রগুলোই আমাদের লেখকেরা সৃষ্টি করেন তাদের লেখায়। এমন নির্দোষ চরিত্রের আড়ালে নিজেরা নিরাপদ বলয়ে অবস্থান গড়ে নেন। আমাদের দেশে এরাই জনপ্রিয়তা পায়।
‘সাতকাহন’ বারবার পড়েও আবার পড়ি। প্রতিবার নতুন করে আবিষ্কার করি বইটিকে। নতুন ভাবনায় ঋদ্ধ হই আবার।
………
………..
সাতকাহন সমরেশ মজুমদার price
বইঃ সাতকাহন(অখন্ড)
লেখকঃ সমরেশ মজুমদার
প্রকাশকঃ আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড,কোলকাতা।
প্রচ্ছদঃ অনুপ রায়
পৃষ্ঠাঃ ২৮৮
মূল্যঃ ৪০০ টাকা।।
সাতকাহন আমার কাছে শুধু একটা বই নয়,সম্পূর্ন জীবন। দীপাবলি বা দীপা শুধু সাতকাহনের কোন চরিত্র নয়, দীপাবলি আমি নিজেই। আমার মত প্রতিটি মেয়ের মধ্যে বাস করে দীপাবলি।
যতবার জীবনের কাছে হেরে যেতে বসেছি ততবার সাতকাহনকে আশ্রয় করে জেগে উঠেছি বারংবার।আজিমপুর থেকে বিডিআর ৩নং গেটে টিউশনি সেরে রাত ৮ টায় হেঁটে মেসে ফিরতে একটুও খারাপ লাগেনি ,শুধু সাতকাহন পড়ে প্রথম যৌবনে যে আত্মবিশ্বাস গড়ে উঠেছিল তার জোরে।
উত্তর বাংলার চা -বাগান, গাছগাছালি এতটাই জীবন্ত এ বইয়ে, চোখের সামনে ঘটতে থাকে যেন সব। একটা দীপাবলি- তাকে ঘিরে আবর্তিত হয়েছে পঞ্চাশে কোলকাতা, কো-এডুকেশন কলেজ,মেয়েদের হোস্টেল, কফি হাউস, সমকালীন ছাত্র রাজনৈতিক আন্দোলনের ছবি।ছোটবেলা থেকে বাবা মা বলে যাদের জেনে এসেছে হঠাৎ করে তা মিথ্যে হয়ে গেলে, স্বার্থ মাথা তুলে দাঁড়ালেও নীতির কাছে অনড় দীপাবলি।আপোষ করেনি জীবনের কোন ক্ষেত্রে। তার জন্য হয়ত দীপাবলিকে হারাতে হয়েছে অনেক কিছু,কিন্তু বেলাশেষে নিজের প্রতিবিম্বের সামনে দাঁড়াতে চোখ নামিয়ে নিতে হয়নি। অনেকের কাছে সাতকাহন দ্বিতীয় খন্ড ভালো লাগেনি, দীপাবলির আত্মবিশ্বাসকে জেদ মনে করেছেন অনেকে।কিন্তু আমার কাছে সাতকাহনের কোন কিছুই খারাপ লাগেনি। বরং দীপাবলির আত্মসম্মান বোধের কাছে হেরে গেছে পুরুষশাসিত মানসিকতা। সাতকাহনের প্রতিটা কথা,বর্ননা ভালো লেগেছে।তবে লেখক এখান যে কথাটা দিয়ে শেষ করেছেন তা আমাদের যুগ যুগ ধরে লালন করা উচিত।” বাইরে পুরুষদের সঙ্গে লড়লেই যা পাওয়া যায়না,নিজের মনের অন্ধকার সরালে তা পাওয়ার পথ পরিষ্কার হয়।” সত্যিই যেন আমাদের আজ নিজের মনের অন্ধকার সরানো উচিত,তার পথ দেখাবে যুগে যুগে সাতকাহন।
….
…………
…………
বুক রিভিউ সাতকাহন সমরেশ মজুমদার
বাংলা উপন্যাস সাতকাহনের রিভিউ আগে অনেকেই করেছেন তবুও আমার নিজস্ব দৃষ্টি ভংগী থেকে নতুন কিছু লেখার ক্ষুদ্র এই প্রচেষ্টা আশা করি পাঠকদের নিরাশ করবে না।
গল্পের পটভূমি যদিও ভারতবর্ষ কিন্তু গল্পটা সার্বজনীনতা পেয়েছে একটি মেয়ের অদম্য সংগ্রামের কারনে। স্থান,কাল পাত্র ভেদ করে গল্পের নায়িকা হয়ে উঠেছেন প্রতিটা স্বাধীনচেতা মানুষের মুখপাত্র। ব্যক্তি স্বাধীনতা বা অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে গল্পের নায়িকা দীপাবলি একে একে বিসর্জন দিয়েছেন তার ভালবাসার মানুষদের।এই গল্প পড়ার পর প্রতি টা মেয়ে হয়ে উঠে এক-একজন দীপাবলি।
উত্তর বাংলার চা বাগানে বেড়ে উঠা ছোট্ট মেয়ে দীপাবলি প্রকৃতিকে দেখেছে কাছ থেকে। সকাল বেলা শিউলি ফুল কুড়ানোর বর্ণনা যে কাউকে নস্টালজিক করে দিবে।তিন বন্ধু মিলে দূরন্তপনা করা দীপাবলির ভাবনার রাজ্যে হঠাৎ উদয় হয় রমলা সেন নামক আধুনিক স্বাধীনচেতা মহিলা।দীপাবলি কম বেশি রমলা সেন দ্বারা অনুপ্রানিত।জীবনকে নতুন ভাবে দেখার শুরু হয় রমলা সেনের সাথে দেখা হওয়ার পর থেকে।
আলংকারিক ভাষার প্রয়োগ লেখকের বর্ণনাকে করেছে সাবলীল। simile আর symbol এর ব্যবহার পাঠকের মনের খোড়াক জুগিয়েছে আর সাহিত্যের রস আস্বাদের সুযোগ দিয়েছে। মানব-মানবির ভালোলাগার সম্পর্ক কেমন করে পানসে হয়ে যায় তার উজ্বল দৃষ্টান্ত ললিতা আর শ্যামল।বিয়ের আগে একজনকে ছাড়া আরেক জন থাকতে পারতো না তারাই বিয়ের পর অন্য মানুষ। ভালবাসা তার রং বদলায় তার নিজস্ব গতিতে।তাইতো তীব্র অবহেলায় ললিতা আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়।গল্পের এই সাবপ্লট,মূল গল্প কে টেনে নিয়ে গেছে তার নির্দিষ্ট গন্তব্যে।
বাল্য বিবাহের করুন পরিনতির স্বীকার গল্পের নায়িকা দীপাবলি।লেখক সামাজিক সংস্কারকে ক্ষত হিসেবে দেখিয়েছেন সুনিপুণ ভাবে ।কনের মতামতকে অগ্রাহ্য করে বিয়ের আয়োজন যেন আমাদের সমাজের পরিচিত ছবি।দীপাবলি জানতে পারলো তার আসল বাবা মায়ের কথা। দীর্ঘদিনের প্রতিষ্ঠিত সম্পর্কে চির ধরতে শুরু করে। অমরনাথ আর অঞ্জলি তাকে কোলে পিঠে করে মানুষ করেছে নিজের সন্তানের মত করে।কিন্তু বিয়ে দিয়ে বোঝা নামানোর পরিকল্পনায় দীপাবলি সত্যি খেই হারিয়ে ফেলে। শ্বশুর বাড়ী থেকে পালিয়ে এসে দীপাবলি নতুন ভাবে বাঁচতে চেয়েছে। বিধবাদের সমাজ সংসারে নানাবিধ সংস্কার মানতে হয় যা দীপাবলি মেনে নিয়েছে তার ঠাকুমা মনোরমার কল্যানে।বারো বছরের কুমারী বিধবা দীপাবলী জীবনকে উপলব্ধি করার আগেই হোচট খায়। মাস্টার মশাই সত্যসাধনের অনুপ্রেরনায় দীপাবলি মাধ্যমিকে ভাল ফলাফল করে। এরপর একা একা জলপাইগুড়িতে হোস্টেলে থেকে পড়া আর পরিবার থেকে দূরে সরে যাওয়ার টানাপোড়েন একজন মেয়ের জীবনের অনুষঙ্গ হয়ে দাড়িয়েছে।
সংগ্রামী দীপাবলি সমাজের বাধাকে উপেক্ষা করে উচ্চ শিক্ষার জন্য কোলকাতা যায়।ততদিনে পরিবার বলতে আর কিছু বাকী থাকে না।সম্পূর্ণ একাকী দীপাবলি জীবন যুদ্ধে লড়াই করে গেছে। প্রতুল বাবুর রেখে যাওয়া সম্পদ তাকে আকৃষ্ট করতে পারে নাই।সম্পদ বিলিয়ে দিয়ে স্বস্তি পেয়েছে। অমরনাথ আর অঞ্জলি মেয়ের কাছে ক্ষমা চেয়েছে তার জীবনটাকে নষ্ট করার জন্যে। অন্য দিকে অমরনাথের মৃত্যুর জন্য দীপাবলিকে দোষারোপ করা প্রাচীন সমাজ ব্যবস্থার প্রতিচ্ছবি।
চাকরি জীবনে অন্যায়ের প্রতি আপোষহীন দীপাবলি, দুর্নীতির চেহারা উন্মোচন করেছেন। প্রতিবাদ করেছেন প্রতিষ্ঠিত সংস্কারের বিরুদ্ধে।
ব্যক্তি দীপাবলির জীবনে এসেছে অসীম,শমিত আর অলোক।পোড়খাওয়া দীপাবলি কারো সাথেই ঘনিষ্ঠ হতে পারে না জীবনের তিক্ততার কারনে।উচ্চ শিক্ষিত সংস্কৃত মনা অলোকে বিয়ে করে সংসার পাতে কিন্তু সম্পর্কের টানাপোড়েন শুরু হয় বিয়ের পর। ভালো-লাগাটা উধাও হয়ে যায়।দীপাবলি কোলকাতায় আর অলোক দিল্লিতে তাদের একাকী জীবন শুরু করে সমঝোতার ভিত্তিতে। কর অফিসার হিসেবে দুর্নীতির প্রতি আপোষহীন দীপাবলি সমালোচনার মুখে নিজের দায়িত্ব থেকে সরে দাড়ান নি।
গল্পের একেবারে শেষে দেখা যায় মনোরমা আর দীপাবলি একসাথে কোলকাতার ফ্লাটে থাকা শুরু করে।অলোককে ফিরিয়ে দিয়ে দীপাবলি দেখাতে চেয়েছে বিশ্বাস আর রুচির মিল না থাকলে সেই সম্পর্ক বয়ে নেওয়ার মানে হয় না।
প্রতিটা মেয়ের মাঝে লুকিয়ে আছে একজন দীপাবলি। স্থান,কাল এবং পাত্র ভেদে সংগ্রামের চেহারা ভিন্ন হতে পারে কিন্তু হৃদয়ের ক্ষরন আর সমঝোতার হাতছানি সর্বত্র একই।
পাঠক হিসেবে গল্পের শেষটায় একটু টুয়িসট হলে ভাল লাগতো। অলোককে ফিরিয়ে না দিলেও পারত।দীপাবলির বিরুদ্ধে অলোকের অভিযোগ একেবারে অবান্তর নয়।দীপাবলির কোল্ডনেস অলোককে পীড়া দিত যা দীপাবলি নিজেও স্বীকার করেছে।একসময় মনে হয়েছে দীপাবলি যেন একজন egoist , যে কিনা ego ধরে রাখতে অলোককে ত্যাগ করেছে।
পরিশেষে বলব, আকৃতিতে বিশাল হলেও উপন্যাসটি সুখপাঠ্য। প্রতিটা পাঠক কোথাও না কোথাও নিজেকে দীপাবলির স্থানে দেখতে পাবেন আর সমাজের অরাজকতার বিরুদ্ধে দাড়ানোর সাহস সঞ্চয় করবেন।
………….
……….
সাতকাহন সারাংশ
সমসাময়িক লেখক হিসেবে সমরেশ মজুমদারের কোনো জুড়ি নেই।সহজ সরল ভাষায় খুব স্বাভাবিক ভাবেই তার লেখায় ফুটিয়ে তুলতে পারেন জীবনের সব স্তরের চিত্র। পশ্চিমবঙ্গের এই লেখকের শৈশব কাটে ডুয়ার্সের চা বাগানে।এজন্যই সাতকাহনে দেখতে পাওয়া যায় চা বাগানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপূর্ব সুন্দর বর্ণনা। সাতকাহন উপন্যাসটিতে বিংশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে পুরুষশাসিত সমাজে নারীর অবস্থান তুলে ধরার পাশাপাশি প্রকাশ পেয়েছে নারীবাদী চেতনা।প্রোটাগনিস্ট দীপাবলি জলপাইগুড়ির চা বাগানে বড় হওয়া এক কিশোরী যার জীবনের ঘাত প্রতিঘাতের গল্প এই সাতকাহন।আপোষহীন-সংগ্রামী এই নারী চরিত্র নিঃসন্দেহে সমরেশ মজুমদারের অন্যতম সেরা সৃষ্টি।
মাত্র দশ বছর বয়স থেকেই দীপাকে অতিক্রম করতে হয় নানা বাধা বিপত্তি,মুখোমুখি হতে হয় কিছু অপ্রিয় সত্যের।চেনা জগত টা খুব জলদি ই একদম অচেনা হয়ে যায়।কিন্তু তবুও দীপা থেমে থাকেনি।নিরন্তর চেষ্টা চালিয়েছে নিজের সম্মান প্রতিষ্ঠার।নিজের মেধা কে কাজে লাগিয়ে অর্জন করেছে সাফল্য কিন্তু সাফল্য অর্জনের এই পথ মোটেও সহজ ছিল না তার জন্য।প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করতে হয়েছে সমাজ,পরিবার এমনকি মাঝে মাঝে নিজের সাথেও।একজন নারী যে পুরুষের চেয়ে কোনো অংশে কম না তা দীপাবলি বুঝিয়ে দিয়েছে চোখে আঙুল দিয়ে।অতুল,অসীম,অমল,শমিত,অর্জুন নায়েক……সবাইকে ছাড়িয়ে এক সময় অলোকের সাথে সংসার জীবন শুরু করে।শেষ পর্যন্ত মানিয়ে নিতে না পারায় সংসার জীবন আর হলো না।সমাজের ঘুনেধরা সংস্কারের বিরুদ্ধচারণ করে সমাজে নিজের অবস্থান তৈরি করেছে।সাধারনের মাঝেই দীপাবলি অসাধারণ। গল্পের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তার চরিত্রের বিকাশ এবং জীবনবোধের পরিবর্তন গল্পটিকে অন্য এক রুপ দিয়েছে।বাংলার প্রতিটি নারীই দীপাবলির মাঝে অল্প হলেও নিজকে খুঁজে পাবে। কেউ হয়তো তার উপর হয়ে যাওয়া অন্যায় গুলোর স্বীকার আবার কেউ হয়তো তার মত অন্যায়ের বিরুদ্ধচারী।
পাঠ প্রতিক্রিয়া- স্রেফ সময় পার করার উদ্দেশ্য বইটি পড়া শুরু করেছিলাম।৫/১০ পৃষ্ঠা পড়ার পরই মনে হলো যেন আটকে গেলাম এই গল্পে।প্রায় ৭০০ পৃষ্ঠার বইটি শেষ করি কয়েক দিনের মধ্যে। দীপাবলি কে যতই চিনেছি ততই অবাক হয়েছি।কখনো মনে হয়েছে দীপা আমার মত আবার কখনো তার সাহসের সাথে নিজেকে তুলনা করতে পারিনি।বিংশ শতাব্দীর নারীদের চিন্তা ও যে কতটা আধুনিক ছিল তা এই উপন্যাস না পড়লে বুঝতাম না।দীপবলি, রমলা সেন আর মায়ার আধুনিকতা দেখে নিজের চিন্তাচেতনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে বাধ্য হয়েছি। বইটি না পড়ে থাকলে অনুরোধ করবো পড়তে অবশ্যই।
……..
…………